হঠাৎ-বিয়ে

 গল্পের নাম হঠাৎ_বিয়ে

 পর্ব ১ম পর্ব

লেখিকা-শারমিন আচঁল নিপা

আজকে আমার হবু দুলা ভাই এর সাথে আমার বিয়ে হচ্ছে।শুনতে খুব অবাক লাগলেও এটাই ঘটেছে আমার সাথে।আমার যার সাথে আজকে বিয়ে হতে যাচ্ছে তার সাথে আজকে আমার বড় বোনের বিয়ে হওয়ার কথা ছিল।

আমার বড় বোনের নাম অর্পা।ও আমার আপন বোন না তবে চাচাত বোন।আমাদের চাচাদের মধ্যে আমি আর অর্পা আপুই বড় আর বিবাহযোগ্য।অর্পা আপু আমার ২ বছরের  বড়।দেখতে হুর পরীর মত সুন্দর।তার রূপের কাছে সবকিছু হার মানবে।আর অর্পা আপুর যার সাথে বিয়ে হবার কথা ছিল তিনি শুধু অর্পা আপুকে তার রূপে মুগ্ধ হয়ে বিয়ে করতেছে।শুনেছি লোকটার নাকি মস্ত বড় ব্যাবস্যা আছে।ঐ লোকটার আর্থিক অবস্থার তুলনায় আমাদের আর্থিক অবস্থা এতটা মানানসই না।আমরা মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে আর উনি অনেক বড় পরিবারের ছেলে।

আপুকে যেদিন উনি দেখতে এসেছিল আমি সেদিন জানালা দিয়ে হালকা উকি দিয়ে উনাকে দেখেছিলাম।সত্যিই লোকটা ও অনেক সুন্দর আর হ্যান্ডসাম ছিল।আর লোকটা আপুকে দেখে প্রথম দেখায় পছন্দ করে ফেলল।পছন্দ হওয়ার সাথে সাথে খুব হই হই,রই রই করে আপুর বিয়ের দিনক্ষণ  নির্ধারণ করা হল।আমরা সবাই খুব খুশি ছিলাম আপুর এত বড় ঘরে বিয়ে হবে দেখে।তাই সবাই খুব মজা করছিলাম।আমি নিজেও খুব মজা করতে লাগলাম।সামনের সপ্তাহে আপুর সাথে অরন্যের বিয়ে।

(ওহ হো তোমাদের তো ঐ লোকটার সাথে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হল না।ঐ লোকটার নাম অরন্য, বয়স ২৮। বাবার বড় ব্যাবস্যা আছে আর সেটাই দেখাশোনা করছে।ঢাকায় অনেক গুলা বাড়ি আছে শুনেছি আর উনাদের টাকা পয়সার নাকি কোন অভাব নেই)

যেহুত সামনের সপ্তাহে অর্পা আপুর সাথে অরন্যের বিয়ে তাই আমি আগে থেকেই সব ঠিক করে রাখলাম হলুদে কি করব, বিয়েতে কি পড়ব, বউ ভাতে কি করব।চিন্তা করেছিলাম আপুর বিয়েতে খুব মজা করব।কত প্ল্যান যে করেছিলাম সব প্ল্যান বিয়ের দিন সকালে মাটি হয়ে গেল।

কারন হঠাৎ  করে বড় কাকী বলে উঠল

-কি গো অর্পার মা অর্পা তো ঘরে নেই।কোথাও খুঁজে তো পাচ্ছি না।

বড় কাকীর কথা শুনে আমরা সবাই থমকে গেলাম আর কিছুক্ষণ  পর পাত্র আসবে আর এখন অর্পা আপুকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।অর্পা আপু কোথায় গেল কেউ বুঝতে পারতেছিল না।কারন অর্পা আপুর কারও সাথে কোন সম্পর্ক  আছে বলে মনে হয় না।থাকলে অবশ্যই কেউ না কেউ জানত।তবে আপু কোথায় গেল এ প্রশ্নটা যেন সবার মনে বিদ্ধ করতে লাগল।

অর্পা আপুকে সারা বাড়ি খুঁজা হল কিন্তু অর্পা আপুর কোন হদিশ মিলল না।সবাই ভেবে নিয়েছে অর্পা আপুর হয়ত প্রেমিক ছিল আর অর্পা আপু সে প্রমিকের হাত ধরে পালিয়েছে।কিন্তু এ কথা জানাজানি হলে আর মানসম্মান থাকবে না।তাই কি করবে সবাই বুঝতে পারছিল না।সবাই উপায় খুঁজতে লাগল।হঠাৎ  করে কাকা বাবাকে বলে বসল

-অনন্যা তো বিবাহযোগ্য। অনন্যাকে বিয়ে দিলে কেমন হয়।মান সম্মান বাঁচানোর জন্য এছাড়া কোন উপায় নেই।

যেহেতু পাত্র যোগ্য ছিল আর আমি দেখতে এতটাও সুন্দর ছিলাম না।আর আমার মত দেখতে খারাপ মেয়ের জন্য এর থেকে ভালো পাত্র আর হবে না।তাই আমার বাবাও কিছুটা লোভে পড়ে কাকার প্রস্তাবে রাজি হয়ে গেল।

বাবার এমন অন্যায় সম্মতি দেখে আমার মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে  পড়ল।কারন আমি আর অর্পা আপু রাত আর দিন।আমি দেখতে এতটা ভালো না।তারা আমাকে মেনে নিবে বলে মনে হয় না।কিন্তু বাবা আর কাকার প্রচন্ড চাপে অর্পা আপুর জায়গায় আমাকে  কনে সেজে বসতে হল বিয়ের পিড়িতে।

লাল টুকটুক শাড়ি, ভারী গহনা পড়ে আমি কনে সেজে বসে আছি।কিছুক্ষণের মধ্যেই বর পক্ষ  আসবে।জানি না তারা এসে কি করবে।কি হবে এর পরিণতি।ভিতরে অসহ্য যন্ত্রণা  হতে লাগল।কিছুই ভাবতে পারছিলাম না।মাথাটা যেন ঘুরতে লাগল।তবুও নিজেকে সামলে স্থির হয়ে বসে রইলাম।হঠাৎ  কানে বাজতে লাগল সবাই বর এসেছে বর এসেছে বলে চিল্লাতে লাগল।

বরকে বরণ করা হল।পাত্র পক্ষের সবাই কনে দেখার জন্য রুমে প্রবেশ করল।পাত্র পক্ষ  এসে আমাকে দেখে কনে পাল্টানো হয়েছে বলে হৈ চৈ শুরু করে দিল।কিন্তু আমার বাবা আর কাকারা বলল কনে ঠিকেই আছে।পাত্র পক্ষকে চাপ দিল বিয়ে করার জন্য না হয় ঝামেলা হবে।পাত্র পক্ষ  ও চাপের মুখে পড়ে আমাকে বিয়ে করিয়ে নিতে রাজি হল।

নানা ঝামেলা পার হয়ে আমার বিয়েটা সম্পন্ন হল।আজকে অর্পা আপুর জায়গায় অরন্যের বউ হল অনন্যা।জানি না তাদের মনে আমার প্রতি কোন ক্ষোভ জন্মে আছে কি না।জমলেই বা কি যা হবার তা তো হয়েছেই।আমি তো চাই নি এমন কিছু হোক।আমার তো অরন্য ভাইয়ার জন্য খুব খারাপ লাগছে কারন উনি এসেছিল হুর পরী বিয়ে করে নিতে কিন্তু বিয়ে করে নিয়ে যাচ্ছে একটা শ্যাওরা গাছের পেত্নী।নিজের জন্য ও বেশ খারাপ লাগছে কারন আমি তো চাই নি আমার বিয়েটা এভাবে জোর পূর্বক দেওয়া হোক।দেখতে খারাপ হলেও কখনও এটা নিয়ে আফসোস করে নি।নিজেকে সব দিক দিয়ে পারফেক্ট করে তুলার চেষ্টা করেছি।বিয়ে নিয়ে তো আট দশটা মেয়ের মত আমার ও স্বপ্ন ছিল।আর আজকে চোখের সামনে আমার সব স্বপ্নগুলো ভেঙে  গেল।নিজের অজান্তেই বুকের ভিতর টা হুহু করে উঠল আর  চোখ দিয়ে বৃষ্টি জড়তে লাগল।

আশে পাশে তো সবাই বলাবলি করতে লাগল বাহ বাহ অনন্যার ভাগ্য তো অর্পা খুলে দিয়ে গিয়েছে।তা না হলে অনন্যা এমন ছেলে বিয়ে করতে পারত নাকি।এসব শুনে যেন মনটা আরও খারাপ হয়ে গেল।ভাগ্যের কাছে যে এভাবে হেরে যাব বুঝতে পারি নি।অবশেষে বিয়ে সম্পন্ন হল।

বিয়ে সম্পন্ন হওয়ার পর এখন কনে বিদায় দেওয়ার পালা আমার বাবা আমাকে অরন্যের হাতে তুলে দিল।অরন্যের হাতে তুলে দেওয়ার সময় অরন্যের দিকে তাকানোর সাহস পেলাম না।লজ্জায় নীচের দিকে মুখ করে রাখলাম।মনের ভিতর শুধু এ মুহুর্তে  একটা প্রশ্নই জাগছে অর্পা আপু কোথায় আছে।কোথায় গেল কার সাথে গেল।এসব ভেবে মনের ভিতরটা খুব আনচান করতে লাগল।

অরন্যের হাতে আমাকে তুলে দেওয়ার কিছুক্ষণ পরেই আমাকে যাওয়ার জন্য সবাই গাড়িতে তুলে দিল।হুম আমি বাবার বাড়ি থেকে শ্বশুর বাড়ি যাচ্ছি।কিন্তু আট দশটা মেয়ের মত হাজার টা স্বপ্ন নিয়ে যাচ্ছি না হাজারটা স্বপ্ন ভেঙ্গে যাচ্ছি।ভাগ্যের পরিহাস যে এমন হবে বুঝতে পারি নি।

ব্যাস্ত শহরের পথ পাড়িয়ে আমি শ্বশুর  বাড়ি পৌঁছালাম।শ্বশুর বাড়ির বাকি সবাই আমাকে দেখে কানাকানি করতে লাগল এ কি সর্বনাশ করেছে অরন্য এক তো মধ্যবিত্ত ঘরে বিয়ে করেছে তার উপর অসুন্দর মেয়ে। মেয়ে দেখার সময় সবার কি চোখ কপালে ছিল নাকি।অরন্যের সাথে এ মেয়েকে মানায় নাকি।এমন সর্বনাশ অরন্য নিজের হাতে কেন করল।

এসব কথা শুনে মনটা আরও ভাঙ্গতে লাগল।কোন রকমে সবাই আমায় তুলে ঘরে নিল।খেয়াল করলাম ঘরটা ভীষণ  সাজানো গুছানো।চারদিকে অনেক ফুলের সুভাস ছড়াচ্ছে। আজকে এ ঘরে অর্পা আপুর আসার কথা ছিল কিন্তু ভাগ্যের লিলাখেলায় এ ঘরে আমি আসলাম।

ঘরের নিভু নিভু আলোতে চুপ করে বসে রইলাম।হয়ত অন্যসব মেয়েরা এসময় বসে থাকে স্বামীর অপেক্ষায় আর আমি বসে আছি এক অনিশ্চিত  ভবিষ্যৎ এর অপেক্ষায়।বসে  থাকতে থাকতে হঠাৎ  খেয়াল করলাম অরন্য রুমে ঢুকেছে।

উনাকে দেখে আমার সারা শরীর ভয়ে কাঁপছিল।জানি না কি কথার সম্মুখীন আমাকে আবার হতে হবে।এসব ভেবে যেন ভয়ে আরও কুকরে যেতে লাগলাম।খেয়াল করলাম উনি আমার দিকে তাকিয়ে আছে।

হঠাৎ  করে...

