গল্পের নাম : অধিকার
পর্ব : এক
লেখক : Yasira Abisha (Fatha)
আমার স্ত্রী আমার সাথে থাকলে কখনো মাতৃত্বের সুখ পাবেনা। তাই রিপোর্ট পাওয়ার ঠিক দুই ঘণ্টার ব্যবধানে সে আমাকে রেখে চলে যায়।
সত্যি বলতে এতে আমার বিন্দুমাত্র কষ্ট নেই কারণ একজন অক্ষম পুরুষ কে তার স্ত্রী ফেলে যেতে পারে। আর কেউ যদি সত্যিকার অর্থেই তার সঙ্গীর সুখ চাই সে পুরুষ এটা মেনে নিবে।
যখন ডাক্তার এই রিপোর্ট দিয়েছেন,, তারপর থেকে কেউ কারো সাথে কোনো কথা বলছিলাম না, হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফেরা পর্যন্ত পুরো পথটায়।
ঘন্টা খানিক হবে, মাহিরা বেডরুমে দরজা লক করে রেখেছিলো, আমি সোফায় বসে ভাবছিলাম কি করে মাহিরা কে বলবো আমাকে ছেড়ে যাওয়ার কথা, আমি নিজেই মাহিরা কে বলতে চাচ্ছিলাম "তুমি আমাকে ছেড়ে চলে যাও"
আমার মনে হচ্ছিলো সে নিজে এরকম কিছু করবেই না তাই আমাকেই তাকে মানাতে হবে। আমার মাহিরা তো পুরো একটা বাচ্চাদের মত, অল্পতেই কষ্ট পেয়ে বসে, এই জিনিসটা কিভাবে সে নিবে।
কিন্তু কিছুক্ষন পরে দেখি সে বাইরে বেড়িয়ে এসেছে সাথে তার লাগেজ প্যাক করে ফেলেছে এবং আমাকে এসে মাহিরা নিজে বলল
"তোমার সঙ্গে থাকা আমার আর সম্ভব নয়, আমি চলে যাচ্ছি, ইরাদ শুনো শারীরিক সম্পর্ক করে সুখ দিতে পারলে আর গিফট দিয়ে মন ভুলিয়ে রাখতে পারলেই হয়না বাচ্চা দিতেও পারা লাগে। কিছু থেকে কিছুনা তুমি আমাকে আহ্লাদ দেখাও এসবে কিছু হয়না ইরাদ"
কলিজার ভিতর পুরে যাচ্ছিল। তার মুখে এরকম কথা শুনে। কিন্তু এটাই তো সত্যি আমি তো এটাই বলতে চাচ্ছি লাম ওকে "যে চলে যাও সুখী হও "
তবুও কেন এত মন জ্বলে যাচ্ছিলো?
এখন যে আমার শক্ত হতে হবে । এতে সে থেমে ছিলো না,, আরো নানান কথা আর অভিযোগ তুলে ধরছিলো সে,,
আমি সব চুপচাপ শুনছিলাম মাথা নিচু করে,,
বরাবরই মাহিরা অভিযোগ করলে আমি মাথা নিচু করে শুনে যেতাম,, ওকে যে অনেক ভালোবাসি কখনো কষ্ট দিয়ে কথা বলতেই পারিনি,, আজ ও তাই করছিলাম কিন্তু কষ্টটা তখনই লেগেছিলো, যখন তার মুখেই জানতে পারলাম, সে আমার সাথে থাকা অবস্থায় পর*কীয়ায় লিপ্ত হয়েছিল।
-আমি তামিমকে ভালোবাসি এখন তোমার প্রতি আমার আর কোনো রকম ইন্টারেস্ট কাজ করেনা ইরাদ।
-মাহিরা, তুমি একজন বিবাহিত নারী, কি বলছো এসব?
-এখন কিসের বিবাহ আর কিসের কি? একটা সংসার বেধে রাখতে হলেও বাচ্চা লাগে। আমাদের কোনো বাচ্চা নেই আর না আমার আছে কোনো পিছুটান। তোমার মত একটা পুরুষের সাথে আমার আর থাকার কোনো ইচ্ছে নেই। সারাদিন যখন কাজে ব্যাস্ত থাকতে,, আমাকে সময় দিতে পারতে না তখন তামিমই ছিলো আমার জন্য। ওর সাথেই আমি সময় কাটাতাম, আমাকে সে ভালোবাসা দিয়েছে, তাই আমি আজকে শুকরিয়া করি আল্লাহার কাছে সে আমাকে সত্যিটা বলার সাহস আর সুযোগ দিয়েছেন তিনি।
এগুলো বলে সে চলে গেলো একটা বার ও পেছনে ফিরে তাকায়নি। আমি মাটিতে বসে পরেছিলাম
মাহিরার কথায় আমি বাকরুদ্ধ হয়ে গিয়েছিলাম,,
সেই মুহূর্তের কষ্টটা কাউকে বলে বোঝানোর মত নয়,কারণ একদিন দুইদিন তো নয় , আমরা তো দু'বছর প্রেম করে বিয়ে করেছিলাম। আড়াই বছর আমাদের বৈবাহিক সম্পর্ক ছিল , ভালবাসতে তাকে আমি কখনো কার্পন্য করিনি। তার বলা প্রত্যেকটা কথা আমি শুনেছি। তাকে খুশি রাখার চেষ্টা করেছি সর্বদা। তারপরেও কেন? সে এভাবে আমাকে ধোকা দিল। আমার ভালোবাসায় কি কোনো কমতি ছিল?
এসব ভাবতে ভাবতে ইচ্ছে করছিলো নিজের এই জীবনটা শেষ করে দেই কিন্তু তখনই আযানের ধ্বনি আমার কানে আসে, হঠাৎ মনে হলো না আত্নহত্যা মহা পাপ তাহলে তো দুনিয়া আখিরাত কিচ্ছু পাবো না আমি,, নিজের জন্য না হলেও তো আল্লাহার ধর্ম কর্ম করার জন্য আমার বেচে থাকতে হবে। নাহলে যে আমার মৃ*ত মা বাবার আত্না কষ্ট পাবেন।
পুরোপুরি তিনমাসের প্রসেস আজকে শেষ হলো। আমার স্ত্রী এখন আর আমার নেই। সে আমার প্রাক্তন স্ত্রী হয়ে গিয়েছে। কোর্ট থেকে সারাদিন পড়ে বাড়ি ফিরলাম। শেষ বারের মত মাহিরার চেহারাটা দূর থেকে দেখেছিলাম। তাকে তামিম ছেলেটা পাশে খুব হাসিখুশি দেখাচ্ছিলো,,
কেন যেন বাড়ি ফেরার পর থেকেই হাত-পা নিস্তেজ হয়ে আসছে। আবহাওয়াটা আজকে বেশ গরম ছিলো, আষাঢ় মাস কেউ বলবে না, কোনো রকমে গোসল টা সেড়ে আসলাম, মাগরিবের আযানের মধুর ধ্বনি চারিদিকে ছড়িয়ে পরছিলো,, আযান শেষে নামাজ পড়ে কোনো মতে এসে বিছানায় গাঁ এলিয়ে দিলাম, মনের ভিতরটা হাহাকার করছে, সব কিছু আসহ্য লাগছে। বাসায় আমি একা থাকি,, মা বাবা যাওয়ার পরে আর কেউ নেই আমার এখন কোনো কাজের লোকও তেমন রাখিনা,, মাহিরা যাওয়ার পরে ড্রাইভার, কুক ২জনই বাদ দিয়ে দিয়েছি, শুধু আছে একজন ছুটা বুয়া যে সব কিছু দিনে এসে করে চলে যায়, আমি সারাদিন অফিসেই পরে থাকি রাতে এসে বাসায় ঘুমাই শুধু,, এখানে যে প্রতিটি কোণায় কোণায় মাহিরার স্পর্শ, আমি এসব ভুলে কি করেই বা থাকবো,, আল্লাহকে প্রতি মুহুর্তে বলি আমাকে তুমি শান্তি দাও এই কষ্ট আর যে নিতে পারিনা।
কিছুক্ষন পরে মোবাইলটা বেজে উঠলো, সেটা ড্রেসিংটেবিল এর সামনে ছিলো আমি উঠে যেতে যেতে কলটা কে"টে গেলো। কলটা ব্যাক করবো তখন দেখি ফোনের চার্জ শেষ, চার্জে দিয়ে ফোন আমি জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে দেখলাম মুশোল ধারে বৃষ্টি হচ্ছে। বাইরে ঠিক ভাবে কিছু দেখাও যাচ্ছেনা।
এই গরম, এই ঝড়, আল্লাহ পাক মহান কখন কি হয় কেউ তা বলে বুঝাতে পারেনা আসলে। এসবই ভাবছিলাম হঠাৎ কলিং বেলের আওয়াজ পেলাম, ডুপ্লেক্স বাড়ি হবার কারণে আমার বেশ খানিকটা সময় লেগে গেলো ওপর থেকে নিচে নেমে দরজা খুলতে।
দরজাটা খুলার সাথে সাথেই একটা মেয়ে কান্না করতে করতে আমার বু"কে ঝাপটে পড়লো,, সে আমাকে এমন ভাবে জড়িয়ে ধরে রেখেছে যেন তার অনেক দিনের হারানো কিছু সে ফিরে পেয়েছে।
কয়েক সেকেন্ডের ভিতরে এমন কিছি ঘটে যাওয়াতে আমি সম্পুর্ণ স্তব্ধ হয়ে যাই।
কোনো মেয়ে হঠাৎ করে যদি একটা অচেনা ছেলের বুকে আছড়ে পরে বাচ্চাদের মত কান্না করতে থাকে,, এতে যে কোনো মানুষেরই অবাক লাগবে, আর যদি এটা নিজের সাথে ঘটে তাহলে তো আর কিছু বলারই বাকি থাকেনা,
আমি আপাতত বিস্ময়ের চূড়ান্ত পর্যায়ে আছি।
এবং মেয়েটি আমাকে শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে ধরে রেখেছে,, তার হাত পা কাপছে,, তাকে কিছু জিজ্ঞেস করবো কিন্তু তার সুযোগ ও নেই,, কারণ কান্না করতে করতেই কিছু মুখে শব্দ করছে,, সে কি যেন বলতে চাচ্ছে,,
