গল্প : অধিকার
পর্ব :১১
লেখক : Yasira Abisha (Fatha)
দরজা খুলতেই হুট করে ইরাদ এভাবে এসে রুহিকে জড়িয়ে ধরবে এটা ও ভাবতে পারেনি।
-আজ আমি অনেক খুশি রুহি।
কিন্তু রুহির মধ্যে কোনো ধরনের অনুভূতি কাজ করছেনা। হাত উঠিয়ে ইরাদকে ও ধরেও নি,,
ইরাদ এত কাছে থাকার পরেও মনের দুরত্ব সবচেয়ে বেশি লাগছে ওর।
কারন এই মনের মাঝে ইরাদকে হারানোর ভয় কাজ করছে। শুধু মাথায় ঘুরছে ইরাদ কি ওকে ছেড়ে দিবে? রুহির কোনো সাড়া শব্দ না পেয়ে ইরাদ ওকে ছেড়ে দিলো, আর মনে মনে ভাবলো হয়তো এভাবে পারমিশন ছাড়া ওকে ধরাটা ও পছন্দ করেনি।
রুহি কিছুই বলছেনা, ওকে ছেড়ে দেওয়ায় হেটে হেটে বিছানায় বসে পরেছে। ইরাদ ভাবলো রুহি হয়তো টায়ার্ড খাটের অন্যপাশে বসে নিজে থেকেই বললো
-একটা গুড নিউজ আছে,,
-চলে যেতে হবে?
- জ্বি,, কাল সকালেই।
-আপনি কি করে বুঝলেন?
একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে রুহি চোখের পানি লুকিয়ে বললো,
-বুঝতে পেরেছিলাম আপনাকে যখন ডেকে নিয়ে গেলো।
- রুহি আমার মনে অনেক বড় একটা পাহাড় ছিলো সেটা নেমে গেলো। খুব শান্তি পাচ্ছি।
- হুম,, ঘুমিয়ে পরুন।
রুহির কথা বলতে ভালো লাগছেনা। হয়তো ইরাদ কাল বাড়ি ফিরে ওকে বলবে চলে যেতে।
এটা ইরাদের মুখে শুনার ইচ্ছে রুহির নেই। আজ ও বলে ফেলতে পারতো তাই রুহি ঘুমের ভান করে শুয়ে রইলো,, এমন কঠিন সত্যি ও শুনতে চায়না।
খুব কষ্ট হচ্ছে রুহির।
আস্তে করে পাশ ফিরে রুহি শুয়ে পরলো।
ইরাদের মনটা অজকে অনেক ভালো লাগছে,,, কেমন যেন একটা ঘোর লেগে আছে,,
রুহিকে তাকিয়ে দেখলো ও,, ঘুম অবস্থায় কত ভালো লাগছে ওকে। রুহির দিকে তাকিয়ে একটা নেশা কাজ করছে,, ইচ্ছা করছে ওকে আদর করতে। কলিজার ভেতরে লুকিয়ে রাখতে ইচ্ছে করে এই মেয়েটাকে,, কিন্তু ও তো কথা বলতে চাইছে না এখন তাই ইরাদ উঠে বারান্দায় চলে গেলো,, এমন কেন লাগছে ওর? খুব অস্থিরতা কাজ করছে মনের মধ্যে এক ঝড় শুরু হয়ে গেছে,, রুহির থেকে দূরে থাকতে পারছেনা আর ইরাদ।
এদিকে রুহির ঘুম আসছেনা বিছানাটা খুব খালি খালি লাগছে,, ইরাদকে পাশে না দেখলে ওর ভালো লাগে না। ঘুম ও যেন আসতে চায়না।
ও উঠে ইরাদের কাছে গেলো আর মনে মনে ভাবছে,,
"যা কাল বলবে তা আজই বলুক,, সহ্য না হলেও করতে তো হবেই"
বাইরে হঠাৎ করেই বৃষ্টি শুরু হয়ে গেছে। এই অসময়ের বৃষ্টিতে আজকে সবাই কত খুশি হবে,, দম্পতিদের জন্য একটা ভালো সময় কাটানোর বাহানা ও হয়ে যাবে। এদিকে ইরাদ একা একা দাড়িয়ে আছে কিন্তু ওর তো মন আজ অনেক খুশি।
একে তো রুহি ওর সাথে আছে আর,, দ্বিতীয়ত
এত ভালো একটা সংবাদ পেয়েছে ও।
দরজায় হেলান দিয়ে রুহি দাড়িয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে, বৃষ্টি দেখে মনে মনে বলছে
"আমার ভিতরের ঝড় আল্লাহ বাইরেও দিয়ে দিলেন? চোখের পানি বাধা দিয়ে রেখেছি কিন্তু ভিতরে তো রক্তক্ষরণ হয়ে যাচ্ছে। এই হৃদয়ের পোড়ানি কি করে নিভবে?"
ইরাদ ও বাইরের দিকেই তাকিয়ে রুহির কথা ভাবছে,, কিছুক্ষণ পরে পেছনে ঘুরে ওকে দাড়িয়ে থাকতে দেখে ইরাদ সামনে গিয়ে দাঁড়ায়, একদম কাছে এসে পরাতে রুহির হার্ট যেন দৌড়াতে শুরু করেছে। ইরাদের চোখ দুটো এমন লাগছে কেন? এত নেশা লাগানো,, মনের মধ্য তোলপাড় চলতে শুরু করেছে ওর।
ইরাদ আস্তে করে রুহির হাত দুটো নিজের হাতের সাথে মিশিয়ে রুহিকে ওয়ালের সাথে আটকে ধরে,,
রুহি চোখ বড় বড় করে ওকে দেখছে,, ও রুহির পুরো চেহারাটা দেখছে একটা ঘোর নিয়ে,, ইরাদের নিঃশ্বাস রুহির চোখে মুখে এসে বারি খাচ্ছে,, ইরাদের এত কাছে আসায় রুহির শ্বাস নিতেও যেন কষ্ট হয়ে যাচ্ছে,, দম বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়ে যাচ্ছে ওর। ছেলেটার চোখ গুলো,, হাসিটা ওকে মাতাল করে তোলে,,
"আপনি আনেক সুন্দর"
রুহি চমকে উঠে এমন কথা শুনে,,
ইরাদের ঠোঁটের কোণে একটা দুষ্ট হাসি নিয়ে রুহির চোখের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে আস্তে করে ডান কানে একটা চুমু দিলো। ইরাদের এমন আচরণ রুহি কেপে উঠে এর সাথে খুব অবাক ও হয়ে যায়,, কিচ্ছু বুঝতে পারছেনা, এমন কেন করছে ইরাদ??
এরপর রুহির হাত দুটো দেয়ালের সাথে মিশিয়ে এক হাত দিয়ে ধরে অন্য হাত ওর কোমড় জড়িয়ে দেয়,, রুহি চোখ বন্ধ করে ফেলে,, এমন কিছু ও কল্পনা ও করতে পারেনি,, ইরাদের এত কাছে আসা ওর ভালো লাগছে ইচ্ছা করছে নিজেকে উজাড় করে ওকে কাছে টেনে ভালোবাসা দিতে।পরক্ষণেই মাহিরার কথা মনে পরে গেলো। ইরাদ তাহলে এমন করছে কেন? রুহি নিজের হাত ছাড়িয়ে নিয়ে ইরাদকে বুকে একটা ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলো।
-কি হয়েছে?
-আ আআ আপনি এএমন করছেন ক কেন?
কাপাকাপা আওয়াজে রুহি বলে,,
-আমি আপনাকে অনেক ....
এমন সময় ইরাদের ফোন বেজে ওঠে,,
স্ক্রিনে লিখা মাহিরা নাজিম,, রুহির চোখ ছলছল করছে,,
-ফোন ধরুন,,
-নাহ,, এখন আমি আপনার সাথে সময় কাটাবো।
আবারো রিং বেজে চলছে এবার ইরাদ বিরক্ত হয়ে কল রিসিভ করলো,,
-জ্বি আপু বলুন
"আপু" শুনে রুহি চমকে উঠে,, মাথার ওপর দিয়ে যাচ্ছে যেন সব।
মাহিরাকে আপু বললো কেন?
ওপাশ থেকে কি বলেছে রুহি শুনতে পাচ্ছেনা,
ইরাদ বললো,,
- হ্যাঁ কোর্টের লিগ্যাল নোটিশ আপনার রুম থেকে বেড় হওয়ার পরেই পেয়েছি,, থ্যানক্স টু ইউ আপু।
আপনি না থাকলে আমার সেই দাদার দেওয়া বাড়িটা পেতাম না। ভাইয়া বাচ্চাদের সাথে আপনার দাওয়াত রইলো আপু ঢাকা ফিরলে অবশ্যই বাসায় আসবেন।
রুহির মাথায় কিছুই না ঢুকায় ও ইরাদকে জিজ্ঞেস করেই ফেললো
-কে ছিল কলে?
-মিসেস নাজিম,, আপু লয়ইয়ার।
-উনি একটু আগে?
-হুম কি কাজে নাকি এসেছে এখানে আজকে হুট করেই,, আর আমাদের দেখেছেন। ই-মেইলটা পেয়ে সব বুঝে নিয়েছি কি না জানার জন্য ডেকেছিলেন,,
আসলে দাদার একটা পুরোনো বাড়ি ছিলো যেখানে আমার আব্বুরা বড় হয়েছিলো সেই বাড়িতে অন্যজন দখল দিতে চাচ্ছিলো,, একটু আগে সেটা পুরোপুরি আমাদের হয়ে গেছে এখন আর কোনো ঝামেলা নেই। শুধু আমার সাইন লাগবে আমি সেটা বুঝে পেয়েছি এই হিসেবে।
রুহির মাথায় এখন সব ঢুকেছে। "তাহলে মাহিরা নাজিম ইরাদের কেউ না। উনি তো কাজের জন্য ডেকেছিলেন। আর আমি কি না কি ভেবেছিলাম। কত গুলো সময় শুধু কথক ভেবে নষ্ট করলাম। আমি একটা গাধা"
এসব ভাবতে ভাবতে রুহি দেখে ইরাদ ওর দিকে তাকিয়ে আছে,, চোখে সেই দুষ্টুমি আর ঠোঁটের কোণে একটা দুষ্ট হাসি। এবার রুহি একটা ঢোক চাপলো কারণ কিছু ক্ষন আগে ইরাদ যা করেছিলো তা ও কিছু মুহূর্ত ভুলে গেলেও এখন আবার মনে পরে গেলো সব কিছু। রুহি ইরাদকে না দেখার ভান করে ওকে পাশ কাটিয়ে বারান্দার ভেতরে চলে গেলো দরজা থেকে সরে। এখন বাইরের বৃষ্টিটা দেখতে ভালো লাগছে ওর। আকাশের দিকে তাকিয়ে হেসে আল্লাহ কে মনে মনে একটা থ্যাংক ইউ দিলো রুহি। লজ্জা ও লাগছে অনেক ইরাদ এমন করলো কেন হঠাৎ করেই।
পেছন থেকে এসে ইরাদ ওকে জড়িয়ে ধরে রেখেছে বেশ কিছুক্ষন,,
এরপর বললো,,
"আমার বউটা?"
রুহির হাত পা এখন ঠান্ডা হয়ে আসছে,, এত আদুরে গলায় ইরাদ তো কথা বলেনা। এমন করে বউ ও বললো,,
"ছাড়ুন"
"নাহ"
"কেন?"
"আদর করি একটু?"
"উহুম"
"আপনার ঠোঁট গুলো আমার অনেক ভালো লাগে ইচ্ছে করে একদম খেয়ে ফেলি"
"আ আমি ঘু ঘুমামাববো.."
"এখনই?"
"হুম"
"ঠিক আছে"
এই বলেই রুহিকে কোলে তুলে নিয়ে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে নিজেও পাশে শুয়ে পরলো ইরাদ।
এমন ঝড়েরবেগে কোলে করে এনে বিছানায় রাখাতে রুহির শক্ত হয়ে ইরাদের দিকে তাকিয়েই আছে।
রুহির তাকানো দেখে ইরাদ রুহির গালে হাত দিয়ে বলে
"ঘুম না আসছে?"
"হ্যাঁ হ্যাঁ "
বলেই রুহি পাশ ফিরে শুয়ে পরলো।
ইরাদ ওকে টেনে এনে নিজের দিকে ঘুরিয়ে বললো
"ওদিক ফিরে থাকলে ঘুমাতে দিবো না রাতে আজকে.."
রুহি চুপ করেই আছে।
"এদিকে ফিরে ঘুমান,, "
"উহুম"
"তাহলে কিন্তু আজকে আর সত্যিই ঘুমাতে দিবো না"
"কেন?"
"আদর করবো,, খুব করে আর এরপর....
রুহি ইরাদের মুখ চেপে ধরে বলে
"আচ্ছা এদিক ফিরেই ঘুমাচ্ছি"
বলেই রুহি লজ্জায় চোখ বন্ধ করে নিলো,, এবার ইরাদ ওকে নিজের বুকের মধ্যে চেপে ধরে রাখলো।
রুহি এভাবে থেকেই ঘুমিয়ে পরলো। এই মানুষের স্পর্শ ওকে বাচার অনুভূতি দেয় নতুন করে। সুখ দেয়, শান্তি দেয়। প্রথম যেন এতটা তৃপ্তি নিয়ে রুহি ঘুম দিলো। আর ইরাদ? ও একটু পর উঠে গোসল করলো অনেকক্ষন লাগিয়ে এরপর এসে রুহিকে জড়িয়ে ঘুমিয়ে গেলো
ভোরের আলো ফুটে গেছে চারিদিকে প্রতিদিনের মত আজকেও রুহি নামাজ পরে নিলো,, ইরাদকে ডাক দিলো কিন্তু ও উঠলো না,, ঘড়িতে প্রায় ৯টা বেজে গেছে ইরাদের ওঠার কোনো নাম নেই। রুহি কিছুক্ষণ টিকটক দেখলো এরপর বসে বসে ইরাদকে দেখছে আর চকলেট খাচ্ছে প্রায় ১০ মিনিট পরে আরিশার কল আসলো।
-হ্যালো আপু..
