পতিতা পল্লী-1-to-3

 গল্পের নাম : পতিতা পল্লী 

১ম পর্ব

লেখিকা-  শারমিন আঁচল নিপা

#বাসর রাতে নিজের স্বামীর জায়গায় যখন অন্য কেউ ধর্ষন করেছিল তখন বুঝেছিলাম  কষ্ট কাকে বলে।আমার কথাটা শোনে হয়ত খুব অবাক লাগছে?কিন্তু এটাই হয়েছে আমার সাথে।সেদিন বুঝেছি যন্ত্রণা কাকে বলে।অসহায়ত্ত্বের মাত্রা কতটা গুরুতর হলে মানুষ এমন পরিস্থিতিতে পড়ে ।



বাবা, মায়ের খুব আদরের সন্তান ছিলাম।বলতে গেলে সোনার চামচ নিয়ে জন্মেছি।কত ভালোবাসত আমার মা।সারাদিন আমাকে নিয়েই পড়ে থাকত।কিন্তু সে সুখ বেশিদিন জুটে নি আমার কপালে।৮ বছর বয়সে ক্যান্সারে আমার মা মারা যায়।সেদিন মাকে হারিয়ে আমি খুব কেঁদেছিলাম।প্রতিটা মূহুর্তে শুধু মাকে মিস করতাম।বাবাও মায়ের জন্য অনেক কষ্ট পেত।কিন্তু আমাকে বুঝতে দিত না।কিন্তু বাবা প্রায়সময় ব্যাবস্যার কাজে ব্যাস্ত থাকত।আমাকে তেমন দেখাশোনা করতে পারত না।তাই আত্নীয়স্বজন সবাই বলতে লাগল আরেকটা বিয়ে করার জন্য।কিন্তু বাবা, মাকে অনেক ভালোবাসত আর নতুন বউ যদি আমাকে মানতে না পেরে আমাকে কষ্ট দেয় এজন্য সহজে বিয়ে করতে রাজি হয় নি।কিন্তু সবার জোরাজোরি আর আমার কথায় বাবা ২য় বিয়ে করে।

সেদিন বাবাকে বলেছিলাম বাবা নতুন মা না এনে দিলে আমি আর তোমার সাথে কথা বলব না।ভেবেছিলাম তো আমার নতুন মা টাও আমার আগের মায়ের মত হবে।কে জানত আমার কপালটা এমন হবে।সেদিন সত্যিই বাবাকে নতুন মা আনতে বলে নি এখন মনে হচ্ছে সেদিন আমি বাবাকে "খাল কেটে কুমির" আনতে বলেছিলাম।

বাবা যখন নতুন বিয়ে করে বউ নিয়ে ঢুকে আমি উঁকিঝুকি মেরে নতুন মা কে দেখতেছিলাম আর খুব খুশি হয়েছিলাম।কয়েকটা দিন হয়ত নতুন মায়ের সাথে ভালো ছিলাম।কিন্তু পর কখনও আপন হয় না আর সৎ মা কখন ও আপন মা হয় না সেটা বুঝতে পারি কয়েকটা দিন পর।যে আমাকে আমার মা খাবার নিয়ে আমার পিছনে পিছনে দৌঁড়াত আর আমি বায়না করতাম এটা খাব না ঐ টা খাব না সে আমি আজকে ঠিক মত খেতে পারছি না।এখন মনে হয় লবন, মরিচের ভাত ও অনেক মজা।যে আমি সারাদিন বসে বসে পুতুল খেলে সময় পার করতাম সে আমি এখন অনেক কাজ করি তাও আমার নতুন মায়ের মন ভরে না।নানারকম কথার বেড়াজালে আটকা পড়ে গেছি।ইচ্ছা করলেও এ কথার বেড়াজাল থেকে বের হতে পারছি না।

