অতৃপ্ত আত্না



গল্পের নাম ঃ অতৃপ্ত আত্না

১ম পর্ব

লেখিকা-শারমিন আঁচল নিপা

ইশ আমি পাগল হয়ে যাচ্ছি।সবকিছু যেন দিন দিন আমায় পাগল করে দিচ্ছে।বুঝতে পারছি না আমি কোন দুঃস্বপ্ন দেখছি নাকি কোন সত্য ঘটনা নাকি নিছক আমার মনের ভুল।কোন কিছুই আমার মাথায় আসতেছে না এসব কেন আমার সাথে হচ্ছে। আমার স্বামী আমার কোন কথা বিশ্বাস করছে না।ভাবছে সব আমার মনের ভুল।কিন্তু এত সব ঘটনা কি করে আমার মনের ভুল হয়।মনের ভুল হলে হয়ত একটা দুইটা ঘটনা হবে তাই বলে এত এত ঘটনাকে তো আমি মনের ভুল বলে উরিয়ে দিতে পারি না।তার উপর নতুন নতুন বিয়ে।সব কিছু যেন এলোমেলো লাগছে।মাথাটা পুরা জিম ধরে যাচ্ছে।কোন কিছুর কূল কিনারা পাচ্ছি না।

আমার স্বামী অরণ্যের চাকুরীর সুবাদে আমি পাহাড়লীতে আসি কিছুদিন যাবৎ।হুট করে পোস্টিং  হওয়ায় ঐভাবে ভালো মন্দ বিবেচনা করে বাসা নির্বাচন করতে পারি নি।কোনরকম তারাহুরা করে বাসাটা রাখা।আর সবচেয়ে বড় কথা ঐ এলাকায় এমন কমদামে এত বড় বাসা পাওয়া অনেকটা ভাগ্যের ব্যাপার।বাসাটা এলাকা থেকে একটু দূর হলেও বাসাটা বেশ সুন্দর।বুঝায় যাচ্ছিল বাসাটা বেশ পুরনো।অনেকদিন এখানে কেউ থাকেনা।তবে বাসাটা সাজিয়ে গুছিয়ে নিলে মন্দ হবে না।তার উপর দু তলা একটা বাসা মাত্র ১ হাজার টাকা ভাড়া।পানির দামে বাসাটা পেয়েছি।তাই আমি আর অরণ্য নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে এ বাসাটায় উঠব চিন্তা করলাম।

রিতীমত আমার সব গুছগাছ করে বাসাটায় উঠি।বাসাটায় প্রথমদিন ঢুকে বেশ অবাক হয়েছিলাম।কারন বাসাটার ভিতরটা অনেক অগুছালো আর ধূলি জমাট বাঁধা থাকলেও দুতলার  একটা রূম বেশ পরিপাটি ভাবে সাজানো ছিল।আমি রুমটা দেখে বেশ বিস্মিত হলাম।বাসাটায় এমন পরিপাটি রুম কিভাবে আসল।বাসার মালিক থাকে অন্যদেশে।আর বাসার কেয়ারটেকার বলল এ বাসায় অনেকদিন কেউ থাকে না।তাই সবকিছু গুছিয়ে পরিষ্কার করে নিতে হবে।তাহলে এত পরিপাটি রুম কিভাবে আসল।কিছুটা অবাক হয়ে রুমটায় প্রবেশ করে আরও অবাক হলাম।কারন দেখলাম রুমটার ভিতরে একটা ফুলদানীতে তাজা ফুল রাখা।আর  সে ফুলের মুহুমুহু গন্ধ যেন সারা ঘরে বিরাজ করছে।আমার কাছে ব্যাপারটা কেমন জানি লাগছিল।কিছুটা অবাক হয়ে পুরো রুমটা ঘুরে দেখলাম মনে হল এ কোন রাজ কন্যার ঘর।ভাবতে লাগলাম এখানে তাজা ফুল কে আনল।আর এত সুন্দর করেই বা কে গুছালো।

রুমটা থেকে বের হয়েআমি কিছুটা বিস্ময় নিয়ে অরণ্যকে ডাকতে গেলাম

~অরণ্য দেখে যাও।

অরণ্য কিছুটা বিরক্তির স্বরে বলল

~দেখছ তো আমি মাল পত্র নামাচ্ছি।এখন ডাকছ কেন?একটু পর আসছি।

আমারও কিছুটা অরণ্যের উপর রাগ হল।কারন আমি তো আর অকারণে ওকে ডাকি নি।ওর এরকম ব্যাবহার মাঝে মাঝেই আমাকে কষ্ট দেয়।তাই রাগী কন্ঠ নিয়ে ক্ষুব্দ হয়ে বললাম

~তুমি আসবা কিনা বল।এখানে এসে একটু দেখে যাও।

অরণ্য এবার বিরক্ত মাখা মুখ নিয়ে আমার কাছে আসল। আর বলল

~হ্যা বল কি হয়েছে।এত বার ডাকার কি আছে।

~আরে তুমি একটু এদিকে আস আর দেখ সারা বাড়ি অগুছালো থাকলেও এ রূমটা কত সুন্দর করে গুছানো।কত পরিপাটি করে সাজানো।আর দেখ ফুলের গন্ধ যেন চারদিক মুহুমুহু করছে।আমার কেন জানি না এ রুমটা দেখে বেশ অবাক লাগল।কারন এখানে তো কেউ থাকে না অনেকদিন যাবত, তাহলে রুমটার এত সুন্দর করে কে গুছালো।

অরণ্য রুমটার দিকে তাকিয়ে আমার দিকে বেশ রাগী চোখ নিয়েই তাকাল।এতটা রাগ অরণ্যকে আমি আগে করতে দেখি নি।আমিও বুঝলাম না অরণ্য কেন এত রাগী চোখ নিয়ে তাকাল।আমি কিছুটা আশ্চর্য হয়ে অরণ্যকে জিজ্ঞেস  করলাম

~ কি ব্যাপার কি হয়েছে?এভাবে তাকিয়ে আছ কেন।আমি কি করেছি?এত রাগ দেখানোর মানে কি?

অরণ্য বেশ বিরক্ত হয়ে আমার কথার জবাব দিল

~তুমি কি এ টাইমে আমার সাথে মশকরা শুরু করছ।কত কাজ বাকি আর এখন আছ তুমি তোমার মশকরা নিয়ে।মেজাজটায় গরম করে দিতেছ তুমি আমার।

অরণ্যের কথা গুলো শুনে এর মানে ঠিক আমি বুঝতে পারছিলাম না।আমি কি এমন মজা করলাম।এতে মজারেই বা কি দেখল।আমি চটে গিয়ে উত্তর দিলাম

~কি এমন মজা করলাম তোমার সাথে।তুমি এভাবে রেগে গেলে যে?

~রাগব না তো হাসব।রুমটায় তাকিয়ে দেখ তাহলেই বুঝবা।আর আমি তো জানি তুমি ইচ্ছা করেই এমন মজাটা করছ।আমাকে না রাগালে তোমার ভালো লাগে না তাই তো।সবসময় ফাজলামো কর।

অরণ্যের কথা শোনে বেশ অবাক হয়ে আমি রুমটার দিকে তাকিয়ে যা দেখলাম নিজের চোখকেও বিশ্বাস করতে পারছিলাম না।কারন আমি দেখলাম রুমটা অন্য রুমের মতই ধূলোবালিতে লুটোপুটো খাচ্ছে।আমার মাথায় কাজ করছে না এটা কি করে হল।আমি স্পষ্ট কিছুক্ষন আগে দেখলাম রুমটা সাজানো গুছানে আর এখন এমন কিভাবে হল।বেশ অবাক হয়ে অরণ্যের দিকে ফিরলাম খেয়াল করলাম অরণ্য নীচে চলে গেছে।বুঝতে পারলাম অরণ্য বেশ রেগে গেছে।কিন্তু আমার মাথায় এটাই আসছে না রুমটা কিভাবে বদলে গেল।রূমটা তো বেশ সাজানো গুছানো ছিল।তাহলে এ রুমের এ অবস্থা কেন হল।হতে পারে আমার মনের ভুল।তখন ব্যাপারটা এত পাত্তা না দিয়েই নীচে গেলাম।খেয়াল করলাম অরণ্য এর মধ্যে সব মালপত্র গাড়ি থেকে নামিয়ে ফেলেছে।তারপর আমি আর অরন্য বাড়ি পরিষ্কারের কাজে লেগে গেলাম।বাড়িটা বেশ ময়লা মাখা ছিল।বুঝায় যাচ্ছে বাড়িটায় অনেকদিন কেউ থাকেনি।বাড়ির মেজেটা খেয়াল করলাম দামি মার্বেল পাথর দিয়ে করা।বাড়ির দেয়ালটাও মার্বেল পাথর দিয়ে করা।কিছুটা অবাক হয়ে গেলাম কারন এত সুন্দর বাড়িটা এভাবে ফেলে রাখার মানে বুঝলাম না।