-হাই ভাবী।
-ঘুম কেমন হইসে তোমাদের?
-আমি তো সেই কখন উঠে গেছি আপনার ফ্রেন্ড এখনো উঠে নি।
- উঠবে কিভাবে অনেক মেহেনত করিয়েছো যে রাতে।
এই বলেই আরিশা হাসা শুরু করলো।
-না আপু,,
- না মানে?
- রাতে কিছু করো নি তোমারা??
- উহুম
-ইউ মিন সিরিয়াসলি??
-এভাবে বলছো কেন আপু?
-তোমাদের পর পর দুইদিন মেডিসিন খাওয়ালাম আমি আর পিয়াল তাও কিছু করো না তোমরা আনরোমান্টিক কাপল একদম।
রুহির চোখ বড় বড় হয়ে গেলো,, ইরাদের আচরনের রহস্য প এতক্ষনে বুঝে গেছে,, তাহলে কি এর আগের রাতে রুহিও একই কর্মকান্ড করেছিলো?
আর এই সব কিছু ঘিরেই কি ওর আর ইরাদের বিয়ে হয়েছে??
লজ্জায় রুহির মাথা কাটা যাচ্ছে।
ইরাদ ঘুম থেকে উঠে গেছে,,
ঘড়িয়ে তাকিয়ে দেখে বলে,,
-আল্লাহ ১০টা বাজে,, আমি এতোক্ষন ঘুমালাম,, সাথে সাথেই গত রাতের কথা গুলো আধো আধো মনে পরতে শুরু করেছে ওর। পাশে রুহিকে দেখে কি বলবে এখন তাই ও বুঝতে পারছেনা।
-আচ্ছা নাস্তা করেছেন?
-উহুম
-কেন?
-আপনি উঠেন নি তাই।
-আই এম সরি।
আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি,, রুহি লজ্জা পাচ্ছে কিন্তু মনে হচ্ছে ইরাদ তাহলে ওর প্রতি ইতিবাচক মনোভাব রাখে। হয়তো ইরাদ ও ওকে ভালোবেসে ফেলেছে। কেমন যেন ফুরফুরা লাগছে।
সুন্দর করে ও সাজছে একটু পরে ইরাদের সাথেই তো ঘুরতে বেড় হবে ও।
গল্প : অধিকার
পর্ব :12
আগে আমরা হানিমুনে এসেছি তারপর বিয়ে হয়েছে,, ব্যাপারটা কত রোমাঞ্চকর! " কথাটা মনে মনে বলেই রুহি খিলখিল করে হেসে দিলো,,
ইরাদ ওর দিকে তাকিয়ে মুগ্ধ হয়ে দেখছে।
রিকশায় পাশাপাশি বসে আছে ওরা,, তারপরেও মুখে কিছু না বলে আনমনে হাসা শুধু রুহির পক্ষেই সম্ভব,, মেয়েটার মনে কখন কি চলে ইরাদের মাথায় ঢুকে না। তবে ভালোই তো লাগে এসব।
"দিনে দিনে মেয়েটা আমাকে তার প্রতি দুর্বল করে তুলেছে,, এখন ওক মুহুর্ত ও ভালো লাগেনা ওকে না দেখলে। যেমন নতুন এক শহরে এসেছি সবাই রিকশায় উঠে ঘুরে আশেপাশের প্রকৃতি দেখার জন্য আর আমি আমার বউকে দেখছি "
পড়ন্ত বিকেলে সোনালী রোদ ঝিলমিল করছে। রাস্তার পাশের ফুল গাছ গুলোতে রঙিন ফুল ফুটেছে,, রক্তলাল বর্ণ ধারণ করা জবা গুলো রোদের আলোতে চকচক করছে,, ঝিরিঝিরি বাতাস বইছে চারিদিকে, সব মিলিয়ে এক মনোরম দৃশ্য দেখা যাচ্ছে। সারাদিন বাইরেই কেটেছে আজকে রুহি আর ইরাদের। বেশ কিছু ছবিও ওরা তুলেছে,, অবশ্য রুহির ক্যান্ডিড ছবিই ইরাদ বেশি তুলেছে নিজে থেকে, তবে একসাথে ছবি তুলতেও মিস করেনি। ওদের জড়তাও কেটে গেছে অনেকটা,, মনের অনেক কথা আছে বলার কিন্তু দুই জনেরই অসম্ভব পরিমাণে ধৈর্য্য,, ঢাকা ফিরেই মনের না বলা কথা একে অপরের সাথে বলবে।
ইরাদের ম্যানেজার লোকটা খুবই ভালো ওকে যথেষ্ট সম্মান করে আর সাহায্য করে,, যেমন যেই কাগজটা সই করার জন্য ইরাদের ঢাকা যেতে হতো সেটা তিনদিন আগেই সে সাইন করিয়ে নিয়ে গেছে। নতুন বিয়ে করেছে বলে স্যারকে সময় দিতে চাচ্ছে ওর ম্যানেজার আসিফ। রুহি ইরাদের সুন্দর সুন্দর মুহুর্ত সংরক্ষণ করতে করতেই আরো পাচ দিন কেটে গেলো,, আজ রাতেই ওরা ঢাকা ফিরে যাবে। আরিশা পিয়াল ওরা আরো ২দিন আগেই বাড়ি ফিরে গেছে। রুহির সাথে আরিশার ভাব খুব হয়েছে প্রতিদিন ওদের কথা হয় টুকটাক। রুহি ভেবে নিয়েছে আরিশার সাথে মিলে একটা প্ল্যান বানিয়ে ইরাদকে প্রপোজ করবে। মনের কথা না বলে আর থাকতে পারছেনা রুহি। কিছু একটা তো ইরাদ বলবেই আর এই কয় দিনে ও লক্ষ্য করেছে ইরাদ ওর দিকে তাকিয়েই থাকে যখন ও কিছু নিয়ে ব্যাস্ত থাকে তখন ইরাদ ওকে দেখতে ব্যাস্ত থাকে,, একটা মেয়ে শত হলেও পুরুষের চোখের চাহনি বুঝতে পারে কে ওর দিকে কোনভাবে তাকায় তা কিছুটা হলেও আচ করতে পারে মেয়েরা। রুহির মনে একটা ধারণা এসেছে হয়তো ইরাদ ওকে একটু হলেও চায়।
প্রায় রাত ১০ঃ৩০ বেজে গেলো বাসায় ফিরতে ফিরতে ওদের,, বাসা একদ তকতকে ঝকঝকে,, আর হবেই না কেন? কাজের মহিলাকে রুহি বিকেলে ফোন করে বাড়ি পরিষ্কার করে রেখে যেতে বলেছিলো,, ইরাদ তখন ল্যাপটপে বসে বসে কাজ করছিল আর রুহির দিকে এক নজর দেখে অবাক ও হলো কারণ ওর প্রায় আচরণে একদম গিন্নি গিন্নি একটা ভাব চলে এসেছে। যেমন এই সময়েও ইরাদের প্রায় কাজ পরে গিয়েছিলো,, এমনিতে ইরাদের কাজের চাপ পরলে ও রাত জেগে করে কিন্তু বেশি রাত পর্যন্ত ইরাদের কাজ করা রুহির পছন্দ না তাই রাতে তাড়াতাড়ি ওরা বিকেলে ঘুরাঘুরি শেষ করে সন্ধ্যা থেকে ইরাদ ওর কাজে বসতো আর রুহি কানে হেডফোন গুজে চুপচাপ ফোন দেখতো। যে কোনো জায়গায়ই রুহি বাড়ির মত একটা পরিবেশ খুব সুন্দরভাবেই বানিয়ে নিতে পারে। মেয়েটার মধ্যে যে কাউকে খুব সহজে আপন করে নেওয়ার এক অসীম ক্ষমতা আছে।
রুহি নিজের ঘরে এসে ফ্রেশ হয়ে নিলো আর ইরাদও ওর ঘরে গিয়ে ফ্রেশ হলো। ইরাদ ভাবছিলো রুহিকে বেড রুমে এসে থাকতে বলবে কিন্তু রুহি মাইন্ড করবে কি না এই ভেবে আর বলা হয়নি।
এদিকে রুহির মনেও একই সংকোচ,, ইরাদ যদি ওকে নিজে না বলে তাহলে ও যাবে কেমন করে?
যদি কিছু মনে করে??
এসব ভাবতে ভাবতেই রুহি মোবাইলটা হাতে নিয়ে গ্যালারিতে গেলো,, ওর আর ইরাদের এই কয়দিনের বেশ কিছু সুন্দর ছবি আছে,, অনেক গুলো আরিশা আর পিয়াল তুলে দিয়েছে একদম কাপল পোজ দেওয়া,, একটা ছবি হামহাম জলপ্রপাতে তোলা ক্যান্ডিড,, রুহি পানির দিকে তাকিয়ে হাসছে আর ইরাদ ওর দিকে তাকিয়ে আছে,, ওই ছবিটা রুহির সব থেকে বেশি প্রিয়,, সেটাই ও মোবাইলের ওয়ালপেপার দিয়ে রাখলো,, আর ইরাদের সাথে অন্য একটা ছবি লকস্ক্রিনে দিয়ে রাখলো।
ব্যাটারি লো হয়ে গেছে, হঠাৎ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় রুহি উঠে ফোনটা চার্জে বসিয়ে দিয়ে জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে,,
রাত প্রায় ১২ঃ৪৫ ইরাদ হয়তো আসবেনা। তাহলে আজ রাতটা বাসায় থাকাএ অন্যদিনের মত জেগেই কাটাতে হবে আর বিছানায় গেলে ঘুম আসবে না এভাবেও। এখন ইরাদকে ছাড়া বিছানাটা খালি খালি লাগে।
" ইরাদ কি ঘুমিয়ে পরেছে কি না একবার গিয়ে কি দেখে আসবো? নাকি যাবো না? হয়তো ঘুমিয়ে গেছে,, থাক সকালে যাবোনে"
রুহির মনটা খারাপ লাগছে,, শত হলেও তো ইরাদ ওর স্বামী এভাবে দূরে দূরে থাকতে ভালো লাগেনা।
-সরি একটু লেট হয়ে গেলো,, কিছু ফাইল ছিলো চেক করে আসলাম।
পেছন থেকে ইরাদের আওয়াজ পেয়ে রুহি চমকে উঠে।
-ঘুমান নি?
-না,,কাজ করছিলাম,, আসলে ঘড়ির দিকে দেখিনি,, আমার কারণে আপনার ঘুমাতে লেট হয়ে গেলো,,
- না ঠিক আছে।
রুহির মনটা ভালো হয়ে গেলো মুহুর্তের মধেই। ইরাদ তাহলে ওকে ভুলে যায় নি।ইরাদ পাশে আসায় যেন রুহির ঘুম এসে গেলো। ইরাদ ভেবে নিয়েছে রুহিকে ও নিজের সমস্যার কথা আজকে বলে দিবে সাথে এটাও বলে দিবে ও রুহিকে ভালোবাসে।
যদি রুহি চায় সংসার করতে তাহলে তো হলোই,, আর যদি না চায় তাহলে রুহির ভবিষ্যত ও নিজে সিকিউর করে সরে যাবে ওর থেকে। কারণ ওর বাবা না হতে পারা নিজেরই মেনে নিতে কষ্ট আর এটা রুহি মেনে নিবে এমন কোনো কথা তো নেই।
ইরাদ অফিসে চলে গেছে আজ সকাল সকাল রুহির ঘুম থেকে উঠার আগেই,,
রুহি উঠেই ফ্রেশ হয়ে ইরাদকে খুজলো কিন্তু পেলো না। বুঝতে পেরেছে যদিও ও অফিসে চলে গেছে।
ফোনটা হাতে নিয়ে আরিশা কল দিলো ও দুই বার রিং হওয়ার সাথে সাথেই আরিশা ফোন ধরলো,,
-আসসালামু আলাইকুম আপু
-ওয়ালাইকুম আসসালাম ভাবী, কেমন আছো?
-আলহামদুলিল্লাহ আপু, তুমি ভাইয়া ভালো?
- হুম আলহামদুলিল্লাহ।
- আপু আমি ভাবছি আজকে উনাকে বলে দিবো আমার মনের কথা,,
- হ্যাঁ বলে দাও ভাবী। অনেক দিন তো হলো, এভাবে আর কয়দিন চলবে?
-কিন্তু উনি যদি এটা পছন্দ না করে??
- পছন্দ করবেনা কেন ভাবী বলো তো?? তোমাদের বিয়ে কি নিজেদের অমতে হয়েছে?
রুহি সবটা খুলে বললো আরিশাকে।
-ভাবী তাহলে তোমাদের বিয়ে সেদিন রাতে হয়েছে?
