গল্প : অধিকার
পর্ব : ৬
লেখক : Yasira Abisha (Fatha)
"আমি আবিশা সিকদার রুহি,, চিটাগং শহরে আমার জন্ম,, মা বাবার একমাত্র সন্তান ছিলাম তারা আমাকে অনেক অনেক বেশি ভালোবাসতেন,, কিন্তু এই সুখ বেশি দিন আমার সহ্য হয়নি,, আমার যখন ৯ বছর বয়স তখনই মা বাবা এক্সিডেন্টে মারা যায়,,
কিন্তু পুরো বংশে প্রথম মেয়ে আমি এবং শেষ পর্যন্ত আমার বাবা চাচাদের কারো ঘরেই আর কোনো মেয়ে সন্তান জন্ম হয়নি।
এইকারনে সবার অনেক আদরের ছিলাম।
দাদা দাদুর আর বড় চাচা-চাচির চোখের মণি ছিলাম সব সময়।
আমার দাদা সেই এলাকার চেয়ারম্যান ছিলেন আর জমিদার পরিবারের হওয়ার সুবাদে দাদা চাইতেন না আমরা কখনো আলাদা থাকি,, আমাদের সব ডিসিশন উনিই নিতেন,, এইজন্য সবার বাড়ি একদম পাশাপাশি ছিলো। আমার বয়স যখন ১২ বছর তখন বড় চাচার ছেলে সাকিব (ও আমার ৫ বছরের বড় ছিলো) ওকে চাচির বোনের কাছে লান্ডানে পড়তে পাঠিয়ে দিয়েছিলো,, ওর যাওয়ায় মত ছিলো না তাই ও অভিমানে বলেছিলো আর কখনো দেশে ফিরবে না। দাদু মারা যাওয়ার ১বছর পরে প্রায় ৬ মাস আগে,, সে হঠাৎ দেশে ফিরে আসে কারণ বড় চাচুর ও হার্টের অসুখ ধরা পরেছিলো,,
.
সেদিন মাত্র আমার ফাইনাল প্রফের লাস্ট এক্সাম শেষ হয়েছিলো,, আমি খুব খুশি ছিলাম,, এই এক্সামটা নিয়ে সব গুলো অনেক ভালো হয়েছিলো,
বাসায় ফিরে দাদুমনির খোঁজ করতেই কাজের মেয়েটা বলে দাদু নাকি বড় চাচার বাসায় গিয়েছে,, আমিও একপ্রকার দৌড়ে চাচুর বাসায় গিয়েছিলাম,,
তখনই বড় হওয়ার পর সাকিব প্রথম আমাকে দেখে ,, স্বাভাবিক ভাবেই কথা বার্তা হয় তার সাথে আমার সাথে তার। আমি বুঝতে পারিনি ওর মনে আমাকে নিয়ে কি রকম চিন্তা ভাবনা কাজ করছে?
সাকিব সবার বড় ছিলো আর দূরে থাকতো বিধায় আমাদের কারো সাথেই তার তেমন ভাব হয়নি। আমি অন্যান্য কাজিনদের সাথেই বড় হওয়ার ওদের সবার আদরের ছিলাম। আমি খুব সহজে সবার সাথে মিশতে পারতাম সাকিবের সাথেও ভাব করে নিয়েছিলাম। কয়েক দিনের মধ্যে সাকিবকে সবাই মিলে ঘুরিয়ে শহর দেখাই,, ও নিজে থেকেই আমাকে বলতো ঘুরতে নিয়ে যেতে আমি আর অন্যভাইরা মিলে নিতাম ওকে,,
একদিন নাস্তার টেবিলে সবাই বসা তখন দাদু আমাকে প্রতিদিনের মত খাইয়ে দিতে দিতে জিজ্ঞেস করে
"সাকিব কেমন রুহি সবটা বলতো??"
"আগে তোমারা বলো চাচি কেন বলতো ভাইয়া কথা বলতে জানেনা বেশি,, তারপর উনি জেদি। উনি কত্ত ভালো জানো তোমরা?? নিজে থেকেই আমাকে বলে ঘুরতে নিয়ে যেতে,, কত কথা বলে আমার সাথে,, এমনকি আমাকে কাল ভাইয়া একটা শাড়ি ও কিনে দিয়েছে। ভাইয়া অনেক সুইট।"
আমি এই কথাটা স্বাভাবিক ভাবেই বলেছিলাম,, কারণ সাকিব আমার কাছে অন্য সব ভাইদের মতই ছিলো। তাকে আমি নিজের ভাই মনে করেছিলাম,, কিন্তু চাচু আমার সাথে সাকিবের বিয়ে ঠিক করে ফেলবে আমি তা ভাবতে পারিনি।
সাকিব নাকি চাচির কাছে বলেছিলো সে আমাকে বিয়ে করতে চায়। এইজন্য চাচা চাচি আর দাদি সবাই খুশি হয়েছিলো,, যে আমাকে অন্য কোনো ঘরে দিতে হবেনা তাদের কোনো টেনশন থাকলো না।
বিকেলে দাদুমণি মিষ্টি সহ আমাকে এসে এই খবর শুনায় আমি হতবাক হয়ে যাই।
এমন কিছু আমি স্বপ্নেও ভাবতে পারিনি,, তখন অনেক কষ্ট হয়।
আমি সাথে সাথে চাচুর বাসায় যাই দেখি সবাই অনেক চিন্তিত, চাচু বসে আছে ডাক্তার তাকে চেক করছেন,
ডাক্তার- উনাকে কোনো রকম টেনশন দিবেন না। উনার অবস্থা ওত ভালোনা,, তাই বেশি এক্সাইটেড হওয়া উনার জন্য সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে সবাই খেয়াল রাখবেন।
ডাক্তার যাওয়ার পরে শুনলাম চাচু বিয়ের প্রিপারেশন নিয়ে ভাবছিলেন কিভাবে কি করবেন এসব নিয়ে সে অসুস্থ হয়ে পরেছেন।
আমি কিছু না বলে বাসায় চলে আসি,, সেদিন অনেক কান্না করেছিলাম,, যারা এতো ভালোবেসে বড় করেছে তারা সবাই আজকে অনেক খুশি কিন্তু আমি তো মন থেকে সাকিব কে নিয়ে কিছু ভাবতে পারছিনা। তখন মা কে অনেক বেশি মিস করেছিলাম,, এত জীবনে চাচা চাচি দাদা দাদি কেউ মা বাবার অভাব বুঝতে দেন নি। কিন্তু সে রাত টা আমার জন্য পাহাড়ের মত কঠিন লাগছিলো।
পরদিন থেকেই বাসায় বিয়ে বিয়ে একটা আমেজ তৈরি হয়ে গিয়েছিলো,, আমি চুপচাপ সবার সব দেখছিলাম। দাদা আমাকে অনেক ভালোবাসতো উনি চাইতেন আমি উকিল হই কিন্তু ডাক্তার হওয়া আমার স্বপ্ন ছিলো বিধায় আমাকে মেডিকেলে পড়িয়েছিলেন। আজকে উনি যদি বেচে থাকতেন তাহলে হয়তো আমাকে সাকিবের সাথে বিয়ে দিতেন না। কিন্তু আজকে কাউকেই বলতে পারছিনা। এদিকে মুটামুটি সাকিবের ফ্রেন্ড অফিসের কলিগস সবাইকেই জানানো হয়ে গেছে যে সে আমাকে বিয়ে করছে।
এনগেজমেন্ট হতে আর ৩দিন বাকি চাচু আমাকে ডেকে বলেন
- মা তোমার শরীর খারাপ? এমন লাগছে কেন আমার মেয়েটাকে? কিছুদিন ধরে?
-না, চাচু।
-চাচু না আমাকে আজকে থেকে বাবা ডাকবে।
এটা শুনে আমি কেদে উঠি।
চাচু আমাকে মাথায় হাত বুলিয়ে জিজ্ঞেস করে কি হয়েছে আসলে?
তখন আমি চাচুকে বলি এই বিয়ে আমি করতে চাইনা।
উনি কিছুক্ষনের জন্য চুপ থাকেন
এরপর আমাকে বলেন
- করতে হবে না তাহলে, তুমি আমার মেয়ে আমার ভাইয়ের শেষ স্মৃতি। তোমার মন যদি সাকিবকে না চায় তাহলে জোর করে বিয়ে দিবো না আমরা।
সেদিন রাতেই চাচা সবাইকে বলে আমার মেয়ে এখম বিয়ে করতে চায় না,, তাই সাকিবের সাথে ওর বিয়ে টা হবেনা। তবে সাকিব বড় হয়ে গেছে ওর জন্য একটা ভালো মেয়ে দেখে আমরা তাড়াতাড়ি বিয়ে করিয়ে দিবো,,প্রথমে চাচি দ্বিধা করলেও পরে সম্মতি দিলো।
আমি খুব খুশি হয়ে গিয়েছিলাম, ভেবেছিলাম সব ঝামেলা শেষ।
বরাবর রাতে আমি কখনো একা ঘুমাতে পারিনা,,ভয় হয় দেখে সবসময় হয় দাদা দাদু নাহয় চাচা চাচির সাথে রাতে ঘুমাতাম। সেদিন দাদুর রাতে খুব জ্বর হয়েছিলো তাই চাচিও রাতে আমাদের বাসায় থেকে গিয়েছিলেন। কিন্তু মাঝ রাতে তার জ্বর এত বেড়ে যায়,, যে চাচি আমাকে বলে তোমার চাচুকে ডেকে নিয়ে আসো।
চাচির কাছ থেকে চাবি নিয়ে,, রাত তখন ২ঃ৪৫ এর মত ছিলো আমি চাচুর বাসায় ঢুকে তার রু রুমেএ..."
কথাটা বলতে রুহি যেন আঁতকে উঠল,, চোখে মুখে, স্পষ্ট ভয়ের ছাপ দেখতে পাচ্ছে ইরাদ।
রুহির হাত কাপছে...
ইরাদ নিজের অজান্তেই ওর হাত আলতোভাবে ধরে বলল
-কি হয়েছে তারপর??
-রুমে গিয়ে দেখি সাকিব চাচুকে বালিশ চাপা দিয়ে বলছে "আমি রুহিকে চাইসি আপনি দিলেন না,, এখন এই দুনিয়ায় আপনার আর দরকার নাই,, আমার চাওয়া পূরণ নাহলে সবার পরিনতি এমন হবে"
চোখেমুখে তার হিংস্রতা প্রকাশ পাচ্ছে। আমার চাচুর হাত পা তখন নিথর হয়ে পরে আছে আলরেডি।
আমি সামনে গিয়ে ওকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেই,, আর চাচুর পালস চেক করে দেখি উনি আর আমাদের মাঝে নেই। তখনই উঠে সাকিবের গালে একটা চড় লাগিয়ে কাদতে কাদতে বলি " তুমি মানুষ নাকি পশু?? এটা কি করল তুমি?? আমার চাচু..."
"আমি তোকে ভালোবাসি তোর জন্য অমানুষ হইসি"
"আমি সবাইকে এখনি বলে দিবো, তোকে পুলিশে দিবো দ্বারা"
তখন ও সাথে সাথে আমার মুখ চেপে ধরে এরপর আমার মুখ বেধে টেনে হিচড়ে গাড়িতে করে কোথায় যেন নিয়ে যায়।
আমি সেন্সলেস হয়ে পড়ি এরপর যখন হুস ফিরিয়ে তাকিয়ে দেখি একটা রুমে আমি চেয়ারের সাথে বাধা অবস্থায় বন্দী। রুমটা একদম পর্দা দিয়ে বন্ধ,, কেউ নেই আশেপাশে। অনেক চিতকার করেও লাভ হলোনা।
একে তো নিজের চাচাকে হারানোর দুঃখ ২য়ত সেই খারাপ লোকটাকে শাস্তি দিতে না পারার দুঃখ।
অনেকক্ষণ পরে সেই জানোয়ার টা আসলো।
এতক্ষণে আমার শরীরে কোনো শক্তি আর নেই আমি আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়েছি নিজেকে চেয়ার থেকে মুক্ত করার কিন্তু পারিনি।
সামনে এসে সাকিব আমাকে বলে
"বাসায় মিথ্যা একটা চিঠি দেখিয়েছি আর বলেছি তুই বয়ফ্রেন্ড এর সাথে পালিয়ে গেছিস,, আর এটা পড়ে আব্বু মরে গেসে" সবাই তোকে আর দেখতেও চাচ্ছেনা। দে হেইট ইউ রুহি৷ আর তোর কথা কেউ মানবেনা কারণ আমাকে তুই বিয়ে করতে চাস না এইজন্য বানিয়ে কিছু বলতেই পারিস। এরকম অনেক হিন্ট আমি ২দিনে সবাইকে দিয়ে দিসি। ২দিন তোকে আমি প্যাথেটিন দিয়ে ফেলে রাখসিলাম। নাও মাই ওয়ার্ক ইস ডান। তাই এখন তোর একটাই ওয়ে আছে আমাকে বিয়ে করে চল বাসায় আমি বলবো তোকে বুঝিয়ে নিয়ে আসছি,, তোকে যেন মেনে নেয়।"
ও এটা বলার সাথে সাথে আমি ওর মুখে থুথু দেই এরপর ও আমাকে অনেক অনেক মারে।
এভাবে আরো এক দিন কেটে যায়।
আমি বুঝতে পারি আমার শরীরে আর কোনো শক্তি নেই। পরদিন একই সময় ও আবার আসে,, আজকে ওর চেহারায় হাসি।
রুমে ঢুকে আমাকে বলে,
"তুই এভাবে না হোক অন্যভাবেই নাহয় আমার হবি,, আজকে তোর সাথে বাসর করে ফেলবো তারপর বিয়ে না করে কই যাবি? আর বিয়ে না করলে নাই করলি আমার সমস্যা নাই"
কথাটা শুনে আমার কলিজার পানি শুকিয়ে যায় আর আমার মাথায় বুদ্ধি আসে কিন্তু গলা দিয়ে কথা বলার শক্তি নেই,, আমি ওকে আস্তে আস্তে বলি "দাড়াও আমি তোমাকে বিয়ে করবো"
এটা শুনে ও সাথে সাথে হাটু গেড়ে আমার সামনে এসে বসে
"কি বললে??"
