ঢাকা শহরের ব্যস্ততার মাঝে একটা নির্জন দুপুর। “বোহেমিয়ান ব্লু” ক্যাফেতে বসে রাইশা তার খাতায় নতুন পোশাকের ডিজাইন আঁকছিল। তার চোখে ভাসছিল নিউ ইয়র্ক ফ্যাশন উইকের র্যাম্প। এমন সময় কফি নিয়ে পাশের চেয়ারটায় বসে পড়ল এক যুবক।
— “চেয়ারটা ফাঁকা ছিল তো?”
রাইশা একটু চমকে তাকাল।
— “হ্যাঁ, বসুন।”
ছেলেটির গায়ে নীলচে পাঞ্জাবি, হাতে একটা নোটবুক। নাম নিলয়, সেটা তখনও জানা হয়নি।
কয়েক মিনিট ছিল নিঃশব্দ। কফির কাপে ঠোঁট ছোঁয়ানো, জানালার বাইরে তাকিয়ে থাকা। তারপর হঠাৎ রাইশা জিজ্ঞেস করল,
— “আপনি কি লেখক?”
নিলয় হেসে বলল,
— “সাংবাদিক, তবে মাঝে মাঝে নিজের জন্যও লিখি।”
রাইশা একটু মুগ্ধ হয়ে তাকাল — শহরের ব্যস্ততা ছাপিয়ে কারো মধ্যে কিছু একটা অন্যরকম পেয়েছিল সে।
পরদিন আবার দেখা। তারপর আরও বারবার। একসময় বুঝে উঠার আগেই, রাইশা ও নিলয়ের মধ্যকার দূরত্বটা কফির টেবিলের চেয়েও ছোট হয়ে আসে।
ঢাকা শহরের ব্যস্ততার মাঝে একটা নির্জন দুপুর। “বোহেমিয়ান ব্লু” ক্যাফেতে বসে রাইশা তার খাতায় নতুন পোশাকের ডিজাইন আঁকছিল। তার চোখে ভাসছিল নিউ ইয়র্ক ফ্যাশন উইকের র্যাম্প। এমন সময় কফি নিয়ে পাশের চেয়ারটায় বসে পড়ল এক যুবক।
— “চেয়ারটা ফাঁকা ছিল তো?”
রাইশা একটু চমকে তাকাল।
— “হ্যাঁ, বসুন।”
ছেলেটির গায়ে নীলচে পাঞ্জাবি, হাতে একটা নোটবুক। নাম নিলয়, সেটা তখনও জানা হয়নি।
প্রথম কয়েক মিনিট ছিল নিঃশব্দ। কফির কাপে ঠোঁট ছোঁয়ানো, জানালার বাইরে তাকিয়ে থাকা। তারপর হঠাৎ রাইশা জিজ্ঞেস করল,
— “আপনি কি লেখক?”
নিলয় হেসে বলল,
— “সাংবাদিক, তবে মাঝে মাঝে নিজের জন্যও লিখি।”
রাইশা একটু মুগ্ধ হয়ে তাকাল — শহরের ব্যস্ততা ছাপিয়ে কারো মধ্যে কিছু একটা অন্যরকম পেয়েছিল সে।
পরদিন আবার দেখা। তারপর আরও বারবার। একসময় বুঝে উঠার আগেই, রাইশা ও নিলয়ের মধ্যকার দূরত্বটা কফির টেবিলের চেয়েও ছোট হয়ে আসে।
নিলয়ের অতীত
শীতকাল পড়েছে। জানালার কাঁচে জমেছে হালকা কুয়াশা। “বোহেমিয়ান ব্লু”-তে আজ একটু অন্যরকম নীরবতা।
রাইশা টের পাচ্ছিল, নিলয় আজ যেন অন্যরকম — চোখে ক্লান্তি, মুখে চাপা যন্ত্রণা।
— “তুমি ঠিক আছো?”
