পতিতা পল্লী / পর্ব : ৪-৫-৬-৭


 গল্পের : নাম  পতিতা পল্লী

পর্ব : ৪-৫-৬-৭ 

লেখিকা- শারমিন আঁচল নিপা


পরদিন সকালে ডালিয়া অরণ্যকে দেখে চমকে গেল কারণ ডালিয়া ঘুম থেকে উঠে খেয়াল করল অরণ্য ডালিয়ার পাশে বসে আছে।আচমকা ডালিয়া অরণ্যকে দেখে যেন তার ঘুমের ঘোর কেটে গেল।ডালিয়া বেশ চমকে গেল অরণ্যকে এভাবে দেখে।বুঝতে পারল না অরণ্যবাবু এভাবে বসে আছে কেন?কিছুটা বিস্মিত আর কাঁপা কাঁপা সুরে ডালিয়া অরণ্যকে বলল

---অরণ্যবাবু আপনি এখানে?কিছু লাগবে?আমি কি কোন ভুল করেছি?

অরণ্য এবার একরাশ হাসি দিয়ে বলল

---নাহ ডেইজি তুৃমি কোন ভুল কর নি।আমি তো এসেছি তোমার জন্য নাস্তা নিয়ে।কালকে রাতে কিছু খাও নি।এভাবে না খেয়ে থাকলে যে তোমার শরীর খারাপ করবে।এই নাও ব্রাশ, পেস্ট লাগানো আছে তাড়াতাড়ি দাঁত ব্রাশ করে আস।আর এসে খাও।খেয়ে রেডি হও আমরা একটু বাইরে ঘুরতে যাব।

অরণ্যের এরকম ব্যাবহার দেখে ডালিয়া কিছুটা আশ্চর্য হল।কাঁপা কাঁপা হাতে ব্রাশটা নিয়ে বাথরুমে গেল।আশে পাশে খেয়াল করল কোথাও সবানের পানি ফেলে রেখেছে কিনা।কিন্তু কোথাও কোন পানি নেই সব কিছু ঠিক আছে।দাঁত ব্রাশ করে রুমে আসল।খেয়াল করল অরণ্য রুটিতে জেলি মাখছে।ডালিয়াকে দেখেই অরণ্য বলে উঠল 

---আরে ডেইজি তাড়াতাড়ি আস।চা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে যে। তাড়াতাড়ি রুটি জেলি, চা খাও আর সাথে এক গ্লাস দুধ ও খেয়ে নিবা।তা না হলে তো ভালোভাবে সুস্থ হবা না তুমি।তাড়াতাড়ি এসে খেয়ে নাও।

ডালিয়া অরণ্যকে যতই দেখছে মনে হচ্ছে স্বপ্ন দেখছে অরণ্যের এমন ব্যাবহার ডালিয়াকে আশ্চর্য না করে পারল না।ডালিয়া কিছুটা ভীত হয়ে অরণ্যের পাশে গিয়ে বসল।অরণ্য ডালিয়াকে খাবার খেতে দিল।কিছুটা ভয় ভয় নিয়ে ডালিয়া খেতে লাগল।পাশ থেকে অরণ্য বলে উঠল

---চা টা কেমন হয়েছে?আমি বানিয়েছিঅ কিন্তু।

---হুম অনেক ভালো হয়েছে অরণ্য বাবু।আপনি সত্যিই অনেক ভালো চা করেন।আমার জন্য এতটা কষ্ট না করলেও পারতেন।

---আরে এতে আর কি কষ্ট।আমার একটু শান্তির জন্য এটুকু কষ্ট তো করতেই পারি।আর শোন আমাকে আজ থেকে শুধু অরণ্য বলে ডাকবে।বাবু বলার দরকার নেই।

ডালিয়া এ কথাটা শোনার পর চমকে গেল।বুঝতে পারল না সে কি স্বপ্ন দেখছে নাকি সত্যি।আর বলল

---আচ্ছা আপনি যা বলবেন তাই হবে।

---আচ্ছা তোমার নাম কি ডেইজি নাকি আরও কোন নাম আছে?

---আমার নাম ডালিয়া ছিল সেখান থেকে ডেইজি হয়েছে।

---ওহ তাই বল।তোমাকে আমি ডালিয়া বলেই ডাকব কারন তোমার ডালিয়া নামটা অনেক সুন্দর।ঠিক আছে।

---আপনার যা ইচ্ছা ডাকেন।আমার কোন আপত্তি নেই।

---ডালিয়া তোমার চুল গুলো অনেক সুন্দর।তোমার চুল গুলোকে তুমি অনেক ভালোবাস তাই না?

---ভালোবাসা বলতে পৃথিবীতে কিছু আছে কিনা জানি না।তবে চুলগুলো আমার অনেক পছন্দের।শত কষ্টের মধ্যেও চুল গুলোকে আগলে রেখেছি।খুব বেশি যত্ন নিতে পারি না তবুুও যে চুলগুলা হাঁটু পার হয়েছে এটাই অনেক।

অরণ্য কিছুটা মুচকি হেসে বলল

---সত্যিই তোমার চুলগুলা অনেক লম্বা আর সুন্দর।তুৃমি রেডি হয়ে নাও।তোমাকে নিয়ে পার্লারে যাব।তোমার চুলে স্পা করাব।দেখবা চুল গুলো আরও সুন্দর হয়ে যাবে।আমি রেডি হচ্ছি তুমি রেডি হয়ে বের হও।

ডালিয়া অরণ্যের কথা যতই শোনছে ততই বিস্মিত হচ্ছে।সত্যিই কি এমন কিছু হচ্ছে নাকি সব স্বপ্ন।নিজের শরীরে নিজে একটা চিমটি কেটে আহঃ করে উঠল।সত্যিই তো এটা বাস্তব।ডালিয়া ভাবনার সাগর থেকে বের হয়ে তাড়াতাড়ি রেডি হল।অরণ্য ডালিয়া দেখে বলল

---আরে তুৃমি চুল বাধলে কেন?চুল গুলা খোলা রাখ সুন্দর লাগবে।

অরণ্যের কথা শোনে ডালিয়া চুল গুলো খলল।আর খোলা চুলে অরণ্য ডালিয়াকে দেখে বলল

---বাহ বেশ সুন্দর লাগছে।এ বলে একটা টিপ কপালে পড়িয়ে দিয়ে বলল এখন আরও বেশি সুন্দর লাগছে।

ডালিয়া অরণ্যকে যতই দেখছে ততই অবাক হচ্ছে।হঠাৎ করে অরণ্যের এমন ব্যাবহার ডালিয়াকে যেন রূপকথার রাজ্যে নিয়ে গেল।তারপর দুজন মিলে একসাথে বের হল।ডালিয়ার কাছে সবকিছু যেন স্বপ্ন স্বপ্ন লাগতে লাগল।গাড়ির কাচ দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আকাশটা দেখতে লাগল।কতদিন ডালিয়া এ খোলা আকাশের নীচে হাঁটে না।ছোটবেলার কথা গুলো মনে করতে লাগল।তার মা তাকে খাওয়ানোর জন্য কিভাবে দৌঁড়াত, কিভাবে সে পুতুল খেলত এসব ভাবতে লাগল।নিমিষেই যেন একটা সুখের রাজ্যে হারিয়ে গেল ডালিয়া।হঠাৎ  অরণ্যের গাড়ির ব্রেকে ডালিয়ার স্বপ্নের ঘোর কাটল।খেয়াল করল অরণ্য গাড়ি থেকে নামল আর ডালিয়াকে নামার জন্য বলল।ডালিয়াও নামল।ডালিয়া দেখল অরণ্য তাকে মস্ত বড় একটা পার্লারে নিয়ে আসছে আর পার্লারের দিকে ঈশারা করে বলছে

---ডালিয়া এই যে পার্লারটা দেখছ এটাতে নিয়ে গিয়ে আজকে তোমার চুলগুলার ব্যাবস্থা করব।

অরণ্যের কথা যতই শোনতে লাগল ততই যেন অবাক হতে লাগল।অরণ্য ডালিয়াকে নিয়ে গেল পার্লারে।পর্লারে নিয়ে গিয়ে মহিলাকে বলল এর চুল গুলে কেটে ঘাড় সমান করে দিন।ডালিয়া অরণ্যের মুখে এমন কথা শোনে আৎকে গেল।আর বলে উঠল