দিনের পর দিন মানসিক আর শারিরীক যন্ত্রনা নিয়ে বেড়ে উঠেছি।আমার বাবাও বদলে গেছে।যে বাবা আমার সুখের কথা ভেবে বিয়ে করতে চায় নি।আজকে সে বাবায় নতুন মা কে পেয়ে আমাকে ভুলে গেছে।নতুন মায়ের কথায় উঠে আর বসে।মারধর করে।নতুন মায়ের কোলে নতুন যে মেয়ে হয়েছে বাবার কাছে এখন সে মেয়েই সব আর আমি তো এক পরগাছা।৮ বছর বয়সে মাকে হারিয়ে যতটা কষ্ট পেয়েছিলাম তার থেকে বেশি কষ্ট এখন প্রতি মুহুর্তে পাই।কষ্টটা আরও বেড়ে গিয়েছিল যখন আমার বাবা মাত্র ১৪ বছর বয়সে আমার বিয়ে ঠিক করে আমার থেকে ২৬ বছরের বড় এক মধ্যবয়স্কের সাথে।সেদিন একটু প্রতিবাদ করেছিলাম আর ফলশ্রূতিতে মাইর আর মানসিক যন্ত্রনাটাই পেলাম।

না সহ্য করতে পেরে।কোন উপায় না পেয়ে বিয়েতে রাজি হয়েছিলাম।ভেবেছিলাম বয়স বেশি দেখতে অসুন্দর তাতে কি হয়েছে খেতে পড়তে তো পাড়ব।সংসার কাকে বলে তখন বুঝতে পারে নি।সংসার বুঝে উঠার আগেই বাবা, আর নতুন মায়ের চাপে ১৪ বছর বয়সেই  আমি বিয়েটা করে নিই।

বিয়ে করার পর যে সুখটা ছিল সেটাও চলে গেল।ঘরুয়া ভাবে চুপিচুপি লোকটার সাথে আমার বিয়ে হয়।আমাকে লোকটা গাড়ি করে তার বাড়ি নিয়ে যায়।যাওয়ার সময় লোকটার হাবভাব দেখে মনে হয়েছিল লোকটা নেশাখোর আর চরিত্রহীন।যখন লোকটার সাথে বাড়িতে গেলাম বুঝতে পারলাম লোকটা অনেক ধনী আর সম্পদশালী।আমাকে বাড়ির ভিতর ঢুকিয়ে শক্ত করে হাত ধরে রুমের ভিতর নিয়ে ধাক্কা দিয়ে ফেলল।আর ওনি একের পর এক মদের বোতল শেষ করতে থাকল।সব আশায় তখন নিরাশ হয়ে গেল।বুঝতে পারছিলাম আমার জীবনের সব সুখ উড়ে গেছে তা আর ফিরে আসবে না।

আরও যন্ত্রণায় কাতর হলাম তখন যখন খেয়াল করলাম রাতের বেলায় আমার স্বামীর পরিবর্তে অন্য একটা লোক আমার রুমে ঢুকে আমাকে ঝাপটে ধরে।ভয়ে জোরে চিৎকার করে উঠেছিলাম।পাশের রুম থেকে আমার স্বামী এসে বলল

---কি রে হারামজাদী এভাবে চিল্লাছিস কে?

আমি ওনার এ ভাষাটা শোনে অবাক হলাম।কিছুটা বিস্মিত হয়ে শান্ত স্বরে ওনাকে বললাম

---আপনি দেখেন এ লোকটা এসে আমার সাথে অসভ্যতা করছে।

---"কর্কশ হাসি" দিয়ে বলল হারামজাদী একে খুশি কর।না হয় তোর কপালে দুঃখ আছে।যা যা করতে বলে তাই কর।

ওনার কথাটা আমার বুকটা ভেদ করে কলিজায় লাগল।তবুও বললাম

---আপনি আমার স্বামী হয়ে এমন কথা বলতে লজ্জা লাগছে না?

---হাহাহা আমি তোর স্বামী কে বলেছে?আমি তোকে তোর বাপের কাছ থেকে কিনে এনেছি।আশে পাশের লোক খারাপ বলবে তাই বিয়ের নাটক করেছি।তোর বাপ আমার কাছে তোকে বিক্রি করে দিছে।এখন আমি যা বলি তুই তাই করবি।ওনাকে খুশি কর।

এই বলে ওনি লোকটাকে ইশারা করে দরজা লাগিয়ে চলে গেল।আর লোকটা আমার উপর পশুর মত ঝাপিয়ে পড়ল।আমি বললাম

---আপনি আমার বাবার বয়সী এমন করবেন না।আপনার মা,বোন মেয়ে থাকলে কি এমন করতে পারতেন?আমাকে ছেড়ে দিন।পায়ে পড়ি আপনার।আমার ক্ষতি করবেন না প্লিজ।