"বিয়ে করবো তোমাকে এভাবে কিছু করোনা প্লিজ"
ওর চোখ চকচক করছে খুশিতে।
"কখন করবি?"
"আমাকে একটু সুস্থ হয়ে দাও তারপর"
ও খুশি হয়ে আমাকে খেতে দিলো,,আমি খেয়ে ওকে হাসি মুখে কিছু ভিটামিন এর নাম দিলাম আমাকে ওগুলো ও এনে দিলো।
আমি একটা জিনিস বুঝতে পেরেছিলাম ওকে আমার টেকনিকালি হ্যান্ডেল করতে হবে। তাই ঠিক মত খেয়ে আমি সুস্থ হই। এরপর ও বলে
চল বিয়ে করি সেদিন প্রথম আমি বেড় হই এতদিন পরে,, আশেপাশের সব অচেনা মানুষ, পরিবেশ।
কিছুক্ষণ পর দেখি কাজি অফিস,,
যখন ঢুকতে যাবো আমরা তখন দেখি রাস্তার পাশে ইট রাখা অনেক গুলো একটা হাতে তুলে সাহস করে নিয়ে সাকিবের মাথায় আঘাত করি।
এরপর ও সাথে সাথে অজ্ঞান হয়ে পরে যায়।
ওর পকেট থেকে হাতিয়ে যা কিছু টাকা পাই তা নিয়ে আমি পালিয়ে যাই।
সব কিছু দেখে আমি অবাক আমাকে শিফট করে রাজশাহী জেলাতে এনে ফেলেছে। সেসময় ঢাকার ট্রেন ছিলো,, আমি উঠে পরি কিছু না বুঝেই। কারণ সাকিব যদি এসে পরে তাহলে আমাকে ও শেষ করে দিবে।
তারপর সেদিন রাতেই ঢাকা আসি আমি। কিন্তু রাস্তায় খারাপ ছেলেরা আমাকে বিরক্ত করছিলো,, আমি এতটা সময় বৃষ্টি তে ভিজার ফলে জ্বর হয়ে যায়। আর তাদের ভয়ে দৌড়াতে থাকি,,তখনই আপনার বাসার দিকে চোখ পরে,, দেখি কোনো দাড়োয়ান ছিলো না। আমি বাচার জন্য ভিতরে ঢুকে পরি,, আর আপনি গেইট খুলতেই কান্না করতে করতে সেন্সলেস হয়ে যাই,, আমার জীবন টায় আমি শুধু হারিয়েই এসেছি সবকিছু তারপরেও মেনে নিয়েছিলাম,, আর যখন সাকিব আসে তখন আর ভালো কিছুই হয়নি আমার সাথে। আমি জানিনা আমার কি হবে এই জীবন এখন অর্থহীন।"
পড়ন্ত বিকেলের সোনালী রোদ জানালা দিয়ে রুহির ওপরে পরছে ও নিচের দিকে তাকিয়ে কথা গুলো বলছিলো,, কতটা অসহায় লাগছে ওকে,,মনের কষ্টে হু হু করে কাদে চলছে ও,,
আর রুহির জীবন বৃত্তান্ত শুনে ইরাদের কলিজায় লাগছে। মেয়েটার চোখের পানি ওর সহ্য হচ্ছেনা।
কেন যেন ইরাদের ওকে অনেক আপন লাগছে,, নিজে থেকেই ইরাদ রুহিকে জড়িয়ে ধরলো
-ভয় পেয়ো না, আমি আছি। আর কেউ কখনো তোমাকে কিচ্ছু করতে পারবে না কোনোদিন।
কান্না করোনা।
রুহি আস্থা পাচ্ছে, পরম আস্থা পাচ্ছে ইরাদের বুকে,,
চোখ বুঝে ও একটা শান্তি পাচ্ছে।
দুই জন আষ্ঠেপৃষ্ঠে একে অপরকে জড়িয়ে ধরে রেখেছে,, রুহির ইচ্ছে করছে সারাজীবন এই বুকে থেকেই কাটিয়ে দিতে পারবে ও।
গল্প : অধিকার
পর্ব : ৭
লিখাঃ Yasira Abisha (Fatha)
বেশ কিছুক্ষণ ইরাদের বুকে মুখ গুজে রুহি কান্না করলো,, এই কান্না কোনো সাধারণ কান্না নয় বরং,,
এক ঝাটকায় নিজের পরিবারকে হারানোর, এই কান্না এক জোর পুর্বক অধিকার আদায়ের দাবিতে একটা মেয়েকে তার স্বাভাবিক হাসিখুশি জীবন থেকে দূরে সরিয়ে নেওয়ার কান্না,,
ইরাদ বুঝতে পারছে এই মেয়েটা ছোট থেকেই সব কিছু হারিয়ে আসছে,, তার মনের মাঝে অনেক ব্যাথা লুকিয়ে আছে যা সে হয়তো প্রকাশ করতে পারেনা। যা কিছু ঘটে গেছে তাতে তার তো কোনো দোষ নেই, সে কেনো ভয় নিয়ে বাচবে? তাকে একটা স্বাভাবিক জীবন ইরাদ দিবে। তাকে সব রকম দুঃখ থেকে ইরাদ নিজের সর্বোচ্চ দিয়ে বাচিয়ে রাখবে। কেন এমন লাগছে ইরাদ জানে না কিন্তু এই অনুভুতিটা মন্দ না। বরং একটা দ্বায়িত্ব আর সুখ দিচ্ছে ওকে। বেচে থাকার একটা টান লাগছে এই দুনিয়ায়।
.
রুহির কান্না কমে এসেছে কিছুটা, তবুও ইরাদের বুকে লেপ্টে আছে ও,, কেন যেন কথা গুলো বলতেও ওর ভয় হয়,,
ইরাদ আলতো করে রুহির মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতেই জিজ্ঞেস করলো,,
-শপিং মলের ছেলেটা কে ছিলো?
-সে ছেলেটা আমাকে পছন্দ করতো কলেজে থাকতে। আমার ওকে একদম পছন্দ ছিলো না কখনো যদিও দাদা বেচে থাকতে আমাকে বিরক্ত করার সাহস পেতো না কিন্তু দাদা মারা যাওয়ার পরে আমাকে কল দিয়ে বিরক্ত করতো। আমি চাচুর কাছে বিচার দিতে পারতাম কিন্তু ওর মত আরো অনেকে ছিলো যারা পছন্দ করতো,, এদের নামে বিচার দেওয়া মানেই এক্সট্রা এটেনশন দিয়ে ফেলা,, যা আমি কখনো করতে চাইনি। নাহয় আমার বাড়ি থেকে বেড় হওয়াই বন্ধ করে দিতো। কারণ আমার বাসায় অনেক রেস্ট্রিকশন ছিলো, আর আমাকে নিয়ে সবাই অনেক টেনশনে থাকতেন।
-হুম বুঝতে পেরেছি বলেই ইরাদ নিজের বাহুডোরের বাধন হালকা করে দিলো,, রুহি সরে বসলো,,
এমন সময় মাগরিবের আযান পরতে শুরু করলো চারিদিকে।
রুহি- ইশশ! আযান দিচ্ছে আমরা এখনো শাওয়ার ও নেইনি।
ইরাদ- হ্যাঁ,, আমি যাচ্ছি একবারে নামাজ পরে তারপর তৈরি হয়ে ব্যাগ নিয়ে নামছি। আপনি ও ফ্রেশ হয়ে নেন।
এই বলেই ইরাদ চলে গেলো
.
রুহি আগে ওজু করে নামাজ পরে,,
তারপরে গোসল সেড়ে এসেছে একটা লাল রঙের জর্জেট শাড়ি পড়ে।
ফর্সা ধবধবে শরীরে লাল রং একদম এগুনে তৈরি কোনো পরীর মত লাগছে,,
গিসারে হঠাৎ প্রব্লেম হওয়ায় ঠান্ডা পানিতে গোসল করার ফলে গাল গুলো গোলাপি বর্ণ ধারণ করেছে,, কোমর অবধি ভেজা চুল গুলো খোলা অবস্থায় সামনে দিয়ে ডান পাশে এনে রেখেছে, যা আরো বেশি আকর্ষণীয় করে তুলছে রুহিকে।বেশ মনোযোগ দিয়ে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে বেশ কয়েক মিনিট ধরে ব্লাউজের ব্যাকের হুকটা লাগানোর চেষ্টা করছে সে,, কিন্তু কিছুতেই পারছেনা। এমন সময় ইরাদ আসে ওর ঘরে, এমন সুন্দরী দেখে যে কেউ একবার থেমে ওকে দেখতে থাকবে, হোক সে পুরুষ বা নারী। ইরাদ একবার তাকিয়ে চোখ নামিয়ে নিলো রুহির থেকে। এই প্রথম রুহিকে শাড়িতে দেখলো সে,, তাও লাল শাড়িতে। একদম মনে হচ্ছে বউ বউ। বেশ করে নাকের একপাথরের বড় একটা স্টোনের নোসপিন আর নাকের সেই পাশের তিলটা চেহারাকে আরো বেশি উজ্জ্বল করে তুলেছে,, কে এই অপরূপার সৌন্দর্য বেশি বৃদ্ধি করেছে তা একটা প্রতিযোগিতা করেও হয়তো স্থির করা যাবেনা।
ইরাদ তাড়াতাড়ি নিচের দিকে তাকিয়ে বললো -হয়েছে আপনার??
-না, এই হুকটা লাগাতে পারছিনা। একটু হেল্প করবেন।
ইরাদ রুহির ব্লাউজের হুকটা লাগিয়ে দিতে এগিয়ে এসলো,,
ইরাদের ঠান্ডা হাতের স্পর্শ পেতেই রুহি কেমন যেন কেপে উঠলো। এই হাতের স্পর্শ তো ওর হৃদয়ের স্পন্দন পর্যন্ত বাড়িয়ে দেয়,, কেমন যেন লজ্জা লজ্জা লাগে,, যখন রুহি তাকিয়ে আয়নায় একসাথে ওদের দেখলো কেমন যেন পূর্ণতা লাগছে দেখতে। এক হয়ে গেলে কি মন্দ লাগবে ওদের ২জন কে? মনে তো হচ্ছেনা। আয়না তো বলছে বেশ লাগছে একসাথে। ইরাদ অন্য দিকে তাকিয়েই হুকটা লাগিয়ে দিলো।
-আমাকে নেকলেসের হুকটাও একটু লাগিয়ে দিবেন??
