অদ্ভুত রহস্যময় পরিণয়/ এক অজানা গল্পের জটিল সমাপ্তি

 


রহস্যের ছায়ায় ঢেকে থাকা এক অদ্ভুত পরিণয়

গল্পের নাম : অদ্ভূত_রহস্যময়_পরিণয়

পর্ব-১ পর্ব

লেখিকা-শারমিন আঁচল নিপা

দশ বছরের সম্পর্ক ভেঙ্গে আজকে আমার ভালোবাসার মানুষটা অন্য কাউকে বিয়ে করতে চলেছে।আমার চোখের সামনে অন্য  মেয়েকে বিয়ে করছে আর আমি শুধু দাঁড়িয়ে  দাঁড়িয়ে  দেখছি।এছাড়া কি ই বা করতে পারি?মেয়ে দেখতে গেল আমাকে সাথে নিয়ে গেল।গায়ে হলুদেও আমি তার হাতে মেহেদী পড়ালাম,হলুদ মেখে দিলাম।কিন্তু বুকের ভিতরটা বারবার দুমড়ে মুচড়ে যেতে লাগল।কি জন্য আমার সাথে বেঈমানী করল তার সঠিক কারণটা যদি আমি জানতাম হয়ত অনেক ভালো হত।কিন্তু সেটা জানার উপায় নেই।আমাকে শুধু বলেছিল 

---আমাকে ক্ষমা করে দিস মালিহা।আমি অনুরমাকে অনেক ভালোবেসে ফেলেছি আর তাকেই বিয়ে করতে চাই।ওকে রেখে যদি তোকে বিয়ে করি তাহলে তোর সাথে কখনও সুখী হতে পারব না।কারণ তোর প্রতি  আমার সেই ভালোবাসাটা  কখনও আসে নি যতটা না আমার অনুরমার প্রতি এসেছে।

মনে মনে বেশ হাসলাম।আমাকে দশ বছরেও ভালোবাসতে পারে নি আর আজকে নাকি অন্য একটা মেয়েকে এক মাসেই ভালোবেসে ফেলেছে।কিন্তু আমাকে ভালোবাসতে পারে নি তাহলে দশটা বছর কিভাবে পার করল।হায়রে বেঈমান কতটা নীচে নামলে এমন বলতে পারে জানি না।

আমাদের ভালোবাসাটা শুরু হয়েছিল দশ বছর আগে। তখন আমি ক্লাস নাইনে পড়ি।ভালোবাসা শব্দটার মানেই যখন বুঝতাম না তখনেই তাকে ভালোবেসেছিলাম।ভালোবাসা কি বুঝে উঠার আগেই তাকে ভালোবাসার বন্ধনে জড়িয়েছিলাম।অরন্য মানে আমার ভালোবাসা বলব নাকি প্রাক্তন বলব বুঝতে পারছি না।কোন শব্দটা উপযুক্ত হবে বললে সেটা আমি এ মুহুর্তে  সিদ্ধান্ত  নিতে পারছি না।যাইহোক তাকে আমি মন উজার  ভালোবাসি তাই ভালোবাসা শব্দটাই না হয় ব্যবহার করলাম।অরন্যের সাথে ভালোবাসার শুরু হয়েছিল আমি যখন নবম শ্রেণীতে পড়ি আর অরন্য তখন দশম শ্রেণীতে পড়ত।অরন্য আমার চাচাত ভাই। ছোটবেলা থেকেই একই বাড়িতে বড় হয়েছি।একসাথে কত খেলেছি হিসাব নেই।সেদিন আকাশে বৃষ্টি হচ্ছিল।তাই বৃষ্টিতে ভিজতেছিলাম তখন অরন্য আমার কাছে আসল।আমার কাছে এসেই গালে একটা কষিয়ে থাপ্পর দিয়ে বলল

---এভাবে বৃষ্টিতে ভিজচ্ছিস কেন?সাদা কাপড় পড়ে বৃষ্টিতে ভিজতেছিস আর গায়ের বেশির ভাগ অংশ দেখা যাচ্ছে।মানুষকে শরীর দেখানোর খুব ইচ্ছা জাগছে তাই না।যা ঘরে যা।

সেদিন অরন্যের প্রতি খুব রাগ হয়েছিল।রেগেমেগে ঘরে এসে কাপড় পাল্টে নিলাম।গালের চড়টা ভালোই কষিয়ে দিয়েছিল।একটু ব্যথাও লাগছিল।কারণ আমি গালে চড় একদম সহ্য করতে পারি না।কেন জানি না অরন্যের প্রতি খুব অভিমান জমল।অভিমানের হালকা বৃষ্টিফোঁটা চোখের কোণে জমল।চুপ হয়ে বিছানার পাশে মন খারাপ হয়ে বসে রইলাম।মা আমার রুমে এসে আমাকে এভাবে বসে থাকতে দেখে বলল

---কি রে এভাবে গাল ফুলিয়ে বসে আসিছ কেন?কি হয়েছে তোর।খাবি না?

তখন মাকে গাল ভার করে একগুচ্ছ নালিশ দিলাম অরন্যের নামে।বললাম

---জানো মা অরন্য আমাকে গালে চড় দিয়েছে। দেখ কত জোরে চড়টা দিয়েছে গালটা এখনও ব্যথা করছে।কতটা শয়তান আমার গায়ে হাত তুলেছে।আমি তাকে কি করেছিলাম?এভাবে আমাকে মারল কেন?তুমি কি তাকে কিছু বলবে না?আমি জেঠির কাছে বিচার দিব কিনা বলো।

---তা মেরেছে কি জন্য শুনি?

---আমি সাদা জামাটা পড়ে বৃষ্টিতে ভিজছিলাম।তখন নাকি সাদা জামা ভিজে আমার শরীর দেখা যাচ্ছিল।এজন্য আমাকে মেরেছে।আমি কি কাপড় ছাড়া ছিলাম নাকি বলো?এমন কেন করল আমার সাথে।গালে এখনও ব্যাথা করতেছে।এত জোরে চড় কেউ কাউকে মারে বলো।

মা আমার কথা শুনে আমার দিকে রাগ করে তাকিয়ে বলল

---ভালো করেছে মেরেছে।এত বড় হয়েছিস এখনও জানিস না কিভাবে চলতে হয়।সাদা কাপড় পড়ে বৃষ্টিতে ভিজলে তো শরীর দেখায় যাবে।এখনও আক্কেল হল না তোর। কোথায় কি করতে হয় এখনও শিখতে পারলি না।ঠিকেই করেছে।তোকে আরও দুইটা চড় বেশি দেওয়া উচিত ছিল।

এবলে মা চলে গেল।মায়ের কথা শুনে বেশ মন খারাপ হল।মনে মনে ভাবলাম মা ও অরন্যকে সাপোর্ট  করল আমাকে বকে গেল।এসব ভেবে মনটা আরও খারাপ হয়ে গেল।মনটা খারাপ করে বিছানার কোণে বসে কাঁদতেছিলাম।এমন সময় খেয়াল করলাম আমার সামনে একটা চকলেট কেউ এনে ঘুরাচ্ছে।আমি চকলেটের দিকে তাকিয়ে পাশে তাকাতেই দেখলাম অরন্য।অরন্যকে দেখে বললাম

---এখানে এসেছিস কেন?আমার ঘর থেকে বের হয়ে যা।আমাকে চড় মারার সময় হুঁশ ছিল না।এখন আবার চকলেট নিয়ে এসেছিস।তোর সাথে কোন কথা নেই।তুই বের হ বলছি।

তখন অরন্য আমার রাগটা দেখে আমার বাহু দুটো ধরে চোখের জল মুছতে মুছতে বলল

---বোকা মেয়ে আমি কি তোরে এমনি এমনি মেরেছি নাকি।বড় হয়েছিস এখন তো একটু কিভাবে চলতে হয় শিখবি।জামাটা ভিজে বিশ্রি দেখা যাচ্ছিল।তাই মেরেছিলাম।কষ্ট পাস না এ ধর চকলেট টা খা।আর এই দেখ আমি কান ধরে উঠ বস করছি তোকে মারার জন্য। আমাকে মাফ করে দে।

অরন্যের কান ধরে উঠ বস দেখে আমি হেসে লুটোপুটি  খেয়ে বললাম

---আর কান ধরতে হবে না।ঠিক আছে এখন।

এ বলে অরন্যের হাত থেকে চকলেট টা নিলাম।তখন অরন্য আমার হাতে একটা চিরকুট দিয়ে দৌঁড়ে চলে গেল।আমি তখন বুঝতে পারছিলাম না অরন্য কেন এমন করছে।কিছুটা আশ্চর্য  হয়েছিলাম অরন্যের এমন ব্যবহারে।আশ্চর্য  হয়ে চিঠিটা খুললাম।খুলে দেখলাম এটা একটা প্রেম পত্র ছিল। চিঠিতে লিখা ছিল

"মালিহা তোরে প্রচন্ড ভালোবাসি। তুই কি আমাকে ভালোবাসিস?ভালোবাসলে চিঠির অপর পৃষ্ঠায় লিখে দিস।"

তখন তো এত কিছু বুঝতাম না।কেউ ভালোবাসার কথা বললেই রেগে যেতাম।সরাসরি চিঠিটা নিয়ে জেঠিকে দেখালাম।জেঠি তো চিঠিটা  পেয়ে অরন্যকে দিল বেদরম মার।আমার মা জেঠিকে বলল আরে এরা কি আর এসব ভালোবাসার মানে বুঝে নাকি?বিটিভিতে সিনেমা দেখে অণুকরণ করার চেষ্টা করেছে শুধু শুধু মের না।মায়ের এমন কথা শুনে জেঠি মার বন্ধ করল।সেদিন ভালোই মেরেছিল অরন্যকে।সন্ধ্যায় অরন্যের জ্বর চলে এসেছিল।কেন জানি  না একটা অসম্ভব টান করছিল অরন্যের প্রতি।সন্ধ্যা বেলায় পা টিপে টিপে অরন্যের রুমে চলে গেলাম।খেয়াল করলাম অরন্য জ্বরে কাঁথা মুড়ি দিয়ে শুয়ে আছে।আমি অরন্যের পাশে যেতে অরন্য মুখ ভার করে বলে উঠল

---তোকে একটা চর খইয়েছিলাম তাই বলে এতগুলো মাইর খাওয়াবি।যা এখান থেকে।এখানে এসেছিস কেন?এখন আর দরদ দেখাতে হবে না।

অরন্যকে এভাবে দেখে বেশ মায়া লাগছিল।যেহুত দুজনের বয়স অনেক কম ছিল আর চাচাত ভাই বোন ছিলাম তাই প্রপোজের ব্যপারটা কেউ এত বড় করে দেখে নি।তাই অরন্যের কাছে আসতেও আমার এত বাঁধা আসে নি।অরন্যের গায়ে হাত দিয়ে দেখলাম জ্বরে অরন্যের গা পুড়ে যাচ্ছে।আমি অরন্যের কথায় পাত্তা না দিয়ে একটা মগে পানি এনে অরন্যের মাথায় জল পট্টি  দিতে দিতে বললাম

---আসলেই তুই একটা গরু।তুই কি নিজেকে রাজ্জাক আর আমাকে সাবানা ভাবিস নাকি।এভাবে অনুকরণ  করে আমাকে প্রেমের প্রস্তাব দেওয়ার কি দরকার ছিল শুনি?এজন্যই আমি রেগে গিয়ে জেঠিকে দেখিয়েছিলাম। আমি কি জানতাম জেঠি  তোকে এভাবে মারবে।আর তোর জ্বর চলে আসবে।জানলে তো আর জেঠিকে বলতাম না।

অরন্য জ্বর জ্বর গলায় বলল

---তোকে কে বলেছে আমি সাবানা আর রাজ্জাককে অনুকরণ করেছি?

আমি মাথায় জল পট্টিটা চাপতে চাপতে বললাম

---কেন আমার মা যে তোর মাকে বলেছে শুনিস নি?

---তোর মা ভুল বলেছে।চাচীর যা মনে এসেছে তাই বলেছে।আমি কাউকে অনুকরণ করে নি।সত্যিই আমি তোকে ভলোবাসি।

ভালোবাসার কথাটা আবার শুনে রেগে গেলাম।জলপট্টিটা কপাল থেকে সরিয়ে বললাম

---তোর আরও মাইর খাওয়াই উচিত।মর তুই।তোর কাছে আসাটাই আমার ভুল হয়েছে।ধুর ছাই কেন যে আসতে গেলাম।অসহ্য!

এ বলে আমি আমার ঘরে চলে আসলাম।চলে আসার পরও কেন জানি না অরন্যকে অনেক মিস করতে লাগলাম।কেন জানি না মনে হতে লাগল অরন্যের জ্বরে কিছু হয়ে গেলে তো আমার কষ্ট লাগবে।আমি তো অরন্যকে ছাড়া থাকতে পারব না।অরন্যের কিছু হলে আমাকে কে চকলেট খাওয়াবে ।এসব ভেবে কষ্ট পেতে লাগলাম।তাই আবার অরন্যের রুমে গেলাম।অরন্য জ্বর জ্বর চোখে হালকা চোখ মেলে বলল

---কি রে আবার এসেছিস কেন?তোকে বারবার কে আসতে বলেছে?

