পতিতা পল্লী, জীবনের আরেক নাম, ৮-৯-১০-১১


 গল্পের নাম : পতিতা পল্লী

 পর্ব : ৮-৯-১০-১১ 

লেখিকা- শারমিন আঁচল নিপা

অরণ্য ডালিয়ার কথা শোনে দৌঁড়ে রান্না ঘরে গেল আর রান্না ঘর থেকে এসে একটা গরম খুন্তি ডালিয়ার পিঠে চেপে ধরল।ডালিয়া চেঁচিয়ে উঠল আর বলল

---ও আল্লাহ গো জ্বলে যাচ্ছে আমার।এবার আমাকে ছেড়ে দিন।

---তোকে কষ্ট দিতে পারলেই আমার শান্তি লাগে।

ডালিয়া বুঝতে পারল অরণ্যের হয়ত মাবিহার কথা মনে পড়ছে আর মাবিহার কথা মনে হলেই অরণ্যের মেয়েদের প্রতি ঘৃণা জন্মায় আর অরণ্য ডালিয়াকে কষ্ট দেয় আর অরণ্য মনে করে এ কষ্টটা সে মাবিহা কে দিচ্ছে।তাই ডালিয়া নিজেকে সামলিয়ে  কাদোঁ কাঁদো কন্ঠে বলল

---আপনার যদি আমাকে কষ্ট দিয়ে শান্তি লাগে আপনি কষ্ট দিন।আমাকে কষ্ট দিয়ে শেষ করে দিন তবুও আপনি ভালো থাকুন।

অরণ্য ডালিয়ার কথা শোনে কিছুটা অবাক হল।সে ভাবল একটা মেয়েকে সে এত কষ্ট দিচ্ছে আর মেয়েটা তার সুখের জন্য এসব বলছে।হয়ত এটাও এই মেয়ের ছলনা।তাই অরণ্য ডালিয়াকে একটা লাথি দিয়ে বলল

---তুই ও ছলনা শুরু করলি।ভালো সাজার অভিনয় করছিস।আমাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করছিস তাই না।কিন্তু আমি তো আগের মত বোকা না যে তোর কষ্টে গলে যাব।ছলনাময়ী কোথাকার।

---আপনি যা ইচ্ছা ভাবেন।আমার তাতে কিছু যায় আসে না।আপনার যদি আরও মারতে মন চায় মারুন।মেরে যদি আপনি শান্তি পান তাহলে মারুন।যত পরুন মারুন।আমাকে তো আপনি আপনার শান্তির জন্য কিনেই এনেছেন।আমার কাজেই তো আপনাকে শান্তি দেওয়া।এখন যদি আপনি মেরে শান্তি পান তাহলে মারুন।আমি তো আর কিছু করতে পারব না।সহ্য করা ছাড়া তো আমার উপায় নাই।

অরণ্য ডালিয়ার কথা শোনে কোনরূপ কথা না বলে সেখান থেকে প্রস্থান নিল।অরণ্য যাওয়ার পর ডালিয়াও ডালিয়ার রুমে চলে আসল।ডালিয়ার পিঠটাই হাতও দিতে পারছে না ডালিয়া।ডালিয়ার পিঠটা মনে হচ্ছে জ্বলে যাচ্ছে।কিন্তু তবুও আজকে অরণ্যের প্রতি ডালিয়ার ঘৃণা জন্মাচ্ছে না।কেন জানি না আজকে অরণ্যের প্রতি অদ্ভূত ভালো লাগা আর মায়া কাজ করতেছে।অনেক দিন পর ডালিয়ার কোন ছেলের প্রতি মায়া জন্মাল।ডালিয়ার কাছে সব ছেলেকেই নরপশু মনে হত।এখন ডালিয়ার মনে হচ্ছে সব ছেলে এক না।সবাই শুধু মেয়েদের মাংসপিন্ড ভাবে না।কিছু ছেলে মেয়েদের ভালোবাসা দিয়া আগলেও রাখে।এসব ভবতে ভাবতে ডালিয়া একটু চোখ বুজল।

হঠাৎ  অরণ্য ডালিয়ার রুমে আসল।অরণ্যে আওয়াজ শোনে ডালিয়া চোখ খুলল আর খেয়াল করল অরণ্যের হাতে কি একটা যেন। ডালিয়া মনে মনে ভাবতে লাগল এবার হয়ত তার কপালে আরও দুঃখ আছে।ডালিয়া কাঁপা কাঁপা স্বরে বলল

---অরণ্য বাবু আপনি?কিছু লাগবে?

---হুম তুমি একটু ঐদিকে ফির।

---কোন দিকে?

---পিঠটা আমার দিকে ফিরাও।

---কেন?আমি কি আবার কোন ভুল করেছি।

---এত প্রশ্ন করতেছ কেন? তুমাকে যা বলতেছি তাই কর।

ডালিয়া অরণ্যের দিকে পিঠটা ফিরাল।অরণ্য খেয়াল করল ডালিয়ার পিঠটা পুড়ে লাল হয়ে ফুসকা পড়ে গেছে।ডালিয়ার ক্ষতটা দেখে অরণ্য নিজেকে বকতে লাগল।ভাবতে লাগল এত বড় অমানুষ সে কিভাবে হল।এত বড় কাপুরুষ কিভাবে হল যে একটা মেয়ের গায়ে এত নির্মম ভাবে আঘাত করেছে।অরণ্য এসব ভেবে নিজেকে আজকে খুব পশু লাগছে অরণ্যের। অরণ্য হাত থেকে মলমটা বের করে ডালিয়ার পিঠে লাগিয়ে দিল।ডালিয়া আঃ করে করে উঠল।

ডালিয়া খেয়াল করল অরণ্য তার পিঠে মলম লাগিয়ে দিচ্ছে।ডালিয়া যেন ভিতরে ভিতরে স্বস্থির নিঃশ্বাস ফেলল।অরণ্য কে যতটা কঠোর ভেবেছিল অরণ্য তার থেকে ও নরম মনের মানুষ।হয়ত পরিস্থিতি তাকে কঠোর করে দিয়েছে কিন্তু মানুষটার ভিতরটায় খুব মায়ায় ভরা।অপরদিকে অরণ্য পিঠে মলম লাগাতে লাগাতে বলল

---ডালিয়া জানি না আমার মাথায় কি হয়।আমি তখন নিজেকে সামলাতে পারি না।নিজেকে খুব পাগল পাগল আর অস্থির লাগে তাই তোমাকে আঘাত করি।তোমাকে তো আমি সুযোগ দিয়েছিলাম চলে যেতে তুমি। চলে গেলে না কেন?এখানে থাকলে যে তোমাকে আরও কষ্ট পেতে হবে।

---কোথায় যাব বলুন।আমার যে যাবার জায়গা নাই।এখানে আছি তবু ভালো আছি।কারন এখানে শুধু শারিরীক আঘাত পাচ্ছি কিন্তু কেউ তো আর আমার শরীরটাকে খুবলে খুবলে খাচ্ছে না।আমাকে যেতে হলে তো সেই পতিতা পল্লীতে যেতে হবে আর সেখানে গেলে তো একের পর এক নরপশু আমাকে খুবলে খুবলে খাবে।এট থেকে আমি এখানে আছি ঢেড় ভালো আছি।আপনার এ সামান্য কষ্ট আমার কাছে কিছু না।আর আমাকে মেরে যদি আপনার একটু শান্তি হয়, হোক।আপনার কাছে মেয়ে মানুষ সবচেয়ে ঘৃণিত বস্তু আর আমার কাছে ছেলে মানুষ।দুজন দুজনের জায়গায় কষ্ট পাচ্ছি।একজন পুরুষের হাতের শিকার আরকেজন নারীর ছলনার হাতে।কিন্তু এটা বুঝতে পেরেছি পৃথিবীতে সব পুরুষ এক না।এদের মধ্যেও ভালো আর খারাপ আছে।শুধু এটাই বলব আমি এখানেই খুব ভালো আছি।

ডালিয়ার কথা গুলো শোনে অরণ্যের যেন আরও বেশি অপরাধ বোধ কাজ করল।একটা মেয়ের শাস্তি সে বিনাদোষে আরেকটা মেয়েকে দিল।এত বড় অন্যায় সে কিভাবে করল।এসব ভেবে ভেবে অরণ্য ভিতরে ভিতরে কষ্ট পেতে লাগল।অরণ্য কোনরূপ কথা না বলে চলে গেল।

আর এদিকে ডালিয়াও অরণ্যের এমন সহাণুভূতি পেয়ে খুশিতে আত্নহারা।কিন্তু অরণ্যকে স্বাভাবিক জীবনে যে করেই হোক ফিরাতে হবে।কিন্তু কিভাবে ফিরাবে ডালিয়া।কারন অরণ্য তো কোন মেয়েকে বিশ্বাস করেনা।মনে মনে ভাবল আগে অরণ্যের মনে বিশ্বাস আনাতে হবে ভালোবাসা দিয়া কিন্তু কিভাবে?অনেক ভেবে ডালিয়া উপায় বের করল।ভাবল অরণ্যকে স্বাভাবিক জীবনে আনতে হলে আগে অরণ্যের রুম থেকে এসব ছবি উল্টা পাল্টা জিনিস দূর করতে হবে।

ডালিয়া যা ভাবল তাই করল।মনে মনে ফাঁক খুজতেছিল যে অরণ্য কখন বের হবে।হঠাৎ  খেয়াল করল অরণ্য বাইরে গিয়েছে ডালিয়া অরণ্যের রুমে গিয়ে মাবিহার ছবি ডালিয়ার কাটা চুল ডালিয়ার ছবি এগুলা খুলে ফেলে দিল।রহমত চাচা ডালিয়ার এসব দেখে বলল

---এসব কি করছ মা তুমি?অরণ্য যদি এসে দেখে তোকে যে খুব মারবে মা। 

---চাচা মারলে মারুক।আমি অরণ্যের ভালোর জন্যই এমন করছি।তুমি কি চাও না অরণ্য স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসুক।

---তা তো চাই ই মা।ছেলেটা আমার কষ্টে পাথর হয়ে গেছে রে।

---যদি চাও তাহলে আমি যা বলি তাই কর।এসব কিছু কোথায় ফেলছি অরণ্যকে বলবা না।মাবিহার যত ছবি আছে আর অরণ্যের মা এর যত ছবি আছে সব ফেলে দাও চাচা।