---চুল কেটে ঘাড় সমান করবে মানে?আমি চুল কাটব না। এগুলা আমার অনেক শখের চুল।জীবনে অনেক কষ্ট করেছি কিন্তু চুল গুলাকে কখন অযত্ন করি নি।

---এজন্যই তো তোমার চুল কাটব।তুমি কি ভেবেছিলে আমি তোমাকে আদর করছি।হাহাহা।এত বোকা মেয়ে আমি আমার জীবনে দেখি নি।আরে তোকে আদর করেছিলাম যাতে তোকে কষ্টটা বেশি দিতে পারি।চুপচাপ চুল কাট।

---আমি চুল কাটব না।আপনি আমাকে যা ইচ্ছা করুন আমি চুল কাটব না।

পাশ থেকে পার্লারের মহিলা বলে উঠল

---উনি কাটতে না চাইলে আমরা জোর করে কাটতে পারব না চুল।আপনি অন্য কোথাও যান।

অরণ্য একটা হাসি দিয়ে বলল

---এ চুলগুলা কাটলে ৫০ হাজার টাকা দিব।এবার আপনার ইচ্ছা কাটবেন নাকি অন্য কোথাও যাব।

মহিলাটা ৫০ হাজার টাকার কথা শোনে লোভে পড়ে গেল আর বলল

---এ আর তেমন কি কাজ আমি এখনি কেটে দিচ্ছি।

তারপর আরও দুজন ডালিয়াকে ধরে জোর করে চুল কাটা শুরু করল।ডালিয়া চিল্লায়ে চিল্লায়ে বলে উঠল

---আল্লাহর দোহাই লাগে এত বড় কষ্ট আর ক্ষতি আপনারা করবে না। আমাকে ছেড়ে দিন।

মহিলাগুলো টাকার লোভে অন্ধ হয়ে গিয়েছিল।ডালিয়ার চিৎকার যেন তাদের কান পর্যন্ত আর পৌঁছাল না।মুঠি ধরে চুল গুলা কেটে দিল।আর অরণ্য পাশ থেকে খিল খিল করে হাসতে লাগল।চুল কাটা শেষ হলে অরণ্য মহিলাগুলাকে টাকা দিয়ে ডালিয়াকে নিয়ে বাসায় চলে আসল।ডালিয়া যতবারেই আয়না দেখছিল ততবারেই চিৎকার করে কাঁদছিল।ডায়নাকে কল করে সব বলল ডায়না বলল

---তোর জন্য ঐ লোকটা আমাকে অনেক টাকা দিয়েছে।ওনি যা করতে বলে কর।না হয় দুঃখ আছে।আর এসব প্যান প্যান করতে ফোন করবি না।আমি তোর জন্য তো নিজের ব্যাবস্যার ক্ষতি করতে পারি না।ফোন রাখ।

এ বলে ডায়না ফোনটা কেটে দিল।ডালিয়া ভিতরে ভিতরে পুরতে লাগল।চুল গুলায় হাত দিয়ে সে চিৎকার করে বলতে লাগল "দুনিয়ায় টাকা ছাড়া দাম নেই।টকার  কাছে সব বিক্রি হয়ে যায়।মানুষের মন ও টাকার কাছে কিছু না।"আর পাশ থেকে ডালিয়ার চিৎকার দেখে অরণ্য হাসতে লাগল।তখন ডালিয়া অরণ্য কে বলল

---আমি আপনার কি ক্ষতি করেছি?কেন এমন করেছেন আমার সাথে।আমাকে আর কত কষ্ট দিবেন আপনি?

---বলেছি তো মেয়ে মানুষ আমার সহ্য হয় না।তোরে কষ্ট দিতে পারলে আমার শান্তি লাগে।কোন মেয়ে কষ্ট পেতে দেখলে আমার শান্তি লাগে।এই যে কষ্ট পাচ্ছিস খুব শান্তি লাগছে।তোকে কিনে এনেছিই এভাবে কষ্ট দিতে হাহাহাহা।

ডালিয়ার বুঝতে বাকি রইল না অরণ্য মানসিক ভাবে অসুস্থ।আর কত কষ্ট যে ডালিয়াকে পেতে হবে সেটা ভাবতে ভাবতেই সারাদিন পার করল।রাতে হঠাৎ  ডালিয়া একটা চিৎকারের শব্দ পেল খেয়াল করল শব্দটা অরণ্যের রুম থেকে আসছে।ডালিয়া অরণ্যের রুমের দিকে এগুতে লাগল আর গিয়ে দেখল......

   

গল্পের : নাম  পতিতা পল্লী

পর্ব : ৫-৬-৭ 

লেখিকা- শারমিন আঁচল নিপা


আর দেখল অরণ্য কার সাথে জানি চেঁচামেচি করছে।ডালিয়া প্রথমে বুঝতে পারছিল না এভাবে জোরে চিৎকার কেন করছে অরণ্য।খানিকক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে ডালিয়া বুঝার চেষ্টা করল কেন অরণ্য চিৎকার করছে।কিছুক্ষণ  পর ডালিয়া বুঝতে পারল অরণ্য কারও সাথে ফোনে কথা বলছে আর ঐ লোকটাকে অরণ্য বলছে

---আমাকে আর কোনদিন ফোন দিবা না তুমি।পৃথিবীতে যদি কাউকে ঘৃণা করি একমাত্র তোমাকে।পৃথিবীর সব মেয়ে জাতি নিকৃষ্ট তার মধ্যে তুমি প্রথম।আমাকে কল দিয়ে জ্বালাবা না তুমি।জানই তো আমি তোমাকে কত ঘৃণা করি।এখন কেন ফোন দাও বলতো।যখন আমার কিছু ছিল না তখন কোথায় ছিলে তুমি।দুনিয়ার সবচেয়ে নিকৃষ্ট তুৃমি।

এসব বলে ফোনটা কেটে জোরে চিল্লাতে লাগল আর কাঁদতে লাগল।ডালিয়া পড়ালেখা কম করলেও খুব বিচক্ষণ ছিল।ডালিয়ার বুঝতে বাকি রইল না অরণ্যের ভিতরে একটা চাপা কষ্ট আছে।আর যে ফেন দিয়েছে সে একটা মেয়ে।হয়ত তার কাছ থেকেই কষ্টটা পেয়েছে।আর এজন্যই অরণ্য মানসিক রোগীর মত ব্যবহার করে।ডালিয়ার কেন জানি না অরণ্যের প্রতি মায়া হল।অরণ্যের ঘরে যাবে কি না চিন্তা করতে লাগল।কিন্তু গেলে যদি অরণ্য রেগে যায়।

তাই অরণ্য বুঝে উঠার আগেই ডালিয়া চলে আসল নিজের ঘরে।ডালিয়া নিজের ঘরে এসে খাটে হেলান দিয়ে কিছুটা ক্লান্তি নিয়ে চোখ বুজল।হঠাৎ  দরজা খোলার শব্দে ডালিয়া চোখ খোলল।ডালিয়ার খেয়াল করল অরণ্য তার সামনে দাড়িঁয়ে আছে।হাতে কি যেন একটা নিয়ে।ডালিয়া অরণ্যকে কাঁপা কাঁপা স্বরে বলল

---অরণ্য আপনি?হঠাৎ  এখানে?কিজন্য বলুন।

ডালিয়ার কথা শেষ করতে না করতেই অরণ্য পিছনে লুকিয়ে রাখা হাতটা বের করে ডালিয়াকে বেল্ট দিয়ে পিটাতে লাগল।আর ডালিয়া চিৎকার করে করে বলতে লাগল

---আমাকে আর মারবেন না।আল্লাহর দোহাই লাগে।আমার খুব কষ্ট হচ্ছে।আর মারবেন না দয়াকরে।আমাকে এত কষ্ট দিবেন না।আমাকে মাফ করে দেন।

---হাহাহা তোদের মত মেয়েরা সবচেয়ে খারাপ।দুনিয়াতে সবচেয়ে খারাপ হচ্ছে মেয়ে জাতি।তোরে কষ্ট না দিলে আমার শান্তি লাগবে না।