— “হ্যাঁ... মানে, চেষ্টা করছি।”
সেই রাতে, প্রথমবারের মতো নিলয় তার অতীতের দরজা খুলে বসলো।
সেই হারিয়ে যাওয়া ভালোবাসা
তিন বছর আগের কথা। নিলয় তখন নতুন একজন রিপোর্টার, প্রেমে ছিল মীম নামে এক মেয়ের সঙ্গে। মীম ছিল সাহসী, প্রাণবন্ত, একটু পাগলাটে। দু’জনেই স্বপ্ন দেখত একসাথে জীবন গড়ার।
কিন্তু হঠাৎ এক সন্ধ্যায় সবকিছু থেমে যায়। adult18+ story
একটি সড়ক দুর্ঘটনায় মীম মারা যায় — মাত্র ২৪ বছর বয়সে।
নিলয়ের জন্য যেন সময় থেমে গিয়েছিল সেদিন। সে কারো সঙ্গে দীর্ঘ সময় কথা বলত না, কেবল তার ডায়েরিতে লিখত,
"তাকে ছাড়া দিনগুলো যেন কালো-সাদা সিনেমা।"
রাইশা স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল। সে বুঝেছিল, নিলয়ের চোখে যে গভীরতা সে এতদিন দেখেছে — তার উৎস এই অপূর্ণ ভালোবাসার ক্ষত।
— “তুমি কীভাবে সামনে এগোলে?”
— “তাকে হারিয়ে বুঝেছি, ভালোবাসা হারিয়ে গেলেও জীবনের দায়িত্ব থাকে। কাউকে ভালোবাসা মানে তাকে ভেতরে বাঁচিয়ে রাখা, কিন্তু নিজের জীবনটাকেও বাঁচিয়ে রাখা।”
রাইশা অনেকক্ষণ কিছু বলতে পারেনি। তার ভিতরে কোথাও একটা দেয়াল ভেঙে পড়ছিল। তার নিজের অতীতের ভয়গুলো যেন নিলয়ের সাহসের পাশে ছোট হয়ে যাচ্ছিল।
নিঃশব্দে বলা কথা
রাত শেষে ক্যাফে থেকে বেরিয়ে তারা হেঁটেছিল। নীলচে আকাশের নিচে নিলয় হঠাৎ বলল,
— “রাইশা, আমি জানি না তুমি কেমন অনুভব করো, কিন্তু আমি জানি — তোমার সাথে কাটানো প্রতিটি মুহূর্ত আমাকে বাঁচিয়ে রাখে।”
রাইশা কিছু বলেনি। শুধু নিলয়ের হাতটা ধীরে ধরে রেখেছিল।
প্রথমবার, নিলয় অনুভব করেছিল — কেউ তার ক্ষতকে ভয় পাচ্ছে না, বরং পাশে থেকে সেটা ছুঁয়ে দিচ্ছে ধীরে ধীরে।
ভালোবাসার প্রকাশ
ঢাকার ধুলোমাখা জানুয়ারির এক সকালে রাইশা ফোন পেল—
নিলয় বলল,
— “আজ চল কাশবনের দিকে যাই। কিছু না বলিস, শুধু হ্যাঁ বল।”
রাইশা একটু হেসে বলেছিল,
— “তোমার পাগলামির শেষ নেই।”
— “তুই না বলিস, আমি কিন্তু বাইকে উঠেই যাচ্ছি!”