---কিন্তু অরণ্য যদি রেগে যায়।আর অরণ্য রেগে গেলে তো তোকে মারবে রে মা।তোকে আঘাত দিবে, কষ্ট দিবে।তুই কি পারবি সহ্য করতে। 

---চাচা তোমাকে এসব নিয়ে ভাবতে হবে না।আমি মেনেজ করে নিব।আমাকে যতই আঘাত করুক সহ্য করে নিতে পারব।তোমাকে চিন্তা করতে হবে না।

---আচ্ছা মা তুই যা বলিস তাই হবে রে মা।আমি মাবিহা আর আশালতার সব ছবি ফেলে দিচ্ছি।

তারপর ডালিয়া আর রহমতচাচা মিলে মাবিহা আর আশালতার সব স্মৃতি ফেলে দিল।ডালিয়া দেয়ালের লিখা গুলো মুছে দিল।বাড়িটা সুন্দর করে সাজাল।সব কাজ শেষে ডালিয়া অরণ্যের জন্য অপেক্ষা করতে লাগল।কখন অরণ্য আসবে এসে কি করবে এসব ভেবে ডালিয়া বারবার ভয়ে কুকরে যেতে লাগল। আবার ভাবতে লাগল যা হবার হবে অরণ্যের জন্য এতটুকু করতে ডালিয়ার সমস্যা নেই।

ঠিক সন্ধ্যার দিকে ডালিয়া ডালিয়া টুংটাং কলিংবেলের আওয়াজ শোনল।ডালিয়া দৌঁড়ে গিয়ে দরজা খোলল।দরজা খোলে দেখল অরণ্য এসেছে।অরণ্য বাড়িতে ঢুকে দেয়াল খেয়াল করে দেখল কোন লিখা নাই।চারপাশ খেয়াল করল দেখল বাড়িটা নতুন ভাবে গুছানো।তাড়াতাড়ি রুমে গেল।রুমে গিয়ে দেখল সব কিছু ওলট পালট।কোন ছবি নেই।অরণ্য এসব দখে রেগেমেগে আগুন হয়ে গেল।চিল্লায়ে চিল্লায়ে বলতে লাগল

----রহমত চাচা,রহমত চাচা,কোথায় তুমি তাড়াতাড়ি আস।

রহমত চাচা অরণ্যের চিল্লানো শোনে তাড়াতাড়ি অরণ্যের কাছে গেল।আর গিয়ে বলল

---বাবা কি হয়েছে? এভাবে চিল্লাচ্ছ কেন?

---তুমি কি সত্যিই বুঝতে পারছ না আমি কেন চিল্লাচ্ছি।আমার রুম থেকে মাবিহার ছবি কোথায় গেল।সারা বাড়ি এভাবে গুছানো হল কেন?কথা বলছ না কেন?

---নাহ মানে,নাহ মানে।

---নাহ মানে,মানে করছ কেন।উত্তর দাও কার এত বড় সাহস আমার অণুমতি ছাড়া আমার ঘরে ঢুকে আমার ঘর গুছিয়েছে?

পাশ থেকে ডালিয়া বলে উঠল

---অরণ্য বাবু আমি করেছি।

ডালিয়ার মুখ থেকে অরণ্য এ কথা শোনে আরও রেগে গেল।রেগে গিয়ে ডালিয়ার চুলের মুঠি ধরে বলতে লাগল

---তোরে এত বড় সাহস কে দিছে?সকালে তোকে একটু দয়া দেখিয়েছি বলে এত বড় সাহস দেখায়ছিস তাই না?তোর সাহস হল কিভাবে যে তুই আমার অণুমতি ছাড়া আমার ঘর গুছাইছিস।

---আপনি আমাকে যত পারুন মারুন আমার কোন কষ্ট নেই।কিন্তু আপনার জীবনটা পাল্টানোর জন্য এটুকু করা জরুরী ছিল।আমি চায় না আপনি এভাবে জীবন যাপন করুন।চায় না এভাবে  কষ্ট পান।আপনার যদি আমাকে মেরে শান্তি হয় তাই করুন।

অরণ্য ডালিয়ার কথা শোনে আরও রেগে গেল চুল টানতে টানতে নিয়ে গেল সিঁড়ির কাছে।সিঁড়ির কাছে নিয়ে গিয়ে টেনে হিঁচরে ফেলল।আর ডালিয়া সিঁড়ি থেকে গড়িয়ে গড়িয়ে নীচে পড়ে গেল।ডালিয়া সাথে সাথে সেন্সলেস হয়ে গেল।রহমত চাচা ডালিয়ার কাছে দৌঁড়ে গেল আর গিয়ে দেখল ডালিয়ার কোন সাড়া শব্দ নেই।রহমত চাচা অরণ্যকে বলল

---বাবা মেয়েটা যা করেছিল তেমার ভালের জন্য করেছিল।আর তুমি এ কি করলে?মেয়েটার তো কোন সাড়া শব্দ নেই।একজনের রাগ তুমি আরেক উপর ছাড়লে।বাবা দেখে যাও মেয়েটার অবস্থা ভালো মনে হচ্ছে না।শ্বাস প্রশ্বাস চলছে না।কি হয়েছে মেয়েটা বুঝতে পারছি না।তাড়াতাড়ি হাডপাতালে নিয়ে যেতে হবে।

রহমত চাচার কথা শোনে তাৎক্ষনিক  অরণ্যের মনে হল সত্যিই তো সে এমন কেন করল।ডালিয়াকে এতটা আঘাত করা তার ঠিক হয় নি।দৌঁড়ে নীচে নাম ডালিয়ার হাত ধরে দেখল তার পালস অনেক নেমে গেছে।শ্বাস প্রশ্বাস চলছে না।অরণ্য ভয় পেয়ে গেল।তাড়াতাড়ি করে ডালিয়াকে হাসপাতালে নিয়ে গেল।ডাক্তার ডালিয়াকে ইামরজেন্সিতে নিয়ে গেল।অরণ্য আর রহমত চাচা বাইরে দাঁড়িয়ে রইল।ডাক্তার অনেক ক্ষণ চেক আপ করল আর বাইরে এসে অরণ্যকে বলল

---আপনার রোগীর অবস্থা ভালো না।ট্রিট মেন্ট চলছে।আর আপানাকে একটা ফরম ফিল আপ করতে হবে।তাড়াতরি ফরম ফিল আপ করে রোগী ভর্তি করান।না হলে রোগীকে বাঁচানো সম্ভব হবে না।

অরণ্য ডাক্তারের কথা শোনে থমকে গেল এটা ভেবে যে তার জন্য আজকে একটা নির্দোষ মেয়ে মরতে যাচ্ছে।যে মেয়েটা কি না তার ভালো করতে গেছিল।এতটা নিষ্ঠুর সে কিভাবে হল এটাই ভাবতে লাগল।তাড়াতাড়ি গেল ডালিয়াকে ভর্তির জন্য।সেখান থেকে ফরম দিল ফিল আপ এর জন্য।অরণ্য সব ফিল আপ করে নার্সকে দিল।নার্স ফরমটা দেখে অরণ্যকে বলল

---স্যার রোগী আপনার কি হয় সেটা তো পূরণ করেন নি।এটা একটু পূরণ করে দিন।

অরণ্য বেশ বিব্রত বোধ করল। বুঝতে পারল না কি লিখবে।কিছুক্ষণ কাগজটা ধরে চুপ করে দাঁড়িয়ে রইল।নার্স আবার বলে উঠল

---স্যার তাড়াতাড়ি  ফিল আপ করে দিন।

অরণ্য এবার শূন্যস্থান টাই লিখে দিল যে রোগীর স্বামী হয় অরণ্য।আর রোগী তার স্ত্রী। তারপর নার্স ফরমটা নিয়ে চলে গেল।আবার ডালিয়ার চিকিৎসা  শুরু হল।আর এদিকে অরণ্যের বুকটা যেন হাহাকার করতে লাগল ডালিয়ার জন্য।তীব্র এক যন্ত্রণার শুরু অরণ্যের।বাবার ডালিয়ার সুস্থতা কামনা করতে লাগল।ডালিয়ার জন্য মরিয়া হয়ে উঠল।নিজেকে খুব বেশি অপরাধী ভাবতে লাগল।আর এদিকে অনেক ক্ষন চিকিৎসা  করার পর ডাক্তার এসে বলল.......

গল্পের নাম : পতিতা পল্লী

 পর্ব:  ৯-১০-১১ 

লেখিকা- শারমিন আঁচল নিপা

ডাক্তার এসে বলল 

---এখন রোগী আগের থেকে একটু ভালো আছে।তবে মানসিক ভাবে আঘাত পেয়ে ছোট খাট একটা এটাক হয়েছে।আপনার স্ত্রী কে সংসারের প্রেসার দিবেন না।মানসিকভাবে ফ্রি রাখবেন।আপাদত দুদিন হাসপাতালে ভর্তি থাকতে হবে আর ২ দিন পরে বাসায় নিয়ে যাবেন।আর ওনি শারিরীক ভাবেও অনেক দুর্বল।ওনার একটু যত্ন নিতে হবে।আর এখন রোগী ঘুমাচ্ছে।আপনি চাইলে রোগীকে দেখতে পারেন।আপনাদের মধ্যে কে রোগীর কাছে যাবেন সিদ্ধান্ত নিন।

এ বলে ডাক্তার চলে গেল।পাশ থেকে রহমত চাচা বলল

---বাবা তুমি যাও।গিয়ে দেখ ডালিয়ার মায়ের কি অবস্থা।আর কোন আঘাত কর না।মেয়েটা যে অনেক কষ্ট সহ্য করছে।আর কষ্ট দিও না।

---চাচা তুমি চিন্তা কর না।আমার বিবেক বুদ্ধি সব হারিয়ে ফেলেছিলাম তাই এমন করেছি।ডালিয়াকে কিচ্ছু করব না।আমি গেলাম চাচা ডালিয়াকে দেখতে।