---ঘরে মন টিকছে না।তোর কিছু হলে তো আমার কষ্ট হবে অনেক তাই এসেছি।

অরন্য হেসে বলল

---তুই তো আমাকে ভালোবাসিস না।তাহলে আমি মরে গেলেও তোর কিছু যায় আসবে না।যা ঘরে গিয়ে ঘুমা।শুধু শুধু প্যাঁচাল পারতে আসবি না।

আমি অরন্যের পাশে বসে বললাম

---তুই মরে গেলে সত্যিই অনেক কষ্ট পাব।তুই মরে গেলে কে চকলেট খাওয়াবে বল।

---তার মানে তুই আমাকে ভালোবাসিস।

আমি হালকা লজ্জা পাচ্ছিলাম।তখন তো বয়সটা কাঁচা ছিল এতশত বুঝতাম না।লজ্জায় হালকা লাল হয়ে বললাম

---এটাকে যদি ভালোবাসা বলে তাহলে তোকে ভালেবাসি।এবার খুশি।আমাকে আগে বুঝিয়ে বললেই হত।আমি কি আর ভালোবাসার মানে বুঝি নাকি।বুঝলে শুধু শুধু তোকে মার খাওয়াতাম না।

সেখান থেকেই আমাদের ভালোবাসার শুরু।সব ভালোবাসায় সম্বোধন  আপনি থেকে তুমিতে আসলেও আমাদের ভালোবাসায় সম্বোধন টা  তুই  ই ছিল।তুমি তে আর আসে নি।

পিঠাপিঠি  হওয়ার দরুণ সবসময় একে অপরের সাথে লেগে থাকতাম।কলেজ পাশ করে দুজনেই ঢাকায় ভর্তি হই।অরন্য এক ক্লাস উপরে পড়লেও এক বছর গ্যাপ দিয়ে আমার সাথেই ভর্তি হয়।আমাদের মাঝে ভালোবাসার কমতি ছিল না।একে অপরকে মন উজার করে ভালোবেসেছি।এইতো কয়দিনের মধ্যেই বিয়ে হওয়ার কথা ছিল।বাড়িতেও সবাই আমাদের বিষয়টা জানত মোটামোটি।সবকিছু ঠিকেই  যাচ্ছিল।

কিন্তু হঠাৎ  যে কি হয়ে গেল জানি না।অরন্য কেন এভাবে বদলে গেল বুঝতে পারি নি।মাত্র এক মাসের পরিচয়ে আমাকে ভুলে একটা মেয়েকে এত ভালোবেসে ফেলল হাসব নাকি কাঁদব বুঝতে পারছি না।

যেদিন পাত্রী দেখতে গিয়েছিলাম সেদিন আরও হতাশ হয়েছিলাম কারণ পাত্রী যদি আমার থেকে অনেক সুন্দরী হত তাহলে হয়ত মেনে নিতে এত খারাপ লাগত না।কিন্তু পাত্রী ছিল মোটামোটি  সুন্দরী  তবে পাত্রীর একটা বিশেষ দিক ছিল পাত্রীর মাথার চুল ছিল পা সমান লম্বা।মনে মনে ভাবলাম হয়ত এজন্যই অরন্য অনুরমাকে এত ভালোবেসে ফেলেছে আমার তো চুল এত লম্বা না।আমার পাশে থাকা আমার আরেক চাচাত বোন তিরা আমার হাতে চিমটি কেটে বলল

---অরন্য ভাইয়া তোরে রেখে এ মেয়েটাকে বিয়ে করতে চাচ্ছে কেন?তোদের মধ্যে কি সব শেষ?

আমি তিরাকে চেপে ধরে বললাম

-এখন আর এসব বলিস না।এসব বলার সময় এখন না।আর আমাদের মাঝে সব শেষ।এটা নিয়ে আর বাড়াবাড়ি করিস না।

মেয়ে দেখা শেষে আমার ভালোবাসার মানুষটা আমার সামনেই মেয়েটাকে আংকটি পড়াল।আমি শুধু  বসে বসে দেখলাম।আমি চাইলে ঝামেলা করতে পারতাম কিন্তু আমার আত্নসম্মানে লাগল।কিছুদিনের মধ্যে গায়ে হলুদ হল।আমি সেজেগুজে নিজ হাতে অরন্যকে মেহেদী পড়িয়ে দিলাম।হাসি মুখে সব কাজ করলাম।কেউ আমার মনের ব্যথা বুঝতেই পারল না।

আর আজকে অরন্যের বিয়ে।খুব কষ্ট হচ্ছে।বারবার অরন্যকে গিয়ে বলতে মন চাচ্ছে তুই বিয়েটা করিস না।আমার যে তোকে ছাড়া থাকতে খুব কষ্ট হবে।কিন্তু অরন্য তো বলেই দিয়েছে সে আমাকে এ দশ বছরেও এতটা ভালোবাসতে পারে নি যতটা অনুরমাকে বেসেছে।

অরন্যের চাকুরী হয়েছে ২ মাস হবে।২ মাস আগেও অরন্যের নতুন চাকুরী হয়েছে বলে অনেক খুশি হয়েছিলাম এটা ভেবে যে আমাদের বিয়েতে আর কোন বাঁধা থাকবে না।কিন্তু এ চাকুরীটাই আমার জীবনের কাল হয়ে দাড়িঁয়েছে। পোস্টিং হয়েছিল এক অজপাড়াগাঁ তে।আর সেখানেই মেয়েটার সাথে পরিচয় হয় এক মাস হয়েছে।আর বাড়িতে এসে অনুরমার কথা বলে।চাচীরা আমার ব্যপারটা মোটামুটি জানলেও ভালো করে জানত না।সবাই ভেবে নিয়েছে হয়ত এতদিন আমাদের মাঝে গভীর বন্ধুত্ব ছিল।তাই কেউ এই বিয়েতে অমত করল নি।তবে আমি শুধু জানি আমার আর অরন্যের মাঝে কি হয়েছিল।

একটু পরেই অরন্য অনুরমাকে বিয়ে করতে যাবে আর আমি শুধু চেয়ে দেখব।ভিতরটা দুমড়ে মুচড়ে যাবে কিন্তু উপরে একটা হাসি দিয়ে সব আড়াল করে রাখব।এর আগে আমার কত বিয়ের প্রস্তাব এসেছে বিয়ে করি নি।কত ভালো ঘর এসেছে অরন্য আর আমি মিলে ভেঙ্গে দিয়েছি।আর আজকে সেই অরন্যই আমাকে ছেড়ে অন্য মেয়েকে বিয়ে করছে।

গোসল করে চুল মুছতে মুছতে আয়নার সামনে গিয়ে ভাবতে লাগলাম অরন্য কি সত্যিই মেয়েটার চুলগুলো দেখে প্রেমে পড়ে গিয়েছে নাকি অরন্য কখনও আমাকে ভালোবাসতে পারে নি।এসব ভেবেই নিজের আবেগটা আর সামলাতে পারলাম না।চোখ দিয়ে অজোরে পানি পড়তে লাগল।এমন সময় মনে হল কেউ একজন আমার পিঠে হাত দিল পিছন ফিরে দেখলাম.....

গল্পের নাম : অদ্ভূত_রহস্যময়_পরিণয়

পর্ব-2 পর্ব

লেখিকা-শারমিন আঁচল নিপা

এমন সময় মনে হল কেউ আমার পিঠে হাত রাখল।আমি পিছন ফিরে তাকিয়ে দেখলাম মা পিছনে দাঁড়িয়ে  আছে।মা আমাকে দেখে বলল

---কি রে মালিহা এভাবে রূম অন্ধকার করে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে  আছিস কেন?কি হয়েছে তোর।এত চুপচাপ হয়ে আছিস যে।

আমি মায়ের আওয়াজ পেয়েই চোখের জলটা আড়াল করে মাকে বললাম

--ও কিছু না মা।এমনি দাঁড়িয়ে আছি।আর অন্ধকার কোথায় ড্রিম লাইট তো জ্বালানো আছে।

---তোর যে কখন কি হয় বুঝি না।এই এখন এক কথা বলিস কিছুক্ষণ পর আবার আরেক কথা বলিস।আমি গেলাম তাড়াতাড়ি  তৈরী হয়ে নে।বরযাত্রী হয়ে যেতে হবে তো।

এ বলে মা বেরুতে নিলেই দরজার সামনে মায়ের সাথে তিরার  দেখা হয়।তিরাকে দেখে মা বলে উঠল

---তুই ও এখনও তৈরী হস নি।তুই আর মালিহা কখন তৈরী হবি শুনি?তোদের বলে আর পারি না।সব কাজে শুধু ঝামেলা করিস।

---এই তো কাকীমা শাড়ি নিয়ে এসেছি।এখনেই পড়ে দুজন তৈরী হয়ে নিব।তুমি চিন্তা কর না।

---একটু তাড়াতাড়ি  তৈরী হ।যাওয়ার সময় তো হয়ে যাচ্ছে।আর বউ এর বাসাটাও তো সেই অজপাড়াগাঁ  এ।

এ বলে মা বের হয়ে গেল।আর তিরা রূমে প্রবেশ করল।রূমে ঢুকেই তিরা দরজা লাগিয়ে দিয়ে লাইটটা জ্বলালো।আমার চোখের ফোলা ভাবটা তিরার চোখে পড়ে গেল। তিরা আমার চোখের ফোলা ভাবটা দেখে বলল

---কি রে মালিহা অরন্যের জন্য কষ্ট হচ্ছে বুঝি।তোদের কি থেকে কি হয়ে গেল বুঝলাম না।হঠাৎ  এমন হয়ে যাবে বিষয়টা বুঝতেই পারি নি।বেশ এলোমেলো লাগছে বিষয়টা।অরন্য তোর জন্য পাগল ছিল।এভাবে একমাসে পাল্টে গেল কেন মাথায় আসছে না।তার উপর মেয়ের যোগ্যতা তোর থেকে বেশি হলে মানা যেত।দুজনেই তো সমসাময়িক।এতটা অন্যায় করতে কি অরন্যের বাঁধল না।তুই তো চাইলেই বিয়েটা আটকে দিতে পারিস।কেন আটকালি না?

তিরার কথা শুনে আমার কষ্টের আকাশটা আরও কেঁপে গেল চোখের জলটা আপনা আপনি পড়তে লাগল।আমাকে কাঁদতে দেখে তিরা আবার বলে উঠল

---মালিহা এমনে না কেঁদে বিয়েটা ভেঙ্গে দে।আর বেঈমানের জন্য এত কষ্ট পেয়ে কি হবে।দেখিস ওরা কখনও সুখী হবে না।

আমি তিরার মুখটা আটকে দিয়ে বললাম

---অভিশাপ দিস না রে আমি চাই ও সুখে থাকুক।ভালো থাকুক।কারণ আমি যে ওরে বড্ড বেশি ভালেবাসি।ওর কষ্ট সহ্য করতে পারব না।

এটা বলার পরপরই তিরা আমাকে বলে উঠল

---তুই অরন্যকে ছাড়া থাকতে পারবি?একই বাড়িতে থাকবি এসব দেখে নিজেকে সামলাতে পারবি?পারবি কষ্ট সহ্য করতে?পারবি মেনে নিতে অরন্য আর তোর নেই এ বিষয়টা। 

এবার তিরার কথা শুনে আমার কষ্টটা আরও দ্বিগুণ   বেড়ে গেল।সত্যিই কি আমি পারব অরন্যকে ছাড়া থাকতে।সত্যিই কি আমি পারব ওকে অন্য মেয়ের সাথে মেনে নিতে।নিজেকে নিজে প্রশ্ন করেই হুহু করে কেঁদে উঠে তিরাকে জড়িয়ে ধরে বললাম

---আমার সাথে এমন কেন হল বলতো।আমি কি ক্ষতি করেছিলাম।কি অন্যায় ছিল আমার।আমার বিয়ের বয়স পার হয়ে যাচ্ছিল তবুও অন্য কোন ছেলেকে বিয়ে করে নি।অরন্যের চাকুরীর জন্য অপেক্ষা করছিলাম।একটার পর একটা বিয়ে ভেঙ্গেছি শুধু অরন্যকে বিয়ে করব বলে।আমাকে অরন্য এত কষ্ট কেন দিল বলতো।আমার যে ওকে ছাড়া থাকতে অনেক কষ্ট হবে সেটা কি ও বুঝে না।একমাসেই একটা মেয়েকে আমার থেকে বেশি ভালো লেগে গেল।কেন এমন করল আমার সাথে।আমি তো সহ্য করতে পারছি না।বারবার মনে হচ্ছে বিয়েটা ভেঙ্গে  দেই।কিন্তু বিয়েটা ভেঙ্গে দিলেই বা কি হবে অরন্য তো বলে দিয়েছেই যে আমাকে আর ভালোবাসে না।কি করব বল?