 গল্পের নাম : হঠাৎ_বিয়ে

 পর্ব :  2পর্ব

লেখিকা-: শারমিন আচঁল নিপা


হঠাৎ  করে খেয়াল করলাম আমার শরীরটা ভীষণ  কাঁপছে।উপরে তাকালাম মনে হচ্ছে ফ্যান আমার উপরে পড়ে যাবে।সবকিছু উল্টা উল্টা লাগছে।আমার এখন কি করা উচিত বুঝতে পারছি না।তাই একদম চোখটা বন্ধ করে ধপাস করে শুয়ে পড়ি।

আস্তে আস্তে শরীরটা আরও নিস্তেজ হয়ে কাঁপতে লাগল।কষ্ট হতে লাগল খুব।হঠাৎ  খেয়াল করলাম কেউ একজন আমার হাতটা ধরেছে।হাতটা ধরে চোখ মুখে পানির ঝাপটা দিচ্ছে।কিন্তু চোখ খুলার মত শক্তি আমি পাচ্ছিলাম না।এবার মনে হচ্ছে কেউ আমার প্রেসার মাপছে।তবুও চোখ খুলে দেখার মত শক্তি পাচ্ছিলাম না।আস্তে আস্তে আরও নিস্তেজ হতে লাগলাম।অণুভব করলাম এখন আর আমার পাশে কেউ নেই।খুব অসহায় মনে হতে লাগল নিজেকে।কিছুক্ষণ পর খেয়াল করলাম কেউ আমার মুখে কিছু একটা দিয়ে বলতেছে

-এই যে আপনি এটা খেয়ে নিন।আপনার প্রেসার খুব নেমে গিয়েছে।একটু কষ্ট করে খান। হা করুন।

কথাগুলো শুনার পরও আমি হা করার শক্তি পাচ্ছিলাম না।কোনভাবে নিজের মধ্যে শক্তি সঞ্চার  করে হা করলাম।খেয়াল করলাম মুখে পানি দিচ্ছে।পানিটা মিষ্টি।বুঝতে আর বাকি রইল না এটা চিনির পানি।তাই নিজের মধ্যে শক্তি জুগিয়ে পানিটা কষ্ট করে খেলাম।খাওয়ার পর একটু ঝিম ধরে শুয়ে রইলাম।আস্তে আস্তে মনে হচ্ছে শরীরে শক্তি পাচ্ছি।চোখটা খুলার মত শক্তি পাচ্ছি।কোনরকমে চোখ খুললাম।চোখ খুলার পর খেয়াল করলাম অরন্য আমার পাশে বসে আছে।সাথে কিছু খাবার নিয়ে।আমি একটু তারাহুরা করে বসতে নিলাম।উনি আমাকে বলল

-এত তারাহুরা করার কিছু হয় নি।আপনি আস্তে আস্তে উঠুন।আর উঠে এগুলো খেয়ে নিন।আপনাকে দেখে মনে হচ্ছে সকাল থেকে কিছু খান নি।তাই প্রেসার কমে গিয়েছিল।আপনি একটু এগুলো খেয়ে নিন।

উনার কথা শুনে মনে মনে বলতে লাগলাম।সকাল থেকে যা গেল আমার উপর এরপর খাওয়া কি গলা দিয়ে নামে নাকি।তবে আমি অনেক খেতে পারা একটা মেয়ে ।সারাদিনেই কিছু না কিছু খেতাম।সত্যি বলতে এ মুহুর্তে  আমার পেটে খুব ক্ষুধা লেগেছে।তাই সামনে মুরগীর রোস্ট আর পোলাও টা দেখে লোভ সামলাতে পারলাম না।সামনে পেয়েই খেতে লাগলাম।গপ গপ করে খেতে লাগলাম।হঠাৎ  করে  খাবার গলায় বাজল আর হেচকি তুলতে লাগলাম।

কোন ভাবেই যেন হেচকি টা কমছিল না।হঠাৎ  করে খেয়াল করলাম উনি আমার সামনে এক গ্লাস পানি ধরল। আমি পানিটা নিয়ে এক নিঃশ্বাসে খেয়ে ফেললাম।উনি আমাকে কি ভাবছে সেটা দেখার দরকার আমি মনে করছি না।এ মুহুর্তে আমার ক্ষুধা লেগেছে আর আমাকে এখন খেতে হবে এটাই জানি।তাই আমি আপন মনে খেতে লাগলাম।অল্পক্ষণের মধ্যেই আমার খাওয়া শেষ হল আর আমি রিলাক্স মোডে শুয়ে পড়লাম।আর উনি খাবার প্লেট টা টেবিলের উপর রাখতে গেলেন।যাক লোকটারে যতটা খারাপ ভেবেছিলাম ততটা খারাপ না এটা ভেবে মনটা শান্ত হল।

কিন্তু হুট করে উনি বললেন

-আপনি কি ঘুমিয়ে পড়েছেন নাকি?না ঘুমালে আপনার সাথে একটু কথা ছিল।

আমি নড়ে চড়ে বসে বললাম

-নাহ আমি তো ঘুমায় নি, কেন কি বলবেন? বলুন।

উনি এবার গম্ভীর গলায় বললেন

-সত্যি বলতে সবার চাপে পড়ে আমি আপনাকে বিয়ে করেছি।আমি আপনার বোন অর্পাকে প্রথম দেখায় খুব ভালোবেসে ফেলেছিলাম।ওকে নিয়েই একটা ছোট্র সংসার কল্পনা করে ফেলেছিলাম।সে জায়গায় আপনাকে কেন জানি না, চাইলেও মানতে পারছি না।আপনাকে আমি আঘাত দিয়ে কথাটা বলতে চাই নি তবে আমি খুব সোজা সাপটা স্বভাবের ছেলে যা বলি সরাসরি।না মানার ও একটা কারন আছে।আশা করি আপনি যথেষ্ট বুদ্ধিমতি আর সে কারনটা বুঝতে পেরেছেন।

উনার কথাগুলো শুনে কেন জানি না তেমন কোন খারাপ লাগল না।কারনটা আর কি হবে কারনটা তো এটাই হবে আপু সুন্দর আর আমি অসুন্দর।আমি তো আগেই বুঝেছিলাম আমার বিয়েটা আট দশটা মেয়ের মত হয় নি।তাই উনাকে জবাব দিলাম

-আপনাকে জোর করে আমাকে মানতে হবে না।আমি নিজেও চাই নি এভাবে আমার বিয়ে হোক।বিয়ের দিন সকালে অর্পা আপুকে কোথাও পাওয়া যাচ্ছিল না।কোথায় গিয়েছে কেউ বলতে পারল না।আর আপুর কোন রিলেশন ছিল এটাও কারও জানা নেই।এ মুহুর্তে  কি করবে কেউ বুঝতে পারছিল না।আর ঐ বাড়িতে আমি ছাড়া আর কোন মেয়ে বিবাহযোগ্য ছিল না।তাই সবার জোরাজোরিতে রাজি না হয়ে পারলাম না।আমি জানি অর্পা আপুর তুলনায় আমি কিছু না।অর্পা আপু অনেক সুন্দর আর আমি অসুন্দর।কিন্তু এটা নিয়ে আমার কখনও আফসোস হয় নি।আমি সবসময় নিজেকে পারফেক্ট ভাবে গড়ে তুলার চেষ্টা করেছি।কিন্তু ভাগ্যের কাছে এভাবে হেরে যাব বুঝতে পারি নি।আপনি চিন্তা করবেন না।আমি কখনও জোর করে কিছু করব না।সময়টা একটু পার হতে দিন আপনি চাইলে আমি নিজেই আপনাকে ডিভোর্স দিয়ে দিব।

আমার কথা গুলো শুনে উনি বেশ চমকে গেলেন।উনি হয়ত আশা করে নি আমি এমন কিছু বলব।কিছুক্ষণ স্তব্ধ থেকে উনি উত্তর দিলেন 

-সে যাইহোক সময়েই সব বলে দিবে।আপাদত আমি আপনাকে মেনে নিতে পারব না।আপনি এ বাড়িতে এসেছেন মেহমান হিসেবে আপনার যেন, কোন সমস্যা না হয় আমি সে বিষয় টা খেয়াল রাখব।কিন্তু দয়া করে আমার ভালোবাসা পাবার আশা রাখবেন না।কারন আমি আপনার বোনকে প্রথম দেখেই ভালেবেসে ফেলেছি।

আমি কিছুটা চুপ থেকে জাবাব দিলাম

-আপনি দয়া করে আমাকে সিরিয়ালের নায়িকা ভাববেন না।আমি আপনাকে জোর করব না এটা আমি বলেছি।কিন্তু আপনি আপনার স্ত্রী র সামনে অন্য একটা মেয়েকে ভালোবাসি বলবেন সেটা আমি মেনে নিব না।আপাদত ডিভোর্সের  আগ পর্যন্ত আমি আপনার স্ত্রী আর আপনি আমার স্বামী।সুতরাং  সম্পর্ক টা ঐভাবেই দেখবেন।আর আমার সামনে অন্য নারীকে ভালোবাসার কথা বলার আগে দশবার ভেবে বলবেন।আমি দেখতে অসুন্দর হলেও নিজেকে কখনও ছোট করে দেখি নি।এখনও দেখব না।দয়াকরে আমাকে অবলা নারী ভেবে যা ইচ্ছা বলে যাবেন না।দোষটা তো আমার ছিল না।আমি তো আপনাকে জোর করে বিয়ে করতে চাই নি।ভাগ্য এভাবে সব উলট পালট করে দিয়েছি।কিন্তু ভাগ্যের দোহাই দিয়ে নিজের জীবন বরবাদ করার মত মেয়ে আমি না।

এবার আমি উনার দিকে একটু খেয়াল করলাম দেখলাম উনার মুখটা বেশ চুপসে গিয়েছে।গেলেই বা কি।আমি কেন উনার এসব কথা শুনে নিজেকে ছোট করব।এটা বাংলা সিনেমা না আর আমি বাংলা সিনেমার নায়িকা সাবানা ও না।সুতরাং  যতদিন আমি অরন্যের বউ হিসেবে আছি, আমি আমার অধিকার আদায় করে নিব।তবে সেটা ভালোবাসা দিয়ে জোর করে না।উনি আমার কথা গুলো শুনে বেশ কিছুক্ষণ  চুপ করে জবাব দিলেন

-আমার মন যা চাই আমি তাই বলব আপনি না করার কে?আপনাকে সে অধিকার আমি দেই নি।নিজের অধিকারের বাইরে গিয়ে কথা বলবেন না বুঝছেন।দেখে তো মনে হচ্ছে ছেলে ফাসানের ব্যাপারে খুব চালু।

উনার এ কথাটা শুনার পর মাথায় একটু রাগ চড়ে গেল। তবুও নিজেকে শান্ত করে জবাব দিলাম

-আমি কি আপনাকে আমার চরিত্রের সার্টিফিকেট দিতে বলেছি? অথবা আমার ব্যপারে মন্তব্য করার অধিকার দিয়েছি নাকি?আপনি যেহেতু আমার ব্যাপারে বলার দুঃসাহস দেখিয়েছেন আমিও আপনার ব্যপারে বলব।এটাকে বলে লেভেল করা বুঝছেন।আপনি যেমন আমাকে তেমনেই হতে হবে।

-দেখুন আপনি কিন্তু খুব বেশি বকবক করছেন।আপনাকে দেখে তো প্রথমে ভেবেছিলাম  আপনি খুব বোকাসোকা কথায় বলতে জানেন না।এখন তো মনে হচ্ছে আপনার মুখ দিয়ে কথার ফুলঝুরি ফুটছে।আমার সাথে লাগতে আসবেন না।

আমিও এবার শান্ত হয়ে জবাব দিলাম

-বকবক আপনি শুরু করেছেন।দেখতে অসুন্দর দেখে কি ভেবেছেন আমি অবলা নারী।সিরিয়ালের মত করে আপনাকে খাটে শুতে দিব আর আমি নীচে শুয়ে পড়ব।তা হবে না মশাই আমার পাশে এসে ঘুমান।

-আপনি তো বেশ ডেন্জারাস মেয়ে।আমি আপনার সাথে ঘুমাব কেন?

আমি ভ্রু টা বেশ কুচকে বললাম

-তাহলে কোথায় ঘুমাবেন?

জাববে উনি বললেন

-পাশের রুমে ঘুমাব।

আমি হাসি দিয়ে বললাম

-তা হবে না মশাই।আপনি এখানেই ঘুমাবেন।

উনি আমার কথা শুনে বেশ অবাক হচ্ছে মনে হচ্ছে।অবাক হয়ে কিছুক্ষণ  চুপ থেকে রাগ রাগ ভাব নিয়ে বললেন

-এই যে শুনেন আপনি কিন্তু বেশি বাড়াবাড়ি  করছেন।

-সে যাই করি আমি ঘুমালাম তবে রুম ছেড়ে ঘুমানো যাবে না।রুম ছেড়ে বের হলে আমিও কিন্তু আপনার সাথে চলে যাব।

উনি বেশ চমকিত, পুলকিত হয়ে আমাকে বললেন

-আপনি তো বেশ নাছোরবান্দা। ওকে রুম ছেড়ে যাব না।আমি নীচে ঘুমাচ্ছি।এবার আমায় একটু রেহাই দিন।

আমিও মুচকি হেসে হেসে জবাব দিলাম

-ঠিক আছে ভূতমশাই।

উনি ভ্রূ টা কুচকে বলল

-ভূতমশাইটা কে আবার?

আমি হাসতে হাসতে বললাম

-কেন আপনি?

উনি অবাক হয়ে বলল

-আপনি আমার নাম ও ঠিক করে ফেলেছেন এর মধ্যে?

-হ্যা করেছি। 

উনি বিরক্ত হয়ে জাবাব দিলেন

-আপনি সত্যিই পাগল একটা মেয়ে।সেটা কি আপনি জানেন?