অতঃপর অরণ্য ডালিয়ার কাছে গেল।গিয়ে দেখল ডালিয়া শোয়ে আছে ডালিয়ার জ্ঞান  এখন ফিরে নি।অরণ্য ডালিয়ার পাশে গিয়ে বসল খেয়াল করল ডালিয়ার চেহারাটা কত নিষ্পাপ। এ অল্প বয়সে কত কষ্টই তাকে সহ্য করতে হয়েছে।আর আমি কি না এ মেয়েকেই এভাবে আঘাত করেছি।এসব ভেবে অরণ্যে ভিতরে অপরাধ বোধ কাজ করতে লাগল।ভিতরে ভিতরে কষ্ট পেতে লাগল।ডালিয়ার পাশে বসে এক পলকে ডালিয়ার দিকে তাকিয়ে রইল।

হাঠাৎ  ডালিয়ার জ্ঞান  ফিরল।জ্ঞান  ফিরার সাথে সাথে অরণ্য ডালিয়াকে বলল

---ডালিয়া সরি।তোমাকে আমি এত বড় কষ্ট দিয়ে ফেলছি এজন্য সরি।আঘাত পেতে পেতে আমি যে এক অমানুষ হয়ে গিয়েছিলাম।তুমি আমাকে মাফ করে দাও।আজকে তোমার কিছু হলে নিজেকে ক্ষমা করতে পারতাম না।

এ বলে অরণ্য ডালিয়ার হাত ধরল।আর ডালিয়া অরণ্যের দিকে তাকিয়ে দেখল অরণ্যের চোখে পানি ছলছল করছে।এ অরণ্য তো অন্য এক অরণ্য।ডালিয়া বুঝতে পারল এটা আর প্রথম দিন দেখা সে অরণ্য না।এ যে এক অন্য অরণ্য।যার বুকের ভিতর শুধু মায়া আর মায়া।ডালিয়া অরণ্যের চোখের দিকে তাকিয়ে বলল

---আপনি দয়াকরে কষ্ট পাবেন না।এটা ভাগ্যে ছিল।আর আমি তো এখন সুস্থ।আপনি কষ্ট পেলে আমার খুব খারাপ লাগে।আপনার কষ্ট সহ্য করতে কষ্ট হয় আমার।

অরণ্য এবার ডালিয়ার কথা শোনে আরও বেশি চমকে গেল।একটা মেয়েকে সে এত কষ্ট দিল আর মেয়েটা কিছু না বলে উল্টা আরও শাত্ননা দিচ্ছে।এসব ভেবে অরণ্যের চোখের মেঘ যেন বৃষ্টি হয়ে নেমে গেল।আর ডালিয়াকে বলল

---আমি কথা দিচ্ছি আমি আর তোমাকে আঘাত করব না।তুমি আর কষ্ট পাবে না কখনও।তেমাকে আর কষ্ট পেতে দিব না।তোমাকে সবসময় খুশি রাখার চেষ্টা করব।আমি যে অন্ধ হয়ে গিয়েছিলমা।তোমার জন্য আমি আমার স্বাভাবিক জীবনটা পেয়েছি।

---আপনি যে স্বাবাবিক জীবন পেয়েছেন এতেই আমি খুশি।আপনি প্লিজ কাঁদবে না।

পাশ থেকে নার্স এসে ডালিয়াকে বলল

---আপু ভাইয়া তো আপনার জন্য একদম অস্থির হয়ে গিয়েছিল।কি যে করতেছিল কি বলব।আপনি অনেক ভাগ্যবতী এমন হাসবেন্ড পেয়েছেন।আর ভাইয়া এবার আর চিন্তা নেই ভাবী তো সুস্থ হয়ে গেছে।দুদিন পরেই বাসায় নিয়ে যেতে পারবেন।

এ বলে নার্স মুচকি হাসি দিয়ে চলে গেল।আর ডালিয়া নার্সের কথার কোন মানে বুঝল না।শান্ত স্বরে ডালিয়া অরণ্যকে বলল

---আচ্ছা নার্স কি বলে গেল আমি তো কিছুই বুঝলাম না।

---আরে বলো না তোমাকে এডমিট করানোর সময় একটা ফরম ছিল পূরণ করার জন্য ফরম টা তে রোগী আমার কি হয় এটা জানতে চেয়েছিল।আমি লিখেছিলাম স্ত্রী। আর এ নার্সটাই ফরম টা নিয়া যায়।ওনি ভাবছে তুমি আমার স্ত্রী।এজন্য একথা গুলো বলল। 

ডালিয়া অরণ্যের কথা শোনে যেন থমকে গেল।জীবনে বউ হওয়ার স্বপ্ন তো কবেই ছেড়ে দিয়েছিল।অরণ্যের কথা শোনে যেন আজকে ডালিয়ার নিজেকে বউ মনে হতে লাগল।চাতক পাখির মত অরণ্যের দিকে তাকিয়ে এবার ডালিয়া কেঁদেই দিল। আর অরণ্যকে বলল

---আমার জন্য আপনি এত কিছু করবেন বুঝতে পারে নি। 

---আরে বোকা মেয়ে এ আর কি। কাঁদতেছ কেন?পাগলের মত কাঁদবা না তো। হাসপাতালে আরও দুদিন থাকতে হবে।তারপর বাসায় যেতে পারবা।এখন একদম কান্নকাটি থামাও।সুস্থ হতে হবে আগে।

ডালিয়াও লক্ষী মেয়ের মত কান্না থামাল।দুদিন পর ডালিয়াকে বাসায় নিয়ে গেল।কিন্তু ডালিয়া একা একা হাঁটতে পারছিল না। অরণ্যের কাধে ভর করে ও যেন ডালিয়ার  হাঁটতে কষ্ট হচ্ছিল।অরণ্য ব্যাপারটা বুঝতে পেরে আচমকা ডালিয়াকে কোলে তুলে দিল।অরণ্যের এ কান্ড দেখে ডালিয়া বিস্মিত হয়ে গেল আর বলে উঠল

---অরণ্য বাবু কি করছেন কি?আপনি নামান আমাকে।কষ্ট হচ্ছে তো আপনার।

---কোন কথা না একদম চুপ।হাঁটতে পাতেছ না আবার আমার কষ্ট দেখা হচ্ছে।আমার কিচ্ছু কষ্ট হচ্ছে না।আমি ঠিকেই আছি।

ডালিয়াকে নিয়ে অরণ্য ডালিয়ার রুম নিয়ে খাটে শোয়াল আর বলল

---কি খাবা বল?

---আমি এখন কিছু খাব না।

---এসব বললে চলবে না। কিছু খেতে হবে।ডাক্তার বলল তোমাকে সুস্থ হতে হলে বেশি বেশি খেতে হবে।আর আপাদত নরম খাবার খাওয়াতে হবে।সুপ হলে ভালো হয়।কিন্তু বাইরের সুপ তো এত স্বাস্থ্যকর না।আচ্ছা দাঁড়াও আমিই রান্না করে নিয়ে আসছি।

---আপনি রান্না পারেন?

---পারি না।তবে চেষ্টা করে দেখি পারি কি না।অনেক আগে একবার মাবিহার জন্য রান্না করেছিলাম।

---আমার জন্য এত কষ্ট করতে হবে না, যা আছে তাই দিন আমি খেয়ে নিচ্ছি।

---আরে চুপ করে বসোত।এত কথা কেন বল?আমি সুপ রান্না করে আনতেছি।তুমি চুপচাপ রেস্ট নাও।

ডালিয়ার কাছে যেন সবটা স্বপ্ন মনে হতে লাগল।অরণ্য চলে যাওয়ার পর নিজের শরীরে নিজে চিমটি কেটে আঃ শব্দ করে উঠল।নাহ তে এ স্বপ্ন না এ যে সত্যি।আধা ঘন্টা পর অরণ্য আসল হাতে একটা সুপের বাটি নিয়ে।আর বলল,

---এই যে সুপ রেডি।কেমন হয়েছে জানি না।তবে খেয়ে টেস্ট করে দেখ।আমি নিজেও এখন টেস্ট করি নি।হা কর দেখি।

ডালিয়া হা করল আর সুপটা খেয়ে মুখটা একটু কেমন জানি করল।অরণ্যের ডালিয়ার মুখের ভঙ্গি দেখে বলল

---সুপটা কি ভালো হয় নি?

মু্চকি হাসি দিয়ে ডালিয়া বলল

---ভালো হয়েছে অনেক।

ডালিয়ার কথা শোনে কেন জানি না মনে হল ডালিয়া মিথ্যা বলছে তাই অরণ্য সুপটা টেস্ট করলো।অরণ্য সুপটা টেস্ট করে ওয়াক ওয়াক করে উঠল কারন সুপটাতে লবনে কাটা ছিল আর ডালিয়াকে বলল

---এ পাগল মেয়ে এ সুপকে ভালো বলছ তুমি? এ সুপে লবনে কাটা হয়ে আছে।

---আপনি এত কষ্ট করে বানিয়েছেন যা বানিয়েছেন তাই হবে আমাকে দিন আমি খেতে পারব।

---হয়েছে আর এ সুপ খেয়ে পেট খারাপ করতে হবে না আমি আবার বানিয়ে নিয়ে আসছি।

---আপনাকে সুপ করতে হবে না।একটু জাউ ভাত করলেই হবে।

---কিন্তু জাউ ভাত কিভাবে করে আমি তো জানি না।

---আমাকে একটু রান্না ঘরে নিয়ে যান আমি শিখিয়ে দিচ্ছি।

---পাগল তুমি? এ শরীর নিয়ে রান্না ঘরে যাবে।আমাকে বল আমি করে নিয়ে আসছি।

---আরে আপনি আমাকে নিয়ে যান তো আমি তো আর রান্না করব না আপনাকে দেখিয়ে দিব।

---তা করা যায়। আচ্ছা আমার কাঁধে ভর দিয়ে উঠ।

ডালিয়া অরণ্যের কাঁধে ভর দিয়ে উঠল।আস্তে আস্তে রান্না ঘরে গেল।ডালিয়া অরণ্যকে বলে দিল কি করবে আর অরন্যও সেভাবে রান্না করল।রান্না করে দুজন এক সাথে খেল।অরণ্য ডালিয়ার যত্ন নেওয়া শুরু করল আর ডালিয়া আস্তে আস্তে সুস্থ হতে লাগল।এখন ডালিয়া আগের থেকে অনেকটা সুস্থ।ইদানিং ডালিয়া ঘরের কাজ ও করা শুরু করছে।আর অরণ্য ডালিয়াকে জারি দিয়া বলল