কিন্তু তিনি এক পৈচাশিক হাসি দিয়ে আমাকে বলল এসব বলে লাভ নেই সুন্দরী আমাকে একটু খুশি করে দাও।এসব বলে আমার গায়ের উপর এসে আমাকে শক্ত করে ধরল।আর আমাকে খুবলে খুবলে খেল।সেদিন আমার চিৎকার শোনার মত কেউ ছিল না।মনে হয়েছিল এক হায়েনা আমার কাঁচা মাংস খুবলে খুবলে খাচ্ছে।ওনার খাওয়া শেষ হওয়ার পর আমার স্বামী আমাকে ঠিক একই ভাবে খুবলে খুবলে খেয়েছে।তারা ভুলেই গিয়েছিল আমি একটা মানুষ।আমার কষ্ট হচ্ছে।যন্ত্রনার চিৎকার যেন তাদের সুখটা আরও বাড়িয়ে দিয়েছিল।কাজশেষে আমাকে লাথি দিয়ে ফেলে অন্য রুমে চলে গেল।আমি যন্ত্রণায় ছটফট করতে লাগলাম।সারা শরীরে হায়েনাদের আঘাত করা ক্ষতগুলো ভেসে উঠল।সে সাথে তীব্র যন্ত্রণায় কাতরাতে লাগলাম।

বড় স্বপ্ন নিয়ে বিয়ে না করলেও একটু আশা নিয়ে বিয়েটা করেছিলাম।আজ সে আশাও ভেঙে  গেল।জীবনে এতটা কষ্ট ও লিখা ছিল বুঝতে পারে নি।আজকে আমার জীবনের সব শেষ।সারা শরীরটাই সক্ষী  দিচ্ছে আমি আজকে কতটা নিরুপায়,অসহায়।

সেদিন বুঝেছিলাম পুরুষ মানুষ কতটা খারাপ।কতটা জঘন্য হলে একজন বাবা তার মেয়েকে এমন লোকের কাছে বিক্রি করতে পারে।কত নিকৃষ্ট হলে একজন বাবার বয়সী লোক আমার মত ১৪ বছরের মেয়েকে এভাবে হায়েনার মত রক্তাক্ত করতে পারে।কতটা কষ্ট সেদিন হয়েছিল আমি জানি।

কষ্টের শেষটা যদি সেখানেই হত তাহলে তো ভালোই ছিল।কিন্তু পরদিন সকালে.... .


গল্পের নাম : পতিতা পল্লী

২য় পর্ব

 লেখিকা- শারমিন আঁচল নিপা

কিন্তু পরদিন সকালে খেয়াল করলাম আমার শরীরটা জ্বরে পুড়ে যাচ্ছে।সারা শরীরে ক্ষত হয়ে গেছে।তলপেটে প্রচুর ব্যাথা হচ্ছে।উঠতে পারছি না ঠিক করে।কোন রকমে উঠে দেখি বদমাইশ লোকটা আমার জন্য খাবার নিয়ে এসেছে আর আমাকে বলল

---হারামজাদী এই নে খা।খেয়ে রেডি হ।কাস্টমার আসবে দুইটা। খুশি করতে না পারলে খবর আছে।বেশি চিল্লাবি তো মাইরা তোরে ফাটাইয়া দিমু।

---দয়াকরে আপনি আর আমাকে কষ্ট দিবেন না।আমি আপনার পায়ে পড়ি।আমার শরীর ভালো না।আমি অসুস্থ এতটা কষ্ট আমাকে দিবেন না।আপনার মেয়ে হলে কি পারতেন এমন করতে।আপনি আমার বাবার বয়সী। এরকম করবেন না।

---পুরুষ মানুষ, পুরুষ মানুষেই হয় রে।ওরা বাবা,স্বামী কিচ্ছু হয় না।তাড়াতড়ি রেডি হ।

পেটে তখন প্রচন্ড ক্ষুদা ছিল।কোন রকমে খেয়ে নিলাম।তার কিছুক্ষণ  পর একের পর এক লোক আসতে থাকল আর আমার ক্ষত শরীরটাকে আরও খুবলে খুবলে  খেল।সেদিন মনে হয়েছিল আমি একটা তাজা মংসপিন্ড যেটাকে খাওয়ার জন্য অনেক গুলা হায়েনা প্রতিযোগিতা লেগেছে।সেদিন আমার চিৎকার কেউ শোনে নি।ব্যাথায় যন্ত্রনায় কাতরাচ্ছিলাম কেউ শাত্ননা দেয় নি।কখন যে অসুস্থ হলাম খেয়াল নেই।কোন রকমে কয়েকটা ব্যাথা কমার ঔষধ এনে দিয়েছিল তা খেয়ে একটু সুস্থ হলাম।