আমি আরও একটু হেসে নিলাম। হেসে জবাব দিলাম

-সেটা নতুন করে বলার কিছু না।আমি একটু নাছোরবান্দা সবাই জানে।আপনি ঘুমান।আর ধন্যবাদ এত কিছু খাওয়ানোর জন্য।সবগুলোই আমার প্রিয় খাবার ছিল শুধু চিনির পানিটা ছাড়া।

উনি কিছুটা চুপ হয়ে বলল

-দোহাই লাগে এবার চুপ হন আমাকে ঘুমাতে দিন একটু।

আমি হাত দুটো দিয়ে মুখ চেপে ইশারা করলাম ঘুমান।

(আপনারা হয়ত আমার এরকম আচরণ দেখে অবাক হচ্ছেন আমি এমন কেন করলাম।সত্যি বলতে আমি ছোট বেলা থেকেই খুব নাছোরবান্দা আর পাগলাটে স্বভাবের মেয়ে ছিলাম।পাগলামোর ভাব গুলো এত বড় হওয়ার পরও যায় নি।তাই পাগলামির সুযোগ পেলেই করে ফেলি।এই যে অরন্যের সাথে সবে মাত্র শুরু করেছি এরপর যে কত কি হবে কে জানে।আস্তে আস্তে সব বলব।)

যাইহোক সেদিনেের মত আমি ঘুমিয়ে পড়লাম।পরদিন সকালে উঠে আমি খেয়াল করলাম উনি নাক ডেকে ঘুমাচ্ছে।এমন ভাবে নাক ডাকছে মনে হচ্ছে চারদিকে ভূমিকম্প হচ্ছে।আমি কি করব বুঝতে না পেরে একটা..


 গল্পের নাম : হঠাৎ_বিয়ে

 পর্ব :  ৩য় পর্ব

লেখিকা-: শারমিন আচঁল নিপা


আমি কিছু বুঝতে  না পেরে এক গ্লাস পানি নিয়ে উনার নাক বরাবর ঢেলে দিলাম।ভূতমশাই খপ করে উঠে বসে বলতে শুরু করলেন

-কি হল? কি হল?আপনি এভাবে পানি দিলেন কেন?মাথার সব কি ছিড়ে গেছে নাকি আপনার?

আমি এবার হাসতে হাসতে বললাম

-মাথা তো আমার ঠিকেই আছে।বলি কি এভাবে যে নাক ডাকছেন মনে তো হচ্ছে ৭ মাত্রার ভূমিকম্প হচ্ছে।

খেয়াল করলাম উনি বেশ রেগে গিয়েছে আমার কথাটা শুনে। কিছুক্ষণ দম ধরে বসে থেকে আমাকে বললেন

-দেখেন এসব মজা আমার একদম পছন্দ না।আর এমন করবেন না।আপনি খুব বেশি করতেছেন।কালকে থেকে একের পর এক কাহিনী করে জ্বালাচ্ছেন।শেষমেষ আমি এ কোন পাগলের পাল্লায় পড়লাম।আল্লাহ আমায় রেহাই দাও।

আমি ভ্রূটা কুঁচকে বললাম

-হয়েছে হয়েছে এত কষ্ট পেতে হবে না।আমি আপনাকে এখনও তেমন কিছু করি নি।এত হতাশ হওয়ার মত কিছু হয় নি।এখন আমাকে একটু সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দেন তো।আমি তো এ বাসার কাউকে চিনি না।

ভূতমশাই রাগ রাগ গলায় বললেন

-কারও সাথে পরিচয় হওয়ার দরকার নেই।বাসায় অনেক মেহমান আপনার বের  হওয়ারেই দরকার নেই।ঘরে বসে থাকুন।

উনি আরও কিছু বলতে যাবেন ঠিক এ মুহুর্তে  দরজায় কেউ নক করে বলতেছে

-অরন্য দরজাটা খুল।বউ নিয়ে নীচে বসার রুমে আয়।সবাই বউ দেখার জন্য অপেক্ষা  করছে।

উনি আমার সাথে কোনরূপ কথা না বাড়িয়ে  ঐ মহিলাকে জাবাব দিলেন

-ফ্রেশ হয়ে আসতেছি।তুমি যাও।

-আচ্ছা গেলাম আমি।

উনি উঠতে যাবে ঠিক এ মুহুর্তে  উনার পাশে বসে উনাকে বললাম

-আচ্ছা আপনার বাসায় কে কে আছে বলুননা?

এবারও উনি রেগে গিয়ে বললেন

-আপনার এত কিছু জানতে হবে না বললাম তো।অতিথি হয়ে এসেছেন আর সময় মত ঠিক চলে যাবেন।এটাই মাথায় রাখুন।বাসায় কে আছে এটা জেনে আপনার কি হবে?

উনার কথাগুলো শুনলে যেন গা জ্বলে যায়।কিন্তু আমিও নাছোরবান্দা যতক্ষণ  পর্যন্ত না বলবে ততক্ষণ পর্যন্ত উঠতে দিব না।আমি বললাম

-আপনি না বললে আমি কিন্তু আপনাকে উঠতে দিব না।আগে বলেন কে কে আছে।

-আপনি তো সত্যিই অনেক নাছোরবান্দা।বলব না কে কে আছে কি করবেন?আপনি একরোখা হলেও আমি আপনার থেকে বেশি একরোখা।আমি কিছুই বলব না।

আমি গলায় একটা কাশি তুলে বললাম

-এহেম,এহেম।ওকে বলতে হবে না। যান ওয়াশ রূমে যান।

উনিও আমার এভাবে হার মানা দেখে খুশি হল।কিন্তু যখন ওয়াশরুমে যেতে নিল আমি আমার পা টা বাড়িয়ে দিলাম।আমার পায়ে উনার পা লেগে উনি হোঁচট খেয়ে পড়ল।আর চিল্লায়ে বললেন

-আপনি ইচ্ছা করে এমন করছেন তাই তো?ইচ্ছা করে এমন করলেন কেন বলেন?

আমি মুচকি মুচকি হেসে বললাম

-কোথায় আমি তো কিছু করে নি।আপনি বলেন নি তাই শাস্তি পাচ্ছেন।যদি এবার ও না বলেন তাহলে আরও অনেক কিছুই আপনার জন্য অপেক্ষা  করছে। এবার ভেবে দেখুন কি করবেন।

উনি বেশ বুঝতে পারল আমি অনেক নাছোড়বান্দা তাই আরও অনাকাঙ্ক্ষিত কিছু ঘটার আগে বললেন

-আমার পরিবারে বাবা,মা,আমি আর আমার বড় বোন আছে।বাবা বিদেশ থাকে সবসময়।আর মা দেশে থাকে কিন্তু প্রায় সময় অসুস্থ থাকে।আর বড় বোন তার স্বামী নিয়ে লন্ডন থাকে।একটু আগে যে মেয়েটা ডেকে গেল উনি আমার বড় বোন।আর আমার বাবা আমার বিয়েতে আসে নি।উনি সবসময় ব্যস্ত থাকেন।

-আচ্ছা তাহলে আপনার বাসায় রান্না করে কে?

উনি রাগ হয়ে বললেন

-এটাও কি আপনার জানতে হবে?

আমি এবার ভাব মাখা মুখ নিয়ে বললাম

-হ্যা ভূতমশাই জানতে হবে।

উনি মুখটা বাকিয়ে উত্তর দিলেন

-বাবুর্চি রান্না করে।এবার আমাকে ওয়াশরুমে যেতে দিন।আপনিও রেডি হন।বসার রুমে সবাই অপেক্ষা করছে।পারলে একটু ভালো করে সেজে যাবেন।না হয় মান সম্মান আর থাকবে না।বিয়ে তো করেছেন ফাঁসিয়ে।সেটা তো আর কেউ বুঝবে না।সুতরাং একটু গুছিয়ে যাবেন নীচে।পরে সময় আর সুযোগ মতে আলাদা হয়ে যাব আমরা।আশা করি বুঝতে পারছেন।

কথাটা শুনে বুকের ভিতরটা কাঁপতে লাগল।যতই হোক  উনি এখন আমার স্বামী হয়।কোন মেয়েই হয়ত চাইবে না সে ডিভোর্সি  হোক।খারাপ লাগলেও নিজেকে বেশ সামলে ভূতমশাইকে জবাব দিলাম

- আমি ঐসব ময়দা মেখে নীচে যেতে পারব না।আমি যেমন ঐরকমেই যাব।কে কি বলল তাতে আমার যায় আসে না।ময়দা মেখে নিজের বাহ্যিক সৌন্দর্য  বাড়ানোর কোন ইচ্ছা আমার নাই।আশা করি বুঝতে পারছেন।

উনি এতক্ষণে  বেশ ভালোই বুঝতে পেরেছে যে আমি খুব নাছোরবান্দা তাই উনি শুধু বললেন

-আপনার যা ইচ্ছা করুন আমাকে বলতে আসবেন না।যেভাবে ইচ্ছা ঐভাবে নীচে যান।আমার তাতে কিছু যায় আসে না।

কথাগুলো বলে ওয়াশরুমে ঢুকে গেলেন।এর মধ্যে আমি খেয়াল করলাম সারা ঘর বেশ অগোছালো হয়ে আছে।তাই ঘরটা গুছানো শুরু করলাম।আলমিরা  থেকে উনার জন্য কাপড় বের করে বিছানায় সাজিয়ে রাখলাম যাতে করে উনি ওয়াশ রুম থেকে এসে হাতের নাগালে সব পেয়ে যায়।উনার ঘড়ি, ওয়ালেট সব একত্রে এক জায়গায় রাখলাম।আমি চটপট করে একটা শাড়ি পড়ে ফেললাম।যতটুকু সম্ভব নিজেকে ময়দা মাখা ছাড়া গুছানোর চেষ্টা করলাম।সবকিছু ঠিক করতে করতে খেয়াল করলাম উনি ওয়াশরুম থেকে বের হয়েছে।ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে উনি সারা ঘরটা দেখে একটু অবাক হল।বিছানার উপর উনার কাপড়গুলো দেখে বললেন

- এখানে এগুলো কে রেখেছে?ঘরটা এত তাড়াতাড়ি এত পরিপাটি করে কে গুছিয়ে দিয়ে গেল।

আমি লাজুক স্বরে জাবাব দিলাম

-এসব কিছু আমি করেছি। 

আমার কথাটা শুনে উনার মুখটা যেন আরও চুপসে গেল।উনার চুপসানো মুখটা পুরো আলোর চপের মত লাগছিল।চুপসানো মুখ নিয়ে আমাকে বলল

-এত কিছু করতে কেউ তো আপনাকে বলে নি।এতকিছু করতে গেলেন কেন?

আমিও বেশ ঝাঁঝালো  গলায় জাবাব দিলাম

-নিজের ঘর নিজে গুছিয়েছি তাতে আপনার কি মশাই?

উনি ভ্রূটা কুঁচকে বলল

-আপনার ঘর মানে?এটা আপনার ঘর কবে হল?

আমি হাসি হাসি মুখে উত্তর দিলাম

-কেন স্বামীর ঘরেই তো স্ত্রীর ঘর হয়।বিয়েটা যেভাবেই হোক।ডিভোর্সের  আগ পর্যন্ত আমি আপনার স্ত্রী আর আপনি আমার স্বামী।সুতরাং  ঘর গুছাতে আমি পারব নিশ্চয়।

ভূতমশাই রাগ রাগ গলায় বললেন

-আপনি একটু বেশিই বকেন।আর আপনাকে এ ড্রেস বের করতে কে বলেছে?আমি তো এটা পড়ব না।

-আমার কাছে এটা ভালো লেগেছে তাই এটা বের করেছি।পড়লে খুশি হব।

উনি এবার ভীষণ  গম্ভীর একটা মোড নিয়ে জবাব দিলেন

-আপনার খুশিতে আমার কি যায় বা আসে।?করেছেন তো ফাঁসিয়ে বিয়ে আবার অধিকার ফলাতে আসতেছেন।লজ্জা হওয়া উচিত আপনার।

এ কথাটা শুনে বুকের ভিতরে হুহু করে কষ্টের সাইরান বাজতে লাগল।চোখের কোণে হালকা মেঘ ও জমতে লাগল।তবুও নিজেকে অনেক শক্ত করে উনাকে বললাম

-আপনার ইচ্ছামত পড়ে নিন।সমস্যা নেই।

উনিও আমার কথা শুনে বিছানা থেকে আমার রাখা ড্রেসটা আলমিরাতে রেখে উনার পছন্দ মত একটা ড্রেস পড়লেন।কিন্তু আমিও কম নাছোরবান্দা না উনাকে এর শাস্তি তো আমি দিবই।কিভাবে কি করা যায় বেশ ভাবতে লাগলাম।ভাবতে ভাবতে যেন চিন্তার আকাশে হাবুডুবু খেতে লাগলাম।

হঠাৎ করে ভূতমশাই এর তুড়ির শব্দে চিন্তার ঘোর কাটল।ভূতমশাই তুড়ি বাজাতে বাজাতে বললেন

-এই যে আপনি উপরে তাকিয়ে কি দেখছেন?

-নাহ তেমন কিছু না।কি হয়েছে বলুন?

-আপনি আর কোনদিন আমার অনুমতি ছাড়া আমার আলমিরায় হাত দিবেন না বুঝছেন।

আমিও কথাটা শুনে বেশ হেসে লুটোপুটি  খাচ্ছিলাম।লুটোপুটি  খেয়ে তুড়ি বাজাতে বাজাতে বললাম

-ঐ হ্যালো স্বামীর আলমিরায় হাত দিতে অনুমতি  লাগে নাকি।আমাকে জ্ঞান  দিতে আসবেন না।আমি অন্যায় কিছু করি নি।

উনি বেশ বিরক্ত হয়েই আমাকে বললেন

-আপনি সত্যিই পাগল।আপনার মাথার তার মনে হয় সব ঢিলা।

আমি আবারও হাসতে হাসতে বললাম

-ভূতমশাই একটু ভুল বলে ফেলেছেন।

উনি উনার বিরক্ত মাখা মুখ নিয়ে প্রশ্ন করলেন

-কি ভুল শুনি?