রোদের ছায়া, দুজনের ছায়া
তারা চলে গেল শহরের বাইরের একটা নির্জন জায়গায় — ছোট্ট নদীর ধারে কাশবন, পাখির ডাক, আর দূরে কিছু নৌকা।
নির্জনতা যেন তাদের ভেতরের কথাগুলো খুলে বলার সুযোগ দিচ্ছিল।
রাইশা নদীর দিকে তাকিয়ে বলল,
— “তোমার সাথে সময় কাটালে মনে হয়, আমি আস্তে আস্তে ঠিক হচ্ছি।”
নিলয় বলল,
— “আমারও তেমনি মনে হয় — আমি হারিয়েও বেঁচে আছি শুধু তোর কারণে।”
হঠাৎ আকাশ ভেঙে বৃষ্টি নেমে এল — হালকা, কোমল। তারা দুজনই ভিজে গেল। রাইশার চোখে পানি আর বৃষ্টির ফোঁটা মিশে একাকার। নিলয়ের দিকে তাকিয়ে সে বলল,
— “আমি ভয় পাই, কিন্তু তোমায় বিশ্বাস করতে ইচ্ছে করে।”
প্রথম ভালোবাসার স্বীকারোক্তি
নিলয় হাত বাড়িয়ে রাইশার কাঁধে রাখল। তার কণ্ঠ ছিল থরথর কাঁপা, কিন্তু চোখে ছিল স্থির বিশ্বাস।
— “রাইশা, আমি তোমায় ভালোবাসি। সেটা বোঝানোর মতো ভাষা হয়তো জানি না, কিন্তু আমি তোর সাথেই জীবনটা দেখতে চাই।”
এক মুহূর্ত নিঃশব্দ, যেন পুরো পৃথিবী থেমে গেছে।
রাইশা ধীরে ধীরে তার দিকে এগিয়ে এসে মাথা রাখল নিলয়ের বুকে।
— “তোমার বুকের শব্দটা... একদম আমার মতোই বাজে।”
সেই মুহূর্তে, তারা একে অপরের বাহুডোরে ভিজে গেল — শরীরের বাইরের বর্ষা, আর মনের ভেতরের ভালোবাসা এক হয়ে গেল।
তাদের গল্পে এবার আর শুধু বন্ধুত্ব নেই — এবার প্রেম, গভীর, সত্য, আর নির্ভীক।
ভুল বোঝাবুঝি ও দূরত্ব
ভালোবাসা কখনও কখনও খুব সংবেদনশীল হয়ে পড়ে। একটু ভুল শব্দ, একটু দেরি করে উত্তর দেওয়া — এইসবই কাঁটার মতো বিঁধে যায় হৃদয়ে।
ঠিক সেভাবেই শুরু হয়েছিল...
মেসেজ, যেটা বদলে দিল সব
সেদিন রাইশা হঠাৎ নিলয়ের ফোনটা ধরেছিল — নিলয় স্নান করছিল, ফোন বাজছিল বারবার।
একটা নাম — "সায়মা (কলিগ)"
খুলেই দেখে:
“আজ তোমার চোখে একদম পুরনো নিলয়কে দেখলাম। অনেক দিন পর ভালো লাগল…”
রাইশার বুকটা ধক করে উঠেছিল।
সে কিছু বলেনি, কিন্তু মুখটা কেমন যেন ভারী হয়ে গিয়েছিল।
নীরব অভিমান
পরদিন দেখা হলেও, রাইশা স্বাভাবিক ছিল না। তার চুপচাপ ভাবটা নিলয় বুঝতে পারছিল, কিন্তু জানত না কেন।
— “সব ঠিক আছে?”
— “হ্যাঁ, ঠিক।”
তিনদিন কথা হয়নি। তারপর হঠাৎ একদিন নিলয় বার্তা পাঠাল,
“রাইশা, আমি জানি না কী ভুল করলাম। কিন্তু কিছু বলো। এভাবে চুপ থেকো না।”
রাইশা জবাব দিল না।
অভিমান এমন এক জিনিস, যেটা কখনও চোখে দেখা যায় না, কিন্তু ভিতরটা ভেঙে দেয়।
তামান্নার মুখোমুখি
তামান্না একদিন রাইশাকে বলল,
— “তুই তো প্রেমে পড়েছিস, তাহলে পালাচ্ছিস কেন?”
— “আমি জানি না... আমি যেন আবার ভয় পেয়ে গেছি। ওর চোখে অন্য কাউকে দেখেছি সেদিন।”
— “তুই কি চেক করেছিস, ও কিছু ভুল করেছে কিনা?”
— “না…”
— “তাহলে তুই ওর চোখে অবিশ্বাস করেছিস।”
এই কথাটা যেন রাইশার মনে একটা বিদ্যুৎ ছড়াল। সে বুঝল, সে আসলে ভয় পেয়ে বিশ্বাস ভেঙেছে — নিলয় নয়।
দূরত্বের শেষ কিনারা?