ধূর আমিই বা এসব ভাবছি কেন?এসব ভেবে আমার লাভটায় কি?বাড়ির মালিকের টাকা আছে ফেলে রেখেছে আমার তাতে কি।আমি এত সস্তায় বাড়ি ভাড়া পেয়েছি এটাই অনেক।বাড়িটা পরিষ্কার করার পর বাড়িটা একদম চকচক করছিল।মনেই হচ্ছে না এ বাড়িটায় কেউ অনেকদিন থাকে নি।মনে হচ্ছে একদম নতুন একটা বাড়ি।

পরিষ্কার করার পর বাড়িটা সুন্দর করে গুছাতে লাগলাম।ঠিক করলাম ঐ রুমটায় থাকব যে রুমটা নিয়ে আমার অরণ্যে মধ্যে একটু রাগারাগি হল।তাই ঠিক করলাম ঐ রুমটাতেই থাকব।আর ঐ রূমটা অন্যান্য রুম থেকে একটু বড়।আর দক্ষিণ দিকে একটা জানালা আছে ঐ জানালা দিয়ে পিছনের বাগানটা দেখা যায় আর হালকা বাতাস আসে যা মন ছুয়ে যায়।তাই ঐ রুমটাতেই আমরা আমাদের জিনিস পত্র দিয়ে মন মত গুছালাম।

এদিকে ঘর গুছাতে গুছাতে অনেকটা রাত হয়ে গেল।দুজনেই বেশ ক্লান্ত।কিছু একটা খাওয়া দরকার।অরন্য বলল

~আমি বাইরে থেকে কিছু একটা নিয়ে আসছি।তুমি এখানেই থাক।

আমার কেন জানি না একা থাকতে মন চাচ্ছিল না।তার উপর সকালের ঐ কাহিনীর পর একটু ভয় ভয় ও লাগছিল।তাই আমিও বায়না ধরে বসে রইলাম আর বললাম

~আমিও যাব তোমার সাথে।আমার একা একা ভয় লাগবে।এত বড় বাড়ি একা একা থাকব কিভাবে?

অরণ্য এবারও কিছুটা রাগ হল।আর বলল

~এত রাতে বের হব তোমাকে নিয়ে পাগল তুমি।এলাকায় নতুন কাউকে চিনি না।কি থেকে কি হয়ে যায় বলা যায় না।তুমি থাক আমি গিয়ে দেখছি কি আনা যায় খাওয়ার জন্য।আর ভয় কিসের দরজাটা নক করে বসে থাক।আর আমি আসলে দরজা খুলবা।আমি যতক্ষন পর্যন্ত না আসব তুৃমি আর যেই আসুক দরজা খুলবা না।

আমিও এক চিলতে অভিমান নিয়ে মুখ ভার করে উত্তর দিলাম

~আচ্ছা যাও।তুমি যা বলবা তাই হবে।

অরন্য বেশ বুঝতেই পারল আমার একটু অভিমান হয়েছে।যাবার আগে অরন্য হুট করে একটা গালে চুমু দিয়ে রুম থেকে বের হয়ে গেল।আর চিল্লায়ে চিল্লায়ে বলতে লাগল 

~অনা দরজাটা লাগিয়ে দাও।সাবধানে থেক।আমি ১০ মিনিটের মধ্যেই ফিরছি।

অরণ্যের এসব ছেলে মানুষীর জন্য আমি ওর উপর রাগ করে থাকতে পারি না।যতই রাগ করি না কেন দিনশেষে তার এ পাগলামির কাছে আমি হেরে যায়।আমিও একফুটো হাসি নিয়ে বললাম

~এখনি লাগাচ্ছি।যাও তুমি।

অরণ্য যাওয়ার পর দরজাটা লাগাতে গেলাম।গিয়ে দেখলাম দরজা লাগানো।বুঝতে পারলাম না দরজাটা কে লাগিয়েছে।এসব কি হচ্ছে আমার সাথে।হুট করে খেয়াল করলাম একটা ছায়া দরজার সামনে ভাসছে।পিছনে ফিরে দেখলাম কেউ নেই।আবার দরজার দিকে তাকিয়ে আমি যা দেখলাম আমার মাথাটা যেন ঘুরে গেল। খেয়াল করলাম এবার দুইটা ছায়া একটা ছোট আরেকটা বড়।আমি আবারও পিছনে ফিরলাম খেয়াল করলাম কেউ নেই।এবার অনেকটা ভয় পেয়ে গেলাম।মনে হচ্ছে আমি কোন রহস্যের ধাধায় পড়ে গেছি।মাথাটাও খুব ব্যাথা করছে।এদিকে দরজা কে লাগালো এ চিন্তায় যেন মাথাটা আরও ব্যাথা করছে।হয়ত মাথা ব্যাথার কারনে এরকম ছায়া দেখছি।এক কাপ চা খেতে পারলে ভালো হত।

মনে মনে যা ভাবলাম তাই করলাম।রান্না ঘরে গিয়ে চা বানানোর জন্য পানি বসালাম।ভাবতে লাগলাম অরণ্য কখন আসবে।খেয়াল করলাম রান্না ঘরের দরজাটা দিয়ে হালকা বাতাস বইছে।বাতাসটা বেশ ভালো লাগছে।মনে হচ্ছে বাতাসটায় অসম্ভব একটা মায়া আছে।বাতাসে একটা ফুলের গন্ধ ভেসে আসছে।হয়ত হাস্নাহেনা ফুল হবে।গন্ধটা যেন তীব্র হতে লাগল।বুঝা যাচ্ছে বাতাসের বেগ যত বাড়ছে গন্ধটা যেন আরও তীব্র হচ্ছে।হালকা হলকা ফুটা ফুটা বৃষ্টি পড়ছে।বৃষ্টি টা দেখেই আমার আর অরণ্যের প্রথম পরিচয়ের কথা মনে পড়ে গেল।

ঐদিন ও ঠিক এরকম হালকা বৃষ্টি পড়ছিল।চারদিকে হুট করে অনেক বাতাস বইছিল।আমার মা, বাবা ওর সাথে আলাদা করে দেখা করার কথা বলল।কারন আমাদের বিয়েটা পারিবারিক মতেই হয়েছিল।কিন্তু আমার পরিবার আমাকে বেশ বুঝত।তাই পাকা কথা দেওয়ার আগে আমার মা বলল

~ অনা একবার গিয়ে অরণ্যের সাথে কথা বলে আয় দেখ ছেলেটা কেমন?যদি ভালো হয় তাহলে পাকা কথা দিব।

আমারও বেশ লজ্জা লাগছিল মায়ের কথা শোনে।যদিও তাকে দেখার জন্য মনটা আনচান করছিল।কারন প্রথম দেখায় বেশ ভালো লেগেছিল অরন্যকে।এবার হয়ত দেখা হলে বুঝা যাবে ও কেমন।কোনভবেই দেখা হওয়ার সুযোগটা হাত ছাড়া করলাম না।মাকে লজ্জায় লাল মুখ হয়ে জবাব দিলাম

~আচ্ছা মা তোমরা যা বল তাই হবে।

মা ও বলল রাতে আমাকে জানাবে ওদের সাথে কথা বলে।যথারিতী মা ওদের সাথে কথা বলে আমার রুমে এসে বলল

~কালকে অরন্য দেখা করতে চাচ্ছে।তোরাই ঠিক করে নিস কোথায় দেখা করবি।এটা অরণ্যের নাম্বার তোকে ফোন দিতে বলেছে।

আমি মায়ের কথা শোনে একটু বিরক্ত হয়ে বললাম

~মা আমি কেন কল দিব।ওনাকে বলতা কল দিতে।আমি কল দিলে কি না কি ভাববে।মেয়ে হয়ে ছেলে মানুষকে কল দিব।কি যে কর বুঝি না।

মা এবার মুচকি একটা হাসি দিয়ে বলল

~আরে বোকা মেয়ে ছেলেটাই বলল তোকে কল দিতে।ও কল দিলে তুই যদি কিছু মনে করিস এজন্য।

আমি তখন একটু লজ্জা পেয়ে বললাম।

~আচ্ছা একটু পর কল দিব।

মা ও হেসে চলে গেল।আমি ভাবতে লাগলাম কল দিয়ে কি বলব।সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতেই কল দিয়ে বসলাম।কল ধরার পর একটু কাঁপা স্বর নিয়ে বললাম

~হ্যালো।অরন্য সাহেব বলছেন।

~হুম।আপনি অনন্যা তাই তো।

~হ্যা অনন্যা।আপনি জানলেন কিভাবে?