আমি হাসি দিয়ে বললাম

-আমার মাথার তার ঢিলা না।

-তো আপনার মাথার তার কি?

-আমার মাথার তার তো সব ছিড়া।

এবার খেয়াল করলাম উনার মুখের বিরক্তের মাত্রাটা বেশ বৃদ্ধি পেয়েছে।বিরক্ত মাখা মুখ নিয়ে বললেন

-দোহাই লাগে।হাত জোড় করি আপনি আপনার বক বকানিটা একটু থামান।এবার বসার রুমে চলুন একটু।আমাকে মুক্তি দিন।

আমিও আমার শাড়ির আঁচল নাড়াতে নাড়াতে বললাম

-চলুন।।

এরপর দুজন নীচে গেলাম।নীচে যাওয়ার পর খেয়াল করলাম সবাই আমার দিকে কেমন ভাবে যেন তাকাচ্ছে।আর আমাকে দেখে বলছে অরন্যের কি কপালে চোখ ছিল নাকি এমন একটা মেয়ে কেউ বিয়ে করে আনে নাকি।তার উপর মেয়ের পরিবারও বেশি ধনী না কি দেখে এ মেয়ে বিয়ে করল আল্লাহ জানে ভালো।একের পর এক এসব কথা শুনে আমার মনটা ভীষণ খারাপ হতে লাগল।সবাই শুধু আমার বাহ্যিক সৌন্দর্যটাকেই দেখল আমার ভিতরটা বুঝার চেষ্টা করল না।ভিতরের মানুষটা কেমন আমি সেটা একটাবারও কেউ যাচাই করার প্রয়োজন অনুভব করল না।

হুট  করে খেয়াল করলাম আমার শ্বাশুড়ি  মা এসেছেন।সবাই শ্বাশুড়ি মাকে দেখে চুপ হয়ে গেল।শ্বাশুড়ি  মা এসে আমাকে দেখে বললেন...ad2

 গল্পের নাম : হঠাৎ_বিয়ে

 পর্ব :  ৪র্থ পর্ব

লেখিকা-: শারমিন আচঁল নিপা

আমার শ্বাশুরি মা আমাকে এসে দেখে বললেন

-তোমার নাম কি মা?

আমি চট করে উনাকে সালাম করে, উত্তর দিলাম

-আমি অনন্যা।

উনি হাসি মুখে বললেন

-বাহ খুব সুন্দর নাম।

আমি মাকে বললাম

-মা আপনি এদিকে এসে বসুন।মা আপনি এ অসুস্থ শরীর নিয়ে কষ্ট করে এখানে আসলেন কেন?শুনেছি আপনাকে নাকি ডাক্তার বেড রেস্ট দিয়েছে।এ শরীর নিয়ে এখানে কষ্ট করে আসার কি দরকার ছিল।আপনি বললে আমিই আপনার রুমে চলে যেতাম।আমি আপনার রুমটা চিনলে সকালে উঠেই চলে যেতাম।কিন্তু আপনার রুমটা চিনি  না আর এ বাড়িতে নতুন তো তাই কিছু চিনতে পারি নি। চিনলে আমিই চলে যেতাম।মা কষ্ট হয় নি তো আসতে?

উনি এক রাশ হাসি দিয়ে বললেন

-আমার মা টা দেখি অনেক সুন্দর করে কথা বলে।আমার মা টা দেখতে যেমন রূপবতী তেমন গুণবতীও।

মায়ের মুখে রুপবতী কথাটা শুনে যেন নিজের চোখে অজোরে বৃষ্টি নামতে লাগল।জীবনে এ প্রথম কেউ আমাকে রূপবতী বলেছে।নিজেকে সামলাতে অনেক চেষ্টা করলাম।কিন্তু জানি না কেন আবেগটা সামলাতে পারছিলাম না। তাই মাকে ধরে হুহু করে কেঁদে কেঁদে বললাম

-মা আপনি আমাকে রূপবতী বলছেন।আমাকে আজ পর্যন্ত কেউ রূপবতী বলে নি।আপনার মুখে রূপবতী কথাটা শুনে কেন জানি না আবেগটা সামলাতে পারলাম না।

মা আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন

-সবাই তো তোমার বাইরের রূপটা দেখেছে কেউ তোমার ভিতরের রূপটা দেখে নি। তোমার ভিতরের রূপটা যদি কেউ দেখত তাহলে সবাই তোমাকে রূপবতীই বলত।আমি যে তোমার ভিতরের মানুষটাকে উপলব্ধি  করতে পেরেছি যার কারনে তুমি আমার কাছে সবচেয়ে রূপবতী।আমি আমার মেয়ে নীলার মুখে সবটা শুনেছি বিয়ের ব্যাপারে।শুন মা আমার ছেলে তোমার কপালে ছিল তাই তোমার সাথে এভাবে বিয়ে হয়েছে।আমার ছেলের ভাগ্যে তুমিই ছিলে।কে কি বলল কানে দিবে না।কারন মানুষ যাই বলুক নিজের কাছে যেটা সঠিক মনে হবে সেটাই করবে।মানুষের কাজেই কথা বলা।মনে রাখবে যখন তোমাকে নিয়ে কেউ নেতিবাচক মন্তব্য করবে ভেবে নিবে সে তোমার জয়ে ঈর্ষান্বিত তাই তোমার সুখে তার মন কাতর হয়েছে বলেই তোমার নামে সে নেতিবাচক মন্তব্য করছে।জীবনে চলার পথে অনেক বাধা আসবে।লক্ষ্য স্থির রেখে সামনে এগিয়ে যেতে হবে।মানুষের কথায় কান দিয়ে নিজের লক্ষ্য থেকে বিচ্যুতি হবে না।

মায়ের কথাগুলো শুনে মনে যেন আরও ভরসা পেলাম।মাকে জড়িয়ে ধরে আবেগে আরও কাঁদতে লাগলাম।মা মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বললেন

-পাগলিটা কাঁদছে কেন এত।শোন মা আজকে রাতের পর থেকে বাড়িটা ফাঁকা হয়ে যাবে।নীলাও চলে যাবে রাতের ফ্লাইটে লন্ডনে।বাড়িতে আমি তুমি আর অরন্য ছাড়া কেউ থাকবে না।প্রতিদিন বাবুর্চির রান্না খেতে খেতে বিরক্ত হয়ে গিয়েছি। আমি জানি এবার আমি চিন্তা মুক্ত কারন আমাকে আর বাবুর্চির রান্না খেতে হবে না আমার বউ মা এখন আমাকে সব রান্না করে খাওয়াবে।কি রে মা খাওয়াবে না?

আমি চোখের পানি মুছতে মুছতে বললাম

-কেন পারবনা।এত ছোট একটা আবদার পালন করতে পারব না মেয়ে হয়ে।তাহলে আমি তেমার কেমন মেয়ে!।চিন্তা কর না আমি সবটা গুছিয়ে নিব।আমাকে শুধু বুঝিয়ে দিও।আর দোআ কর।

উনি হাসতে হাসতে বললেন 

-সে তো অবশ্যই।

চারপাশে এ মুহুর্তে  বেশ নিস্তবতা বিরাজ করছে।সবাই খুব চুপ হয়ে গিয়েছে।খেয়াল করলাম আমার ভূতমশাই আমার দিকে আলুর মত চুপসানো মুখ নিয়ে হা করে তাকিয়ে আছে।আমিও এ সুযোগে একটু পাগলামি করা  থেকে নিজেকে বিরত রাখতে পারলাম না।সুযোগ বুঝে ভূতমশাইকে চোখ টিপুনি দিলাম।ভূত মশাই আমার চোখ টিপুনি দেখে একটু নড়েচড়ে দাঁড়াল।আমি ভূত মশাই এর থেকে মনোযোগ সরিয়ে মা এর দিকে তাকিয়ে বললাম

-মা এবার ঘরে চলুন।বেশিক্ষণ  এভাবে থাকা ঠিক হবে না।আপনি আমার সাথে ঘরে চলুন তো আর আমাকে আপনার ঘরটা চিনিয়ে দেন যাতে করে আমার পরে যেতে যেন অসুবিধা না হয়।

মা হাসতে হাসতে বললেন

-চল আমার সাথে চল।

আমি মাকে নিয়ে ঘরে গেলাম।এবার মা আমার হাতটা ধরে বললেন

-দেখো মা অরন্য বেশ সোজা,সাপটা সরল স্বভাবের ছেলে। তুমি অরন্যকে ভালো রেখ।কখন ও কষ্ট দিও না।

আমি মায়ের হাতটা চেপে ধরে বললাম

-মা বিয়েটা যেভাবেই হোক আমি এখন অরন্যের স্ত্রী।অরন্যের ভালোমন্দের বিষয়টা আমি মাথায় রাখব।আপনি শুধু আমার জন্য দোআ করবেন।

মা আমার মাথায় আবার হাত বুলাতে বুলাতে বললেন

-দোআ করি অনেক সুখী হও।

মায়ের আদর মাখা স্পর্শ  নিয়ে আমি বের হলাম মায়ের রুম থেকে।মায়ের রুম থেকে বের হয়ে খেয়াল করলাম ভূতমশাই এক জায়গায় স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে  আছে।এই সুযোগ আমার প্ল্যান টা কাজে লাগানোর।আমি একটু কোক মুখে নিয়ে ভূতমশাই এর কাছে গিয়ে জোরে হাঁচি দিলাম আর মুখের সব কোক ওনার গায়ে ফেললাম।উনি বেশ লাফিয়ে উঠে বললেন

-আমি তো জানি আপনি ইচ্ছা করেই এমন করেছেন।কেন করেছেন এমন?আপনি আমার সাথে এমন করেন কেন?মাকে তো দেখলাম খুব হাত করে ফেলেছেন।ফাঁসানোর ব্যাপারে তো আপনি অনেক উস্তাদ।মাকেও ফাঁসিয়ে দিয়েছেন পুরা।

আমি এবার ফাঁসানোর কথাটা শুনে এতটা গায়ে লাগালাম না।উনাকে সজোরে বললাম

-সে আমি যা ইচ্ছা করি আপনার কি?যান ড্রেস টা চেন্জ করে আগের ড্রেসটাই পড়ুন যেটা আমি পছন্দ করে ছিলাম।আমার কথা শুনেন নি তো তাই এমন হয়েছে।মাঝে মাঝে বউ এর কথা শুনতে হয়, নাহয় এমন অনাকাঙ্ক্ষিত  ঘটনা ঘটতেই পারে।

একথাটা শুনার পর উনার আর বুঝতে আর বাকি রইল না যে, আমি ইচ্ছা করে এমন করেছি।কিন্তু উনার মুখে তেমন রাগের ছাপটা এখন লক্ষ্য  করলাম না।তবুও মুখটাকে একটু বাকিয়ে জবাব দিলেন

-আপনার পছন্দের ড্রেসটা পড়ব না।আপনাকে আমার ভালো লাগে না।অর্পাকে দেখে প্রথম দেখায় ভালো লেগে গিয়েছিল যে ভালোলাগাটা আপনার প্রতি চাইলেও আনতে পারছি না।

আমি এবার হালকা করে উনার একটু কাছে গেলাম।কাছে গিয়ে বললাম

-"প্রথম দেখায় ভালো লেগে যাওয়ার চেয়ে দেখতে দেখতে ভালো লাগাটা অনেক শ্রেয়"

আপনি আমাকে দেখতে থাকুন।এ বলে চোখ টিপুনি দিয়ে বললাম ঐ ড্রেসটা পড়লেই ভালো লাগবে।পড়বেন কিন্তু।

-পড়ব না।

এ বলে উনি  তারাহুরা করে রুমে চলে গেলেন।কিছুক্ষণ  পর খেয়াল করলাম উনি সিঁড়ি দিয়ে নীচে নামছে।আমি উনাকে দেখে পুরো অবাক কারন উনি ঐ ড্রেসটাই পড়েছে আমি যে টা পড়তে বলেছিলাম।আমি তো উনার দিক থেকে চোখ সরাতে পারছিলাম না।মনের ভিতর একটা হিমেল হাওয়া বইতে লাগল।উনি হুট করে আমার কাছে এসে বললেন

-ভাববেন না আপনার কথা রাখতে পড়েছি। আমার ড্রেস আমি পড়ব যা ইচ্ছা পড়ব।কারও কথায় পড়ি নি।

আমি এবার কিছুই বললাম না।শুধু মুচকি একটু হেসে দিয়ে বললাম

-ঠিক আছে কিছু ভাবব না।

ছোটখাট খুনসুটি দিয়েই সারাটাদিন পার করলাম।সন্ধ্যার দিকে একেক  করে সব মেহমান চলে গেল।বাড়িটা বেশ নিস্তব্ধ হয়ে গেল।নীলা আপুও রাতের ফ্লাইটে লন্ডন চলে গেল।যাওয়ার আগে শুধু বলে গেল বিয়ে যেভাবেই হোক আমি যেন সবটা মেনেজ করে নিই।আমি ও আশ্বাস দিলাম সব ঠিক করে নিব।পরিবারের এমন সাপোর্ট পাব কখনও আশা করি নি।সবাই আমার পাশে আছে এটা ভেবে মনে যেন আরও ভরসা পেলাম।

সারাদিন পার করে রাতে রুমে ঘুমাতে গিয়ে দেখলাম ভূতমশাই বসে কি যেন কাজ করছে।আমি এক মগ কফি বানিয়ে তার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললাম

-এই যে আপনার কফিটা।

উনি আমার হাত থেকে কফিটা নিয়ে কফিতে চুমুক দিয়ে কিছুক্ষণ  টেস্টটা বুঝার চেষ্টা করল মনে হচ্ছে।আর আমাকে বললেন

-কফিটা কে বানিয়েছে।

আমি লজ্জা মাখা মুখে বললাম

-কেন? 