৪,৫ মিনিট বেল্ট দিয়ে পিটানোর পর অরণ্য ডালিয়াকে বলল

---এবার তুই কান ধরে এক পায়ে সারারাত দাঁড়িয়ে থাকবি।আর যদি কোন উল্টা পাল্টা করিস বুঝিসেই তো তোর কি হাল হবে।

ডালিয়া আর কোন কথা না বাড়িয়ে অরণ্যের কথা মত কান ধরে দাঁড়িয়ে থাকল।আর অরণ্য ডালিয়াকে দেখে হাসতে লাগল।অনেকক্ষণ পর ডালিয়ার মনে হল পা টা ফেটে যাচ্ছে।মাথাটা ঘোরাচ্ছে।ভয়ে পা টা নামাতেও পারছে না।কারন অরণ্য সামনে দাঁড়ানো।হুট করে ডালিয়ার মাথাটা ঘুরে গেল আর ডালিয়া মেঝেতে পড়ে গেল।ডালিয়ার যখন জ্ঞান  ফিরল তখন দেখল ডালিয়া বিছানায় শুয়ে আছে।ডালিয়ার বুঝতে বাকি রইল না অরণ্যই তাকে বিছানায় শুইয়ে রেখে গেছে।এটাও বুঝতে পারল যখনেই কোন মেয়ে তাকে কষ্ট দেয় তখনেই অরণ্য ডালিয়াকে কষ্ট দেয়।গতকাল হয়ত কোন মেয়ে ফোন দিয়ে কিছু বলেছে তাই হয়ত ডালিয়াকে এভাবে শাস্তি দিয়েছে।অরণ্যের প্রতি থাকা রাগটাও যেন এবার ফিকে হয়ে গেল ডালিয়ার।ডালিয়া বেশ ভালোই বুঝতে পারছিল অরণ্য কোন চাপা কষ্ট পেয়েছে।কোন কষ্ট পেয়ে অরণ্য এমন করছে।আর এজন্যই হয়ত অরণ্য ডালিয়ার সাথে এমন করছে।হঠাৎ  করে ডালিয়াকে অরণ্যের বাসার চাকর রহমত চাচা ডাক দিল

---মা ডালিয়া তুমি নাস্তা করে নাও।অরণ্য এক দিন এর জন্য বাইরে গেছে।তোমাকে বাড়ির বাইরে যেতে নিষেধ করেছে।দয়াকরে বাড়ির বাইরে গিয়ে বা পালিয়ে গিয়ে ওকে কষ্ট দিও না।এর আগেও একটা মেয়ে এনেছিল অরন্যের অত্যাচারে পালিয়ে গিয়েছে।অরণ্য তোমাকে জানি অনেক কষ্ট দেয় কিন্তু ওর মনটা অনেক ভালো।দয়াকরে তুমি পালিয়ে যেও না।এখন নাস্তা খেয়ে নাও।

ডালিয়া ওনার কথা শোনে একটু বিস্মিত হল।অনেকদিন পর ডালিয়াকে কেউ এভাবে বাবার মত আদর করে কথা বলেছে।কারণ এ দুবছরে ডালিয়া শুধু পুরুষের রূপ দেখেছে।কিন্তু রহমত চাচার চোখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে তার চাওয়াতে কোন কুদৃষ্টি নেই।ডালিয়া রহমত চাচার দিকে তাকিয়ে বলল

---চাচা আমি আর কোথায় যাব বলেন।আমার যাওয়ার জায়গা নাই।থাকতে হলে যে এখানেই থাকতে হবে।আপনি চিন্তা করবেন না আমি যাব না।আপনি যান আমি নাস্তা খেয়ে নিচ্ছি।

---কথাটা শোনে স্বস্তি পেলাম মা।চিন্তা তো আর এমনেই করি না।তুমি আমাকে এটুকু বলে চিন্তা মুক্ত করলে মা।

এরপর এসব বলে রহমত চাচা চলে গেল।তারপর ডালিয়া নাস্তা করল আর  ভাবতে লাগল অরণ্য কোথায় গেল।আবার ভাবল এ বাড়িতে আাসার পর সে এ বাড়িটাও ঘোরে দেখি নি।অরণ্য আাসার আগে একটু বাড়িটা ঘোরে দেখার খুব ইচ্ছা হল ডালিয়ার।ডালিয়া রুম থেকে বের হয়ে নীচে নামল।খেয়াল করল বাড়িটা বেশ গোছালো।কিন্তু ড্রইং রুমের প্রতিটা দেয়ালে লেখা পৃথিবীর সবচেয়ে ঘৃণিত মানুষ মেয়ে মানুষ।ডালিয়ার লেখাটা পড়ে কেন জানি না লেখাটার নীচে লিখতে ইচ্ছা করল পৃথিবীর সবচেয়ে ঘৃনিত মানুষ পুরুষ মানুষ।কিন্তু মন চাইলেও যে ডালিয়া এ কথাটা লিখতে পারবে না।ডালিয়া চাইলেও যে এটা লিখতে পারবে না।সে ক্ষমতা যে ডালিয়ার নেই।ডালিয়া চাইলেও কোন পুরুষকে শাস্তি দিতে পারবে না।ডালিয়া ড্রইং রূম থেকে আস্তে আস্তে উপরে উঠল।হঠাৎ  ডালিয়ার চোখে একটা রুম পড়ল ডালিয়া খেয়াল করল এ রুমটা অন্য সব রূম থেকে একদম আলাদা ভাবে গোছানো।দেয়ালে খেয়াল করল একটা মেয়ের ছবি।মেয়েটা বেশ সুন্দরী।পাশের ছবিটায় খেয়াল করল একটা মহিলার ছবি দেওয়া।এর পাশের ছবিটা তিনজনের গ্রূপ ছবি।তার পাশের ছবিটা অরণ্যের সাথে মেয়েটার বেশ রোমান্টিক একটা ছবি।অরণ্য মেয়েটাকে চোখ ধরে নিয়ে কেকের সামনে নিয়ে গেছে আর ঠিক সে মুহুর্তে ক্লিক করা একটা ছবি।ডালিয়া বুঝতে পারল অরণ্য হয়ত মেয়েটাকে জন্মদিনের সারপ্রাইজ  দিচ্ছিল।তার পাশে আরেকটা ছবি সেটাতে মেয়েটা অরণ্যের কান মুলে দিচ্ছিল।পাশের ছবিটার পাশেই একটা ফুলদানিতে তাজা গোলাপ আর রজনী গন্ধা রাখা ছিল।একের পর এক ছবি দেখতে ডালিয়া যেন স্বপ্নের জগৎ কল্পনা করে ফেলতেছিল।ছবিগুলা দেখে চোখের সামনে যেন রেমান্টিক মুহুর্ত গুলা ভেসে উঠল।কেন জানি না ডালিয়ার অরণ্যকে এবার অন্যরকম একটা মানুষ মনে হচ্ছিল।মনে হচ্ছে ছবিতে থাকা অরণ্য যেন একটা অন্য অরণ্য।

ডালিয়া বুঝতে পারছিল না এমেয়েটা আর মহিলাটা কে।ডালিয়া ঐরূম থেকে বের হয়ে পাশে অরণ্যের রুম টা খেয়াল করল আর দেখল অরণ্যের রুমের দরজা খোলা।ডালিয়ার কৌতুহল নিয়ে অরণ্যের রুমে গেল।সেখানে গিয়ে ডালিয়া কিছুটা বিস্মিত হল।কারন ডালিয়া খেয়াল করল সে মেয়েটার একটা বড় ছবি এখানে টানানো আর লাল কালি দয়ে ক্রস করে দাগ টানা অনেক গুলা।ডালিয়া আরও বিস্মিত হয় যে ডালিয়ার অনেক গুলা ছবি এখানে টানানো।কখন যে ঘুমের মধ্যে অরণ্য ডালিয়ার ছবি  তুলে এখানে টানিয়েছে ডালিয়া টেরেই পাই নি।আরও খেয়াল করল এখান থেকে ডালিয়ার ৪ টা ছবি লাল কালি দিয়া ক্রস টানা আর ৬ টা ছবিতে এখনও কোন দাগ টানা হয় নি।আরও অবাক হল ডালিয়া খেয়াল করল তার লম্বা চুল গুলাও এখানে দেয়ালে টানানো।ডালিয়া কিছুটা বিস্মিত হল।হঠাৎ  রহমত চাচার ডাকে ডালিয়ার ঘোর কাটল।

---ডালিয়া তুমি এ রুমে কি করছ?অরণ্য জানলে তেমাকে শেষ করে দিবে।

---নাহ চাচা হাঁটতে হাঁটতে চলে এসেছি।আচ্ছা চাচা অরণ্য এমন কেন করে।তার রুমে এসব কি?