না চাইতেও রুহির ঘাড়ে, গলায় ইরাদের তাকাতে হলো, একটু অস্বস্তি লাগছে তবুও চেইনটা লাগিয়ে দিয়ে পেছন ফিরে রুহিকে বললো
-আজকে ওভাবে জড়িয়ে ধরার জন্য আমাকে মাফ করবেন।
-হুম, ঠিক আছে।
-আপনি আস্তে ধীরে রেডি হন সমস্যা নেই আমি ব্যাগ গুলো গাড়িতে পাঠিয়ে দিচ্ছি ড্রাইভারকে দিয়ে। আমরা একবারে এশার নামাজ পরে রওনা দিবো।
রুহি আয়নায় নিজেকে দেখতে আর ভাবছে ইরাদের কত ফর্মালিটি,, একদম ঢং,,
ওকে ধরেছে বলে সরি বলছে। কিন্তু ওর মনে যে একদম গেথে গেছে ও। কোনো পারমিশন ছাড়াই এটা কি ঠিক করেছে? এই অধিকার কি রুহি ওকে দিয়েছিলো?? তাহলে সেই হিসেব কে করবে? রুহির জীবনে ইরাদই প্রথম পুরুষ যে ওকে এভাবে স্পর্শ করেছে আর ও স্বেচ্ছায় তা গ্রহণ করেছে।৷ আজকে আয়নায় এভাবে ব্লাক সুটে ইরাদকে ওর সাথে দেখে ও বুঝে গেছে ওদের জুটিতে ও মানায়।মনে হচ্ছে এত দিনে নিজের স্বপ্নের পুরুষের দেখা মিলেছে এই ছেলেটাকে ছাড়া ওর জীবনটা চলবে না। ওকে যে নিজের স্বামী হিসেবে চাই রুহির। এই নাটকে নিজেকে ইরাদের স্ত্রী হিসেবে বলতেই ওর এত ভালো লাগছে তাহলে বাস্তবে এমন হলে কতই না ভালো লাগবে। কথা গুলো ভেবে একা একাই লাজুক হাসি দিচ্ছে রুহি। মন যেন নতুন স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে ইরাদকে নিয়ে। এই স্বপ্ন অনেক বেশি রঙিন,, যার গাঢ় রঙ হৃদয়কে রঙিন করে তুলেছে অদৃশ্য এক রংধনুতে।
এশার নামাজ শেষ করে রুহি ঘর থেকে বেড় হলো বেশ সুন্দর করে সেজেছে আজকে,, ঠোঁটে লাল লিপস্টিক, গালে হালকা ব্লাশঅন, চোখে মাশকারা,, লম্বা সিল্কি চুল গুলো খোলা,, নাকে হোয়াইট সেই নোস্পিনটাই আছে,, গলায় পাতলা একটা চেইন কানে সুন্দর ২টা টপ পরেছে, এক হাতে একটা ঘড়ি আর এক হাতে একটা হোয়াইট ব্রেসলেট,, মেয়েটার সাজের ধরন এত সুন্দর,, অন্য কোনো ছেলে যদি ইরাদের জায়গায় থাকতো এতদিন রুহির সাথে কাটিয়ে রুহির প্রেমে হাবুডুবু খেতো। কিন্তু ইরাদ ওকে এমন কিছুই বলেনা। বরং এত খেয়াল রাখার পরেও একটা দুরত্ব রেখে চলার চেষ্টা করে। রুহিকে বেড় হতে দেখে একটা স্মাইল দিলো ইরাদ
কিন্তু রুহি ইরাদকে দেখছে,, ব্লাক সুট পরেছে ও ব্যাকব্রাশ করা চুল জেল দিয়ে রেখেছে ফর্সা চেহারা,, খোচাখোচা দাড়ি,, মোবাইলে কি যেন দেখছিলো সে,, রুহিকে আসতে দেখে একটা স্মাইল দিয়ে আবারো ফোনে মনোযোগ দিলো। আবার একটু পর বাকা হয়ে উল্টোদিকের সোফায় বসে পরলো,,
রুহি দাঁড়িয়ে ভাবছে কিছু একটা করা দরকার এই ছেলেটার মুখে নিজের একটু প্রশংসা শুনতে খুব করে ইচ্ছা করছে। কি করা যায়? রুহি এগিয়ে গিয়ে ইরাদকে বললো,,
-আপনাকে মাশাল্লাহ খুব সুন্দর লাগছে।
-ধন্যবাদ
এই বলেই মোবাইলটা রুহির দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো
-এটা আপনার নিউ ফোন,, এত দিন বাসায় থাকতেন তখন ফোন নিতে চাননি আমি কিছু বলিনি,, কিন্তু এখন নিতে হবে।
-ফোন দিয়ে কি করবো?
- আমার সাথে কথা বলবেন।
কথাটা শুনে রুহি ইরাদের দিকে তাকালো
ইরাদ নিজের কথায় নিজেই অপ্রস্তুত হয়ে বলে
-আই মিন বাসার বাইরে যাচ্ছি দরকার হতেই পারে।
-আচ্ছা ঠিক আছে।
রুহি মুচকি হাসলো কথাটা ওর ভালো লেগেছে।
গাড়িতে বসে আছে ইরাদ আর রুহি,,
রুহি মনে মনে বলছে,, মানুষ না চাইতেও কত কম্পলিমেন্ট দিতো আমাকে আর এদিকে উনি আমার দিকে ঠিক মত তাকিয়েও দেখেনা। কঠিন একটা। রুহি একটু একটু রাগ ইরাদ বুঝতে পারছে কিন্তু কারণটা ধরতে পারছেনা ঠিকভাবে।
তবে ড্রাইভারের সামনে কিছু জিজ্ঞেস না করাটাই ইরাদের কাছে ঠিক মনে হলো,,
শাহিনদের পরিবারের সবাই অনেক ভালো ইরাদকে অনেক পছন্দ করে এই সুবাদে রুহিকেও তাদের পছন্দ হয়েছে অনেক, তাদের বাসায় ডিনার করে ইরাদ রুহি হেলিকপ্টারে করে মাত্র ২৮ মিনিটের মাথায় সিলেটে এসে পরলো। ঢাকার তুলনায় শ্রীমঙ্গল খুব সুন্দর,, গাছগাছালির সমারোহ,, বেশ ঠান্ডাও পরে গেছে এখানে একটা স্নিগ্ধ সুষমা ভরা পরিবেশ,, থেমে থেমে দমকা হাওয়া বইছে,, যেন চারিদিকের সবকিছু একত্রে নতুন জুটিকে বরণ করে নিচ্ছে এবং হোটেলে ঢুকতেই ওরা স্পেশালি দুইজনকে বরণ করে নিলো। ম্যানেজার যখন বললো "ওয়েলকাম মিস্টার & মিসেস ইরাদ"
রুহির খুব ভালো লাগলো
"মিসেস ইরাদ" শব্দটা বার বার মনে হচ্ছে কানে বারি খাচ্ছিলো।
সব গুলো ফর্মালিটি কমপ্লিট করে যখন ওরা রুমে যাবে লবি থেকে তখনই ইরাদের ছোট বেলার স্কুলের বন্ধু আরিশা আর পিয়ালের সাথে দেখা হয়,, ওরা কলেজে থাকতে প্রেম করে বিয়ে করেছিলো আজ তারাও ভ্যাকেশনে এই হোটেলে উঠেছে ,, এভাবে দেখা হওয়ায় তিন জনই খুব খুশি হয়ে যায়। রুহির সাথেও পরিচয় করে নেয় আরিশা নিজে থেকেই
আরিশা-মেয়েটা কে? তোর ওয়াইফ?
রুহি- হুম
ইরাদের আগেই রুহি উত্তর দিয়ে দেয়।
আরিশা আর পিয়াল অনেক খুশি হয় খবরটা শুনে।
আরিশা- মেয়েটা অনেক মায়াবী ইরাদ।
ইরাদ- থ্যানক্স দোস্ত
পিয়াল- তোরা কোন রুমে উঠেছিস?
ইরাদ- ৫০৪ এ আর তোরা?
পিয়াল- হানিমুন সুইটে রাইট?
ইরাদ-হুম
আরিশা-তোমার নাম কি ভাবী? আর বিয়ে কবে হয়েছে?
রুহি- আমার নাম রুহি,, আজ সকালেই।
পিয়াল আরিশা একসাথেই বলে উঠে
"ওয়াও"
আরিশা শোন কিছু কথা বলার আছে এই বলেই পিয়াল একটানে সাইডে নিয়ে গেলো ওকে।
কিছুক্ষন পরে দুইজন হাসতে হাসতে বললো
পিয়াল- ইরাদ তোদের রুমটা দেখে তারপর আমরা চলে যাই কি বলিস??
ইরাদ বুঝেছে ওরা কোনো দুষ্টুমি করতে পারে কিন্তু আবার ভাবলো এখন কিই বা করবে,, মনে কিছু প্রশ্ন থাকলেও ওদের সাথে করে নিয়ে গেলো
ইরাদ- হ্যাঁ আয়।
চার জন মিলে ইরাদদের রুমে গেলো
খুব সুন্দর করে রুমটা সাজানো হয়েছে,, ফুল হোয়াইট একটা রুম,, রাউন্ড বেড,, একটা সোফা,, টিভি বার সব কিছুই আছে এখানে,, এর ওপরে রেড রোজ দিয়ে সাজানো,, একদম রোমান্টিক একটা আমেজ তৈরি হয়ে আছে,, যে কারোই নেশায় ধরে যাবে এই ঘরে আসলে।
পিয়াল ইরাদকে নিয়ে ব্যালকনিতে চলে গেলো ও মাহিরার সাথে ইরাদের ডিভোর্স এর কথা জানতো কিন্তু রুহির ব্যাপারে কিছুই জানে না তবে এই ব্যাপারে কিছু জানতে না বরং,, আর আজকে যেহেতু ওদের ফুলসজ্জা এই রাতটা যেন সুন্দর করে কাটায় এই বুদ্ধি দিতেই মূলত ইরাদকে পিয়াল এনেছে। আর আরিশা এদিকে রুহির সাথে সোফায় বসেছে
রুহি মাথায় হাত দিয়ে রেখেছে,, কারণ রুহির ডিনারের পর থেকেই মাথায় হালকা ব্যাথা অনুভব হচ্ছিলো
-কি হয়েছে ভাবী?
- আপু মাথাটা হালকা ঝিমঝিম করছে, দেখি উনি ফ্রী হলে একটা ফ্রেনজিট এনে খেতে হবে তাহলে ঠিক হয়ে যাবো।
-আমার কাছেই তো আছে,, পিংক মেডিসিনটা না?
-জ্বি
-দাড়াও দিচ্ছি।
রুহি আরিশার কাছ থেকে নিয়ে মেডিসিনটা খেয়ে নিলো নাম না দেখেই।
এবার আরিশা বলতে শুরু করলো
-ভাবী ইরাদকে আমরা ছোট থেকে চিনি,, ও অনেক কোমল মনের একটা ছেলে ওকে কখনো কষ্ট দিও না। ও অনেক ভালো। ভালোবেসেই মাহিরাকে ও বিয়ে করেছিলো,, মাহিরা ওকে ছেড়ে যাওয়ার পরে আমরা ভেবেছিলাম ও মনে হয় জীবনটা আর গুছাতে পারবেনা। মাহিরা তামিম নামের এক ছেলের সাথে বিবাহিত থাকা অবস্থায় পরকিয়া করতো,, এমন একটা পাগলের মত ভালোবাসে যে স্বামী তাকে রেখে। শুধু মাত্র ইরাদ ওকে সময় দিতে পারতো না দেখে।
জানো ইরাদের মুখেও এগুলো শুনিনি। মাহিরা নিজেই এই কথা ডিভোর্স এর সময় অভিযোগের সুরে বলেছিলো। মাহিরার প্রতি একটা নোংরা মনোভাব কারো হোক ইরাদ ডিভোর্স এর সময় ও এটা চায় নি,, এমন কেয়ারিং ছেলে কে ফেলে ও চলে যায়,,
যারা ওদের পার্সোনালি চিনতাম সবাই শুধু বলেছিলাম মাহিরার থেকেও যেন আল্লাহ পাক ভালো কাউকে ইরাদের জীবনে এনে দেয়। তোমাকে আল্লাহ পাক পাঠিয়েছে। তুমি ওকে অনেক ভালোবাসা দিও,, ও তোমাকে অনেক ভালো রাখবে ভাবি।
কথা গুলো শুনে রুহির কাছে ইরাদের ডিভোর্স এর ব্যাপারটা পুরো ক্লিয়ার হয়ে গেলো।
এখন তো ইরাদের ওকে দূরে ঠেলে দেওয়ার কারণটাও মাথায় ঢুকছে,, হয়তো ইরাদ ভয় পায়,, সম্পর্কের প্রতি হয়তো একটা ভয় বাসা বেধে গেছে ওর মনে। কিন্তু রুহির মনে কোনো ভয় নেই আর।
ইরাদ ভালো,, ওর মনটা ভালো।
ও কোনো অন্যায় করেনি যার ফলে ওর ওয়াইফ চলে গেছে।
বরং ওই মেয়ে না গেলে হয়তো আজকের এই ইরাদকে রুহি পেতো না।
আরিশার হাত ধরে রুহি বললো
-আমি আপনার বন্ধুকে নিজের থেকেও অনেক বেশি ভালোবাসা দিয়ে রাখবো। ইনশাআল্লাহ অনেক যত্নে রাখবো। তার জীবনের কালো অধ্যায় গুলো ভুলিয়ে দেওয়ার আপ্রান চেষ্টা করবো।
-শুনে অনেক খুশি হলাম,, আচ্ছা ভাবী তোমার কি ওর সাথে লাভ এট ফার্স্ট সাইট হয়েছিলো? নাকি ধীরে ধীরে প্রেমে পড়েছো?
-ধীরে ধীরে প্রেমে পড়েছি, আর আজকে বুঝতে পেরেছি তাকে আমি অসম্ভব পরিমাণে ভালোবাসি।
এই বলেই রুহি একটা লাজুক হাসি দিলো।
এরপর রুহি আর আরিশা ফোন নাম্বার এক্সচেঞ্জ করে নিলো।
এদিকে পিয়াল আর ইরাদ চলে এসেছে।
আরিশা- পিয়াল সময় হয়ে গেছে এসে পরো ডার্লিং।
ইরাদ- যা যা তোর বউ ডাকছে।
পিয়াল- কাজ হইসে আরিশা?