----এ শরীর নিয়ে তোমাকে এসব কাজ করতে কে বলেছে? রহমত চাচায় তো সবটা করতে পারবে।

----সারাদিন বসে শুয়ে থাকতে আমার ভালো লাগে না।আর রহমত চাচার তো বয়স হয়েছে।রহমত চাচা কি এসব একা পারবে।আমার ভালোই লাগছে একটু কাজ করতে পেরে প্লিজ আপনি আমাকে না করবেন না।

---আচ্ছা তোমার ভালো লাগলে কর কিন্তু নিজের শরীরের কথা ভুলে যেও না।

---আপনাকে ভাবতে হবে না।আমি ঠিকেই আছি।

আস্তে আস্তে ডালিয়া আর অরণ্যের সম্পর্ক টা ভালো হতে লাগল।একদিন ডালিয়ার গোসল করতে গেল।গোসল থেকে বের হয়ে এসে দেখে বিছানার উপর একটা বক্স আর চিঠি রাখা। চিঠিটাতে লিখা ছিল

"ডালিয়া আমি কি তোমাকে ডালু বলে ডাকতে পারি।এত বড় নামটা যে আমার ডাকতে খুব কষ্ট হয়।আর বক্সে একটা শাড়ি আছে তাড়াতাড়ি পড়ে রেডি হও তো আমরা আজকে সারাদিন ঘোরব।"

ডালিয়া বক্সটা বের করে দেখল একটা লাল টকটকে শাড়ি।ডালিয়া যেন শাড়িটা দেখে আনন্দে আত্নহারা হয়ে গেল।টেবিলের উপর থেকে একটা কলম নিয়ে ডালুয়া লিখতে চাইল যে

"আপনি আমাকে ডালু বলেই ডাকেন।তবে আমি আপনাকে অরু বলে ডাকব।শাড়িটা আমার অনেক পছন্দ হয়েছে""

কিন্তু অনেকদিন যাবৎ লিখে নি তাই লিখা যেন ডালিয়ার হাত দিয়ে বের হচ্ছিল না।তবুও কোন রকমে ডালিয়া লিখল।আর ঝটপট শাড়িটা পড়ে নিল।আর আয়নায় নিজেকে দেখে যেন ডালিয়ার আজকে নতুন বউ মনে হতে লাগল।হঠাৎ  অরণ্য ডাকতে লাগল

---ডালিয়া তুমি কি রেডি হয়েছ।আর কতক্ষণ লাগবে।

---আসতেছি আসতেছি।

এবলে ডালিয়া বের হল।ডালিয়াকে এ রূপে দেখে অরণ্য যেন চমকে গেল।ভাবতে লাগল মেয়েটার সত্যিই অনেক মায়াবী চেহারা।আর এদিকে ডালিয়া অরণ্যের কাছে গিয়ে কাগজ টা দিল। অরণ্য ডালিয়ার লিখাটা পড়ে ডালিয়ার কানে কানে এসে বলল

---তুমি আমাকে অরু বলেই ডেক ডালু।

অরণ্যের মুখে ডালু ডাকটা শোনে ডালিয়া খুশিতে আত্নহারা হয়ে গেল।দুজন মিলে বাইরে গেল।একটা পার্কে বসল।অনেকদিন পর ডালিয়া এরকম খোলামেলা জায়গায় বসেছে।ডালিয়ার যেন অনেক ভালো লাগছে।ঠিক এমন সময় একটা পিচ্চি মেয়ে অরণ্যের কাছে এসে বলল

---স্যার এ মালাটা নিন।ভাবীকে পড়লে খুব মানাবে।

---সবগুলা কত রে?

---আপনি খুশি হয়ে যা দেন।

অরণ্য মেয়েটাকে একটা  ৫০০ টাকা নোট দিয়ে বলল এ নে।মেয়েটা টাকাটা পেয়ে খুশিতে নাচতে নাচতে চলে গেল।অরণ্য ফুল গুলো ডালিয়ার হাতপ দিয়ে বলল

---ডালু সরি তোমার চুল গুলা আমি কেটে ফেলছিলাম।চুলে তো আর খোপা করে মালাটা দিতে পারবা না।তোমার হাতেই মালা গুলা পেঁচিয়ে পড় ভালো লাগবে।

অরণ্যের কাছ থেকে ডালিয়া ফুল গুলা নিয়া বলল কে বলেছে যে আমি চুলে পড়তে পারব না।এ বলে চুলের একটা ক্লিপ দিয়ে একটা মালা চুলে আটকে দিল।অরণ্য দেখে ডালিয়াকে বলল

---বাহ ডালু তেমাকে তো বেশ সুন্দর লাগছে।

অরণ্যের কথা শোনে ডালিয়া বেশ লজ্জা পেল।লজ্জায় মাথা নত করে ফেলল।তারপর অরণ্য বলল

---থাক আর লজ্জা পেতে হবে না।চলেন রেস্টুরেন্ট গিয়ে কিছু খাওয়া যাক।

তারপর দুজন মিলে রেস্টুরেন্টে  গেল।ডালিয়া এমন রেস্টুরেন্ট এ প্রথম দেখেছে।চারদিক কত সুন্দর করে সাজানো।অরণ্য খাবার অর্ডার করল।খাবার চলেও আসল।কিন্তু ডালিয়া বুঝতে পারল না সে কাটা চামচ দিয়ে কিভাবে খাবে।অপরদিকে অরণ্য খাওয়া শুরু করে দিল।অরণ্যকে দেখে সেভাবে খাওয়ার চেষ্টা করল কিন্তু পারল না।অরণ্য ডালিয়ার দিকে খেয়াল করে দেখল ডালিয়া এখন ও কিছু খায় নি।অরণ্য বেশ ভালোই বুঝতে পারল ডালিয়া কাটা চামচ দিয়ে খেতে পারছে না।তাই অরণ্যও চামচ রেখে হাতে খাওয়া শুরু করল।ডালিয়া এটা দেখে একটু স্বস্তি পেল।সেও খাওয়া শুরু করল।খাওয়া শেষে দুজন মিলে আরও ঘুরল।

আস্তে আস্তে সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসল।রাস্তার পাশে সেডিয়াম বাতি গুলা জ্বলে উঠল।ডালিয়ার যে কি ভালো লাগছে, ডালিয়া নিজেও বুঝতে পারছে না।গুটি গুটি পায়ে সোডিয়াম বাতির নীচে দুজন হেঁটে কথা বলতে লাগল।কত কথা যে বলল হিসাব নেই।দুজনের সব কিছু শেয়ার করে দুজন যেন একাকারে মিশে গেল।রাতে বাসায় ফিরল।

ধীরে ধীরে ডালিয়া আর অরণ্যের সম্পর্কটা বেশ জমে উঠল।কিন্তু এর মধ্যে হঠাৎ  অরণ্যের কল আসল।অরণ্য কল ধরে দেখল মাবিহা।মবিহা কল ধরার পর বলল..

গল্পের নাম : পতিতা পল্লী

 পর্ব:  ১০-১১ 

লেখিকা- শারমিন আঁচল নিপা

মাবিহা বলল

---হ্যালো অরণ্য আমাকে মাফ করে দাও।আমাকে আর কষ্ট দিও না।আমি আমার ভুলটা বুঝতে পেরেছি।আমাকে আর যন্ত্রণা দিও না।তোমার সাথে এসব করা আমার ঠিক হয় নি।সেদিন আমি আকাশের ভালোবাসায় অন্ধ হয়ে গিয়েছিলাম।বুঝতে পারি নি কি করব।না বুঝে অন্যায় করে ফেলেছি।তুমি আমাকে মাফ করে দাও অরণ্য।আমাকে আর আাঘাত কর না।আমাকে তোমার জীবনে ফিরিয়ে নাও।আমি আর এমন করব না।শেষ বাবের মত আমাকে একটা সুযোগ দাও।

---মাবিহা কতবার বলেছি তোমাকে যে, আমাকে আর কল দিবে না।আমাকে আর কল দিয়ে বিরক্ত করবে না।তুমি কল দিলে আমার বিরক্ত লাগে।পৃথিবীতে কাউকে যদি ঘৃনা করি সেটা তোমাকে।আর কতবার তোমাকে এ কথা বলতে হবে।

---অরণ্য আমি জানি তুমি আমার উপর রেগে আছ।আমি জানি তুমি আমাকে এখনও ভালোবাস।প্লিজ অরণ্য আমাকে ফিরিয়ে দিও না।আমি আমার ভুলটা বুঝতে পেরেছি।

---আমি তোমাকে ভালোবাসি না মাবিহা।আর কতবার একথাটা তোমাকে বলতে হবে?মাবিহা প্লিজ আমাকে বিরক্ত কর না।আমার একদম ভালো লাগছে না তোমার সাথে কথা বলতে।তুমি প্লিজ আমাকে আর কল দিও না।

---প্লিজ অরণ্য এরকম কর না।আচ্ছা ইদানীং  তোমাকে একটা মেয়ের সাথে প্রায়ই ঘুরতে দেখা যায় মেয়েটা কে?

---ওহ আমার ব্যাপারে ইনফরমেশন নেওয়াও শেষ তোমার।মেয়েটা কে জেনে তোমার কি হবে?

---প্লিজ বল মেয়েটা তেমার কি হয়?

---মেয়েটা আমার বউ হয়।

---অরণ্য তুমি এ মেয়েকে বিয়ে করেছ?

---হ্যা করেছি।কেন কোন সমস্যা?

---তুমি কি জান এ মেয়ের পরিচয় এ মেয়ে কে?

---ওহ এ মেয়ের পরিচয় নেওয়াও শেষ।হ্যা জানি এ মেয়ে কে।জেনেই বিয়ে করেছি।

---তুমি জেনে শোনে এমন একটা মেয়েকে বিয়ে করেছ।

---হ্যা করেছি।মেয়েটা আর যাই হোক তোমার মত ছলনাময়ী না।তোমার মত এত নিকৃষ্ট না।তোমার মত প্রতারক না।

---অরণ্য তুমি আমাকে এভাবে বলতে পারলে।ঐ মেয়েটার সাথে আমার তুলনা করতে পারলে।

---হ্যা পারলাম।প্লিজ মাবিহা।আমি এখন বিবাহিত।আমার বউ জানলে খুব কষ্ট পাবে।তুমি প্লিজ আর কল দিও না।আমাদের দাম্পত্য জীবনে কাটা হয়ে দাঁড়িও না।

---অরণ্য প্লিজ আমার কথাটা শোন।

আর কোন কথা শোনার নেই এই বলে অরণ্য মাবিহার ফোন কেটে দিল।আর এদিকে ডালিয়া বুঝতে পারল মাবিহা কল দিয়েছিল।ডালিয়া অরণ্যকে জিজ্ঞেস  করল

---মাবিহা কল দিয়েছিল কেন?