---দেখ মা অরণ্য যদি জানতে পারে আমি তোকে কিছু বলেছি তাহলে খুব কষ্ট পাবে।শুধু এটা জেনে রাখ ও খুব কষ্ট পেয়েছে।পারলে ভালোবাসা দিয়া পাগলটাকে মানুষ বানা।আর এখন তোর রুমে যা আর ভুলেও এ রুমে আসবি না।

ডালিয়া রহমত চাচার কথা শোনে তাড়াতাড়ি নিজের রুমে চলে গেল।কিন্তু ডালিয়া বুঝতে পারছিল না ঐ মেয়ে দুইটা কে?কেনই বা অরণ্য ঐ মেয়ের ছবিতে লাল দাগ টেনেছে।আর ঐ মহিলাটায় বা কে?আর তার নিজের ৪ টা ছবিতে কেন দাগ টানা তাও বুঝত পারল না।বেশ বিচক্ষণ থাকার দরুণ খানিকক্ষণ  ভাবার পর ডালিয়া বুঝতে পারল অরণ্য তাকে ৪ বার আঘাত করেছে আর এজন্য হয়ত তার ৪ টা ছবিতে দাগ কাটা।ডালিয়া বেশ বুঝতে পারল কোন একটা ঘটনাকে কেন্দ্র করেই হয়ত অরণ্যের মেয়েদের প্রতি ঘৃণা জন্মল গেছে।কিন্তু কি ঘটনা।ডালিয়া চিন্তায় অস্থির হয়ে গেল।সারাদিন ভেবেও কোন কূল কিনAttention

সমস্ত ঘটনা জানবে কিভাবে তাও বুঝতে পারল না।

পরদিন ঘুৃম থেকে উঠে দেখল অরণ্য চলে এসেছে আর বসে টিভি দেখছে।ডালিয়া অরণ্যের সামনে গিয়ে দাড়াল। অরণ্য কিছুটা অবাক হল ডালিয়াকে দেখে।আর দেখে বলল

---তুমি পালিয়ে যাও নি?আমি তে ভেবেছি তুমি পালিয়ে গেছ।আমি তো তোমাকে পালানেোর সুযোগ করে দিছিলাম।তাহলে পালালে না কেন?এখানে থাকলে যে তোমাকে অনেক কষ্ট পেতে হবে ডালিয়া।এ আগের মেয়েটাও পালিয়ে গিয়েছিল।

ডালিয়া অরণ্যের কথাগুলো শোনে কিছুটা অবাক হল।এরকম শান্ত গলায়া কথা বলছে অরণ্য।আবার কোন মতলব আছে কি না সেটাও ভাবতে লাগল।কিন্তু অরণ্যের চোখের দিকে তাকিয়ে ডালিয়ার কেন জানি না মনে হচ্ছিল অরণ্য এবার কোন মতলব আটে নি।তাই শান্ত স্বরে ডালিয়া উত্তর দিল

---আমি কোথায় যাব বলুন।অনেক কষ্ট পেলেও যে আমাকে এখানেই থাকতে হবে।আপনি মেরে ফেললে ও আমাকে এখানে থাকতে হবে।আমার যে পালানোর জায়গা নাই অরণ্য বাবু।এ জীবন থেকে কতবার পালনোর চেষ্টা করেছি কিন্তু বারবার ব্যার্থ হয়েছি।এ জীবন থেকে পালানোর কোন জায়গা নেই।

এবার ডালিয়ার কথা শোনে অরণ্যের একটু মায়া হল।কিছুটা কৌতুহল নিয়ে ডালিয়াকে জিজ্ঞেস  করল

---আচ্ছা তুমি এ পেশায় এসেছ কেন?

---ইচ্ছা করে কি কেউ এ পেশায় আসে বাবু।সে এক বড় কাহিনী।

---বল শোনি।

--আপনি সত্যিই কি শোনবেন?

---হ্যা বল।

তারপর ডালিয়া প্রথম থেকে ঘটে যাওয়া তার জীবনের কাহিনী বলল।অরণ্য তার কাহিনী শোনে কিছুটা থমকে গেল।ডালিয়া সমস্ত কাহিনী বলে অরণ্যকে বলতে লাগল আমারও লিখতে মন চায় পৃথিবীর সবচেয়ে ঘৃনিত মানুষ পুরুষ মানুষ।অরণ্য এবার ডালিয়ার চোখ দুটো মুছতে লাগল।অরণ্যের এমন আচরণ ডালিয়াকে কিছুটা অবাক করল।ডালিয়ার মনে হল অরণ্যের  ময়েদের প্রতি এত ঘৃণা কেন সেটা এখন জিজ্ঞেস  করলে হয়ত জানতে পারবে।ডালিয়া অরণ্যকে বলল

---আপনি মেয়েদের এত ঘৃণা কেন করেন বলবেন?

---তুমি কি সত্যিই জানতে চাও।

---হ্যা জানতে চায় বলুন।

---তাহলে শোন.....

গল্পের : নাম  পতিতা পল্লী

পর্ব : ৬-৭ 

লেখিকা- শারমিন আঁচল নিপা


--তাহলে শোন।মা,বাবা নিয়ে আমাদের ছোট্র সংসার ছিল।তখন এত বড়লোক ছিলাম না।বাবার এত টাকাও ছিল না।বাবা ছোটখাট একটা সরকারী চাকুরী করত।ভালোভাবেই দিন কাটতেছিল আমাদের।আমি তখন ক্লাস টু তে পড়ি।কিন্তু "মা" বাবার প্রতি মোটেও সন্তুষ্ট ছিল না।বাবাকে সবসময় "মা" বলত

---তোমার সংসারে থেকে আমি কিছুই পাই নি।তোমার পোস্টে থেকে অন্যরা ঠিকেই অনেক টাকার মালিক হয়েছে আর তুমি কিছুই করতে পারলে না।শাদাফের মা কে শাদাফের বাবা হীরার আংটি, নেকলেস কিনে দিয়েছে আর তুমি আমাকে হীরে তো দূরে থাক স্বর্ণ ও কিনে দিতে পারনি।

---ওদের মত অসৎ উপায়ে টাকা ইনকাম করি না।আর এসব টাকাই শান্তি নাই অরণ্যের মা।শুধু শুধু তুৃমি লোভ কর না।আমরা শান্তিতে আছি এটাই অনেক। 

---হ্যা এখন তো বলবাই আমি লোভ করি।তুমি যদি আমাকে এসব না এনে দিতে পার আমি তোমাকে তালাক দিব বলে দিলাম।দুনিয়ায় এত ভালোভাবে চললে হয় না।

বাবা দিনের পর দিন মায়ের এমন উস্কানিমূলক কথা শোনত।এসব শোনতে শোনতে বাবা অতিষ্ট হয়ে যেত।এদিকে মা ও বাবার প্রতি ক্ষেপে তালাক দিতে চাইল।মাকে কাছে রাখতে আর আমার জন্য বাবা ঘুষ খাওয়া শুরু করে।একের পর এক ঘুষ খেত আর অনেক টাকা ইনকাম করত।অল্পদিনেই বাবা অনেক টাকার মালিক হয়ে গেল।বাবার বাড়ি গাড়ি সব হয়ে গেল।কিন্তু এতেও মায়ের শান্তি ছিল না দিন দিন মায়ের লোভ বাড়তে থাকল।মায়ের লোভের জোগান দিতে গিয়ে বিভিন্ন অন্যায় কাজ করে টাকা কামাতে লাগল।আর একদিন ঘুষ খাওয়ার অপরাধে চাকুরীচ্যুত হল।সেদিন বাবা ঘরে এসে চুপ করে বসে ছিল।বুঝতে পেরেছিলাম বাবা সেদিন খুব কষ্ট পেয়েছিল।যে বাবা সবসময় সততার বাণী দিত আজ সে বাবাই ঘুষের জন্য চাকুরী চ্যুত হল।বাবা এক জায়গায় চুপ করে বসে নীরব হয়ে ছিল।বাবাকে দেখে আমি বাবার কাছে যায় বাবা আমাকে জড়িয়ে ধরে সেদিন চুপ করে ছিল।আর মা শাত্ননার পরিবর্তে বলেছিল