-হুম। ওয়াও সো এক্সাইটিং। আমি তো জানতামই না। তোমরা আগে হানিমুনে আগে আসছো তারপর হানিমুনে গেসো।
বলেই আরিশা হেসে দিলো
রুহিও সাথে হাসলো।
-আপু আমার টেনশন লাগছে,, আর ভয় হচ্ছে।
-ভয় কেন পাচ্ছ? ইরাদ তোমাকে ভালোবাসে এটা একদম বুঝা যায়। তুমি সুন্দর একটা শাড়ি পরে ওকে সারপ্রাইজ দাও আজকে। এরপর ডিনারের পরে রাতের বেলা সুন্দর করে নিজের মনের কথা প্রকাশ করো।
-আচ্ছা।
-ঠিক আছে ভাবী বেস্ট অফ লাক।
ফোনটা রেখে রুহি ড্রেসিং টেবিলের সামনে আসতেই দেখে একটা চিরকুট পাশে রাখা।
"আজ সন্ধ্যা হবে আমার ফিরতে,, আপনার সাথে একটা জরুরি কথা আছে যা এসে বলবো,, ফ্রী থাকবেন"
রুহি চিরকুটটা পরে ভাবতে লাগলো কি বলতে পারে ইরাদ। সারাদিন যেন কাটতে চাইছেনা,, বুয়াও আজ শেষ করে তাড়াতাড়ি চলে গেছে।
দুপুরের সময় সুরাইয়া দাদু আসলো,, রুহি মাত্র গোসল করে নামাজ পরে উঠেছে।
এমন সময় গেইটে নক পরতেই দেখে দাদু এসেছেন,,
-আসসালামু আলাইকুম দাদু। ভিতরে আসুন
- ওয়ালাইকুম আসসালাম কেমন আছো দিদিভাই?
- আলহামদুলিল্লাহ আপনি?
- আমিও আলহামদুলিল্লাহ
অনেক কথাই হলো আজকে দাদুর সাথে রুহির। দাদু খুব ভালো মানুষ রুহিকে খুব আদর ও করে।
এক কথা দুই কথায় রুহি মাহিরার কথা তিনি তুললেন।
রুহিকে বললেন ইরাদ কতটা মাহিরাকে ভালোবাসতো আর ওর জন্য কত পাগলামি করেছে এই পর্যন্ত। কথা গুলো রুহির মনে অনেক আঘাত করলো। কারণ ইরাদ তো এখন ওর স্বামী,,
সুরাইয়া জানেনা ওদের বিয়ের কথা তাই হয়তো ওকে সব বলেছেন। রুহির মনে কালো মেঘ এসে যেম ভর করলো,, এত ভালোবাসার মাঝে কি কিছুদিনের আগত রুহির জায়গা ইরাদের মনে হবে?? ইরাদ কি ওকে মেনে নিবে?? সবটা চিন্তাই যেন ওকে কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে।
প্রায় সন্ধ্যা হয়ে গেছে সুরাইয়া বিকেলেই চলে গেছে,, রুহি তারপরেও মনে সাহস জুগিয়ে একটা ক্রিম কালারের শাড়ি পরে হালকা গোলাপি লিপস্টিক দিলো ঠোঁটে। ফর্সা মানুষ এই কালারে ওকে বেশ দেখাচ্ছে আর সিল্কি লম্বা কালো চূল গুলো হাত খোপা করে নিলো। কিছু কিছু চুল মুখের সামনে পরে আছে,,
ছিপছিপে গড়নের মেয়েটাকে না সাজাতেও দেখতে বেশ লাগছে,, রুহি কয়েকবার নিজেকে আয়নায় দেখে নিলো,, হ্যাঁ এভাবেই ভালো দেখাচ্ছে,, ইরাদের বাড়ি ফেরার প্রতিক্ষা আর যেন রুহির সহ্য হচ্ছেনা।
প্রায় ঘন্টা খানিক পরে গেইটে কে যেন এসেছে রুহি তাড়াতাড়ি গিয়ে দরজা খুলে দেখলো,,
একটা মেয়ে এসেছে,, বেশ স্মার্ট,, দেখতেও সুন্দর।
রুহিকে দেখে অবাক হয়ে তাকালো
রুহি নিজে থেকে প্রশ্ন করলো,,
- জ্বি আপনি কে??
ভ্রু কুচকে মেয়েটা উত্তর দিলো
- মাহিরা,, ইরাদ কোথায়??
রুহি তো মাহিরা নাজিমকে দেখেনি, ও ভেবে নিলো তাহলে উনিই এসেছে।
- ওহ আপনি,, আসুন ভেতরে,, উনি অফিসে।
মেয়েটা কিছু না বলেই ঘরে ঢুকে গেলো
কেমন যেন কর্কশতা আছে ওর মাঝে।
রুহি নিজ থেকেই বললো,,
-উনি বলেই নি আপু আপনি আজ আসবেন
-আমার হাসবেন্ড এর বাসায় আমার যখন ইচ্ছে আসবো সেটা কি কাউকে আমাদের বলা লাগবে নাকি? তুমি কে??
এমন সময় মাহিরার ফোন বেজে ওঠে। রুহির মাথায় তো আকাশ ভেংগে পরেছে একদম। এটা লয়্যার মাহিরা নাজিম না,, এটা ইরাদের প্রাক্তন স্ত্রী মাহিরা।
মেয়েটা ফোন রিসিভ করতে করতে হেটে সোজা ইরাদের বেড রুমে চলে গেলো।
রুহির বুক ফেটে কান্না আসছে,, ও কি এটা স্বপ্ন দেখছে নাকি সত্যি??
ইরাদ কলিং বেলে চাপ দিতে যাবে তখনই দেখলোদরজা খোলা,, খানিকটা অবাক ও হলো এমন দেখে,,,
ভেতরে ঢুকে দেখে দরজা লাগিয়ে রুহির ঘরে গিয়ে দেখে
রুহি ওয়ালে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে আছে,, কেমম যেন চেহারাটা শুকনা লাগছে।
ইরাদের বুক কেপে উঠে,, হাতের কয়েকটি শপিং ব্যাগ ছিল এগুলো। মাটিতে ফেলেই ও রুহিকে জিজ্ঞেস করলো
-কি হয়েছে আপনার?? শরীর খারাপ??
-মাহিরা এসেছে।
- কে?
-আপনার প্রাক্তন স্ত্রী,, সে আপনার বেড রুমে এখন।
কথাটা শুনে ইরাদ হতভম্ব হয়ে যায়। এবং সাথে সাথে ওর ঘরের দিকে পা বাড়ায় ,
গল্প : অধিকার
পর্ব :13
-কি হয়েছে আপনার?? শরীর খারাপ??
-মাহিরা এসেছে।
- কে?
-আপনার প্রাক্তন স্ত্রী,, সে আপনার বেড রুমে এখন।
কথাটা শুনে ইরাদ হতভম্ব হয়ে যায়। এবং সাথে সাথে ওর ঘরের দিকে পা বাড়ায়,,
রুহি যেখানে দাঁড়িয়ে ছিল সেখানেই ঠায় দাঁড়িয়ে রইল। ইরাদ ওর সাথে আর কোন কথা না বলে মাইরার কাছে চলে গেল। জিনিসটার রুহি মনে ভীষণ পীড়া দিলে। প্রায় 20 মিনিট অতিবাহিত হয়ে গেছে,, রহিরা দাঁড়িয়ে থাকার শক্তি যেন শেষ হয়ে আসছে,, হয়তো মনের এত বড় পীড়া দেখে শরীর অবশ হয়ে আসছে,,রুহি আস্তে করে মাটিতে বসে পড়ল। হঠাৎ করে ব্যাগের দিকে চোখ গেল,, একটা বক্স দেখা যাচ্ছেভীষণ সুন্দর কারুকার্য করা,, রুহি সেটা খুলে দেখল। ভেতরে একটা লাল টকটকে শাড়ি,, সাথে একটা চিরকুট লিখা ।
"কোনো দিন বাবা হতে না পারার পীড়া আমার মনেও অনেক আঘাত এনেছে কিন্তু এত কিছু হওয়ার পরেও আমাকে গ্রহণ করার জন্য অনেক ধন্যবাদ। অনেক বেশি ভালবাসি তোমাকে প্রিয়তমা।"
ইতি,,
তোমার ইরাদ ।
রুহির কান্না এবার বেড়ে গেল। চোখের পানি এখন আর কোন বাধা মানছে না। তাহলে কি এই খবর ইরাদ ওকে দিতে চেয়েছিল? ইরাদের প্রতি রুহি ভালোবাসা,, যত্ন কিছুই কি ওর চোখে পড়েনি? ইরাদের মনে কি তাহলে মাহিরাই ছিল?? নাহ,, তারপরেও রুহি একবার ইরাদকে জিজ্ঞেস করবে এভাবে তো হতে পারেনা,, রুহি তো ইরাদের বিয়ে করা বউ। প্রাক্তন স্ত্রী কে এভাবে এনে কি আসলেই ইরাদ সুখী হতে পারবে? এত গুলো দিনে কি ও রুহি ভালোই বাসেনি? অনেক গুলো কথাই তো মাথায় ঘুরছে কিন্তু ইরাদকে ও এত কিছুই জিজ্ঞেস করবেনা
শুধু জিজ্ঞেস করবে ও কি রুহি কে ছেড়ে দিতে চায় কি না? যদি তাই হয় তাহলে ও আর এক মুহুর্ত ও থাকবেনা এখানে। কোনো অধিকার ও দেখাবে না ইরাদের ওপর।
রুহি মনে সাহস জুগিয়ে ইরাদের ঘরের দিকে পা বাড়ালো,, সামনে গিয়ে দেখে দরজা আটকানো ভিতর থেকে। কিন্তু ইরাদের আওয়াজ স্পষ্ট শুনা যাচ্ছে।
"তুমি জানো না মাহিরা আমি আজকে কত বেশি খুশি,, আজকের দিনটার প্রতিক্ষা আমি করে এসেছি সেই কবে থেকে,, তুমি আমার জীবনে আসবে এই প্রহর আমি প্রতিদিন, প্রতিক্ষণ গুনতাম,, তুমি আছো দেখেই আজ আমি আছি,, আই লাভ ইউ সো মাচ"
কথা গুলো রুহির কানে যেন সূচের মত বিধছিল,, যেও ভয়টা পেয়েছিল সেটাই তাহলে সত্যি হলো।
ইরাদ মাহিরাকে ভালোবাসে,, তাহলে রুহির এখানে আর থাকার কোনো অর্থ হয় না। ইরাদের জীবনে ও কোন ধরনের সমস্যা তৈরি করতে চায়না।
রাত প্রায় সাড়ে দশটা বাজে। রুহি ছোট একটি চিরকুট লিখল ইরাদের জন্য।
যেদিন রুহি প্রথম এসেছিলো এখানে তখন নিজের পড়নের জামা জুতো যা ছিলো সেগুলো পরে নিয়ে মেইন গেইটের কাছে চলে গেলো,,
পেছন ফিরে আর একবার তাকিয়ে সব দেখে নিলো,, এসবই তো মাহিরার ছিলো,, মাঝে ও কিছুদিন এসেছিলো,, আজ আবার বিদায়ের পালা চলে আসলো,, চোখ মুছতে মুছতে রুহি বেড় হয়ে গেলো,, অজানা এক গন্তব্যে।
ইরাদ বাসায় ঢুকে যখন শুনতে পেলো মাহিরা এসেছে,, কিছু মুহুর্তের জন্য ওর মাথা কাজ করা বন্ধ করে দিলো,,
সাথে সাথেই নিজের বেডরুমে চলে গেলো আসল কারণ জানার জন্য,,
গিয়ে দেখে মাহিরা বিছানার উপরে বসে আছে,, ইরাদ কে দেখেই বিছানা থেকে এক লাফ দিয়ে উঠে ওকে জড়িয়ে ধরতে চায়,
ঠিক তখনই ইরাদ একটা ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয় মাহিরাকে,,
অবাক হয়ে মাহিরা বলে,,
-ইরাদ?
-এখানে এসেছো কেন?
-আমি ফিরে এসেছি তোমার কাছে,,
কথাটা ইরাদের কাছে কাটার মত লাগলো,,
-চলে যাও আমার বাসা থেকে।
-তোমার বাসা? আমি কিছু না তোমার?
-না তুমি কিছু না,, যখন ছিলে তখন আমি তোমার ছিলাম আর এই বাসাও তোমার ছিলো কিন্তু এখন আমি তোমার জন্য পরপুরুষ বরং তার থেকেও বেশি পর,, কারণ আমাদের ডিভোর্স হয়ে গেছে,,
- মানি না এই ডিভোর্স,, একটা কাগজের মধ্যেই আমাদের সম্পর্ক সীমাবদ্ধ?
- মাহিরা আমি অনেক ভালো আছি তুমি চলে গেলে খুশি হবো।
-না যাবো না,
-ঠিক আছে তাহলে থাকো আমি যাচ্ছি।
এই বলে ইরাদ ঘর থেকে যখন বেড় হতে যাচ্ছিলো তখনই মাহিরা দরজাটা লাগিয়ে দরজার সামনে বসে পরলো,,
-বেড় হতে দাও আমাকে
-দিবো না,,
এই মেয়ের সাথে কোনো উচ্চবাচ্য করবেনা ইরাদ, কারণ এর সাথে কথা বলার কোনো ইচ্ছে ওর নেই,,
কি অদ্ভুত জীবন,, এই রকম একটা সময়ের কতই না প্রতিক্ষা ছিলো ইরাদের,, এমনকি রুহি আসার পরের দিন ও মনে মনে ভাবছিলো আর কি কখনো এই ঘরে মাহিরার সাথে বসে কথা হবে? মাহিরা তো আর ওর কাছে ফিরবে না,, মাহিরাকে তখনো কত মনে পরত,, কত ইচ্ছা করতো ওর সাথে বসে কথা বলার,, সময় কাটানোর,, কিন্তু আজ মাহিরাকে আর ভালো লাগছেনা, ওর প্রতি আর কোনো অনুভুতি কাজ করছেনা,,
-আমাকে তোমার মেনে নিতেই হবে,, আমি তোমাকে ভালোবাসি ইরাদ,, বাচ্চা লাগবে না আমরা একসাথে থাকলেই হবে।
এই বলে মাহিরা কান্না করতে শুরু করলো,,
-চলে যাও মাহিরা। আমি তোমাকে আর চাইনা। যে বিবাহিত থাকা অবস্থাতেই পরকিয়া করতে পারে,, অন্যজনের জন্য নিজের স্বামী কে ত্যাগ করতে পারে সে আর যাই হোক ভালোবাসতে পারে না। আর ইসলামী শরিয়াত অনুযায়ী আমরা একে অপরের জন্য হারাম হয়ে গেছি। কোনো ভাবেই আর কিছু সম্ভব না।
-সব ঠিক করে ফেলবো, তুমি আমাকে ভালোবাসো আমি জানি ইরাদ আমাদের বাসর রাতের কথা গুলো তোমার মনে আছে??
