Boyfriend এর সাথে যেদিন বোনের বিয়ে ঠিক হয়ছে সেদিন একটা বড়সড় ধাক্কা খেয়েছিলাম।তারচেয়ে বেশি ধাক্কা খেয়েছিলাম যেদিন ও বলেছিল ও আমাকে না আমার বড় বোনকে ভালোবাসে।সেদিন এর কথা মনে হলে আজও গায়ে কাটা দিয়ে উঠে।
তখন সবে মাত্র কলেজে উঠি। সেই কলেজের একজন স্যার এর প্রেমে পড়ে যায়।স্যারকে মুখ ফুটে বলতে না পারলেও স্যার এর সাথে আমার সম্পর্কটা ছিল বেশ মজার।স্যার অবশ্য বুঝতে পেরেছিল আমি স্যারকে পছন্দ করি।কথা হতে থাকল আমাদের।ভালোই যাচ্ছিল বেশ।স্যারকে আমার বাসায় টিউশনের জন্য রাখা হয়।আমি আর আমার বড় বোন স্যার এর কাছে পড়তাম।আমার বড় বোন আমার থেকে অনেক সুন্দরী ছিল।আমার বড় বোন সুন্দরী হওয়ায় স্যারকে প্রায়ই দেখতাম আপুর দিকে তাকিয়ে থাকতে।
সবকিছু অন্যরকম দেখে আমি আর আমার মনের কথা চেপে রাখতে পারি নি।সরাসরি স্যারকে সবটা বলে দেই।স্যার সেদিনেই বুঝিয়ে দিয়েছিল আমার ভালোবাসাটা ছিল এক তরফা।মুখের উপর বলে দিয়েছিল যে আমি তোমার বোনকে ভালোবাসি তোমাকে না।
সেদিন যে কত বড় ধাক্কা খেয়েছিলান জানি না।তবুও আমি কেন জানি ওনাকে ভুলতে পারছিলামনা।আমাকে দিয়েই স্যার আমার বোনের কাছে প্রস্তাব দিল।আমার বোনের তখন অন্য ছেলের সাথে রিলেশন ছল তাই না করে দেয়।কিন্তু স্যার ও ছিল নাছোরবান্দা।অবশেষে তাদের রিলেশন হয়ে।নিজের ভালোবাসার মানুষটাই আজকে আমার বোনের সাথে প্রেম করতেছে।দেখে যেন বুকটার ভিতর হাহাকার লাগছিল।এরকম কেন আমার সাথে হলো বুঝলাম না।কেনই বা এমন করল।আমার সাথে কথা না বললেই হত আগে তাহলে ত এতোটা কষ্ট পেতাম না।প্রতিদিন নামাজে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কাঁদতাম
চোখের জল ফেলতাম।তাকে স্বামী হিসেবে চাইতাম।জানি না আমার চাওয়ার জোর কতটা ছিল
কিছুদিন পরেই আপুর সাথে অরন্যের বিয়ে ঠিক হল।আমার ভিতরটা যে কতটা পুড়ছিল আমি জানি।চুপচাপ দেখে যাওয়া ছাড়া কোন উপায় ছিল না।আমি শুধু দেখে যেতে লাগলাম।গায়ে হলুদে খুব সুন্দর করে সাজলাম বোনের বিয়ে বলে কথা।বুকে চাপা কষ্ট নিয়াও হাসি মুখে সব মেনে নিচ্ছিলাম।কতটা কষ্ট হচ্ছিল সেটা শুধু আমি জানি।আমার অন্তর জানে।আমার ভিতরের অস্তিত্ব টা জানে।
আজকে আমার অরন্যের সাথে আমার বোনের বিয়ে।নাহ আজকে সে আমার অরন্য না আজকে সে আমার বোনের অরন্য।আমার বোনটাও বেশ সুন্দরী লাল টুকটুকে একটা পরী সেজে বসে আছে।দুনিয়াটা সত্যিই চেহারা আর সৌন্দর্যের পাগল।যে জায়গায় আমার বোন বিয়েতে রাজি না কারন সে অরন্যকে তেমন ভালোবাসে না সে ভালোবাসে অন্য কাউকে।কিন্তু অরন্য আর পরিবারের চাপে বিয়ে করছে।সে জায়গায় শুধু মাত্র সুন্দর চেহারার জন্য আমার ভালোবাসা উপেক্ষা করে অরন্য আপুকে বিয়ে করছে।আমার ভিতরটা যেন হাহাকার করছে।তবু বোনের বিয়ে বলে কথা আমাকে তো চুপ থাকতেই হবে।