তিরা আমায় জড়িয়ে ধরে বলল

---কষ্ট পাস না। আল্লাহ যা করেন ভালোর জন্য।এত কষ্ট পেয়ে কি হবে বল।শক্ত কর নিজেকে।তোর অবস্থাটা আমি বুঝছি কিন্তু কষ্ট পেয়ে নিজেকে নিঃশেষ করে দিলে তো চলবে না।

আমি কোন কথায় বলতে পারছিলাম না কান্নার চুটে।মনে হচ্ছিল জমানো সব চোখের পানি ঝর্ণা  ধারায় বেরিয়ে চলছে।তিরাকে ধরে শুধু কাঁদতে থাকলাম।চাপা কষ্ট যেন হালকা হয়, তাই কান্না থামানোরও কোন চেষ্টা করলাম না।ঠিক এ মুহুর্তে  লক্ষ্য  করলাম দরজায় কেউ নক করল।তাই নিজের চোখের পানিটা মুছে কান্না থামিয়ে ফেললাম।একদম স্বাভাবিক  হয়ে তিরাকে বললাম

---তিরা যা তুই গিয়ে দরজা খুল।আমি ওয়াশরুম থেকে মুখ ধুয়ে আসি।না হয় কেউ কাঁদতে দেখলে ব্যপারটা আড়চোখে দেখবে।

---আচ্ছা যা তুই আমি দরজা খুলে এদিকে সামাল দিচ্ছি।তুই ভালো করে মুখ ধুয়ে আয়।

আমি তিরার কথা শুনে ওয়াশরূমে যেতে নিলে তিরা আমাকে পিছু ডাক দিয়ে বলল

---মালিহা?

---হ্যাঁ তিরা কিছু বলবি?

---সাবধানে যাস।আর মন খারাপ করিস না।সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে।

আমি তিরাকে চোখ দিয়ে ইশারা করে বললাম।চিন্তা করিস না আমি ঠিক আছি।এ বলে ওয়াশ রুমে চলে গেলাম।খানিকক্ষণ  পর ওয়াশ রুম থেকে বের হয়ে চমকে গেলাম।কারণ খেয়াল করলাম অরন্য খাটের কোণে বসে আছে।অরন্যকে দেখে খুব করে বলতে ইচ্ছে করছে যে তুমি আমাকে এভাবে কষ্ট দিও না।চলো আমরা বিয়ে করে নিই।কিন্তু কথাটা মনে ঘুরপাক খেলেও মুখ দিয়ে বের হচ্ছিল না।তাই একটু চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে  রইলাম।আমাকে এভাবে চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে অরন্য বলল

---কি রে চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে  আছিস যে?এখনও কি আমার উপর রেগে আছিস।

আমি গলাটা ভারী করে বললাম

---আমার রুমে এসেছিস কেন?আর তিরা কোথায়?তিরাকে কোথায় পাঠিয়েছিস।

---তোর সাথে একটু কথা আছে তাই তিরাকে বলেছি একটু বাইরে যেতে।

---কিন্তু আমার তো তোর সাথে কোন কথা নেই।তুই রুম থেকে বের হয়ে যা।

---আমার উপর মনে হয় অনেক রেগে আছিস।

---তোর উপর কেন রাগ করব?তোর সাথে কি আমার রাগ অভিমানের সম্পর্ক নাকি?কোন অধিকারে তোর উপর রাগ করব?

---ইদানীং  দেখা যাচ্ছে অনেক বড় বড় কথা বলতে শিখে গেছিস।মুখে তো বড় বড় কথার খঁই ফুটছে।

---দেখ অরন্য তুই বের হ।তোর প্যাঁচাল এখন ভালো লাগছে না।একটু পর তোর বিয়ে যা তৈরী হয়ে নে।এখানে খামোখা প্যাচাল কেন পারতে এসেছিস।এত প্যাচাল পারিস না।রাগ লাগছে খুব।অহেতুক রাগ তুলবি না।

---আরে আরে তুই এত রেগে যাচ্ছিস কেন?আর ঘর থেকেই বা এভাবে বিদায় করে দিচ্ছিস কেন?

---তুই ঘর থেকে বের হবি নাকি আমি হব সেটা বল?

---কথাটা তো বলতে দে?

---কোন কথা বলতে হবে না।তুই থাক।আমি গেলাম তিরাকে ডাকতে।

এ বলে বের হতে নিতেই অরন্য আমার হাতটা ধরে টান দিয়ে বলল

---কথাগুলো শুনে যা।

অরন্য হাতটা টান দিতেই আমার রাগটা মাথায় চড়ে গেল।রাগী কন্ঠে অরন্যকে বললাম

---হাতটা ছাড় বলছি।তোকে কে অধিকার দিয়েছে আমার হাতটা ধরতে।হাত ছাড় বলছি?

---তোর হাত কত ধরেছি আর আজকে তুই অধিকারের প্রশ্ন তুলছিস?শুন মালিহা অনুরমাকে কেন বিয়ে করছি তোকে তো বলেই দিয়েছি।তোকে মনে হয় আমি এই দশটা বছর প্রিয় বন্ধুর মত ভালোবেসেছি।অনুরমাকে দেখলেই কেন জানি না আমার মনে অদ্ভুত ভালোবাসার শিহরণ জাগে।আমি জানি তোর সাথে যা করেছি অন্যায় করেছি।কিন্তু একটা সময় পর মনে হল তোকে আমি সবসময় প্রিয়  বান্ধুর মত ভালোবেসেছি।তোর প্রতি ঐরকম অনুভূতি  কখনও আসে নি যেটা অনুরমার প্রতি এসেছে।কেন জানি না মেয়েটাকে দেখে অদ্ভুত  মায়ায় পড়ে গিয়েছি। তোকে বিয়ে করলে হয়ত তোকে আমি সুখী করতে পারতাম না।আমার মন পড়ে থাকত অনুরমার কাছে আর আমার দেহ পড়ে থাকত তোর কাছে।এ সংসার কখনও সুন্দর হত না।তুই মন খারাপ করিস না।আমাকে বুঝার চেষ্টা কর।আমাকে ভুল বুঝিস না।আমার বিয়ের পর একটা বিয়ে করে নিস।

অরন্যের কথাগুলো শুনে শরীরটা রাগে গিজগিজ করতে লাগল।মনে হচ্ছে এখনেই হাতটা ছাড়িয়ে গালে একটা কষিয়ে চড় দিয়ে দেই।কিন্তু তা আর করলাম না।হাতটা ছাড়িয়ে নিয়ে অরন্যকে বললাম

---তোর কথা বলা শেষ হয়েছে?শেষ হলে এবার যেতে পারিস।আমি বিয়ে করব নাকি করব না সেটা আমার ব্যপার।তুই তোর অনুরমাকে বিয়ে করতে যাচ্ছিস তাকে বিয়ে করে সুখী থাক।ভাগ্য ভালো তোর রিলেশনের দশ বছর পর মনে হয়েছে যে তুই আমাকে বন্ধুর মত ভালোবেসেছিস।যদি আমাকে বিয়ে করার পর মনে হত তাহলে তো বেকায়দায় পড়ে যেতাম।আর বন্ধুকে বুঝি মানুষ জড়িয়ে ধরে?বন্ধুকে বুঝি মানুষ ঠোঁটের জোড়ায় আদর মেখে দেয়?হয়ত প্রশ্নের জবাব তোর কাছে নেই।কোন অজুহাত তোকে দিতে হবে না।আমি তোকে ক্ষমা করে দিয়েছি।আর শুন আর কখনও এ হাত ধরার সাহস দেখাবি না।আগে ধরতে পেরেছিস কারণ আগে তোকে সে অধিকার দিয়েছিলাম।এখন তুই সেই অধিকার হারিয়েছিস।আমার রুমে প্রবেশের আগেও আমার অনুমতি নিয়ে ঢুকবি।কারণ তুই এখন অন্য কারও স্বামী হতে যাচ্ছিস।তোর বউ সেটা ভালোভাবে নিবে না।আর তোর সাথে আমার যত কাপল পিক ছিল ডিলেট করে দিয়েছি।চিন্তা করিস না আমি তোর বউকে কিছুই বলব না।তুই নিশ্চিন্তে বিয়ে করতে পারিস?

---তুই মনে হয় আমাকে ভুল বুঝতেছিস।

---আমি কি বুঝতেছি সেটা না হয় আমাকেই বুঝতে দে।অহেতুক পেনপেন করতে আসবি না।তুই আমার ভালো বন্ধু বন্ধুর মত থাক।বেশি কিছু করার অধিকার দেখাবি না।যা এবার সেজেগুজে তৈরী হ।আমাকেও সাজতে হবে, তৈরী হতে হবে।

অরন্য আর কিছু বলার সাহস পেল না।রুম থেকে বের হয়ে গেল।অরন্যের কথা শুনে  ভিতরে হালকা ব্যথা হল আর মুখে একটা অসহ্যকর হাসি আসল।আমাকে নাকি সে বন্ধুর মত ভালোবেসেছে আর সেটা সে দশ বছর পর বুঝতে পেরেছে।হায়রে বেঈমান কতটা নিকৃষ্ট হলে এমন কথা বলতে পারে।হাহাহা।একা একাই দাড়িঁয়ে  হাসছিলাম।ঠিক এ মুহুর্তে  তিরা এসে বলল

---কি রে মালিহা একা একা হাসছিস কেন?অরন্য কেন এসেছিল রে?কি বলে গেল?

আমি হাসতে হাসতে বললাম

---আমাকে এতদিন বন্ধুর মত ভালোবেসেছে।আর আমি যেন তাকে ক্ষমা করে দেই।

তিরা আমার হাসি মাখা মুখ দেখে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল।অবাক দৃষ্টিত তাকিয়ে থেকে বলল

---তুই পাগলের মত হাসছিস কেন?

---কেন কাঁদার দরকার ছিল নাকি?

তিরা আমার এমন জাবাবে কিছুটা ইতস্তত  হয়ে বলল

---ঠিক তা বলে নি।যাইহোক তৈরী হবি না।

---হব না মানে! তাড়াতাড়ি  তৈরী হতে হবে।নিজের ভালোবাসার মানুষের বিয়ে খাওয়ার ভাগ্য কয়জনের হয়?আমার হয়েছে আমি কি সে সুযোগ ছেড়ে দিব নাকি।অবশ্যই তেরী হব এখন।তুই ও শাড়ি পড়ে নে।

তিরা আমার এরকম এলোমেলো কথা শুনে বলল

---মালিহা আরেকটু কেঁদে নে হালকা লাগবে।মনে হয় তোর কান্না টা শুকিয়ে ইতিমধ্যে পাথর হয়ে গিয়েছিস তাই এমন করছিস।

তিরার কথা শুনে একটু কাঁদতে নিতে চাইলেও পারলাম না।বুকের মধ্যে কান্নাটা আটঁকে গেল।আটকে গিয়ে একটা ব্যথার অনুভব  হল।কিন্তু অনেকবার চেষ্টা করেও কান্না টা বৃষ্টি হয়ে নামাতে পারলাম না।তাই কয়েকবার ব্যর্থ চেষ্টার পর এক রাশ হেসে তুলিকে বললাম

---আরে শাড়িটা দে তো ঐখান থেকে ।সাজতে হবে তো আমাকে।

তিরা আর কোন কথা বাড়াল না।শাড়িটা আমার হাতে দিয়ে বলল

---তুই কি লাল বেনারশি পড়বি নাকি?এ শাড়ি বের করেছিস কেন?

আমি শাড়িটা হাতে নিয়ে তোরাকে বললাম

---জীবনে তো বউ সাজতে পারব না।তাই নিজের ভালোবাসার মানুষের বিয়েতে না হয় বউ সাজলাম।এতেই আমার শখটা মিটবেরে।এত কথা বলিস না তো। আমি শাড়িটা পড়তেছি তুই ও পড়ে নে

অতঃপর আমি লাল শাড়িটা পড়লাম।লাল শাড়িটা পড়ার পর কেন জানি না নিজেকে বউ বউ লাগছে।বয়সটাও ভালোই হয়েছে আমার, ২৮ এর কোঠায় গিয়ে পড়ল। আমার সাথের সবার বিয়ে হয়ে বাচ্চাও হয়ে গিয়েছে আর এদিকে আমি এখনও অবিবাহিত।এসব ভাবতে ভাবতে ঠোঁটে  গাড় কড়া লাল লিপস্টিক দিলাম।সুন্দর করে বউ এর মত করে সাজলাম।সাজ শেষ করে বাইরে বের হতেই মা বলে উঠল

---তোকে তো লাল টুকটুকে পরী লাগছে।অরন্য আর তুই পিঠাপিঠি  ছিলি।তার উপর অরন্য ছেলে মানুষ অরন্যের বিয়ে হয়ে যাচ্ছে তোর এখনও বিয়ে হল না।কত ভালো ভালো পাত্র এসেছে।কেন জানি না তারা প্রথম দিকে বিয়ে করতে রাজি হলেও পরে হয় নি। না হয় কবেই তোর বিয়ে হয়ে যেত।

---থাক না এসব কথা। 

---মেয়ে বড় হলে যে বাবা মায়ের কত চিন্তা হয় তুই মা না হলে বুঝবি না

এসব বলতে বলতে মা চলে গেল।আমি মনে মনে হাসতে হাসতে বললাম রাজি হবে কি করে সব পাত্রতো আমি আর অরন্য মিলে তাড়িয়ে দিতাম।পাশ থেকে জেঠি বলে উঠল

---তোরে তো বউ বউ লাগছে রে।অরন্যের পাশে তোকে মানাত।মনে মনে চেয়েছিলাম তুই আমার ছেলের বউ হ। কিন্তু সৃষ্টি কর্তার ইচ্ছা অনেক ভিন্ন ছিল তাই হল না।তোদের এত মিল দেখে তো আমি ভেবেই নিয়েছিলাম তোদের মধ্যে কিছু আছে।কিন্তু পরে জানতে পারলাম তোরা ভালো বন্ধু।আয় মা একটা চুমু একে দেই অনেক ভালো বর পাবি।