কিন্তু অসহ্য যন্ত্রণা সহ্যের পর লোকটা কয়েকদিন পর আমাকে একটা গলিতে নিয়ে গেল।খেয়াল করলাম সেখানে আমার মত আরও অনেক মেয়ে সেজেগুজে দাড়িঁয়ে আছে।একে একে পুরুষ আসছে যাকে পাচ্ছে তাকে নিয়ে রুমে ডুকছে।বুঝতে আর বাকি রইল না এটা পতিতা পল্লী।আমাকে নিয়ে গেলো একটা মহিলার কাছে মহিলার নাম ডায়না।মহিলাটা আমার দিকে তাকিয়ে দেখে লোকটাকে বলল

---হালা এ মালরে এ হাল করলি কেন।এত চাপ দিছিস কেন এ মাল রে।সারা শরীরে দাগ করে ফেলছিস এর পিছনে এখন আমাকে টাকা ভাঙ্গতে হবে।এ মালের জন্য ৩০ হাজারের উপর এক টাকাও দিতে পারুম না।মালডার কি হাল করছিস দেখছিস?

---ডায়না জি।সবে মাত্র ১৪ বছর বয়স।আর ৫ হাজার বাড়াইয়া দেন।ঠকবেন না নিলে আর ভালো সার্ভিস দেয়।সেই মাল।

অবশেষে দর কষাকষি করে আমাকে ৩২ হাজার টাকায় বিক্রি করা হল।আমি ডায়না আন্টির পায়ে আচরে পড়লাম আমাকে ছেড়ে দিতে, দেয় নি।কেন দিবেন।উনি তো পতিতা পল্লীর সর্দারনী।আমাকে এত টাকা দিয়ে কিনেছেন ব্যাবস্যার জন্য।আমার দায়িত্ব দেওয়া হল সোবাহ কে যাতে আমাকে সব বুঝিয়ে দেওয়া হয়।সোবাহ আমাকে সব বুঝিয়ে দিল।কিভাবে কাস্টমারকে খুশি করতে হয়।সোবাহ এর পায়ে ধরলাম আমাকে যেন ছেড়ে দেওয়া হয়।কিন্তু সে ও তো এক ঘাটের মাঝি।আমারি মত ভুক্তভোগী।সে তো প্রেম করে এক ছেলেকে বিশ্বাস করে এসেছিল।আর সে ছেলে সরলতার সুযোগ নিয়ে তাকে বিক্রি করে চলে গেছে।

এভাবেই অসহনীয় যন্ত্রণাগুলো মেনে নিতে হয়েছিল।দেখতে দেখতে ২ টা বছর পার হয়ে গেল।আমি ডালিয়া থেকে হয়ে গেলাম ডেইজি।কাস্টমারকে কিভাবে খুশি করে টাকা বাড়িয়ে নিতে হয় সব শিখে গেছি।সে সাথে জেনে গিয়েছি পুরুষ মানুষের রূপ গুলা।সত্যিই পুরুষ মানুষ, পুরুষ মানুষেই হয় ওরা বাবা, ভাই কিচ্ছু হয় না।এখানে আসে না এমন কোন স্তরের লোক বাকি নেই।উচু নিচু সব স্তরের লোকেই এখানে আসে।এখানের মেয়ে গুলােকে তারা মংসপিন্ড ভাবে আর খুবলে খুবলে খায়।

এখন আমি এখানের সবচেয়ে ফেমাস।বাবুরা তো আমার জন্য পাগল।কথাগুলো বলে ডালিয়া হসছিল।আর আমি তার মুখ থেকে কথাগুলো শোনে থমকে গিয়েছিলাম।কিছুক্ষণের জন্য স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিলাম।মানুষের জীবনে এত কষ্ট ও থাকতে পারে জানা ছিলনা।ডালিয়া ওরফে ডেইজি মেয়েটা কথা গুলো বলে খল খল করে হাসলেও তার হাসির পিছনে একটা চাপা কষ্ট ছিল তা ঠিকেই বুঝতে পেরেছিলাম।