~নাম্বারটা সেভ করে রেখেছিলাম।

~তাহলে আপনিই তো কল দিতে পারতেন।

~আমি একটু চুপচাপ তো তাই সাহস পাচ্ছিলাম না কল দিতে।কি থেকে কি ভেবে বসেন এ ভেবে।তার উপর এর আগে মেয়েদের সাথে তেমন কথা বলে নি।মোটকথা আপনাকে কল দিলে কি মনে করেন এ ভেবে সাহস পাচ্ছিলাম না।

~আরে কি মনে করব।আচ্ছা যাই হোক মা বলেছিল আপনার সাথে একটু দেখা করে পরিচিত হয়ে নেওয়ার জন্য।আপনি কি চান?

~শুধু আপনার মা বলছে বলে দেখা করবেন আপনার দেখা করার ইচ্ছা নাই?

আমি তখন ওর কথা শোনে বেশ লজ্জা পাচ্ছিলাম।একটু লজ্জা লজ্জা মুখে আর লাজুক স্বরে জাবাব দিলাম।

~আপনার কি মনে হয়?আপনার ইচ্ছা নাই দেখা করতে।

তখন ও একটা অট্ট হাসি দিয়ে বলল

~এর জন্যই তো ওয়েট করতেছি।

আমিও তখন বেশ লজ্জায় জবাব দিলাম

~হুম। 

ও তখন বলেছিল

~আচ্ছা আমরা ধানমন্ডি  লেকে দেখা করি।তাহলে একটু ঘুরে কথা বলতে পারব।

আমিও রাজি হয়ে গেলাম।পরদিন হালকা একটু সেজে দেখা  করতে গেলাম তখন। হুট করে এমন হালকা হালকা বৃষ্টি শুরু।আমি এ বৃষ্টিতে ভিজে ওকে খুজছিলাম হঠাৎ  খেয়াল করলাম ও এক থোকমা ফুল নিয়ে দাঁড়িয়ে  আছে।আমাকে দেখে দৌঁড়ে আমার কাছে আসল।আর বলল

~বৃষ্টিতে তো ভালোই ভিজে গেছেন।চলেন ঐদিকে গিয়ে বসি।হুট করে এভাবে বৃষ্টি চলে আসবে বুঝতে পারি নি।

আমিও বেশ লজ্জায় উত্তর দিলাম

~আরে কিছু হয়নি আপনি এত অস্থির হবেন না।

অরন্য মুচকি হাসি দিয়ে বলল

~আচ্ছা অস্থির হব না।চলেন ঐ জায়গাটায় বসি।বৃষ্টি কমলে না হয় একটি হাটাহাটি করব

আমিও সম্মতিসূচক মাথা নাড়িয়ে বললা

~আচ্ছা ঠিক আছে।

অরন্য আর আমি গিয়ে একটা জায়গায় বসলাম।অরন্য কাপা কাপা হাতে আমার দিকে ফুল গুলো বাড়িয়ে দিল।আমি একটু অবাক হয়ে জিজ্ঞেস  করলাম

~আপনি এভাবে কাপছেন।

~জীবনে কোন মেয়েকে ফুল দেয় নি কখনও তাই।

আমি এক মুঠো হাসি দিয়ে ফুল গুলো নিয়ে বললাম

~ওহ আচ্ছা তাই বলুন।

এরপর দুজনে কথা বলা শেষ হল। আর একে অপরকে বেশ পছন্দ করে ফেললাম।আর আমাদের বিয়ের পাকা কথাও হয়ে গেল।এর কিছুদিন পরেই ওর সাথে আমার বিয়ে হয়ে হল।

আজকে হঠাৎ  বাইরের এই বৃষ্টি  দেখে সেদিনে কথা মনে হয়ে গেল।হুট করে খেয়াল করলাম একটা আলো এসে রান্না ঘরে পড়ছে।আমি বেশ অবাক হলাম এ আলো কোথায় থেকে আসল।কারন আাকাশে চাঁদ নেই যে, চাঁদের আলো আসবে।কিছুটা অবাক হয়ে খেয়াল করলাম আলোর রেখাটা চলে গেল আর চারদিক অন্ধকার হয়ে গেল।কারেন্ট ও চলে গেল।হাতের কাছে কিছু পাচ্ছিলাম না যে আমি মোম জ্বালাবো।খেয়াল করলাম চুলাও নিভে গেছে।পুরো বাড়িটা অন্ধকারে নিকষ কালো হয়ে গেছে।বাইরে থেকে ভেসে আসা ফুলের গন্ধটাও তীব্র হতে লাগল।গন্ধটা যেন মাথায় ঝিম ধরে বসল।আমি দিয়াশলাই খুজছিলাম আগুন জ্বালাবার জন্য কিন্তু কিছুই পাচ্ছিলাম না।কি করব বুঝে উঠতে পারছিলাম না।

আচমকা একটা কন্নার আওয়াজ শোনলাম।মনে হচ্ছে কেউ কাঁদছে।আমি ভয়ে মুচরে গেলাম।এ বাড়িতে তো আমি ছাড়া আর কেউ নেই।আর আশে পাশের বাড়ি গুলাও বেশ দূরে তাহলে ক এত জোরে কাঁদবে যে এখানে শোনা যাবে।প্রশ্নগুলো যেন মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে।আর এদিকে অরন্যও নেই।কি করব বুঝতে পারছিলাম না।কান্নাটা কোথা থেকে আসছে বুঝতে পারছিলাম না।অন্ধকারে কিছুই দেখতে পারছিলাম না।কান্নাটার শব্দটা আরও বাড়তে লাগল।আমি হুট করে বলতে চাচ্ছিলাম কে কাঁদতেছেন।কিন্তু আমার মুখ দিয়ে কোন কথায় বের হচ্ছিল না।অনেকবার চেষ্টা করার পর ও কোন কথা বলতে পারছিলাম না।গা হাত, পা একদম ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছিল মনে হচ্ছে।গা,হাত পা তে কোন শক্তি পাচ্ছিলাম না।মাথার ব্যাথাটাও তীব্র হতে লাগল সাথে ফুলের গন্ধটাও তার সাথে কান্নার আওয়াজটা যেন আরও শ্রবন কটু হতে লাগল।এবার মনে হচ্ছে আমার দমটাও আটকে যাচ্ছে।প্রচন্ড শ্বাসকষ্ট  হচ্ছে আমার।গলা দিয়া কোন আওয়াজ বের হচ্ছিল।এবার কান্নার শব্দের সাথে নুপুরের শব্দও আসতে লাগল।এলোমেলো কিছু কথার শব্দ ও শোনতে পাচ্ছিলাম।কথা গুলো এমন ছিল

" মা আমি বেরুলাম আসতে দেরি হবে।মা আমি এটা খাব না।মা সবসময় কেন এত বিরক্ত কর।মা আরেকটু ঘুমাতে দাও।বাবা আমার জন্য আইসক্রিম নিয়ে আসবা কিন্তু।"

কথাগুলোও বারবার রিপিট হতে লাগল।সে সাথে কন্নার আওয়াজ টাও তীব্র হতে লাগল।সাথে একটা বাচ্চাও কাঁদতে লাগল।চারপাশের ফুলের গন্ধে আমার মাথাটায় বেশ ঝিম ধরে গেল।নিমিষেই আমার চোখটা বন্ধ হয়ে গেল।আচমকা মাথায় একটা আঘাত অণুভব করতে লাগলাম।আর হঠাৎ ..... 