জেঠি  আমার কপালে একটা চুমু দিল।তারপর নিজের চোখের কাজল থেকে একটু কাজল নিয়ে আমার ঘাড়ে একটা ফোটা দিয়ে দিল  নজর যেন না লাগে।আমি শুধু জেঠি যাওয়ার পর দীর্ঘ  একটা নিঃশ্বাস  ফেললাম।কিছুক্ষণের  মধ্যে খেয়াল করলাম অরন্য বর সেজে ঘর থেকে বের হয়েছ।অরন্যকে দেখতে রূপকথার রাজপুত্রের  মত লাগছে।আমার ভালোবাসার অরন্য আজ রূপকথার রাজপুত্র  সেজে অন্য কারও হয়ে যাচ্ছে।ভাবতেই গা টা শিউরে উঠল।ইশ সময়টা যদি পাল্টে যেত অরন্য যদি টগবগ টগবগ করে ঘোড়ায় চড়ে আমার কাছে এসে যদি আমাকে বলত এসব মিথ্যা।আমি তো অনুরমাকে  না তোকেই ভালোবাসি।কিন্তু না সেটা আর সম্ভব না।সেটা আমার কল্পনা হয়েই আজীবন ব্যথা দিবে।পুনরায় দীর্ঘ  নিঃশ্বাস  ফেলে অরন্যের দিকে তাকালাম।খেয়াল করলাম অরন্য আমার দিকে অপলক দৃষ্টিতে  তাকিয়ে আছে।মনে হচ্ছে এ প্রথম সে আমাকে দেখতেছে।তার চাহুনিতে কেন জানি আমি ভালোবাসা আর মায়া খুঁজে পাচ্ছিলাম।তার চাহুনি দেখে মোটেও মনে হচ্ছে না অরন্য অন্য কোন মেয়েকে ভালোবাসে।তার চাহুনি দেখে মনে হচ্ছে অরন্য শুধু আমাকে ভালোবাসে।আমি কেন জানি অরন্যের চোখে ভালোবাসার আশার প্রদীপ টা দেখতে পাচ্ছিলাম।কিন্তু জেঠির কথায় আমার হুঁশ ফিরল মনে হল আমার অরন্য সত্যিই আমার নেই।জেঠি বলল

---কি রে মালিহা কি হল?কোথায় হারিয়ে গেলি।যা গাড়িতে গিয়ে বস।অরন্য যে গাড়িতে উঠে  তুই ঐটাতেই উঠিস।অরন্যের পাশে বসিস।

জেঠির কথার জবাব দিয়ে বললাম

---তিরা না হয় অরন্যের পাশে বসুক।

জেঠি আমাকে ধাক্কা দিয়ে বলল

---ছোট বেলা থেকেই তোরা ভালো বন্ধু, তুই এই বসবি।তিরা আমার সাথে অন্য গাড়িতে বসবে।যা বলছি তাই কর।

আমি মাথাটা ঝেকে বললাম আচ্ছা ঠিক আছে।এ বলে অরন্যের দিকে তাকাতেই অরন্য চোখটা নামিয়ে ফেলল।এরপর অরন্য গাড়িতে উঠল আমিও উঠলাম।অরন্যের ঠিক পাশে বসলাম।গাড়িটা চলতে শুরু করল।গাড়িটা যত সামনে যাচ্ছিল ততই প্রিয়জন হারানোর একটা ব্যথা বুকে মোচড়ে দিতে লাগল।খানিকক্ষণ  পর....

গল্পের নাম : অদ্ভূত_রহস্যময়_পরিণয়

পর্ব-3 পর্ব

লেখিকা-শারমিন আঁচল নিপা

খানিকক্ষণ  পর আঁড়চোখে তাকিয়ে দেখলাম অরন্য আমার দিকে তাকিয়ে আছে।আমিও আর নিজের আবেগ সামলাতে না পেরে অরন্যের দিকে তাকালাম।অরন্যের চোখে কেন জানি না ভালোবাসার ছন্দ খুঁজে পাচ্ছিলাম।তবুও নিজেকে সামলে নিয়ে অরন্যের চোখ থেকে চোখ সরিয়ে  নীচে তাকিয়ে রইলাম ।অরন্য আমাকে উদ্দেশ্য  করে বলল 

---মালিহা তুই কি আমার উপর অনেক রেগে আছিস।

আমি অরন্যের কথার কোন জবাব দিলাম না। চুপ করে বসেই রইলাম।কিছুক্ষণ  পর খেয়াল করলাম অরন্য তার হাত টা আমার দিকে বাড়িয়ে দিচ্ছে।আমি নিজেকে সামলে শক্ত গলায় জাবাব দিলাম

---আমার দিকে একদম হাত বাড়াবি না।তোকে তো আমি বলেছিই এ সাহস আর দেখাবি না।বারবার এরকম কেন করছিস।একটু লজ্জা রাখ মনে।

অরন্য আমার কথা শুনে হাতটা বাড়াতে নিয়েও থেমে গেল।এরপর আর কোন কথা হয় নি।অনেক কষ্ট চাপা দিয়ে নিজেকে সামলে নিলাম।সমস্ত পথটা কি যে যন্ত্রনায় পার করেছি আমি জানি।অবশেষে গন্তব্যে পৌঁছালাম।গন্তব্যে পৌঁছে এ বাড়ির রীতিনীতি দেখে চমকে গেলাম।অদ্ভুত  সব রীতিনীতি।এরকম রীতিনীতি  আগে দেখে নি।বাড়ির সাজগোজটাও কেমন জানি পুরোনো যুগের রাজাদের মত।বাড়ির প্রধান ফটকে খেয়াল করলাম একটা হরিণের মাথা দিয়ে সাজানো হয়েছে।বিয়ে বাড়ির ফটক এভাবে সাজানো হয় জানতাম না তো।গাড়ি থেকে নামতে যাব ঠিক এ মুহুর্তে  একটা মেয়ে বলে উঠল

---আরে আরে নামছেন কেন?এখনি নামবেন না।

আমি বিস্মিত হয়ে জিজ্ঞেস  করলাম

---এখন নামব না কেন?

---এ বাড়ির রীতি হচ্ছে কনে এসে সবাইকে  শরবত পান করে নামাবে।আপনারা কেউ নামবেন না।

কনে এসে বরপক্ষকে নামায় এ রীতি আগে কখনও শুনে নি।আমি বিস্ময়ের স্বরে বললাম

---এরকম রীতি তো কখনও শুনে নি।

মেয়েটা একটা হাসি দিয়ে বলল

---এটা কি সাধারণ কোন বিয়ে নাকি।এটা তো আমাদের অনুরমার বিয়ে।উনার বিয়ের রীতি একটু অন্যরকমেই হবে।আপনারা বসুন।

বেশ বিরক্ত লাগল এমন রীতি শুনে।জানিনা বাকিরা অন্য গাড়িতে কেমন আছে।কিছুক্ষণ  বিরক্তি নিয়ে বসে রইলাম।কিছুক্ষণ  বিরক্তি নিয়ে বসে থেকে খেয়াল করলাম অনুরমা একটা বিশেষ বাহনে চড়ে আসছে।কেমন জানি অদ্ভুত  বাহনটা।যাইহোক ঐটাতে চড়ে এসে গাড়ির সামনে নামল।তারপর  গাড়ির দরজা খুলল।গাড়ির দরজা খুলে এক গ্লাস শরবত আমার দিকে এগিয়ে দিল।আমি শরবতটা হাতে নিতে গিয়ে মেয়েটার দিকে তাকালাম।কেন জানি না মেয়েটাকে আজকে অদ্ভুত  রকমের সুন্দর লাগছে।এর আগে এরকম সুন্দর মেয়ে মনে হয় আমি দেখি নি।অথচ যেদিন আংকটি পড়িয়েছিলাম সেদিনও মেয়েটাকে এত সুন্দর লাগে নি।চোখ গেল মেয়েটার চুলের দিকে।মেয়েটার চুলের দিকে চোখে যেতেই খেয়াল লম্বা চুল গুলো বিনুনি করা।আমি এসব খেয়াল করতে করতেই অনুরমা আমাকে বলে উঠল

---শরবতটা হাতে নিবে না?

---ওহ হ্যাঁ নিচ্ছি।

এরপর শরবতটা হাতে নিলাম।তারপর অনুরমা বলল

---শরবতটা খেয়ে নাম।আর সম্পূর্ণ  খেতে হবে।না হয় কিন্তু রীতি অণুযায়ী নামতে পারবে না।

আমি শরবতটা হাতে নিয়ে ভাবতে লাগলাম এরকম রীতি আগে কখনও দেখি নি।এতটা অদ্ভুত  লাগছিল সব, বলে বুঝাতে পারব না।শরবতটা হাতে নিয়ে চুমুক দিতেই কেন জানি অদ্ভুত  একটা নেশায় পড়ে গেলাম শরবতের।এমন লোভনীয় স্বাদের শরবত আগে খাই নি।এক চুমুকে বাকিটাও খেয়ে নিলাম।তারপর কি হল বুঝতে পারলাম না।মাথাটা খুব ঝিমঝিম আর টলমল করতে লাগল।টলমল মাথা নিয়ে গাড়ি থেকে নামলাম।তারপর একের পর শরবত দিতে লাগল আর বাকিরা সবাই নেমে গেল।সবারেই হয়ত একই অনুভূতি  হয়েছিল কি না কে জানি না।তবে তিরা আমার কাছে এসে বলল

---মালিহা কেমন জানি অন্যরকম লাগছে সব।এ বাড়িটা কেমন জানি আজকে অদ্ভুত  মনে হচ্ছে।তুই কি খেয়াল করেছিস অনুরমার চোখ গুলো যেন কেমন।

আমি কেন জানি তিরার কথা কোন পাত্তা না দিয়ে বাড়ির ভিতর ঢুকলাম।বাড়ির ভিতর ঢুকতেই চমকে গেলাম। কারন বিয়ে বাড়িতে সবাই সাদা শাড়ি পড়ে আছে।এ কেমন অদ্ভুত  বিয়ে।আমি জেঠির কাছে গিয়ে বললাম

---জেঠি বিয়ে বাড়িতে এরকম অদ্ভুত  সাদা শাড়ি পড়ে আছে কেন সবাই?

জেঠি আমাকে ধাক্কা দিয়ে বলল

---তুই কি পাগল হয়ে গিয়েছিস।সাদা শাড়ি পড়বে কেন?সবাই তো ঠিকেই আছে।

আমি জেঠির কথা শুনে অবাক হয়ে তাকিয়ে পুনরায় দেখলাম।দেখলাম সবাই সাদা শাড়িই পড়ে আছে।তিরার কাছে গিয়েও জিজ্ঞেস  করলাম।তিরাও বলল সব ঠিক আছে।তাহলে আমি এমন দেখছি কেন।নজর গেল অনুরমার  দিকে।খেয়াল করলাম অনুরমার মাথার চুলগুলো নড়ছে সাপের মত।চোখগুলো সত্যিই অদ্ভুত।

দেখতে দেখতে অনুরমার সাথে অরন্যের বিয়ে হলে গেল।বেশ কষ্ট হচ্ছে আমার।কষ্টে বুকটা ফেটে যাচ্ছে।নিজের ভালোবাসা আজকে সত্যিই অন্য কারও হয়ে গেল।বিয়ে সম্পন্ন হতে আর বেরুতে বেরুতে রাত হয়ে গেল।গাড়িতে উঠলাম।অরন্য আর আমার মাঝে বাঁধা হয়ে বসে রইল অনুরমা।বুকের কষ্টটা যেন আরও বেড়ে গেল।গাড়ি চলা শুরু করল।বাড়িটার কিছু পথ এসে খেয়াল করলাম একটা  তীর-চিহ্ন  রাস্তায় আঁকা।তীর-চিহ্ন টা পার করতেই খেয়াল করলাম আমার মাথার সকল ঝিমুনি চলে গেল।একদম স্বাভাবিক হয়ে গেলাম।কেন জানি না মনে হল আমি এতক্ষণ  একটা ঘোরে ছিলাম।কি হয়েছিল আমার বুঝতে পারছিলাম না।মনে মনে ভাবতে লাগলাম সে শরবতটা খাওয়ার পর আমার এমন কেন হল।কেন মনে হল সেটা কোন স্বাভাবিক  বাড়ি না।এসব ভাবতে ভাবতে অনুরমার দিকে তাকিয়ে দেখলাম অনুরমাকে এতটা অদ্ভুত  সুন্দরী লাগছে না যেটা অনুরমার বাড়িতে লেগেছিল।তাহলে আমি কি অরন্যকে নিয়ে বেশি ভাবছি?বেশি ভাবনার ফলে কি এমন হচ্ছে।চুপ হয়ে বসে বসে এসব ভাবতে লাগলাম।হঠাৎ  অনুরমা আর অরন্যের কথার আওয়াজে ভাবনার আকাশ থেকে ফিরে আসলাম।বেশ সুন্দর করে কথা বলছে দুজন।কত সুখী তারা।আর আমি এদিকে জ্বলে পুড়ে মরছি।অনুরমা আমার দিকে তাকিয়ে বলল

---কি ব্যপার তুমি আমার সাথে তেমন কথা বলছ না যে?তুমি কি আমার উপর রেগে আছ?