কিন্তু এর কিছুদিন পরেই ডালিয়ার জীবনে একটা ঘটনা ঘটে।ডালিয়ার পেটে বাচ্চা আসে।সাধারণত পতিতাদের বাচ্চাগুলোকে মাঝে মাঝে রেখে দেওয়া হয় মেয়ে জন্মানোর আশায়।ডালিয়ার বাচ্চাটাও তার অনুরোধে ডায়না রাখতে দেয়।কিন্তু ডালিয়ার এর মধ্যে কাজ বন্ধ।তাই সবকিছুতেই জামেলা হচ্ছিল।তার উপর তিন মাসের বাচ্চা পেটে।এর মধ্যে ও কয়েকটা কাস্টমারকে তার খুশি করতে হয়েছে।সেদিন খানিকটা অসুস্থ ছিল।তাই ডায়না তাকে কাজ করতে নিষেধ করে।কিন্তু হুট করে ডায়নার কাছে একটা ভদ্রলোক আসে আর ভদ্রলোকের নাম অরণ্য।অরণ্যকে নিয়ে আসে তারেই পরিচিত একজন।অরণ্যকে দেখে ডায়না বলল

---বাবু আসুন আপনি মনে হয় এখানে নতুন।বলুন কোন মাল পছন্দ আপনার।পছন্দ হলে আমাকে জানান।

অরণ্য চারপাশ ঘুরে হঠাৎ  রুমের এক কোণে বসা ডালিয়াকে দেখতে পেল।অরণ্য ডালিয়াকে ইঙ্গিত করে বলল

---আমার ঐ মেয়েটাকে চাই।

---ডেইজিকে?কিন্তু বাবু ঐ মেয়েটা তো পোয়াতি আর অসুস্থ।আজকে ওকে ছেড়ে দিন।

---যত টাকা লাগে ততই দিব আমার ঐ মেয়েটাকেই চাই।আর ওকে আমার সাথে নিয়ে যাব।এক লাখ দুই লাখ কত লাগবে বলুন

ডায়না এত টাকার কথা শোনে চমকে গেল।।মনে মনে ভাবল।নিয়ে যা ইচ্ছা করুক। পোয়াতি মেয়ে এমনেই ইনকাম কম।এর থেকে কিছুদিন এর জন্য বেচে দেই এটাই ভালো হবে।

--আচ্ছা বাবু তিন লাখ দিলেই চলবে।তবে এক বছরের বেশি রাখতে পারবেন না।আর জেনে শোনে পোয়াতি নিচ্ছেন সার্ভিস খারাপ দিলে বদনাম করতে পারবেন না।

---সে নিয়ে আপনাকে ভাবতে হবে না।এ নিন চেক।আর আমাকে আমার মাল বুঝিয়ে দিন।

ডায়না ডালিয়াকে এনে অরণ্যের হাতে তুলে দিল।আর ডালিয়াকে বলল বাবু তোকে ১ বছরের জন্য কিনেছে।বাবুর বাড়িতেই থাকবি।আর বাবু যা বলে তাই করবি

।তুই পোয়াতি এটা জেনেই বাবু তোকে নিয়েছে।বাবুকে খুশি রাখবি।এ বলে অরণ্যের হাতে ডালিয়াকে তুলে দিল।

অরণ্য ডালিয়াকে নিয়ে বাসায় গেল।ডালিয়া বুঝতে পারল না তার মত পোয়াতিকে কিনে লোকটার কি লাভ।ডালিয়া ঘরে ডোকার পর খেয়াল করল..


#পতিতা পল্লী

৩য় পর্ব

 লেখিকা- শারমিন আঁচল নিপা

ডালিয়া ঘরে ঢোকার পর খেয়াল করল ঘরটা বেশ সাজানো গোছানো।লোকটার বয়স ও বেশি না এই তো ৩৫ -৩৭ হবে।দেখতেও বেশ সুন্দর।আর বুঝায় যাচ্ছে অনেক টাকার মালিক।আর দেয়ালে একটা লিখা দেখে ডালিয়া থমকে যায়।দেয়ালে লিখা ছিল পৃথীবীর সবচেয়ে ঘৃণিত মানুষ হল মেয়ে মানুষ।এমনটা লিখার কারন ডালিয়া বুঝতে পারল না।ডালিয়া ঘরে ঢোকার সাথে সাথে অরণ্য ডালিয়ার হাতটা ধরে আছরে ফেলে দেয়।আর বলল