---হয়েছে হয়েছে এসব নিয়ে মন খারাপ করতে হবে না।আমাদের ৭,৮ ফ্যাক্টরি আছে ঐগুলা সামলাও।এরকম ঘুষ খেয়ে অনেকেই চাকুরীচ্যুত হয়।এমন মন খারাপ হয়ে বসে থাকলে চলবে না।ব্যাবস্যা বাড়াও।

বাবা শুধু নীরবে কথাগুলা শোনে গিয়েছিল।আর মায়ের সুখের জন্য সব ভুলে আগের মত মন দিয়ে ব্যাবসা করতে লাগল।আমি তখন ক্লাস ফাইভে পড়তাম মাকে সবসময় কাছে পেতাম না।মা ক্লাব নিয়েই পড়ে থাকত। টাকার পাহাড়ে মা যেন আর মা ছিল না।প্রয়োজনেও মা আমার খবর নিত না।আমার সব দায়িত্ব পালন করত রহমত চাচা।মাকে প্রায়ই খেয়াল করতাম একটা লোকের সাথে ঘোরাফেরা করত।মাঝে মাঝে বাসায় নিয়ে ঘরে ঢুকে দরজা লাগিয়ে দিত।বুঝতে পারি নি মা কি করছে তবে বুঝতে পারতাম মা যা করছে খারাপ করছে।মায়ের এরকম কর্মকান্ড চলতেই থাকল।আমি তখন ক্লাস সিক্স এ উঠি একদিন ক্লাস শেষ করে এসে দেখি মা,আর বাবার মাঝে তুমুল জগড়া।মা বাবাকে রেখে সেদিন সে পরপুরুষের হাত ধরে চলে গিয়েছিল।আর বাবা মাকে আটকানোর জন্য অনেক চেষ্টা করেছে কিন্তু মা কথা শোনে নি।বাবাকে ছাড়ার একটা কারণেই ছিল ঐ লোকটার টাকা পয়সা বাবার থেকে বেশি ছিল।সেদিন মা আমার দিকেও তাকায় নি।আমাকে ফেলে চলে গিয়েছিল।মা চলে যাওয়ার পর বাবা অনেকটা চুপ হয়ে গিয়েছিল।বাবাকে সবসময় দেখতাম অস্থির থাকত।একটা বছর বাবা পাগলের মত করেছে।হঠাৎ  একদিন বাবা আমার রুমে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে বলল

---বাবা আমি চলে গেলেও তুই ভালো থাকিস।আর এটা মনে রাখিস মেয়ে মানুষ ছলনাময়ী হয়।ওদের সব দিলেও ওদের মন পাওয়া যায় না রে।

---বাবা তুমি এভাবে কষ্ট পেও না আমার ভালো লাগে না।

---না রে বাবা আর কষ্ট পাব না কষ্টটারে যে ছুটি দিয়ে দিব।

বাবা সেদিন কি বুঝাতে চেয়েছিল জানি না।সপ্তম শ্রেনীতে পড়তাম তখন।আবার এত বড় কথার মানে বুঝে নি তখন।সকালে উঠে দেখলাম বাবার রুমের দরজা আটকানো।রহমত চাচা আর আমি অনেক ডাক দিলাম বাবা উঠল না।শেষ মেষ দরজা ভেঙ্গে  ঢুকে দেখলাম আমার বাবা ঝুলতেছে।বাবাকে দেখে বুকের ভিতরে হাহাকার শুরু হল।পাশে একটা চিঠি ছিল আর সেটাতে লিখা ছিল"মেয়ে মানুষ মেয়ে না ছলনাময়ী এক বিষাক্ত জাল।"

বাবার লাশ টা পুলিশে নিয়ে গেল ময়না তদন্ত করে ফেরত দিল।বাবাকে দাফন করে রুমে ঢুকলাম খেয়াল করলাম বাবার উকিল দাঁড়িয়ে আছে।ওনি বলল সম্পত্তির অর্ধেক আর ব্যাংকের টাকা লিখে দিয়ে গেছে আমার নামে।আমি প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ার পর সেগুলা পাব আর সে পর্যন্ত আমার দায়িত্ব নিবে রহমত চাচা আর সব সামলাবে রহমত চাচা।আর বাকি অংশ লিখে গেছে আশালতা মানে আমার মায়ের নামে।সেদিন খুব অবাক হয়েছিলাম এটা ভেবে  বাবাকে এত কষ্ট দেওয়ার পর ও মাকে সম্পত্তি লিখে দিছে এজন্য।মা ঠিকেই বাবার সম্পত্তি নিতে এসেছিল কিন্তু আমার দিকে ফিরেও তাকায় নি।কতটা স্বার্থপর হলে এমন করতে পারে সেদিন আমি বুঝেছিলাম

বাবার খুব শখ ছিল আমি ডাক্তার হই।তাই আমি পড়াশোনায় অনেক মনযোগ দেই।আর এদিকে রহমত চাচা সব সুন্দর ভাবে সামলানো শুরু করে।রহমত চাচায় ছিল আমার বাবা আর মা।আমিও মেডিকেলে চান্স পাই।মেডিকেলে ভর্তি হওয়ার পর হঠাৎ ক্লাসে একটা মেয়ের উপর চোখ গেল খেয়াল করলাম মেয়টার চোখ গুলা বেশ সুন্দর আর টানা টানা।মেয়েটাকে দেখেই ভালো লেগে গিয়েছিল। খোজ নিয়ে জানতে পারি মেয়েটার নাম মাবিহা।মাবিহাকে দেখেই আমি হারিয়ে যেতাম স্বপ্নের রাজ্যে।মাবিহা লুকিয়ে ফলো করতাম।খুব ইনট্রোভার্ট হওয়ার কারনে মাবিহাকে তেমন কিছু বলতে পারতাম না খালি তাকিয়ে থাকতাম।একদিন কলেজ ফাংশনে খেয়াল করলাম মাবিহা নীল শাড়ি পরেছে কপালে নীল টিপ আর ঠোঁটে গাড় লাল টুকটুকে লিপস্টিক।মাবিহাকে দেখেই হা করে তাকিয়ে ছিলাম।খেয়াল করলাম মাবিহা আমার দিকেই আসছে। মাবিহা যতই আমার কাছে আসছিল ততই হার্টবিটটা যেন বেড়ে যাচ্ছিল।হঠাৎ মাবিহা আমার কাছে এসে বলল

---মনে হচ্ছে ইদানিং  তোমার সাথে আমার দেখাটা অনেক বেশি হয়ে যাচ্ছে।আচ্ছা ফলোটা কি তুমি আমাকে বেশি করছ নাকি আমি তোমাকে?

আমি ভিতরে ভিতরে একরাশ হাসি দিয়ে শান্ত গলায় বললাম

---মনে হয় আমিই করেছি।আমি কোন ভুল করে থাকলে সরি।

---আরে বোকা ভুল কেন করবা কেন।আমার তো বেশ ভালোই লাগে।আচ্ছা তোমার নাম যেন কি?

---অরণ্য।

---বাহ খুব সুন্দর নাম তো।আমার নাম কি জান নাকি খোজ নিয়ে জেনে ফলেছ?