---আমার কাছে আবার ফিরে আসতে চায় এজন্য।

---তাহলে আকাশের সাথে মাবিহার কি হয়েছে?

---আাকাশের সাথে মাবিহার ডিভোর্স হয়েছে ২ বছর যাবৎ।এরপর অনেক বার কল দিয়েছে আমার কাছে ফিরে আসতে চেয়েছে কিন্তু আমি তাকে গ্রহণ করে নি।

---আপনি তো মাবিহাকে ভালোবাসেন।মাবিহা যেহুত আসতে চাচ্ছে তাহলে ফিরিয়ে নিয়ে আসুন।

---নাহ এটা আর সম্ভব না।আমি মাবিহাকে ঘৃনা করি।কে বলতে পারে এটা তার আর আকাশের নতুন নাটক না?যে মেয়ে এত বড় ছলনা করতে পারে সে আরও বড় ছলনা করতে পারবে।মাবিহাকে আমি বিশ্বাস করি না।যে আমার সন্তান কে দুনিয়াতে আাসার আগেই খুন করে ফেলেছে তাকে আমি মরে গেলেও মেনে নিতে পারব না।

---কিন্তু মাবিহা কোন মেয়ের কথা বলল? আর আপনি তাকে বউ বলে পরিচয় দিয়েছেন।

---তোমার কথা বলেছে।

কথাটা শোনে ডালিয়া বিস্মিত হয়ে গেল।তার মত একটা মেয়েকে অরণ্য বউ বলে পরিচয় দিল এটা শোনে।কিছুটা বিস্মিত হয়ে ডালিয়া উত্তর দিল

---কিন্তু আমি তো আপনার বউ না।

---হুম জানি তুমি আমার বউ না।

---তাহলে এমন বললেন যে

---সেটা তুমি বুঝবে না।

---কিন্তু....

--- হয়েছে একদম চুপ আর কোন কিন্তু না আর কোন কথা শোনতে চাচ্ছি না এ ব্যাপারে। 

এ কথা বলে অরণ্য ডালিয়ার রুম থেকে চলে গেল।হঠাৎ  রহমত চাচা এসে ডালিয়াকে বলল

---ডালিয়া মা।অরণ্য জানি কেমন করছে তাড়াতাড়ি  চল

ডালিয়া রহমত চাচার কথা শোনে ভয় পেয়ে গেল।তাড়াতাড়ি  অরণ্যের রুমে গেল।আর গিয়ে দেখল অরণ্যের রুমের লাইট বন্ধ।ডালিয়া ঘরের লাইট জ্বালিয়ে পুরা অবাক হয়ে গেল কারন চারদিকে বেলুন আর ফুল দিয়া সাজানো।অরণ্য ড্রয়ার থেকে একটা পেপার দিয়ে ডালিয়াকে পড়তে বলল।ডালিয়া পেপারের হেডলাইন  পড়ে খুশিতে আত্ন হারা হয়ে গেল।কারন পেপারে লিখা ছিল।"আজ থেকে ৬ বছর আগে ডাক্তার অরণ্যের নামে করা অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে।ডাক্তার অরণ্য কোন ধর্ষক না।ওনাকে ফাঁসিয়েছেন ডাক্তার অনুরাগ।তাই অরণ্যকে পুনরায় চাকুরী প্রদান করা হল আর অনুরাগকে চাকুরীচ্যুত করা হল।"ডালিয়া সংবাদ টা পড়ে খুশিতে যেন পাগল হয়ে যাবে মনে হচ্ছে।পাশ থেকে অরণ্য বলে উঠল

---সারপ্রাইজ  টা কেমন লাগল।

ডালিয়া আদো আদো কন্ঠে জবাব দিল

---এভাবে কেউ সারপ্রাইজ  দেয়।আমি তো ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।ভেবেছিলাম কি না কি হয়েছে।

---তুমি থাকতে আমার কিচ্ছু  হবে না ডালু

---কিন্তু আপনি এটা কিভাবে করলেন?এত কিছু হয়ে গেল আর আমাকে আগে কিছু জানালেন না।

---আরে পাগলি সারপ্রাইজ  দিব বলে জানায় নি।এটার মামলা আমি আগেই করেছিলাম।মাঝখান দিয়া আমার প্রবলেমের জন্য মামলাটা আর চালিয়ে যায় নি।তোমার কাছে এসে জীবনের মানেটা বুঝি নতুন করে।তারপর আবার মামলা ওপেন করি। নার্সকে জিজ্ঞেস  করি।নার্স ও তার ভুল বুঝতে পেরেছে।আবার কোর্টে গিয়ে আমার পক্ষে  সাক্ষী  দেয় আর রায় আমার পক্ষে আসে।তা কেমন লাগল সারপ্রাইজ  টা।

---সারপ্রাইজটা অনেক ভালো লাগল।অনেক খুশি হয়েছি এতটা খুশি হয়েছি বলে বুঝাতে পারব না।

----আমিও আজকে অনেক খুশি।আবার নতুন করে সব শুরু করব।ডাক্তারি প্র্যাকটিস করব।আর তোমার জন্য একটা টিচার রাখেছি।তোমাকে যেন একটু শিখাতে পারে।কালকে থেকে তোমার টিচার আসবে তোমাকে টুকিটাকি শিখাবে।

---কিন্তু পড়ালেখা তো কবেই ছেড়ে দিয়েছি।আমি কি পারব আবার সব শুরু করতে।ভয় লাগছে অনেক

--আরে পাগলি ভয় পাওয়ার কিচ্ছু নেই আমি আছি তো 

ডালিয়া অরণ্যকে যতই দেখছে ততই যেন ডালিয়ার মনে হচ্ছে এ কি সত্যি অরণ্য বাবু নাকি স্বপ্ন।ডালিয়া নিজের চোখকেও বিশ্বাস করতে পারছে না।পরদিন সকালে ডালিয়াকে অরণ্য ডাকতে লাগল

---ডালু,ডালু, নীচে আস।

---আসতেছি। 

ডালিয়া নীচে গিয়ে দেখল একটা লোক।লোকটাকে দেখে ডালিয়া ভয়ে কোকরে গেল।আর লোকটাও ডালিয়াকে দেখে রহস্যময় হাসি দিতে লাগল।অরণ্য ডালিয়াকে বলল

---ডালিয়া ওনি রায়হান সাহেব তোমাকে আজকে থেকে পড়াবে।

---আর রায়হান সাহেব ও ডালিয়া আমার স্ত্রী  আর আপনার ছাত্রী আজকে থেকে ওকে পড়ানোর দায়িত্ব আপনার 

লোকটা অবাক হয়ে অরণ্যকে আবার জিজ্ঞেস  করল

---ওনি আপনার স্ত্রী 

---হ্যা আমার স্ত্রী। আপনি ওকে পড়ানো শুরু করুন।

---আচ্ছা আপনি যা বলবেন।

রায়হান সাহেব ডালিয়াকে পড়াতে বসল।ডালিয়াকে লক্ষ্য  করে বলল

---আচ্ছা ডালিয়া তোমার হাসবেন্ড কি তোমার অতীত জানে।নাকি আমি সব বলে দিব।আমাকে একটু খুশি করে দাও। না হয় আমি তোমার স্বামীকে সব বলে দিব।

এ বলে লোকটা ডালিয়ার শরীরে হাত দিতে লাগল।ডালিয়া সেখান থেকে উঠে চলে আসল।আর রুমে এসে কাঁদতে লাগল।অরণ্য ডালিয়াকে এরকম করতে দেখে অবাক হল।ডালিয়ার কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস  করল

---ডালিয়া তুমি এভাবে চলে আসলে যে, কি হয়েছে?

ডালিয়া কাঁদো কাঁদো কন্ঠে বলল

---লোকটা এর আগে অনেকবার পতিতা পল্লীতে গিয়েছিল।আজকে লোকটা আমাকে আবার দেখে কুপ্রস্তাব দিচ্ছিল।

ডালিয়ার কথা শোনে অরণ্য রেগে গিয়ে নীচে গেল রায়হান সাহেব কে বলল

---আপনার সাহস কি করে হয় আমার স্ত্রী কে উল্টা পাল্টা বলার।

---আমি উল্টা পাল্টা কেন বলব।আপনার স্ত্রী  এর অতীত জানেন ও তো একটা নষ্টা মেয়ে।

---আর আপনি বুঝি খুব ভালো ছেলে।

---মানে?

---আপনার মত কাপুরুষরা যখন ওদের ভোগ করতে যান তখন আপনারা নিজেকে খুব সাধু মনে করেন তাই না?আর ওদেরকে নষ্টা বলতে মুখে আটকায় না।ওদেরকে ভোগ করার সময় আপনাদের নীতি বাক্য কোথায় থাকে।লজ্জা লগে না একটা টিচার হয়ে এত নোংরা কাজ করেন।আবার অন্য মেয়েকে অপবাদ দেন। বের হোন আমার বাসা থেকে 

রায়হান সাহেব অরণ্যের কথা শোনে লজ্জিত হয়ে বের হয়ে গেল।ডালিয়া অরণ্যের কথা শোনে বিস্মিত হল।এ প্রথম কোন ছেলে যেন ডালিয়ার মনের কথা গুলো বলল।ডালিয়ার মনটাকে বুঝতে পারল।অরণ্যের প্রতিটা ব্যাবহার যেন ডালিয়াকে অরণ্যের প্রতি আরও দুর্বল করে দিতে লাগল।অপরদিকে অরণ্য ডালিয়ার কাছে এসে বলল

---তুমি কষ্ট পেও না।এসব মানুষের কথায় চোখের জল ফেলো না।এরা কাপুরুষ।এরা মানুষ নামে অমানুষ।

কথাগুলা শোনে ডালিয়ার চোখ দিয়ে কান্না যেন বৃষ্টি হয়ে নামল।ডালিয়া অরন্যকে বলল

---আপনার মত করে আমাকে আর কেউ কখন ও বুঝে নি।এতটা ভালো কেউ কখনও বাসে নি।

অরণ্য ডালিয়ার চোখের জল মুছে দিয়ে ডালিয়াকে জড়িয়ে ধরল আর বলল

--ধুর পাগলি এভাবে কেঁদো না তো।তোমাকে কাঁদলে একদম ভালো লাগে না।আমি চাই তুমি আমার জন্য হলেও সবসময় হাসি খুশি থাক।

 ঠিক এ মুহুর্তে অরণ্যের ফোনে মাবিহার কল আসল।আর অরণ্য ফোনটা কেটে দিল।মাবিহা আবার ফোন করল।আর অরণ্য ফোনটা আবার কেটে দিল।পাশ থেকে ডালিয়া বলে উঠল

---অাপনি বারবার ফোন কাটছেন কেন?কে ফোন দিয়েছে।ধরছেন না কেন?