---আরে না.. রাগ করব কেন?কি থেকে কি বলব বুঝে উঠতে পারছি না।

---তুমি নিশ্চয় মালিহা?অরন্যের মুখে তোমার কথা অনেক শুনেছি।তোমাকে দেখার অনেক ইচ্ছা ছিল।আংকটি পড়ানোর দিন দেখেছি তবে লজ্জায় তোমার দিকে এত তাকাই নি।আজকে মন ভরে দেখলাম।বেশ সুন্দরী তুমি।

অনুরমার কথা গুলো একদম স্বাবাভিক মনে হল।মনেই হচ্ছে না এর মধ্যে কোন অদ্ভুত  বিষয় আছে।হয়ত আমি অরন্যকে নিয়ে একটু বেশিই  ভাবছি  তাই ট্রমায় পড়ে গিয়েছি।কিন্তু হুট করে কেন এমন মনে হল আমার।এসব প্রশ্ন মনে ঘুরপাক খেতে লাগল।চুপ করে বসে রইলাম কোন জাবাব দিলাম না অনুরমার কথার।অনুরমা পুনরায় বলে উঠল

---তুমি কি আমার কথায় রাগ করেছ?এভাবে চুপ হয়ে আছ যে।

আমি অনুরমার গলার আওয়াজে নিজেকে স্বাভাবিক করে নিলাম।আর ভাবলাম এটা আমার মনের ভুল, নিছক আমার কল্পনা ছাড়া কিছু না।নিজেকে সামলে অনুরমাকে বললাম

---তুমি আমার থেকেও সুন্দরী।তোমার চুল তো মাশআল্লাহ।কি দাও চুলে একদম পা পর্যন্ত লম্বা যে।

অনুরমা একটা রহস্যময়ী হাসি দিয়ে বলল

---কিছুই দেই না চুলে।ছোটবেলা থেকেই চুলগুলো এত লম্বা।বলতে পার বংশগত ভাবে পেয়েছি।আমার পূর্বপুরুষদের  চুল নাকি এমন ছিল মায়ের মুখে শুনেছি।

আমি শান্ত হয়ে বললাম

---আচ্ছা আমাকে যে শরবত দিয়েছ সেটা কিসের?অদ্ভুত  লোভনীয় স্বাদের শরবত ছিল।শরবতটা খাওয়ার পর এর স্বাদের প্রেমে পড়ে গিয়েছি।

অনুরমা হাসতে হাসতে বলল

---ঐ টা শুধু তোমার জন্যই বানিয়েছিলাম।ঐটা আমাদের বাড়ির পিছনে একটা ফল গাছ আছে ঐ ফল দিয়ে বানানো।বাকিরা সবাই লেবুর শরবত খেয়েছে তোমাকে শুধু ঐ ফলটার শরবত দিয়েছিলাম।কারণ অরন্যের স্পেশাল বন্ধু তুমি।

অনুরমার কথা শুনে আমার কাছে এবার ব্যপারটা কেমন জানি লাগছিল, মনে হচ্ছে হয়ত অনুরমা ইচ্ছা করেই আমার সাথে এমন করেছে।শরবতে হয়ত কিছু মিশিয়ে দিয়েছে।বড্ড চালাক এ মেয়েটা।হয়ত আন্দাজ করতে পেরেছে আমার আর অরন্যের ব্যপারটা তাই এমন করেছে যাতে ওদের বিয়েতে কোন ঝামেলা না হয়।খুব রাগ হল অনুরমার প্রতি।অনুরমার কথার কোন জবাব না দিয়েই বাইরের দিকে তাকিয়ে রইলাম।

অনুরমা আমার মুখটা তার হাত দিয়ে অনুরমার দিকে ফিরিয়ে বলল

---আমার উপর রাগ করলে নাকি?কোন কথা বলছ না যে?

---নাহ রাগ করব কেন?আমার শরীরটা ঠিক ভালো লাগছে না।বমি বমি লাগছে একটু।তাই চুপ হয়ে আছি।

---ওহ তাই বলো।আমার ও একটু গা গুলাচ্ছে।

অনুরমার গা গুলাচ্ছে এটা শুনার সাথে সাথে অরন্য বলে উঠল

---অনুরমা গা গুলালে আমার কাঁধে মাথা রাখো।তাহলে ভালো লাগবে।

বাহ!কত ভালোবাসা আমি যে বললাম আমার বমি বমি লাগছে আমাকে তো একটা বারও বলল না মালিহা একটু শুয়ে রেস্ট নে।আর আগে যখন একটু অসুস্থ হতাম তখন আমার জন্য অস্থির হয়ে যেত।আর আজকে এত বদলে গেল।মাত্র একমাসের ব্যবাধানে।এসব ভাবতে ভাবতে চোখের কোণে হালকা জল নিয়ে তাকিয়ে দেখলাম অনুরমা অরন্যের কাঁধে  মাথা রেখে শুয়ে আছে।

আমি আর কোন কথা না বলে বাইরের শূন্য আকাশে তাকিয়ে দেখলাম পূ্র্নিমার চাঁদ উঠেছে।পূর্নিমার চাঁদটা দেখে মনে হচ্ছে আজকে ভর পূর্নিমা।চাঁদের আলোয় চারদিকে আলোকিত হয়ে আছে।দেখতে দেখতে পথ চলতে চলতে ঠিক রাত দুটায় বাড়িতে এসে পৌঁছালাম।বাড়িতে আসার পর পুনরায় অবাক হলাম।কারণ আকাশের চাঁদটা কেন জানি আকাশে নেই।সমস্ত বাড়িতে নিকশ কালো অন্ধকার নেমে এসেছে।জেঠি আমাকে বলল

---মালিহা মেবাইলের  টর্চটা জ্বলাতো।কিছুই দেখতে পারছি না।

আমি মোবাইলের  টর্চ জ্বলাতে জ্বলাতে বললাম

---একটু আগে গাড়িতে বসে দেখলাম পূর্নিমার চাঁদ উঠেছে আর এখন দেখি চাঁদ নেই।কোথায় গেল চাঁদটা বলতো জেঠি।

আমার কথা শুনে জেঠির আগে মা বলে উঠল

---কিরে মালিহা তোর কি মাথা গেছে নাকি?আমবস্যার রাতে চাঁদ দেখলি কিভাবে?কি থেকে কি বলছিস ঠিক আছে।

মায়ের কথা শুনে পাশ থেকে জেঠি বলে উঠল

---কি রে মালিহা তুই ঠিক আছিস তো।কখন থেকে কি না কি বলে যাচ্ছিস।

মা আর জেঠির কথা শুনে মনে হল আমি পাগলের মত প্রলাপ করছি আর তারা এমন বলছে।সত্যিই কি হচ্ছে বুঝতে পারছি না।এদিক দিয়ে মা আর জেঠির কথা শুনে অরন্য বলে উঠল

---থাক,  ওকে আর কিছু বলো না।হয়ত ঠিক মত ঘুমাতে পারে নি তাই এমন গোলমেলে লাগছে সব।একটু ঘুম দিলেই ঠিক হয়ে যাবে।আর মালিহা লাইটটা জ্বালিয়ে বাড়ির একটা লাইট জ্বালিয়ে দে।বেশ অন্ধকার চারপাশ।

আমি আর কোন কথা না বাড়িয়ে বাড়ির লাইটগুলো জ্বালিয়ে দিলাম।তারপর অনুরমাকে কাকি বরণ করে ঘরে নিয়ে গেল।অনুরমার লম্বা কালো চুল গুলো দুলাতে দুলাতে বাড়িতে প্রবেশ করল।জেঠি সব কাজ শেষে আমার হাতে একটা দুধের গ্লাস ধরিয়ে দিয়ে বলল

---যা এটা অনুরমাকে দিয়ে আয়।

আমি দুধের গ্লাসটা হাতে নিয়ে ভাবতে লাগলাম আজকে এ দুধের গ্লাসটা নিয়ে অরন্যের জন্য অপেক্ষা  করার কথা ছিল আমার আর আজকে আমার জায়গায় আছে অনুরমা।এসব ভেবতে ভাবতে দুধের গ্লাসটা নিয়ে রুমে প্রবেশ করেই চমকে গেলাম.... 

গল্পের নাম : অদ্ভূত_রহস্যময়_পরিণয়

পর্ব-4 পর্ব

লেখিকা-শারমিন আঁচল নিপা

আমি রুমে প্রবেশ করে চমকে গেলাম।কারণ অরনুরমা তার লম্বা চুলগুলোর বেনি খুলে চুল এলিয়ে বসে আছে।মনে হচ্ছিল অনুরমার চুলগুলো থেকে কিছু একটা আলোর জ্বলকানির মত বের হচ্ছে।কেন জানি না অনুরমার চুলগুলো দেখে মনে মনে ভয় পেতে লাগলাম।ভাবতে লাগলাম আমি কি আবারও কোন কল্পনায় ডুবে গেলাম, নাকি এটা সত্যি।ভাবনার কোন কূল কিনারা না পেয়ে অনুরমার কাছে গেলাম।অনুরমাকে কাছে গিয়ে বললাম

---অনুরমা তোমার জন্য জেঠি দুধ পাঠিয়েছে।অরন্য আসলে এটা দিও।

অনুরমা আমার কথার কোন জবাব দিল না।আমি বারবার অনুরমাকে ডাকলাম অনুরমা চুপটি হয়ে বসেই রইল।আমি বুঝতে পারছিলাম না অনুরমা কেন কথা বলছে না।বারবার ডেকেও যখন কোন সাড়া পাচ্ছিলাম না তখন অনুরমার কাছে গেলাম।অনুরমার কাছে যেতেই কেন জানি না গা টা ছমছম করতে লাগল।একটু ভয় ভয় লাগছে।হুট করে এমন ভয় লাগার কারণটাও বুঝতে পারছিলাম না।ভয়ে ভয়ে অনুরমার পিঠে হাত দিয়ে বললাম

---কি গো কখন থেকে ডাকছি কথা বলছো না যে?দুধের গ্লাসটা কি নিবে না।নাকি টেবিলের উপর রেখে যাব।

কিছু তো একটা বলো।কখন থেকে গ্লাস নিয়ে দাঁড়িয়ে  আছি।

আমার হাতের স্পর্শ পাওয়ার সাথে সাথে অনুরমা আমার দিকে তাকাল।অনুরমাকে দেখে আমি ভয়ে কুকড়ে গেলাম।অনুরমার চোখগুলো থেকে মনে হচ্ছিল আগুন বের হচ্ছে।আমি ভয়ে ভয়ে অনুরমাকে বললাম

---তোমার চোখ এমন লাল রক্তবর্ণ হয়ে গেল কিভাবে?আর এভাবে তাকিয়ে কি দেখছো?

অনুরমা কোন কথা বলছিল না।এতে করে আমার ভয়টা আরও বেড়ে গেল।ভয়ে দুধের গ্লাসটা হাতে পড়ে গেল।আমি দুধের গ্লাসটা ফেলে দিতেই মনে হল অনুরমার চোখ থেকে কিছু একটা বের হয়ে আমার চোখে প্রবেশ করল।অনুরমার চুলগুলো পরক্ষণেই  কিভাবে যেন আপনা আপনি বিনুনি হয়ে গেল।আর বিনুনিটা দিয়ে আমাকে প্যাঁচিয়ে ধরল।আমার দম বন্ধ হয়ে যেতে লাগল।আমার মাথায় ব্যাথা হতে লাগল।কোনরকমে ওমাগো বলে চিল্লানি দিতেই জেঠি রুমে প্রবেশ করে বলল

---কি রে মালিহা এভাবে দুধের গ্লাস হাতে নিয়ে চেঁচিয়ে উঠলি কেন?তোকে না বললাম গ্লাসটা অনুরমাকে দিতে, কিন্তু তুই গ্লাসটা না দিয়ে এখনও দাঁড়িয়ে  আছিস কেন?কি হয়েছে তোর?

আমি জেঠির কথা শুনে নিজেই নিজেকে দেখে চমকে গেলাম।সত্যিই তো আমি দুধের গ্লাসটা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছি, একটু আগে যে কাহিনীটা ঘটল সেটা কি তাহলে মিথ্যা।হাতের গ্লাসটার দিকে তাকিয়ে দেখলাম গ্লাসটা একদম অক্ষত অবস্থায় আছে।তাহলে একটু আগে যে গ্লাসটা হাতে থেকে পড়ে গিয়েছিল সেটা কি ছিল ?অনুরমার দিকে তাকিয়ে দেখলাম অনুরমা খাটের উপর হালকা ঘোমটা টেনে বসে আছে।আর অনুরমার চুলোগুলো খুলা না বরং বিনুনি করা।কি বলব জেঠিকে বুঝতে পারছিলাম না।আমার সাথে এগুলো কি হচ্ছে।ঘটনা যদি সত্যি হয় তাহলে গ্লাসটা পড়ে গিয়ে ভেঙ্গে  যাওয়ার পর আমার হাতে আসল কি করে।আর ঘটনাটা যদি মিথ্যা হয় তাহলে আমি এতকিছু বারবার কেন দেখছি।এগুলো কি নিছকেই আমার কল্পনা নাকি এর মধ্যে রহস্য আছে।এসব ভেবে আমি ব্যকুল হয়ে যাচ্ছিল।নীরব হয়ে দাঁড়িয়ে  রইলাম।অনুরমার গলার আওয়াজে আমার নীরবতা কাটল।অনুরমা খাট থেকে উঠে আমার পাশে দাঁড়িয়ে  বলল

---কি ব্যপার তুমি কি কোন কিছু নিয়ে চিন্তুত?হুট করে এভাবে চিল্লানি দিয়ে উঠলে যে?কখন থেকে তোমাকে ডাকতেছি তুমি দুধের গ্লাসটা নিয়ে কোন কথায় বললে না।এসে দাঁড়িয়েই রইলে।আর হুট করে এভাবে চিল্লানি দিয়ে উঠলে।কিছু কি হয়েছে তোমার?