গল্পের নাম :  অতৃপ্ত আত্না

পর্ব  : 02 

লেখিকা-শারমিন আঁচল নিপা

আমি হঠাৎ  পরে গেলাম।কিছুক্ষন পর খেয়াল করলাম অরন্য আমার চোখে পানির ঝাপটা দিচ্ছে আর বিমর্ষ কন্ঠে অনা অনা বলে ডাকছে।বুঝা যাচ্ছে আমার এ অবস্থার জন্য বেশ চিন্তায় পড়ে গিয়েছিল।আমি পানির ঝাপটা পেয়ে উঠলাম।উঠে খেয়াল করাল আমি ড্রয়িং রুমে পড়ে আছি আর অরন্য আমার অবস্থা দেখে বলতেছে

~অনা কি হয়েছিল তোমার? তুমি এভাবে পড়ে ছিলে যে।তোমাকে তো বলেছিলাম দরজা লাগানোর জন্য তাহলে দরজা না লাগিয়ে কি এমন হল এখানে এভাবে পড়ে আছ।

অরন্যের কথা শোনে আমি বেশ চমকে গেলাম।কারন আমি তো দরজা লাগাতেই নীচে নেমেছিলাম আর তখন তো দেখেছিলাম দরজাটা কেউ একজন লাগিয়েছিল।আর আমি তো রান্না ঘরে ছিলাম এখানে আসলাম কি করে।আমি তো রান্না ঘরে চা বসিয়েছলাম।কিছুটা কম্পিত হয়ে অরন্যের কথার জবাব না দিয়ে দৌঁড়ে রান্না ঘরে গেলাম।আর খেয়াল করলাম,রান্না ঘরে কিছু নেই।তার মানে এতক্ষন আমি কি দেখছিলাম।তাহলে কি আমি স্বপ্ন দেখছিলাম।কোনকিছু যেন আমার মাথায় আসছে না।অরন্য ও আমার পিছন পিছন রান্না ঘরে এসে আমাকে বলল

~কি ব্যাপার অনা কি হয়েছে?তুমি রান্না ঘরে আসলে কেন?কি হয়েছিল তোমার?কথা বলতেছ না কেন?

অরন্যের কথা শোনে কিছুক্ষন ভেবে চুপ হয়ে রইলাম।তারপর মনে মনে ভাবলাম অরন্যকে এ ঘটনা বলা যাবে না।সকালে একবার এসব নিয়ে ও রাগ করছে।এখন আবার এ ঘটনা বললে ও মনে করবে আমি পাগল হয়ে গেছি।আর এটা আমার মনের ভুল ও হতে পারে।হতে পারে মাথার ব্যাথায় আমি সেন্সলেস হয়ে গেছি আরএসব হাবিজাবি দেখছি।তাই একটু স্থির হয়ে শান্ত কন্ঠে অরন্যকে জাবাব দিলাম

~নাহ তেমন কিছু না।সারাদিন অনেক পরিশ্রম গেছে তাই শরীরটা বেশ খারাপ লাগছিল।মাথাটা অনেক ব্যাথা করছিল।মাথার ব্যাথায় কি হয়েছে বলতে পারব না।

অরন্য এবার একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে আমাকে বলল

~কতবার বলেছি আজকেই সবটা পরিষ্কার করতে হবে না।আমি আস্তে ধীরে করব।কে শোনে কার কথা সারা বাড়ি একদিনে পরিষ্কার করছ।মাথা কি এমনি ব্যাথা করছে নাকি।আমার কথা তো শোনতে চাও না।তার উপর সকাল থেকে তেমন কিছু খাও নি।সবসময় একরোখামি কর।একরোখামি ভাবটা তোমার আর গেল না।

আমিও এবার একটা মুচকি হাসি দিয়ে কয়েকদিনের পুরনো ডায়লগটা দিলাম।কারন  বিয়ের পর থেকে কিছু নিয়ে জামেলা হলে আমি এ ডায়লগটাই দেই। ডায়লগটা হল

"আমি এমনি মানতে পারলে সদাই না হয় বিদায়।"

অরন্য ডায়লগটা শোনে একটু হেসে বলল 

~চল এবার উপরে চল।বাইরে গিয়ে তেমন কিছু পেলাম না।কারন এখানে অনেক আগেই সব দোকানপাট বন্ধ করে দেয়।ঢাকার মত বেশি রাত পর্যন্ত দোকান খোলা থাকে না।সারা বাজার খোঁজে একটা হোটেল খোলা পেলাম।আর দেখলাম হালকা রুটি আর সবজি আছে।এটাই নিয়ে আসলাম।চল উপরে চল এটা একটু খেয়ে মাথা ব্যাথার ঔষধ খেয়ে নিও।

হুম..... অরন্য যা বলেছে ঠিক বলেছে।হয়ত মাথা ব্যাথার কারনে এসব আবল তাবল দেখেছি।মাথা ব্যাথাটাও বেড়েছে।কিছু একটা খেয়ে ঔষধ খেলে ঠিক হয়ে যাবে।আমিও অরন্যের কথায় সম্মতিসূচক মাথা নাড়িয়ে বললাম

~চল উপরে চল।

আমি আর অরন্য উপরে যেতে লাগলাম।কিন্তু কেন  জানি একটা সিড়ি পার হওয়ার সময় নুপুরের হালকা আওয়াজ কানে আসল।পর পর সিড়ি পার হতে লাগলাম আর এমন হালকা আওয়াজ পেতে লাগলাম।অরন্যকে জিজ্ঞেস  করলাম

~আচ্ছা অরন্য কোন আওয়াজ পাচ্ছ?

~কিসের আওয়াজ?

~এই তো নুপুরের আওয়াজ।

~কই না তো।কিন্তু কেন?

~ নাহ এমনি।বাদা দাও।রুমে চল

এরপর দুজন রূমে গেলাম।অরন্য আমার দিকে খাবার বাড়িয়ে দিয়ে বলল

~ এই নাও খেয়ে নাও।শুকনো রুটি আর ভাজি।আর কিছু পেলাম না।আপাদত এটা খেয়েই রাত পার করতে হবে।

~আরে এতেই হয়ে যাবে।তুমিও খাও।ঘুমাতে হবে। না ঘুমালে মাথা ব্যাথা কমবে না।

~হ্যা খেয়ে ঘুমাও।

খাওয়া দাওয়া শেষ করে ঘুমাতে গেলাম দুজনে।কিন্তু কোনভাবেই ঘুম আসছে না আমার।কেন জানি না বারবার সকালের কাহিনীটা মনে পড়ছে।একটু আগে ঘটে যাওয়া কাহিনীটা মনে পড়ছে,কেন জানি না।নিজের অজান্তেই সব গুলিয়ে ফেলছি।এদিকে মাথা ব্যাথাও করছে অনেক কিন্তু ঘুমাতে পারছি না।বারবার মনে হচ্ছে আমি তো রান্না ঘরে চা বসিয়েছিলাম।তাহলে চুলার উপর থেকে চায়ের পাতিলটা কোথায় গেল।যতই ভাবছি ততই যেন মাথা গুলাচ্ছে।আর হালকা ভয় ও লাগছে।অরন্যের দিকে খেয়াল করে দেখলাম সে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে আছে।হালকা একটু জড়িয়ে ধরলাম ওকে আর ও  ও আমাকে ধরল।ও বুঝতে পারল আমার ঘুম হচ্ছে না।আমি এখনও ঘুমায় নি।তাই ঘুম ঘুম কন্ঠে আমাকে বলল 

~অনা কি হল।এখনও ঘুমাও নি?

~ঘুম আসছে না অরন্য।মাথাটা বেশি ব্যাথা করছে

~চোখটা বন্ধ করে শুয়ে থাক।না ঘুমালে ব্যাথা কমবে না।চুপচাপ চোখ বন্ধ করে শুয়ে থাক।

আমিও অরন্যের কথা মত জোর করেই চোখটা বন্ধ করে রাখলাম।আস্তে আস্তে আমার ঘুম ঘুম ভাব আসল।ঘুমিয়েও গেলাম। হঠাৎ  করে একটা শব্দ কানে আসতে লাগল।কিছু কথা কানে বাজতে লাগল।যেটা আমি ঐসময় শুনেছিলাম।তার সাথে আরও কিছু এলোমেলো কথা আসতে লাগল।কথা গুলো হল

"বাবা আমার জন্য আইসক্রিম এন।মা আমি বেরুলাম।বাবা আমার ঘড়িটা কোথায়।মা আমাকে ১০০ টাকা দাও।আজকে আসতে দেড়ি হবে।আমি গেলাম।আরে মা এখন খাব না।"

