মৃত্যু

 ছোটগল্প

গল্পের নাম: মৃত্যু

লেখিকা-শারমিন আঁচল নিপা।


সকালে উঠে আমার মোবাইলটা হাতে নিয়ে দেখি আমার আইডিটা রিমেম্বার হয়ে গিয়েছে।আমার আইডিতে আমার বন্ধুরা আমার  টাইমলাইনে ট্যাগ করে লিখতেছে আল্লাহ তোকে জান্নাত নসিব করুক।ব্যাপারটা বুঝতে পারছিলাম না কেন এমন হচ্ছে।




খানিকক্ষণ  পর বাইরে গিয়ে দেখলাম একটা অ্যাম্বুলেন্স দাঁড়ানো আর সেটাতে আমার মৃত দেহ পলিথিনের শক্ত ব্যাগে মুড়ানো। আমার মৃতদেহের কাছে কাউকে যেতে দিচ্ছে না। আমি ভীষণ ভয় পেয়ে গেলাম তাহলে কি আমি মরে গিয়েছি। মাকে দেখলাম দূরে দাঁড়িয়ে কাঁদতেছে,বাবাও একি কাজ করছে।কিন্তু সবসময় দেখতাম কেউ মরে গেলে লাশের আশে পাশে মানুষ থাকে ।আর আমার লাশের পাশে কেন কোনো লোক আসতে দিচ্ছে না।মাকে জড়িয়ে ধরে বলতে লাগলাম এই যে আমি আমার দিকে তাকাও। মা আমার কথাটা শুনল না।বাবাকে জড়িয়ে ধরে বললাম এই যে বাবা আমি, আমি তোমার মেয়ে বাবাও আমার কথা শুনল না।ছোটবোনটা পাশে বসে কাঁদছে ছোটবোনটাকে জড়িয়ে ধরে বললাম এই যে আমি এখানে তুই কাঁদছিস কেন। বড় ভাই,ছোট ভাই সবার কাছে গেলাম কেউ আমার কথাটা শুনল না।প্রিয় মানুষটার কাছে গেলাম।যার সাথে দুইদিন আগে আমার বিয়ে হয়েছে।সে ও চুপ করে অশ্রু ফেলছে।আমি গিয়ে আমার চিরাচায়িত ডায়লগটা দিলাম এই যে আমার দিকে তাকাও।সবসময় তো এটা বলার পর উনি আমার দিকে মুচকি হাসি দিয়ে তাকিয়ে থাকত।আজকে কেন শুনছে না আমার কথা।

ইশ কী অসহ্য লাগছে এ সময়টা। করোনায় মৃত্যু হয়েছে তাই জানাজাও হলো না। আমার কোনো আপনজনকে আমাকে দেখতে দিল না।আমার লাশটাকে দঁড়ি দিয়ে বেঁধে কবরে ফেলে কোনোরকম মাটি চাপা দিয়ে চলে আসলো সবাই। জানাজা বিহীন একটা দাফন হলো আমার।কত অসহায় আমি আজকে। ইশ কী অন্ধকার এ জগৎ।এখানে থাকতে বড্ড কষ্ট হচ্ছে।কিছুক্ষণ  পর একটা চাপ অণুভব করলাম।ইশ এত কষ্ট কেন হচ্ছে আমার দম আটকে যাচ্ছে কেন।আমার পাজরের হাড়গুলো ভেঙ্গে দুইপাশে চলে গেল।কি যে যন্ত্রণা। ইশ আমি তো সহ্য করতে পারছি না।আমাকে তো কেউ বাঁচাতে আসছে না।কতক্ষণ পর কেউ একজন এসে আমাকে তিনটা প্রশ্ন করল। কিন্তু আমি তো উত্তর দিতে পারছি না।কেন এমন হচ্ছে। এবার আমাকে টেনে হিচড়ে নিয়ে  আগুনে ফেলা হলো।পুড়ে ছাড়খাড় হয়ে যাচ্ছি আমি।আমার শরীরের মাংস গলে পুড়ে পুড়ে পড়ছে।আহ্ কী যন্ত্রণা কেউ আমার জন্য কান্না না করে একটু আমল পাঠাও একটু নামাজ পড়ে দোআ করো।আমি যে সহ্য করতে পারছি না।