আমি অনুরমার কথা শুনে অনুরমার দিকে তাকিয়ে  আবার বিস্মিত হলাম।কারণ অনুরমার চেহারা একদম স্বাভাবিক  মানুষের মতই, তাহলে এতক্ষণ  কি সত্যিই আমি কল্পনার জগতে  ছিলাম।এটা ভেবেই আবার চুপ হয়ে রইলাম।অনুরমা আমাকে ধাক্কা দিয়ে বলল

---কি ব্যপার আবার কোথায় হারালে?কথা বলছো না কে?তোমার কি শরীর খারাপ লাগছে?

পাশ থেকে জেঠি বলে উঠল

---কি রে মালিহা তোর কি হয়েছে।সেই সকাল থেকেই কেমন জানি অদ্ভুত  অদ্ভুত  কান্ড ঘটাচ্ছিস।তোর কি শরীর ঠিক নেই।

---নাহ জেঠি ঠিক তা না।কি যে হচ্ছে আমি নিজেও বুঝতে পারছি না।শরীর ঠিকেই আছে।

আরও কিছু বলতে যাব এ মুহুর্তে  খেয়াল করলাম অরন্য রুমে প্রবেশ করেছে।অরন্য রুমে ঢুকেই জেঠিকে বলল

---আরে মা আমি আগেই বলেছিলাম ওর হয়ত ঘুম হয় নি ঠিক করে।না ঘুমাতে পেরে এমন করছে।ওকে আর কোন কাজ দিও না একটু ঘুমাতে দাও।ঘুম দিলেই সব ঠিক হয়ে যাবে।ছোট বেলা থেকেই তো ঘুম পাগল।তাই ঘুমাতে না পেরে এমন করছে।

জেঠি অরন্যকে জবাবে বলল

---হ্যাঁ তা ঠিক বলেছিস।ঘুম না হলে মাথা ঠিক থাকে।ওর সত্যিই ঘুমের প্রয়োজন।

জেঠির কথা শুনে অরন্য আমার দিকে তাকিয়ে বলল

---যা মালিহা একটু ঘুমিয়ে নে।ঘুম দিলেই দেখবি শরীর ভালো লাগছে।মন মেজাজ ঠিক হয়ে গিয়েছে।

অরন্য আর জেঠির কথা শুনে মনে হল সত্যিই হয়ত ঘুমের কারণে আমার শরীরটা একটু খারাপ লাগছে তাই কি থেকে -কি না কি দেখছি।অরন্যকে হারানোর ট্রমা থেকে হয়ত এখনও বের হতে পারছি না।এসব ভাবতে ভাবতে আমি দুধের গ্লাসটা অনুরমার হাতে দিয়ে রুম থেকে বের হতে নিব ঠিক এ মুহুর্তে  আমার ভিতরটা কষ্টে কেঁপে গেল, অরন্যকে পুরোপুরি হারিয়েছি এটা ভেবে।নিজের কষ্টটাকে চাপা দিয়ে আরেকবার অরন্যের দিকে তাকাতেই অনুরমার চোখের দিকে চোখ পড়ল।খেয়াল করলাম অনুরমার চোখ গুলো ঘুরছে।সে সাথে আমার মাথাটাও ঘুরছে।মাথার ব্যথায় যেন ছিড়ে যাচ্ছে।আচমকা এমন মাথা ব্যথা কেন হচ্ছে বুঝতে পারছি না।বমি বমি লাগল খুব।কি হতে কি হচ্ছে সবকিছু যেন মাথার উপর দিয়ে যেতে লাগল।খানিকক্ষণ  পর নিজেকে আবিষ্কার করলাম আমার রুমে।কিন্তু আমি তো ছিলাম অরন্যের রুমে।কোনরকমে চোখটা টেনে চোখগুলো খুলে উঠতে যাব ঠিক এ মুহুর্তে  মা বলে উঠল

---কি রে মা কি হয়েছিল তোর?এভাবে জ্ঞান  হারালি যে?সেই কখন জ্ঞান  হারালি আর এখন বিকেল পাঁচটা বাজে।

বিকেল পাঁচ টা বাজে শুনেই আমি চমকে গেলাম।তার মানে আমি রাত থেকে অজ্ঞান  হয়ে পড়ে আছি।শরীরটা বেশ দুর্বল লাগল।মায়ের দিকে তাকিয়ে দেখলাম বেশ অসহায় হয়ে বসে আছে।আমাকে নিয়ে হয়ত একটু বেশিই চিন্তা করছে মা।আমি মায়ের অসহায় মুখটা দেখে বললাম

--আরে মা জানি না কি হয়েছে।বিয়ে বাড়ির এত কাজের মধ্যে শরীরটা বেশি দুর্বল হয়ে গিয়েছে তার উপর ঘুম হয় নি ঠিক করে।এজন্য হয়ত এমন হয়েছে।আমার খুব ক্ষুধা পেয়েছে।আমাকে কিছু খেতে দাও তো।তুমি চিন্তা করো না আমি ঠিক আছি।

মা আমার মাথায় হাত বুলিয়ে খাবার আনতে গেল।এসময় তিরা আমার রুমে ঢুকে বলল

---কিরে এখন কেমন লাগছে।শরীর ঠিক আছে তো নাকি?

---এখন ভালো লাগছে।আচ্ছা আমি এত সময় কি করে অজ্ঞান  থাকলাম বুঝতে পারছি না।কি থেকে কি হচ্ছে কোন কিছুই বুঝতে পারছি না।মাঝে মাঝে মনে হচ্ছে সবকিছু কল্পনা আবার মাঝে মাঝে মনে হচ্ছে সবকিছু সত্যি।সত্য আর কল্পনার মাঝে ফারাক খুঁজে পাচ্ছি না রে।ভালো লাগছে না কিছুই।

তিরা আমার পাশে বসে আমার কপালটায় হাত দিয়ে বলল

---নাহ জ্বর নেই।মনে হচ্ছে অরন্যের ট্রমা থেকে বের হতে পারছিস না।তাই এমন হচ্ছে।অরন্য অন্য কারও হয়ে গিয়েছে এ শোকটা সমলাতে পারছিস না তো তাই হয়ত জ্ঞান  হারিয়েছিস।মালিহা এভাবে নিজেকে কষ্ট দিয়ে কি লাভ বল।তুই তো এভাবে কষ্ট পাচ্ছিস আর অরন্য ঠিকেই অনুরমাকে নিয়ে হাসছে, খুশিতে আছে।গিয়ে দেখ ছাদে তারা কত সুখে আছে।ঐ বেঈমানটার কথা ভেবে তুই নিজের এ হাল কেন করছিস।

অরন্যের কথা শুনতেই বুকটা কষ্টে ফেটে গেল।অরন্যকে হারিয়ে ফেলেছি ভাবতেই যেন মটা ব্যাকুল হয়ে পড়ল।বুক ফেটে কান্না বের হতে লাগল।নিমিষেই কান্নায় ভেঙ্গে পড়লাম।তিরাকে জড়িয়ে ধরে বললাম

--আমার সাথে এমন কেন হল?আমার অরন্য আমাকে ছেড়ে কেন গেল?আমার অরন্যকে ছাড়া থাকতে যে আমার বেশ কষ্ট হচ্ছে।আচ্ছা অরন্য কি বুঝতে পারছে না আমার ভিতরটা পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছে।কি করে পারল এভাবে বদলে যেতে।কি করে পারল দশ বছরের সব স্মৃতি  মুছে দিতে।কি করে পারল আমার সাথে কাটানো দিন গুলো ভুলে যেতে।কই আমি তো কিছুই ভুলতে পারছি না।আমি তো আমার অরন্যের ভালোবাসা মাখা দিনগুলো ভুলতে পারছি না।কেন এগুলো আমার মনে হচ্ছে বারবার বলতো।অরন্যকে কেন ভুলতে পারছি না বলতো।কেন মনে হচ্ছে আমি একটা দুঃস্বপ্ন  দেখছি।আমার অরন্য আমার সাথে এমন করে নি।কেন মনে হচ্ছে আমার অরন্য আমাকেই ভালোবাসে।এগুলো সব মিথ্যা।বল না এগুলো মিথ্যা।আমার অরন্যকে ফিরিয়ে দে না।আমি যে অরন্য ছাড়া থাকতে পারছি না।আমার কলিজাটা যে ফেটে যাচ্ছে।আমার মনটা যে দ্বিখণ্ডিত  হয়ে গিয়েছে।দশটা বছরের ভালোবাসা কাছে একটা মাসের ভালোলাগা বড় হয়ে গেল।এই তিরা বল না অরন্যকে আমার ওকে ছাড়া থাকতে কষ্ট হচ্ছে।

---তুই আর কষ্ট পাস না।তুই একটু শক্ত হ।এভাবে ভেঙ্গে  পড়লে চলবে না মালিহা।কেন শুধু শুধু নিজেকে এভাবে কষ্ট দিচ্ছিস বলতো।এসব করলেও আর তোর অরন্য ফিরে আসবে না।তোর অরন্য এখন অন্য কারও এটা মনে নিতে শিখ।বেঈমানদের কাছে দশবছর কিছুই না।শুধু শুধু বেঈমানটার জন্য কষ্ট পেয়ে নিজের ক্ষতি করিস না।

এসব বলতে বলতেই তিরা মাকে দেখে বলল

---মালিহা কান্না থামা কাকী আসছে।কাকী এভাবে কাঁদতে দেখলে হাজার প্রশ্ন করবে।এত প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবি না এখন।নিজেকে সামলে নে।যা হয়েছে তো হয়েছেই।এটা নিয়ে আর ভেবে কষ্ট বাড়াস না।

মা আসার কথা শুনেই আমি কোনরকমে নিজের কান্না সংবরণ করে নিলাম।মা এসে আমাকে ভাত মাখিয়ে খাইয়ে দিল।খাওয়ার পর শরীরটাই বেশ শক্তি পাচ্ছিলাম।এদিকে বিকেলের পেরিয়ে সাঁঝ নামল।তিরা আমাকে বলল

---চল একটু ছাদে যাই।তুই ও অরন্যকে দেখিয়ে দে যে তুই ও তাকে ছাড়া ভালো আছিস।শুধু শুধু নিজের দুর্বলতা প্রকাশ করলে অরন্য নিজেকে হিরো ভাবতে থাকবে।

তিরার কথা গুলো শুনে ছাদে যাওয়ার সাহস করলাম।তাই তিরাকে নিয়ে ছাদে যাওয়ার জন্য রওনা হলাম।এক সিড়ি পাড় হতেই তিরা বলল

---মালিহা তুই যা।আমি ঘর থেকে মোবাইলটা নিয়ে আসি।মোবাইলটা তোর খাটে রেখে এসেছি।

---আচ্ছা সাবধানে যা।

তিরা চলে যাওয়ার পর আমি সিড়ি বেয়ে ছাদে উঠে চমকে গেলাম।বিস্মিত হয়ে খেয়াল করলাম

গল্পের নাম : অদ্ভূত_রহস্যময়_পরিণয়

পর্ব-5 পর্ব

লেখিকা-শারমিন আঁচল নিপা

তিরা চলে যাওয়ার পর আমি ছাদে উঠে  খেয়াল করলাম অনুরমার চুলগুলো কেমন আঁকাবাঁকা হয়ে উড়ছে আমি ভয়ে চমকে গেলাম। ভাবলাম  এটা আমার কল্পনা নাকি অন্য কিছু ।  চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে থেকে কিছুক্ষণ স্তব্ধ হয়ে গেলাম।পাশে অরন্যকে দেখে দ্বিতীয়বার চমকালাম। খেয়াল করলাম অরণ্য ছাদের মধ্যে শুয়ে  আছে আর অনুরমা অরন্যের উপর কি যেন করছে।মনে হচ্ছে কিছু একটা অরন্যে উপর ছিটাচ্ছে। কিছুটা অদ্ভুত লাগছিল বিষয়টা। আমি দৌঁড়ে অনুরমার কাছে গেলাম। অনুরমার কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম-   

--অরণ্যের কি হয়েছে এভাবে শুয়ে আছে যে আর তুমি অরন্যকে এমন করতেছ কেন?

 আমার কথাটা শুনেই অনুরমা  আমার দিকে তাকালো। অনুরমা আমার দিকে তাকাতেই ভয় পেয়ে গেলাম কারণ অনুরমার চোখ দিয়ে রক্ত বের হচ্ছিল।এতটা বিভৎস হয়ে গিয়েছিল তার চেহারা তা দেখে ভয়ে কুকড়ে গেলাম।তবুও সাহস জুগিয়ে জিজ্ঞেস করলাম।

--তুমি কে? সত্যিই কি এগুলো আমার কল্পনা নাকি এ বাইরে কোনকিছু আছে?