-কফিটা ভালো হয়েছে তাই।

আমি লজ্জা মাখা মুখে বললাম

-কফিটা আমি বানিয়েছি।

উনি এবার মুখটাকে আলুর চপের মত করে ফেললেন।ভুলক্রমে উনি আমার প্রশংসা করে ফেলেছেন এটা মনে হয় উনার উচিত হয় নি তাই মুখটা বাংলার পাঁচ করে ফেললেন। এবার আমাকে একটু পঁচিয়ে উনি উনার দায়িত্ব পালন করবেন সিউর।যাক যা ভেবেছিলাম তাই করেছেন।উনি মুখটাকে বাংলার পাঁচ বানিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন

-এজন্যই বলি টেস্ট টা এত জঘন্য  কেন।

আমি উনার কথার ভ্রূক্ষেপ না করে একটু হাসি দিয়ে চলে গেলাম।

পরদিন সকালে উঠে সব রান্না করলাম।রান্না করে মায়ের খাবারটা নিয়ে মায়ের রুমে গেলাম।মা আমাকে দেখে হাসি মাখা মুখ নিয়ে বলল

-কি রে মা এখন এত খাবার নিয়ে আসলে কেন?

-এত খাবার কোথায় দেখলে তুমি।এগুলা সব খেতে হবে তোমাকে।না হয় সুস্থ হবে না।আমার কাছে খাবার নিয়ে কোন ফাঁকি দিতে পারবে না।খেতে না চাইলে মাইর দিয়া জোর করে খাওয়াব।

উনি হাসতে হাসতে আমার মাথায় হাত দিয়ে বললেন

- বুঝতে পেরেছি আমার আর ফাঁকি দেয়া যাবে না।তা দাও খেয়ে নেই।

আমি মাকে খাওয়াতে লাগলাম।একের পর এক গল্প শুনতে লাগলাম।মনে হল উনি অনেক দিন পর মন খুলে কথা বলছেন।ঠিক এসময় অরন্য এসে বললেন

-মায়ের রুমে আপনি এখন কি করছেন?

-মায়ের জন্য খাবার নিয়ে এসেছিলাম।

-আচ্ছা আপনি যান মায়ের সাথে আমার কথা আছে।

পাশ থেকে মা বললেন

-অনন্যা তো পর না অনন্যার সামনেই বল কি বলবি।

- না মা আমি একা কথা বলতে চাই।

আমিও আর কথা না বাড়িয়ে মায়ের পাশ থেকে উঠে চলে আসলাম।কিছুক্ষণ  পর উনি কথা শেষ করে খাবার খেতে আসলেন আমি খাবার গুলো খেতে দিলাম।খেয়াল করলাম গপ গপ করে খাবার খাচ্ছে।আমি বললাম

-আরে মশাই আস্তে খান।সব শেষ হয়ে গেলে আবার রান্না করব।

-মানে?এগুলা কে রান্না করেছে?

লাজুক মুখে জবাব দিলাম

-আমি।

-এজন্যই বলি এত জঘন্য কেন।

এ বলে উনি খেতে লাগলেন।আমি তখন বললাম

-হুম জঘন্য খাবারেই এভাবে খাচ্ছেন।ভালো খাবার না জানি কিভাবে খেতেন।

আমার কথাটা কানে তুললেন না মনে হচ্ছে।খেয়েই যাচ্ছেন।এবার উনাকে বললাম

-এই যে শুনছেন

-হ্যা! কি বলবেন বলুন।

-আমি একটু বাইরে যেতে চাই।কিছু জিনিস কিনতে হবে।রান্নার জন্য কিছু সবজি লাগবে।আমি গেলে মনমত কিনে আনতে পারতাম।

-আপনি গেলে যান।তবে কি দিয়ে যাবেন?একটা গাড়ি আমি নিয়ে যাব আর একটা গাড়ি থাকলেও সে গাড়ির ড্রাইভার নেই।ড্রাইভারের স্ত্রী  অসুস্থ তাই বাড়ি গিয়েছে।আপনি কিভাবে যাবেন?

আমি মুচকি হেসে বলললাম

-ঐ গাড়ির চাবিটা দিয়ে যান আমি চলে যেতে পারব একা।

উনি অবাক হয়ে বললেন

-একা চলে যেতে পারবেন মানে?গাড়ি কে চালাবে?

-কেন আমি চালাব।

আমার কথা শুনে এবার মনে হয় উনি বেশ চমকালেন।আমার মুখ থেকে এমন কথা উনি আশায় করেন নি হয়ত।আমাকে জিজ্ঞেস  করলেন

-আপনি গাড়ি চালাতে পারেন?

আমি হাসতে হাসতে বললাম

-হ্যা পারি।অসুন্দর বলে নিজেকে কখনও ছোট ভাবি নি।সবকিছু শিখার চেষ্টা করেছি।নিজেকে পারফেক্ট ভাবে গড়ে তুলার চেষ্টা করেছি।

আমার কথাটা শুনে উনি কিছুক্ষন আমার দিকে তাকিয়ে রইলেন।তারপর বললেন

-আচ্ছা আমি চাবি দিয়ে যাব।

তারপর উনি আমাকে চাবি দিয়ে চলে গেলেন।

আস্তে আস্তে দিন কাটতে লাগল।অরন্যের সাথে খুনসুটি গুলো বাড়তে লাগল।খেয়াল করলাম অরন্যও অনেক পরিবর্তন হতে লাগল।

এর মধ্যে হুট করে অরন্য একদিন...