--- আজকে থেকে আমি যা বলব তুই তাই করবি।আমার কথার নড়চড় হলে শেষ করে দিব।মেয়ে মানুষকে আমি সবচেয়ে বেশি ঘৃনা করি।দুনিয়ার যত মেয়ের জাত আছে সব মেয়েকে আমি ঘৃনা করি।তুই যদি আমার কথার বাইরে নড়িস তোর খবর আছে।তোকে আমি শারিরীকভাবে পাবার জন্য এখানে আনি নাই।তোকে এনেছি যখন কোন মেয়ের প্রতি আমার  ঘৃণা জন্মাবে তখন তোকে একটা করে শাস্তি দিয়ে আমার রাগ মিটাবো।

---সে আপনি যায় করুন অরণ্য বাবু আজকে আমাকে একটু বিশ্রাম নিতে দিন।শরীরটা খুব খারাপ কালকে থেকে আমি আপনার সব কথা মেনে চলব।আমি পোয়াতি আপনি তো জানেনেই।

---নাহ।এখন কোন বিশ্রাম নাই তোর জন্য।আমার গা হাত পা টিপ।আমার কথার বাইরে গেলে তোর খবর আছে।

ডালিয়া শান্ত স্বরে চুপ করে বসে হাত, পা টিপতে লাগল।ক্লান্ত শরীর যেন আর কিছুই মানছে না।মনে হচ্ছে একটু চোখ বুজতে পারলে ডালিয়ার ভালো লাগত।এসব ভাবতে ভাবতে কখন যে ডালিয়া অরণ্যের পায়ের উপর ঘুমিয়ে গেল খেয়ালেই করে নি।হঠাৎ  অরণ্য ডালিয়াকে এভাবে দেখে রেগেমেগে আগুন হয়ে যায়।জোরে ডালিয়ার পেট বরাবর একটা লাথি মারে।আর ডালিয়া খাট থেকে ফ্লোরে পড়ে যায়।সাথে সাথে ফ্লোরটা রক্তে মেখে যায়।ডালিয়ার বাচ্চাটা মিসক্যারেজ হয়ে যায়।আর ডালিয়া কাতরাতে থাকে যন্ত্রণায় আর বলে

---প্লিজ অরণ্য বাবু আমাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যান না হয় আমার বাচ্চাটা মরে যাবে।এতটা নির্দয় হবেন না।এ বাচ্চাটা আমার কাছে অনেক কিছু।জীবনে প্রথম মা হয়েছি।অনেক কষ্ট পেয়েছি বাচ্চা হারানোর কষ্টটা আমাকে আর দিবেন না।আমাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যান।

---হারামজাদী আমি নিয়ে যাব তোকে ডাক্তারের কাছে।আমি নিজেই একজন প্রাক্তন ডাক্তার। কিন্তু ডাক্তারি ছাড়তে হয়েছে তোদের মত নষ্টা মেয়ে মানুষের জন্য।হারামজাদী তোর বাচ্চাটা শেষ হলে তো তুই কষ্ট পাবি অনেক তাই না?

---হ্যা অরণ্যবাবু অনেক কষ্ট পাব।দয়াকরে আমার একটা ব্যাবস্থা করুন।আমার বাচ্চাটাকে বাঁচান।

---হাহাহা।তোর এ কষ্টটায় আমি উপভোগ করব।তুই কাদঁ আমি তোকে দেখি।এক ঘন্টা পর তোর বাচ্চা পুরোপুরি নষ্ট হলে তোর চিকিৎসা  করব এর আগে না।হাাহাহা

ডালিয়া মেঝেতে কাতরাতে লাগল।ভাবল আর কত দুঃখ তার কপালে লিখা আছে।আর কত কষ্ট পাবে সে।শেষ পর্যন্ত নিজের বাচ্চা হারানোর যন্ত্রণাও পেতে হল।পেটের ব্যাথায় ডালিয়া চিৎকার করতে লাগল।কিন্তু সে কান্না শোনে অরণ্য শুধু হাসতে লাগল।১ ঘন্টা পর ডালিয়া নিস্তেজ হয়ে পড়ল।রক্তে সারা শরীর আর মেঝে মেখে গেল।ডালিয়া সেন্সলেস হয়ে গেল।