দাড়াও আমার কাছে রেকর্ড করা আছে আমি শুনাচ্ছি তোমাকে,,
মাহিরা মোবাইল থেকে রেকর্ড বাজানো শুরু করলো
ফাইনালী আজ আমাদের বাসর রাত,,
তুমি জানো না মাহিরা আমি আজকে কত বেশি খুশি,, আজকের দিনটার প্রতিক্ষা আমি করে এসেছি সেই কবে থেকে,, তুমি আমার জীবনে আসবে এই প্রহর আমি প্রতিদিন, প্রতিক্ষণ গুনতাম,, তুমি আছো দেখেই আজ আমি আছি,, আই লাভ ইউ সো মাচ"
পুরোটা ইরাদ চুপচাপ শুনলো এরপর মাহিরার দিকে অনেকক্ষন তাকিয়ে থেকে হাসলো,,
ইরাদের মুখে হাসি দেখে মাহিরাও হেসে বললো,
-আমি জানতাম তুমি রাগ করে থাকতে পারবেনা আমার ওপরে। এখনো আমাকে ভালোবাসো।
-ভুল বুঝলে, আমি হাসলাম এইজন্য যে আজ এগুলো শুনার পরেও তোমার প্রতি কোনো অনুভুতি কাজ করছেনা আমার। আমি সত্যিই তোমাকে আর ভালোবাসি না মাহিরা। রুহিকে ভালোবাসি আমি। মেয়েটা আমার জীবনটা স্বাভাবিক করেছে। আমাকে নতুন করে বাচতে শিখিয়েছে,, ওকে আমি অনেক ভালোবাসি।
-এমন করোনা ইরাদ,, আমাকে প্লিজ ভালোবাসো,, এরকম করোনা,, তোমার ভালোবাসায় শুধু মাত্র আমার অধিকার।
-বেড় হয়ে যাও,, আমি তোমাকে আর সহ্য করতে পারছিনা।
এই বলেই মাহিরাকে টেনে ইরাদ নিচে নিয়ে এলো,,
চারপাশে তাকিয়ে দেখলো রুহি নেই,, কলিজায় একটা মোচড় দিয়ে উঠলো,, সাথে সাথে মাহিরার হাত ছেড়ে রুহিকে খুজলো সারা বাড়িতে খুজেও পেলো না ওর ফোনে কল করতেই ঘর থেক বেজে উঠলো,,
ইরাদ দেখলো রুহির ফোন ড্রেসিং টেবিলের ওপরেই রাখা হাতে নিয়ে দেখলো লকস্ক্রিনে ওর আর রুহির ছবি,, ফোনটা লক করা, কি হতে পাসওয়ার্ড, রুহি দিয়ে দেখলো ওর ফেভারিট কালার দিয়ে দেখলো হচ্ছে না এরকম কয়েকবার ট্রাই করার পরে নিজের নাম দিলো "ইরাদ" সাথে সাথেই ফোনটা আনলক হয়ে গেলো,,ইরাদের চোখ ঝাপসা হয়ে এলো,, রুহি যে ওকে ভালোবাসে তা আর ইরাদ এর বুঝতে বাকি নেই,, তখনই পাশে রাখা চিরকুটটা দেখে ইরাদ পড়তে শুরু করলো,,
"শুভকামনা আপনার নতুন জীবনের জন্য,, আর হ্যাঁ একটা কথা বাচ্চা জন্ম হওয়া না হওয়া মানুষের হাতে না, তা সম্পুর্ণ আল্লাহার হুকুমে হয়,, তাই নিজেকে ছোট ভাববেন না কখনো,, আপনি মানুষ হিসেবে ভীষণ ভালো,, আপনার মত লোক যে স্বামী হিসেবে পাবে সে অনেক সৌভাগ্যবান,, নিজের যত্ন নিবেন,, আপনার সাথে কাটানো প্রতিটা মুহুর্ত আমার ভীষণ ভালো কেটেছে,, কখনো আপনাকে ধন্যবাদ দেওয়া হয়নি,, তাই আজ ও দিবো না কারণ সেগুলো আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ সময় ছিলো যা ধন্যবাদ দিয়ে প্রকাশ করা যাবেনা,, ভালো থাকবেন,,
ইতি,,
রুহি।
ইরাদ এগুলো পড়ার পরে ওর ভীষণ কষ্ট লাগলো এবং সাথে সাথে রুহির ওপরে রাগ ও হলো,
হাতে চিরকুট দেখে মাহিরা সেটা নিয়ে পরলো
- ভালো হয়েছে ইরাদ ও চলে গেছে আমিও ভুল করেছিলাম তুমিও করেছো। আসো এগুলো ভুলে নতুন করে শুরু করি। এসব বাজে মেয়ে মানুষ কে ভুলে...
-ব্যাস আর একটা কথা না,, চুপ করো নাহয় তোমার গায়ে হাত উঠে যাবে আমার। আমার স্ত্রী কে নিয়ে কোনো বাজে মন্তব্য করার অধিকার আমি বাইরের কোনো মহিলাকে দেইনি। তুমি যদি এখন আমার বাসা থেকে বেড় না হও তাহলে আমি পুলিশ ডাকতে বাধ্য হবো....
-তুমি ওই মেয়েকে নিয়ে কিভাবে সুখী হও আমি দেখে নিবো ইরাদ।
এই কথা বলে মাহিরা বেড় হয়ে গেলো,,
ইরাদ এই সময় রুহিকে কোথায় খুজবে মাথায় সেই টেনশনই ঘুরছে,,
গল্প : অধিকার
পর্ব :14
ইরাদের মাথায় একটাই চিন্তা ঘুরছে এখন রুহি কোথায় গেলো এই সময়? রাতের বেলায় তো একা একটা মেয়ের জন্য রাস্তাঘাট নিরাপদ ও না। এর ওপরে মাহিরার আজেবাজে কথা ইরাদের ভয় লাগছে,, ইরাদ সাথে সাথেই আরিশাকে ফোন করলো,,
-রুহি তোদের বাসায়?
-এত রাতে আমার বাসায় কেন আসবে?
-ও বাড়ি ছেড়ে চলে গেসে
-কি? কেন?
ইরাদ ওদের সবটা বলল,, কথা গুলো বলতে বলতে ইরাদের গলা ধরে আসছিলো।
ওর অতীত আজকে ওর বর্তমান নষ্ট করে দিলো না তো এই একটা ভয় কাজ করছে, আর রুহি ঠিক আছে কি না এই চিন্তায় ও শেষ,,
সুরাইয়া দাদু কেও ইরাদ আজকের ঘটনা জানালো ফোন করে,, কিন্তু ইরাদ জানেনা মাহিরা ওর বাসায় না গিয়ে এখন সুরাইয়ার বাসায় বসে আছে,,মাহিরা খুব জেদি ধরনের,, ওর যেটা চাই সেটা চাই,,
এই স্বভাবটা কতটা ক্ষতিকর হতে পারে তা ওর ধারণাতে নেই,, ওকে সুরাইয়া অনেক বুঝালো যেন নিজের বাসায় চলে যায়,,
তবে মাহিরা যে উনার কথক শুনবে না তা আব্দুল্লাহ ভালোই বুঝতে পেরেছেন তাই সুরাইয়া কে বললেন
"ও থাকুক আসো আমরা একটু গিয়ে আসি"
তারাও কিছুক্ষনের ভিতর বাসায় আসলেন,, ইতিমধ্যে পিয়াল আরিশা ও চলে এসেছে,,সুরাইয়া আর আব্দুল্লাহ ওদের বিয়ের ব্যাপার কিছুই জানতেন না,, আরিশার থেকে সবটা জেনে নিলেন,,
পিয়াল- আরিশা তুমি থাকো আমি ও বেড় হই ভাবীকে খুজতে।
আরিশা- হ্যাঁ যাও ইরাদের সাথে,, ওকে সামলে রেখো।
ইরাদ এদিকে ওর খুব কাছের বন্ধু আদনান যে একজন ওসি তাকে রুহির ছবি মেইল করে দিয়ে বলেছে খুজে বেড় করতে,,
আর নিজেও বসে নেই বেড় হয়ে গেছে রুহিকে খুজতে,, রাতের বেলা না হলে ইরাদের এত ভয় করতো না,, মেয়েটা এত ইনোসেন্ট,, ওর কোনো ক্ষতি যদি হয় ইরাদ কখনো মাহিরাকে মাফ করতে পারবেনা,, মাহিরা ওর সাথে যা করেছে এইজন্য মাহিরাকে কিছুই বলেনি ও,, কিন্তু রুহির সাথে কিছু হলে যে ইরাদ সহ্য করতে পারবেনা,, নির্দোষ মেয়েটা জীবনে কম কষ্ট সহ্য করেনি,, আজ আবার ইরাদের জন্য তার এই রকম কষ্ট সহ্য করতে হচ্ছে এই জিনিসটা ইরাদ মেনে নিতে পারছেনা।
রুহি ঢাকা শহরের কিছুই চিনেনা,, ইরাদের সাথেই বেড় হয়েছে যতবার দরকার পরেছে,, নাহয় ড্রাইভার সাথে ছিলো,, কিন্তু এখন রাতের বেলায় ভয় হচ্ছে অনেক। কোথায় যাওয়া যায় এই কথা ভাবছে ও,, তখনই হঠাৎ মনে পরলো সুরাইয়া দাদু বলেছিলেন ওদের বাসার থেকে পরের রোডে একটা আশ্রম আছে বাচ্চা ও বৃদ্ধা মহিলাদের থাকার,, উনি প্রায় সময়ই ওখানে যান,, এই সময়ে থাকার জন্য কোনো জায়গা রুহির মাথায় আসছেনা,, ঢাকায় অনেক আত্নীয় স্বজন ও আছে ওর কিন্তু কারো বাসায় যাওয়ার ইচ্ছে বা তাদের বিভিন্ন প্রশ্নের সম্মুখীন হওয়ার ইচ্ছে কোনোটাই রুহির নেই,,
তাই আজ রাতটা ওখানে থাকলেই ভালো হবে। কাল হয়তো এই শহর ও ছেড়ে দিবে ও,, কারণ যেখানে ইরাদের স্মৃতি আছে সেখানে থাকলে ও কখনো স্বাভাবিক থাকতে পারবেনা,, কত গুলো স্মৃতি আছে, কত গুলো অপূর্ণ স্বপ্ন আছে এই শহরে,, এগুলো সব পিছনে ফেলে রেখে আগে বাড়তে হবে, শুধু মাত্র ইরাদের সুখের জন্য।
রুহিকে একদম বিদ্ধস্ত লাগছে,, আশ্রমে যাওয়ার পরে তারা ওর এমন অবস্থা দেখে ওকে থাকতে দিলো। বেশ করে রহিমার খুব মায়া হলো ওকে দেখে,,
রুহি তেমন কিছু বললো না,, সেখানকার সবকিছু দেখেশোনা রহিমাই করেন,, আর তিনিই রুহিকে থাকার ব্যাবস্থা করে দিয়েছেন,, সাথে করে নিয়ে ওকে দেখিয়ে দিলো পূর্ব দিকের একটা বিছানা সেখানে ও থাকতে পারবে,
-খালা,, একটা জায়নামাজ হবে??
রুহির কথা শুনে রহিমা ওকে একটা জায়নামাজ দিলো আর বাথরুমের রাস্তা দেখিয়ে দিলো,, রুমের লাইট অফ ছিলো,, রুহি এসে প্রায় ঘন্টা খানিক নামাজ পরে মুনাজাতে আল্লাহর কাছে খুব কান্না করলো, আওয়াজ নাহলেও রুহির কান্না ঘরে যে আরো একজন বৃদ্ধা আছেন তিনি ঠিকি বুঝেছেন,, কিছুক্ষন পরে খাটের এক কোণায় বসে হাটুর মধ্যে মাথা গুজে রুহি নিঃশব্দে কাঁদছে,, কোনো ভাবেই মনকে শান্ত করতে পারছেনা ও,, এক নিমিষেই ওর দুনিয়া,, কত শত স্বপ্ন,, সব শেষ হয়ে যাবে ও তা কখনো ভাবতেই পারেনি। কলিজার পোড়ানি কমছেনা কোনো মতেই,, মাথাটাও ব্যাথা শুরু হয়ে গেছে,,
রুহির চুপচাপ কান্নাটা বৃদ্ধার চোখে পরলো,, তার কেন যেন ইচ্ছা করলো রুহির সমস্যা শুনতে,, মেয়েটার কিছু নিয়ে অনেক মনের পীড়া আছে তা উনি ভালোই বুঝতে পারছেন।
রুহির মাথায় হাত বুলিয়ে শান্ত গলায় তিনি বললেন,,
-কি হয়েছে বোন তোমার?
রুহির মাথায় হাত রেখে এভাবে জিজ্ঞেস করায় ওর কেন যেন এই অচেনা বৃদ্ধাকে খুব আপন লাগলো,,
-দাদু আমার সব শেষ হয়ে গেছে আজকে,, ভুল করেছিলাম,, ভালোবাসার মত ভুল।
-প্রথম থেকে বলো দাদু,,
রুহি খুলে বললো সব কিছু,,
মহিলা বললেন,,
- হ্যাঁ তুমি আসলেই ভুল করেছো,,অনেক বড় ভুল,, নিজের স্বামী কে রেখে আসার মত ভুল করেছো তুমি।
-দাদু উনি তো আমাকে ভালোবাসেই না তাহলে আমি কেনই বা থাকবো ওখানে?