কিন্তু এত কান্নার মাঝে সব যেন অস্পষ্ট ভাবে উচ্চারিত হচ্ছে। যার ফলে আমি কিছুই বুঝতে পারছিনা। হঠাৎ করে সে অজ্ঞান হয়ে গেলো আমার বুকে থাকা অবস্থাতেই।
আমি ভেবে পাচ্ছিনা কি করবো ২-৩ মিনিটের মাথায় কি থেকে কি ঘটে গেলো। এমতাবস্থায় আমি মেয়েটিকে ভেতরে নিয়ে এসে একটা গেস্ট রুমে শুইয়ে দিলাম। মেয়েটার চেহারা একদম গোলাপি হয়ে আছে,, তার গায়ের সমস্ত কাপড় ভেজা। মেয়েটা যে একদম ফর্সা বুঝা যাচ্ছে কিন্তু হাতে গলায় অনেক গুলো লাল দাগ কিছু কিছু দাগ একদম নীল বর্ণ ধারণ করেছে।
বুঝা যাচ্ছে কেউ তাকে অনেক বেশি পরিমাণে মেরেছে। সে যখন আমাকে ধরে রেখেছিলো তখন তার গা একদম গরম ছিলো হয়তো অনেকক্ষণ বৃষ্টিতে ভিজার ফলে তার জ্বর এসেছে।
তাকে বেশ কয়েকবার ডাক দিলাম কিন্তু কোনো সাড়া শব্দ পেলাম না,, তার সেন্স নেই একবারেই।
এমন অবস্থায় আমি পরে গেলাম মহা মুশকিলে,,
তার জ্বর বাড়ছে ক্রমাগত,, বাইরে বৃষ্টি ও যেন থামার নাম নিচ্ছেনা, কিছুক্ষণ পড়ে মনে পড়লো পাশের বাসায় এক বয়ষ্ক দম্পতি থাকেন তারা উভয়ই ডাক্তার দাদা ভাই আব্দুল্লাহ , আর সুরাইয়া দাদু।
তারা আমাকে ছোট থেকেই অনেক ভালোবাসেন, আমার আর মাহিরার বিয়েতেও উনারা অভিভাবকের মত সব করেছিলেন,, এবং আমার এই দুর্দিনে, মাহিরা আমাকে ছেড়ে যাওয়ার পরে,, কেউ খোঁজ না নিলেও দাদু আর দাদা আমার খোঁজ ঠিকি রেখেছিলেন।
আমার মনে হচ্ছে এই মুহূর্তে সুরাইয়া দাদুকে ডেকে আনাই শ্রেয়।
যেই কথা সেই কাজ,
মেয়েটিকে বাসায় লক করে এই বৃষ্টির মধ্যেই আমি প্রায় দৌড়ে গেলাম দাদুর বাসায়..
দরজায় নক করতেই সুরাইয়া দাদু নিজে এসে দরজা খুললেন.. চশমা পরতে পরতে ভ্রু কুচকে আমার দিকে তাকিয়ে চিনতে পেরেই একটা হাসি দিয়ে দাদু বললেন
-আরে দাদু ভাই যে,,
সে কি? তুমি তো একদম ভিজে গিয়েছো! তাড়াতাড়ি ভেতরে আসো !
-দাদু আমার সাথে একটু বাসায় চলুন,, অনেক জরুরি দরকার,
-কেন? কি হয়েছে?
দাদুকে পুরো ঘটনা বললাম।
-দাদু আগে চলুন প্লিজ।
-দাড়াও ছাতাটা আর কিছু ঔষধ নিয়ে আসি, আর হ্যাঁ সাথে টুনিকেও (দাদুর কাজের লোক) নিয়ে যাই,
মাথা নেড়ে হ্যাঁ বুঝালাম।
দাদু রুমে ঢুকে মেয়েটার অবস্থা দেখে আমার দিকে একবার তাকায় আর একবার মেয়েটার দিকে।
তারপর মেয়েটার গায়ে হাত দিয়ে দেখে আমাকে বললেন
-দাদুভাই, এর অনেক জ্বর,, জামা পালটে দিতে হবে,, কোনো জামা আছে বাসায়?
- হ্যাঁ ঘরে পরার কিছু জামা আছে মাহিরার,, সে ওগুলো রেখে গিয়েছে,,
-এনে দাও আমাকে।
একটা বাসন্তি রঙের সালোয়ার-কামিজের সেট আর হেয়ার ড্রাইয়ার নিয়ে দাদুর হাতে দিয়ে আমিও রুমে
এসে চেঞ্জ করে নিলাম।
.
ইতি মধ্যে মেঘের বিরাট বর্ষন কমে গেছে, বাইরে হিমেল হাওয়া বইছে,, তবে হালকা হালকা ঝিরিঝিরি বৃষ্টি পড়ছে ,, পরিবেশে এক প্রকার শান্তি বিরাজ করছে,, মনে হচ্ছে সব ধরনের আবর্জনা স্তূপ মুছে গেছে,, সব পরিচ্ছন্ন হয়ে গেছে,, সব কিছু এখন সঠিকভাবে হবে,, কি যেন আজকের আকাশ বাতাস কিছু বলতে চাইছে,,
কিছুক্ষণ পরে নিচে এসে দাদুকে দেখি মেয়েটাকে ঠিকঠাক করে দিয়েছেন, টুনি পাশে বসে মাথায় জ্লপট্টি করে দিচ্ছে।
-ইরাদ, ওর অনেক জ্বর দাদুভাই, জ্ঞান ফেরা পর্যন্ত জলপট্টি করা লাগবে।
আর মেয়েটাকে দেখে যা বুঝলাম মনে হচ্ছে সে ভালো ঘরের,, চেহারাটাও কত নিষ্পাপ।
ইরাদ শুধু মনোযোগ দিয়ে দাদুর কথা গুলো শুনে ভেদটা বুঝতে চেষ্টা করছে। সে তো মেয়েটার দিকে দরকারের খাতিরে শুধু তাকিয়ে দেখেছিলো একবার,,
আসলে তার দেখার কোনো ইচ্ছেও নেই, মাহিরা ছাড়া যে ইরাদের মনে কোনো চেহারা কখনো ধরেনি। আর সে নিজে থেকে কাউকে দেখতেও চায় নি, এমনকি আজও চায় না।
-খেয়াল করেছো দাদুভাই ওর কানে গলায় খুব মার্জিত আর রুচিসম্মত গহনা। গলায় একটা চেইন, কানে টোপের মত এর ছোট ঝুমকা করে ২ জোড়া দুল, ২ হাতে ৩টা করে একদম পাতলা স্বর্ণের আংটি
গহনা গুলো পুরোনো দিনের... খাটি স্বর্ণের এই ডিজাইন গুলো। এবং পায়ের নূপুর গুলো দেখো এই ডিজাইন আমাদেরও আগের সময়ের।
ইরাদ দাদুর সাথে মাথা ঝাকিয়ে সম্মতি দিলো,,
এর কিছুক্ষন পর মনে হলো দাদুকে অনেক ক্ষন ধরে রেখে দিয়েছে, উনার তো বাসায় যাওয়া উচিত বয়ষ্ক মানুষ, দেরী হয়ে যাচ্ছে,,
- আচ্ছা দাদু আমি আছি,, চলুন আপনাকে আমি দিয়ে আসি বাসায় এরপর আছি এখানেই চিন্তা করবেন না।
-ঠিক আছে। কিছু দরকার পরলে আমাকে কল দিও, বোকার মতন কষ্ট করে আসতে হবেনা।
-জ্বি অবশ্যই দাদু।
রাত প্রায় ১১টা বেজে গেছে আমি মেয়েটার রুমেই খাটের পাশে ইজি চেয়ারে বসে আছি,, এতক্ষণ জ্বলপট্টি করছিলাম। মনের যন্ত্রণা অনেক বড় যন্ত্রণা
মনে পরে গেলো মাহিরার যখন শরীর একটু খারাপ হতো আমি সারা সারা রাত জেগে থাকতাম। ওকে কত যত্ন করতাম। কত ভালোবেসে আগলে রেখেছিলাম। আমার বাচার অবলম্বন ছিলো আমার বউটা।
.
মেয়েটা একটু নড়েচড়ে উঠলো, তার কপালে হাত দিয়ে দেখলাম,, এখন জ্বর কমে গেছে , দাদু বোধহয় তাকে ইঞ্জেকশন দিয়েছে এইজন্যই কমে গেছে,, কিন্তু আমার মাথাটা খুব ব্যাথা করছে, হঠাৎ মনে পড়লো আমি কালরাত থেকে আজ সারাদিন না খাওয়া হয়তোবা এইজন্যই এমন লাগছে। আর এমনিতেই আমার মাইগ্রেন এর ব্যাথা আছে। সব মিলিয়ে খুব অসহ্য লাগছে। মাসের বাজার কেয়ার টেকার ছেলেটা এসে করে দিয়ে যাচ্ছে প্রতিমাসেই কিন্তু কিছু করে খাওয়ার মত এনার্জি পাচ্ছিনা তাই উঠে ফ্রিজ থেকে ব্রেড নিয়ে বাটার দিয়ে খেয়ে ঔষধ খেয়ে নিলাম।
মেয়েটিকে এসে আরো ২বার ডাক দিলাম কিছু খাওয়ার জন্য কিন্তু এতক্ষণে মনে হচ্ছে সে কিছুটা স্বস্তি নিয়ে ঘুমাচ্ছে। তাই আর ডাক দিলাম না।
টেবিলে ব্রেড, বাটার আর জ্যাম রেখে দিলাম।
আর পাশে ইজি চেয়ারটায় বসে পরলাম কখন যে ঘুমের রাজ্যে পারি দিলাম নিজেও বলতে পারিনি।
ঘুম ভাংলো সকাল ৮টায়, ঝলমলে আকাশ, সোনালী রোদ যেন ঝিকঝিক করছে, আলাদা একটা সৌন্দর্য্য আজকের দিনে মিশে আছে।
মাথাটা বেশ হালকা লাগছে,, তবে শরীরটা ব্যাথা ব্যাথা করছে,, হঠাৎ নিজেকে চেয়ারে আবিষ্কার করে একটু হকচকিয়ে যাই, পরক্ষণেই মনে পড়ে রাতের কথা।
তখনই বিছানায় তাকিয়ে দেখি মেয়েটা নেই, খাবারের জায়গায় খাবার রাখা। জ্বলপট্টিটা আমার মাথায় দেওয়া। তারপর মনে হলো স্বপ্ন দেখেছিলাম কি না?