আরিশা- একদম,, এবার চল।
পিয়াল যাওয়ার সময় ইরাদকে বেস্ট ওফ লাক বলে চলে গেলো,,
রুহি লজ্জায় একদম কুকড়ে যাচ্ছিলো পিয়াল আর আরিশায় দুষ্টুমিতে।
ওরা যাওয়ার পরে
ইরাদ রুহিকে বললো
-আপনি চেঞ্জ করে নেন
- আমি এখন চেঞ্জ করবো না একটু ঘুমাই,,
-তাহলে আমি চেঞ্জ করে আসি,, আপনি বিছানায় শুয়ে পরুন, আমি সোফায় থাকছি।
-সমস্যা নেই মাঝে কোল বালিশ দিয়ে দিচ্ছি আপনি ওপাশে শুয়ে পরুন। সোফায় শুয়ে ঘুম হবেনা ঠিক মত।
-না সমস্যা নেই।
-যা বলেছি তাই করবেন। এই বলেই রুহি গিয়ে শুয়ে পরলো।
ইরাদ ফ্রেশ হয়ে এসে সোফায় বসেছে রুহি কাত হয়ে বিছানায় শুয়ে আছে ওপাশে মুখ করে,, ইরাদ ওর দিকে একবার তাকিয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে রইল, এমন একটা পরিবেশে এই মেয়েটার সাথে কেমন যেন লাগছে,, মনের ভিতর আনচান করছে। রুহির প্রতি ওর একটা মায়া কাজ করে এটা ইরাদ বুঝে কিন্তু আজকে ওকে বার বার তাকিয়ে দেখতেই ইচ্ছে করছে সেই সকাল থেকেই, বেশ করে বিকেলে সবটা শুনার পর থেকেই মেয়েটার প্রতি যত্ন আর টানটা চক্রবৃদ্ধি আকাড়ে যেন প্রতি সেকেন্ডে বেড়ে চলছে,,
মনে মনে নিজেই নিজেকে বলা শুরু করলো
"এটা কিন্তু মোটেও ঠিক হচ্ছে না ইরাদ,, এভাবে মেয়েটাকে দেখা ঠিক না। রাতে যখন ও রেডি হয়ে এসেছিলো ঠিক সোকেজের গ্লাসে রুহিকেই দেখে যাচ্ছিলি তুই,, মেয়েটা যদি বুঝতে পারে তোকে কি ভাববে? বিশ্বাস করেছে তোকে আর তুই কি না ওকে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখিস,, কিন্তু না চাইতেই তো এমন হচ্ছে ইরাদ তো ইচ্ছে করে এমন করেনা"
এসব ভাবতে ভাবতেই মনে হলো
" অনেক রাত হয়ে যাচ্ছে ঘুমাই এখন বাকিটা কাল ভাববো"
লাইট অফ করে ড্রিমলাইট অন করে দিলো ইরাদ,, বিছানায় গিয়ে পাশ ফিরে শুয়ে চোখ বন্ধ করতেই বুকে নরম কিছু অনুভব করতে পারলো ইরাদ তাকিয়ে দেখলো
রুহি হাত রেখেছে ওর বুকে
আর ওর দিকে তাকিয়ে আছে,,, ড্রিমলাইটের আবছা আলোতে রুহির চেহারা স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে।
ইরাদ কিছু না বলে আস্তে করে হাতটা সরিয়ে দিয়ে অন্য পাশে ফিরতে চেষ্টা করে তখন রুহি ওকে হাত দিয়ে টেনে ধরে বাধা দিয়ে জিজ্ঞেস করে,,
ঠোঁট ভেটকিয়ে জিজ্ঞেস করে
- দেখতে ভাল্লাগেনা আমাকে? অন্য দিকে ফিরছো কেন? বলো?
রুহির কথা শুনে ইরাদ ভেবাচেকা খেয়ে যায়।
চোখ বড় বড় করে তাকায় ওর দিকে...
গল্প : অধিকার
পর্ব : ৮
অবিবাহিত অবস্থায় এক বিছানায় রুহির সাথে থাকতে অস্বস্তি লাগছে ইরাদের,, কেমন যেন অস্বাভাবিকতা কাজ করছে।
তারপরেও ড্রিমলাইট অন করে বিছানায় গিয়ে পাশ ফিরে শুয়ে চোখ বন্ধ করতেই বুকে নরম কিছু অনুভব করতে পারলো ইরাদ,, তাকিয়ে দেখলো
রুহি হাত রেখেছে ওর বুকে
আর ওর দিকে কেমন এক দৃষ্টিতে রুহি তাকিয়ে আছে,,, ড্রিমলাইটের আবছা আলোতে রুহির চেহারা স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে।
ইরাদ কিছু না বলে আস্তে করে হাতটা সরিয়ে দিয়ে অন্য পাশে ফিরতে চেষ্টা করে তখন রুহি ওকে হাত দিয়ে টেনে ধরে বাধা দিয়ে,,
ঠোঁট ভেটকিয়ে জিজ্ঞেস করে
- দেখতে ভাল্লাগেনা আমাকে? অন্য দিকে ফিরছো কেন? বলো?
রুহির কথা শুনে ইরাদ ভেবাচেকা খেয়ে যায়।
চোখ বড় বড় করে তাকায় ওর দিকে,
ইরাদকে তাকাতে দেখে রুহি একটা মিষ্টি করে হাসি দিয়ে জিজ্ঞেস করে,,
-বলো না?
-অনেক রাত হয়ে গেছে ঘুমিয়ে পরুন।
-পরে,, এখন খুদা পেয়েছে।
-আচ্ছা খাবার অর্ডার দিন ফোন আছে ওই পাশে,,
আদুরে কন্ঠে রুহি বলে
-এই খাবার না,,
-তাহলে?
-চুমু খাবো তোমার থেকে।
এমনিতেই মেয়েটাকে ইরাদের ভালো লাগতে শুরু করেছে, তার মধ্যে এমন কথা বার্তা একদম ভালো লাগছেনা শুনতে,,
তাই রাগে ইরাদ বলে উঠে
-আপনি আমার স্ত্রী না সে এসব উল্টাপাল্টা আবদার করে বসেছেন।
কথাটা রুহির ইগোতে লাগলো অনেক বেশি,,
সাথে সাথে উঠে রুমের বাইরে চলে গেলো
ইরাদ অবাক হয়ে গেলো এমন করছে কেন মেয়েটা,,
নিচে রুহি রিসিপশনে চলে এসেছে
-ম্যানেজার,, ম্যানেজার আমার একটা কাজি লাগবে এখন
-সরি, ম্যাম বাট কাজি এত রাতে?
-আমি বিয়ে করবো ইরাদকে।
লবিতে কয়েক জন স্টাফ আর এক দম্পতি দাঁড়িয়ে আছে,,
ইরাদ রুহির পিছু পিছু চলে এসেছে এসব শুনে ও পুরপুরি চমকে গিয়েছে আর বলে
-একচুয়ালি আমার ওয়াইফের সাথে আমার ঝগড়া হয়েছে একটু তাই ও বলেছে আবার বিয়ে করতে হবে ওকে,, আমি বুঝিয়ে নিয়ে যাচ্ছি।
রুহি কিছুই বলছেনা
-রুহি চলেন।
-না যাবো না, বিয়ে করতে হবে এখনি
সেই মাঝ বয়সী দম্পতি একসাথেই এগিয়ে এসলো
মহিলাটা বললো রুহিকে
-আপনি চাইলে আমরা আপনার সাহায্য করতে পারি,, আমার স্বামী বিয়ে পড়ানোর কাজ করতেন একটা সময় উনি কাজী।
ইরাদের চোখ বড় বড় হয়ে গেলো এবং সাথে সাথে বললো,,
-না থাক দরকার নেই উনার রাগ এমনিতেই কমে যাবে,,
ইরাদের কথায় ভ্রুক্ষেপহীন হয়ে রুহি
মহিলার কথা শুনে বলে
- এখানে এই অবস্থায়ই আমাদের বিয়ে দেন,,
-রুহি বিয়ে করবে কিভাবে? সাক্ষী লাগবে,, কিন্তু এখানে তো কেউ নেই সাক্ষী দেবার
ইরাদের মাথায় এর থেকে বেশি আর কোনো বুদ্ধি আসলো না,,
-পিয়াল ভাই আর আরিশা আপুকে ডাক দেন
ইরাদ কিছু শুনছেনা দেখে রুহি নিজের মোবাইল দিয়েই আরিশাকে কল দিয়ে নিচে আসতে বললো,,
এদিকে কাজী সাহেব ও প্রস্তুত,,
আরিশা আর পিয়াল ব্যাপারটা খুব ইঞ্জয় করছে,,
রুহির চোখ খুশিতে চকচক করছে,,
আর ইরাদের মাথায় খেলছেনা রুহি এমন কেন করছে??
কিছুসময়ের মধ্যেই ওদের বিয়ে সম্পন্ন হলো।
ঘোরে থাকতে থাকতেই রুহি আজ ইরাদের স্ত্রী হয়ে গেলো। একটা বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে গেলো ওরা
পবিত্র একটা বন্ধন। রুহি কেন এত পাগলামি করলো কি আসল কারণ হতে পারে এটা ইরাদের মাথায় নেই। বিয়ে তো ছেলে খেলা না,, যে মেয়ে মুখ ফুটে পছন্দ করে কিছু খেতে পর্যন্ত চায় না আজ সে জোর করে বিয়ে করে নিলো।
রুহিকে পাশে শুতে বলে ইরাদ ও শুয়ে পরলো
রুহি ওর কোমড় জড়িয়ে ধরে বললো
-এবার দাও না খেতে।
ইরাদ বুঝেছে রুহি কি চাইছে কিন্তু ও কিছু না বলেই এবার রুহির হাত সরিয়ে অন্য দিকে ফিরে শুয়ে পরতে নেয়, রুহি এবার রাগে ইরাদের পেটের উপরে উঠে বসে।
ইরাদের অস্বস্তি বেড়ে গেছে অনেকাংশ,, মেয়েটা করছে কি আর কি আবলতাবল বলছে এসব,,
-ইরাদ আমাকে ভাল্লাগেনা তোমার?
রুহির এখন একরকম অস্বাভাবিক অবস্থায় আছে যা দেখে ইরাদের মনে হচ্ছে ওকে নিরুৎসাহিত করতে হবে,, তাই উত্তরটাও তেমনিভাবেই দিলো ইরাদ
- না লাগেনা একটুও,, এবার সড়ুন।
-ভালো মত দেখেছো আমাকে কখনো?
-দেখার ইচ্ছেই নেই
কথাটায় রুহির খুব রাগ উঠে গেলো
একটানে শাড়ির আঁচলটা টেনে ফেলে দিলো ও
ইরাদ এবার নিজের চোখ ঢেকে ফেললো হাত দিয়ে,,
- কি করছেন আপনি?
- তুমি আমাকে দেখছো না কেন?
-ভালো লাগেনা তাই
এবার কোল থেকে সড়ে রুহি শাড়ির সাথে ব্লাইজটাও খুলে ফেলে দিলো মাটিতে,,
ইরাদ চোখে হাত দিয়ে ঢেকে রেখেছে এইজন্য রুহির মন খারাপ হয়ে গেলো সে কান্না শুরু করে দিলো। ইরাদ কান্নার আওয়াজে তাকিয়ে দেখে,, এবার আর কিছু বলতে পারছে না। মেয়েটাকে দেখলে এমনিতেই হার্টবিট কেমন যেন দ্রুত উঠানামা করতে থাকে। আর এমন রাতের বেলা হুট করে বিয়ে এরপরেই এই অবস্থায় ওকে এরকম কামনীয় দৃষ্টিতে তাকিয়ে ফুপিয়ে কান্না করতে দেখে নিজেকে আর সামলে রাখা প্রায় অসম্ভব হয়ে যাচ্ছে।
ইরাদকে তাকাতে দেখে রুহি আবারও জিজ্ঞেস করলো
-সত্যি কি একটুও ভালো লাগেনা আমাকে?
ইরাদ এবার মুখ অন্যদিকে ঘুরিয়ে বলে ফেললো
-লাগে, ভালো লাগে অনেক।
রুহি এবার একটা হাসি দিয়ে এক ঝাটকায় ইরাদকে জড়িয়ে ধরে ওর বুকে লেপ্টে গেলো,, ইরাদের বুকে আস্তে আস্তে মুখ ঘষে চলছে ও
ইরাদ ওকে ধরছেনা।
রুহির হৃদস্পন্দন বেড়ে গেছে,, ইরাদ তা স্পষ্ট অনুভব করতে পারছে,,
-তাহলে একটুও আদর করো না কেন আমাকে ইরাদ? আমি যে কত বাহানা খুজে বেড়াই তোমার থেকে একটু আদর পাওয়ার,,
ইরাদ এসব কথাতে অনেক বেশি দুর্বল অনুভব করছে রুহির প্রতি,,
তারপরেও তার হাত দুটো একদম সংযত করে রেখেছে,,
ইরাদের একটা হাত নিয়ে রুহি ওর উনমুক্ত কোমড়ে রেখে বললো,,
-আদর করো আমাকে।
-...
-আমাকে এভাবে দেখে আদর করতে ইচ্ছা করছেনা তোমার? আমি তো আমার সর্বোস্ব দিয়ে তোমাকে চাইছি। বিয়েও করেছি এখন তো আমি তোমার বউ,, আমাকে আদর দিচ্ছো না কেন?