----মাবিহা কল দিয়েছে।

---ধরে দেখুন কি বলে।কোন দরকার আছে কি না।

---আমি চাচ্ছি  না ওর কল ধরতে।নতুন কোন নাটক সাজিয়েছে হয়ত।এখন আর ফোন ধরার কোন ইচ্ছা নেই।শোন তাড়াতাড়ি রেডি হও।আজকে তোমাকে নিয়ে পার্লারে যাব।

---পার্লারে কেন?

---ভয় নেই।আজকে কিছু করব না।তোমার চুলে সুন্দর একটা হেয়ার কাট দিয়ে নিয়ে আসব।এখন চুল গুলো কেন জানি এলো মেলো লাগছে।

ডালিয়া অরণ্যের কথা শোনে তাড়াতাড়ি  রেডি হল।দুজন মিলে পার্লারে গেল।পার্লারের মহিলা ডালিয়াকে জিজ্ঞেস  করল কি কাট দেব বলুন। ডালিয়া চুপ করে রইল। কারন সে বুঝতে পারছিল না কি বলবে।হঠাৎ  অরণ্য বলে উঠল  ওর চুল তো ছোট আপনি শর্ট লেয়ারটা দিয়ে দিন ওকে মানাবে বেশ।পার্লারের মহিলা অরণ্যের কতা মত ডালিয়াকে শর্ট লেয়ার কাট দিয়ে দিল।কাটা শেষে ডালিয়া আয়নায় নিজেকে দেখে  নিজে চিনতে পারল না।কারন ডালিয়াকে বেশ সুন্দর দেখাচ্ছিল।এ কাট টা ডালিয়াকে বেশ মানিয়েছিল।অরণ্যও ডালিয়াকে বলল

---বাহ তোমাকে তো বেশ সুন্দর লাগছে।একদম পরীর মত লাগছে।

ডালিয়া লজ্জায় লাল হয়ে গেল। তারপর দুজন পার্লার থেকে বের হয়ে শপিং এ গেল ডালিয়ার জন্য বিভিন্ন জিনিস কিনল।ডালিয়াও অরণ্যের জন্য একটা শার্ট পছন্দ করে দিল।শপিং শেষে রেস্টুরেন্ট এ বসে দুজন খেল।আস্তে আস্তে সন্ধ্যা হয়ে গেল।আজকে কেন জানি না ডালিয়ার খুব ইচ্ছা হচ্ছে সোডিয়াম বাতির নীচে বসে বাদাম খেতে আর আড্ডা দিতে।কিন্তু অরণ্যকে বললে কি ভাববে?সাহস করে বলবে বলবে ভেবেও যেন বলতে পারছিলনা।হুট করে বলেই ফেলল

---আচ্ছা ১০ টাকার বাদাম কিনবেন।

----তা কিনা যায়।কিন্তু হঠাৎ 

---হলুদ বাতির নীচে বসে আপনার সাথে বাদাম খেতে খুব ইচ্ছা করছে এজন্য।একটু আড্ডা দিতে ইচ্ছা করছে।

---আইডিয়াটা খারাপ দাও নি।দাঁড়াও আমি বাদাম কিনে আনতেছি।

অরণ্য ডালিয়াকে দাঁড় করিয়ে রেখে বাদাম কিনে আনল।দুজন মিলে সোডিয়াম বাতির নীচে বসল।কত কথায় যে বলল তারা।অরণ্য ডালিয়ার বাচ্চা বাচ্চা কথাগুলো বেশ উপভোগ করতে লাগল।আর সত্যিই তো ডালিয়া একটা বাচ্চায়।কারন ডালিয়া তো অরণ্যের ১৮ বছরের ছোট।অরণ্য খুব মনযোগ দিয়ে ডালিয়ার কথা শ্রবণ করতে লাগল।ডালিয়া বলতেছিল

---দেখুন আমাকে আর আপনাকে এ বাতির নীচে কেমন হলুদ, হলুদ দেখাচ্ছে।হিহিহি।

----হাহাহা। ডালু এটাকে সোডিয়াম বাতি বলে।

---কি বাতি বললেন?

---সোডিয়াম বাতি।

---এটা আবার কেমন নাম।আমি হলুদ বাতি বলেই ডাকব।

---হাহাহা।তোমার যা ইচ্ছা ডেকো।এখন কি বাসায় যাবা না?অনেক্ষণ তো আড্ডা দিলা।রাত তো বেশ হল।চারপাশ ও শান্ত হয়ে যাচ্ছে।চল গাড়িতে চল বাসায় যাই

---গাড়িতে উঠতে আজকে মন চাচ্ছে না। চলেন আজকে রিকশা দিয়ে যাই।আমার রিকশা দিয়ে ঘুরার খুব ইচ্ছা।

ডালিয়াকে যত দেখছে অরন্য ততই মুগ্ধ হচ্ছে।এটা ভবেই বিস্মিত হচ্ছে কত অল্পেই মেয়েটা খুশি হয়ে যায়।তারপর হাসি মুখে অরণ্য উত্তর দিল

---আচ্ছা তাহলে ড্রাইভার কে বলি চলে যাওয়ার জন্য। আজকে আমরা রিকশা দিয়েই যাব।

---ডালিয়া লাজুক স্বরে উত্তর দিল আচ্ছা।

এরপরে দুজন মিলে রিকশায় উঠল।খোলা আাকাশের নীচে রিকশায় চড়তে দুজনের বেশ ভালোই লাগছে।হালকা মৃদু মন্দ বাতাস দুজনের  মনে আর শরীরে শিহরণ দিতে লাগল।চারদিকে তাকিয়ে দেখল ব্যাস্ত শহরটা থমথমে নিস্তব্ধ হয়ে গেল।ডালিয়া হুট করে অরণ্যের কাঁধে মাথা রাখল।অরণ্য ও ডালিয়াকে বেশ আঁটসাট ভাবে জড়িয়ে ধরে রাখল।এখন ডালিয়ার নিজেকে সবচেয়ে সুখী মনে হচ্ছে।

কিছুক্ষণ পর  বাসায় ফিরল।বাসায় ফিরে যা যা কিনল তা বের করে ডালিয়া দেখতে লাগল।খেয়াল করল অরণ্য ডালিয়াকে একটা নীল শাড়ি কিনে দিয়েছে।ডালিয়া শাড়িটা নিয়ে আনন্দে নাচতে লাগল। ডালিয়া শাড়িটার ভাঁজ খুলে পড়ল।পড়ার পর ডালিয়া যখন আয়নায় নিজেকে দেখল ডালিয়ার মনে হল ডালিয়াকে একটা নীল পরী লাগছে।ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক পড়ল।কপালে কালো একটা টিপ পড়ল।তারপর অরণ্যের কাছে গেল,

অরণ্য ডালিয়ার সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে গেল।ডালিয়ার হেয়ার কাট শাড়ি আর হালকা সাজটা ডালিয়াকে এত মানিয়েছে যা অরণ্যকে বিমোহিত করে দিল। ডালিয়াকে দেখে  অরণ্য ডালিয়াকে জড়িয়ে ধরে ডালিয়ার কপালে একটা চুমু দিল।ঠিক এসময় মাবিহা আবার কল দিল।এবার অরণ্য মাবিহার কলটা আবার কাটল।কাটার পর মাবিহা আবার কল দিল অরণ্য আবার কলটা কেটে দিল।বারবার কাটার পরও মাবিহা বারবার কল দিচ্ছিল।তারপর অরণ্য কলটা ধরে.....

গল্পের নাম : পতিতা পল্লী

 পর্ব:  ১১ 

লেখিকা- শারমিন আঁচল নিপা

তারপর অরণ্য কলটা ধরে ডালিয়ার হাতে ফোনটা ধরিয়ে বলল আর ডালিয়াকে বলল

---তুমি কথা বল।

ডালিয়া ফোনটা হাতে নিয়ে বুঝতে পারল না কি বলবে।কিছুটা ভয় ও পেতে লাগল।ফোনটা কানে নিয়ে আবার নীচে নামিয়ে ফেলল।অরণ্যকে বলল

---আমি কি বলব?আপনিই কথা বলেন।আমি কিছু বলতে পারব না।আমার ভয় লাগছে।আর ওনি কত বড় মানুষ ওনার সাথে কতা বলে আমি পারব না।

---আরে তোমার যা ইচ্ছা বলে দাও।এমন কিছু বলবা যাতে মাবিহা আর কল না দিতে পারে।ভয় পাবার কিছু নেই কথা বলতো।আমি আছি তো।কিছু হলে আমি দেখব।

ডালিয়া অরণ্যের কথা শোনে আবার কানে ফোনটা ধরল।খেয়াল করল মাবিহা হ্যালো হ্যালো করেই যাচ্ছে।ডালিয়া কিছুটা ভয়ে ভয়ে বলল

---হ্যালো কে বলছেন?

---কে বলছি মানে তুমি কে?

---আমি কে মানে কি?আপনি কল দিয়েছেন, কাকে কল দিয়েছেন জানেন না?আবার আমাকে জিজ্ঞেস  করছেন আমি কে?