---নাহ মানে জানি।তোমার নাম মাবিহা।

---আরে এত লজ্জা পাচ্ছ কেন?লজ্জা পেলে তোমাকে খুব কিউট লাগে।আচ্ছা তোমার নাম্বারটা কি বলতো।

মাবিহা আমার নাম্বার চাচ্ছে মনে হচ্ছে কোন স্বপ্ন দেখছিলাম।আমার হার্টভিট টা যেন আরও বেড়ে চলল।মনে  যে কত কিছু ঘুরতে লাগল।আনন্দের চুটে নাম্বারটাও মুখ দিয়ে বের হচ্ছিল না।তবুও নিজেকে সামলিয়ে মাবিহাকে নাম্বার দিলাম।কিন্তু মাবিহার নাম্বার নেওয়ার সাহস হলনা।কলেজ ফাংশন থেকে এসে শুধু মাবিহার কথায় ভাবতে লাগলাম।হঠাৎ একটা অপরিচিত নাম্বার থেকে কল আসল।অনেকটা আগ্রহ নিয়ে কলটা ধরলাম বাবলাম হয়ত মাবিহা কল দিয়েছে।নাহ কলটা কাস্টমার সার্ভিস থেকে ছিল।এরপর আাবার কল আসল একটা নাম্বার থেকে আমি ধরলাম এবার ফোনের ওপাশ থেকে একটা সুরেলে কন্ঠ বলে উঠল

---অরণ্য আমি মাবিহা।কেমন আছ?

---হুম ভালো আছি তুমি?

---ভালো আছি।

কিছুক্ষণের  মধ্যেই মাবিহার সাথে আমার কথা বেশ জমে গেল।অল্প সময়েই মাবিহা বেশ আপন করে নিল।মাবিহার সাথে একের পর এক কথা হতে লাগল।আমাদের বন্ধুত্ব টাও বেশ জমে গেল।হঠাৎ  একদিন মাবিহা রাত ১২ টায় ফোন দিয়ে বলল

---অরণ্য এখনি আমার হোস্টেলের নীচে আস তো।

---কিন্তু মাবিহা মেয়ে হোস্টলে ঢুকব কিভাবে?

---আরে হোস্টেলের সামনে আস, আমি বের হচ্ছি।

---কেন তোমার কি কিছু হয়েছে।তোমার কি কোন সমস্যা হয়েছে নাকি।

---আরে তুমি একটু বেশিই ভাবছ আস তো আগে।

বুঝতে পারলাম না মাবিহা কেন ডাকছে।কোনরকমে রেডি হয়ে মাবিহার হোস্টেলের সামনে গেলাম।গিয়ে মাবিহাকে কল দিলাম।নাম্বারটা বন্ধ দেখাচ্ছে।আমি চিন্তায় অস্থির হয়ে ঘামতে লাগলাম।হঠাৎ  পিছন থেকে কেউ একজন আমার চোখ চেপে ধরল।আমি বুঝতে পারলাম না কে আমার চোখটা চেপে ধরল।চোখ ধরে বলল

---বলতো আমি কে?

কন্ঠটা শোনে বুঝতে পেরেছিলাম এটা মবিহা ছাড়া আর কেউ না।আমি বললাম

---কে আর হবে তোরা  নামে কোন একটা মেয়ে।

মাবিহা এবার চোখটা খুলে বেশ রেগে গেল আর বলল

---তোরাটা কে শোনি।আমাকে রেখে এখন তোরাকে মিস করা হচ্ছে।

---আরে ধুর কি যে বলনা।তোমাকে রাগানোর জন্য বললাম।তা বল কেন ডেকেছ?

মাবিহা এবার আমার হাতে এক গুচ্ছ রজনী গন্ধা ধরিয়ে দিয়ে বলল

---মনের কথা আর কত চেপে রাখবা প্রপোজটা কি তুমি করবা নাকি আমি

আমি এবার বেশ লজ্জায় পাচ্ছিলাম।মাবিহার হাত থেকে রজনী গন্ধাটা নিয়ে মাবিহাকে বলে উঠলাম

--- মাবিহা আই লাভ ইউ।

তখনি খেয়াল করলাম আশেপাশে সবাই এসে হাজির আর ট্রিট এর জন্য বায়না ধরল।আমিও সবাইকে পরদিন ট্রিট দিলাম।আস্তে আস্তে আমাদের প্রেমটা বেশ জমে গেল।মাবিহাকে সবসময় খুশি করার চেষ্টা করতাম।মাবিহা রাগ করলে ওর রাগ ভাঙ্গানোর জন্য কত কিনাই করতাম।ভালোই জমে গেল আমাদের প্রেম টা।

এর মধ্যে মেডিকেল পড়া শেষ করলাম ডাক্তার হলাম।অল্প দিনের মধ্যেই আমি বেশ পরিচিতি পেয়ে গেলাম।অল্পদিনে এত ভালো পরিচিতি দেখে অনেকে আমাকে হিংসাও শুরু করতে লাগল।এবার  মাবিহাকে বিয়ে করার পালা।মাবিহাকে বললাম।মাবিহা লাজুক স্বরে উত্তর দিল

---চাচাকে পাঠাও আমি রাজি।

 চাচা মাবিহার বাসায় বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে গেল আর মাবিহার মা, বাবাও মেনে নিল।খুব ধূমধামে আমাদের বিয়েটা হল।একমাস পরেই মাবিহার জন্মদিন ছিল।আমি মাবিহা কি উপহার দিলে খুশি হবে বুঝতে পারছিলাম না।অবশেষে মাবিহার জন্য ছোট ছোট জিনিস দিয়ে একটা ঘর সাজালাম।মাবিহাকে রাত ১২ টায় চোখ বন্ধ করে ঐ রুমে নিয়ে গেলাম।মাবিহার চোখ খোলে এসব দেখে বেশ খুশি হল।আমাকে জড়িয়ে ধরে সেদিন বলল

---আমি অনেক খুশি হয়েছি।কিন্তু আমি চায় তুমি আমাকে তোমার থেকে ২ টা বাড়ি লিখে দাও যাতে আমি গর্ব করে বলতে পারি আমার স্বামী আমাকে বার্থ ডে তে বাড়ি গিফট করেছে।

মাবিহার কথাটা শোনে কোনরূপ সন্দেহ ছাড়াই আমি ওকে বাড়ি লিখে দেয়।এর ঠিক এক মাস পরেই মাবিহা আমাকে বলল 

---অরণ্য এই নাও ডিভোর্স পেপার সাইন দিয়ে দাও।আর আমার কাবিনের সব টাকা আমাকে দিয়ে দাও।

মাবিহার কথা শোনে আমার যেন মাথায় আাকাশ ভেঙ্গে পড়ল।মাবিহা হঠাৎ  কি বলছে এসব।হয়ত মজা করছে

---মাবিহা মজা কর না তো।এসব মজা আমার পছন্দ না তুমি জান তো।তাহলে মজা করছ কেন।

---অরণ্য আমি সিরিয়াস।আমাকে ডিভোর্স দাও।

---মাবিহা এসব বলার মানে কি।কিজন্য তুমি আমাকে ডিভোর্স দিবা।কি কমতি রেখেছি তোমার।তুমি যা চেয়েছ দিয়েছি।তাহলে কেন?তোমাকে কি দেয় নি বল?

---আমি জানি তুৃমি আমাকে পাগলের মত ভালোবাস।জানি আমার জন্য তুমি অনেক করেছ।কিন্তু এছাড়া আমার কোন উপায় নাই।আমাকে ভালোবাসলে আমাকে ডিভোর্স  দাও।

---কিন্তু কেন?

তারপর মাবিহা যা বলেছিল আমি আমার কানকেও বিশ্বাস করতে পারছিলাম না।কারন ময়ে মানুষ এতটা স্বার্থপর ও হতে পারে জানা ছিল না।মাবিহা বলেছিল.....

bd

story

গল্পের : নাম  পতিতা পল্লী

পর্ব : ৬-৭ 

লেখিকা- শারমিন আঁচল নিপা

মাবিহা বলল

---অরণ্য আমি তোমাকে কখনও ভালোবাসি নি।আমি তো ভালোবাসি আকাশকে।আমি আকাশকে বিয়ে করব।তোমার সাথে যা ছিল সেটা একটা সাজানো নাটক।

---সাজানো নাটক মানে?