সবশেষে বোনের বিয়ে হল।আমার অরন্য শুধু আমার বোনের।আমিও আস্তে আস্তে অরন্যকে নিজের থেকে দূরে সরিয়ে নিলাম।ওদের সামনে যাওয়া বন্ধ করে দিলাম।এর কিছুদিন পরেই শুনতে পারি আপু অরন্যকে চাই না আপু অরন্যকে ডিভোর্স দিয়ে ঐ ছেলেকে বিয়ে করতে চায়।সেদিন আপুর একনিষ্ঠ চাপাচাপিতে অরন্য আপুকে ডিভোর্স দেয়।
কেটে যায় কয়েকটা বছর।হুট করে একদিন অরন্য নক দেয়।আমিও রিপ্লাই দেই।আমার মত মেয়ের ভালোবাসা উপেক্ষা করে সে কতটা ভুল করেছে বুঝতে পেরেছিল।আমি শুধু শোনেই যাচ্ছিলাম সব।ও বারবার ক্ষমা চাচ্ছিল।আমার ও মনে পড়ে যায় ৫ টা বছর আগের কথা যেদিন অরন্যের সাথে কথা বলার জন্য দিনের পর দিন ছটফট করেছি আর সে আমাকে অপমানের উপর অপমান করেছে।কতই কাকুতি মিনতি করেছিলাম সেদিন।শোনে নি।সেদিন আমার এক তরফা ভালোবাসার কাছে সৌন্দর্যটা জিতে গিয়েছিল।সেদিন আমি নির্বাক ছিলাম।চোখের জল ফেলা ছাড়া আর কোন উপায় ছিল না।আর আজকে সে আমার কাছেই ফিরে এসেছে।কিছু বলে নি। চুপ ছিলাম আমি।
বারবার ক্ষমা চাওয়ার তার প্রতি জমে থাকা অভিমানগুলো কেন জানি চলে গেল।কারন ভালো তো বেসেছিলাম তাকে।চুপ করে বললাম।পরিবার হয়তো সম্পর্কটা মানবে না।আপনি যদি পরিবার ম্যানেজ করতে পারেন আমার সমস্যা নেই।সেদিন ঠিকই আমার ভালোবাসার কাছে সে হেরে গিয়েছিল।নিজ থেকে আমার পরিবার ম্যানেজ করে।পরিবার ম্যানেজ করাটা সহজ কোন বিষয় ছিল না।অনেক কষ্টে পরিবার রাজি করিয়ে।অনেক সংগ্রামের পড়ে আমার মতো অসুন্দর মেয়েটাকে বউ করে নেয়।আমি সবসময় আল্লাহ কে বলতাম আল্লাহ তুমি আমার আবদারের জিনিস অন্য কাউকে দিও না।আমার আবদারের জিনিস দেরিতে হলেও আমাকে দিও আর উত্তম ভাবে দিও।সে পর্যন্ত ধৈর্য দিও।
আল্লাহ ঠিকেই আমার কথা শোনেছে সেদিন হইতো প্রেম করলে আমার জীবনে পাপের উপর পাপ হতো আর উত্তম ফল ও পেতাম না।কিন্তু আজকে আমাকে আল্লাহ অরন্যকেই দিয়েছে সঠিক সময়ে উত্তমভাবে।
হয়তো সেদিন অরন্য কে বিয়ে করলে আমার প্রতি তার তীব্র ভালোবাসাটা জন্মাত না।যদিও তাকে অনেক পরে পেয়েছি তবুও ভালো আছি।একটা বাচ্চাও হয়েছে।এ পর্যন্ত সে আমাকে কোন কষ্ট দেয় নি।আর বোন ও তার জায়গায় ভালো আছে।
যদিও এত কথা হয় না।তবুও সবাই ভালো আছি।সত্যিই যা হয় ভালের জন্য হয়।আল্লাহ যা করেন ভালোর জন্য.
লেখিকা : শারমিন আচল নিপা
লেখিকার বই কিনতে চাইলে কমেন্ট করুন ।
0 মন্তব্যসমূহ