---এটা তো অরণ্যের মোবাইল তুমি কে?তুমি অরণ্যের মোবাইল নিয়ে কি করছ।

---সেটার জবাব তো আমি আপনাকে দিতে বাধ্য না।

---অরণ্যকে দাও

---অরু  ব্যাস্ত।এখন কথা বলা যাবে না।আর অরু চায় ও না আপনি ওকে ফোন দিন।সুতরাং  শুধু শুধু ওকে ফোন দিয়া বিরক্ত করবেন।

---তোমার সাহস কি করে হয় অরণ্যের ফোন ধরে এ টাইপ কথা বলতে।তুমি কি ঐ মেয়েটা যে অরণ্যের মাথা খেয়েছ।

---আমি কে সেটার পরিচয় দেওয়ার প্রয়োজন অণুভব করছি না।আপনার সাহস কি করে এত রাতে একজন পরপুরুষকে কল দেওয়ার।

---অরণ্য পরপুরুষ না।অরণ্য আমার স্বামী আর আমি ওর স্ত্রী। 

---হাহাহা।আপনি বেশ হাসালেন।স্ত্রী এর আগে প্রাক্তন কথাটা লাগালে ঠিক ছিল।কারন বর্তমানে তো আপনি অরুর স্ত্রী  না।আপনাদের ডিভোর্স হয়ে গেছে অনেক আগেই।এখন কোন যুক্তিতে আপনি নিজেকে অরুর স্ত্রী বলে দাবি করছেন।আর আপনার বিয়ে তো আকাশের সাথে হয়েছে পরিচয় দিলে আকাশের পরিচয় দিন, কল দিলে আকাশকে দিন।অরু কে কেন ডিস্টার্ব  করছেন?

---দেখ মেয়ে বেশি বাড়াবাড়ি করছ।অরণ্যকে দাও বলছি।অরণ্যের সাথে আমার কথা আছে।

---বললাম তো দেওয়া যাবে না।আর দিব কেন?যাকে আপনি কাঁচ ভেবে ছুরে ফেলেছিলেন সে যে একটা হীরার টুকরা ছিল সেটা চিনতে পারেন নি।আর আমি সেই হীরার টুকরাটাকে যত্ন করে রেখে দিয়েছি।আর এখন আপনি এসে দাবি করছেন এটা আপনার।আজিব মানুষ তো।এতবার করে বলছি ও ব্যাস্ত দেওয়া যাবে না তবুও বারবার চাচ্ছেন।মিনিমাম  লজ্জাটুকুও কি নেই আপনার।

---এই যে মেয়ে তুমি অরণ্যের কি হও যে এভাবে কথা বলছ।এত বড় সাহস তোমাকে কে দিয়েছে?

---আমি অরণ্যের স্ত্রী হই।আপনি কেন আমাদের মধ্যে জামেলা সৃষ্টি করতে চাচ্ছেন বুঝছি না।আর এত বড় সাহস আমাকে আমার অরু দিয়েছে।বারবার কেন কল দিয়ে বিরক্ত করছেন।এত রাতে কেউ কল দেয়।জানেনেই তো এটা স্বামী স্ত্রী  এর প্রাইভেট সময়।এ সময় কল দিয়ে কেন বিরক্ত করছেন।রোমান্টিক সময়ে কল দিবেন না তো।অরু ফোনটা বন্ধ করে দিতে চাইছিল।কিন্তু আমি ফোনটা ধরছি আপনাকে বুঝানোর জন্য।যেহুত অরণ্য বিবাহিত ওকে আর ডিস্টার্ব  করবেন না।প্লিজ আমাদের মধ্যে জামেলা সৃষ্টি করবেন না।আমরা অনেক ভালো আছি।আমাদের ভালো থাকতে দিন।আপনি আপনার আকাশকে নিয়ে ভালো থাকেন।অন্যের সংসার ভাঙ্গতে আসবে না।আমাদের সুখের পথে কাটা হয়ে দাঁড়াবেন  না।

একের পর এক কথা ডালিয়া বলেই চলছিল আর এদিকে অরণ্য বেশ মজা নিচ্ছিল।আর ডালিয়ার মুখে এমন কথা শোনে অরণ্যের ও বেশ ভালো লাগছে।দুজনের ঝগড়া দেখে অরণ্য বেশ মজা নিচ্ছিল।ডালিয়ার কথা শোনে তো অরণ্য হেসে লুটুপুটু খাচ্ছিল।কারন মাবিহা কোনভাবেই ডালিয়ার কথার সাথে পেরে উঠছিল না।অবশেষে ডালিয়ার কথার সাথে মাবিহা পেড়ে উঠতে না পেরে মাবিহা বলল

---আমি তোমাকে দেখে নিব মেয়ে। 

---সে আপনি যা করার করেন।এখন ফোনটা কেটে আমাদের রোমান্স করার সুযোগ করে দিন।

মাবিহা রেগে মেগে ফোন কেটে দিল।আর ডালিয়ায় ফোন রাখার পর স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল আর বলল

--আমি যে ওনাকে আপনার বউ বলে পরিচয় দিয়েছি আপনি রাগ করেন নি তো।

---আরে আমি অনেক খুশি হয়েছি।আমি তো চাচ্ছিলামেই তুমি এমন বল।তুমি তো পুরা ফাটিয়ে দিয়েছ ডালু।

ডালিয়া এবার লজ্জা পেয়ে মাথা নীচু করে বলল।আমি যাই তাহলে আপনি ঘুমান।এ বলে যেতে নিল।অরণ্য ডালিয়ার শাড়ির  আঁচলটায় ধরে টেনে বুকের কাছে এনে  বলল 

---একটু আমার কাছে থেকে যাও।

---কেন কি করবেন?

---কিছুই করব না।সারা রাত তোমাকে দেখব।তোমার কপালে একটা চুমু একে দিব।জানালা দিয়ে জোস্না রাতের চাঁদটা উপভোগ করব।এখন একটা বকুল ফুলের মালা থাকলে ভালো হত।

---বকুল ফুলের মালা দিয়ে কি করবেন?

---বকুল ফুলের মালাটা নিয়ে তোমার গলায় পড়িয়ে তোমার গলা থেকে বকুল ফুলের ঘ্রাণ টা উপভোগ করতাম।

---তারপর কি করতেন।

---তারপর তোমাকে এভাবে জড়িয়ে ধরে রাখতাম।

এবার ডালিয়া বেশ লজ্জা পেল।লজ্জায় যেন লাল হয়ে গেল।ডালিয়ার লজ্জা পেতে দেখে অরণ্য ও বেশ উপভোগ করল আর বলল

---যাও এবার নিজের ঘরে গিয়ে ঘুমাও।কালকে আমার নতুন জয়েন।সকাল সকাল উঠতে হবে।

---আচ্ছা যাচ্ছি।কিন্তু সকালে কি খেয়ে যাবেন বলুন।

---তুমি তোমার ইচ্ছা মত কিছু রান্না কর।

আচ্ছা.... এই বলে ডালিয়া ডালিয়ার রুমে চলে গেল।ডালিয়া রুমে এসে অরণ্যের কথা ভাবতে।কত মায়া ভরা অরণ্যের বুকটা।সব কিছু যেন ডালিয়ার স্বপ্ন মনে হচ্ছিল।এসব ভাবতে ভাবতে ডালিয়া ঘুমিয়ে গেল।পরদিন খুব সকালে ডালিয়া ঘুম থেকে উঠল।উঠে রান্না শুরু করে দিল।রহমত চাচা এসে বলল

---আরে মা তোকে কষ্ট করতে হবে না।আমিই করে দিচ্ছি।বল কি করতে হবে।

---চাচা তুমি যাও তো।এতদিন অনেক করেছ।এবার আমাকে করতে দাও।চুপ করে গিয়ে বসে থাক।আরেকবার কাজ করতে চাইলে কিন্তু ভালো হবে না।

---পাগলি একটা।এমন ভাবে শাসন করছে যেন আমার মা হয়।

"মা" কথাটা শোনে ডালিয়ার চোখের জল ছলছল করতে লাগল।এভাবে তার বাবাও কোনদিন আপন করে কথা বলে নি।আর রহমত চাচা কত আপন করেই না কথা বলছে।রহমত চাচা ডালিয়ার চোখে জল দেখে বলল

---কি রে মা কাঁদছিস কেন।তোকে কি আমি কষ্ট দিয়েছি।মা বলেছি বলে রাগ করেছিস।

---রহমত চাচা এ চোখের পানি যে সুখের।তুমি যে ভালোবেসে মা ডেকেছ কতটা খুশি হয়েছি বলে বুঝাতে পারব না।আজ থেকে তুমি আমার চাচা না ববা।আমিও তোমাকে বাবা বলে ডাকব।তোমার মত করে আমার বাবাও আমাকে ভালোবাসে নি।

রহমত চাচা এক রাশ হাসি দিয়ে বলল।

---আমার লক্ষী মা তুই।তোর যা মন চায় ডাকিস।তোর মত লক্ষী ময়ের বাবা হতে পেরে যে আমি খুব খুশি।রান্না কি শেষ করেছিস নাকি আরও বাকি?

----শেষ চাচা।এবার শুধু টেবিলে দেওয়ার পালা।

হঠাৎ  ডালিয়া শোনতে পেল অরণ্য তাকে ডাকছে।

---ডালু ডালু কোথায় তুমি?

---আসতেছি।কিন্তু কেন?

---আমার মানিব্যাগ আর ঘড়িটা কোথায়?

---ড্রসিং টেবিলের উপরে দেখুন।

---পাচ্ছি না তো তুমি এসে দিয়ে যাও

ডালিয়া দৌঁড়ে উপরে গেল।উপরে গিয়ে দেখল মানিব্যাগ আর ঘড়ি ড্রসিং টেবিলের সামনেই আছে।কিছুটা অভিমানী রাগী চোখ নিয়া মানিব্যাগ আর ঘড়িটা দিয়ে বলল

---এখানেই তো আছে।তাহলে না করলেন যে?