-ছেলেটা তোমাকে ভালো না বাসলে বিয়ে করতো না,, এত দিন একসাথে থেকেছো কখনো তোমাকে ছুয়েও দেখেনি। কেউ যদি কাউকে ভালো না বাসে তাহলে এরকম করতে পারে না। দুনিয়া দেখে আসছি তোমাদের থেকে অনেক বেশি,, বাস্তব জীবন সিনেমা না, পুরুষ মানুষের নিয়ত খারাপ হয় কতটা তোমার ধারণার বাইরে,, আমার কেন যেন মনে হচ্ছে তোমার জামাই তার আগের বউকে চায় না।
-কিন্তু দাদু আমি নিজ কানে শুনেছি,, আর সেই শাড়ি আর চিরকুট? সেগুলো আমি বলতে পারছিনা, কিন্তু তোমার একবার সামনা-সামনি কথা বলে বের হওয়া দরকার ছিলো,,
আর আইনানুসারে সে তোমার স্বামী এখন। তার প্রাক্তন স্ত্রী কে যদি তার পেতেও হয় তোমাকে ছেড়ে তারপর আবার বিয়ে করতে হবে।
-তার মুখ থেকে আমি আমাকে ছেড়ে দেওয়ার কথা সহ্য করতে পারতাম না দাদু।
-রুহির এই অসহায় কান্না দেখে নাজমা বেগমের খুব খারাপ লাগলো,,
তার মেয়ে যদি ২৫ বছর আগে ক্যান্সারে মারা না যেতো তাহলে হয়তো রুহির মত একটা নাতনি থাকতো তার।
উনি বুঝতে পারছে একবার ইরাদের সাথে রুহির কথা বলা দরকার। এরকম ভুল বুঝাবুঝির মাধ্যমে একটা বৈবাহিক সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যাবে তা উনি চান না।
-তোমার স্বামীর নাম কি?
-ইরাদ আহসান।
-আহসান বিল্ডার্সের এমডি?
রুহি অবাক হয়ে তাকালো নাজমার দিকে,,
ইরাদকে উনি কিভাবে চিনতে পারলো তাই ভাবছে ও।
-তোমার স্বামী আমাদের এই আশ্রমের প্রতিষ্ঠাতা, খুব ভালো মানুষ,, তার প্রাক্তন কে চিনতে পারছি এখন। উনি একটু রাগি ধরনের ছিলো,, তবে তোমার স্বামী অনেক মানিয়ে রাখতে চেষ্টা করতো। অনেক যত্নে রাখতেন।
-হুম উনি অনেক ভালো মানুষ, তাই যাকে নিয়ে ভালো থাকবেন তার সাথেই থাকুক।
এখন নাজমা আর কিছু বলছেন না কারণ তিনি চিনেন ইরাদ কেমন মানুষ,, আর মাহিরাকে কত ভালোবাসতেন তা ইরাদের আশেপাশে যারা থাকতেন বা ওকে দেখেছেন সবাই বুঝতে পারতেন।
প্রায় সারারাত ধরে রুহিকে সব গলিতে মেইন রোডে ইরাদ আর পিয়াল খুজে ফেলেছে,,
প্রায় ভোরের সুর্য ফুটে উঠতে চলেছে,, ইরাদের আর সহ্য হচ্ছেনা,, আদনান ও পেলো না রুহিকে,, কোথায় যেতে পারে ও?? আযান পরতে শুরু করেছে চারপাশে।
ইরাদ সেখানে ঢুকে গিয়ে নামাজ পরে নিলো,
মুনাযাতে আল্লাহকে বললো,,
-আল্লাহ আপনি আমাকে আমার মা বাবা থেকে দূর করে দিয়েছেন আমি মেনে নিয়েছি। আপনি মাহিরাকে আমার জীবনে রাখেন নি আমি মেনে নিয়েছি,, আমি কখনো বাবা হতে পারবো না তাও মেনে নিয়েছি,, আমি তো সব মেনে নিয়েছি। কিন্তু সহ্যের তো একটা ক্ষমতা থাকে। রুহিকে তো আমি খুজি নি,, আপনিই আমার জীবনে পাঠিয়েছেন। আজকে এভাবে হঠাৎ করেই যদি রুহিকে আমার জীবন থেকে সরিয়ে নেন তাহলে আমাকেও আপনার কাছে নিয়ে যান,, আমি আর অপ্রাপ্তি নিতে পারছিনা।
পিয়ালের খুব খারাপ লাগছে ইরাদের এই অবস্থা দেখে,,, মনে মনে আল্লাহ কে বলছে রুহির যেন খোঁজ পাওয়া যায় তাড়াতাড়ি,,
এমন সময় আরিশা ফোন করে পিয়ালকে,,
পিয়ালের চোখে মুখে খুশি দেখা যাচ্ছে,,
ইরাদ নামাজ শেষ করতেই পিয়াল ওকে ধরে বলে
-দোস্ত আরিশা কল দিলো মাত্র,, ভাবীর খোঁজ পাওয়া গেছে।
- ও ঠিক আছে?
- হ্যাঁ একদম
ইরাদ আল্লাহকে স্মরণ করে আলহামদুলিল্লাহ বললো।
এদিকে মাহিরা ও সারারাত না ঘুমিয়ে জেগে আছে আর ভাবছে রুহিকে না পেলেই ভালো হবে,, ইরাদের জীবনে ও নিজের অধিকার আবারো ফিরে পাবে তাহলে...
গল্প : অধিকার
পর্ব :15
ভোর ৫ঃ০৩ আরিশা , সুরাইয়া বা আব্দুল্লাহ কারো চোখেই ঘুম নেই,, ওরা সবাই ইরাদের বাসায় আছে,, দুঃসময়ের বন্ধু বলতে এই মানুষ গুলো বরাবরই ইরাদকে সহযোগিতা করেছে,, তাই আজকেও ওরাই পাশে আছে,, সুরাইয়া আর আরিশা ভাবছে রুহি কোথায় যেতে পারে,,
-দাদু আমার মনে হচ্ছে রুহি আশেপাশে কোথাও আসে, কারণ বাসস্টপ বা ট্রেনে কোথাও গেলে আদনান ভাই খবর জানতো,,
- হ্যাঁ আমার ও তাই মনে হচ্ছে,, কিন্তু ইরাদ পিয়াল ওরা তো ওকে পাচ্ছেনা।
-সুরাইয়া আজকে তুমি বলছিলে না রুহি কে নিয়ে ইরাদের করা আশ্রমটা দেখাবে,, ওকে আস্তে আস্তে ইরাদের ভালো মানুষী সম্পর্কে অবগত করে একটা সময় ওদের বিয়ের কথা তুলবে?
আব্দুল্লাহ কথা গুলো বলে উঠলেন পাশের সোফা থেকে উঠে দাড়াতে দাড়াতে।
- হ্যাঁ বলেছিলাম কিন্তু ওটা ইরাদের এখনো জানাইনি।
- রুহি ওখানেই গেছে সুরাইয়া
- দাদু আপনি সিউর কিভাবে?
- বুড়ো তো এভাবে হইনি দাদুভাই,, আর তা ছাড়া সাইক্রাইটিস্টরা একটু আচ তো করতেই পারবে তার পরিচিত মানুষদের নিয়ে,,
কারণ রুহি যেরকম সেন্সেটিভ আর বাহারি দুনিয়া কম বুঝে ওর মত একটা মেয়ে বেশি দূর পর্যন্ত এত রাতে যেতে পারবে না,,
সুরাইয়া মাথা নেড়ে সম্মতি দিলেন,, কারণ তার স্বামী কে সে ভালোভাবেই চিনেন,,
কোনো ব্যাপারে খুব বেশি একটা ধারণা বা আগে থেকে কথা আব্দুল্লাহ বলেন না,, অনেক ভেবে আর বুঝে সব সময় কথা বলে,, তাই সাথে সাথে সুরাইয়া আশ্রমে ফোন করলো,, ৪বার রিং হওয়ার পরে রহিমা ফোন ধরলো,
- আসসালামু আলাইকুম খালাম্মা
- ওয়ালাইকুম আসসালাম রহিমা কেমন আছো?
- আলহামদুলিল্লাহ ভালো,, আপনি?
- আমিও আলহামদুলিল্লাহ,, শোন এই সময় ফোন করলাম একটা দরকারে।
- বলেন খালাম্মা।
- তোমাদের ওখানে কি কোনো মেয়ে আসছে আজকে রাতে??
- হ্যাঁ আসছে সুন্দর মতন একটা মেয়ে বয়স ২৩-২৪ হতে পারে। নাম বললো রুহি,,
কথাটা শুনে সুরাইয়া স্বস্তির নিঃশ্বাস ছেড়ে একটা হাসি দিয়ে আরিশা আর আব্দুল্লার দিকে তাকিয়ে চোখের ইশারায় বললো পেয়েছে।
- ওকে যেতে দিও না কোনো ভাবেই।
- কেন খালাম্মা মেয়েটা কোনো খারাপ কাজ করছে?
- আরে না ও তোমাদের ইরাদ স্যারের ওয়াইফ।
- স্যারের বউ?
- হুম,, ওদের একটু ভুল বুঝাবুঝি হয়েছে ওকে বলো না কিছুই এখন। আমরা আসতেসি একটু পর। ম্যাডামকে যেতে দিও না কোনো মতেই।
- আচ্ছা খালাম্মা।
সুরাইয়া ফোনটা রাখলো,,আব্দুল্লাহ একটা গর্বিত হাসি দিলো,,
সাথে সাথেই আরিশা খুশিতে "- ইয়েস,, দাদাভাই ইউ আর গ্রেট " বলেই পিয়াল কে কল করলো,,
এবং বললো রুহির খোঁজ পাওয়া গেছে তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরে আসতে।
ইরাদ সোজা রুহিকে আনতে যেতে চাচ্ছিলো কিন্তু আরিশা মানা করলো,,
একটা প্ল্যান বানালো আরিশা, রুহি যেহেতু সুন্দর করে চাইছিলো ইরাদকে প্রপোজ করবে তাহলে সুন্দর ভাবেই করা হোক,,
-দাদু ইরাদ একটা গাধা,,
সুরাইয়া হেসেদিলো
- কেন?
- যেই শাড়ি এনেছিলো রুহির জন্য সেখানে ওর নামটা লিখলেই পারতো,, আরে তুই যখন প্রপোজ করবি প্রিপারেশন তো ভালোমতো নিবি। গাধা একটা,,
-দোষ ওর না,, মাহিরাই এমন সময় আসছে,,
- হ্যাঁ ও আবার কেন আসছিলো কে জানে? ভালো হয়েছে দাদু এখন চলে গেছে
- যায় নি।
- কি বলেন দাদু?
- হুম আমাদের বাসায় ও।
- ওর লজ্জা হবেনা? এতকিছু করার পর আবার চলে আসছে ওদের জীবনে অশান্তি করতে।
"তোমরা যাই করো আজকে ইরাদকে এগুলো বইলো না,," কথাটা আব্দুল্লাহ বললো
সুরাইয়া আর আরিশা সম্মতি দিলো,,
ইতিমধ্যে ইরাদ ও চলে এসেছে,,
কেমন বিদ্ধস্ত দেখাচ্ছে ইরাদকে এক রাতেই চোয়াল ভেংগে গেছে,, চোখ মুখ কালো দেখাচ্ছে। চুল উশকো খুশকো হয়ে আছে,
-পুরো দেবদাস দেখাচ্ছে,,
-আরিশা দেখ সবসময় মজা ভালো লাগেনা, রুহি কোথায় বল? ওকে নিতে যাবো।
-এখন বলবো না,, এমন শুকনো মুখে নিতে যাবি?
যত গুলো দুঃখ দিয়েছিস ওত গুলো খুশি দিয়ে আনতে যাবি। আজকে মেয়েটা এমনিতেই কত নার্ভাস ছিলো,,
-নার্ভাস কেন?
- ও আজকে তোকে প্রপোজ করতে চাচ্ছিলো কিন্তু কি থেকে কি হয়ে গেলো,,
- প্রপোজ?
- হ্যাঁ তোকে রুহি ভালোবাসে। আজকে সকালেই এই নিয়ে আমাদের কথা হয়েছিলো, সন্ধ্যা বেলায় ও তোকে বলতো মনের কথা।
কিন্তু ওই সুযোগটাই পেলো না।
- ড্যাম ইট
বলেই ইরাদ একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছাড়লো,
-আরিশা বল কিভাবে কি করতে পারি? আমি ওকে কিছু স্মরনীয় মুহুর্ত উপহার করতে চাই।
- এই না আসলি ট্রাকে,, এখন আমার কথা সবাই শুনেন,,
আশেপাশে ভালো কোনো রেস্টুরেন্টে একটা পাশ রিজার্ভ করতে হবে,, কোথায় করা যায়?
- শাফিন ভাই,, আমার পরিচিত উনি কাছেই উনার রেস্টুরেন্ট সেখানেই বুকিং দিয়ে দেই।
সুরাইয়া - না এমন কিছু করো না,, রুহি যদি বুঝতে পারে ও হয়তো চলে যাবে,, তাই আমাদের এমনভাবে সব করতে হবে যাতে ও সারপ্রাইজ পায়।
আরিশা- তাহলে দাদু?? কিভাবে কি করা যায়?