কিন্তু সব জিনিস পত্র দেখে মনে তো হচ্ছেনা আমি স্বপ্ন দেখছিলাম তাহলে মেয়েটি কোথায় গেলো?
ওয়াশরুমে ঢুকে দেখলাম নেই এখানেও তারপরে ফ্রেশ হয়ে বেড় হলাম।
তারপর ঘরের সাথের ব্যালকনিটায় গেলাম তোয়ালেটা নেড়ে দেওয়ার জন্য,,
পেছন থেকে ঝুনঝুন শব্দ পেয়ে তাকিয়ে দেখি মেয়েটি ঘরের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আমাকে ইশারা দিয়ে ডাক দিচ্ছে তার সামনে আসার জন্য।
এই ঘরটার দরজার উল্টো দিকে বড় গ্লাস দেওয়া ব্যালকনি আমি সেখানেই দাঁড়িয়ে,, আজকের বাইরে ঝলমলে রোদটা সম্পুর্ণ দরজার দিকে পরছে আর মনে হচ্ছে ঘুমো ঘুমো চোখে একটা হলদে পরি দাড়িয়ে আছে। মেয়েটা অসম্ভব পরিমাণে সুন্দর। যাকে একবার দেখলে পরের বার মানুষ ফিরে তাকিয়ে দেখবে,, লম্বা লম্বা চুল, দৈর্ঘ্য আঁখি পল্লব, বাচ্চাদের মত ইনোসেন্ট চেহারা, দুধে আলতা গায়ের রঙ। যে কোনো পুরুষ মানুষের মনে তোলপাড় তৈরি করার জন্য এই মেয়ের চোখের চাহনি যথেষ্ট। তবে ইরাদের মনে এরকম কিছু হচ্ছেনা। কারণ সে তো মন ভাংগা একজন মানুষ। যে এখন অনুভূতি শুন্য।
.
আমি কিছু না বলে তার সামনে যেতেই,, সে হেটে হেটে ডাইনিং এ চলে এসেছে, চেয়ার টেনে আমাকে বসতে বলে নিজেও অন্য একটা চেয়ারে বসলো। টেবিলে তাকিয়ে দেখি হরেক রকমের নাস্তার আয়োজন করে রেখেছে মেয়েটা। পরোটা, ভাজি, অমলেট, চা এগুলো দেখে আমি আবারও অবাক।
সে কখন ঘুম থেকে উঠলো আর এগুলো করলো?
আমিতো কিছুই জানিনা, যদিও আমার ঘুম অনেক পাতলা কিন্তু অনেক দিন পরে কাল ঔষধ খেয়ে ঘুমানোর কারণে মনে হয়ে জাগনা পাইনি। আমি এসব ভাবছিলাম তখন,,
সে আমাকে ইশারা দিয়ে খেতে বলছে।
এতক্ষণে আমি বুঝতে পারলাম এই মেয়েটা হয়তো কথা বলতে পারেনা। মনে মনে খুব খারাপ লাগছে একটা মানুষ কথা বলতে পারে না, না জানি কত কষ্ট হয়। যাক এসব ভেবে কাজ নেই তাকেও আমি খেতে বললাম। দেখি সে খাবার নিচ্ছেনা। চোখ দুটো ছলছল করছে,, আমি তার প্লেটে খাবার দিলাম।
-আপনার এখন খেতে হবে,, নাহয় কালকের মত জ্বর হবে।
মেয়েটি কিছু বলছেনা।
আমার খাওয়ার ইচ্ছে নেই একদমই তবে এখন না খেলে আবার মাথাটা ধরে বসবে, অফিসে যাওয়াটা মিস হয়ে যাবে তাহলে। এটা আমি কোনো ভাবেই করতে পারিনা,,
খাবার খুবই সুস্বাদু হয়েছে, সে খাচ্ছিলো না তারপরেও বার বার বলে খাওয়ালাম।
আমরা উভয়ই খাওয়া শেষ করলাম।
এরপর মেয়েটা উঠে যাচ্ছিলো কিচেনের দিকে আমি অবাক হচ্ছি তার কর্মকাণ্ড দেখে তার ব্যাবহার দেখে মনে হচ্ছে এই বাড়ি, এই পরিবেশ, আমি সবই তার চিরচেনা,, তাকে আমি বাধা দিলাম।
বসতে বললাম এবং তার ঔষধ এনে দিলাম খেতে।
সে খেয়ে নিলো,,
-আমি একটা কাগজ আর কলম নিয়ে তার সামনে দিয়ে বললাম আপনি কে? কোথা থেকে এসেছেন পরিবারের কারো ফোন নাম্বার থাকলে এখানে লিখুন। আমি আপনাকে বাসায় পৌঁছে দেওয়ার ব্যাবস্থা করছি।
কিছুক্ষন মেয়েটা নিচের দিকে তাকিয়ে রইলো,, বুঝলাম সে কান্না করছে, তার নাক গাল একদম লাল হয়ে গেলো।
মেয়েটা এবার আমাকে আরো অবাক করে কিছুক্ষন পরে বলে উঠলো
-আমি কি কিছু দিন আপনার বাসায় থাকতে পারি?
সব কাজ করে দিবো বিনিময়ে।
এবার আমি শক খেলাম একটা বড় ধরনের।
পর্ব : দুই ও তিন
-আমি কি কিছু দিন আপনার বাড়িতে থাকতে পারি? বিনিময় সব কাজ করে দিব।
.
একরাতের পরিচয় যদি হঠাৎ করে কোন রূপবতী মেয়ে এমন প্রস্তাব দিয়ে বসে একটা যুবককে এতে যে কেউ তখন অপ্রস্তুত হয়ে যাবে। আর সবচেয়ে বড় কথা যেই মেয়েকে এতক্ষণ ধরে বাকপ্রতিবন্ধী ভাবছিলাম আমি সেই মেয়ের মুখেই এমন একটা কথা শুনে আমি খুব অবাক হয়ে গেলাম।
সে মুখ ফুটে আমাকে এমন কিছু বলবে আমি একদমই আশা করিনি।
রাত থেকে মেয়েটা আমাকে একটার পর একটা শক দিয়ে চলছে,, আর এখন আমি প্রতিত্তোরে কি বলবো তাই বুঝে পাচ্ছিনা।
আমার মনে অনেক গুলো কথা ঘুরপাক খাচ্ছে,,
প্রথমত, একজন অপরিচিত মানুষকে কোনো মতেই বাড়িতে থাকতে দেওয়ার মত বিশ্বাস করা যায় না, তার ওপরে একে দেখে কোনো রকমেই কাজের মেয়ে বা নিম্নবিত্ত পরিবারের মনে হচ্ছেনা।
আর এসব ভাবতে ভাবতেই আমি পরে গেলাম মহা বিপাকে।
এদিকে মেয়েটি নিঃশব্দে কাঁদছে।
হতেও পারে সে আসলেই বিপদে, কিন্তু যদি এমন কিছু না হয়, যদি তার মতলব ভিন্ন থাকে?
শহরে এখন ভিন্ন ভিন্ন পন্থা অবলম্বন করে চোরের, ডাকাতেরা তাদের মতলব সিদ্ধ করে থাকে।
.
আপাতত ডাইনিং স্পেসের পরিবেশটা বেশ থমথমে হয়ে আছে। একদম পেনড্রপ সাইলেন্ট হয়ে আছে সব। মেয়েটি একবার ও চোখ তুলে তাকাচ্ছেনা।
কিছুক্ষণ পরে সে বলে উঠে
-দেখুন, আমি চোর বা ডাকাত নয়, আমি সত্যিই কাজ করবো সব আপনার বাসার এর বিনিময়ে শুধু আমাকে থাকতে দিবেন। টাকা পয়সা লাগবেনা। আমার কাছে কোনো মোবাইল ফোন ও নেই। আমার বাইরে বেড় হওয়ার ও কোনো প্রয়োজন নেই। আপনি যখন বেড় হবেন তখন আমাকে তালাবদ্ধ করে রেখে গেলেই হবে।
এক নিঃশ্বাসে সব গুলো কথা সে বলে শেষ করলো।
এবার আমার জবাবের অপেক্ষায় সে অসহায় দৃষ্টিতে বাচ্চাদের মত তাকিয়ে আছে আমার দিকে।
তাকে একদম একটা ছোট্ট বাচ্চা মনে হচ্ছে।
একটু আগেও তার ঘুমের রেশ কাটে নি। কিন্তু এখন দেখে মনে হচ্ছে তার চোখে কোনো ঘুম নেই,, একটা জবাবের অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে সে।
মাথায় অনেক কিছুই ঘুরপাক খাচ্ছিলো কিন্তু পরক্ষণেই মনে হলো, যদি সে আসলেই বিপদে পড়ে থাকে আর আমি এই মুহূর্তে তাকে বেড় করে দেই, তাহলে তার অনেক বড় ধরনের বিপদের সম্মুখীন ও হতে পারে,, আর আমার আগে পিছে তো কেউই নেই,, আমাকে কি করেই বা ক্ষতিগ্রস্ত করবে??