ইরাদ এবার এর নিজেকে কন্ট্রোল করতে না পেরে রুহিকে বিছানায় শুয়িয়ে দিয়ে নিজের টি-শার্টটা খুলে ফেলে রুহিকে জড়িয়ে ধরে ওর কপালে, গালে, গলায়, কানে অজস্র চুমুতে ভরিয়ে দিলো,, রুহিও একই কাজ করছে,, কেমন একটা গভীর মোহনীয়তায় ডুবে যাচ্ছে দুইজন,, রুহির ফর্সা চেহারা উত্তেজনা,, ভালো লাগা সব মিলিয়ে লাল হয়ে গেছে। ঠোঁট দুটো কাপছে,, সারা শরীর গরম হয়ে গেছে,, ইরাদ আজকে ওকে নতুন করে আবিষ্কার করছে,, প্রতিটি স্পর্শ ইরাদের মনে আর রুহির পুরো শরীরে একটা কম্পন তৈরি করে চলছে,, কেমন যেন একটা নেশা আছে রুহির ঠোঁটে,,
ইরাদ যখন রুহির ঠোঁটে চুমু দিতে যাবে তখন হঠাৎ করেই মনে পড়লো যাই হোক মেয়েটা ওর স্ত্রী হলেও এভাবে মোহোর ঘোরে থেকে সবকিছু করে ফেলা ঠিক না,, এতে রুহির অনেক বড় ক্ষতি হবে,, যদি শুধু মাত্রই এটা রুহির শারীরিক চাহিদা হয়ে থাকে? যদি ইরাদের মনে ওকে নিয়ে যেমন একটা টান কাজ করে ওর মনে এমন কিছু কাজ না করে থাকে?? তাহলে কাল সকালে রুহি ইরাদকে মাফ করতে পারবেনা,, আর ইরাদ চায় না রুহি ওকে খারাপ ভাবুক। কিন্তু রুহির এমন আচরণ,, এরকম স্পর্শ,, এরকম কথা সব মিলিয়ে ওকে পাগল করে দিচ্ছে,, কোনো ভাবেই নিজেকে সামলাতে পারছেনা আর।
-আদর দাও,, থেমে যাচ্ছো কেন? হুম?
ইরাদ এবার দাঁড়িয়ে ওকে কোলে তুলে নিলো,, রুহি ওর গলা জড়িয়ে ধরে খিলখিল করে হেসে দিলো।
ইরাদ সোজা ওকে বাথরুমে নিয়ে শাওয়ার ছেড়ে দিয়ে বেড় হয়ে যেতে চাইলো,, এই শীতে একমাত্র ঠান্ডা পানিতে গোসল যদি রুহিকে শান্ত করতে পারে এই আসায়।
শাওয়ার ছাড়তেই রুহি একটানে ইরাদকেও ভিজিয়ে দিলো অনেক ক্ষন চোখ বন্ধ করে ইরাদের বুকে মাথা দিয়ে দাড়িয়ে রইলো রুহি।
ইরাদের অনেক শান্তি লাগছে রুহির মাথাটা ওর বুকে নিয়ে রাখতে।
রুহি এখন কিছুটা শান্ত হয়েছে,, ইরাদ ওকে কাপড় এনে দিয়েছে,, এখন ও নিজেই চেঞ্জ করে নিয়েছে,, একটা আকাশি সালোয়ার কামিজ পরে বেড়িয়ে এসেছে বাথরুম থেকে। আর ইরাদ ও চেঞ্জ করে নিয়েছে,,
ওদের কাপড় গুলো ইরাদ বারান্দায় নেড়ে দিয়ে রুমে এসলো রুহি আধশোয়া অবস্থায় বিছানায় হেলান দিয়ে বসে আছে চোখ বন্ধ করে।
ইরাদ বিছানায় এসে শুয়ে পরেছে,,
রুহি ওকে দেখে এবার আস্তে করে ওর বুকে মাথা দিয়ে শুয়ে আর এক হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে শুয়ে পরলো,,
-ঠান্ডা লাগছে অনেক
এখন ইরাদ কোনো বাধা দিচ্ছেনা। বরং হাত বুলিয়ে দিচ্ছে রুহির মাথায়,, ব্ল্যাংকেটটা ওদের ওপরে টেনে আকড়ে ধরলো রুহিকে,,
মেয়েটা এত শান্তি দেয় কেন আমাকে? ওর চোখ ও যেন আমার সাথে কথা বলে। রুহি ঘুমিয়ে গিয়েছে। ইরাদের অনেক ভালো লাগছে রুহিকে বুকে নিয়ে। মনে একরাশ সুখ,, এসে জমা হয়েছে। কিন্তু অনুভূতি গুলো এমন কেন? ইরাদ কি প্রেমে পড়লো আবারও??
কে যেন বলেছিলো প্রেম জীবনে একবারই আসে?
উক্তিটি ইরাদের আজকে মিথ্যা মনে হচ্ছে,, কারণ আজকে হঠাৎ করেই মেয়েটার প্রেমে পড়ে গেছে ইরাদ। এই প্রেম যেন নিজেকে পূর্ণতা দিচ্ছে,, আগুনে পানি ঢেলে দিয়েছে,, মনের সব দুঃখ কষ্ট মুছে দিয়েছে,, স্বস্তি আর সজীবতা এনে দিয়েছে।
এ মেয়ে না যেন একটা আদুরে বাচ্চা যে ইরাদকে বাধ্য করেছে নিজের প্রেমে পরতে।
বেশ করে যখন রুহি ঠোঁট জোড়া বাচ্চাদের মত করে বলছিলো
-আমাকে তোমার ভালো লাগেনা?
কথাটায় অনেক কিছুই উপলব্ধি করতে পারলাম যে হ্যাঁ তোমাকে আমার ভালো লাগে,, একটু বেশিই লাগে। যা ভালোবাসায় রূপ নিয়ে নিয়েছে।
এসব ভাবতে ভাবতেই ইরাদও রুহিকে বুকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ঘুমের রাজ্যে হারিয়ে গেলো,,
১০টার দিকে রুহির ঘুম ভাংলো,, চোখ খুলেই নিজেকে ইরাদের বুকে আবিষ্কার করলো রুহি,, ইরাদ ঘুমের মধ্যেও স্মাইল করছে। মনে হচ্ছে খুব আরামের একটা ঘুমে সে আছে,,
রুহির মাথাটা একদম ঝিমঝিম করছে। আর ও এই অবস্থায় ইরাদের বুকে শুয়ে আছে।
অনেক লজ্জা লাগছে,,
গায়ের জামাও অন্যটা পরা।
কিছুই বুঝতে পারছেনা,, কেমন যেন ভয় ভয় করছে,, কাল রাতে কি ইরাদ ওকে?
না ইরাদ তো এমন না।
তবে কি ও নিজেই?
কিন্তু ওর তো কিছু মনেই পরছেনা।
কিছুই মনে আসছেনা কেন?
রুহি এবার উঠে তাড়াতাড়ি নামাজটার কাজা পরে নিলো ফ্রেশ হয়ে এসে,,
মোনাজাতে কান্না করতে শুরু করলো,, ও তো কখনো চায়নি বিয়ের আগে এমন কিছু করতে কিন্তু নিজেকে এই অবস্থায় দেখে ওর মনে অনেক কথাই আসছে। ইরাদকে ও ভালোবাসে ঠিকি কিন্তু বৈধতা দিয়ে ওকে নিজের সবটা দিতে চায় রুহি।
মনের ভিতরে এক অজানা ভয় বিরাজ করছে রুহির। এমন কষ্ট থেকে পরিত্রাণের একমাত্র উপায়ই হচ্ছে সত্যিটা জানলে।
রুহিকে নামাজে কাদতে দেখে ইরাদের ঘুম ভেংগে যায়।
সাথে সাথে উঠে বসে,,
রুহি নামাজ শেষে ইরাদের দিকে অসহায়ের মত তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো
-রাতে কি আ আমাদে..
-আপনার কিছু মনে নেই?
-রুহি,, উহুম আমি মেডিসিন খাওয়ার পরে ঘুমাতে গিয়েছি বেডে এরপর থেকে আর কিছুই মনে আসছেনা ।
-আপনি কিসের মেডিসিন খেয়েছিলেন কালকে?
-নামটা দেখিনি, মাথা ঠান্ডা রাখার একটা মেডিসিন ছিলো সম্ভবত।
-আরিশার ব্যাগ থেকে দিয়েছিলো?
-হুম
ইরাদের আর বুঝতে বাকি নেই সেটা যৌন উত্তেজক কোনো ঔষধ ছিলো,,
রাতের বিয়ের ঘটনাটা রুহিকে খুলে বললো ইরাদ কিন্তু এর বেশি কিছুই বললো না।
ইরাদ চায় না রুহিকে ও বিয়ে করেছে দেখে রুহি জোর পূর্বক স্ত্রীর দ্বায়িত্ব পালন করুক।
মন থেকে যদি মানতে পারে তাহলেই ইরাদ ওকে গ্রহণ করবে আর যদি রুহি ওকে ছেড়ে যেতে চায় তাতেও ইরাদের কোনো সমস্যা নেই।
রুহি খুশিতে লজ্জায় ভয়ে কান্না করে দিলো
-কান্নার মত কিছু হয়নি। আপনি যা ডিসিশন নিবেন তাই হবে। সব আগের মতই আছে ভয় পাবেন না।
রুহি মনে মনে ভাবছে কাল রাতে যা যা হলো ইরাদকি এগুলো মেনে নিতে পেরেছে? নাকি সমাজের জন্য বাধ্য হয়েছে??
আমার কি একটা সরি কি বলা উচিত?
ইরাদ উঠে বাথরুমে যাচ্ছে এমন সময় রুহি
বলে
" সরি কাল রাতের জন্য "
ইরাদ রুহির দিকে তাকিয়ে হাসলো, তারপর চলে গেলো।
এই হাসির অর্থটা কি? আর কেনোই বা
এত সুন্দর হাসি এই ছেলেটার?
একদম কলিজায় লাগে রুহির।
ইরাদ ফ্রেশ হয়ে এসেছে রুহি বারান্দায় বসে আছে ওদের কফি চলে এসেছে,,
কফি হাতে রুহির কাছে গেলো ইরাদ,,
শ্রীমঙ্গল এত সুন্দর করে ইরাদকে ওর ভালোবাসা বুঝিয়ে দিবে এটা ইরাদ জীবনেও ভাবেনি।
ইচ্ছে করছে রুহিকে বলতে
" ভালোবাসি ঝড়ের রাতে আগত হুরপরী
অনেক ভালোবাসি তোমাকে
আমার হয়ে থাকবে আজীবন??"
কিন্তু রুহির মনের খবর না জেনে যে কিছু বলতে পারছেনা ইরাদ।
আর এদিকে কফিতে একবার রুহি চুমুক বসাচ্ছে আর অন্যদিকে ইরাদের দিকে তাকিয়ে ভাবছে
"দিনে দিনে তো তোমার প্রেমে পাগল করে ফেলছো মিঃ ইরাদ,, তোমার মনে একটা ছোট জায়গা দিবে আমাকে??"
প্রেম ক্রমান্বয়ে দুই জনের মনেই বেড়ে চলছে,,
নিখাঁদ ভালোবাসা তৈরি হয়ে গেছে,, বিয়ে হয়েছে ঠিকি কিন্তু কাজ করছে একটা জড়তা।
প্রেমটা কি তাহলে বিয়ের পরেই হবে ওদের?
রুহি আর ইরাদ দুজনেই ভাবছে অপর পাশের মানুষটার বাম পাশের ছোট হৃদয়ে কি একটু খানি জায়গা পাওয়া যাবে??
নতুন দিনের সূচনায় আজকে একজোড়া নতুন পবিত্র প্রেমিক জুটির জন্ম হলো,, বৈধ প্রেম।
সামনে ভাগ্য কি রেখেছে তাদের জন্য এর কোনো আভাস নেই,, মনে আছে একরাশ ভালোবাসা আর একসাথে ভালো থাকার একটা অদম্য ইচ্ছা...
গল্প : অধিকার
পর্ব :৯
আমার মত একটা মেয়ে জোরপূর্বক বিয়ে করতে পারে এক রাতের মধ্যে"
মনে মনে কথাটা বলে রুহি শিউরে ওঠে।
সোফায় পা তুলে বসে রুহি চকলেট খাচ্ছে,,
ইরাদ গোসলে গেছে একটু পর ওরা ঘুরতে বেড় হবে।
এমন না যে ইরাদের সাথে বিয়ে তে রুহির মন খারাপ বা এটা খারাপ লাগছে কিন্তু ওর বিয়ের সময়ের কোনো কথাই তো ওর মনে পড়লো না।
এটা কি ঠিক? বিয়ে নিয়ে মেয়েদের কত শত প্ল্যান থাকে আর রুহির নাকি একটা ছবিও নেই।
তবুও ইরাদ ওর স্বামী,, যার সাথে কাল পর্যন্ত কোনো সম্পর্ক ছিল না,, আর সেই ছেলেটাই রুহির সাথে সবচেয়ে পবিত্র একটা সম্পর্কে আবদ্ধ হয়ে গেছে,, এটা ভেবে যেন রুহির চেহারার চমকই বেড়ে গেছে সকাল থেকে।
আরিশা কল দিলো রুহিকে
-হাই নিউলি ওয়েডেড ব্রাইড
-হাই আপু
-শুনো তোমার হাতে কাল মেহেদী দেখিনি আজকে কিছু ইন্সট্যান্ট মেহেদী পাঠিয়েছি,, লাস্ট টাইম ইন্ডিয়া গিয়ে তোমার ভাইয়া আর আমি কিনে এনে ছিলাম। ওগুলো আলরেডি ডিজাইন করা তুমি জাস্ট ডিজাইনটা হাতে বসিয়ে দিলেই হয়ে যাবে ৫ মিনিটে।
-আপু কি দরকার ছিলো কষ্ট করার?