সুরাইয়া -আমি ওদের কে কল দিয়ে বলি আজকে তাদের যে কারো একজনের জন্মদিন,, এইজন্য ছাদে একটা ছোট অনুষ্ঠান করে সবাই কেক কাটবে ওখানে।
পিয়াল- হ্যাঁ আর আমরা এদিকে থেকে লোক পাঠাতে পারবো যাতে সুন্দর করে ছাদটা ওরা ডেকোরেশন করে দেয়।
আরিশা- হ্যাঁ আর রুহিকেও ড্রেস পাঠিয়ে দিবো যেটা পরে ও ছাদে আসবে।
পিয়াল -তারপর ইরাদ ভাবীকে প্রপোজ করবি।
ইরাদ - ঠিক আছে। অনিককে ফোন করে বলছি তাই করতে,, কিন্তু রুহি কোথায় আমাকে কেউ তো বলবেন?
আব্দুল্লাহ- তোমার আশ্রমে,,
ইরাদ সাথে সাথে দাড়োয়ানকে ফোন করে বললো কাউকে যেন আজ আশ্রম থেকে বেড় হতে না দেয়। আর ডেকোরেশন এর জন্য লোকজন পাঠিয়ে দিলো
আর সুরাইয়া ফোন করে রহিমা কে শিখিয়ে দিলো সব কিছু,,
ইরাদ- আরিশা পিয়াল একটা হেল্প কর
পিয়াল - বল
ইরাদ - রুহির জন্য একটা শাড়ি আর প্রয়োজনীয় জিনিস কিনে ওকে দিয়ে আসবি? আমি গেলে আসলে দেখা না করে থাকতে পারবো না এখন
আরিশা- ঠিক আছে,,
ইরাদ - এই নে ক্রেডিট কার্ড,,
আরিশা- নিবো না তোদের বিয়ের কোনো গিফট ও দেইনি এখনো,,
ইরাদ- আজকে না ,, আমি চাই আমার বউ আজকে আমার তরফ থেকে দেওয়া কোনো কিছু পরুক।
আরিশা- ঠিক আছে তাহলে,,
বেলা ১০টা বেজে গেলো সব প্ল্যানিং করতে করতে,,
নাস্তাও বানিয়ে ফেলেছে কাজের মহিলাটা সবাই নাস্তা করে নিলো,, ইরাদের গলা দিয়েই শুধু খাওয়া যাচ্ছে না,, সবাই এটা খেয়াল করলো কিন্তু কিছুই বললো না,, কারণ কারো কথাই ইরাদকে শান্তি দিতে পারবেনা,, তবুও ইরাদের জোরাজোরিতে সবাই নাস্তা করে নিলো এবং আরিশা পিয়াল বেড় হয়ে গেলো ওরা ঠিক করেছে শপিং করে সোজা রুহিকে জিনিস গুলো আশ্রমের রহিমার হাতে দেওয়াবে এরপর বাসায় গিয়ে ফ্রেশ হয়ে একবারে বিকেলে চলে যাবে ইরাদের সাথে রুহিকে আনতে।
সুরাইয়া আর আব্দুল্লাহ ও সারারাত ঘুমায় নি তাদের ও রেস্ট দরকার। তারাও বাসায় যাবে এখন বিকেলে ইরাদের সাথেই রুহিকে আনতে যাবে,, কারণ রুহিকে তারাও খুব আদর করেন৷ কিন্তু সমস্যা হচ্ছে মাহিরা,, এই মেয়েটাকে আগে সুরাইয়া আদর করতো খুব,, তার আচরণ গুলো সর্বদাই স্বার্থপর ছিলো তারপরেও, ইরাদের মত একটা স্বামী থাকার পরেও পরকিয়ার মত একটা জঘন্য কাজ করার কারণে আব্দুল্লাহ আর সুরাইয়া দুজনের মন থেকে উঠে গেছে মেয়েটা,, এখন মাহিরা ওদের জীবন থেকে দূরে থাকলেই সবাই শান্তি অনুভব করে।
ইরাদ- দাদা দাদু আপনারা ও বাসায় গিয়ে একটু বিশ্রাম করে নেন,, অনেক বেলা হয়ে গেছে।
সুরাইয়া- হ্যাঁ দাদুভাই
আব্দুল্লাহ - তুমি একটু ঘুমিয়ে নাও দাদা ভাই।
- জ্বি আচ্ছা। আপনাদের অনেক বেশি কষ্ট দিয়ে ফেললাম আমি।
- এমন কিছুই না,, পাগল ছেলে। আমরা আছি সবসময় তোমার জন্য।
গেইট থেকে বেড় হতে হতে সুরাইয়া বললো,,
-মাহিরাকে বলা যাবেনা রুহির কথা।
-নাহ,, বলবো এখনো খোঁজ হয়নি।
-নাহলে আশান্তি সৃষ্টি করবে।
এদিকে মাহিরার মন অনেক খুশি সকাল থেকেই,, রাতে যদিও ঠিক মত ঘুম হয়নি,, তাতে কি? মাহিরা বুঝতে পারছে রুহি নামক বাধাটা বোধহয় আর নেই ইরাদের জীবনে,, ওকে পাওয়া গেলে তো দাদা দাদি সকালেই ফিরে আসতো,, নিশ্চয়ই ওকে আর পাওয়া যায়নি,,
গল্প : অধিকার
পর্ব : শেষ
সারারাত রুহি ঘুমাতে পারেনি,, ফজরের নামাজের পরে নাজমা একটা ঘুমের ঔষধ খাইয়েছে রুহিকে জোর করে,, মেয়েটা এতক্ষণে ঘুমিয়েছে নাজমার খুব মায়া হচ্ছে একদম নিজের নাতনির মত লাগছে মেয়েটাকে,, রুহির পাশে নাজমাও ঘুমিয়ে গেলো,,
প্রায় ৭ঃ৩০টার দিকে রহিমা এসে নাজমা কে আস্তে আস্তে ডাক দিয়ে ঘুম থেকে উঠতে বললো,,
-খালা খালা উঠো,, জরুরি কথা আসে,
- বলো মা,
-বাইরে আসো
- হ্যাঁ এখন বলো,,
- খালা মেয়েটা আমাদের ম্যাডাম,, ইরাদ স্যারের বউ। উনার ঠিকঠাক যত্ন করতে হবে,,
- আমি জানি,, কিন্তু তুমি জানলা কিভাবে?
- ডাক্তার ম্যাডাম ফোন করসিলো,, স্যারের সাথে নাকি ম্যাডামের ভুল বুঝাবুঝি হইসে তাই উনি রাগ করে বেড় হয়ে গেসেন বাসা থেকে। কিন্তু আপনি কিভাবে জানলেন এগুলো?
- আমাকে ম্যাডামই বলছে,, উনি জানতো না এই আশ্রম স্যারের।
- আচ্ছা খালা শুনেন একটা প্ল্যান আছে,,
সবটা রহিমা বুঝিয়ে দিলো নাজমা কে ,, নাজমার খুব ভালো লাগছে সবটা শুনে,, ইরাদ আর রুহি মিলে যাক এইটাই ও চাচ্ছিল এতক্ষণ ধরে,,
প্রায় ১২ঃ৩০ টার দিকে রুহির ঘুম ভাংলো,, চোখ ডলতে ডলতে ও ঘুম থেকে উঠে চারদিকে তাকিয়ে মনে পরে গেলো গতদিনের সব কিছু,, মনের ভিতরটা আবারো ভারী হয়ে গেলো,, আজ ও বাড়ি ফিরে যাবে,, সবাইকে সবটা সত্যি জানাতে হবে,, আর ইরাদের থেকে তো দূরেও চলে যেতে হবে।
রুহি ফ্রেশ হয়ে বেড় হলো বাথরুম থেকে তখন নাজমা ঘরে এসে একটা হাসি দিয়ে বললো,,
-আরে দাদু উঠে গেছো?
-জ্বী,, আচ্ছা দাদু ট্রেন স্টেশনটা কোথায়?
- কেন? আসলে আমার বাড়ি চট্টগ্রাম। আজই চলে যেতে চাচ্ছি,, কিন্তু কিছু চিনি না তাই জিজ্ঞেস করছিলাম।
- আজ তো যাওয়া যাবে না,
- কেন দাদু??
- আমার জন্মদিন আজকে, থাকা লাগবে তোমার ও।
- হ্যাপি বার্থডে দাদু বলে রুহি তাকে জড়িয়ে ধরে আরো বলল
- দাদু আজ যাই আমার খুব খারাপ লাগছে এই শহরে।
- আমি জানি কিন্তু এই বুড়ি কয়দিন বাচিঁ তার ঠিক ঠিকানা নেই,, এই ছোট একটা আবদার রাখতে পারবে না?
রুহি কিছুক্ষণ ভেবে থাকার জন্য রাজি হয়ে গেলো,,
"নাজমা দাদুকে দেখলে নিজের দাদুর কথা মনে পরে রুহির, খুব অমায়িক আর মায়াবী একজন মানুষ "
- আসো দাদু নাস্তা করবে।
- খেতে ইচ্ছে করছেনা দাদু
- খেতে হবে আসো এখনি,,
- নামাজ তা পরে নিই?
- ঠিক আছে দাদি নাতনি মিলেই নামাজ পরি।
রুহি মোনাজাতে খুব কান্না করলো,,
নাজমা ও আল্লাহার কাছে বললো,,
তাড়াতাড়ি যেন এই সরল মনের মেয়েটার সকল কষ্ট দূর হয়ে ইরাদের সাথে মিল হয়ে যায়।
এদিকে ইরাদ বার বার ঘড়িতে তাকাচ্ছে আর পায়চারি করছে এই পর্যন্ত ৫বার ডেকোরেটর ফোন করেছে,, সব যেন সুন্দর মত গুছিয়ে করে,, তাড়াতাড়ি যেন সব শেষ করে,, রুহি আর ইরাদের ছবি সহ একটা বিশাল আর্ডার করেছে ইরাদ,, যেই ছবিটা রুহির মোবাইলের স্ক্রিনে ছিলো সেটাই। রুহিকে আজকে নিজের সাধ্যের মধ্যে যা আছে সেই সব কিছু দিয়ে বরণ করতে ইচ্ছে করছে ইরাদের। সময় যেন কাটছে না আজকে,,, এত দিন রুহিকে চোখের সামনে দেখতে দেখতে এখন দূরে থাকতে আর ভালো লাগছেনা,,
সুরাইয়া আব্দুল্লাহ বাসায় ফিরতেই মাহিরা এক দৌড়ে তাদের সামনে এসে জিজ্ঞেস করলো,,
- পাওয়া গেছে ওই মেয়ে কে?
-না,, (সুরাইয়া)
আব্দুল্লাহ আর সুরাইয়া কিছু না বলে ঘরে চলে গেলো,,
মাহিরার এসব একদম ভালো লাগছেনা তাদের,, এমনিতেই সারা রাত ঘুমায়নি। আব্দুল্লাহ সুরাইয়া গোসল সেড়ে এক ঘুম দিয়ে দিলো,, বয়স হয়ে গেছে,, এই সময় সারারাত জাগা কষ্টকর হয়ে যায়।
মাহিরা একা বিড়বিড় করে বলছে,
-থ্যানক গড,, এই মেয়ে মরে যাক,,
দুই দিনের একটা মেয়ে আসাতে ইরাদ আমাকে কিভাবে ভুলে গেলো? আই হ্যাভ টু ফাইন্ড দিস আউট।
আপাতত গোসল করতে হবে,, ইরাদের সাথে দেখা করতে যাবো আজকে রাতে এখন একটু রূপচর্চা করা লাগবে,,
টুনি,, এদিকে আয় তো,
রাত থেকে টুনিকে বিরক্ত করে ফেলেছে মাহিরা বরাবরের মত। এটা করে দে ওটা করে দে।
টুনির কথা হলো
" ইরাদ ভাই যখন হেরে ছাইরাই দিসে তাইলে আবার আইসা আমগো জালায় কেন? দাদি যে কেন ঠাই দিসে হেরে, আর হের নতুন জামাই কই গেলো আমগো জীবনে আইসা জ্বালাতন করতাসে"
কথা গুলো বিড়বিড় করতে করতে টুনি উত্তর দিলো,,
-আইতাসি আপা।
-কি রে টুনি আমাকে আপা ডাকিস কেন?
- তাইলে কি ডাকুম?