আগে মাহিরা ছিলো মনের মধ্যে একটা ভীতি ছিলো, তাকে আগলে রাখতে হবে, তার জন্যে হলেও আমার বাচতে হবে। কিন্তু এখন এমন আর কিছুই নেই। আর বেশি থেকে বেশি কি হবে? ডাকাতি, আমাকে মেরে ফেলা? আসল কথা হচ্ছে
যদি আমি মারাও যাই কোনো এক্সিডেন্ট হয়ে তাতেও দুঃখ থাকবেনা। তার একমাত্র কারণ হলো আমার মনটা আরো ৩ মাস আগেই মরে গেছে।
এখন একটা জীবন্ত লাশ হয়ে বেচে আছি।
এই দেহের মৃত্যু হয়ে গেলেও ভালো।
- আপনি থাকতে পারেন, কোনো সমস্যা নেই,,
কথাটা বলার সাথে সাথেই মেয়েটার মুখে একটা প্রশান্তির হাসি ফুটে উঠলো। এবং সে চেয়ার থেকে উঠে কিছু না বলে প্লেট গুলো নিয়ে সোজা রান্না ঘরে চলে গেলো,, আমি থম ধরে টেবিলেই বসে আছি,, এর মাঝে এসে সে সুন্দর করে টেবিল গোছালো, আমি তাকে দেখে একটু অবাক হই।
কেমন যেন এক ভিন্ন প্রজাতির মানুষ মেয়েটি।
হঠাৎ ঘড়িতে টিংটং আওয়াজ হচ্ছে তাকিয়ে দেখি ১০টা বেজে গেছে। আমার মিটিং আছে একটা ১০ঃ৩০ টা বাজে।
তাড়াতাড়ি করে উঠে চলে গেলাম উপরে,, আমার ঘরে,, মেয়েটি রান্না ঘরে ছিলো আমি তাকে নিচে রেখেই এসেছি।
তাড়াতাড়ি করতে গিয়ে তোয়ালে আনতে ভুলে গেছি। আমার এই বদঅভ্যাস আর ভালো হলো না,, প্রায় প্রতিদিনই এমন হয়।
আলরেডি আমি শাওয়ারের নিচে দাড়িয়ে আছি এখন কি আর করার?
একবারে গোসল শেষ করেই বাথরুম থেকে বেড় হতে হবে।
শাওয়ার শেষ হওয়ার পরে
বাথরুমের দরজা খোলার সময় দেখি হ্যান্ডেলের মধ্যে তোয়ালেটা ঝুলিয়ে রাখা।
বুঝতে পারলাম মেয়েটি রেখে গেছে হয়তো।
কারণ ছুটা বুয়া তো ৩দিনের ছুটিতে গেছে।
শরীর মুছে তোয়ালে পরে ঘরে আসলাম দেখি খাটের ওপরে আমার নেভি ব্লু কালারের একটা শার্ট, ব্লাক ফর্মাল প্যান্ট আর ব্ল্যাক একটা টাই রাখা।
অনেক গুলো কাপড় আয়রণ করিয়ে আনানোর পরে নিচেই রয়ে গিয়েছিল ওখান থেকেই, বেছে এই কাপড় গুলো এনে দিয়েছে সে।
এবার আর অবাক হলাম না।
তার কারণ হলো সে আমাকে অবাক করার কর্মকাণ্ড করছে প্রায় ১৮-২০ ঘন্টা ধরেই।
রেডি হয়ে নিচে নেমে এলাম। মেয়েটিকে আশেপাশে কোথাও দেখছি না, হয়তোবা রেস্ট করছে।
এমনিতেই তার শরীর বেশ খারাপ ছিলো।
মেইন গেট দিয়ে বের হবো ঠিক তখনই পেছন থেকে চামচ জাতীয় কিছু পরার শব্দ হলো।
তাকিয়ে দেখি হলদে পরী হাতে একটা টিফিন বক্স নিয়ে দাড়িয়ে আছে তার হাত থেকেই চামচটা পরেছে।
মুখে একটা প্রশস্ত হাসি ফুটিয়ে সে আমার দিকে এগিয়ে এসে টিফিন বক্সটা আমার হাতের সামনে ধরে বললো
-বাইরে যাওয়ার সময় ডাক দিতে হয়না, তাই অভিনব একটা পদ্ধতি দিয়ে ডাক দিলাম। আই হোপ আপনি মাইন্ড করেন নি।
-না,ঠিক আছে।
-অফিসে যাচ্ছেন?
-হুম
-এটা নিয়ে যান
-কিন্তু এটা?
-দুপুরের জন্য খাবার।
-দরকার ছিলো না।
-নিন, ধরুন। বেশি কিছুই করিনি। কাল থেকে আর এমন হবেনা।
-আমি বাইরেই খাই ক্ষুধা পেলে, আর কখনোই লাঞ্জ বাসা থেকে নিয়ে যাইনা।
মনে মনে বললাম মাহিরা থাকতে দুপুরে লাঞ্চ কখনো বাসা থেকে নেওয়া হতো না, অভ্যাস আছে আমার।
-এখন থেকে নিবেন।
আমি আর কথা বাড়ালাম না।
আর শুনুন, গেইটটা তালাবদ্ধ করে যান। আমি তার দিকে একবার তাকালাম তারপর গেইট লক করে বেড় হয়ে গেলাম।
.
মিটিং আলহামদুলিল্লাহ অনেক ভালো হয়েছে, দুপুর ১টার মত বাজে সবাই লাঞ্চ ব্রেকে গেছে,,
আমি আমার কেবিনে বসে কাজ করছিলাম এরই মধ্যে লাঞ্চ বক্সটির দিকে নজর পরলো,,
খুলে দেখি বক্সের মধ্যে এগ স্যান্ডউইচ আর ২পিস চিকেন ফ্রাই সাথে একটা চিঠি।
সেই কাগজের মধ্যে লিখা, যেটা আমি সকালে মেয়েটির সামনে রেখেছিলাম।
"অনেক অনেক ধন্যবাদ মিস্টার ...... আমাকে আপনার বাসায় আশ্রয় দেবার জন্য। আর সরি আজকে এরকম লাঞ্চ দেওয়ার জন্য। আসলে অল্প সময়ের মধ্যে করেছি তো, কাল থেকে ইনশাআল্লাহ সব ঠিকঠাক হবে।"
চিঠি দেখে মনে পরলো তার নামই তো জানা হলো না এখনো। আর মিস্টার লিখার পর এতগুলো ডট ডট দেখে মনের অজান্তেই একটা হাসি ফুটে উঠলো আমার মুখে।
অনেক দিন পরে দুপুরে খাবার খেলাম, আর মেয়েটার হাতের রান্না এক কথায় প্রশংসনীয়
২ঃ৩০ মিনিটের দিকে সুরাইয়া দাদুর কল আসলো।
- আসসালামু আলাইকুম দাদু
-ওয়ালাইকুম আসসালাম ইরাদ, ভালো আছো দাদুভাই?
-জ্বি, আলহামদুলিল্লাহ দাদু। আপনি?
-আলহামদুলিল্লাহ ভালো
-দাদুভাই শুনো, মেয়েটির জ্ঞান ফিরেছে? তাকে একটা ইঞ্জেকশন দিতে হবে নাহয় আবার জ্বর বাড়তে পারে রাতে। সে তোমার এখানে আছে এখনো?
-জ্বি, দাদু।
এরপর দাদুকে সব কথা বললাম।
-দেখো দাদুভাই এভাবে সবাইকে বিশ্বাস করা ঠিক না, তবে আমি তো আর এভাবেই বুড়ি হয়ে যাইনি। ডাক্তারি করে জীবনে বহু মেয়ে ছেলে দেখেছি এখন কথা বললেই কিছুটা আচ করতে পারি কে ভালো? আর কে মন্দ?
তাই তুমি চিন্তা করো না একটু পরে তোমার বাসায় যাচ্ছি তখন বুঝা যাবে মেয়েটি কি রকম?