---হ্যাঁ সাজানো নাটক।আমি কলেজে পড়ি সময় আকাশকে ভালোবাসতাম।আকাশ ও আমাকে ভালো বাসত।কিন্তু আমাদের ভালোবাসার মধ্যে একটাই সমস্যা ছিল তা হল টাকা।আমি মধ্যবিত্ত পরিবারের ছিলাম আর আাকাশের পরিবার ছিল নিম্নবিত্ত।তার উপর আকাশ পড়াশোনা করা ছিল না এত।স্টুডেন্ট ভালো ছিল না।অপরদিকে আমি মেডিকেলে পড়তাম।আকাশকে আমার পরিবার কোনভবেই মেনে নিবে না বুঝতে পারছিলাম।আর আমিও আকাশকে ছাড়া বাঁচব না।আমাদের রিলেশনে একমাত্র বাধা ছিল টাকা।দুজনেই খুব চিন্তায় পড়ে গেলাম।এটা নিয়া দুজনের মধ্যে জামেলা হত।কি করব বুঝতে পারছিলাম না।এত টাকা কিভাবে পাব তাও বুঝতে পারছিলাম না।এটা বুঝতে পারছিলাম আমাদের ভালো থাকার জন্য টাকার খুব দরকার।

হঠাৎ একদিন খেয়াল করলাম তুমি আমাকে ফলো করছ।আমার দিকে তাকিয়ে থাক।বুঝতে পেরেছিলাম তুমি আমাকে ভালোবেসে ফেলেছ।তোমার খোঁজ নিলাম জানলাম তুমি এক বাবার এক ছেলে। বাবা,মা নেই অনেক টাকা পয়সার মালিক।আমি আকাশকে বললাম

---আকাশ জানো আমাদের মেডিকেলের এক ছেলে আমাকে মনে হয় পছন্দ করে।সারাদিন ফলো করে।আমার দিকে তাকিয়ে থাকে।ছেলেটার নাম অরণ্য।খোজ নিয়া জানলাম বাবার নাকি অনেক টাকা।ছেলেটা খুব বোকাসোকা জানো।

আকাশ আমার কথা শোনে একরাশ হাসি দিয়ে বলল

---তাহলে তো আমাদের কপাল খোলে গেছে।

---কপাল খোলে গেছে মানে?

---আমি যা বলি তুমি তাই করলেই হবে।আমার কথাটা শুধু মন দিয়া শোন যদি আমাকে না হারাতে চাও।

---হ্যাঁ বল কি করতে হবে।তোমার জন্য আমি সবটা করতে পারব।তবুও তোমাকে হারাতে চায় না।

---তাহলে শোন তুমি ছেলেটার সাথে জাস্ট প্রেমের নাটক কর।যত পার তাকে ইমোশন কর।আর তার দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে যত পারে টাকা নাও।যেহুত বড়লোক আর বাবা,মা নেই বোকা আর সবচেয়ে বড় কথা হল তোমার প্রতি দুর্বল সেহুত টাকা আদায় করতে সমস্যা হবে না।আর আমাদের ও প্রবলেম সলভ।

---তুমি যা বলবা তাই হবে।তবুও তোমাকে হারাতে পারব না।আমিযে তোমায় বড্ড ভালোবাসি।

তারপর আাকাশের কথা মত কলেজ ফাংশন এর দিন তোমার সাথে কথা বলে নাটক করা শুরু করি।একের পর এক নাটক করি।আকাশ ছিল নাটকের লেখক আর আমি ছিলাম অভিনেত্রী।তোমার কাছ থেকে একের পর এক বায়না করতাম আর তুমি আমার সে বায়না পূরণের জন্য মরিয়া হয়ে উঠতে।তোমার থেকে টাকা নিয়ে আকাশের সাথে ডেটে যেতাম।কিন্তু সমস্যা ছিল যে বিয়ের আগে তো তোমার কাছ থেকে বাড়িঘর লিখে নেওয়া যাবে না।তাই দুজন ঠিক করলাম বিয়ে ঠিক হলে বাড়ি লিখে নিব আর বিয়ের দিন  তুমি যা গয়না দিবে তা নিয়ে পালিয়ে চলে যাব।

তাই তুমি বলার সাথে সাথে বিয়েতে রাজি হয়ে যায়। কিন্তু বাড়ি লিখে নিতে পারি নি তখন।তাই ভাবলাম গয়না নিয়েই পালাব।কিন্ত বিয়ের আগের দিন আাকাশ বলল 

---আমাদের এ গয়না দিয়ে কিছুি হবে না।তুমি বিয়েটা করে নাও।

---মানে আাকাশ আমি তোমাকে ভালোবাসি।অরণ্যকে কেন বিয়ে করব?পাগল হয়ে গেছ তুমি?

---আরে বোকা বিয়ে না নাটক করবা।নাটক করে বিয়ে করে অরণ্যের কাছ থেকে সুযোগ বুঝে দুইটা বাড়ি লিখে নিবা।তাহলে আমাদের জীবনে আর টাকার কষ্ট থাকবে না।

আমিও আকাশের কথায় রাজি হয়ে গেলাম।বিয়ে করে ফেলালাম তোমাকে।বিয়ের পর সুযোগ খুজতে লাগলাম কখন তোমার কাছ থেকে দুইটা বাড়ি লিখে নিব।কিন্তু আমি সুযোগ বের করার আাগেই তুমি সুযোগ বের করে দিছ।আমার জন্মদিনে আমাকে সারপ্রাইজ  দিয়েছ।আর আমিও এ সুযোগটা কাজে লাগিয়ে তোমার কাছ থেকে বাড়ি লিখে নিই।কিন্তু বাড়ি বিক্রি করতে আর  ডিভোর্স পেপার রেডি করতে আর আকাশকে বিয়ে করতে আরও একমাস দেড়ি হয়।আর আজকে সব কাজ সম্পন্ন হল তাই তোমাকে জানালাম।আর শোন তুমি ডিভোর্স না দিলেও তিনমাস পর এমনি ডিভোর্স হয়ে যাবে।আর আমি আকাশকে বিয়ে করে নিয়েছি।আনরা বিদেশ চলে যাব।ও কিছুক্ষন পর আসবে ওর সাথে চলে যাব আমি।

---মাবিহা এসব কি বলছ এতদিনের ভালোবাসা আর স্মৃতি সব মিথ্যা আর সব নাটক।বিবেকে বাঁধল না আমার সাথে এত বড় নাটক করতে।আমি কি ক্ষতি করেছিলাম তোমার।

---তোমাকে যা বলেছি ঠিক বলেছি।তুমি কোন ক্ষতি কর নি কিন্তু আমাদের ভালোবাসার পূর্ণতার জন্য তোমাকে এটুকু কষ্ট দিতেই হত।তা না হলে আমরা ভালো থাকতাম না।

---তাই বলে এত বড় ধোঁকা এত বড় ছলনা।পারলে কি করে?আমি তোমাকে কতটা ভালোবাসি তুমি তো জান।কেন আমাকে এভাবে কষ্ট দিলে

---সরি অরণ্য এছাড়া আর কোন উপায় ছিল না।মনে কষ্ট নিও না।আর একটা সুসংবাদ দেই তোমার কাছে এটা সুসংবাদ কি না জানি না তবে আমার কাছে সুসংবাদ।বিয়ের ১ মাস পরেই জানতে পারি তোমার আর আমার বাচ্চা আমার পেটে এসেছে। ১৫ দিন আগে আমি আর আকাশ মিলে ঐটাকে নষ্ট করে দেই।

---এত বড় অন্যায় তুমি কিভাবে করলে মাবিহা।মা হয়ে নিজের বাচ্চা নষ্ট করতে কেমনে পারলে।

---কিচ্ছু কারার নেই আকাশের জন্য আমি সব করতে পারি।আকাশ চলে আসবে।আমি ওর সাথে চলে যাব।

হঠাৎ  টুংটাং কলিংবেলের আওয়াজ শোনা গেল।মাবিহা দরজা খুলল। খেয়াল করলাম একটা ছেলে এসেছে।মাবিহা তাকে জড়িয়ে ধরে আমার কাছে আনল আর বলল