কথাগুলোর সাথে হুট করে বিকট কান্নার শব্দ শোনলাম।আর আমার ঘুম ভেঙে  গেল।ঘুম থেকে উঠে খেয়াল করলাম কোন আওয়াজ আসছেনা।হয়ত আমি বেশিই ভেবে ফেলছি তাই স্বপ্ন দেখছিলাম।নাহ আর এত ভাবলে চলবে না।আবার জোর করে ঘুমালাম।ঘুম থেকে উঠে দেখলাম ৭ টা বাজে।আর অরন্য এখনও পরে পরে ঘুমাচ্ছে। অফিস না থাকলে বেলা করে ঘুমানোটা তার একটা বদঅভ্যাস।আর আমারও তার ঘুম টা নষ্ট কারার একটা বদঅভ্যাস আছে।তাই ডাকতে লাগলাম আর বলতে লাগলাম

~অরন্য ঘরে তো কিছু নেই কি রান্না করব।যাও কিছু নিয়া আস।

অরন্য ঘুম ঘুম ভাব নিয়ে বলল

~অনা যা আছে তা দিয়েই চালিয়ে দাও আর একটু চা কর।এখন বিরক্ত কর না ঘুম পাচ্ছে খুব।

আমিও অরন্যের কথা শোনে আর ওকে বিরক্ত করলাম না কারন গতকাল সারাদিন ও আমার থেকে বেশি কষ্ট করেছে।তাই ভাবলাম আটা আছে রুটি বানায় আর টুকিটাকি সবজি ছিল ঐগুলাও নিয়ে এসেছিলাম,ঐ গুলা দিয়ে সবজি করি আর ডাল ভুনা করি।এ দিয়ে কোনরকমে সকাল টা পার করতে পারলেই হল।যেই ভাবনা সেই কাজ।দৌঁড়ে রান্না ঘরে গেলাম।রান্না ঘরে গিয়ে যা দেখলাম,আমার চোখ যেন মাথায় উঠে গেল।খেয়াল করলাম চায়ের পাতিল টা চুলার উপরে হালকা পুড়ে রয়েছে।বুঝায় যাচ্ছে পানি গরম হতে হতে এ অবস্থা হয়েছে।কিন্তু আমি তো রাতে খেয়াল করলাম তখন তো এ পাতিল পায় নি।তখন এ পাতিল কোথায় গিয়েছিল।মাথায় কিছুই কাজ করছেনা।এ কোন ভ্রমে পড়লাম আমি।ধুর এসব নিয়ে আর ভাবব না।না ভেবেই রুটি, ডাল ভুনা আর সবজি করে অরন্যকে ডাকতে লাগলাম।হঠাৎ  খেয়াল করলাম অরন্য চেয়ারে বসা।আমি কিছুটা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস  করলাম 

~তুমি এত তাড়াতাড়ি এখানে আসলে কিভাবে?

অরন্য মুচকি হাসি দিল।আমি অরন্যকে খাবার দেওয়ার জন্য প্লেট টা নিয়ে দিতে যাব ঠিক ঐ সময় খেয়াল করলাম অরন্য সিঁড়ি দিয়ে নামছে আর বলতেছে এত ডাকাডাকির কি আছে আসতে তো একটু লেট হয় তাই না।আমি কিছুটা অবাক হয়ে গেলাম।কারন একটু আগেই তো অরন্য চেয়ারে বসা ছিল।তাহলে ঐখানে গেল কিভাবে?আর চেয়ারে কে?চেয়ারে তাকিয়ে দেখলাম কেউ নেই।এ কি হচ্ছে আমার সাথে।যদি অরন্যকে এটা বলি ও বলবে এ সব কিছুই হচ্ছে আমার হরর মোভি দেখার পরিনাম।কারন আমার হরর মোভি বেশ ভালো লাগে।সারাদিন হরর মোভি দেখেই সময় পার করি।এসব ভাবতে ভাবতেই অরন্য চলে আসল।আর বলল

~মেডাম তো দেখি ভালোই রান্না করেছেন।

আর এর পরে অরন্য কি বলবে তা আমি জানি।বিয়ের ৮ মাসে অরন্যের এসব কথা শোনতে শোনতে আমার এখন মুখস্ত হয়ে গেছে।আর আমার ওর কথা শোনতে শোনতে বরিং লাগলেও বেশ ইন্টারেস্ট  নিয়ে শোনতে হয়, না হয় রাগ করে বসে।তার বলাটা শুরু হয়ে গেল।সে বলল

~শোন আমি যখন ঢাকা ভার্সিটি এডমিট হই।তখন প্রথম প্রথম চিন্তা করতাম আমি একটা শিক্ষিত মেয়ে বিয়ে করব।কিন্তু হলে থেকে যখন হলের খাবার খাওয়া শুরু করি।তখন থেকে আমার চিন্তা ভাবনা পাল্টে গেল।চিন্তা করলাম।আমি একটা রান্না পারে এমন মেয়ে বিয়ে করব।এর মধ্যে পড়াশোনা শেষ করলাম।চাকুরী নিলাম।মা,বাবাও তোমাকে পছন্দ করল।আমাকে ছবি দেখাল তোমার। ছবিটা দেখে বেশ ভালোই লেগেছিল।কিন্তু সুন্দর দেখলে তো চলবে না রান্না জানতে হবে মেয়ের।তাই মাকে লাজুক কন্ঠি জিজ্ঞেস  করেছিলাম মেয়ে কি রান্না পারে।

মা একটা অট্ট হাসি দিয়ে বলেছিল মেয়ে রান্না পারে।আমি তখনেই সিদ্ধান্ত  নিয়ে নিলাম এ মেয়ে ছাড়া আর কাউকে বিয়ে করব না।এরপর তো তোমাকে বিয়ে করেই নিলাম।আমি কিন্তু তোমার রূপ থেকে বিয়ে করেনি।তুমি রান্না পার তাই বিয়ে করেছি।

আমাকেও এবার চিরাচায়িত অভ্যাসের মত একটা হাসি দিয়ে ওকে বলতে হবে

~হুম বুঝেছি,বুঝেছি।আমি জানি আপনি আমার রূপ না গুন দেখে বিয়ে করেছেন।

এরমধ্যে কথাটা আমি অরন্যকে বলেও ফেললাম।তারপট দুজন খাওয়া শেষ করে ভাবলাম একটু বাহিরে যাব কিছু কিনতে।অরন্য বলল

~অনা কি কি লাগবে একটু লিস্ট কর।আর রেডি হও বাইরে গিয়ে নিয়ে আসব।

আমিও অরন্যের কথা মত কাজ করলাম।দুজন বের হলাম।কিন্তু বের হওয়ার সময় খেয়াল করলাম একটা কালো রেখা আমার সাথে যাচ্ছে।আমি কিছুটা অবাক হয়ে রেখাটা খেয়াল করলাম।দেখলাম রেখাটা আকাবাকা হচ্ছে।আমি আরও বেশ অবাক হলাম এটা দেখে যে রেখাটা একটা মানুষের ছায়ার মত দেখাচ্ছে তাই।এর মধ্যে আবার সেই কথাগুলো কানে ভাসতে লাগল।মাথাটাও বেশ জিমজিম করতে লাগল।মনে হচ্ছে আমার মধ্যে আমি নেই।হুট করে অরন্যের ডাকে আমার ঘোর কাটল।অরন্য বলল

~অনা কি হল হঠাৎ  করে এভাবে দাঁড়িয়ে  কি ভাবছ?কখন থেকে ডাকছি কোন সাড়া দিচ্ছ না যে।

আমিও বেশ অবাক হলাম সত্যিই তো এমন কেন করলাম।মাথাটাও ব্যাথা করছে হালকা।কিন্তু একটু আগে যা দেখলাম তা কি অরন্যকে বলব কি না ভাবতেছিলাম।তারপর ভাবলাম না বলাই ভালো।হয়ত এসব নিয়ে বেশি ভাবছি তাই এমন হচ্ছে।কিছুটা হালকা নিঃশ্বাস ফেলে অরন্যকে বললাম

~আরে তেমন কিছু না।মাথাটা একটু জিম ধরে গিয়েছিল।চল বের হও।দেড়ি হয়ে যাচ্ছে।

~হুম চল।

বাজারে গিয়ে বিভিন্ন জিনিস কিনতে লাগলাম।হঠাৎ  অরন্য বলল

~তুমি এখানে দাঁড়াও আমি সামনে থেকে কিছু মাছ কিনে আনি।তোমাকে এত ভিড়ের মধ্যে নিয়ে গেলে হারিয়ে ফেলব।

আমিও সম্মতিসূচক মাথা নাড়িয়ে বললাম

~আচ্ছা যাও।

এরপর অরন্য গেল আর আমি দাঁড়িয়ে  রইলাম।কিছুক্ষন পর খেয়াল করলাম একটা মহিলাও আমার পাশে দাঁড়িয়ে  আছে।বুঝায় যাচ্ছে ওনি এই এলাকার।আর অনেক মিশুক।মিহলাটা আমায় দেখে বলল