 গল্পের নাম : হঠাৎ_বিয়ে

 পর্ব :  ৫ম পর্ব

লেখিকা-: শারমিন আচঁল নিপা


এর মধ্যে হুট করে অরন্য একদিন অফিস থেকে এসে আমাকে বলতেছে
-আপনি একটু তাড়াতাড়ি রেডি হন।আপনাকে নিয়ে একটু এক জায়গায় যাব।
অরন্যের এরকম কথা শুনে যেন আমার মনটা নাচতে শুরু করল।কিন্তু অরন্য আমাকে কোথায় নিয়ে যাবে?জানার জন্য মনটা আনচান করতেছে।তাই নিজের আবেগ আর সামলাতে পারলাম না।অরন্যকে বলেই ফেললাম
-আপনি আমাকে কোথায় নিয়ে যাবেন?
অরন্য বেশ রাগ রাগ গলায় বললেন
- আপনাকে রেডি হতে বলেছি আপনি রেডি হন।এত কিছু জানতে হবে না।আপনি একটু বেশিই বকেন।এত বকা ভালো না।যান রেডি হয়ে আসুন।
আমি মুখটা খুব কাচুমাচু করে যেতে নিলাম।উনি পিছন থেকে আবার ডেকে বললেন
-শুনেন?
আমি হাসি দিয়ে পিছনে ফিরে বললাম
-হ্যা বলেন।আমি জানতাম আপনি বলবেন কোথায় যাব।বলেন কোথায় যাব।
উনি আরেকটু গম্ভীর গলায় জবাব দিলেন
-আপনার মাথায় সত্যিই গোবর আমি বলার আগেই বকবক করে যাচ্ছেন।আমি কোথায় যাব সেটা বলার জন্য ডাকে নি।
আমি বেশ মন খারাপ হয়ে উনার দিকে তাকিয়ে বললাম
-তাহলে কেন ডেকেছেন?
-আমি ডেকেছি এজন্য যে আপনি একটা শাড়ি পড়বেন আজকে।
-হঠাৎ শাড়ি পড়ব কেন?
-আমি বলেছি তাই পড়বেন।
-হুহ আপনি বললেই পড়তে হবে নাকি।আমি পড়ব না আপনি কি করবেন?
-আপনাকে পড়তেই হবে।
-বলেছি তো পড়ব না।
উনি এখন বেশ রেগে গিয়ে বললেন
-আপনার যা ইচ্ছা করুন।
এ বলে উনি চলে গেলেন।আমারও উনাকে রাগাতে পেরে খুব ভালো লাগতেছে।কিন্তু কি শাড়ি পড়ব?কিছুই যেন মাথায় আসছে না।আজকে প্রথম ভূতমশাই আমাকে কোথাও নিয়ে যাবে।কেন জানি না ভূতমশাই এ কয়েক দিনে অনেক পাল্টে গিয়েছে। আগের মত আর আমাকে কষ্ট দিয়ে কথা বলে না।তার এ পাল্টানো দেখে আমি খুব খুশি।যাইহোক আলমিরা খুলে সব শাড়ি দেখতে লাগলাম।খুশিতে যেন সবকিছু এলোমেলো হয়ে গেল।এত শাড়ির মধ্যে ভূতমশাই কোন শাড়িটা পড়লে খুশি হবে ঠিক বুঝতে পারছি না।দেখতে দেখতে আলমিরার সব শাড়ি খাটের উপর রাখলাম।ভূতমশাই আমার কাছে এসে বললেন
-আপনি এখনও রেডি হন নি?খাটের উপর শাড়ির মেলা বসিয়ে ফেলছেন একদম।এত শাড়ি খাটের উপর রেখেছেন কেন?
আমি তোতলাতে তোতলাতে জবাব দিলাম
-নাহ মানে!নাহ মানে!
- কি নাহ মানে মানে করছেন?স্পষ্ট করে বলুন কি হয়েছে।এমনিতে তো কথা একটাও মাটিতে পড়ে না এখন এভাবে তোতলাচ্ছেন কেন।ঠিক করে বলুন কি হয়েছে।
আমি মুখটা একটু অসহায় অসহায় ভাব নিয়ে বললাম
-নাহ মানে!
-আবার নাহ মানে করছেন?
-সত্যি বলতে আমি কোন শাড়িটা পড়ব ঠিক বুঝতে পারছি না।আপনি যদি একটু ঠিক করে দিতেন ভালো হত।আমার রেডি হতেও সুবিধা হত।
উনি এবার একটু মুচকি হাসি দিয়ে আমাকে বললেন
-একটু ঐদিকে যান।সামান্য শাড়িটা ঠিক করতে পারছেন না কোনটা পড়বেন।সব কাজ তো দেখি বলার আগে করে ফেলেন।আজকে কি এমন হল শাড়িটাও চয়েজ করতে পারছেন না।
-নাহ মানে!
-থাক আপনাকে আর নাহ মানে, নাহ মানে করতে হবে না।দেখতে দিন শাড়ি গুলা।
আমি একটু নড়ে পাশের দিকে সরে বসলাম।উনি আমার পাশে এসে বসলেন আর সব শাড়িগুলো দেখে একটা শাড়ি হাতে নিয়ে বললেন
-আপনি বরং কালো শাড়িটা পড়ুন।আপনাকে ভালো লাগবে।
কালো শাড়ির কথা বলাতে আমার মনের ভিতর কেমন জানি করে উঠল। কারন আমি ফর্সা না।তাই আমি উনাকে বললাম
-আমি দেখতে তো ফর্সা না।আমাকে কালো শাড়ি মানাবে বলে মনে হচ্ছে না।কালো শাড়িতে আমাকে আরও কালো লাগবে।একদম পেত্নী মনে হবে।আপনি কি আমাকে অপমান করার জন্য এমন বলছেন তাই না?
উনি আমার কথায় মনে হল বেশ বিরক্ত হল।হয়ত আমার মুখে এমন হতাশাজনক কথা উনি আশা করি নি।তাই উনি একটু বিরক্ত মাখা মেজাজে আমাকে বললেন
-আপনার মত সাহসী মেয়ের মুখে এমন কথা মানায় না।মা তো বলেছে সৌন্দর্য ভিতরে থাকে। বাহিরের সৌন্দর্য কোন সৌন্দর্য না।আপনাকে না আমি ভিতর থেকে দেখলাম।আপনি কালো শাড়িটাই পড়ুন।আপনাকে অপমান করার কোন ইচ্ছা আমার নাই।আপনার যদি মনে হয় আমি অপমান করার জন্য বলেছি তাহলে পড়ার দরকার নেই।
এ বলে উনি উঠে রুম থেকে বের হয়ে গেলেন।কি করব বুঝতে পারছিলাম না।কালো শাড়িটা পড়ব কিনা মাথায় আসছিল না।অবশেষে হাবিজাবি চিন্তা না করে কালো শাড়িটায় পড়লাম।এ প্রথম আমি কোন কালো ড্রেস পড়েছি দেখতে কালো ছিলাম বলে আমাকে কেউ কখনও কালো ড্রেস পড়ার জন্য বলে নি।আর আমিও পড়ে নি।আজকে কালো ড্রেসটা পড়াতে নিজের কাছেই যেন নিজেকে বেশ সুন্দর লাগছে।হালটা একটু পাউডার মুখে মেরে নিলাম।
হঠাৎ করে খেয়াল করলাম উনি রুমে প্রবেশ করেছেন।রুমে প্রবেশ করে আমাকে দেখে বলতেছেন
-বাহ আপনাকে তো বেশ ভালো লাগছে।কালো কাজল পড়লে আরও ভাল্লাগবে সাথে একটা বড় খোপা করলে।
-আমি কালো তার উপরা কালো কাজল পরলে তো চোখগুলা আরও কালো দেখাবে।
-সাদা কালো কোন ভেদাভেদ নেই।ভেদাভেদ তো মানুষের দৃষ্টি করে।আপনাকে সুন্দর দৃষ্টিতে কেউ দেখলে নিশ্চয় আপনাকে সুন্দর লাগবে।মানুষকে সুন্দর অসুন্দর তখন লাগে যখন মানুষের দৃষ্টি সুন্দর অথবা অসুন্দর হয়।আপনি চাইলে কালো কাজল পড়তে পাড়েন আপনাকে ভালো লাগবে।
ভূতমশাই এর কথাগুলো শুনে যেন বুকের ভিতর একটা রোমাঞ্চকর অণুভূতি আসল।উনার মুখে এরকম কথা শুনে যেন নিজের ভিতরে অসম্ভব ভালো লাগা কাজ করতে লাগল।সত্যি কখন যে উনাকে বড্ড ভালোবেসে ফেলেছি বুঝতেই পারি নি।হঠাৎ করে উনার ডাকে চিন্তার ঘোর কাটল
-কি ব্যাপার কোথায় হারিয়ে গেলেন?
-নাহ মানে?
-আবার নাহ মানে।হয়েছে হয়েছে।এবার চটপট বের হন।আমি নীচে নামছি।
এ বলে অরন্য নীচে নামার জন্য যেতে লাগল।হঠাৎ করে দরজার সামনে গিয়ে পিছন ফিরে আমাকে ডাক দিল
-এই যে শুনেন।
-জ্বি বলেন।
-একটা টিপ পড়লে খারাপ লাগবে না।আর মাথায় খোপা করুন।
অরন্যের এসব কথা শুনে যেন আমি লজ্জায় লাল হয়ে যাচ্ছি।অরন্য এভাবে আমাকে বলবে কখনও ভাবি নি।অরন্য এ বলে বাইরে গেল।আমি মাথায় খোপা করলাম আর একটা টিপ পড়ে নীচে নামলাম।খেয়াল করলাম মা নীচে বসে আছে।মা আমাকে দেখে বললেন
-আজকে আমার অনন্যা মা এত খুশি খুশি মনে কোথায় যাচ্ছে।
মায়ের কথা শুনে যেন আরও লজ্জা পেলাম।লজ্জায় কি যে করব বুঝতে পারছিলাম না।লজ্জায় লাল হয়ে নীচে তাকিয়ে রইলাম।মা আমার এ হাল দেখে আমার কাছে আসল আর আমার মাথাটা উপরে তুলে বললেন
-অরুর সাথে ঘুরতে যাওয়া হচ্ছে বুঝি।এতেই এত লজ্জা পাচ্ছে।আজকে তো মাকে অনেক সুন্দর লাগছে।দেখি হাত খানা এদিকে দাও।
আমি মায়ের দিকে হাতটা বাড়িয়ে দিলাম।মা তার হাত থেকে বালা জোরা খুলে আমার হাতে পড়িয়ে দিয়ে বলল
-বিয়ের পর হাত খালি রাখতে হয় না।হাতে সবসময় চুরি পড়ে থাকতে হয়।যাও তোমার তো আনন্দের শেষ নাই স্বামীর সাথে ঘুরে আস।আমার মহাজনও কাল পরশু আসবে তখন আমিও ঘুরব।তখন আমাদের প্রেম দেখে হিংসা কর না।
আমি হাসতে হাসতে মাকে বললাম
-কি যে বল না মা।
-আমি ত তোমার বন্ধুর মত।যাও মা।অরু আবার দেরি হলে রাগ করে বসবে।
আমি রেডি হয়ে বের হলাম।খেয়াল করলাম উনি গাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আছে।আমাকে দেখে এক নজরে আমার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল।আমি যেন লজ্জায় আরও কাতর হয়ে গেলাম।লজ্জায় কাতর হয়ে উনাকে বললাম
-কি ব্যাপার কি দেখছেন?
-তেমন কিছু না।
-তাহলে এভাবে তাকিয়ে আছেন।
-এমনি তাকিয়ে আছি সব কি তোমাকে বলতে হবে নাকি।এত বাচাল মেয়ে।এত বকতে পারে।
খেয়াল করলাম অরন্য আমাকে তুমি করে বলেছে।আমার যে কি খুশি লাগছে বুঝাতে পারব না।মনটা খুশিতে নাচতে লাগল।হুট করে উনি ডাক দিল
-অনন্যা এভাবে মূর্তির মত দাঁড়িয়ে আছ কেন?
- নাহ মানে!
-আজকে তোমার মুখ থেকে নাহ মানে আর গেল না।
-এই যে আপনি আমাকে তুমি বললেন তো তাই আর কি।
-তুমি আমার বয়সে ছোট তোমাকে কেন আপনি ডাকব।তোমাকে তুমি করেই ডাকব।শুন?
-জ্বি বলেন।
-আজকে তুমি গাড়ি চালাবা আমি তোমার পাশে বসব।
আমি খুশিতে লাফ দিয়ে গাড়িতে উঠতে লাগলাম।আর বলতে লাগলাম আচ্ছা আচ্ছা।আমি উঠতে যাব ঠিক এ মুহুর্তে একটা হোঁচট খেলাম।উনি আমাকে ঝাপটে ধরে বললেন
-তোমার ছটফটে,পাগলামি স্বভাবটা আর গেল না।আস্তে উঠ।
আমি আস্তে করে গাড়িতে উঠলাম।ভূতমশাই ও গাড়িতে উঠলেন।আমি গাড়িটা স্টার্ট দিয়ে বললাম
-কোথায় যাবেন মশাই।
উনি আমাকে রাস্তা বলে দিল আমি যেতে লাগলাম।যেতে যেতে একটা রেস্টুরেন্টের সামনে আসলাম।রেস্টুরেন্টে দুজন ঢুকলাম।অরন্য আমাকে আস্তে আস্তে করে একটা জায়গায় নিয়ে গেল।জায়গাটা পুরো মোমবাতি দিয়ে সাজানো পরিপাটি।দেখেই কেমন জানি আনন্দ লাগছে।একটা কেক আনল।আমাকে বললেন
-কেকটা কাটেন আপনি।
-হঠাৎ করে কেক কাটব কেন?
-কারন আজকে আপনার জন্মদিন।সেটা তো ভুলে বসে আছেন।
-ওহ হো আজকে ২৭ সেপ্টেম্বর সত্যিই তো আমার জন্মদিন।
-আমার জন্মদিন আপনি জানলেন কিভাবে?
-মা বলেছে।
আমি তো খুশিতে আত্নহারা যে ভুতমশাই এমন একটা সারপ্রাইজ দিয়েছে।হঠাৎ করে ভূতমশাই একটা রিং বের করে আমাকে পড়াতে নিল।ঠিক এ মুহুর্তে কোন একজন মেয়ে ওয়েটার এসে ডাক দিল।আমরা ওয়েটারের দিকে ফিরে চমকে গেলাম আর উনিও আমাদের দিকে ফিরে চমকে গেল আর মুখ লুকাতে লাগল।
কারন এ আর কেউ না এ যে অর্পা আপু।কিন্তু অর্পা আপু এখানে কি করছে?আমাকে আর অরন্যকে দেখে অর্পা আপু চলে নিতে নিল।আমি অর্পা আপুর হাতটা ধরে বললাম
-তুই এতদিন কোথায় ছিলি?হুট করে কোথায় চলে গিয়েছিলি।
খেয়াল করলাম অর্পা আপু কোন জবাব দিচ্ছে না।আমি একের এক প্রশ্ন করতে লাগলাম।হঠাৎ অর্পা আপু আমাকে...

 গল্পের নাম : হঠাৎ_বিয়ে

 পর্ব : ৬ষ্ঠ পর্ব

লেখিকা-: শারমিন আচঁল নিপা

হঠাৎ  অর্পা আপু আমাকে একটা কষিয়ে চড় দিয়ে বলল

-আমার কাছ থেকে সব ছিনিয়ে নিয়ে এখন নাটক করা হচ্ছে?লজ্জা লাগে না তোর?আমার জীবনের এ অবস্থা করে আমার অরন্যকে আমার হাত থেকে কেড়ে নিয়ে নিজের করেছিস আর এখন নাটক করছিস যে আমি কোথায় ছিলাম?তোকে তো নাটকের সেরা পুরুষ্কার দেওয়া দরকার।অনেক নাটক শিখে গিয়েছিস।নাটক করে আমার জীবনের ১২ টা বাজিয়ে অরন্যের গলায় ঝুলে পড়েছিস।তুই ভালো করেই জানতিস যে তোর যে চেহারা তোকে অরন্যর মত কেউ বিয়ে করবে না।তাই এত বড় নাটক করেছিস।লজ্জা লাগে না এখন আমাকে এসব জিজ্ঞেস  করছিা।আমাকে খুব হিংসা করতি তাই না?হিংসাকাতর হয়ে এমন করেছিস তো।নিজের বোনের সাথে এমন করতে লজ্জা করল না তোর।

আমি অর্পা আপুর কথা কিছুই বুঝতে পারছিলাম না যে, অর্পা আপু কি বলছে।মাথায় যেন কোন কিছুই কাজ করছে না।অর্পা আপুই বা আমাকে এসব দোষারূপ করছে কেন।আমি তো এরকম কিছুই করে নি।আমি অর্পা আপুকে বললাম

-আপু কি হয়েছে এমন বলতেছিস কেন?আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না।আমি তো তোর কথার মানে বুঝতে পারছি না।আমাকে কেন এসব বলছিস?আমি কেন নাটক করতে যাব।আমি কেন তোর ক্ষতি করতে যাব।

আপু আমাকে মুখটা বাকিয়ে রাগান্বিত হয়ে জবাব দিয়ে বলল

-এখন তো অরন্যের সামনে ন্যাকা সাজবিই।একদম কিছুই বুঝছিস না।আর বুঝবিই বা কেমনে তুই তো কিছুই করিস নি তাই না?

-আপু আমি তোর কথার মানেই বুঝছি না।সত্যিই আমি কিছু করে নি।কেন এরকম বলতেছিস তুই।আমি সত্যিই কথাগুলোর অর্থ বুঝতে পারছি না।

পাশ থেকে অরন্য বলে উঠল

-অর্পা তুমি আমাকে বল কি হয়েছে?আর অনন্যাকে এমন বলতেছ কেন?অনন্যা কি করেছে?আমাকে একটু খুলে বল।

অর্পা অরন্যের দিকে অসহায় এর মত তাকিয়ে রাগ আর গম্ভীর গলায় বলল

-অনন্যাকেই জিজ্ঞেস  করুন সেই না হয় আপনার উত্তর দিয়ে দিবে।আমার থেকে ভালো তো সে বলতে পারবে। কারন নাটকের ডিরেক্টর তো অনন্যা ছিল।আমি তো ছিলাম ভুক্তভোগী।

অরন্য আমার দিকে তাকাল।অরন্যের মুখে আমার প্রতি এবার সন্দেহের ছাপ লক্ষ্য করা যাচ্ছে।বুঝায় যাচ্ছে সে আমাকে অনেক সন্দেহ করতেছে।সন্দেহ মাখা মুখ নিয়ে বললেন

-অনন্যা কি করেছ তুমি?অর্পা এসব কি বলছে?সত্যিটা বল, কি হয়েছে?আমার কাছে সবটা খুলে বল।নাটক করবে না একদম।ভনিতাও করবে না।

-আপনি বিশ্বাস করেন আমি কিছু করে নি।অর্পা আপু কেন এমন বলতেছে সেটাও বুঝতেছি না।আপনি আমাকে ভুুল বুঝবেন না।আর অর্পা আপু তুই কি বলতেছিস সত্যিই আমি বুঝতেছি না।এমন কেন বলতেছিস তুই?

খেয়াল করলাম অর্পা আপু খুব কান্না করছে।কেন এভাবে কাঁদছে সেটাও বুঝতে পারতেছি না।অরন্য অর্পা আপুকে শান্ত্বণা দিয়ে বললেন

-অর্পা তুমিই বল কি হয়েছে?