কতক্ষণ পর দেখলাম চারদিকে সাপ আর বিচ্ছুতে ভরা।আমার চুল গুলো বিকট সাপ হয়ে গেল।আর আমার মাথায় কামড়াচ্ছে।ইশ দুনিয়ায় আমি চুল ছেড়ে হাঁটতাম। আমার ছবি দিয়ে কেউ আমার টাইমলাইনে পোস্ট দিও না এতে যে আমার কষ্ট আরও বেশি হচ্ছে।কেন যে ছবি গুলো দিয়েছিলাম। ইশ গ্রূপে চ্যালেন্জ খেলেছিলাম সে ছবিগুলো দেখে এখনও অনেকে হাহা দিচ্ছে।আমার যে পাপের বোঝা বাড়ছে আমার যে আজাব বাড়ছে।কেউ এমন করো না। আমার ছবিগুলো ডিলেট করে দাও।বাসায় সময় কাটে না বলে সাজগোজ করে ছবি আপলোড করতাম কিন্তু একটা বারও নামাজ পড়ে কুরআন পড়ে সময় পার করার চেষ্টা করিনি।

আমার ঠোঁটটা কেটে দিচ্ছে কেন?এত অসহ্য যন্ত্রণা আমাকে গ্রাস করছে কেন।আমি তো এ ঠোঁটে লিপস্টিক দিয়ে বেপর্দা হয়ে ঘুরে বেড়িয়েছি। কী করলাম আমি! আমার ছবিগুলো কেউ ডিলেট করে দাও। আমার জন্য আমল পাঠাও।

কয়েকদিন পর বাবা, মা ও আমার জন্য কান্না বন্ধ করে দিল।আমার স্বামী ও আরেকটা বিয়ে করে নিল।আমাকে সবাই ভুলে গেল।আমার জন্য কেউ আমল পাঠায় না।আর আমি জাহান্নামের আগুনে জ্বলে পুড়ে ছাই হচ্ছি।ইশ নামাজ পড়িনি,পর্দা করেনি।দুনিয়া নিয়ে পড়ে থেকেছি। হায় আল্লাহ এত আফসোস হচ্ছে কিন্তু সেখান থেকে বের হয়ে আসতে পারছি না।

পাশে আরেকজনকে দেখলাম তার কত ভালো অবস্থা। জানতে পারলাম সে নামাজ পড়ত। স্বামী ছাড়া কারও জন্য সাজত না। সময় পেলে আমল করত। তার সার্কেলগুলো ছিল দ্বীনি তারাও নাকি তার জন্য আমল পাঠায় দোআ পাঠায়।আর আমি যাদের সাথে মাস্তি করেছি তারা এখন আমার ছবি টাইমলাইনে দিয়ে দুই চারটা মিথ্যা বাণী লিখে লাইক পাওয়ার জন্য, আমার আজাব বাড়ার জন্য। হায়রে জীবন! দুনিয়া যে কিছুই না এখন বুঝতেছি। কী ভুল করেছি। এখন শত আফসোস করেও বের হতে পারছি না।