আমারও জরুরি কাজ শেষ করে বাকি গুলো পি.এ. বুঝিয়ে দিয়ে বাড়ি ফিরে এলাম।
আমি আসতে আসতেই দেখি দাদুও এসে হাজির।
বাড়ি ঢুকে দেখি কি সুন্দর তকতকে ঝকঝকে করে সুন্দর ভাবে বাড়ি গুছিয়ে রেখেছে মেয়েটা। যেন পরী এসেও এতটা পরিষ্কার আর গোছানো দেখে মনের খুশিতে নেচে উঠবে।
দাদু মিটিমিটি হাসছে হয়তো তার কাছে ভালো লাগছে এরকম দেখে।
-আমি ফ্রেশ হয়ে আসি দাদু।
-আচ্ছা, আমি মেয়েটার সাথে কথা বলি।
আমি ফ্রেশ হয়ে কিছুক্ষণ উপরেই ছিলাম, প্রায় আধা ঘণ্টা পরে নিচে এসে দেখি গেস্ট রুম থেকে হাসির শব্দ আসছে,
দরজার কাছে গিয়ে আমি স্তব্ধ হয়ে যাই,
কারণ দাদুকে দেখলাম সে বিছানায় বসা এবং মেয়েটা তার পায়ে মাথা রেখে শুয়ে শুয়ে হাসছে,, খিলখিল করে। আমি যে কতক্ষণ ধরে দরজার কাছে দাঁড়িয়ে আছি এটা না দাদু, না মেয়েটির চোখে পড়লো। কারণ তারা একে অপরের সাথে কথা বলতে ব্যাস্ত। যদিও দাদুই বেশি বলছে আর মেয়েটা বাচ্চাদের মত ইনোসেন্ট লুক দিয়ে হাসছে আর কথা গুলো শুনছে।
আর দাদু তাকে মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। সে শুধু ঘরের কাজেই পরিষ্কার নয়, বরং নিজেও যথেষ্ট পরিষ্কার থাকতে পছন্দ করে তাকে দেখে আচ করত
এ পারলাম,, কেননা সে হলদে পরী থেকে এখন আবার বেগুনী পরী হয়ে গেছে। অর্থাৎ তার কালকে পরে আসা জামাটা, চেঞ্জ করে আবার পরে নিয়েছে,, হয়তো কাজ শেষ করে গোসল সেড়ে ফেলেছে।
আমাকে দেখে দাদু বলে
- ইরাদ, দাদুভাই আমি চলে যাই তাহলে এখন,, তুমি আমাকে গেইট পর্যন্ত এগিয়ে দাও।
আর মাঝেই আমাকে দেখে মেয়েটা উঠে বসে পরে।
-জ্বি দাদু।
আমি বুঝেছি দাদু কেন আমাকে ডাক দিলো গেইট পর্যন্ত।
গেইটের কাছে এসে দাদু আমাকে বললো,
- মেয়েটা আসলে দেখতে যেমন মন থেকে তেমন না।
বরং এর থেকেও বেশি ভালো।
তাকে নিঃসন্দেহে আমার মনে হয় বাড়িতে জায়গা দেওয়া যায় দাদুভাই। তুমি তাকে রেখে ভালো করেছো।
তবে ও এখনো অনেক বেশি দুর্বল। আমি ইঞ্জেকশন দিয়ে দিয়েছি।
দাদুকে বিদায় দিয়ে তার ঘরে আসলাম,,
বাইরে আকাশে হালকা হালকা মেঘ জমেছে,, পরিবেশ ঠান্ডা হয়ে আছে,, ব্যালকনির দরজাটা খোলা,, হিমেল হাওয়া এসছে,, সব কিছুতে এক অদ্ভুত ভালোলাগা আর স্বস্তি নিয়ে এসেছে।
ব্ল্যাংকেট গায়ে পেচিয়ে দেখি সে ঘুমিয়ে আছে।
সিল্কি চুলগুলো কিছু কিছু চোখে মুখে পরে আছে,, মেয়েটাকে অপরূপ দেখাচ্ছে, এমন ইনোসেন্ট লাগছে কারোই তাকে ঘুম থেকে জাগাতে ইচ্ছে করবে না কিন্তু
সে খেয়েছে কি না তা তো জানাও হলো না,,
এই জন্য আস্তে আস্তে ডাক দিলাম,,
-এইযে শুনছেন?
আপনি খেয়েছেন?
-..........
কোনো সাড়া শব্দ নেই...
-এইজে??
-রুহি,
আমার নাম রুহি।
এইজে বলে ডাকবেন না। নাম ধরে ডাক দিবেন কেমন?
এই বলেই একটা মিষ্টি হাসি দিয়ে সে উঠে বসলো.
গল্পের নাম : অধিকার
পর্ব : চার
আমি মানুষ চিনতে কাচা হলে ও,, এই মেয়েটার একটা জিনিস মনে হয় বুঝতে পারছি,, সে ভিষণ পরিমাণে আহ্লাদী। তার কথা বলা, আচার আচরণে, ভাব ভংগিমায় তা স্পষ্ট ভাবেই ফুটে উঠেছে। বেশ করে তার বর্তমান আচরণ গুলো দেখলে যে কেউ এটা বলতে বাধ্য হবে,,
.
ইরাদ- দুপুরে খেয়েছেন?
ঘুমো ঘুমো কন্ঠে উত্তর দিলো,
রুহি- উহুম।
-ঠিক বুঝতে পারছি না।
-দুপুরে খাইনিইইইইইই
-কেন?
-ঘুমি দিবো তাই
-খেয়ে ঘুমান।
-উহুম,পরে খাবো। ঘুমাই ইট্টু খানি,,
এই বলেই মেয়েটা আবার ব্ল্যাংকেট মুড়ি দিয়ে ঘুমিয়ে পরলো,,
আমি ঘর থেকে বেড় হয়ে গেলাম, একটু হাসি পেলো তার এমন কান্ড দেখে।
.
আমার ঘরে এসে শুয়ে আছি,, খুব ইচ্ছে করছে মাহিরাকে দেখতে। কিন্তু সে যেদিন ডিভোর্স পেপারস দিয়েছিলো সেদিন আমি এতটাই ভেঙে পরেছিলাম যে আত্নহত্যার মত জঘন্যতম অপরাধ ও করতে চলে গিয়েছিলাম। তখন যদি আব্দুল্লাহ দাদাভাই আর সুরাইয়া দাদু উপস্থিত না থাকতেন বাসায়,, তাহলে হয়তো আমি মরেই যেতাম।
সেদিনই তারা মাহিরার সব গুলো ছবি তুলে স্টোর রুমে রেখে দিয়েছিলো,, আর আমার মোবাইল থেকেও সব ডিলিট করিয়ে দিয়েছিলো। আমি পাগলের মত হাউমাউ করে শুধু কেদেছিলাম। কলিজাটা ফেটে যাচ্ছিলো আমার।
আচ্ছা ভালোবাসার মানুষ হারালে কি অনেক কষ্ট হয়? নাকি আমারই এমন লাগে?
এর থেকে কি মরে গেলে কষ্ট কম লাগে?
এখন অনেক বেশি খারাপ লাগছে এখন,
কত দিন হয়ে গেলো মাহিরার ঘুমন্ত মুখটা দেখিনা.. কত দিন হয়ে গেলো মাহিরার সাথে কথা হয়না..
আচ্ছা আমি কি আর কোনোদিন মাহিরার ঘুমন্ত মুখটা দেখতে পারবো না??
কখনো কি আমরা আর একসাথে পাশাপাশি বসে একান্ত সময় কাটাতে পারবো না??
কিন্তু আমিতো এখন আর তার আপন না। সে তো আর আমার কেউ না। আমি তার জন্য পরপুরুষ। সে আমার জন্য পরনারী। আমরা অনেক অনেক দূরের। আর কখনো এই জনমে আমরা এক হতে পারবো না। আচ্ছা আমার মধ্যে কি সমস্যা ছিলো?? আমি বাবা হতে পারবো না এটা জানার আগেই আমার বউটা আমাকে রেখে অন্য জনকে তার মন দিয়ে ফেলেছিল..
হয়তো আমি যে তাকে কতটা ভালোবাসি এটা বুঝাতেই পারিনি।
হয়তো তামিম আমার চেয়ে বেশি তাকে বুঝতে পারে।
কিন্তু আমি জানি, আমার থেকে বেশি তামিম তাকে ভালোবাসতে পারেনা। কারণ আমার ভালোবাসা ছিলো সবার মত ছিলো না। আমার ভালোবাসা ছিলো নিখাঁদ। আমি চাই মাহিরা সুখী হোক।
আমার মন থেকে তাকে আমি আজও বেড় করতে পারছিনা। যদিও আমি জানি সে আমাকে ধোকা দিয়েছে। আমার তাকে ভালোবাসা উচিত না।
আচ্ছা আমি কি একবার তাকে একটা ফেইক আইডি খুলে দেখবো? আমার যে অনেক দেখতে ইচ্ছা করছে ওকে..
একবার দেখতে তো ক্ষতি নেই।
নাকি আমার অবস্থা এমন হয়ে যাবে যে দেখলে আবার তার কন্ঠ শুনতে ইচ্ছা করবে?
তখন কি করবো? আমি এই ৩ মাসে একটা বার ও তো মাহিরার সাথে কথা বলিনি অনেক কষ্টে নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রেখেছি। এমন করলে আমার হবেনা। নিজেকে বুঝিয়ে রাখতেই হবে। মনটা ক্ষতবিক্ষত হয়ে গেছে,,
পুরুষ মানুষের তো কাদতে হয়না, আমিও কাদবো না,, তবে ২দিন ধরে যে ব্যাস্ততা ভর করেছে তা আমার জন্য ভালো হয়েছে।
.
কখন যেন ঘুমিয়ে পরেছি আমার খেয়াল আসছে না,, মাত্র চোখ খুললাম।
ঘড়িতে তাকিয়ে দেখি রাত ৯টা বাজে।
মেয়েটা খেয়েছে কি না কে জানে? একবার দেখে আসি,, অসুস্থ মানুষ।
নিচে এসে তার ঘরের দিকে পা বাড়াতেই দেখি সে তার বেডরুমে বসে নামাজ পড়ছে,,
কি নিষ্পাপ দেখাচ্ছে! হু হু করে মোনাজাতের সময় কি যে কান্না করছে,, একদম কাল রাতের মত কান্না,,
মনে হচ্ছে তার মনেও না বলা একটা কষ্ট আছে, না বলা অভিযোগ নিয়ে আল্লাহর সামনে দাঁড়িয়েছে,,
তার মনেও একটা ঝড় আছে, যেই ঝড়কে সে কোনো মতে দমিয়ে রেখেছে।
নামাজ শেষ করে সে চোখ মুখ মুছে উঠে আমার সাথে চোখাচোখি হতেই মিষ্টি একটা হাসি দিলো, মনে হলো এইমাত্র একটা হাসির মুখোশ সে পরে নিলো।
আমি তাকিয়ে বললাম
- ওড়না দিয়ে কেন নামাজ পড়লেন?
ওয়ারড্রোবের ২য় ড্রওয়ারেই জায়নামাজ আছে।
-জ্বি, আমি জানতাম না তাই।
-আচ্ছা, দুপুরে তো খান নি?
-ওপস, আমি ভুলেই গিয়েছিলাম খাওয়ার কথা।
-মানুষ খাওয়ার কথা ও ভুলে যায়?