---অরণ্য এ আকাশ আমার স্বামী।আর আকাশ তুমি তো অরণ্যকে চিনই।

আকাশ একটা বিদঘুটে হাসি দিয়ে আমার দিকে তাকাল আর বলল

---হাই ব্র জীবনে চড়াই উতরাই আসেই।আপনার জন্য আমাদের ভালোবাসা আজকে পূর্ণতা পেল।কিন্তু ব্র ভালোবাসায় অন্ধ হলেই হয় না।আর ভালোবাসা পেতে হলে বুদ্ধি লাগে টাকা আর কোয়ালিটি দিয়ে কিচ্ছু হয় না।আমি মাবিহাকে নিয়ে গেলাম ভালো থাকবেন।

এ বলে তারা চলে গেল।সেদিন আমি কতটা কষ্ট পেয়েছিলাম আমি জানি শুধু।এতটা কষ্টই পেয়ে ছিলাম যে শোকে পাথর হয়ে গিয়েছিলাম।ধাক্কাটা সামলাতে অনেক সময় লাগল।তারপর আবার কাজে মনযোগ দিলাম।মাবিহার জন্য একটা হাহাকার ছিল তবুও।একদিন হাসপাতালে কেউ ছিল না আমি ছাড়া।হঠাৎ খেয়াল করলাম একটা মেয়ে আসল আর বলল

---ডাক্তার সাহেব আমার পেটে খুব ব্যাথা একটু আল্ট্রা করে দেখেন না কি হয়েছে।পেটের ব্যাথায় নড়তে পারছি।

মেয়েটার কান্না দেখে বুঝতে পারলাম মেয়েটা হয়ত অনেক কষ্ট পাচ্ছে পেটের ব্যাথায়।কিন্তু এ মুহুর্তে হাসপাতালে কোন মহিলা মানুষ নেই ওনাকে একা আল্ট্রা রুমে নিয়ে কি করে যায়।সারা হাসপাতালে একটা মহিলা নার্স ছিল না তখন।আমি বাধ্য হয়ে ওনার কান্না দেখে একাই আল্ট্রা রুমে নিয়ে যায়।আল্ট্রা রুমে নিয়ে যাওয়ার পর উনি হঠাৎ  দরজা লাগিয়ে দিল।আর বাঁচাও বাঁচাও করে চিৎকার দিতে লাগল।আমি বুঝতে পারছিলাম না ওনি এমন কেন করছে।আমি ওনাকে বললাম

----আপনি এমন কেন করছেন?আমি তো কিছু করি নি।আমাকে এভাবে ফাঁসাচ্ছেন কেন।

উনি আরও জোরে চিৎকার করতে লাগল।আমিও ভয় পেতে লাগলাম ওনি এমন কেন করছেন এটা ভেবে।ভয়ে রুমের দরজা খুলে ফেললাম।দেখলাম আমার কলিগ দাঁড়ানো আরও কিছু লোক সাথে।আমার কলিগ বলে উঠল

--ছিঃ অরণ্য সাহেব আপনি এমন কাজ করলেন?

---দেখুন আমি কিছু করে নি আমাকে ফাঁসানো হচ্ছে।

---আপনি যে কিছু করেন নি তা তো বুঝতেই বা দেখতেই পারছি.।আপনার বউ আপনাকে এজন্যই ছেড়ে গিয়েছে তাই না।

সেদিন আমার কথা কেউ বিশ্বাস করে নি।আমার নামে ধর্ষনের মামলা করা হল।হাসপাতালের এক নার্সকে জিজ্ঞেস  করেছিল আমি কেমন?।ওনিও সেদিন মিথ্যা সাক্ষী দিয়েছিল বলেছিল

---আমি এতদিন ভয়ে মুখ খুলে নি।এ অরণ্য সাহেব আমাকে অনেকবার কুপ্রস্তাব দিয়েছে।অনেকবার আমাকে ব্যাবহার করার চেষ্টা করেছে।ওনি একজন বদমাইশ লোক।ওনার যোগ্য শাস্তি কামনা করছি।

আমি সেদিন বুঝতে পারছিলাম না ওনি কেন আমার নামে এমন মিথ্যা বলল।যে আমি মাবিহাকে ছাড়া কোন মেয়ের দিকে তাকায় নি সে আমাকে এতটা দোষারূপ করল।আমাকে ধর্ষনের জন্য শাস্তি দেওয়া হল।পত্রিকায় বড় করে হেডলাইন দেওয়া হল এক অবহেলিত মেয়েকে  ধর্ষনের দায়ে ডাক্তার অরণ্যকে শাস্তি প্রদান করা হয়েছে।ধর্ষক হিসেবে আমার ছবি ছাপা হল।আমাকে চাকুরীচ্যুত করা হল।দুই বছরের জেল দেওয়া হল।

পরে জানতে পারি আমার কলিগ ওদেরকে দিয়ে আমাকে ফাঁসিয়েছে কারন আমার পরিচিতি বেশি ছিল রোগীরা ওর থেকে বেশি আমার কাছে আসত।এজন্য মেয়ে দুইটারে টাকা দিয়ে এ কাজ করিয়েছে।হায়রে টাকা! সামান্য কয়টা টাকার জন্য মেয়ে দুইটা আমার জীবনটা নষ্ট করে দিল।আমার মানসম্মান সব শেষ করে দিল।বাইরে মুখ দেখাতেও আমার এখন কষ্ট হয়।কি দোষ ছিল আমার?আমার নিজের মা আমাকে ছেড়ে গেল।আমাকে ছেড়েই যদি যেতে হত আমাকে জন্ম কেন দিল?কি ক্ষতি করেছিলাম আমি তাদের?আমার ভালোবাসা আমাকে ধোকা দিল।কিভাবে পারল একটা মেয়ে শুধু মাত্র টাকার জন্য আমার সাথে এত বড় ছলনা করতে।কিভাবে পারল আমাকে কষ্ট দিতে।কিভাবে পারল আমার বাচ্চাটা আসার আগেই খুন করতে?আমার দোষটা কোথায় ছিল?ভালো ডাক্তার হয়ে ও আমি আজকে চাকুরীচ্যুত।ধর্ষণ না করেও আমি আজকে ধর্ষক।দোষটা আমার কোথায় ছিল?এ সব কিছুই হয়েছে ছলনাময়ী নারীদের জন্য।আমি দেখেছি নারীর রূপ গুলো।নারীরা শুধু ঠকাতে জানে।ছলনা করতে জানে।বাবা ঠিকেই বলেছিল নারী হল এক "ছলনাময়ী বিষাক্ত জাল"। আজকে এ কথার মানেটা ঠিকেই বুঝেছি।এখন কোন নারীকে আমার সহ্য হয় না।কোন নারী কষ্ট পেতে দেখলে আমার শান্তি লাগে।নারী আমার কাছে ঘৃনিত বস্তু ছাড়া আর কিছু না।তোমার আগেও একটা মেয়েকে এনেছিলাম সেও পালিয়ে গেছে।তোমাকে ও সুযোগ দিয়েছিলাম পালানোর তুমি পালাও নি।তাই এত কিছু তোমাকে বললাম।

ডালিয়া অরণ্যের কথা শোনে বেশ অবাক হল।অরণ্যের মনে যে এত কষ্ট লুকানো ছিল ডালিয়া বুঝতেই পারে নি।ডালিয়ার সবসময় মনে হত পুরুষ মানুষ জন্তু আর জানোয়ার আর এখন অরণ্যের কথা শোনে মনে হচ্ছে মেয়ে মানুষ ও কম না।ভালোই বুঝতে পারছিল অরণ্য বারবার প্রতারণার স্বীকার হয়েছে।আর এসব বিশ্বাসঘাতকতা আর প্রতারণা অরণ্যকে এমন বানিয়েছে।হাঠাৎ  ডালিয়া খেয়াল করল অরণ্য একটা বিদঘুটে হাসি দিচ্ছে।ডালিয়া ভয় পেয়ে গেল অরণ্য এভাবে কেন হাসছে।ভয়ে ভয়ে ডালিয়া অরণ্যকে বলল

---অরণ্য বাবু এভাবে হাসছেন কেন?

অরণ্য ডালিয়ার কথা শোনে দৌঁড়ে রান্না ঘরে গেল আর রান্না ঘর থেকে এসে ডালিয়ার...



একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