- কেন জানিস না? ভাবী ডাকবি
- আপনি তো এহন আর ভাবী না,,
- বেশি কথা বলবিনা। তুই অনেক বেড়ে গেসিস, আমার জন্য বেসন আর লেবু নিয়ে আয়।
-আনতাসি।
মাহিরার খুব রাগ লাগছে,, কাজের মেয়ের কত বড় সাহস ওকে এভাবে মুখে মুখে উত্তর করে, ইরাদ ঠিক হোক তারপর যাকে যাকে শিক্ষা দেওয়ার তাকে তাকে মাহিরা উচিত শিক্ষা দিবে।
রাগে মাহিরা কান্না করতে শুরু করে দিয়েছে,,
সব কিছু মনে পরে গেছে শরীর রাগে কাপছে,,
রাগটা টুনির ওপরে কম তামিমের ব্যাবহার মনে পরে বেশি লাগছে আর এইজন্যই ২দিন ধরে সব কিছুই অসহ্য লাগছে মাহিরার।
তামিম ওকে ছেড়ে দিয়েছে যখন ও বলেছে ওকে বিয়ে করতে,, তামিমের উক্তি এমন ছিলো যে
" তুমি ওয়াইফ ম্যাটেরিয়াল না,, তোমার সাথে এভাবে রিলেশনশিপ ঠিক আছে,, আর এখন আমি তোমার সাথে থাকতে চাইনা,, কত চেষ্টা করেছে তামিমকে নিজের করার কিন্তু সে শুনে নি মাহিরার একটা ও কথা,, যার জন্য ও নিজের স্বামী কে ছাড়লো ওই মাহিরাকে ও ছেড়ে দিলো অন্য এক মেয়ের জন্য। মাহিরা নাকি বউ হবার যোগ্যতা রাখেনা, ও একটা দুশ্চরিত্রা মেয়ে,, কথাটা অনেক গায়ে লেগেছে ওর। মাহিরা তাই আবারো ইরাদের স্ত্রী হয়ে তামিমকে দেখিয়ে দিবে ও স্ত্রী হতে পারবে কি না?? এত বাজে ভাবে তামিম ওকে ছেড়ে দিবে এটা কখনোই মাহিরা ভাবতে পারেনি,, ইচ্ছে করছে নিজের চুল নিজে ছীড়তে।আর ২দিন ধরে ও বুঝেছে ইরাদই ওর জন্য পারফেক্ট ছিলো,, ওকে অনেক ভালোবাসা দিয়েছিলো, যত্ন নিতো,, এই ছেলে এত পাগল ছিলো ওর জন্য,, হুট করে অন্য কাউকে ভালোবেসে ফেলবে। এটা তো মাহিরার কল্পনাতে ও ছিলো না,, তারপরেও এত বছরের সম্পর্ক এত তাড়াতাড়ি ওকে ভুলে যাবে নাকি কিছুদিনের আগত এক মেয়ের জন্য? এটা মাহিরা হতে দিবেনা নিজের অধিকার নিজ নিয়েই ছাড়বে, এই মনোস্থ করেই ও ফিরে এসেছে আর যাওয়ার ও তো কোনো জায়গা ওর নেই। মা বাবা বলেছে তাদের সাথে থাকতে পারবেনা,, তামিম ওকে ছেড়ে দিয়েছে আছে এখন শেষ সম্বল হচ্ছে ইরাদ। ওকে ইরাদের মেনে নিতেই হবে।
-এইজে আপা নেন,,, বলে টুনি বাটিটা হাতে দিয়ে চলে গেলো মাহিরাকে।
রুহি কোন মত খেয়ে উঠলো ,, নাজমার জোরে না খেয়ে থাকতে পারলো না।
ইরাদ কি করছে এখন? ও ঠিকমতো খেয়েছে তো।মাথায় শুধু এগুলোই ঘুরছে। স্বামী সংসার সব বরই অদ্ভুত জিনিস,, যতই দূরে থাকা হয়,, স্বীকৃতি নাই বা পাওয়া হয় তারপরেও একটা টান থাকে।
অজানা একটা ভালোবাসা,, কাজ করে।
আচ্ছা ইরাদের কি একটা বার ও আমার কথা মনে পরেছে? নাকি ভালোই আছে মাহিরা কে নিয়ে? আচ্ছা আল্লাহ পাক কি আমাকে ওর জীবনে আগে দিতে পারতো না? হয়তো আজকে আমি ওর স্ত্রী থাকতাম মাঝে কেউ থাকতো না,, আচ্ছা আমি কি ওদের মাঝে এসেছি? হ্যাঁ আমিই তো,, ইরাদের মনে তো আমি জায়গা করতে পারিনি,, পারলে হয়তো দ্বিতীয়া হতাম না,, বিছানার এক কোণে শুয়ে রুহি কথা গুলো ভাবছিলো প্রায় দুপুর শেষের দিকে,,
রহিমা এসে রুহিকে জিজ্ঞেস করলো
- ঘুমিয়েছেন?
- না আন্টি
- উঠে নেন রেডি হবেন না?
- কেন? ওইজে প্রোগ্রাম আছে,, মানে খালার জন্মদিন।
- না আন্টি এভাবেই ঠিক আছি।
- না হবেনা আমার জন্মদিন উপলক্ষে তোমার সাজতেই হবে।
- দাদু আমার জামা নেই কোনো এখানে,,
- আমার তো আছে দেখো এগুলো পরে নাও
- এগুলো কেন?
- পরেন,,
রহিমা এক প্রকার অনুরোধ করেই বললো,,
রুহির কাছে যথেষ্ট অবাক লাগলো রহিমার এত সম্মান আর যত্নশীল আচরণ,, তারপরেও ভাবলো হয়তো নাজমা ওকে আদর করে তাই এমন করছে।
নিজের জন্য না হলেও নাজমার জন্য তৈরী হলো রুহি,, গোলাপি একটা জর্জেটের শাড়ি ঠোঁটে গোলাপি লিপস্টিক। এর বেশি কিছুই করার ইচ্ছে হচ্ছেনা ওর। যদিও বেশ কিছু মেকাপ আছে ব্যাগটায়।
-মাশাল্লাহ কত সুন্দর লাগছে,, আপনি একদম পরীর মত দেখতে। রহিমা বললো রুহিকে দেখে।
- ধন্যবাদ আন্টি।
আব্দুল্লাহ আর সুরাইয়া কে তৈরি হতে দেখে মাহিরা জিজ্ঞেস করলো
" কোথাও যাচ্ছেন?"
"হ্যাঁ ইরাদ তো কিছু খায় নি ওকে খেতে দিবো"
"তুমি থাকো" আমরা আসছি
কথা কোনোমতে বলে সুরাইয়া আর আব্দুল্লাহ চলে গেলো।
ইরাদের প্রতিক্ষার পালা শেষ,, এসে পরেছি রুহির কাছে,, বিকেলের সূর্য সোনালী বরণে, আকাশে হালকা লালছে ভাব ধারণ করেছে।
সুরাইয়া বললো
"আমরা সবাই ভিতরে বসবো তুমি আর রুহি একান্তে কথা বলো সব ঠিক করো তারপর সবাই ওপরে যাবে।"
ইরাদকে দেখে রহিমা সালাম দিয়ে বললো,
-স্যার আপনি যান আমি ম্যাডামকে পাঠাচ্ছি।
ইরাদ ছাদে চলে গেলো,,
রহিমা নাজমাকে ইশারা করাতেই বুঝে গেলো ইরাদ চলে গেছে ওপরে।
-ছাদে কি সব ঠিকঠাক করেছো রহিমা?(নাজমা)
- আমিতো দেখিনাই,, কেউ গিয়ে একটু দেখে আসবে?? মামণি আপনি যাবেন??(রহিমা)
-আচ্ছা ঠিক আছে আমি দেখে আসি।
-মামণী আপনি আর আই আইসেন না,, আমরা এখনি সবাই আসতেসি আপনি যান আগে।
-ঠিক আছে তাড়াতাড়ি আসেন সবাই।
রুহি ওপরে এসে দেখে খুবই অবাক হলো এত সুন্দর করে সব কিছু সাজানো হয়েছে,, মনে হচ্ছে বড় কোনো ডেকোরেশন এজেন্সি দিয়ে করানো হয়েছে,, চোখ ধাধানো সৌন্দর্য,, পুরোটা লাল দিয়ে ডেকোরেশন করা হয়েছে। রুহি ভেতরে গিয়ে দেখলো তেমন কেউ নেই,, ওই মনে হয় প্রথমে এসেছে।
রেলিং এর সামনে গিয়ে দাড়িয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে ও সব কিছু কত অপরূপ লাগছে কিন্তু ওর মন ফাকা ফাকা লাগছে,, আজকে ইরাদ পাশে থাকলে হয়তো সব ভালো লাগতো কিন্তু এ তো আর সম্ভব না,, ইরাদ কে ছাড়া কিছুই ভালো লাগেনা তবুও মনকে মানাতে হবে,,
মৃদু আওয়াজে গান চলছে,,
"পৃথিবীর যত সুখ, যত ভালবাসা
সবই যে তোমায় দেব, একটাই আশা
তুমি ভুলে যেও না আমাকে
আমি ভালবাসি তোমাকে।
ভাবিনি কখনো, এ হৃদয় রাঙানো
ভালবাসা দেবে তুমি
দুয়ারে দাঁড়িয়ে, দু’বাহু বাড়িয়ে
সুখেতে জড়াব আমি
সেই সুখেরই ভেলায়
ভেসে স্বপ্ন ডানা মেলব এসে
এক পলকে পৌঁছে যাব, রুপকথারই দেশে
তুমি ভুলে যেও না আমাকে
আমি ভালবাসি তোমাকে।।"
সেই দিনটার কথা মনে পরে গেলো রুহির,,
কেমন যেন অস্থির লাগছে,, মনে হচ্ছে ইরাদ এখানে কোথাও আছে।
ও যদিও জানে ইরাদ তো আসবে না এখানে তবুও এমন লাগছে কেন জানি,,
চোখ থেকে পানি পরতে শুরু করেছে ওর,,
চোখটা বন্ধ করে পানি আটকানোর বৃথা চেষ্টা করছে ও।
পুরুষ কন্ঠ শুরু হতেই মনে হলো এখন কেউ বুঝি সামনাসামনি গানটা করছে,, কি সুন্দর আওয়াজ,, মনটা শীতল হয়ে যাওয়ার মতো।
পেছন থেকেই আওয়াজটা এখন আসা শুরু করেছে,, ধীরে ধীরে কন্ঠটা কানের কাছে এসে পরেছে,,
রুহির পেছন থেকে অনুভব করলো কে যেন ওকে জড়িয়ে ধরেছে,, পেছনে ঘাড় ঘুরে তাকাতেই অবাক হয়ে গেলো,, কারণ ইরাদ ওকে জড়িয়ে ধরে বাকি লাইন গুলো গাইলো,,
রুহির চোখে চোখ রেখেই।
রয়েছে এখনো এ বুকে লুকানো
রাত জাগা স্বপ্ন ঘুমিয়ে
মেঘেতে দাঁড়িয়ে, আকাশে হারিয়ে
যতনে রেখ গো তুমি
সেই মেঘেরই আঁচল এনে
আমায় তুমি নাও গো টেনে
রং–তুলিতে আঁকব ক্ষণ
রুপ কুমারের দেশে
তুমি ভুলে যেও না আমাকে
আমি ভালবাসি তোমাকে।।
"ভালোবাসি ঝড়ের রাতে আগত পরী,, অনেক ভালোবাসি,, "
রুহি ইরাদকে জড়িয়ে ধরে বললো,,
"আমিও ভালোবাসি,, অনেক বেশি অনেক"
"আমাকে আপনি ফেলে চলে গেলেন এভাবে কিচ্ছু না বলেই, আমি যে সহ্য করতে পারবোনা,,, আপনি কি একটুও বুঝতে পারেম নি?? কেন এমন করলেন আমার সাথে?? আমি পাগলপ্রায় হয়ে গিয়েছিলাম,,
"কাল আপনি উনাকে বলছিলেন ভালোবাসি আরো কিছু কথা আমি দরজার ওপাশে গিয়েছিলাম আপনার সাথে কথা বলার জন্যই গিফট গুলো দেখার পর,, এগুলো শুনে আমি আর সহ্য করতে না পেরে চলে যাই"
" ওগুলো মাহিরার ফোনে রেকর্ডিং ছিলো,, ম্যাসেঞ্জার থেকে ডাউনলোড করে নিয়েছিলো আমার আগের কথা ওগুলো আর গিফট তোমার জন্য এনেছিলাম আমি পিতা হতে পারবো না কখনো এই অক্ষমতার জন্য আপনার প্রতি ভালোবাসা ও প্রকাশ করিনি আমি,, আমাকে মেনে নিলে আপনি মা হতে পারবেন না কখনো...
কথাটা বলার সাথে সাথে রুহি ইরাদের মুখ চেপে ধরলো,,
"আল্লাহ যদি এটা চায় আপনি আমি কে অমান্য করার?? বাচ্চা আল্লাহার নেয়ামত যদি উনি দেয় তাহলে হবে নাহলে নাই,, এর কারনে কি স্বামী স্ত্রীর ভালোবাসা কমে যাবে? আমি মনে করিনা। আমি আপনাকে ভালোবাসি,, এর বেশি কিচ্ছু জানিনা,, আপনাকেই চাই আমি। "
রুহি কথাটা বলে ইরাদের বুকে মুখ গুজলো,,
ইরাদ ওকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে রেখেছে, প্রায় অনেক ক্ষন এভাবে থাকার পরে ইরাদ বললো,,
"আমাকে রেখে যাবেন আর কখনো?"
"উহুম আর কোনোদিন যাবো না"
"ডান হাতটা দিন"
ইরাদ রুহিকে একটা সুন্দর আংটি পড়িয়ে দিলো ডায়মন্ডের। বললো,,
"আমাদের ভালোবাসার স্মৃতি এটা,, সব সময় হাতে পরে থাকবেন"
রুহি নিজের হাতে একদম প্লেইন একটা পাতলা গোল্ডের রিং খুলে ইরাদকে পরিয়ে দিয়ে বললো,,
"আর এটা আপনার,, আমার দাদা আমাকে দিয়েছিলো এটা,, উনি পরতেন সব সময় আজ আপনাকে আমি এটা দিলাম কখনো খুলবেন না"
ইরাদ মিষ্টি করে হেসে রুহিকে বললো
আচ্ছা আসেন এখন কেক কাটি,, এরপর সবাই উপরে আসলো রুহি কেক আর বাকি সব কিছু দেখে অবাক,,
ইরাদ এত কিছু ওর জন্য করেছে, সবাই জানতো এসব কিছু ভীষণ লজ্জা ও লাগছে ওর।
রাত পর্যন্ত ওরা আশ্রমেই রইলো,, সবাই ইরাদকে কত ভালোবাসে রুহির অনেক ভালো লাগছে সব কিছুই,,
একবারে খাওয়া দাওয়া শেষ করে কিছুক্ষণ পরেই ওরা বাড়ির উদ্দেশ্যে চলে যাবে,,
এমন সময় মাহিরা এসে হাজির।
সুরাইয়ার ল্যান্ডলাইনে টুনিকে আরিশা ফোন করেছিলো ওদের সাথে এসে হেল্প করার জন্য ইরাদ আর রুহির বাসর সাজানোর জন্য এমন সময় মাহিরা কথা গুলো শুনে ফেলে,, আর টুনিকে জোর করে জেনে নেয় ওরা কোথায় আছে।
মাহিরা- ইরাদ ফাইনালি এই মেয়েকে খুঁজে বেড় করেই ফেলেছো? এই মেয়ে তুমি যাওয়ার অন্য কোনো জায়গা পাওনি? আমার হাসবেন্ড এর কাছে আসছো কেন?