খেয়াল করলাম অনুরমা আমার কথার কোন জবাব দিচ্ছে না।কোনরকম জবাব না পেয়ে যখনই আমি অনুরমাকে ধরতে যাব ঠিক তখনই খেয়াল করলাম অনুমার চুলগুলো  সাপের মত আমার দিকে তেড়ে আসছে। আমি ভয় পেয়ে পিছুতে লাগলাম। আমার পিছানোর সাথে সাথে চুলগুলো লম্বা হয়ে আমার পিছনে আসতে লাগলো । আমি পিছুতে পিছুতে এক পর্যায়ে ছাদের কার্নিশে চলে গেলাম। ঠিক এই সময়ে চুলগুলো আমাকে পেচিয়ে ধরল। এমনভাবে পেঁচিয়ে ধরলো যে আমার দম আটকে নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছিল। শরীরটা মোচরাতে লাগলো। নিজেকে ছাড়ানোর যত চেষ্টা করছিলাম ততই চুলগুলো আমাকে আরো শক্ত করে পেঁচিয়ে ধরলো। 

এক পর্যায়ে আছাড় মেরে ফেলল।আছাড় মারার পর মাথায় প্রচন্ড আঘাত পেলাম। ছাদের মেঝে থেকে একটা পেরেক হাতে ঢুকে গেল। কোনরকমে অনুরমার দিকে তাকিয়ে দেখলাম অনুরমার চেহারাটা হিংস্র হয়ে গিয়েছে।হাতের পেরেকটা ঠুকে টলমল করে রক্ত বের হতেই আমি ব্যাথায় চিল্লানি দিয়ে উঠলাম।

ঠিক এই মূহুর্তে তিরার ডাকে পুনরায় অবাক হলাম। কারণ  আমি খেয়াল করলাম, আমি এখনো সিঁড়ির কাছে দাঁড়িয়ে আছি। তারমানে আমি এখনও ছাদে যাইনি। তাহলে একটু আগে আমার সাথে যা ঘটলো সেটা কি আমার কল্পনা। ভাবতে ভাবতে একদম চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলাম তখন তিরা ধাক্কা দিয়ে বলল

--কি হলো তুই এভাবে চিল্লানি দিয়ে উঠলি আর তোর হাতে কি হলো এভাবে রক্ত পড়ছে যে।

তিরার কথায় হাতটা দেখে আমি ভাবলাম কিছুক্ষণ আগের ঘটনা যদি মিথ্যা হয় তাহলে আমার হাতে পেরেক ঠোকার আঘাতের চিহ্ন টা কিভাবে হল।অবশ্যই এটা আমার কল্পনা না। যদি আমার কল্পনা হতো তাহলে আঘাতের চিহ্ন টা হাতে থাকত না। এবার বিশ্বাস হলো এতক্ষন যা ঘটেছে সেটা মোটেও আমার কল্পনা না এটা কোন মায়া আমি নিশ্চিত কোন মায়ার জালে ফেঁসে গিয়েছি আর অনুরমা কোন সাধারণ মানুষ না।রহস্যের কড়া একটা গন্ধ পেলাম কিন্তু কি সেই রহস্য আমি কি সেটা উদঘাটন করতে পারব।  অপরদিকে তিরা এভাবে আমাকে ভাবনাতে ডুবে থেকে দেখে পুনরায় ধাক্কা দিয়ে বলল 

---কিরে মালিহা কথা বলছিস না কেন?

আমি তিরার কথায় ভাবনার জগৎ থেকে নিজেকে বের করে এনে বললাম

---নাহ তেমন কিছু না।চল ছাদে যাই।

তিরাকে নিয়ে ছাদে যাওয়ার পর খেয়াল করলাম অরন্য আর অনুরমা দাঁড়িয়ে আছে।অনুরমা আমাকে দেখেই একটা মুচকি হাসি দিয়ে বলল

---কি ব্যপার তোমার হাতে কি হয়েছে।এরকম আঘাত পেলে কি করে?

পাশ থেকে অরন্য আমার হাতটা দেখে বলল

---,মালািহা দেখিতো তোর হাতটা কি করে এমন জখম করলি।সাবধানে চলতে পারিস না।

এ বলে অরন্য আমার হাতটা নিয়ে হাত দেখতে লাগল।এর মধ্যে অনুরমার দিকে খেয়াল করে দেখলাম অনুরমার চোখ রাগে রক্ত বর্ণ হয়ে রক্ত ঝড়ছে।আমি অনুরমাকে এভাবে দেখার পর নিজেকে বেশ শান্ত রাখলাম।এবার আমার মনে হল অনুরমা সত্যিই সাধারণ কোন মানুষ না।এসবের পিছনে অবশ্যই কোন রহস্য আছে।এসব ভেবে অরন্যের কাছ থেকে নিজের হাতটা ছাড়িয়ে নিয়ে বললাম

---তোকে দেখতে হবে না।আমি ঠিক আছি।

হাতটা ছাড়িয়ে অনুরমার দিকে এবার খেয়াল করলাম অনুরমাত চোখ গুলো স্বাভাবিক। আমি বিষয়টা আরেকটু ভালোভাবে বুঝার জন্য অরন্যকে বললাম

---দেখ তো অরন্য হাতের এ জায়গায়টায় কি বেশি জখম হয়েছে?

---তোর মতিগতি বুঝি না এ বলিস হাত না ধরতে এখনেই বলছিস আবার দেখে দিতে।কি যে করিস না।দে দেখি।

এ বলে অরন্য আমার হাতটা নিয়ে দেখতে দেখতে বলল

---ভালোই তো জখম হয়েছে।এভাবে পেরেক ঢুকলো কি করে?

আমি অরন্যেকে পুনরায় বললাম

---একটু রক্তটা মুছে দে তো।

অরন্য রক্তটা আলতো করে মুছতে থাকল আর বলতে লাগল

---এত বেখেয়ালিভাবে চললে হয়।একটু সাবধানে চলতে পারিস তো।

আমি অরন্যের কথায় পাত্তা না দিয়ে অনুরমার দিকে তাকালাম।খেয়াল করলাম অনুরমার চোখ থেকে পুনরায়  রক্ত ঝড়তে লাগল।ব্যপার টা আরও ভালোভাবে বুঝার জন্য আমি অরন্যের হাত থেকে নিজের হাতটা ছাড়িয়ে নিয়ে বললাম

---আর দরদ দেখাতে হবে না।

বলেই অনুরমার দিকে আবার তাকালাম।লক্ষ্য  করলাম এবার অনুরমা বেশ স্বাভাবিক  হয়ে আছে।

খুব ভালোই বুঝতে পেরেছিলাম  এ বিয়েটার পিছনে যথেষ্ঠ রহস্য আছে।কিন্তু কি সে রহস্য?সবকিছুই আমার কাছে অজানা।মনে মনে স্থির করলাম এ রহস্য যে করেই হোক উদঘাটন  করব। এর মধ্যেই অনুরমা ডেকে বলল

---কি গো মালিহা তুমি হুটহটা চুপ হয়ে যাও কেন?

---আরে এমনি। শরীর ভালো লাগছে না তো তাই।

---কি হয়েছে তোমার?

---শরীরটা একটু দুর্বল।

---খাওয়া দাওয়া ঠিক করে করো না তাই তো।

---হ্যা একটু খামখেয়ালি করি খাওয়া নিয়ে।খেতে মন চায় না বলতে পার।

---কি যে বলো না।এ বয়সে বেশি বেশি খাবা।এখনেই খাওয়ার সময়।

---আচ্ছা খাব।যাই এখন। রাত হয়ে এসেছে।শরীর ও ভালো লাগছে না একটু ঘুমাতে হবে।

বলেই ছাদ থেকে চলে আসলাম।এসে চুপ হয়ে শুয়ে রইলাম।দেখতে দেখতে রাত গভীর হল।অরন্যের রুম টা আমার রুমের পাশাপশিই ছিল তাই হুট করে আমার কানে একটা বিকট আওয়াজ আসল।আমি  আওয়াজটা খেয়াল করে দেখলাম অরন্যের রুম থেকে আসছে।অরন্যের রুমের দিকে একটু এগুলাম।আওয়াজটার তীব্রতা আরও বাড়তে লাগল।অরন্যের রুমের কাছে আসতেই আওয়াজটা আরও প্রখর হল।একটু স্থির হয়ে বুঝার চেষ্টা করলাম এটা কিসের আওয়াজ।কেন জানি না মনে হল হাড়গুড় খাওয়ার আওয়াজ হচ্ছে।একটু ভালো করে লক্ষ্য  করে দেখলাম জানালাটা হালকা খুলা।জানালা দিয়ে উঁকি  দেওয়া ঠিক হবে কি না বুঝতে পারছিলাম না।অনেক ভেবে মন স্থির করলাম যে একটু উঁকি দেওয়া যাক।মনস্থির করে যখন উঁকি দিলাম ভয়ে আৎকে গেলাম।কারণ অনুরমা অরন্যকে পাশে শুইয়ে একটা মৃত বিড়াল কুড়মুড় করে চিবিয়ে খাচ্ছে।অরন্য তখন বিভোর ঘুমে মগ্ন।আর এদিকে ভয়ে আমার পা কাঁপতে লাগল।তবুও মনে সাহস জুগিয়ে নিজের মনের জোর বাড়ালাম।খেয়াল করলাম অনুরমা বিড়ালটা খেয়ে অরন্যের পাশে বসে কি যেন বিড়বিড় করছে।সাথে সাথে অরন্য শূন্যে ভাসছে।অরন্যকে শূন্যে ভাসিয়ে অনুরমা একদম চুপ হয়ে চোখ বন্ধ করে কিছুক্ষণ  দাঁড়িয়ে  থাকল।তারপর আবার অরন্যকে শূন্য থেকে নামিয়ে চোখে খুলে অরন্যের দিকে তাকাল।অরন্যের দিকে তাকাতেই একটা আলোর রশ্নি অনুরমার চোখ থেকে বেড়িয়ে অরন্যের কপালে প্রবেশ করল।অরন্যের কপালে আলোটা প্রবেশ করার সাথে সাথে আশ্চর্যজনক ভাবে বিড়ালের অবশিষ্ট হাড়গুড় জোরা লেগে জ্যান্ত হয়ে গেল।আর বিড়ালটা জানালার কাছে এসেই ঝাপ দিয়ে আমার উপরে উঠে মুখে আঁচড় কাটল।মুখে আঁচড়  কাটতেই আমি বিকটভাবে চিৎকার দিয়ে উঠে খেয়াল করলাম আমি বিছানায় শুয়ে আছি।তার মানে আমি স্বপ্ন দেখছিলাম।তারাহুরা করে পাশে রাখা গ্লাস থেকে গপ গপ করে পানি খেলাম।

এ মুহুর্তে  খেয়াল করলাম আমার মুখে হালকা জ্বলুনি হচ্ছে।আমি লাইটটা জ্বালিয়ে আয়নার কাছে গিয়েই ভয় পেয়ে গেলাম মুখে আঁচড়ের  দাগ দেখে।আমার আর বুঝতে বাকি রইল না আমি অনেক বড় মায়ার জালে ফেঁসে গিয়েছি।

পরদিন রাতেও একই ভাবে হাড়গুড়ের আওয়াজ পাচ্ছিলাম।ঘঁড়িতে খেয়াল করে দেখলাম রাত তখন তিনটা বাজে।আমি আওয়াজ বরাবর এগিয়ে জানালা কাছে গিয়ে উঁকি দিয়ে দেখলাম আগের রাতে অনুরমা যা করছিল আজকেও একই কাজ করছে।এবার আমি জানালার পাশে দাঁড়িয়ে  নিজের হাতের কাটা অংশটা একটু আঁচড় দিয়ে কেটে রক্ত বের করলাম। রক্ত বের করে জানালার পাশের দেয়ালে একটা চিন্হ আঁকলাম।কারণ আমি যদি এটা স্বপ্ন দেখে থাকি তাহলে পরদিন এ রক্তের চিন্হটা দেয়ালে থাকবে না আর যদি এটা বাস্তব হয়ে থাকে তাবে পরদিন দেয়ালে রক্তের চিন্হটা পাব।এ মুহূর্তে বিড়ালটি আমার উপরে এসে ঝাপ দিতেই আমি চিৎকার করে উঠে খেয়াল করলাম আমি বিছানায় শুয়ে আছি।ঘড়ির কাঁটায় তাকিয়ে দেখলাম রাত চারটা বাজে।তারমানে আমি ঐখানে এক ঘন্টা কাটিয়েছি।এখন শুধু সকাল হওয়ার পালা আর দেখতে হবে ঐ রক্তের চিন্হটা ঐখানে আছে নাকি।রক্তের চিন্হের কথা মনে হতেই আমার চোখে গেল আমার হাতের দিকে।হাতের দিকে তাকিয়ে দেখলাম আমার হাতে জখমটা থেকে রক্ত পড়ছে।তারমানে এতক্ষণ  যা হয়েছে তা আমার স্বপ্ন ছিল না।তবুও পুরোপুরিভাবে বিষয় টা পরিষ্কার হওয়ার জন্য সকাল বেলা পর্যন্ত অপেক্ষা  করতে হবে।

আস্তে আস্তে রাতের আঁধার গুচিয়ে আকাশটা লাল হয়ে পূর্ব গগণে সূর্য উঠতে লাগল।আমি হাতে জখমটায় মলম লাগিয়ে ঘর থেকে বের হলাম।তখন হালকা হালকা আলো ছিল পুরোপুরিভাবে সূর্যটা উঠে নি।ঘর থেকে বের হয়েই আরেকটা বিষয় লক্ষ্য  করে চমকে গেলাম।