( adults story here click )
চারদিন পর, রাইশা হঠাৎ গিয়ে দাঁড়াল “বোহেমিয়ান ব্লু”-তে। নিলয় একা বসে ছিল, চোখে ক্লান্তি, হাতে পুরনো নোটবুক।
রাইশা বলল,
— “আমার চোখের দেখায় ভুল হয়েছিল।”
নিলয় তাকাল তার দিকে — চোখে জল।
— “ভালোবাসা মানে যদি একবার আঘাত পেলেই দূরে চলে যাও, তাহলে তো ওটা টিকে না রাইশা। আমি শুধু চাইছিলাম তুই বিশ্বাস করিস — অন্ধভাবে না, মন দিয়ে।”
রাইশা চুপ করে গিয়ে তার হাতটা ধরল।
কেউ কিছু বলল না। কিন্তু হাতে হাত রেখে তারা আবার একসঙ্গে বসে কফি খেল।
নীরবতায় যেন অনেক কিছু বলা হয়ে গেল।
ফিরে আসা ও প্রতিশ্রুতি
সময় বয়ে যায়। বসন্ত এসে গিয়েছে শহরে। রাস্তার ধারে কাশফুল নেই, কিন্তু বাতাসে প্রেমের গন্ধ টের পাওয়া যায়।
রাইশা আর নিলয়, দুজনেই আবার কথা বলতে শুরু করেছে। তবে এবার একটু ধীরে ধীরে।
আবার সেই ক্যাফে, আবার সেই টেবিল — শুধু এবার হাতে দুটো কফির কাপ নয়, বরং দুটো মানুষ, যারা নিজেরা অনেক পরিণত হয়ে উঠেছে।
সম্পর্কের নতুন শুরু
নিলয় এবার আর শুধু লেখা নিয়ে ব্যস্ত নয়। সে রাইশার পাশে সময় দেয়, তার ডিজাইন দেখে, তামান্নার সাথেও ভালো বন্ধুত্ব হয়ে গেছে।
রাইশা আবার নতুন কালেকশন শুরু করেছে — ব্র্যান্ডের নাম? “নীল চোখ”।
একদিন ক্যাফেতে বসে নিলয় তার সামনে একটা ছোট্ট বাক্স রাখল।
— “তুই বলেছিলি, ভয় পাইস। আমি চাই, তুই এবার ভয় কাটিয়ে বলিস — আমিও থাকব।”
রাইশা ধীরে বাক্সটা খুলল —
একটি রূপালী আংটি, আর তার নিচে একটা ছোট চিরকুট:
"তোর চোখের ভাষা আমার গল্পের সবচেয়ে প্রিয় অনুচ্ছেদ।"
রাইশার চোখ ভিজে গেল।
সে কিছু বলল না, শুধু আংটিটা পরিয়ে নিল নিজের হাতে।
পরিণতি নয়, নতুন পথচলা
তাদের সম্পর্কটা এখন আর শুধু প্রেম নয়, এটা একসাথে জীবনকে বয়ে নেওয়ার সাহস।
তারা হয়তো প্রতিদিন ক্যাফেতে যায় না, কিন্তু প্রতিদিন একে অন্যের চোখে তাকিয়ে থাকে।
ভালোবাসা মানে কেবল একে অপরকে পাওয়া নয় — বরং একে অপরকে বুঝে ফেলা, ক্ষমা করা, পাশে থাকা।
উপসংহার
“নীল চোখের মায়া” আমাদের শেখায় — সম্পর্কের সৌন্দর্য শুধু তার শুরুতে নয়, বরং কোথায় কোথায় ভেঙে গিয়ে, আবার কিভাবে একসাথে গড়া হয় — তাতেই।
তাদের গল্প শেষ হয়নি। শুরু হয়েছে এক নতুন অধ্যায় — একসাথে জীবন কাটানোর।
0 মন্তব্যসমূহ