ইরাদ- রুহিকে নিয়ে একটা কথাও না মাহিরা,,
তুমি চলে যাও আমাদেরকে আমাদের মত থাকতে দাও।
মাহিরা- যাবো না আমি,, তুমি শুধু আমার। আমার একমাত্র অধিকার তোমার ওপরে।
রুহি- ছিলেন,,
উনি আপনার ছিলেন ততদিন যতদিন আপনি তাকে ডিভোর্স দেন নি। এখন আমার স্বামী উনি,,
মাহিরা- মানিনা এই বিয়ে,, বললেই হয়ে যাবে?
রুহি- হ্যাঁ বললেই হবে না ঠিক বলেছেন,, কাগজ কথা বলবে,, আপনার আর উনার ডিভোর্স পেপারস কথা বলবে,,
এবার মাহিরা ইরাদের সামনে গেলো এক ঝাটকায় ওকে জড়িয়ে ধরতে যাবে এমন সময় রুহি এসে মাঝে দাড়ায়,
রুহি- আমার স্বামীর সাথে পরনারীর মেলামেশা আমার পছন্দ না একদমই,, কিছু বলার থাকলে দূর থেকে বলেন,
রুহির এমন উত্তরে সেখানে থাকা প্রত্যেকের ভালো লাগলো,,
যে এত জঘন্য একটা কাজ করেছে,, এত দিন কোনো মর্ম দেয়নি এমন একটা স্বামীর,, যখন ইরাদের হৃদয়ের রক্তক্ষরণ হচ্ছিলো তখন সে অন্যজনের সাথে আবৈধ সম্পর্কে আবদ্ধ ছিলো,
আর সে আজ এসেছে ইরাদের কাছে ফিরতে,, এমন মানুষ কখনোই ক্ষমার যোগ্য না,,
মাহিরা করুণ হয়ে ইরাদের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো,,
-আমি ভুল করেছি মানি,, কিন্তু আমার কষ্টে কি তোমার একটুও কষ্ট হচ্ছে না ইরাদ?? এত কঠিন কবে থেকে হলে তুমি?? তুমি ছাড়া আমার আর কোনো উপায় নেই ইরাদ,, আমাকে কেউ তাদের কাছে রাখতে চাচ্ছেনা, তামিম বলেছে আমি চরিত্রহিনা,, মা বাবা আমাকে রাখলে আমার কারণে নাকি তাদের মানসম্মান শেষ হয়ে যাবে তাই তারাও বলেছে কখনো যেন ফিরে না যাই,, তুমি না রাখলে আমি কোথায় যাবো? আমাকে একটা সুযোগ দাও ইরাদ? আমি আমার পুরোটা দিয়ে চেষ্টা করবো তোমাকে খুশি রাখার।
রুহি এবার কিছু বললো না ও চাচ্ছে ইরাদের মন থেকে যা আসে ও যেন তাই বলে।
রুহি শুধু ইরাদের চোখের দিকে তাকিয়ে রইলো,,
ইরাদ- মাহিরা তোমার জন্য আমার খারাপ লাগছে,,, কিন্তু ভালোবাসাটা এখন আর নেই,, কারণ পুরোটা তুমি নিজের হাতেই শেষ করে দিয়েছো,, আর আমার প্রতি তোমার কোনো অধিকার নেই, না আছে আমার ভালোবাসার প্রতি। আধিকার জিনিসটা কখনো আপেক্ষিক থাকেনা , কিন্তু আমরা একটা সম্পর্ক নষ্ট করে দিয়ে তাকে শেষ করে দেই।
আমার প্রতি এখন তোমার আর কোনো অধিকার নেই।
রুহি- আপু একটা কথা বলি, সামনের পথ চলায় হয়তো কাজে আসবে আপনার,, যতদিন একটা সম্পর্ক থাকে ঠিক ততদিনই অধিকার থাকে।
আপনি নিজের জায়গা ছেড়ে গেলে সেখানে অন্য কেউ আসবে এবং অধিকারটা তখন তার হয়ে যাবে এটা আমার কথা না এটা দুনিয়ার নিয়ম।
মাহিরা- ইরাদ এটাই তোমার শেষ কথা?
ইরাদ- হ্যাঁ আশা করবো তুমি আমাদের জীবন থেকে দূরে চলে যাবে।
মাহিরা- আমার যাওয়ার সত্যি কোনো জায়গা নেই।
সুরাইয়া - মাহিরা এখন এটা ইরাদের দেখার বিষয় না,, তোমার কথা গুলো খারাপ লাগলেও এটা সত্যি।
-তাহলে আমি চলে যাবো??
রুহি ইরাদের দিকে তাকিয়ে বললো,,
১০ হাজার টাকা দেন,,
ইরাদ ওকে দেওয়ার পরে সেটা রুহি মাহিরার হাতে দিয়ে বললো
-আপু এটা নিয়ে যান,, এর বেশি কিছু করতে পারছিনা আমরা,, আর আশা করছি আপনি আমাদের জীবনে ফিরে আসবেন না কোনোদিন।
মাহিরার খুব কষ্ট হচ্ছে,, একটা সময় ও রুহির জায়গায় ছিলো,, কষ্টে এটা নিতে ইচ্ছা করছেনা,, কিন্তু এই টাকার ওর অনেক দরকার এখন তাই ও নিয়ে চলে গেলো,,
এক অজানা গন্তব্যের দিকে,, আজ ও বাড়িঘর ছাড়া,, না কারো স্ত্রী,, না কারো মেয়ে,, না কারো প্রেমিকা। নিজের দোষেই আর ওর পরিনতি এমন।
ইরাদের খারাপ লাগলো মাহিরার জন্য,, কিন্তু রুহির হাতটা শক্ত করে ধরলো ও। কারণ অতীত কে ফিরিয়ে আনার মানে হয়না আর এই মেয়েটার সাথে ওর আগামী জীবনের পথচলা। ওর কালো অন্ধকার রাতের সমাপ্তি ঘটেছে ভোর এসে উঁকি দিচ্ছে,, এই নতুন জীবনটার মানুষটা ওকে খুব করে চায়,, ওকে আগলে রেখেছে,, ভেঙে পরতে দেয়নি,,
পুরোটা জীবন এর সাথেই ওর পার করতে হবে,, আর মাহিরার এই জীবন মাহিরাই বেছে নিয়েছে এখানে ইরাদের কিছুই করার নেই।
আব্দুল্লাহ - চল এবার নাতিবউ নিয়ে বাড়ি যাই,,
সুরাইয়া - হ্যাঁ চল চল বাড়ি যাই।
রুহি সবার থেকে বিদায় নিলো,, নাজমা কে বললো আবার আসবে দেখা করতে।
গাড়িতে আসার সময় রুহি ইরাদকে জিজ্ঞেস করলো আরিশা কি ওকে ফোন করেছিলো কি না?
- আরিশারা সব জানে রাত থেকেই।
- তাহলে আজ আসলো না যে?
- ওরা আমাদের বাসায়ই, জরুরি কাজ করছে।
- এখানে আসা থেকে বেশি কি এমন কাজ হলো তাদের?
- আমাদের বাসর ঘর সাজাচ্ছে।
ইরাদ কথাটা একটা দুষ্ট হাসি দিয়ে বললো,
রুহি একদম লজ্জায় লাল হয়ে গেলো,,
"উনি যে কিসের মধ্যে কি বলে,, একদম লজ্জা নেই"
কথাগুলো রুহি মনে মনে বললো,,
কিন্তু ইরাদ উত্তর দিলো,,
- হ্যাঁ লজ্জা নেই আসলেই,, কিন্তু আমি নির্লজ্জ শুধু আপনার কাছেই।
"মনের কথা ও শুনে ফেললো এখন আর কিছুই ভাববো না" রুহি আবারো মনে মনে বললো,,
রুহি এবার বড় বড় চোখ করে ইরাদের দিকে দেখছে,,
- আমার বউকে আমি বুঝি।
এবার রুহি একটা লাজুক হাসি দিলো ,,
পিয়াল আরিশা টুনি মিলে রুহিকে বরণ করে নিলো, আরিশা টুনি মিলে রুহিকে রেডি হতে সাহায্য করলো,,
রুহি লাল সেই শাড়িটাই পরলো যেটা ইরাদ ওর জন্য কাল এনেছিলো,,
ঠোঁটে লাল লিপস্টিক দিলো গালে ব্ল্যাশঅন দিলো,, চুল গুলো ছেড়ে দিয়েছে এভাবেই মনে হচ্ছে একটা লাল পরী।
ইরাদ সাদা একটা পাঞ্জাবি পরেছে,, চুল গুলো ব্যাকব্রাশ করে জেল দিয়ে সেট করেছে,, খোচা খোচা দাড়ি মুখে
পিয়াল বললো,,
-একদম নায়ক লাগতেসে ভাবী তো আজকে পুরাই ঘায়েল হয়ে যাবে।
- হ্যাঁ তোরা যা এবার,, কাবাবে হাড্ডি
- কি খারাপ বউ পেয়ে আমাকে ভুলে গেলি?
- হ্যাঁ তোর বউ নিয়ে যা তুই আমাকে শান্তি মত বউকে নিয়ে বসে কথা বলতে দে।
- কত যে কথা বলবি আজকে, জানা আছে এগুলা আমাদের
এই বলেই আরিশা ঘরে ঢুকলো,,
এবং সাথে সাথে হেসে দিলো পিয়াল আর আরিশা,,
-পিয়াল বেবি চল চলে যাই,, নিউ কাপল কে আজকে রোমান্স করতে দেই।
- হ্যাঁ ডার্লিং চল।
-ইরাদ শোন তোর বউকে ঘরে দিয়ে এসেছি।
আরিশা আর পিয়াল চলে গেলো,,
রুহি বেড রুমে এসে আরো অবাক হয়েছে কারণ ওর আর ইরাদের বড় একটা ছবি বিছানার ওপরের দিকটায় লাগানো হয়েছে,, পুরো ঘরটা বেলি গোলাপ আর রজনীগন্ধা দিয়ে সাজানো হয়েছে,, খুবই মনোমুগ্ধকর পরিবেশ। আজকের আমেজটাই যেন বলছে আজ ভালোবাসার রাত,, এক হওয়ার রাত।
রুহি বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে ইরাদ ঘরে এসে রুহিকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলো,,
এতে রুহির পুরো শরীরে যেন এক প্রকার বিদ্যুৎ প্রবাহিত হয়ে গেলো,, ইরাদ ওকে আস্তে করে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিলো,, রুহি লজ্জায় ওকে ছাড়িয়ে ঘরের ভিতরে যেতে চাইলো তখন ইরাদ ওর হাত ধরে ফেললো,, কাছে টেনে নিয়ে হাত দুটো নিজের হাতে নিয়ে চোখে চোখ রেখে বললো,,
-আপনি যতদিন না চাইবেন ততদিন কিছু করবো না,, যতটা ইচ্ছে সময় নিতে পারেন।
রুহি ইরাদের চোখের দিকে তাকিয়ে রইলো,, কি সুন্দর হাসি এই লোকটার দেখলে শুধু দেখতেই ইচ্ছে করে,, এখন তো কোনো বাধা নেই,, এখন এই মানুষটাকে ভালোবাসাই যায়,, খুব করে ভালোবাসা যায়,,
রুহি এবার ইরাদের হাত দুটো নিজের কোমড়ে দিয়ে ওর গলা জড়িয়ে ধরে চোখে চোখ রেখে ঠোঁটে ঠোঁট জোড়া আলতো করে গুজে দিলো,, ইরাদ খুব অবাক হয়ে গেলো,, কিন্তু ভালো লাগছে,, ভালোবাসার গভীরতায় ডুবে যেতে,, উভয়ের হৃদস্পন্দন বেড়ে গেছে,,
রুহি কিছুক্ষণ পরে ইরাদের ঠোঁট ছেড়ে বললো,,
"এতটা ভালো হওয়া ও কিন্তু ভালো না,,"
কথাটার অর্থ ইরাদের বুঝতে বাকি নেই,, একটা সুন্দর হাসি দিয়ে রুহিকে কোলে তুলে নিয়ে বিছানায় শুইয়ে দিলো,,
"একটু খারাপ হওয়াই যায় তাহলে"
রুহি লজ্জার বিছানায় মুখ গুজে দিলো,, ইরাদ ওকে ঘুরিয়ে নিজের দিকে,, শাড়িটা খুলে ফেললো,,
ইরাদের প্রতিটি স্পর্শ রুহিকে নতুন করে জাগ্রত করছে,, এ যেন এক নতুন কেউ,, আজ রুহি পূর্ণতা পাচ্ছে,,
একে অপরকে ওরা আবিষ্কার করছে,,
ভালোবাসার গভীরতায় ডুবে যাচ্ছে,, যতটা সম্ভব অতটা দিয়েই আজ একে অপরকে আপন করে নিচ্ছে ওরা। ইরাদের ক্ষত বিক্ষত মনটায় এক রাশ সুখ আর শান্তি নিয়ে এসেছে ওর ঝড়ের রাতে আগত পরী,, আজ ভালোবাসায় কোনো বাধা নেই,,
আজ আছে পুরোপুরি আধিকার,, আছে ভালোবাসা,, আছে পুর্ণতা,, আছে বৈধতা।
0 মন্তব্যসমূহ