ডালিয়ার সেন্স ফিরার পর ডালিয়া খেয়াল করল ডালিয়ার হাতে সেলাইন দেওয়া।জেগে উঠার সাথে সাথে অরণ্য বলে উঠল

---চিন্তা করে লাভ নেই তোর বাচ্চা আর নেই।তোর বাচ্চাটা শেষ।তোর বাচ্চাটা মারা গেছে।তোকে কষ্ট দিতে পেরে কি যে আনন্দ হচ্ছে কি বলব।ইশ ডেইজির বুঝি খুব কষ্ট হচ্ছে।

---আপনি আমাকে কেন কিনে এনেছেন বলবেন?

---বললাম তো তোকে মানসিক যন্ত্রণা দেওয়ার জন্য।তোকে মানসিক যন্ত্রণা দিয়ে শেষ করে দিব।

---আমাকে মানসিক যন্ত্রণা দিয়ে আপনার লাভ?

---লাভ, ক্ষতি কিচ্ছু জানি না।এতে আমার শান্তি।

---কিন্তু কেন?

---কারন মেয়ে মানুষকে আমি ঘৃণা করি।মেয়ে মানুষকে কষ্ট দিতে পারলে আমি শান্তি পায়।তাই তোকে একের পর এক মানসিক কষ্ট দিব আর আমি মানসিক শান্তি নিব।হাহাহাহা।এবার খেয়ে নে।১৫ দিন তোকে কিছু করব না।যা করার ১৫ দিন পর করব।

ডালিয়া অরণ্যের কথা শোনে অবাক না হয়ে পারল না।ডালিয়া বুঝতে পারল না অরণ্যবাবুর মনে মেয়েদের প্রতি এত ঘৃনা কেন।আর ডালিয়াকে মেরে সে কি শান্তি পাবে।এসব ভাবতে ভাবতে ডালিয়া অস্থির হয়ে গেল।ডালিয়া বুঝতে পারল তার জীবনে সুখ শব্দটা আর নেই।ভেবেছিল অরণ্য বাবু হয়ত বুঝবে।কিন্তু পুরুষ মানুষ যে সব এক সেটা আবার প্রমাণিত হল।বাচ্চাটার কথা ভেবে ডালিয়া কান্নায় ভেঙ্গে পড়ল।আচমকা সে জোরে চিৎকার করে কাঁদতে লাগল।আর ডালিয়ার কান্না শোনে অরণ্য হাসতে লাগল।অরণ্যের হাসি শোনে যেন ডালিয়ার আরও বুক ফেটে কান্না আসল।

১৫ দিন  অরণ্য ডালিয়ার আশে পাশেও আসে নি।খাবার গুলা শধু কাজের লোক দিয়ে পাঠিয়ে দিয়েছে।এর মধ্যে ডালিয়া একটু সুস্থ হল।হাঁটতে চলতে পারছে।আচমকা ডালিয়া হাঁটতে গিয়ে সাবান পানিতে পিছলে পড়ল।ডালিয়ার মনে হল এবার কলিজাটা বের হয়ে গেল।ডালিয়া পড়ে ছটফট করতে লাগল।বুঝতে পারল না সাবানের পানিটা কে রাখল এখানে। হঠাৎ  অরণ্য হাসতে হাসতে বলল

---ডার্লিং ব্যাথা পেয়েছ?সাবানের পানিটা আমি ঢেলেছি।যাতে তুমি পড়ে গিয়ে এভাবে ছটফট করতে পার আর আমি হাসতে পারি। হাহা।

---আপনি কেন আমার সাথে এমন করছেন?

---বলেছি তো মেয়ে মানুষ আমার সহ্য হয় না।তোকে কষ্ট দিতে পারলে আমার শান্তি লাগে।হাহাহা

ডালিয়া কোনরকমে মেঝে থেকে উঠে বিছানায় গেল।ডালিয়ার আজকে বুক ফেটে কান্না আসল আর কত কষ্ট তাকে পেতে হবে।আর কত কষ্ট তার কপালে লিখা আছে।এ কোন নরকে এসে সে পড়ল।ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে গেল।পরদিন সকালে ডালিয়া অরণ্যকে দেখে চমকে গেল কারণ..


 ( আমি লেখক লেখিকার গল্প ফ্রী promot করি ) 


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