-হুম, অনেক সময় মানুষ নিজের অসত্বিত্ত ও ভুলে যায়। সেই তুলনায় খাওয়ার কথা ভুলে যাওয়া বড় ব্যাপার না।
কথাটা একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে বললো সে।
আসলেও তো কথা টা ঠিক। আমি তো নিজেই ভুক্তভোগী।
তারপর আমাকে আবার কিছু বলতে না দিয়ে সে নিজেই বলল
-চলুন এখন খেতে আসেন।
অনেক দেরী হয়ে গেছে।
দুপুরে তো ঠিক মত খান নি।
আর আমিই বা যা দিয়েছি
এও কোনো খাবার দুপুরের??
এর মধ্যে আবার অর্ধেক খেয়েছেন.. টিফিন বক্স দেখে তো আমার একদম রাগই লাগছিলো। কিন্তু কি করার?
তখন তো আপনি ঘুমি দিচ্ছিলেন,,
এত গুলো কথা বলতে বলতে সে আমার আগে আগে ডাইনিং এ চলে এসেছে।
আমি মুচকি হাসছি।
তার কথা শুনে,, যে কোনো মানুষের মায়া কাজ করবে,,
আমার যথেষ্ট কিউট লাগছে একে।
ইশারা দিয়ে আমাকে টেবিলে বসতে বলে প্লেটে খাবার বেড়ে দিচ্ছে।
ইরাদ- অপনি বসুন।
রুহি- আপনি শেষ করুন তারপর খাই, আপনি আমাকে থাকতে দিয়েছেন আপনার বাসায়। এখন যদি আমি ঠিক মত আপনার যত্ন না করি কি ভাবে হবে? নাহ এমন করলে তো চলবে না।
-রুহি,, শুনুন,, খেতে বসুন।
- হ্যাঁ আগে আপনি খান,,
এবার আমি উঠে দাঁড়িয়ে সোজা রুহিকে একটানে চেয়ারে বসিয়ে দিয়ে বললাম
-চুপ,, একদম চুপ একটা কথা বলবেন না আর।
আমি অসুস্থ না, আপনি অসুস্থ আর আগে আপনি খেয়ে নেবেন এখন। তারপর মেডিসিন নিবেন এরপর আমি খাচ্ছি। আর একটা প্রশ্নের উত্তর দিন তো? আপনি খান নি কেন কিছু এখনো?
আর আপনি অসুস্থ, সময় মত না খেলে হবেনা।
সে অসহায় হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে, চোখে একদম পানি চলে এসেছে।
তবুও খাচ্ছেনা।
এবার আমি আর কড়া কন্ঠে কথা বললাম না
আস্তে করে জিজ্ঞেস করলাম
-কি হয়েছে, কাদছেন কেন? আমাকে বলুন।
-আমি আসলে নিজের হাতে খেতে পারিনা। ভালো লাগেনা। তাই খিদে পাচ্ছিলো না আর একা একা খাওয়ার অভ্যাস ও তো নেই আমার এইজন্য।
কথা গুলো বলেই বাচ্চাদের মত ঠোঁট উল্টিয়ে কান্না শুরু করে দিলো সে।
- আরে আরে কাদছেন কেনো? সরি সরি। আমি তো জানতাম না।
দেখি কোনো ভাবেই সে কান্না থামাচ্ছেনা। মনে হচ্ছে পুরোনো কোনো স্মৃতি মনে পরে গেছে তার।
তাই আমি একটু ইতস্তত বোধ করলেও ভাত মেখে নিজ হাতে তার মুখের সামনে তুলে ধরলাম।
-হা করুন।
সে আমার দিকে প্রশ্ন বোধক নজরে তাকিয়ে থেকে হা করলো।
তারপর তাকে খাওয়াতে খাওয়াতে একপর্যায়ে জিজ্ঞেস করলাম
-আপনি কোথা থেকে এসেছেন?
মুহুর্তেই তার চেহারা আবার ম্লান হয়ে গেলো,,
যেন তাকে এই প্রশ্ন টা জ্বরের থেকে বেশি কাবু করে ফেলেছে,,
আমি নিজেই বোকা হয়ে গেলাম তাকে কথাটা জিজ্ঞেস করে,,
কিছুক্ষণ নিচের দিকে তাকিয়ে থেকে সে আমাকে বললো
-আমাকে এসব জিজ্ঞেস করবেন না প্লিজ।
আমি কিছু বলতে বা মনে করতে চাইনা।
তার আওয়াজে ফুটে উঠলো তার মনের বেদনা।
তাকে খাওয়ানোর পরে ঔষধ খাইয়ে আমার সামনে বসিয়ে রেখে আমিও খেয়ে নিলাম।
মেয়েটা চুপচাপ বসে আছে।
মাঝে শুধু একটা প্রশ্ন করলো আমাকে
-আচ্ছা আপনার পরিবারে কে কে আছেন?
-আমার কেউ নেই আমি একা।
তার পর থেকে আবারও পিন ড্রপ সাইলেন্স।
এদিকে রুহিকে যখন ইরাদ খাইয়ে দিয়েছিলো তখন সে ভালোভাবে ইরাদকে দেখেছে,, এর আগে ওত ভালোভাবে রুহির ওকে দেখা হয়নি,,
বেশ করে ইরাদের খাওয়ার সময়ও সে ইরাদের দিকে ভালো মত তাকিয়ে ছিলো,, যেন খুটিয়ে খুটিয়ে পা থেকে মাথা পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ করলো।
খাওয়া শেষে ইরাদের কড়া নির্দেশ রুহি চুপচাপ বসে থাকবে চেয়ারে আর ইরাদ নিজে সব কিচেনে রেখে আসবে। যেই কথা সেই কাজই হলো।
রুহি চুপচাপ লক্ষি মেয়ের মত সব শুনলো,,
আর তা ছাড়া কাল তো বুয়ার ও ছুটি শেষ তাই কাজের চাপ ও নেই একদমই।
রাতে খাওয়া শেষে যে যে তার রুমে চলে এসেছে।
সারা বাড়িতে ২ জন মাত্র মানুষ কিন্তু কারো চোখেই ঘুম নেই, ঘড়ির কাটায় ১০ঃ৩০ টার মত বেজে গেছে।
২জনই একে অপরের কথা ভাবছে,, না চাইতেও কি যেন তাদের একে অপরের কথা ভাবাচ্ছে,,
এদিকে আকাশ আজকে স্বচ্ছ, চাঁদ আজকে ঝকমক করছে,, আলোতে মুখোরিত চারিদিক।
রুহি ব্যালকনিতে এসে দাঁড়িয়েছে শো শো বাতাস বইছে,,
সে ভাবছে ছেলেটা অনেক গম্ভীরমুখো,,, কিন্তু হলেও মনের দিক দিয়ে অনেক ভালো,, তা নাহলে তার সাথে পরিচয় না থাকা স্বত্তেও থাকতে দিয়েছে,, এত যত্ন করছে। আজকালের দিনে এমন লোক হয়?
অজানা অচেনা কারো জন্য এতটা করে?
তবে এত সুন্দর ছেলেটা ,,বড় বড় চোখ, মুক্তোর মতো মানিক, সরু নাক, সুন্দর কালো চুল- ব্যাক ব্রাশ করা, জীম করা ফিগার,, ফর্সা, বেশ করে একটু রাগলে আরো আকর্ষণীয় দেখায়। আর তার,, কি সুন্দর মুচকি হাসি,, দেখলে দেখতেই ইচ্ছে করার মতন,, আচ্ছা তাকে প্রাণ খুলে হাসলে কেমন লাগবে?? ভালোই লাগবে মনে হয়?
হ্যাঁ তা তো লাগবেই। কিন্তু কেন সে এত ম্লান থাকে?