অর্পা আপু কাঁদতে কাঁদতে অরন্যকে বলল

-কি আর বলব বলেন?আমার তো সব শেষ হয়ে গিয়েছে এ কাল নাগীনির জন্য।এখন আর বললেও সব ঠিক হবে না।আমি চাই না আপনাদের মধ্যে কোন জামেলা হোক।আপনারা চলে যান।

-অর্পা তোমাকে বলতে বলেছি বল।অনন্যা কি করেছে বল।

খেয়াল করলাম অর্পা আপু এবার খুব কাঁদছে।কাঁদতে কাঁদতে অরন্যকে বলল

-আপনার কি বিশ্বাস হয় আমি বিয়ের দিন বয়ফ্রেন্ড নিয়ে পালিয়েছে।

অরন্য শান্ত স্বরে জবাব দিল

-সে তো আমি বিশ্বাস করি নি।কারন তুমি তো বিয়ের আগে আমার সাথে ফোনে অনেক কথা বলতে।কিন্তু হঠাৎ  কি এমন হল?আর কোথায় গিয়েছিলে তুমি?

খেয়াল করলাম অর্পা আপু এখন ভীষণ  কাঁদছে। কাঁদতে কাঁদতে অর্পা আপু যা বলল সেটা শুনে আমার হার্টবিট টা বেড়ে গেল।মনে হতে লাগল এখনেই দম বন্ধ হয়ে যাবে।আপু এসব কেন বলছে কিছুই বুঝতেছি না।আমার বুকটা কষ্টে চিড়ে যাচ্ছে কথাগুলো শুনে।কারন  আপু বলল

-আমি কোথায় গিয়েছিলাম সেটা কি আপনি জানতে চান।

অরন্য শান্ত হয়ে জাবাব দিল

-হ্যা জানতে চাই। 

তখন আপু বলল

-সেদিন আমি ঘরে বসে সাজতেছিলাম।হঠাৎ  করে অনন্যার ফোন থেকে মেসেজ আসল আপু একটু লুকিয়ে বের হ আরন্য ভাইয়া আসছে তোমার সাথে দেখা করতে তোমাকে সারপ্রাইজ  দিতে।আমিও সরল মনে বের হলাম।আমার ভুলটা ছিল যে আমি আপনাকে কল দেয় নি।বের হয়ে খেয়াল করলাম বাইরে কেউ নেই।আস পাশ ফাঁকা। অনন্যাকে কল দিলাম সে ও ফোন তুলছে না।হুট করে অনন্যার ফোন থেকে মেসেজ আসল একটু বাগানের দিকে আয়।অরন্য এখানে দাঁড়িয়ে আছে।আমিও বাগানের দিকে গেলাম।কিন্তু কোথাও কাউকে দেখলাম না।আমি সামনের দিকে একটু এগুলাম।তারপর......

এ বলে অর্পা আপু আবার হেচঁকি তুলে কাঁদতে লাগল।অরন্য তখন অর্পা আপুর হাতটা ধরে বললেন

-বল তারপর কি হল?কান্না থামাও।

 অর্পা আপু কান্না থামিয়ে বলল

-তারপর খেয়াল করলাম কয়েকটা লোক  আমাকে ঝাপটে ধরল।আমার মুখ চেপে ধরল।আমি চোখেও কিছু দেখতে পারছিলাম না।কখন যে জ্ঞান  হারিয়ে ফেললাম টের পেলাম না।জ্ঞান  ফিরার পর খেয়াল করলাম আমি রনকদের বাসায়।

অরন্য বেশ অবাক হয়ে জিজ্ঞেস  করলেন

-রনক টা কে?

অর্পা আপু বলল

-রনক হল অনন্যার বেস্ট ফ্রেন্ড।যদিও রনক অনন্যার ২ বছরের বড় তবুও তাদের ভালো ফ্রেন্ডশিপ ছিল।রনক আমাকে অনেক পছন্দ করত।অনন্যাকে বেশ কয়েকবার বলেছিল ও।কিন্তু  আমি রাজি হয় নি।আর সে সুযোগটাই অনন্যা নিয়েছে।আমার বিয়ের দিনে আমাকে গায়েব করে দিয়েছে।আর ফাঁসিয়ে আপনাকে বিয়ে করেছে।অনন্যা যে আমার সাথে এমন করবে আমি ভাবতেও পারি নি।রনককে দেখে আমি চমকে গিয়ে রনক কে জিজ্ঞেস  করলাম 

-তুমি আমাকে এখানে নিয়ে এসেছ কেন?

-আমি তোমাকে ভালোবাসি অর্পা।আমি চাই তুমি আমার হও।দেখ অনন্যাও চাই তুমি আমার হও।তাই তো ও আমাকে সাহায্য করেছে।

আমি তখন অবাক হয়ে গেলাম অনন্যার কথা শুনে।অবাক হয়ে রনককে জিজ্ঞেস  করলাম

-অনন্যা তোমাকে সাহায্য করেছে আমাকে তুলে আনতে?আমি বিশ্বাস করি না।

-হ্যা আমি সত্যি বলছি।বিশ্বাস, অবিশ্বাস তোমার ব্যাপার।আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাই আর সন্ধ্যায় তোমাকে বিয়ে করব।আমি সবকিছু ঠিক করে রেখেছি।

এ কথা গুলো বলে অর্পা আপু আবার হেঁচকি তুলে কাঁদতে লাগল।

অরন্য অর্পার হাতটা আরও ভালো করে  ধরে  বললেন

-এরপর তুমি ঐখান থেকে কিভাবে এসেছ?

-এরপর আমি  কোনমতে ঐখান থেকে রনক এর চোখ ফাঁকি দিয়ে বের হলাম।বেরিয়ে বাড়ি এসে দেখি আপনার সাথে অনন্যার বিয়ে হয়ে গিয়েছে আর সবাই ভেবে নিয়েছে যে আমি পালিয়ে গিয়েছি।সেদিন আমার মুখটা দেখানোর মত ইচ্ছা আর আমার ছিল না।তাই বাড়িতে আর যায় নি।সরাসরি ফ্রেন্ডের বাসায় চলে যাই।সেখানে থেকে একটা কাজ যোগাড় করি আর এখানে একটা বাসা ভাড়া করে থাকা শুরু করলাম।

-তুমি একবার আমাকে বলতে পারতে অর্পা।

-কি বলব আপনাকে?কোন মুখে বলতাম আপনাকে?এতক্ষণে  তো সব শেষ হয়ে গিয়েছিল।অনন্যার সাথে আপনার বিয়ে হয়ে গিয়েছিল।আমার তো এখানে বলার কিছু ছিল না।আমি নিজের বোনের সর্বনাশ তো করতে পারি না।অনন্যা আমার সাথে যা করেছে আমি তো তা করতে পারি না।কারন অনন্যা আমাকে বোন না ভাবলেও আমি তো তাকে বোন ভাবি।

আমি অর্পা আপুর কথা শুনে চিৎকার করে কেঁদে বলতে লাগলাম

-আমি এসব কিছু করি নি।

অরন্যও আমার গালে কষিয়ে একটা চড় বসিয়ে বললেন

-তুমি এতটা নীচ ভাবতে পারি নি।সামান্য টাকার জন্য নিজের বোনের সাথে এমন করতে পারলে।লজ্জা করল না তোমার এমন করতে?আর এখন সব অস্বীকর করছ। 

আমি অরন্যকে হাত জোর করে বললাম

-সত্যিই আমি এমন কিছু করে নি। বিশ্বাস করেন আমাকে।অর্পা আপু তুই আমার ব্যাপারে কেন এসব মিথ্যা বলছিস।কেন অরন্যের চোখে আমাকে খারাপ বানাচ্ছিস।দেখতে অসুন্দর হতে পারি কিন্তু উচ্চ আশা আমার ছিল না।টাকা পয়সার মোহ কখনও ছিল না।তাহলে কেন এমন বলতেছিস।কি ক্ষতি করেছি আমি তোর।তুই তো আমাকে চিনিস আমি কেমন?তাহলে এমন কেন বলছিস?

জবাবে অর্পা আপু বলল

-কি ক্ষতি করেছিস জিজ্ঞেস  করতে লজ্জা লাগছে না তোর।আর কি ক্ষতি করা বাকি রাখছিস।যা তুই আর অরন্য  গিয়ে সংসার কর।আর এখানে আসিস না।

ওপাশ থেকে অরন্য বলে বসলেন

-আমার সাথে অনন্যা যাবে না।তুমি যাবে।

অর্পা আপু অবাক হয়ে উত্তর দিল

-আমি কোথায় যাব?

-আমার সাথে আমার মায়ের কাছে যাবে।আর মাকে গিয়ে সব বলবে।আর তোমাকে যে কষ্ট অনন্যা দিয়েছে সেটা আমি অনন্যাকে ফেরত দিব।তুমি আমার সাথে চল।

-নাহ আমি চাই না আপনাদের মধ্যে কোন জামেলা হোক।

-জামেলা তো তুমি কর নি জামেলা করেছে অনন্যা।সেটার শাস্তি তুমি কেন পাবে?

আমি অরন্যকে অনেকবার বুঝানোর চেষ্টা করলাম।কিন্তু বুঝাতে পারলাম না।অরন্য অর্পা আপুর কথায় বিশ্বাস করেছিল।আর অর্পা আপু কেনই বা আমার নামে মিথ্যা বলল সেটাও বুঝতে পারছিলাম না।অরন্যেকে বুঝানোর হাজার  চেষ্টা করেও ব্যার্থ হয়েছি।অরন্য অর্পা আপুর হাত ধরে বের হয়ে গেল।আর আমাকে যে রিং টা পড়াতে চেয়েছিল সেটাও মেঝেতে পড়ে গেল।অরন্য সেটা ফেলেই চলে গেল।আমি রিংটা হাতে নিয়ে কাঁদতে লাগলাম।আর বলতে লাগলাম "কেন আমার সাথে এমন হল কি ক্ষতি করেছি আমি।কেন আমাকে এভাবে কষ্ট দেওয়া হল।আমি তো কারও কোন ক্ষতি চাই নি।"

কাঁদতে কাঁদতে আমি দৌঁড়ে রেস্টুরেন্ট থেকে বের হলাম। খেয়াল করলাম অরন্য আর অর্পা আপু গাড়ি নিয়ে চলে গিয়েছে।

আমার বুকে বেশ কষ্ট হতে লাগল।এক তো অরন্য আমাকে ফেলে রেখে গিয়েছে তার উপর অরন্য জানত আমি এখানের কিছু চিনি না।কিভাবে পারল আমাকে আমার ভূতমশাই ফেলে রেখে যেতে।আমি তো কিছু করি নি। আমার ভূতমশাই কেন আমাকে বিশ্বাস করল না।কেন আমাকে কষ্ট দিল?আমি তো অর্পা আপুর  কোন ক্ষতি করে নি।আমি তো আপুর সাথে এমন করি নি।তাহলে আপু কেন এমন বলল?কেন আমার অরন্যকে আমার কাছ থেকে কেড়ে নিয়ে যেতে চাইল।এত কষ্ট কেন দিল আমায়।আল্লাহ আমি তো কোন প্রশ্নের উত্তর পাচ্ছি না।আমি কি করব তুমি বলে দাও।

এ মুহুর্তে  হাতে আমার একটা টাকাও ছিল না যে যাব।তবুও একটা সি এন জি ভাড়া করলাম।ভাড়া করে বাসায় গেলাম।বাসার দারোয়ানের কাছ থেকে টাকা নিয়ে ভাড়া দিলাম।

ঘরের ভিতরে গিয়ে দেখলাম..

 গল্পের নাম : হঠাৎ_বিয়ে

 পর্ব : ৭ম পর্ব/শেষ পর্ব

লেখিকা-: শারমিন আচঁল নিপা

ঘরের  ভিতর গিয়ে দেখলাম রনক ভাই দাঁড়িয়ে  আছে।রনক ভাই কে দেখে আমার মাথায় যেন আগুন ধরে গেল।কারন রনক ভাই এর জন্যই অর্পা আপু আমাকে ভুল বুঝল।নিজেকে আর সামলাতে পারলাম না।রনক ভাই রে গিয়ে বললাম

-আপনার কি দরকার ছিল এত বড় নাটক করার?অর্পা আপুকে কেন ভুল বুঝিয়েছেন?কি ক্ষতি করেছিলাম আপনার।

খেয়াল করলাম রনক ভাই কোন কথায়  বলছে না।আমার রাগটা যেন আরও বেড়ে গেল।মন চাচ্ছে রনক ভাইকে কষিয়ে একটা চড় দেই।তাই করতে নিলাম।কিন্তু হুট করে অরন্য এসে পিছন থেকে আমার হাতটা ধরে ফেলল।আমি অরন্যের দিকে ফিরতেই অরন্য আমাকে জড়িয়ে ধরল।আমি বুঝতে পারছিলাম না কি হচ্ছে এসব?অরন্য জড়িয়ে ধরার সাথে সাথে খেয়াল করলাম।চারদিকের আলো আরও বেড়ে গেল।অর্পা আপু, রনক ভাই,আমার কিছু বান্ধবী সবাই হাত তালি দিয়ে বলতেছে "হ্যাপি বার্থ ডে অনন্যা"

এখনও আমার মাথায় কাজ করছে না এসব কি হচ্ছে?মাথাটা খুব ঝিমাতে লাগল।পরক্ষণেই  জ্ঞান  হারালাম। জ্ঞান  ফিরার পর খেয়াল করলাম অরন্য আমার পাশে চিন্তামগ্ন হয়ে বসে আছে।আমার জ্ঞান  ফিরার সাথে সাথে আমাকে বললেন

-অনন্যা ঠিক আছ তো তুমি?কিছু হয় নি তো?