~আপু মনে হয় নতুন আসছেন এই এলাকায়।আগে কখনও দেখি নি তো তাই জিজ্ঞেস  করলাম

~হ্যা নতুন আসছি।

এবার মহিলাটা আমায় হাসি মুখ নিয়ে জিজ্ঞেস  করল

~তা কোথায় থাকেন।একেই এলাকায় থাকি পরিচয় রাখা ভালো কি বলেন।

আমিও বেশ স্বস্তি ফেলে উত্তর দিলাম

~তা ঠিকেই বলেছেন।এ এলাকায় এসে খুব একা লাগছিল ভেবেছি হয়ত কাউকে পাব না।খুব ভালো লাগলো এমন একজনের সাথে দেখা হল।আমি ঐ পাশের বাড়িটাতে থাকি।

মহিলার  আমার এ কথাটা শোনে বেশ চুপসে গেল।কিছুটা অবাক হয়ে বলল

~ঐ বাড়িটায় উঠেছেন।কিন্তু লোক মুখে শোনেছি ঐ বাড়িতে নাকি অশুভ আত্না ঘোরাফেরা করে এ আগে যারা এসেছে সবাই ১ মাসের উপর থাকতে পারে নি।আপনার কোন প্রবলেম হচ্ছে না।

আমি মহিলাকে কিছু জিজ্ঞেস  করতে নিব ঠিক সেই মুহুর্তে অরন্য এসে বলল

~অনা আমার শেষ এবার চল।

পাশ থেকে মহিলা বলে বসল

~ওনি বুঝি আপনার স্বামী। 

আমি বেশ লাজুক কন্ঠে জবাব দিলাম

~হ্যা।

তারপর অরন্য আর মহিলা বেশ পরিচিত হল।আমিও বেশ কিছুক্ষণ  কথা বললাম।কিন্তু এর মধ্যে বাড়িটা নিয়ে কোন কথায় উঠল না।মনের মধ্যে প্রশ্নটা রেখেই বাড়িটায় ফিরতে হল। মহিলার কথাটাও বেশ মনে হতে লাগল।জিজ্ঞেস  করতে পারলাম না কিসের অশুভ আত্না।প্রশ্নটা মনে বারবার ঘুরতে লাগল আর আমি বেশ নিজেকে সামলে রান্না ঘরে গেলাম।রান্না ঘরের জানালা দিয়ে বাইরের দিকে তাকালাম খেয়াল করলাম হাস্নাহেনা গাছে একটা লাল খাম ঝুলছে।বেশ অবাক হলাম লাল খামটা দেখে।ফুলের গাছে এমন খাম ঝুলার মানে বুঝলাম না।কিন্তু খামটা কিসের বেশ কৌতুহল জাগল দেখার জন্য।কিন্তু বাড়ির মালিক বাগানে যাওয়ার দরজার চাবি দেয় নি।বাগানে যাওয়া নিষেধ করে দিয়েছিল।কিন্তু খামটা দেখার ভিষণ আগ্রহ জাগল।তাই রান্না ঘর থেকে বের হয়ে বাগানে যাওয়ার দরজার সামনে গেলাম।ঐখানে গিয়ে খেয়াল করলাম তালাটা খোলা।তালাটা খোলা দেখে বেশ অবাক হলাম।বুঝতে পারলাম না তালাটা কিভাবে খোলল।কারন কিছুক্ষণ  আগেও তালাটা বন্ধ ছিল।মাথায় আসছে না তালাটা কি করে খোলল।কিছুটা অবাক হয়ে বাগানে প্রবেশ করলাম।বাগানে প্রবেশ করার পর একটা দমকা বাতাস চারদিকে ছড়িয়ে পড়ল।সাথে হাস্নাহেনার সেই তীব্র ঘ্রান টা।হালকা নুপুরের আওয়াজ।কেন জানি এগুলা এখন ভয় লাগছে না।কিছু অভয়ে সামনে গেলাম।খেয়াল করলাম বাগানের চারদিকে অনেক ফুল ফুটেছে।কিছুটা অবাক হলাম ফুল গুলো দেখে কারন বাগানের পরিচর্যা কেউ করে না তবুও যে বাগান টা এত পরিচ্ছন্ন  এটা দেখে অবাক না হয়ে পারলাম না।আমি আরও সামনে এগুতে লাগলাম।সামনে এগুতে এগুতে হাস্না হেনা গাছটা পেয়ে গেলাম।লাল খামটায় হাত দিলাম।এরপরেই আমার জীবনের মোড় পাল্টে গেল।এরপর আমার জীবনটা যে কি হল নিজেই বুঝতে পারছিলাম  না।

কারন

গল্পের নাম ঃ অতৃপ্ত আত্না

 পর্ব  : ৩য়

লেখিকা-শারমিন আঁচল নিপা

কারন এরপর থেকে আমার কি হয় আমি জানি না।মাঝে মাঝে মাথায় অনেক ঝিম ধরে।গুটি গুটি নুপুরের আওয়াজ শোনতে পাই।অরন্য কেও বেশ বিরক্ত লাগে।এলোমেলো কথাগুলো কানে বাজতে থাকে।মাথায় অনেক পেইন হয়।কেউ একজন মনে হয় কিছু একটা বলতে চায় আমি বুঝতে পারি না।মাঝে মাঝে আমি কি করি আমার নিজেরেই মনে থাকে না।মনে হয় হঠাৎ  হঠাৎ  আমি আমার মাঝে থাকি না।আমি এক অন্য আমি হয়ে যায়।কিন্তু তখন আমি কি করে বসে বুঝতে পারি না।এইতো কিছুদিন আগের কথা।জানি না আমার কি হয়েছিল, তবে এতটুকু মনে ছিল রাত ৩ টায় আমি হঠাৎ  একটা আওয়াজ পাই।কেউ একজন আমাকে ছন্দা বলে ডাকছিল।কেন জানি না ছন্দা ডাকটা শোনে মনে হচ্ছিল সে আমাকেই ডাকতেছে।তাই ঘুম থেকে উঠে বাইরে বের হলাম, খেয়াল করলাম একটা কালো ছায়া আমাকে বলতেছে ছন্দা চল তুমি তোমার প্রতিশোধ নাও।খেয়াল করলাম ছায়াটার সাথে একটা বাচ্চার ছায়াও আছে।ঠিক এর পর কি হয়েছিল আমি জানি না।

অরন্যের ডাকে আমার জ্ঞান  ফিরে।খেয়াল করলাম আমি বাড়ির ছাদের কর্নারে পড়ে আছি।অরন্য ভয়ে কুচকে গিয়ে আমাকে বলল

~অনা কি হয়েছিল তোমার?তুমি হঠাৎ  ছাদের কার্নিশে এসে এভাবে হাঁটছিলে কেন।আমার তো প্রানটা বের হয়ে যাচ্ছিল।যদি পড়ে যেতে তখন কি হত?

আমি কিছুটা অবাক হয়ে ভাবলাম আমি ত এখানে আসি নি।তাহলে কিভাবে আসলাম।কিছুটা অবাক হয়ে অরন্যকে জবাব দিলাম

~কি বল অরন্য আমি তো এখানে আসি নি।আমি এখানে কি করে আসলাম।

অরন্য ও আমার কথা শোনে বেশ অবাক হল।আমিও বেশ অবাক হলাম অরন্যের কথা শোনে।কোনভাবেই মনে করতে পারছিলাম না আমি এখানে কেন আসলাম।আমার মথায় এসব চিন্তায় অস্থির করে দিচ্ছিল তাও মনে করতে পারছিলাম না।অরন্য মিথ্যা বলছে নাকি আমি ভুল, সেটা বুঝতে পারছিলাম না।এটা তো তবুও সাধারণ কাহিনী।পরের কাহিনী টা আরও অনেক ভয়ংকর ছিল।আমি সেদিন রান্না ঘরে রান্না করছিলাম।হঠাৎ  করে আমার মাথারা বেশ জিম ধরে গিয়েছিল।তারপর যখন খেয়াল ফিরল তখন খেয়াল করলাম অরন্যের হাতটা রক্ত মাখা।আমি বেশ অবাক হয়ে অরন্যের কাছে গিয়ে বললাম

~কি হয়েছে তোমার এভাবে কাটল কিভাবে

অরন্য বেশ বিস্মিত হল আমার কথা শোনে।একটু রাগী কন্ঠে বলল

~অনা তুমি ঠিক আছ তো?যা ইচ্ছা তাই করছ।আমাকে তুৃমি নিজে বটি দিয়ে আঘাত করলে আর এখন বলতেছ সব ঠিক আছে কি না?পাগল হয়ে গেছ তুমি?