কেনই বা সে এতটা গম্ভীর হয়ে থাকে?কোনো বড় কারণ কি আছে এর পেছনে? মন বলছে হ্যাঁ। কারণ এত ভালো মনের মানুষ কখনো এতটা গম্ভীর হয়না,,
তার কি মনে কোনো কষ্ট আছে? যা সে নিজের মত করে চেপে রেখেছে? একা একটা মানুষ উনি। মনে অনেক কষ্ট জমা থাকতেই পারে।
আচ্ছা যেই মানুষটা আমার জন্য এত করছে আমার কি উচিত তার মনটা ভালো রাখার? হ্যাঁ আমার মনে হয় উচিত।
রুহি নিজের সাথে প্রায় এভাবে কথা বলে। আজও বললো।
ইরাদের আজ রাতেও ঘুম নেই চোখে কিন্তু আজ সে পুরোনো স্মৃতি মন্থন করছেনা,,
বরং ভাবছে রুহির কথা,,
-মেয়েটার জীবনে কোনো বড় ধরনের কষ্ট আছে,, যা ইরাদ ভালোভাবেই বুঝেছে কিন্তু তার একটা বাচ্চা বাচ্চা মন আছে,, এই মনটা কি মরে যেতে দেওয়া উচিত? ইরাদের ইচ্ছে করছেনা। কারন মেয়েটা কাল থেকে এসে কত কিছু করছে এই অসুস্থ শরীর নিয়েও। তার কতটা কৃতজ্ঞতা বোধ কাজ করে মনে। ইরাদ তো তেমন কিছুই করেনি তার জন্যে তারপরেও মেয়েটা কত লক্ষি,, বেশ করে তার আচার আচরণ কতটা ভদ্র। ছোটদের মত ছলা কলা করে । এই মেয়েটার মনে কষ্ট না থাকলে সে অনেক ভালো থাকতে পারতো,, আর এরকম একটা মানুষের দরকার অনেক এই কঠিন দুনিয়ায়। যে কালো অন্ধকারের মাঝেও নিজের স্বচ্ছতা দিয়ে আলোকিত করে তুলবে,, এবং একজন্য তাকে মন খুলে বাচতে দিতে হবে তো। আর এই সুখ টুকু ইরাদের মনে হচ্ছে দেওয়া উচিত,, কারণ ইরাদের বিরান মরুভূমির মতো জীবনের মধ্যে মেয়েটা একটা ঠান্ডা সাগর হয়ে এসেছে,, তার হাসি দেখলে একটা তৃপ্তি কাজ করে ইরাদের,, কাঠ ফাটা রোদে একটা ছায়ার মত লাগে মেয়েটাকে,, যে ৩ মাসে একটাবার ও হাসেনি তাকে একটু হাসাতে পেরেছে মেয়েটা তার আচরণের মাধ্যমে, এই কথা গুলো মনের কোনে উঁকি দিচ্ছে ইরাদের কারণ কথা গুলো তো অস্বিকার করার মত না,, আর যেই জীবনের বাচার কোনো অবলম্বন নেই সে কি পারে না একজনের সাহারা হতে? আর এই মানুষটা শান্তিপূর্ণ করে ফেলে আশপাশ শুধু মাত্র নিজের উপস্থিতির মাধ্যমে।
আমার জীবনের তো কোনো গতি নেই তবে একটা নিষ্পাপ মনের মেয়েকে ভালো রাখার জন্য আমার যা যা করা দরকার আমি আমার সাধ্যের মধ্যে চেষ্টা করে যাবো,,
নাই বা থাকলো কোনো অধিকার,, নাই বা হলাম আপন কেউ, নাই বা কোনো সম্পর্ক হলো আমাদের কিন্তু অধিকারের আশা না করেই তার ভালো রাখার একটা কারণ হতে চাই, পবিত্র একটা কারণ। এই সিদ্ধান্ত আজ ইরাদ নিয়ে ফেললো।
কালকে পর্যন্ত দুইটা অচেনা মানুষ আজকে নিজেদের ভালো রাখার কথা ভাবছে। নতুন দিনের সূচনায় তারা নিজেদের ভালো থাকা আর একজনের মধ্যে খুঁজে বেড় করবে। কিন্তু কোনো অধিকারের আশায় না। অধিকারবিহীন একটা সুখ নিয়ে আসতে চাচ্ছে ২টা মনভাঙা মানুষ একে অপরের জন্য শুধু একটু ভালো থাকার আশায়। ঘন কালো মেঘের মাঝে এক চিলতে সোনালী ঝিকিমিকি রোদ এনে দেওয়ার আশায়।
গল্প , অধিকার
লিখাঃ Yasira Abisha (Fatha)
হুট করেই মেয়েটা আমাকে চেপে ধরে গালে একটা কিস করবে তাও শপিং মলে এত মানুষের ভিড়ে,, এটা আমি ভাবতেই পারিনি কখনো।
কিন্তু হঠাৎ এমন কিছু হওয়াতে আমি চমকে উঠি।
এবং এতেও শেষ না,,
আমাকে কিস করে
"আই লাভ ইউ মাই হাব্বি ইউ আর ডা বেস্ট"
বলে জড়িয়ে ধরে রেখেছে রুহি।
পাব্লিক প্লেসে সব মানুষের নজর আমাদের ২জনের দিকেই পরে আছে।
মেয়েটার কি মাথা খারাপ হয়ে গেলো?
কি থেকে কি করছে আর কিই বা বলছে এসব?
পরক্ষণেই মনে পড়লো হতে পারে কাউকে দেখানোর জন্য এমন করলো কি না?
তাকে এত গুলো মানুষের সামনে কিছু জিজ্ঞেস না করে,,
আমি নিজেকে তার বাহুডোর থেকে ছাড়িয়ে তাকে দাড় করালাম আমার সামনে,,
পাশ থেকে একটা ছেলে রুহির দিকে তাকিয়ে সামনে এসে দাড়িয়ে জিজ্ঞেস করলো।
-ওহহ,, ফাইনালি বিয়ে করেই ফেলেছো?
আমার এক হাত পেচিয়ে ধরে রুহি বললো
-হুম, এমন চার্মিং একটা ছেলে দেখে যে কেউ পাগল হয়ে বিয়ে করবে,, আমিও করে ফেললাম।
-তো এই ড্রেসে কেন? জামাই এমন নিরামিষ ভাবে রাখে তোমাকে?
-না, আমরা একটু আগে কোর্ট ম্যারেজ করেছি।
দেখেছো কত গুলো শপিং ব্যাগ আমার উনার হাতে? এগুলো আমার জন্য করেছে মাত্র আরো বাকি আছে। বলেই আমার দিকে তাকিয়ে একটা সুন্দর হাসি দিলো মেয়েটা।
তার কথা শুনে কেমন যেন রাগ হয়ে গেলো ছেলেটা মুহুর্তের মধ্যেই,, আর আমাকে পা থেকে মাথা পর্যন্ত ছেলেটা যেন স্ক্যান করলো,, তারপর কিছু না বলেই চলে গেলো,,
সে যাওয়া তে যেন রুহি হাফ ছেড়ে বাচলো।
এবার আমার হাত ছেড়ে সে কিছু বলতে যাবে তখনই দেখি,,
আমার কোম্পানির বর্তমানে সবচেয়ে বড় ইনভেস্টর মিঃ আসাদ সাহেব এগিয়ে আসলো,
পেছনে তার স্ত্রী আর বড় ছেলে শাহিন ও তার স্ত্রী উপস্থিত হাতে অনেক গুলো ব্যাগ।
কিছুমাস আগেই তার ছেলের বিয়ে হয়েছে,, হয়তো পারিবারিক সময় কাটানোর জন্য সবাই একত্রে বেড়িয়েছে। এমন সময় তাকে দেখে আমি ভয় পেয়ে গেলাম কিছু শুনে ফেললেন কি না?
তিনি এসেই আমাকে জড়িয়ে ধরলেন,,
-কংগ্রাচুলেশনস ইরাদ। আই এম সো হ্যাপি ফর ইউ,,
ইরাদ টু বি অনেস্ট তোমার ডিভোর্স নিয়ে আমাদের অনেক মন খারাপ ছিলো,, প
যেই ভয় পেয়েছিলাম তাই হলো।
তিনি সব শুনে ফেলেছেন।
আমার ডিভোর্স হওয়ার কথা সবাই জানতো, এতে সবার মনই খারাপ হয়েছিলো বেশ করে আমার ম্যানেজারের। তার মাধ্যমেই আসাদ সাহেবের সাথে আমার পরিচয় হয়।
এখন উনি মুরুব্বী মানুষ তাকে এত কাহিনী খুলে বলার মতন ও না। আর একটা মেয়ে একটা ব্যাচেলর ছেলের সাথে থাকে এটা শুনে খারাপ ভাববে যে কেউ। মাহিরা যাওয়ার পরে থেকে বিজনেসের অবস্থা ও তো খারাপ হয়ে গেছে উনি যদি এসব শুনে আমার সাথে ডিল ক্যান্সেল করে দেয় আমার অবস্থা মাটিতে পরে যাবে।
সব মিলিয়ে মনে হলো যেই নাটকটা একটু আগে রুহি করেছে সেটা আমারও কন্টিনিউ করতে হবে।
-থ্যানক্স এ লট আংকেল,
এবার রুহি আমার দিকে বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে আছে,,
আন্টি রুহিকে জড়িয়ে ধরে পাশ থেকে বললো, কি সুন্দর একটা বউ মাশাল্লাহ,, আমার মনটাই ভরে গেলো ওকে দেখে,, আজকে মাত্র বিয়ে করেছো বাবা আমাদের তরফ থেকে তো একটা গিফট পাওনা রইলো।
- না, আন্টি আমাদের জন্য দুয়া করবেন প্লিজ তাহলেই হবে।
-না না, তোমার আন্টি একদম ঠিক বলেছেন। তোমাদের হানিমুন ট্রিপটা আমাদের তরফ থেকে গিফট রইলো।
শাহিন সিলেটের ওই রিসোর্টটার নাম যেন কি? তুমি আর বউমা ঘুরে আসলে যে?
-বাবা গ্রেন্ড সুলতান।
-তোমার ভাইয়ার জন্য ১ সপ্তাহের বুকিং দিয়ে দাও পেমেন্ট সহ।
আংকেলের কথা শুনে শাহিন কল দিয়ে দিলো
এদিকে আমি আংকেল কে মানা করাতেও উনি আমার কথা শুনলেন না।
বরং বললেন বিয়ে হয়েছে বিধায় আগামী এক মাস পরে যাতে ব্যাবসার কাজে হাত দেই। এই একমাস উনি কোনো কাজের কথা শুনতে চান না আমার মুখে,,
শাহিন- আব্বু আজকে রাতের বুকিং দিয়ে দিলাম।
মিঃ আসাদ- গ্রেট জব আর আমাদের প্রাইভেট জেটটা আজকে রাতে ইরাদ আর ওর ওয়াইফকে দিয়ে আসুক। কি বলো মিসেস?
রুনিমা বেগম- একদম ঠিক বলেছেন এটাই ভালো হবে।
এখন এই মুশকিল থেকে কোনো ভাবেই বেড় হওয়ার রাস্তা আমার সামনে আর নেই।
রুহির দিকে তাকিয়ে দেখি সে আসহায় ভাবে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
এরপর আন্টি রুহিকে নিয়ে ঘুরে ঘুরে শাড়ি টুকটাক গহনা কিনতে হেল্প করলো,,
রুহি কিছুই নিতে চাচ্ছিলো না, সেই প্রথম শপিংমল এ আসার পর থেকেই,,
কিন্তু আন্টির সামনে তো এমন করলে তারা বুঝে যাবে,, তাই তাকে ইশারায় রিকুয়েষ্ট করে বললাম যেন মানা না করে,,
সব শেষে গাড়ীতে এসে বসলাম আমি আর রুহি, এতক্ষনে যেন আমরা হাফ ছেড়ে বাচলাম।
কিছু ক্ষন নিরবতার পর দুইজনই একসাথে সরি বলে উঠি, আবার ১ মিনিটের মতো ২ জন চুপ থাকার পর আবার একসাথেই বলি
"আমি আসলে...."