-ইশশ, যা বলো না? কষ্টের কি হইসে?
-তাড়াতাড়ি বউ সেজে আসো সুন্দরীতমা
-আচ্ছা আপু রাখছি
রুহির খুব লজ্জা লাগছে,,
ইরাদ ফ্রেশ হয়ে এসে গেছে,, গ্রে কালারের প্যান্ট হোয়াইট শার্ট দেখতে একদম সুপুরুষ। যে কোনো মেয়ের স্বপ্নের পুরুষ এমনটাই হয়তো কল্পনায় থাকে,, আজ রুহির কল্পনা সত্যি হয়ে গেছে। রুহি খাটে বসে হাতে মেহেদী লাগাতে ব্যাস্ত আর ইরাদকে দেখছে চুপিচুপি ড্রেসিং টেবিলের আয়নার মাধ্যমে। ইরাদ রুহিকে দেখে হাসছে মিটিমিটি,, রুহির যে সাজগোজের এত শখ তা ইরাদ জানতোই না, কাল যদি রুহিকে ওমন সুন্দর করে সাজতে না দেখতো। সাজে যদি কেউ দক্ষ নাহয় তাহলে ওত সুনিপুণভাবে কেউ রেডি হতে পারেনা।
আজ কথা খুব একটা মুখে নাহলেও দুইজন দুইজনের পাশে থাকাটায়ই বেশি স্বাচ্ছন্দ্যে উপভোগ করছে। দুইজনের চেহারা দেখলেই যে কেউ বুঝতে পারবে,, আজ সকাল থেকেই চেহারার নূর বেড়ে গেছে ওদের৷ মানুষিক শান্তি থাকলে যে চেহারার নূর বাড়ে তার জ্বলজ্যান্ত প্রমাণ এই দুইটা মানুষ।
রুহির কথার মাধ্যমে ভাংলো ওদের মৌনতা
-এইযে শুনুন,,
-জ্বি
-কোথায় যাবো এখন?
-চা বাগান দেখবেন আজ? নাকি হামহাম জলপ্রপাতে নিয়ে যাবো যদি চান?
রুহির চোখ জ্বলজ্বল করে উঠলো,,
-সত্যি?? আমাকে হামহাম জলপ্রপাত দেখতে নিয়ে যাবেন?
-হুম নিয়ে যাবো। আজ যাবেন?
উচ্ছাসিত কন্ঠে রুহি বলল,
- হ্যাঁ হ্যাঁ আমি যাবো আজকেই।
-ঠিক আছে চলুন তাহলে।
রুহি লাগেজ খুলে যেন ওর মন খারাপ হয়ে গেলো কারণ বেশির ভাগ শাড়ি নিয়ে এসেছে ও আর কিছু সালোয়ার কামিজ। যা পরে ও কিভাবে যাবে জলপ্রপাতে?
ইরাদ রুহির গাল ফুলানো দেখে বুঝে গেলো সে এখন কি নিয়ে চিন্তা করছে।
ইরাদ একটা প্যাকেট বের করে রুহির হাতে দিয়ে বলে
-এটা পরে নেন আজকে।
রুহি প্যাকেট খুলে দেখে একটা গাড়ো কমলা রঙের টি-শার্ট, বেগুনি প্যান্ট আর বেগুনী জ্যাকেট।
রুহির খুশি দেখে কে!
-কাল তো আমরা এগুলো কিনি নি,, কখন নিলেন ?
-কালই নিয়েছি যখন আপনি আন্টির সাথে ছিলেন, আরো কয়েকটা সেট আছে চাইলে অন্যটা পরতে পারেন।
-উহুম৷ এটাই পরবো আমি।
নিচে লবিতে ইরাদ, রুহি, পিয়াল, আরিশা, তানি আর নিপন একসাথে হলো
তানি আর নিপন পিয়াল আরিশার ফ্যামিলি ফ্রেন্ডস। যথেষ্ট মিশুক।
আজক সবাই মিলে একসাথেই দু'টি পাতা একটি কুড়ির দেশ সিলেটের শ্রীমঙ্গলের মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার রাজকান্দীর হামহাম জলপ্রপাতে যাবে।
ওরা পাচজনই আগে সিলেট এসেছে কিন্তু রুহির প্রথম বার সিলেট ভ্রমণ এটা। ও কিছুই জানেনা এই সম্পর্কে। পিয়ালের পরিচিত একটা জিপ আছে ওরা সেটাই ভাড়া করে পানসি রেস্টুরেন্ট থেকে বেশ কিছু খাবার দাবার নিয়ে বেড় হয়ে গেলো,, শ্রীমঙ্গল এর
বিখ্যাত সব চা বাগান গুলোর মাঝে দিয়ে ওরা সব গুলো পথ পাড়ি দিচ্ছিল,, এতটা প্রাকৃতিক সবুজ শ্যামলা সৌন্দর্য দেখে প্রায় সবার মন ভালো হয়ে গেলো কিন্তু রুহি দেখছিলো একদম বিস্মিত ভাবে সব কিছু। এত সুন্দর আগে কখনো ও দেখেনি ওর চোখে মুখে প্রশান্তির ছাপ দেখাচ্ছে। সবাই তো সবার মত ব্যাস্ত কিন্তু ইরাদ শুধু দেখছে রুহিকে,, ওর বউ এই মেয়েটা। দুনিয়ার পেচঘোচ, গোলক ধাধা সব কিছু থেকে দূরে যার মন। এই বাচ্চা মেয়েটা যত মায়া লাগাতে পারে তা মনে হয় বিরল।
যখন ওরা ট্রাকিং এর রাস্তায় এসে থেমেছে তখন রুহি ইরাদকে জিজ্ঞেস করে,,
-এসে গেছি আমরা? কিন্তু হামহাম জলপ্রপাত দেখতে পাচ্ছি না কেন?
রুহির কথা শুনে সবাই হেসে দিলো,,
ইরাদ তখন মুচকি হাসি দিয়ে বললো
-আরো পথ বাকি এখান থেকে ট্র্বাকিং শুরু হবে,,,
-আরো বাকি?? কতটুকু??
-এই মাত্র শুরু হলো আসল রাস্তা যাওয়ার।
বলে আরিশা হেসে দিলো।
রুহি কিছু বুঝতে পারলো না।
সবার সাথে হাটা শুরু করলো,,
কিছুদুর যাওয়ার পরে তানির পায়ে জোক ধরলো,, রুহির চোখে পরলো ও এক চিতকার দিলো
এটা দেখে পিয়াল সাথে সাথে লবণ বেড় করে দিলো
নিপন পিয়ালের হাত থেকে লবণ নিয়ে তানির পায়ে দিয়ে দিলো এদিকে রুহি ভয়ে পুরো শেষ।।
তানি- ভয় পেয়ো না। এখানে আসলে এরকম হয়।
আরিশা- হ্যাঁ ভাবি।
ওদের কথা শুনে রুহি কান্না করছে ফুপিয়ে ফুপিয়ে। আর এদিক সেদিক তাকাচ্ছে অসহায়ের মতো।
ইরাদ- কি হয়েছে আপনার?
রুহি- ভয় হচ্ছে অনেক। আমি জোক খুব করে ভয় পাই,, এখন আমাকেও যদি ধরে??
পিয়াল- ধরবেই তো ভাবি। বলে হো হো করে হাসলো,,
রুহির চোখমুখ দেখে বলল
আরিশা- এই এগুলো বলে ভয় দেখায়াও না
রুহি- আমি সত্যি জানতাম না এখানে এগুলো থাকবে এত করে।
রুহির কথা শুনে ইরাদ কিছু না বলেই রুহিকে হুট করে কোলে তুলে নিয়ে হাটতে হাটতে সবার উদ্দেশ্যে বললো,
- চল সবাই বেশি দেরি হয়ে যাবে নয়তো।
সবাই অবাক চোখে তাকিয়ে আছে ওদের দিকে।
ইরাদ সামনের দিকে তাকিয়ে হাটছে,, সবটা মনোযোগ ওদিকেই আর রুহি ওর গলা জড়িয়ে ধরে ওকেই দেখছে।
ভয় যেন নিমিষেই উধাও হয়ে গেছে।
সবাই যাচ্ছে প্রায় অনেকক্ষণ হয়ে গেছে সামনে একটা হাটু সমান পানির ডোবা আসলো
এই পথে আরিশা আর তানি ভাবছিলো হয়তো নিপন আর পিয়াল ওদের কোলে নিয়ে পার করে দিবে কিন্তু ওদের বলা সত্যেও ওরা তা করলো না।
রাগে আরিশা তো পিয়ালকে বকা শুরু করে দিয়েছে
-বিয়ের এত বছরে জীবনে ও এভাবে কোলে নিয়ে আমাকে এই রাস্তা গুলো পার করিয়ে দিসো??
-নিজে পারো তুমি এই সব রাস্তায় নিজেকেই সামলাতে পারিনা, আর তাছাড়া ইরাদের মত আমার এত শক্তি নেই আমাদের।
নিপন ও তানির দিকে তাকিয়ে মাথা নাড়িয়ে বুঝালো পিয়াল ঠিক বলছে।
আর এদিকে রুহির লজ্জা লাগছে অনেক৷ ইরাদ মিটিমিটি হাসছে রুহি চোখ নামিয়ে রেখেছে,, চোখে চোখে ওদের কথা হয়,, যা মন দিয়ে অনুভব করতে হয়,, মুখ দিয়ে প্রকাশ করা লাগে না।
রুহি মনে মনে ভাবছে আল্লাহ এত ভালো একটা স্বামী ওকে উপহার দিয়েছে,, আল্লাহকে লাখোকোটি শুকরিয়া করলেও কম হবে।
আর ইরাদ ভাবছে এমন একটা লক্ষ্মি বউকে আজীবন এভাবে আগলে রাখতেও ওর কষ্ট নেই।
এভাবেই একটা সময় ওরা হামহাম জলপ্রপাতে চলে আসলো,,
ইরাদের গলায় এক হাত রেখে অন্য হাতে ঝর্নার দিকে তাক করে রুহি আদুরে গলায় বলে,,
-ওখানে যাবো আমরা?
-হুম যাবো।
এমন সময় পিয়াল বলে
-ভাবী এখন নামবেন আপনার জামাইয়ের কোল থেকে?? নাহয় আমাদের বউরা আমাদের গলা টিপে মেরে ফেলবে।
এই কথা শুনে সবাই হেসে দিলো।
ইরাদ রুহির দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো
- নামাবো?
-হুম,,
রুহি সবচেয়ে বেশি উচ্ছাসিত,, বাচ্চাদের মত খিলখিল করে হাসছে আর আরিশা, তানি ওদের সাথে পানিতে ভিজছে
ইশারা দিয়ে কয়েকবার ইরাদকে ডেকেছে
ও বলেছে কিছুক্ষণ পরে আসবে,,
ইরাদ চুপচাপ দাড়িয়ে রুহিকে দেখছে
ওর যেন আর কিছুই আবিষ্কার করতে ইচ্ছা করে না
এখন শুধু রুহিকেই দেখতে ইচ্ছা করে ওকে ভালো রাখতে ইচ্ছা করে। ইরাদের এভাবে রুহিকে দেখা পিয়ালের চোখ এড়ালো না,,
- সত্যি একটা বলবি ইরাদ?
- হ্যাঁ জিজ্ঞেস কর
-তুই এই বিয়েতে খুশি তো?
- হ্যাঁ খুশি,, রুহিকে আমি ভালোবেসে ফেলেছি অনেক। মেয়েটা আমাকে একটা শান্তি দেয়,, যা আমি অন্য কোথাও পাইনি। মাহিরা যাওয়ার পরে আর বাচার ইচ্ছা ছিলো না, তখন ও আমাকে বাচতে সাহায্য করেছে।
- এখনো কি মাহিরা কে.....?
- না এখন আর ভালোবাসি না ওকে।
- হয়তো আমি ওকে সুখী করতে পারিনি তাই তো চলে গেছে, আর যে আমাকে ছেড়ে ভালো আছে সে ভালো থাকুক কষ্ট পেয়ে কিই বা হবে?
-ভাবিকে কবে প্রপোজ করেছিলি?
-এখনো করিনি
- কি বলিস?
-হুম করবো শীঘ্রই।
ইরাদের কথায় পিয়াল খুব খুশি হলো।
বেশ অনেকক্ষণ পানিতে খেলে রুহি ক্লান্ত হয়ে গেছে,, ইরাদকে উদ্দ্যেশ করে রুহি জানতে চাইলো
-আজকের মত ঘোরাঘুরি শেষ না?
-উহুম,,একটা জিনিস বাকি
-এখানে আর কি আছে ঘুরে দেখার?
-আসুন দেখাচ্ছি।
এই বলে রুহিকে একটা সাইডে নিয়ে গেলো ইরাদ,, সেখানে ছিপছিপে পানি পাহাড়ের হালকা ছায়া ও আছে,, রুহির হাত ধরে ওকে সেই হালকা হালকা পানির মধ্যে বসার ইশারা দিয়ে ইরাদ বলে,
-পাখির কথা,, ঝর্ণার কথা,, আকাশের বাতাসের সবার কথা শুনতে চান?