আমি অরন্যের কথা শোনে বেশ অবাক হলাম অরন্য এসব কি বলছে।আমি তো কিছুই করি নি।অরন্য আমাকে এভাবে দোষারূপ করছে কেন।আমি কিছুটা অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলাম অরন্যের দিকে তারপর বললাম

~অরন্য তুৃমি এসব কি বলছ আমি তো আঘাত করি নি তোমাকে, তাহলে এমন কেন বলছ?তুমি আমার নামে এমন অভিযোগ কিভাবে করতে পারলে।আমি তোমাকে বটি দিয়ে কাটতে যাব এটা ভাবলে কি করে?আমি তোমাকে ভালোবাসি অরন্য।

অরন্য এবার রাগী হয়ে জবাব দিল

~তোমার মাথা নষ্ট হয়ে গেছে অনা।তোমার হাতে এখন ও বটি আছে দেখ।তারপর ও তুমি অস্বীকার করবা যে তুমি এ কাজ কর নি।এসব কেন করতেছ তুমি।দিনদিন তোমার এসব পাগলামি আমাকে বিরক্ত করছে তুমি বুঝ না।আমি আর নিতে পারছি না অনা।তোমার পাগলামি থামাও এবার।

আমি অরন্যের কথা শোনে নিজের হাতের দিকে তাকালাম সত্যিই তো হাতে বটি আমার আর বটিটা রক্ত মাখা।কিন্তু এ বটি আমার হাতে আসল কি করে।আমি তো বটি ধরি নি আর আমি তো বটি দিয়ে অরন্যকে মারি নি।তাহলে অরন্যকে আঘাত করল কে।আমার কিছুই মনে পড়ছে না।আমি বেশ বিভ্রান্ত  মন নিয়ে অরন্যকে বললাম

~অরন্য বিশ্বাস কর আমি তোমাকে আঘাত করি নি।আমার কি হয়েছে আমি জানি না।আমি কেন এমন করছি তাও জানি না।আমাকে বুঝার চেষ্টা কর।

অরন্যের রাগটা যেন আরও বেড়ে গেল আমার কথা শোনে।রাগে উত্তর দিল।

~আমি আর পারব না তোমাকে বুঝতে। অনেক হয়েছে আর না।আমাকে এবার মাফ কর।তুমি আমার জীবনটা নরক করে তুলতেছ।কি দোষ ছিল আমার বলত।আমি তো তোমাকে কোন কিছু করি নি।তাহলে কেন আমাকে এভাবে আঘাত করছ।

কথাগুলো শোনে আমার ভিতরটা হুহু করে কেদে উঠল।কারন আমাকে অরন্য ভুল বুঝছে।দিনের পর দিন অরন্যের সাথে আমার সম্পর্ক খারাপ হতে লাগল।একের পর এক ঘটনা আমাকে পাগল করে দিল।শেষ যে ঘটনাটা ঘটেছিল সেটা ঘটার পর আমার জীবনটা পুরোপুরি নিঃশেষ হয়ে গেল।

সেদিন আমি  বেড রুমে বসে বই পড়ছিলাম।মনটা খুব খারাপ ছিল তাই ভাবলাম একটু বই পড়ি।এদিক দিয়ে অরন্যের সাথে আমার সম্পর্কটা প্রায় শেষের দিকে।ঠিকমত কথা হয় না আমাদের মাঝে একে অপরকে বুঝতে পারি না এখন।মনটা বেশ বিষন্ন হয়ে থাকে আমার।এ বিষন্ন মনটা ঠিক করার জন্যই বই পড়া।বই পড়তে পড়তে হঠাৎ  খেয়াল করলাম একটা কান্নার আওয়াজ আসতে থাকল।কান্নাটার আওয়াজ তীব্র হতে  লাগল আস্তে আস্তে।হাস্নাহেনার গন্ধটাও ভারী হতে লাগল।মাথাটা বেশ ঝিম ধরে গেল।হুট করে আমার কি হল আমি জানি না।যখন আমার বোধ শক্তি ফিরল আমি খেয়াল করলাম আমি অরন্যকে লাঠি দিয়ে জোরে মাথায় আঘাত করছি।আর অরন্য নীচে পড়ে আছে।তারাহুরা করে অরন্যকে তুলতে গিয়ে দেখলাম রক্তে চারদিক মাখামাখি হয়ে আছে।কিছুটা বিমর্ষ হয়ে ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেলাম।ডাক্তার চিকিৎসা  করার পর জানাল অরন্য কোমাতে চলে গেছে।সেদিন ভিতরটা কতটা বিক্ষত হয়েছে আমি জানি।কেন এমন হচ্ছে আমার সাথে।যা করতে চায় নি তাও করতে হচ্ছে।মাথাটার ব্যাথাও দিনদিন বাড়তে লাগল।এখন আমার কি করা উচিত জানি না।আমি ঐ বাড়ি থেকে বের হতে চাইলেও পারি না। মনে হয় কোন একটা মায়া আমাকে আটকে রাখে।

এ কথাগুলো অনা ডাক্তার ইশিতাকে বলে কাঁদতে কাঁদতে ভেঙে  পড়ল।ডাক্তার ইশিতা একজন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ। ডাক্তার ইশিতাও অনার কথা শোনে বেশ অবাক হল কারন এর আগে এমন রোগী সে পাই নি।ইশিতার কেন জানি না মনে হল এটার সাথে প্যারানরমাল কোনকিছু আছে।কেন জানি না অনাকে দেখে তার বেশ কষ্ট হল।ইশিতা এর আগে প্যারানরমাল বিষয় নিয়ে অনেক স্টাডি করেছে।তাই কৌতুহল বশত ইশিতা অনাকে বলে বসল

~আপনি যদি কিছু মনে না করেন।আমি কি আপনার বাড়িতে থাকতে পারি।তাহলে বিষয়টা খুব ভালো করে বুঝতে পারতাম।

অনা ইশিতার কথায় কোনরূপ আপত্তি না জানিয়ে সম্মতি দিয়ে বলল

~আপনি যতদিন ইচ্ছা থাকুন তবুও এ জীবন থেকে আমাকে মুক্তির ব্যাবস্থা করে দিন।

ইশিতা অনাকে একটু আশ্বাস দিয়ে বলল।

~আমি সর্বোচ্চ চেষ্টা করব।এ বিষয় গুলা অনেক সেনসিটিভ।সময় করে আস্তে ধীরে কাজ করতে হবে।

~আপনি কবে যাবেন বলুন।

~আমি আজকে রাতে  যাব।আপনি যত সম্ভব নিজেকে সাবধানে রাখবেন।

~আচ্ছা আপনি আসবেন কিন্তু। আমি অপেক্ষা করব।

এ বলে অনন্যা চলে গেল।ইশিতা সারাদিন ব্যাপার টা নিয়া ভাবল একটু স্টাডি করল বিষয়টা নিয়ে।তারপর সন্ধ্যায় রওনা দিল অনার বাড়ির উদ্দেশ্যে।অনার বাড়িতে ঢুকার সময় একটা ছায়া খেয়াল করল।খেয়াল করল ছায়াটা আস্তে আস্তে সামনে গিয়ে বাড়ির দরজার সামনে এসে মিলিয়ে গেল।ইশিতা দরজা নক করতে যাবে ঠিক ঐসময় খেয়াল করল দরজাটা খোলা।আরও খেয়াল করল ঘরের ভিতর কেমন জানি মৃদু হাওয়া বইছে।উপর থেকে একটা সুরেলা কন্ঠ ভেসে আসছে।হঠাৎ  একটা বিকট কান্নার শব্দ ও পেল ইশিতা।ইশিতা শব্দটা ধরে সামনে এগুতে লাগল।দেখল অনা চেয়ারে বসে আছে।অনা যখন ইশিতার দিকে তাকাল তখন