এবার রুহি আমার দিকে তাকিয়ে ইশারায় কান ধরে, আর আমি বলি "আমাকে মাফ করে দেন আসলে আপনার কথা তারা শুনে ফেলে আর তিনি আমার ইনভেস্টর তাই আমি...
রুহি- আপনার সরি বলতে হবেনা,, আমি বুঝতে পেরেছি।
ইরাদ- আচ্ছা আপনি কি আমার সাথে যাবেন সিলেটে? আমি তাদেরকে মানা করতে পারিনি।
রুহি- হুম যাবো,, এটা কোনো ব্যাপার না। আর আজকে আপনি ওই ছেলেটার সামনে চুপ থেকে আমার অনেক উপকার করেছেন,, আমি আপনার কৃতজ্ঞতা কখনো ভুলবো না। অনেক অনেক ধন্যবাদ।
ইরাদ কিছু বলছেনা, কারণ ওর এখন অনেক টেনশন লাগছে অফিসে সবাই জানাজানি হলে কিরকম হবে? মুলত ইরাদ জানে কিছুদিন পরেই মেয়েটা চলে যাবে,, তখন মানুষের সামনে কি বলবে ইরাদ, তাই বুঝে পাচ্ছেনা।
রুহি ভাবছে ইরাদকে তার সত্যিটা আজ জানিয়ে দিতে হবে। তার জীবনের যে অনেক গুলো লুকানো সত্যি আছে যেগুলো এই মানুষটার জানা দরকার,,
আজকে রুহি জানতে পেরেছে ইরাদের ডিভোর্সই তার ম্লান হওয়ার পেছনে দ্বায়ী।
ইরাদ এখন সিংগেল, তার জীবনে কেউ নেই, রুহির ভালো লাগছে ইরাদকে। কিছুদিন থেকেই ইরাদের প্রতি তার একটা আকর্ষণ কাজ করছে,, সে বুঝতে পারছেনা, এমন কেন হচ্ছে কিন্তু আজকে যখন সবার সামনে নিজেকে ইরাদের স্ত্রী বলেছে এরপর থেকেই মনে একপ্রকার শান্তি অনুভব করছে রুহি।
ইরাদকে স্পর্শ করে তার যেমন অনুভূতি হয়েছে তা যেন স্বর্গীয়। এরকম শিহরিত আগে কখনো রুহি হয়নি। আজ এমন কিছু ও করে বসবে তা নিজেও জানতো না,, কিন্তু আবির?আজ আবিরকে এটা দেখানো অনেক বেশি দরকার ছিলো। তবে ইরাদ কি রাগ হয়েছে ওর ওপরে? রাগ হতেও পারে। রুহি তো ইরকদের কোনো ফিলিংস
.
গাড়ি চলছে এদিকে ২ জনই চুপ করে আছে,, রুহি আজ ভেবে ফেলেছে এই ছেলেটাকে নিজের মনের জমানো সব দুঃখ কষ্ট, মান অভিমান সব কিছু বলে দিবে। ইরাদের বাড়িতে রুহি এসেছে প্রায় ১০ দিনের মত হয়ে গেছে। এই কয়দিনে ইরাদের সাথে তার দরকারী কথা বার্তা হলেও ইরাদ তাকে অনেক সম্মান করে,, তার জ্বর সাড়া পর্যন্ত অনেক বেশি যত্ন করে রেখেছে। তাকে সব কিছু থেকে আগলে রেখেছে।
এতদিন পরে আজ ইরাদের জোরাজোরিতে রুহি শপিং এর উদ্দেশ্য নিয়ে ওর সাথে বের হয়েছে। আর এরই মাঝে এত সব ঘটে গেলো। দুনিয়া অনেক ছোট,, রুহি চায় না বাইরের মানুষের থেকে ইরাদ সব কিছু জেনে নেক। রুহি তার সবটুকু দিয়ে ইরাদকে বিশ্বাস করে।
বাড়িতে আসার পরে ইরাদের ফোনে মেসেজ আসলো আজ রাতে ১১টার দিকে তারা সিলেটের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হবে।
-রুহি, আপনার রুমে আলমারির ওপরে লাগেজ আছে সেটা নামিয়ে প্যাকিং করে নিবেন
আমারটা আমি করে নিচ্ছি। ১১ টায় হেলিকপ্টার এ উঠবো,, ১২টার মধ্যে আল্লাহ চাইলে পৌঁছে যাবো,,
-ঠিক আছে।
রুহি জামা কাপড় বের করে সব সাজিয়ে রেখেছে বিছানায়,,
ইরাদ ওকে একজন মেয়ে মানুষের দরকারী সব সামগ্রী কিনে দিয়েছে আরও কতদিন আগেই তবে আজকে একদম নতুন বউদের মত সব শপিং হয়েছে তার।
সব কিছু তো ভালোই লাগছে কিন্তু বিপত্তি ঘটলো তখনই যখন রুহি তাকিয়ে দেখে এত ওপরে রাখা লাগেজ,,এটা সে নামাবে কিভাবে?
একটা চেয়ার নিয়ে সে চেষ্টায় লেগে গেলো লাগেজ নামানোর,, আর নিজের সাথে নিজেই কথা বলা শুরু করে দিলো....
.
ইরাদের কাপড় প্যাক করা শেষ,,আর সে ভেবে ফেলেছে যার যা ভাবার ভাবুক,, তার জীবনে আগে অনেক মানুষকে মূল্য দিয়েছে, কিন্তু এখন তো রুহি মেয়েটা ছাড়া তার আগে পিছে কেউ নেই, এই আহ্লাদী মেয়েটার জন্য ইরাদের একটা টান কাজ করে মনের অজান্তে,, যেটা ইরাদও জানে না,, তার মায়ের একটা কথা মনে করেই মুখে একটা হাসি ফুটে উঠলো ইরাদের মা সবসময় বলতেন " কাউকে খুশি রাখতে গিয়ে যদি নিজের একটু সমঝোতা করতে হয় তাহলে পিছপা হবেনা বাবা" আর মানুষের কথার তোয়াক্কা ইরাদ আর করবেনা তাই রুহি যতদিন থাকবে সে থাকুক যাকে যা ইচ্ছে বলুক। ইরাদ এটা নিয়ে কোনো উচ্চবাচ্য করবেনা। মেয়েটার কোনো সমস্যা আছে দেখেই সে এমন করে।
হঠাৎ মনে হলো রুহির লাগেজ যেই উপরে এটা ও নামাতে পারবেইনা কোনো ভাবে। নিচে গিয়ে রুহির রুমের পাশে দাড়াতেই ইরাদ শুনতে পেলো রুহি একা একা কথা বলছে...
"কেন যে রুহি তুই ছোট বেলায় কমপ্ল্যান খেতি না, আজকে দেখে নে এই তোর পরিনতি ওপর থেকে লাগেজটাও নামাতে পারছিস না। চেষ্টা কর রুহি চেষ্টা কর। এইটুকুর জন্য যদি ইরাদকে ডাক দিতে হয়, তোর কি মান সম্মান থাকবে কিছু?"
খুব করে সে চেষ্টা করছে কিন্তু ডাবল তাকের সেই আলমারীর ওপরে শুধু মাত্র ইরাদের মত লম্বা ছেলেরই হাত যাবে,,
ইরাদ রুহির কান্ডকারখানা দেখে হাসে প্রতিদিন,,
আজকেও মিটিমিটি হাসছে ইরাদ, হঠাৎ করেই রুহির পা পিছলে পরে যেতে নেয় তখনই ইরাদের কোলে এসে পরে। এবার সে ভয়ে কুঁকড়ে ইরাদকে ঝাপটে ধরে রেখেছে। রুহি চোখ না খুলেও বুঝে গেছে এটা নিশ্চয়ই ইরাদ,, ওর লাইফ সেভিয়ার। কলিজার ভিতর একদম ধকধক করছে রুহির,,
যে ওকে সব কষ্ট থেকে আগলে রেখেছে সে এখনো ওকে ব্যাথা পেতে দেয়নি এটা ও জানে আর এই হাতের স্পর্শ প্রতিবার ওকে শিহরিত করে তোলে। ও এই হাতের স্পর্শ চিনে গেছে, ওর অন্তর পর্যন্ত এই স্পর্শ গিয়ে নিজের দাগ কেটে রেখে যায়।
আ
ইরাদ - এখন চোখ খুলতে পারেন। আর আমাকে ডাক দিলে আপনার মান সম্মান চলে যেত না।
রুহি ইরাদের কোলে থেকেই বাচ্চাদের মত ঠোঁট উল্টিয়ে ফেলেছে,,
ইরাদ- এখন মন খারাপ করতে হবেনা আমি লাগেজ নামিয়ে দিচ্ছি,, চুপ করে বসুন আপনি।
এই বলে রুহিকে কোল থেকে নামিয়ে খাটের পাশে নিয়ে বসিয়ে দিলো ইরাদ,,
রুহি এই মুহুর্ত গুলো অনেক বেশি ইঞ্জয় করে।
ইরাদের শাসন গুলো ওর অনেক ভালো লাগে।
২জন মিলে রুহির লাগেজ প্যাক করে ফেলেছে।
-রুহি আজকে কিন্তু আসাদ আংকেলের বাসায় ডিনার করতে হবে, তাদের বাসায়ই হেলি প্যাড আছে সেখান থেকেই একবারে সিলেটে চলে যাবো আমরা।
-ঠিক আছে। কিন্তু আপনাকে কিছু কথা বলার আছে আমার অতীত নিয়ে।
আমি আজকে আমার এই ২৩ বছর জীবনের কালো অধ্যায় গুলো আপনার কাছে তুলে ধরতে চাই।
চলবে,,,,
(অধিকার) সকল পর্ব , এরপরে ৫ থেকে ১০ পর্ব পাবেন , সার্চ অপশনে লিখুন গল্পের নাম
0 মন্তব্যসমূহ