-হুম চাই
সেই পানিতে হেলান দিয়ে রুহি শোয়ার পরে ইরাদ ওকে চোখ বন্ধ করতে বললো,,
রুহি চোখ বন্ধ করে শুনতে পাচ্ছে পাখির কিচিরমিচির শব্দ,, বাতাসের শো শো আওয়াজ,, পানির কলকল শব্দ। সব কিছু যেন খুব রুহির সাথে কথা বলছে,, আন্তর থেকে সবটাই রুহি অনুভব করতে পারছে।
চোখ বন্ধ অবস্থাতেই ও হাসছে মিটিমিটি,, আর ইরাদের হাতের কব্জিটা মুঠো করে ধরে রেখেছে।
প্রায় ৫-৭ মিনিট পরে ও চোখ খুলে বসলো,,
-ভালো লেগেছে?
-হুম অনেক।
-এখন বেড় হই?
-জ্বি
-কিন্তু এত দেরি হয়ে গেছে আমরা যাবো কিভাবে?
-আজকে রাতটা তাহলে হামহামেই থাকেন ভাবী?
কথাটা বলে পিয়াল হাসছে।
রুহি অবাক হয়ে ইরাদের দিকে তাকালো,,
-থাকা যাবে?
-হুম যাবে,, থাকবেন?
-জ্বি আবশ্যই
-কিন্তু কোথায় থাকবো?
-আমাদের এক বন্ধুর বাসা ওইদিকের পাহাড়ে চাইলে আজ রাত ওখানে থাকতে পারি আমরা।
-ওকে থাকবো আমরা
বলেই রুহি খুশি হয়ে আরিশা কে জড়িয়ে ধরলো।
আরিশা হেসে বলে
-আমাকে না ধরে তোমার জামাইকে ধরো,, ওরই প্ল্যান এগুলো।
-বউকে খুশি করতে জানে ইরাদ ভাই
কথাটা তানি বললো,,,
শায়ানের বাসা সামনের একটা পাহাড়ে,, বাসাটা বেশ বড় আর খুব সুন্দর করে সাজানো এখানে ৬টা রুম আছে রান্নাঘর আর বসার ঘর বাদে। শায়ান চাকমা না এটা ওদের শখের বাড়ি,, মাঝে মাঝে ঘুরতে আসে বউকে নিয়ে এ ছাড়া একটা কাজের লোক আছে ও দেখাশোনা করে। এখন শায়ান আর রাফিয়া আর ওদের বাচ্চা রাশি (৩ বছর) এখানে ছিল বিধায় ওরা থাকতে আসতে পেরেছে,
সবাই এসে চেঞ্জ করে নিয়েছে।
রুহি কালো একটা সালোয়ার কামিজ পরেছে আর ইরাদ কালো একটা শার্ট আর কালো প্যান্ট। ওরা একরকম কাপড় নিয়ে ঢুকেনি চেঞ্জ করতে কিন্তু মিলে গেছে,, সবাই ভেবেছে ওরা ম্যাচিং করে পরেছে ইচ্ছা করে তাই দুষ্টুমি করলো কিছুক্ষন।
রাতে সবাই ডিনার করে নিলো,,
শায়ান রাশিকে ঘুম পাড়িয়ে দিয়ে আসলো সবাই এখন আড্ডা দিবে বাড়ির বাইরের দিকটায়।
বেশ ঠান্ডা লাগছে তাই কিছু কাঠ দিয়ে আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছে পিয়াল,,
আরিশা- আসো গানের কলি খেলি?
তানি- হ্যাঁ আসো
রাফিয়া- আমি পারি না গান করতে
পিয়াল- তোমার বর তো পারে তোমারটা ও গেয়ে দিবে তুমি শুধু গানের নাম বলে দিলেই হবে
ইরাদ- রুহি আপনি খেলবেন?
রুহি- হ্যাঁ খেলবো,, মজা হবে।
পিয়াল- গাইস,,, একটা জিনিস খেয়াল করেছো?
সবাই সবার মতামত নেয় আর এদিকে দেখো নতুন দম্পতি নিজেদের সাথে কথা বলায় ব্যাস্ত।
রুহি লজ্জায় শেষ।
আরিশা- তুমি আজকে কি শুরু করলে বলো তো? তোমার কথায় বেচারি লজ্জা পাচ্ছে।
পিয়াল-সত্যিই তো বলেছি।
ইরাদ- হ্যাঁ ভালো করসি। আমার বউয়ের সাথেই তো কথা বলছি। তোর কি?
ইরাদের কথা শুনে রুহি ওর দিকে তাকিয়ে আছে।
এত সুন্দর লাগলো "আমার বউ" কথাটা রুহির কাছে।
যেন বার বার কানে বাঝছে পুরো কথাটা। এই প্রথম ইরাদ বললো ওকে আমার বউ। আত্না ঠান্ডা হয়ে যাওয়ার মত কথাটা লাগলো,, পুর্ণ তৃপ্তি কাজ করছে মনে।
গোল হয়ে সবাই বসেছে,, রুহি আর ইরাদ মুখোমুখি একটা সময় গানের কলি খেলতে খেলতে রুহির কাছে আসলো "প"
রুহি কিছুক্ষন নিচের দিকে তাকিয়ে রইলো এরপর
গাইতে শুরু করলো..
"পৃথিবীর যত সুখ, যত ভালোবাসা
সবই যে তোমায় দেবো, একটাই এই আশা
তুমি ভুলে যেও না আমাকে
আমি ভালোবাসি তোমাকে
(এই লাইন গুলো যখন শুরু করলো সম্পুর্ণ ৬টি লাইন ইরাদের দিকে তাকিয়েই গাইলো)
ভাবিনি কখনো
এ হৃদয়ে রাঙানো
ভালোবাসা দেবে তুমি
দুয়ারে দাঁড়িয়ে
দু'বাহু বাড়িয়ে
সুখেতে জড়াবো আমি
সেই সুখেরই ভেলায়
ভেসে স্বপ্ন ডানা মেলবো হেসে
এক পলকেই পৌঁছে যাবো
রুপকথারই দেশে
তুমি ভুলে যেও না আমাকে
আমি ভালোবাসি তোমাকে
আমি ভালোবাসি তোমাকে
রয়েছে এখনো এ বুকে লুকানো
রাত জাগা স্বপ্ন ঘুমিয়ে
মেঘেতে দাঁড়িয়ে
আকাশে হারিয়ে
যত্নে রেখো গো তুমি
সেই মেঘেরই আঁচল
এনে আমায় তুমি নাও গো টেনে
রং তুলিতে আঁকবো ঘর
রুপ কুমারীর দেশে
তুমি ভুলে যেও না আমাকে
আমি ভালোবাসি তোমাকে
আমি ভালোবাসি তোমাকে
পৃথিবীর যত সুখ, যত ভালোবাসা
সবই যে তোমায় দেবো, একটাই এই আশা
তুমি ভুলে যেও না আমাকে
আমি ভালোবাসি তোমাকে"
সবাই করতালি দিলো রুহির গান শুনে।
পিয়াল- দেখেছিস ভাবী কত ভালোবাসে তোকে?
ইরাদ- তোর এখন লাভগুরু সাজতে হবেনা।
ইরাদের ভালো লাগছে,, রুহি কি ওকে ভালোবাসে? কেন যেন এখন মনে হচ্ছে হ্যাঁ রুহি ওকে ভালোবাসে। মনে হচ্ছে রুহিকে বলে দেওয়ার উচিত "ভালোবাসি তোমাকে"
এরই মাঝে রাশি ঘুম থেকে উঠে কান্না শুরু করে দিলো,, সবাই ওকে কান্না থামানোর চেষ্টায় ব্যাস্ত কিন্তু না,, সে কারো কথাই শুনতে রাজি না,,
যেই রুহি ওকে কোলে নিলো তখনই কান্না থেমে গেলো একদম। ওকে ঘুম পাড়িয়ে দিয়ে রুহি বের হলো ঘর থেকে।
রাফিয়া- ভাবী তুমি কিভাবে পারলে? আমার মেয়ে ও কিন্তু ওকে ঠান্ডা করতে আমিও পারিনা মাঝে মাঝেই।
-আমি বাচ্চাদের অনেক ভালোবাসি, আমার বেশির ভাগ ফ্রি সময়ই কলেজে ওঠার পর বাচ্চাদের ওয়ার্ডে পার করতাম, ওদের একটু ট্যাকনিক্যালি হ্যান্ডেল করলেই হয় ভাবী।
রাফিয়া- শিখিয়ে দিও আমাকে
-আচ্ছা ঠিক আছে।
সবাই স্বাভাবিক ভাবেই ঘুমাতে চলে আসলো কিন্তু হঠাৎ ইরাদের মনে পড়ে গেলো,
"রুহি বাচ্চা ভালোবাসে"
আর আমি তো পিতা হতে পারবো না কোনোদিন।
কথাটা মনে মনে বলে একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে আকাশের পানে তাকিয়ে রইল ও।
গল্প : অধিকার
পর্ব :10
আমি তো পিতা হতে পারবো না কোনোদিন।
কথাটা মনে মনে বলে একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে আকাশের পানে তাকিয়ে রইল ইরাদ। রাতের গভীরতা বাড়ছে সাথে কেন যেন মনের ব্যাথাটাও বারছে,, শরীরের বাইরে ব্যাথা পেলে তা ঠিক হয়ে যায় ঔষধ খেলে,, কিন্তু এই মনের ব্যাথা উপশমের কি কোনো উপায় আছে? থাকলেও হয়তো ইরাদের জানা নেই। রুহি ঘরে এসে দেখে ইরাদ জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে।
-ঘুমাবেন না?
ইরাদ বাইরের দিকে তাকিয়েই উত্তর দিলো
-একটু পরে।
-ঘুম পাচ্ছেনা?
-না, আপনি ঘুমিয়ে পরুন।
-না একসাথে ঘুমাবো।
কথাটা বলেই রুহি বোকা হয়ে যায়।
তাই সাথে সাথে বলে
-আচ্ছা আসুন গল্প করি তাহলে।
-নামাজ পরবো একটু।
বলে ইরাদ ঘর থেকে বের হয়ে গেলো।
রুহি কিছু বুঝতে পারছেনা,, ইরাদ এমন করলো কেন? ও কি কোনো ভুল করলো? না এমন তো মনে হয়না,, সব তো স্বাভাবিকই ছিলো এতক্ষণ। হয়তো ইরাদ একটু সময় চাচ্ছে সব মেনে নিতে পারছেনা। তাই রুহি চুপ করে এসে শুয়ে পরলো। প্রায় ১০ মিনিট পর মনে হলো ইরাদ কি ওকে গ্রহণ করে নিতে চাইছে না? ও কি ইরাদের ওপরে নিজে চাপিয়ে দিচ্ছে?? এভাবে ইরাদের দিকে তাকিয়ে গানটা করায় তো ইরাদের বুঝার কথা ও ইরাদকে ভালোবাসে। তাহলে কি ও বুঝতে পেরেই নিজেকে দূর করতে চাইছে? হঠাৎ এটা মনে হয়ে কলিজার ভিতরটা একদম মোচড় দিয়ে উঠলো। ও তো ইরাদকে অনেক ভালোবেসে ফেলেছে,, এখন এই হৃদয় থেকে ইরাদ নামটা মুছে দেওয়া যে আর সম্ভব না। রুহির জীবনের প্রথম ভালোবাসাই তো এই ছেলেটা। এসব ভেবেই কান্না আসলো অনেক বেশি। চোখ থেকে টপটপ করে পানি গড়িয়ে পরতে শুরু করলো। বালিশে মুখ গুজে রুহি খুব করে কাদলো। কিছুক্ষণ পরে ইরাদ ঘরে এসে দেখলো রুহি কান্না করছে। এমন কিছু দেখবে তা ও ভাবতেই পারেনি।
-কি হলো? কাদছেন কেন?
-.....
-বলুন আমাকে
-উহুম
-বলুন রুহি
ইরাদের খুব খারাপ লাগে রুহির কান্না দেখতে,, এটা ও সহ্য করতে পারেনা,,
-প্লিজ বলুন? আমি চেষ্টা করবো আপনার সমস্যা সলভ করার।
-আপনি আমার ওপরে রাগ?
- না তো।
-আমার তো মনে হচ্ছে,,
- না আমি আপনার ওপরে একদমই রাগ না।আমাকে আজকে সারাদিনে দেখে আপনার তাই লেগেছে?
- না লাগেনি
-তাহলে?
- কখনো রাগ করবেন না আমার সাথে,,
আমার খারাপ লাগে অনেক।
এই বলে রুহি করুণ নজরে ইরাদকে দেখছে,,
রুহির ওরকম বাচ্চাদের মত কথা বলায় একটা হাসি দিয়ে ইরাদ বললো,,
- না করবো না, এখন চোখ থেকে আর এক ফোটা পানিও যেন না পরে। হামহাম জলপ্রপাতে অনেক পানি আছে এক্সট্রা পানির আর দরকার নেই এখানে আর।
ইরাদের কথায় রুহি চোখ মুছে একটা হাসি দেয়।
-এবার ঘুমিয়ে পরুন অনেক রাত হয়েছে।
-হুম আপনিও আসুন।
শুয়ে থেকে কেউ ঘুমাচ্ছে না,,
-ঘুম পাচ্ছেনা?