হুট করে সবার এত পরিবর্তন দেখে কেন জানি না অবাক লাগছে।খেয়াল করলাম সামনে রনক ভাই আর অর্পা আপু ও দাঁড়ানো।আমি ওদের দেখে রেগে যেতে নিলাম।অরন্য আমাকে শান্ত স্বরে বললেন

-অনন্যা ওদের কিছু বল না।ওরা এতক্ষণ  যা করেছে আমার কথায় করেছে।

অরন্যের কথাগুলো শুনে যেন আকাশ থেকে পড়লাম।কি বলে এসব!মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে সব!।আমি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস  করলাম 

-মানে?আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না।

অরন্য একটু মুচকি মুচকি হেসে বললেন

-কিছু বুঝতে হবে না।আগে তোমাকে একটা সংবাদ দেই।অর্পা কোথায় গিয়েছিল সেটা তো সবার অজানা ছিল।অর্পা রনকের সাথে পালিয়েছিল।

আমি কথাটা শুনে বেশ অবাক হলাম।তাহলে একটু আগে ঘটে যাওয়া ঘটনাটা কি আমার স্বপ্ন ছিল

-ওরা যদি বিয়েই করে নেই তাহলে একটু আগে এমন বলল কেন?

অর্পা আপু পাশ থেকে বলে উঠল

-তুই একটু শান্ত হ আমি সবটা বলছি।

আমি নিজেকে শান্ত করে বললাম

-এবার বল।

-রনকের সাথে আমার রিলেশন ছিল তিন বছরের।রনক তোকে কিছু বলে নি কারন আমরা তোকে সারপ্রাইজ  দিতে চেয়েছিলাম।কিন্তু হুট করে আমার বিয়ে ঠিক করাতে সব ঝামেলা পাকালো।কি করব বুঝতে পারছিলাম না।প্রচন্ড সিদ্ধান্তহীনতাই ভুগছিলাম।শেষমেষ বিয়ের দিন সকালে মনে হল নিজের ভালোবাসাকে এভাবে কুরবানী  করা ঠিক হবে না।তাই রনক কে ফোন দিয়ে বললাম

-রনক তুমি কি  চাও আমরা এক হই।

-অর্পা তুমি এখনও এ কথা জিজ্ঞেস  করছ?তুমি যা করতে বল তাই করব তবুও আমাকে ছেড়ে যেও না।

-তাহলে বাগানের কাছে চলে আস।

রনক আমার কথা শুনে বাগানের কাছে আসল।আর আমি সুযোগ মত রনকের হাত ধরে পালিয়ে গেলাম।

-তাহলে একটু আগে যে কাহিনী বলেছিলি সেটা কি ছিল?

আমার প্রশ্নের জবাবে সবাই প্রথমে একটু হেসে নিল।সবার হাসি দেখে এবার সত্যিই আমার গা জ্বলে যেতে লাগল।রেগে গিয়ে বললাম

- কি হয়েছে বলবি তো?

অরন্য মুচকি মুচকি হেসে বললেন

-৪ টা মাস খুব জ্বালিয়েছ আমাকে।তাই এর শাস্তি তো ভালোবাসি শব্দটা বলার আগে দিতেই হত।আর একটু সারপ্রাইজ  দেওয়ার ও বাকি ছিল।হুট করে অর্পার সাথে দেখা।তখন অর্পাকে নিয়েই প্ল্যানটা করি।

-এরকম প্ল্যানটা কে করল শুনি?

অরন্য হাসি হাসি মুখ নিয়ে বলল

-আমি করেছি।

এরকম একটা প্ল্যান করেছে বলে অরন্যের প্রতি আমার খুব অভিমান জমে গেল।অভিমানে গাল ফুলিয়ে বসে রইলাম।অর্পা আপু বলল

-আচ্ছা অনন্যা থাক তুই আমি আর রনক বাইরে গেলাম।তোদের মান অভিমানের পালা শেষ কর।আর চড়টা দেওয়ার জন্য সরি জোরে লাগে নি তো।নাটক করতে গিয়ে ক্যারেক্টারের মধ্যে ঢুকে পড়েছিলাম।

অর্পা আপুর কথা শুনে অভিমান টা আরও বেড়ে গেল।অভিমানী গলায় বললাম

-হয়েছে জুতা মেরে গরু দান করতে হবে না।

অর্পা আপু হাসি দিয়ে রনক ভাইকে নিয়ে চলে গেল।আর আমি গাল ফুলিয়ে বসে রইলাম।অরন্য আমার দিকে তাকাল কিন্তু অভিমানের জন্য আমি আর অরন্যের দিকে তাকালাম না।অরন্যের চোখ যেন আমার থেকে সরছে না।আমি যেন তার চোখের নিশানা থেকে নিজেকে সরাতে পারছিলাম না।ক্রমশ আমার অভিমান কমতে লাগল।তবুও অভিমান টা ধরে রাখার নিরলস কসরত করে যাচ্ছি।অভিমানটা স্থির রাখার অনেক চেষ্টার পর ও কেন জানি না অভিমান টা ধরে রাখতে পারলাম না।তাই অরন্যকে জড়িয়ে ধরে অভিমানটা চোখের বৃষ্টি করে নামিয়ে দিলাম।ফুপাতে ফুপাতে বললাম

-আমাকে এভাবে কষ্ট দেওয়ার কি কোন দরকার ছিল।আমি যদি হারিয়ে যেতাম ঐ জায়গা থেকে?

-আমি তো আমার অনন্যাকে চিনি সে যে বাসা খুঁজে ফিরতে পারবে সেটা আমার ভালোই জানাই ছিল।সারপ্রাইজ  টা কেমন লাগল।

-খুব বাজে লেগেছে।এভাবে আর সারপ্রাইজ  দিবেন না।নাটক করতে গিয়ে তো রিংটাও ফেলে এসেছিলেন।

খেয়াল করলাম অরন্য আমার এ কথা শুনে অট্ট হাসি দিচ্ছে।

-কি ব্যাপার এত হাসি দিচ্ছেন যে।

-হাসি দিচ্ছি এজন্য আমি যে রিং টা ফেলে এসেছি সেটা নকল রিং ছিল আর আসল রিংটা আমার কাছে।নাটকটা বাস্তমুখী করার এক অভিন্ন প্রচেষ্ঠা আর কি।হাহাহা।

এত বড় ছলনা যান আর কথায় বলব না আপনার সাথে।অরন্য এবার আমাকে জোরে জড়িয়ে ধরল। মনে হচ্ছে তার নিঃশ্বাসের শব্দ আমি শুনতে পাচ্ছি।তার হার্টবিটের আওয়াজ আমি শুনতে পাচ্ছি।এবার কানের কাছে মুখটা হালকা করে নিয়ে বললেন

-আই লাভ ইউ পেত্নী।

এবার যেন তার প্রতি থাকা সকল অভিমান আমার মনে দুমরে মুচরে গিয়ে ভেঙ্গে গেল।অভিমানটা টিকিয়ে রাখার ব্যার্থ চেষ্টা করলাম।কিন্তু পারলাম না।আমিও ফিস ফিস করে বললাম

-আই লাভ ইউ টু ভূতমশাই।আমার মত কালো মেয়েকে ভালোবাসলেন কিভাবে?

-মানুষের দৃষ্টি সুন্দর, অসুন্দরের বৈষম্য করে।আমার দৃষ্টিতে তুমি সবচেয়ে বেশি সুন্দরি।

কথাটা শুনার পর নিমিষের মধ্যে কোথায় যেন হারিয়ে গেলাম।কিছু বলতে চাইলেও আর বলতে পারছিলাম না।কারন গলাটা থরথর করে কাঁপতে লাগল।অরন্য আমাকে এবার চোখটা হাত দিয়ে চেপে ধরল।আর বললেন

-আমার সাথে একটু চল।

-কোথায়?

-আগে চল তো তারপর বলি।

এত নাছোরবান্দা মেয়েরে বাবা।এত বকবক করতে পারে। 

-হয়েছে হয়েছে আর বকবক করবনা। এবার নিয়ে যান।

চোখটা চেপে ধরে আস্তে আস্তে আমাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছি না।হুট করে চোখ খুললাম।খেয়াল করলাম আমি ছাদে।চারদিকে মোমবাতি দিয়ে সাজানো।অর্পা আপু আর রনক ভাইয়া বাজি ফুটাতে লাগল।পাশে মা দাঁড়িয়ে আছে উনার পাশে একজন ভদ্রলোক দাঁড়িয়ে আছে আমার বুঝতে বাকি রইল না উনি আমার শ্বশুর মশাই।আমি দৌঁড়ে গিয়ে উনাদের সালাম করলাম।অর্পা আপু আর রনক ভাইয়া আমার সামনে একটা কেক আনল আর বলল

-ভূত আর পেত্নী দুজন মিলে কেকটা কাটেন।আর অরন্য ভাইয়া আপনি অনন্যাকে রিং পড়িয়ে দিন।আর অনন্যা তোর হাতের নকল রিং টা ছুরে ফেলে দে

এত বোকা কবে হয়েছিস।সামান্য নাটক বুঝতে পারলি না।তুই তো বেশ নাছোরবান্দা আর বুদ্ধিমতি ছিলি।

আমি লজ্জায় লাল হয়ে গেলাম।বিড়বিড় করে বললাম প্রেমে পড়লে যে মানুষ বলদ হয় সেটা আমাকে দিয়েই প্রমাণ হল।অরন্য ধাক্কা দিয়ে বলল

-কি বিড়বিড় করা হচ্ছে হুম...

-নাহ কিছু না।

-একটু ঐদিকে ফির তোমার জন্য সারপ্রাইজ  আছে।

-কি সারপ্রাইজ? 

-ঐদিকে ফিরেই দেখ।

আমি ঐদিকে ফিরে দেখলাম আমার বাবা,মা, চাচা,চাচী সবাই এসেছে।আমি খুশিতে আত্নহারা হয়ে গেলাম।বিয়ের পর এসব ঝামেলায় আমার শ্বশুর বাড়িতে কেউ আসে নি।এভাবে যে সারপ্রাইজ পাব বুঝতে পারি নি।আমি তো খুশিতে স্থির হয়ে গিয়েছিলাম।কিছু বলতেও পারছিলাম না আবার নড়তেও পারছিলাম না।আমাকে অরন্য ধাক্কা দিয়ে বললেন

-এবার কেকটা কাট আর আপনি শব্দটার ইতি টান।

-আপনি শব্দটার ইতি টানব মানে?

-মানে আমাকে তুমি করে বলবে।

-আমার তো লজ্জা লাগবে।

-হয়েছে হয়েছে আর লজ্জা পেতে হবে না।কেকটা কাট সবাই অপেক্ষা  করছে।

কেকটা কাটার সাথে সাথে চারদিকে বাজি ফুটতে লাগল।কয়েকটা ফানুস আকাশে উড়তে লাগল।কি যে এক অণুভূতি বলে বুঝানো যাবে না।মনের ভিতরটা এমন লাগছে যেন ঝড় হওয়ার পর শীতল বাতাস বইছে।সত্যিই বুঝতে পারি নি আমার ভূতমশাই আমায় এত ভালোবাসে।

কেকটা কাটলাম।ভূতমশাই আমাকে হাতে রিং টা পড়িয়ে দিল।আমি লজ্জায় দৌঁড়ে রুমে চলে আসলাম।অরন্য আমার পিছন পিছন আসল।অরন্যকে বললাম

-আপনার তো

অরন্য আমার মুখটা আটকে দিয়ে বলল

-আপনি  না তুমি বল।

আমি লজ্জা মাখা মুখে উত্তর দিলাম

-তোমার তো আমাকে ভালো লাগে না।অর্পা আপুকে তো প্রথম দেখায় ভালো লেগেছিল।হুট করে আমাকে ভালো লাগল কিভাবে?

-কারন "প্রথম দেখায় ভালো লাগার চেয়ে দেখতে দেখতে ভালো লাগা অনেক শ্রয়।"

-আমার কথাটায় আমাকে ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে?

-সত্যি কথা বললে ফিরিয়ে দেওয়া হয় না বরং সত্যতার প্রমাণ হয়।

সেদিনের পর থেকে অরন্য আর আমার জীবনটা পুরোপুরি পাল্টে গেল।দেখতে দেখতে ৩ টা বছর কেটে গেল।এর মধ্যে আমি একটা পুত্র সন্তানের মা হলাম।একদিন পাশের বাসার পরিচিত এক ভাবী আমার ছেলেকে দেখতে  এসে  আমাকে বললেন

-অনন্যা ভাবী আপনাদের বিয়েটা যেন কিভাবে হয়েছে?

উত্তরে আমি বললাম

-আমাদের #হঠাৎ_বিয়ে হয়েছে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