গল্পের নাম :  অতৃপ্ত আত্না

পর্ব  : ৪র্থ/শেষ পর্ব

লেখিকা-শারমিন আঁচল নিপা

অনা যখন ইশিতার দিকে তাকাল ইশিতা খেয়াল করল অনার চোখ দিয়ে আগুনের মত বের হচ্ছে।সারা বাসা কাঁপতেছে।দমকা বাতাস সব যেন উলট পালট করে দিচ্ছে।চারদিকে বিকট বিকট কান্নার শব্দ।ইশিতা ভালোয় বুঝতে পারছিল অনার মধ্যে কোন আত্না ভর করেছে।ইশিতা তার ব্যাগ থেকে একটা সুগন্ধী বের করে অনার দিকে ধরল।সাথে সাথে অনা শান্ত হয়ে গেল।ইশিতা শান্ত স্বরে অনার দিকে তাকিয়ে বলল

~তুমি কে আমাকে বল।তোমার কি পরিচয়?আমি তোমাকে সাহায্য করব।তুমি কেন অনার শরীরে ভর করেছ বল।

অনা গাড়টা মটকানি দিয়ে বলল 

~সত্যিই কি তুমি আমাকে সাহায্য করবে নাকি এটা তোমার ছলনা।

~বিশ্বাস কর আমায় ,আমি কোন ছলনা করছি না। বল আমায় তুমি কি চাও।আর কেন এমন করছ?আমি তোমাকে সাহয্য করতে চায়।আমি তোমার এ জীবন থেকে মুক্তি দিতে চায়।

এবার অনার ভিতরে থাকা আত্নাটা ইশিতাকে বলল

~আমি ছন্দা বাবা, মায়ের অনেক আদরের মেয়ে ছিলাম।বাবা, মা আমাকে অনেক ভালোবাসত।টাকা পয়সার কোন অভাব ছিল না।কিন্তু আমি দেখতে কালো ছিলাম বলে কেউ আমাকে বিয়ে করতে চাইত না।বাবা বাধ্য হয়ে একটা নিম্নবিত্ত পরিবারের ছেলের সাথে আমার বিয়ে ঠিক করে।বিয়ের পর বুঝতে পারি ছেলেটা আমায় বিয়ে করি নি আমার বাবার টাকাকে বিয়ে করেছে।বাবার টাকার  প্রতি তার বেশ লোভ ছিল।কিন্তু আমি বিষয়টা এত গভীরভাবে চিন্তা করতাম না।কারন ভাবতাম হয়ত সে বাবার ব্যাবস্যা বাড়াতে চাই।এর মধ্যে হুট করে আমার বাবা,মা মারা যায় এক্সিডেন্ট এ।জানতে পারি আমার মা,বাবা সব সম্পত্তি তার নামে করে দিয়ে যায়।

এর পর থেকেই শুরু হয় আমার উপর অত্যাচার ,এক তো অসুন্দর ছিলাম তাই কষ্ট দিত তার উপর একের পর এক পরকীয়া।সারাক্ষন কাঁদতাম তবুও তার মন গলত না।ভালোবেসে ফেলেছিলাম খুব, তাই কিছু করতে পারতাম না।প্রতিটা মুহূর্তে এসব মানতেও কষ্ট হচ্ছিল।কিন্তু সহ্য করা ছাড়া কোন উপায় ছিল না।এর কিছুদিন পর আমি জানতে পারি আমি প্র্যাগনেন্ট।মনটা বেশ খুশি হয়ে গেল এ কথাটা শোনার পর।কিন্তু আমার স্বামীর পরকিয়া দিন দিন আরও বাড়তে লাগল আর আমাকে কষ্ট দিতে লাগল।জানতে পারি সে আমার কাছ থেকে ডিভোর্স চাচ্ছে এদিকে অর্ধেক সম্পত্তি বাবা আমায় বিয়ের আগে লিখে দিয়েছিল বলে সে সম্পত্তির জন্য সে আমাকে ডিভোর্স ও দিতে পারছিল না।আর এদিকে আমি আমার স্বামীকে খুব ভালোবাসি তাই ছাড়তেও পারছিলাম না।

সব মিলিয়ে গোলক ধাধায় পড়ে গিয়েছিলাম, কি করব বুঝতে পারছিলাম না।এর মধ্যে আমার একটা ফুটফুটে ছেলে সন্তান হয়।ভেবেছিলান বাচ্চাটা হওয়ার পর হয়ত সে খুব খুশি হবে সব ঠিক হয়ে যাবে কিন্তু হয় নি।

হুট করে একদিন ও আমাকে মাথায় আঘাত করে আর আমি নিস্তেজ হয়ে নীচে পড়ে যায়।আমার বাচ্চাটা আমার কোলে ছিল বাচ্চাটাও নীচে পড়ে চিল্লাতে থাকে।বাচ্চাটাকে আগলে ধরতে চেয়েছিলাম কিন্তু আগলে  ধরার শক্তি পাচ্ছিলাম না। আমার এ অবস্থা দেখে ও বলে

~তোকে আমি কখনও ভালোবাসি নি।তোকে বিয়ে করেছি সম্পত্তির  জন্য। আর তোর বাবা মাকে আমিই মেরেছি।আর এই যে তোকে বাঁচিয়ে রেখেছিলাম শুধু তোর সম্পত্তির জন্য।অনেকদিন যাবৎ তোকে মারতে চেয়েছিলাম কিন্তু সুযোগ পায় নি।আজ পেয়েছি।

এ বলে আঘাতের উপর আঘাত করতে লাগল।আমি আস্তে আস্তে নিস্তেজ হয়ে গেলাম।আমার বাচ্চাটাকে উপর থেকে আঁচড়ে ফেলে মেরে দিল।আমার বাচ্চাটাকেও বাঁচতে দিল না।কিভাবে পারল বাবা হয়ে নিজের সন্তানকে সম্পত্তির লোভে মারতে। মারার পর আমাকে আর আমার বাচ্চাটাকে ঐ হাস্নাহেনা গাছের নীচে পুতে রাখে।এর পর থেকে আমি এখানে আটকে আছি।আর আমার স্বামী নতুন বিয়ে করে  অন্য বাড়িতে চলে যায়।কোনভাবেই পারছি না এ নরক যন্ত্রণা থেকে বের হতে।কোন দম্পত্তি দেখলেই আমার স্বামীর কথা মনে পড়ে।আর আমি মেয়ে শরীরে ভর করি আর পুরুষকে আঘাত করি।  এজন্যই অরণ্যেকে আমি আঘাত করি।

ইশিতা কথা গুলো শোনে চোখের জল আটকে রাখতে পারছিল না।ছন্দাকে কান্না সামলিয়ে  বলল

~তোমার এ জীবন থেকে মুক্তির উপায় বল।

ছন্দা একটা ফুটেজ এগিয়ে দিয়ে ইশিতাকে বলল

~এই যে এই ফুটেজটা পুলিশকে দেখিয়ে আমার স্বামীকে শাস্তি দেওয়ার ব্যাবস্থা করে দাও।আর আমার লাশটা উদ্ধার  করে কবরের ব্যাবস্থা করে দাও।

ইশিতা সম্মতিসূচক  মাথা নাড়িয়ে বলল

~আমি সব দেখতেছি।

এরপর ইশিতা ফুটেজটা নিয়ে ছন্দার স্বামীর নামে মামলা করে।ছন্দার লাশ ও উদ্ধার করা হয়। আর দমকা হাওয়ায় কি যেন একটা বাড়ি থেকে বের হয় আর অনা নীচে পড়ে যায়।ইশিতা অনাকে গিয়ে ধরে পানির ঝাপটা দিতে লাগল।অনার জ্ঞান ফেরার পর ইশিতা অনাকে  বলল

~অনা তুমি ঠিক আছ তো।

অনা এক বিন্দু হাসি দিয়ে বলল 

~আমি ঠিক আছি।

হাসপাতাল থেকে ফোন আসল আর বলল অরন্য ঠিক হয়ে গেছে।অনা ইশিতাকে ধন্যবাদ দিল।অরন্য সব কথা শোনার পর অনাকে বলল

~এ বাড়িতে আর এক মুহুর্ত ও থাকব না।

অনা অরন্যকে আশ্বাস দিয়ে বলল

~ছন্দা আর কখনও আসবে না।

এরপর ঐ বাড়িতে আর কোন অঘটন ঘটে নি।ছন্দার স্বামীর ও শাস্তি হয়।।।

সম্পত্তির লোভ মানুষকে পশু করে তোলে।এমন হাজার টা ঘটনা আশে পাশে শোনা যায়।সম্পত্তির জন্য নিজের ভাই, মা, ববাকে মারতে ও মানুষ কুন্ঠাবোধ করে না।কিন্তু সম্পত্তি যে মানুষকে সুখ দিতে পারে না এটা কেউ বুঝে না।

লেখিকা-শারমিন আঁচল নিপা,


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