---হুম জানি আছে।কিন্তু আমি চাই ঘড়িটা তুমি পড়িয়ে দাও।তাই আসতে বলেছি।এখন তাড়াতাড়ি ঘড়ি পড়িয়ে দাও তো।

---আপনি যে মাঝে মাঝে কি করেন বুঝি না।বাচ্চাদের মত আচরণ করেন একদম।

---তুমি জানো আমি কত সিনিয়র তোমার।আবার তুমি আমাকে বাচ্চা বল। ১৬ বছরের একটা পুচকি মেয়ে আমাকে বাচ্চা বলে।সাহস কত।হাহাহা।

---সে আপনি যায় বলেন মাঝে মাঝে আপনাকে আমার বাচ্চায় মনে হয়।

---হয়েছে হয়েছে।তোমার সাথে কথা বলে আমি পারব না।এবার পাকা পাকা কথা রেখে আমাকে ঘড়িটা পড়িয়ে দাও তাড়াতাড়ি।এত বকবক করতে পারে।

----কি আমি বকবক করি।আর কথায় বলব না।

অরণ্য ডালিয়াকে টেনে বুকের কাছে এনে বলল

---তুমি কথা না বললে যে আমিই মরেই যাব।

ডালিয়া অরণ্যের মুখটা চেপে ধরে বলল

---মরার কথা  বললে  কিন্তু আমি সত্যিই কথা বলব না।আপনি মরে যাবেন আমার আগে এটা আমি ভাবতেও পারি না।এ কথা আর বলবেন না।

কথাটা বলে ডালিয়া একদম কেঁদে দিল।অরণ্য ডালিয়াকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলল

---পাগলি মেয়ে এভাবে কাঁদে না।মরতে তো হবেই সবাইকে।আচ্ছা সরি আমি আর একথা বলব না।

ডালিয়া অরণ্যে দিকে এবার অভিমানী চোখ নিয়া তাকিয়ে বলল

---কান ধরেন তাহলে।কান ধরে সরি বলেন।

---সত্যিই কি কান ধরতে হবে।আজকে মাফ করে দেওয়া যায় না। 

---কোন মাফ নেই, কান ধরেন।

অতঃপর অরণ্য কান ধরে মুচকি হাসি দিয়া বলল

---আমি আর এমন কথা বলব না।আমি আমার ডালুকে আর কষ্ট দিব না।আমার ডালুকে সবসময় খুশি রাখার চেষ্টা করব।এবার ডালু  রানী আমার ঘড়িটা পরিয়ে দিন।না হয় অফিস যেতে লেট হবে যে।

ডালিয়া মুখের কোনে একরাশ হাসি নিয়ে অরণ্যকে ঘড়িটা পড়িয়ে দিয়ে বলল।

---এবার নাস্তা খেতে নীচে চলুন।

ডালিয়া ও নীচে গেল।রান্না ঘর থেকে খাবার নিয়ে এসে টেবিলে দিতে লাগল।হুট করে রান্না ঘর থেকে আাসার সময় ডালিয়া পা পিছলে পড়ে গেল।অরণ্য খেয়াল করল ডালিয়া পড়ে আছে।তাড়াতাড়ি ডালিয়ার কাছে গেল।ডালিয়াকে রগী কন্ঠে বলল

---এত তারাহুরার কি আছে।কাজ করবা আস্তে ধীরে ।এখন যদি কিছু হত।উঠ আমার কাঁধে ভর করে।

ডালিয়া অরণ্যের জারি শোনে একটু মন খারাপ করল।অরণ্যের কাঁধে ভর করে উঠে চুপ করে দাড়িঁয়ে রইল

অরণ্যও বুঝতে পেরেছে ডালিয়া অভিমান করেছ।তাই ডালিয়াকে বলল

---হয়েছে হয়েছে আর এভাবে মন খারাপ করে দাঁড়িয়ে থাকতে হবে না।তুমি যদি পরে ব্যাথা পেতে তাহলে কে ভুগত আমি নাকি তুমি।এখানে বস।আজকে একসাথে খাব।

---আপনি খান আমি পড়ে খেয়ে নিব।

---একটা মাইর দিব।তাড়াতাড়ি বস।

অরণ্য ডালিয়াকে টেনে চেয়ারে বসিয়ে খাইয়ে দিল।ডালিয়া যেন স্বপ্নের সাগরে  ভাসতে লাগল।ভাবতে লাগল এত সুখ তার কপালে সইবে তো।নাকি আাবার সব সুখ ফিকে হয়ে যাবে।খাওয়া শেষে ডালিয়া অরণ্যকে জিজ্ঞেস  করল

---আপনি কখন আসবেন?

---আজকে তাড়াতাড়ি চলে আসব।তুমি রেডি থেক।বিকেলে ঘুরতে যাব।কোথায় যাবে বলতো

ডালিয়া অনেক ভেবে উত্তর দিল

---শিশু পার্কে যাব।

অরণ্য ডালিয়ার কথা শোনে হাসতে হাসতে উত্তর দিল

--- এত জায়গা থাকতে শিশু পার্কে কেন?

---আমার খুব ইচ্ছা ছিল শিশু পার্কে যাবার।কিন্তু বাবা ব্যাস্ত থাকায় কখনও যেতে পারে নি।আর এরপর মা মরে যাওয়ার পর তো জীবনেই পাল্টে গেল।শিশু পার্কে যাব কিভাবে।এজন্য বললাম।না নিয়ে যেতে পারলে থাক।

---হয়েছে মুখ ভার করে রাখতে হবে না।আমি এসেই নিয়ে যাব।রেডি হয়ে থেকে।

ডালিয়া তো শোনে খুশির চুটে অরণ্যকে জরিয়ে ধরল।তারপর আাবার নাচতে নাচতে রুমে চলে গেল।অরণ্য ডালিয়ার খুশি দেখে ভাবতে লাগল মেয়েটা কত বাচ্চাসুলভ।আচরণ গুলা একদম বাচ্চাদের মত।আর হবেই বা না কেন বয়স ও তো একদম কম।১৬ বছরের মেয়ে আর কত বড়।পরিস্থিতি  তাকে এ হাল করেছে।না হয় ডালু তো একটা বাচ্চায়।একটু ভালোবাসা পেয়েই কতটা খুশি।ডালিয়াকে একটু ভালো রাখতে পেরে অরণ্যের মনে যেন একটা শান্তি লাগছে।

এরপর অরণ্য অফিসে গেল।পুরোনো অফিসটা যেন নতুন করে পেল।সেই চেনা হাসপাতাল চেনা ঘর।অনেকটা বদলে গেছে।বদলে গেলেও যেন অরণ্যের কাছে চিরচেনা মনে হচ্ছে।অফিসটা আজ নতুন করে পেয়ে অরণ্য বেশ খুশি হল।আর মনে মনে ডালিয়াকে অণুভব করতে লাগল।কারন এ সব কিছুই হয়েছে ডালিয়ার জন্য।ডালিয়ার জন্যই আজ অরণ্য সব হারিয়ে যাওয়া জিনিস ফিরে পেয়েছে।ডালিয়ার প্রতি ভালোলাগাটা কখন যে অরণ্যের মনে ভালোবাসায় রুপ নিয়েছে অরণ্য বুঝতেই পারে নি।

সব কাজ সেড়ে বিকেল ৩ টায় অরণ্য বাসায় ফিরে দেখল ডালিয়া একদম রেডি হয়ে বসে আছে।অরণ্যের বুঝতে বাকি রইল না ডালিয়া শিশু পার্কে যাওয়ার জন্য অধীর আগ্রহে আছে। ডালিয়া অরণ্যকে দেখার পর বলল

---আপনি এসেছেন।আমি তো সেই কখন থেকে রেডি হয়ে বসে আছি।আপনার নাম্বার ও নাই যে কল দিব।রহমত চাচাও নাম্বার জানে না।

---ওরে আমার ডালুটাকে মনে হয় খুব বেশি অপেক্ষা করিয়ে ফেলেছি।মোবাইলটা দাও দেখি।

ডালিয়া তার ছোট্র ভাঙ্গা মোবাইলটা অরণ্যের কাছে বাড়িয়ে দিল।অরণ্য সেই মোবাইলে অরণ্যের নাম্বারটা অরু লিখে সেভ করে দিল আর বলল

---এই যে নাম্বার সেভ করে দিচ্ছি।এখন খোঁজ নিতে আর সমস্যা হবে না।আর চলেন।তাড়াতাড়ি শিশুপার্কে যায়।

----কিন্তু কি দিয়ে যাবেন।চলেন রিকশা করে যাই।

---একটু দূরে এখান থেকে রিকশা দিয়ে যাওয়া যাবে না।আমরা গাড়ি দিয়ে যাব তারপর আসায় সময় অর্ধেক রাস্তা গাড়ি দিয়ে আসব আর বাকি অর্ধেক রাস্তা রিকশা দিয়ে ওকে।

---আচ্ছা।

অতঃপর দুজন মিলে শিশু পার্কে গেল।অরণ্য খেয়াল করল ডালিয়া শিশু পার্কে গিয়ে বেশ খুশি।বাচ্চাদের মত ঘোড়ায় চড়ছে,বিমানে চড়ছে।কত কি নাই করছে।সত্যিই তো মেয়েটা তো বাচ্চায়।আর অরণ্যকে ডেকে ডেকে বলছে

---আমি একটু ফুলদানিতে উঠব।আমি একটু রেল গাড়িতে উঠব।আপনিও আমার সাথে উঠুন।

অরণ্যও ডালিয়ার সাথে ঐখানে থেকে নিজেকে বেশ বাচ্চায় মনে হতে লাগল।কারন ডালিয়ার বাচ্চাসুলভ আচরণ গুলো যেন অরণ্যের বেশ ভালোই লাগছে।

ঐখানে ঘুরা শেষে এবার বাসায় আসার পালা।অর্ধেক রাস্তা গাড়িতে এসে ডালিয়া আর অরণ্য নেমে গেল।ডালিয়া হুট করে বলে উঠল।

---হলুদ বাতি জ্বলে উঠেছে কি মজা।

অরণ্য বেশ হাসতে লাগল ডালিয়ার  কথা শোনে।আর বলল

---হুম হলুদ বাতি জ্বলে উঠেছে।চল একটু হেঁটে সামনে যেতে হবে।তারপর রিকশা নিতে হবে।

 অরণ্য আর ডালিয়া খানিকটা পথ হেঁটে সামনে গেল।সামনে গিয়ে ডালিয়া যা দেখল নিজের চোখ কেও বিশ্বাস করতে পারছিল না।কারন ডালিয়া দেখল......


উপরে লেখিকার নাম দেয়া আছে, আমি শুধু ফ্রী গল্প promote করি । 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