-ইরাদ তেমন না,,
-তাহলে কিছু বলেন আমার ও তেমন ঘুম আসছে না,,
-আচ্ছা রুহি একটা কথা বলুন তো,, আপনার কি দুপুরে ঘুমানোর অভ্যাস আছে??
-না, কেন?
-তাহলে বাসায় থাকতে প্রতিদিন দুপুরে ঘুমাতেন যে?
-রাতে ঘুমোতে পারতাম না তাই।
ইরাদ চমকে যায়,
-কেন?
-আমি রাতে একা ঘুমাতে পারিনা, এইজন্য ভয় হয় তাই রাতে জেগে নামাজ আর কুরআন শরীফ তেলোয়াত করতাম।
-আই এম সো সরি।
-আপনি কেন সরি বলছেন?
-আগে জানলে আমি সাথে থাকতাম
রুহি কথাটা শুনে চোখ বড় বড় করে ইরাদের দিকে তাকালো।
ইরাদ এতক্ষনে বুঝতে পারলো ও কি বলে ফেলেছে।
- আজকে তো ঘুমাতে পারেন।
- হ্যাঁ গুড নাইট
বলেই রুহি ওপাশে ফিরে হাসে।
ইরাদ একটু লজ্জা পেয়েছে তা ওর বুঝতে বাকি নেই।
কিন্তু মজাই লাগছে,,
মানুষ বিয়ের আগে প্রেম করে কত শত কিছু করে আর এদিকে ও প্রেমে পরতে না পরতেই এই সুপুরুষটার সাথে আল্লাহ ওর বিয়ের ব্যাবস্থা করে দিলো। আল্লাহ কে প্রতি মুহুর্তে রুহি শুকরিয়া করতে ভুলে না। কিন্তু এখন কথা হচ্ছে ইরাদ এত ফর্মাল আচরণ করে যে কিছু বলার মত রুহি পায় না,, এরকম থাকলে কিভাবে ওকে নিজের মনের কথা বুঝাবে? তাই বুঝে পায় না। নাকি আরো সময় নিবে?
হ্যাঁ আরো সময় নেওয়া দরকার।ঢাকা ফিরেই এই ব্যাপারে ইরাদকে ও বলবে এখন শুধু ইরাদের সাথে সময় কাটাবে। ইরাদকে একটু সময় দিতে হবে তো। ওর প্রেমে পরার। ওকে ভালো মত পর্যবেক্ষণ করার। সবাই কি ওর মত হুটহাট প্রেমে পরে? এই জিনিসটা রুহি ভালোই বুঝতে পারছে। আর ইরাদের জীবনে একটা দুর্ঘটনা ঘটে গেছে। হয়তো ভালোবাসায় বিশ্বাস করতে ওর সময় লাগতে পারে, আর ওই মেয়েকে ইরাদ অনেক ভালোবাসতো আরিশার থেকে সবই শুনে নিয়েছে ও। এসব ভাবতে ভাবতে রুহি ঘুমিয়ে পরলো।
ইরাদ ভেবে নিয়েছে ঢাকা ফিরে ও রুহিকে বলবে ও ওর অক্ষমতার কথা। রুহি যদি চলে যেতে চায় ও নিজের ভালোবাসার কথা বলবেনা। কারণ সবার জীবনের একটা স্বাভাবিকতা আছে। ওকে আল্লাহ অক্ষম করেছে বলে এই মেয়েটাকে তো মা হওয়া থেকে ও বঞ্চিত করতে পারেনা। আর আপাতত সময়ের জন্য ও ভেবে নিলো কিছু ভালো মুহূর্ত কাটিয়ে নেই রুহির সাথে। সামনে ও নাও থাকতে পারে আমার পাশে। এই সময় গুলোই তখন আমার জীবন কাটানোর সংগী হবে।
ভোরের আলো ফুটে গেছে রুহি উঠে গোসল করে নিয়েছে নামাজ পরতে হবে, আজকে ইরাদের ঘুম ভাংছে না,, রুহি নামাজ শেষে ইরাদকে ডাক দিলো
-ইরাদ উঠুন,, নামাজ পরতে হবে।
-আরো একটু ঘুমাই।
-না না,, এখনই উঠতে হবে।
ইরাদ ঘুমের ঘোরে রুহিকে চোখ বন্ধ করেই টেনে নিয়ে জড়িয়ে ধরে।
রুহি চোখ বন্ধ করে ফেলে,, ভালো লাগছে সকাল সকাল ইরাদের উষ্ণ ছোয়া।
রুহি বাধা দিচ্ছেনা,, এমন সময় দরজায় নক পরলো।
- কেউ এসেছে।
ইরাদ তো ঘুমিয়েই গেছে রুহি ওর হাত ছাড়িয়ে নিয়ে দরজা খুলতেই দেখে ছোট্ট রাশি এসেছে।
-ওরে বাবা,, আমার আম্মুটা উঠে গেছে?
-কোলে কোলে
রুহি সাথে সাথে রাশিকে কোলে তুলে নিলো।
বাচ্চাটার সাথে রুহির বেশ ভাব হয়েছে।
রাশিকে কোলে নিয়েই ও রান্না ঘরে গেলো
দেখে রাফিয়া ওর জন্য দুধ বানাচ্ছে।
-ভাবী আমাকে দাও
- না সোনা, তোমার কষ্ট করতে হবেনা। চাচিকে জালাচ্ছো কেন রাশি আম্মুর কোলে আসো?
- নাআআআ বলেই রাশি কান্না শুরু করে দিলো।
-ভাবী থাকুক আমার কাছে। এমনিতেই তো চলে যাবো আজ। আমাকে দাও খাইয়ে দেই।
রুহি ওকে কোলে নিয়ে ঘরে চলে আসলো ।
কিছুক্ষন পরে ইরাদ চোখ খুলে দেখে সোফায় বসে রুহি আর রাশি খেলছে একদম মা মেয়ে মনে হচ্ছে দুইজন কে। রাশি বাচ্চাটা খুব মায়া লাগানোর মত একটা বাচ্চা। ইরাদকে উঠতে দেখে ওর কোলে চলে গেলো নেমে।
- চাচ্চু চাচ্চু কোলে
ইরাদ ওকে কোলে নিয়ে দুই গালে দুটো চুমু দিলো এরপর রুহির কোলে দিয়ে গোসল করে এসে নামাজ পরে নিলো।
সকালের নাস্তার পর ওরা সবাই বের হয়ে গেলো হোটেলে ফিরার জন্য।
পাহাড় থেকে নামতেই ইরাদ ওর ব্যাগটা পিয়ালের হাতে দিয়ে বললো ধর,,
রুহি আপাতত মাটির দিকে খুব গভীর ভাবে মনোযোগ দিয়ে রেখেছে কোনো জোক আবার পায়ের কাছে আসলো কি না সেটা দেখতেই ও ব্যাস্ত।
এমন সময় হুট করেই ইরাদ ওকে কোলে তুলে নিলো।
পিয়াল- আজকেও রোমাও জুলিয়েট এর শুরু হয়ে গেছে।
আরিশা- স্টপ ইট। নিজে তো এমন করবানা আবার ওদের পিছু লাগতেসো।
পিয়াল- সরি সরি।
হাটতে হাটতে কিছু চাকমাদের সাথে ওদের দেখা হলো। সবাই ওদের দেখে মিটিমিটি হাসছে।
ইরাদের এদিকে কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই।
রুহির আজকে একটু বেশিই লজ্জা লাগছে।
ইরাদ এমনভাবে ওকে এসে কোলে তুলে নিলো যেন এটা ওর অধিকার। রুহি যেন ওরই। তাই এটা রুহিকে জিজ্ঞেস করার ও কোনো প্রয়োজন অনুভব করেনি ও।
জিপে বসে বসে ইরাদ গেমস খেলছে,,
আরিশা- খুদা পেয়েছে আসো সবাই খেয়ে নেই। ইরাদ ফোন রাখ।
ইরাদ- তোরা খা,, আমি একটু পরে খাবো।
সবাই চিপস নিয়ে খাওয়া শুরু করলো।
রুহি প্যাকেট ছিড়ে একটা ইরাদের মুখের সামনে ধরলো
ইরাদ ওর দিকে অবাক হয়ে তাকালো,
-খান,,
-আপনি?
-আমিও খাচ্ছি।
এরকম করে রুহি নিজেও খেলো ইরাদকেও খাইয়ে দিলো।
পিয়াল- দেখেন আমার মিসেস। ভাবী ওকে এভাবে যত্ন করে দেখেই যত্ন পায়।
আরিশা- হ্যাঁ হ্যাঁ থাক আমিও কম যত্ন করিনা তোমার। আর নতুন বিয়ে দেখেই ভাবী এরকম করে খাইয়ে দিচ্ছে বুঝলা?
তানি আর নিপন তেমন কিছু বলেনা ওরা শুধু হাসছে।
ইরাদ- না, উনি আগে থেকেই আমার খাওয়া দাওয়া থেকে শুরু করে সব কিছুর প্রতি অনেক যত্নশীল।
ইরাদের কথায় রুহি বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে আছে। এভাবে মানুষের সামনে বলে ওকে লজ্জা দেওয়ার কি আছে?
এবার সবাই একসাথেই হেসে দিলো।
হোটেলে ফিরতে ফিরতে ওদের রাত হয়ে গেলো,,
পিয়াল ইরাদকে একটা পানির বোতল দিয়ে বললো,, -ক্লান্ত লাগছে না? এটা খেয়ে নে।
-ইরাদ আর নিপন কথা বলছিলো সেই খেয়ালেই ইরাদ সব গুলো পানি গড-গড করে খেয়ে নেয়।
-আরিশা আজকে মনে হয় ইরাদ বলে দিতে পারবে ও ভাবীকে ভালোবাসে। যাস্ট ওয়েট ফর টু আওয়ারস।
- গুড জব মাই হাসবেন্ড।
এই কথা বলেই ওরা হাসাহাসি করতে থাকে।
সবাই ফ্রেশ হয়ে এসে একসাথেই ডিনার করে নেয় রাত প্রায় ১০টা বাজে যার যার ঘরে চলে যায়।
রুহি খাটের ওপরে বসে আছে আর ইউটিউবে দেখছে
-কিভাবে বুঝা যায় একটা মানুষ আপনার প্রেমে পড়েছে কি না? এই বিষয়ে রুহি বেশ সিরিয়াস ও রিস্ক নিতে চাচ্ছেনা একদমই।
আর ইরাদ বারান্দায় বসে অফিসের একটা ডিলের জরুরি ফাইল দেখছে ল্যাপটপে। কিছুক্ষণ আগেই ইরাদের ম্যানেজার ওকে ফোন করে বলেছে ঠিক কাজ হচ্ছে কি না একবার দেখে দিতে তাই করছে ও।
সেই সময়ই দরজায় একটা নক পরে,,
ইরাদ বারান্দায় থাকায় রুহিই উঠে দরজা খুলে
দেখে হোটেল স্টাফ এসেছে।
-ম্যাম স্যারের সাথে একজন ভদ্রমহিলা দেখা করতে চাচ্ছেন।
-এত রাতে দেখা করা এলাইড?
- একচুয়ালি ম্যাম উনি এখানে আজকেই উঠেছেন।
-কি নাম?
- মিস মাহিরা নাজিম।
রুহি নামটা শুনে কিছু সময়ের জন্য স্তব্ধ হয়ে যায়। ওর যেন পায়ের নিচে মাটি সরে যাচ্ছে।
-এই সময়ে মাহিরা কেন এসেছে? ও কি চায় ইরাদের কাছে?
পিছন থেকে ইরাদ জিজ্ঞেস করলো।
- কে এসেছে?
রুহির গলা দিয়ে কোনো আওয়াজ বেড় হচ্ছেনা।
শরীরে কোনো শক্তিও লাগছেনা।
রুহির আওয়াজ না পেয়ে ইরাদ উঠে আসে।
-জি বলুন?
- স্যার আপনার সাথে মিস মাহিরা নাজিম নামের একজন ভদ্র মহিলা দেখা করতে চাচ্ছে।
-কোথায় উনি?
- ৫০৯ তে আছেন
-আপনি যান আমি আসছি।
-রুহি দরজা লক করে রাখুন।
এই বলেই ইরাদ ওই অবস্থায় সাথে সাথে বেড় হয়ে গেলো।
রুহি দরজাটা লক করে ওখানেই মাটিতে বসে পরলো।
হাত পা একদম অবশ লাগছে৷ মনে হচ্ছে কেউ যেন কলিজাটা কেটে ফেলেছে।
ইরাদ কিভাবে পারলো ওকে এভাবে ফেলে রেখে যেতে? শত হলেও তো রুহি ওর স্ত্রী।
একটা বার কি ওকে জিজ্ঞেস করা উচিত মনে হয়নি ইরাদের? এভাবে করে প্রাক্তনের কাছে রাতের বেলা চলে যাওয়ার কোনো মানে হয়? ইরাদ কি তাহলে রুহি কে চায় না একদমই? তাহলে এত যত্ন এত আদরের কি দরকার ছিলো? কেন এত মায়ায় ফেলে ওকে রেখে গেলো ইরাদ?
প্রায় ১০ মিনিট পরে ইরাদ ঘরে আসে
রুহি দরজা খুলতেই ওকে জড়িয়ে ধরে বলে
আজকে আমি অনেক বেশি খুশি...
0 মন্তব্যসমূহ