ক্রমশ আমার দম বন্ধ হয়ে যেতে গেল। হুট করে এ্যাজমা বেড়ে গেল। হাত পা কাঁপতেছিল খেয়াল করলাম আমি বিছানার উপর। তার মানে দুঃস্বপ্ন দেখছিলাম। ঘুম থেকে উঠেই তওবা করলাম।সামাজিক মাধ্যম থেকে সব ছবি সরালাম।আল্লাহর কাছে হাত তুলে কাঁদলাম।আমার রব কত দয়াশীল।পাহাড় পরিমাণ পাপ করলেও দুনিয়াতে মরার আগে ক্ষমা চেয়ে তওবা করলে উনি ক্ষমা করে দেন।নফরমানী করতেছিলাম এতদিন।আল্লাহ আমায় হেদায়াত দিয়েছেন। প্রাণ প্রিয় স্বামীকে কল দিয়ে বললাম এখন থেকে আমি আর তুমি জান্নাতে যাওয়ার জন্য প্রতিযোগিতা করব।আমার স্বামী হাসি মুখে মেনে নিল।শুরু হল আমার নতুন জীবন।আহ এ জীবন যে কত আনন্দের কত শান্তির এ জীবনে না আসলে বুঝতাম না।দুনিয়া নামক মরিচীকার পিছনে ছুটে হাঁপিয়ে গিয়েছিলাম।আর রবের দিকে ফিরে শান্তির নিঃশ্বাস ফেলছি।

ইশ করোনা নিয়ে আমরা কত ট্রল মজা করি।একবারও কি পরকালের কথা মনে পড়ে না।শয়তান তো পাপ করাবেই তাই বলে কী সময় কাটে না বলে বেপর্দা ছবি দিয়ে চ্যালেন্জ করব এ সময়ে?নাকি আল্লাহর নিকট ক্ষমা চাইব।এখনও সময় আছে আমার রব মুখ ফিরায় নি। আমার রব শুধু রুষ্ট হয়েছে তাকে খুশি করার চেষ্টা করুন।এরকম চ্যালেন্জ,গেন্দা ফুল ভার্সন না দেখে আল্লাহর কাছে নিজেকে শপে দিন।

কারণ মহান আল্লাহই পারেন আমাদের এ বিপদ থেকে মুক্তি দিতে।কত নির্মম ভাবে আত্নীয় ছাড়া, জানাজা ছাড়া দাফন হবে যদি করোনায় মৃত্যু বরণ করেন সেটা কি ভেবে দেখেছেন একবারও? আল্লাহ কতটা রুষ্ট আমাদের উপর তাই এই ক্ষুদ্র ভাইরাস দিয়ে দুনিয়া ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে ভেবে দেখেছেন কি? এখন সময় আছে আল্লাহর পথে আসুন।আল্লাহকে খুশি করুন।সবাইকে করোনার মরণঘাতী থেকে রক্ষা করুক।

আমীন।


মৃত্যু: এক অনন্ত যাত্রার সূচনা


মৃত্যু—শব্দটি শুনলেই যেন হৃদয়ে একরাশ শূন্যতা নেমে আসে। আমরা সবাই জানি, একদিন না একদিন এই পৃথিবীর মায়া ছেড়ে চলে যেতে হবে। তবুও, এই চিরন্তন সত্যকে আমরা এড়িয়ে চলতে চাই, ভুলে থাকতে চাই।

কিন্তু মৃত্যু কি শুধুই একটি শেষ? নাকি এটি আরেকটি শুরুর নাম? বহু ধর্ম, দর্শন ও সাহিত্য আমাদের শেখায়, মৃত্যু মানে শুধু দেহের অবসান নয়—এটি আত্মার নতুন পথচলা।

প্রিয়জন হারানোর কষ্ট বয়ে আনলেও, মৃত্যু আমাদের জীবনের মূল্য বুঝিয়ে দেয়। এটি আমাদের শেখায় সময়ের গুরুত্ব, ভালোবাসার প্রয়োজন এবং মানবিক হওয়ার প্রকৃত অর্থ।

প্রতিদিনকার ব্যস্ততায় আমরা ভুলে যাই—জীবন খুবই ছোট। তাই আজকেই ভালোবাসুন, ক্ষমা করুন, কৃতজ্ঞ থাকুন। কারণ হয়তো এই মুহূর্তটাই কারও শেষ স্মৃতি হয়ে থাকবে।

মৃত্যু আমাদের শিখিয়ে দেয়—জীবনকে ভালোবাসার, মানুষকে আপন করে নেওয়ার, এবং প্রতিটি দিনকে অর্থপূর্ণ করে তোলার অসাধারণ এক পাঠ।




একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