গল্পের নাম : অদ্ভূত_রহস্যময়_পরিণয়

পর্ব-6 পর্ব

লেখিকা-শারমিন আঁচল নিপা

রুম থেকে বের হয়ে আরেকটা বিষয় দেখে চমকে গেলাম।খেয়াল করলাম একটা অপরূপ সুন্দরী মেয়ে বাগানের দিকে হেঁটে যাচ্ছে।মনে মনে ভাবলাম গেইট তো তালা দেওয়া তাহলে এ মেয়ে বাড়িতে ঢুকল কি করে।আমিও মেয়েটার পিছু নিলাম। মেয়েটা দৌঁড়ে বাগানের দিকে যেতে লাগল।আমিও মেয়েটার পিছন পিছন দৌঁড়াতে দৌঁড়াতে বললাম

---এই কে তুমি দাঁড়াও বলছি।না হয় কিন্তু চেঁচিয়ে বাড়ির সবাইকে ডাক দিব।কি হল কথা কি কানে যাচ্ছে না।দাঁড়াও বলছি।

খেয়াল করলাম মেয়েটা আমার  কথা পাত্তা না দিয়েই দৌঁড়াতে লাগল।আমিও জোরে দৌঁড়ে মেয়েটার সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম।তখন মেয়েটাকে দেখে স্তব্ধ হয়ে গেলাম।এতো অনুরমা।কিন্তু অনুরমারতো ঠুঁটের নীচে তিল ছিল না।আর অনুরমার রূপে এত সুন্দর আলোর জ্বলকানিও ছিল না। এ মেয়েটা কে তাহলে কে।পরক্ষণেই ভাবলাম হয়ত এটাও একটা মায়া আর অনুরমা আমাকে সে মায়ায় ফাঁসিয়ে রেখেছে।আমি একটু কর্কশ গলায় বললাম

---কি হয়েছে অনুরমা তুমি আমাকে দেখে দৌঁড়াচ্ছ কেন?আর বাগানের দিকেই বা কেন যাচ্ছ।

মেয়েটা তারাহুরা করে বলতে লাগল

---আমি অনুরমা না।

আমি বিস্মিত হলাম কথাটা শুনার পর।বিস্মিত হয়ে বললাম

---আমার সাথে কিসের নাটক করছ।তুমি অনুরমা না আমি বললেই বিশ্বাস করব।

---সত্যি বলছি আমি অনুরমা না।

মেয়েটার কথা শুনে কেন জানি না মনে হল মেয়েটা সত্যি বলছে।তাই মেয়েটাকে অবাক হয়ে জিজ্ঞেস  করলাম

--তাহলে তুমি কে?তুমি দেখতে তো একদম অনুরমার মত।

মেয়েটা আমার দিকে তাকিয়ে হাঁপাতে হাঁপাতে বলল-

---এখন এসব বলার সময় না।আলো ফুটলেই আমি অদৃশ্য হয়ে যাব।কালকে ভোর পাঁচটায় এখানেই থেক।তবে আলো ফুটার আগে এস।সূর্যের আলোতে আমি দৃশ্যমান হতে পারব না।সূর্য উঠার সাথে সাথে আমার শক্তি বিলীন হয়ে যায়।

মেয়েটার কথা শুনে বিস্ময়ের পাল্লাটা ভারী হল। বিস্মিত হয়ে বললাম

---তাহলে তুমি কে সেটা তো বলে যাও।

বলতে বলতেই খেয়াল করলাম মেয়েটা অদৃশ্য হয়ে গেল।মাথাটা খুব ব্যাথা করছে। বুঝতে পারছি না আমার সাথে কি ঘটছে।মনে মনে ভাবতে লাগলাম মেয়েটা অনুরমার মত দেখতে অবিকল। মেয়েটা যদি অনুরমা না হয়  তবে এ মেয়েটা কে?আর এখানেই বা কেন এসেছে।মেয়েটা মিলিয়েই বা গেল কি করে?আমি কি কোন স্বপ্ন দেখছি।চারপাশ ভালো করে খেয়াল করে হাতে চিমটি কেটে আহ! করে শব্দ করে উঠলাম তার মানে আমি কোন স্বপ্ন দেখছি না।তবে ঐ মেয়েটা কে।ভাবনার জগৎ  থেকে যেন আসতেই পারছিনা।এসব ভাবতে ভাবতে সামনে এগুতে লাগলাম।এ মধ্যেই অরন্য আমার সামনে এসে দাঁড়িয়ে বলল

---কি রে তুই এত সকাল সকাল বাগানে এসে কি করছিস?

অরন্যকে দেখে হালকা রেগে গিয়ে  বললাম

---তোকে কি জাবাব দিতে হবে নাকি?তুই তোর বউ রেখে এখানে এসেছিস কেন?অনুরমা কোথায়?

---অনুরমা ঘুমাচ্ছে।আচ্ছা তুই ইদানীং  অদ্ভুত  ব্যবহার কেন করছিস?আমার সাথে সবসময় কেমন জানি খারাপ আচরণ করিস।কি করেছি আমি।

---কি করেছিস সেটা মনে হয় তুই জানিস না।আবার আমাকে বলতে আসছিস কি করেছি।এত ভালোগিরি তোকে দেখাতে কে বলেছে রে।আমার পিছনে লাগিস কেন সবসময়।বিয়ে করেছিস বউ নিয়ে ভালো থাক।আমার কথা তোকে ভাবতে হবে না।রাগ লাগে অনেক।

---আজিব আমি কি এমন করলাম বলবি তো?শুধু শুধু রাগ দেখাচ্ছিস তুই।আমার সাথে এরকম করলে বেশ খারাপ লাগে কিন্তু।একদম এরকম করবি না।

অরন্য কথা বলতেই লাগল অরন্যের কথা যতই শুনছিলাম ততই শরীরটা রাগে গিজ গিজ করতে লাগল।রাগের মাত্রাও বেড়ে যেতে লাগল।রাগ হয়ে অরন্যের দিকে তাকিয়ে বললাম

---সর তো এখান থেকে।আমার সাথে কথা বলতে আসবি না।অসহ্য লাগে তোকে এটা বুঝতে পারছিস না কেন।যত্তসব আজাইরা পকপক শুধু।

বলেই আমি বাড়ির সামনে এসে চমকে গেলাম।কারণ খেয়াল করলাম অরন্য বাড়ির সামনে দাঁড়ানো আর তার পাশে অনুরমা দাঁড়ানো।তাহলে একটু আগে আমি কার সাথে কথা বলছিলাম।তাহলে কি আমি কল্পনায় অরন্যকে ভেবে কথা বলছিলাম।আমি সব গুলিয়ে যেতে লাগলাম।সবকিছুতেই একটা কিন্তু থেকে যাচ্ছে।কিন্তু এ কিন্তুর কোন উত্তর খুঁজে পাচ্ছি না।আমাকে এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে অনুরমা আমার কাছে এসে বলল

---কি ব্যপার এভাবে দাড়িঁয়ে আছ যে?আর এত সকাল সকাল বাগানের দিকে গিয়েছিলে কেন?

অনুরামর কথা শুনে ভাবনার ঘোর থেকে বেড়িয়ে বললাম

---এমনি হাঁটতে গিয়েছিলাম।শরীর ভালো লাগছে না তো তাই।ভাবলাম বাগানে হাঁটলে মনটা ভালো লাগবে।এই আর কি।

অনুরমা আমার মুখে তার হাত দিয়ে ধরে বলল

---কি ব্যপার মালিহা তোমার মুখে এ আঁচড়ের দাগ কিসের।একদম লাল হয়ে আছে যে।কোথায় গিয়ে আঁচড় লাগল।

অনুরমা যখন আঁচড়ে স্পর্শ করল আমার হালকা ব্যথা অনুভব হল।আমি ব্যথায় ওহ করে উঠলাম।তখনেই মনে পড়ল রাতের কথা।রাতের কথা মনে হতেই মনে হল যে আমি তো আমার হাতের রক্ত দিয়ে অরন্যের জানালার পাশে একটা চিন্হ দিয়েছিলাম।আমাকে দেখতে হবে চিন্হটা আছে কি না।চিন্হটা যদি থাকে তাহলে বুঝতে হবে আমি মায়ায় ফেঁসে আছি।আমার সাথে যা ঘটছে সব বাস্তব কিন্তু আমি এর সঠিক রহস্য উদঘাটন করতে পারছি না।আমার নীরবতা দেখে অনুরমা আবার বলে উঠল

---কি ব্যপার চুপ হয়ে আছ যে।আঁচড় কি করে লাগল বললে না তো।

আমি আমতা আমতা করে অনুরমাকে বললাম

---জানি না কি করে আঁচড় লাগল।হয়ত কোনভাবে লেগেছে।

---কি যে করো না।সাবধানে চললে তো পার।একটু মলম লাগিয়ে নিও।

অনুরমার কথা শুনে কোনরুপ জবাব না দিয়ে বাড়ির ভিতর ঢুকলাম।বাড়ির ভিতর ঢুকতেই আমার মনে হল আমি যে অরন্যের রুমের জানালায়  চিন্হ একে এসেছিলাম সেটা দেখে আসা যাক।যে ভাবনা সে কাজ।দৌঁড়ে গেলাম অরন্যের রুমের পাশে।অরন্যের রুমের পাশে গিয়ে খেয়াল করলাম চিন্হটা জানালার পাশে আঁকা আছে।তার মানে আমি যা দেখেছিলাম সেটা আমার স্বপ্ন না।তবে আমার সাথে কেন এমন হচ্ছে আর অনুরমা কে?অরন্যকে বিয়ের পিছনেও একটা কারণ আছে বলে মনে হচ্ছে।সবকিছুই রহস্যময় তবে আমি সেটা এখনও বের করতে পারছি না।

সারাটাদিন শুধু এসব চিন্তা করেই পার করলাম।আর ভিতরে ভিতরে ছটফট করতে লাগলাম।ছটফট করতে করতেই দিন পেরিয়ে রাত নামল। আগের রাতে মতই একটা বিকট আওয়াজে আমার ঘুম ভাঙ্গল। আমি আবার আওয়াজ ধরে এগিয়ে অরন্যের রুমের জানালার কাছে গেলাম।এবার অনুরমাকে দেখে আরও চমকে গেলাম।অনুরমার চেহারা এতটা বিভৎস ভাষায় প্রকাশ করার মত না।অনুরমার চুলগুলো সাপ হয়ে অরন্যকে পেঁচিয়ে রেখেছে।অরন্যকে পেঁচিয়ে কি যেন বিড়বিড় করছে।আমি অরন্যের এরকম হাল দেখে নিজেকে সামলাতে পারছিলাম না।চিন্তা করলাম এখনেই অনুরমার রুমে যাব। গিয়েই অনুরমাকে ধরব। আমার যা হয় হবে। এই ভেবে অরন্যের রুমে যেতে নিব এ সময় পুনরায় খেয়াল করলাম অরন্যকে অনুরমা বিছানায় শুইয়ে স্বাভাবিক  রূপে ফিরে আসল।এবার অনুরমা হাতটা বাড়াতেই মনে হল কেউ একজন তার হাতে একটা বোতল দিয়েছে।বোতলটা দেখতে অনেকটা গোলাপজলের বোতলের মত।অনুরমা সে বোতলটা দিয়ে অরন্যের শরীরের উপর কি যেন পানির মত ছিটাচ্ছে।তখন অদ্ভুত  রকমের একটা গন্ধ চারদিকে বিরাজ করছিলো।আমি বুঝতে পারছিলাম না অনুরমা ঠিক কি করতে চাচ্ছে।পানি ছিটাতে ছিটাতে অনুরমা মুখে কি যেন বিড়বিড় করছিল।আর অরন্য কিছুক্ষণের মধ্যেই উঠে বসল।কিন্তু অরন্যকে কেন জানি না স্বাভাবিক মনে হচ্ছিল না।অরন্য উঠতেই অনুরমাকে জড়িয়ে ধরল।

অনুরমাকে জড়িয়ে ধরে জানালার দিকে তাকাতেই আমার চোখের সাথে অরন্যের চোখ পড়ল।অরন্যের চোখে চোখ পড়তেই মনে হল অরন্যের চোখ থেকে আগুন বের হচ্ছে।আমি অরন্যের চোখে তাকিয়ে থাকতে পারছিলাম না আবার চোখ সরাতেও পারছিলাম না।খেয়াল করলাম অরন্যের চোখ থেকে আগুনটা  আমার দিকেই আসছে।আগুনটা আমার দিকে আসতেই আগুনটার উত্তাপে আমার মুখে ছ্যাকা লাগল।মুখে ছ্যাকা লাগতেই অসম্ভব জ্বলুনি অণুভব করলাম আর খপ করে ঘুম থেকে উঠে দেখলাম আমি আমার রুমে শুয়ে আছি।তার মানে আগের রাতে যেভাবে আমি মায়ায় ফেঁসে গিয়েছিলাম আজকেও সেভাবে ফাঁসলাম।ঘঁড়ির কাঁটায় খেয়াল করলাম চারটা বাজে।

মনে হল এ মধ্যে কোন একটা উদ্দেশ্য লুকিয়ে আছে।অনুরমা নিশ্চিত কোন উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য অরন্যকে বিয়ে করেছে।তবে অরন্যের চোখ এমন হয়ে গেল কেন।কি হচ্ছে সব, বুঝতে পারছি না।এরমধ্যেই আমার জানালাটা মনে হল কেউ খুলছে।আর আমি জানালা  খুলার আওয়াজ পেলাম।জানালা খুলতেই একটা সুক্ষ্ম  আলোক রশ্নি জানালা দিয়ে আসলো।আমি আলোটার দিকে তাকাতেই একটা রাস্তা তৈরী হয়ে গেল।রাস্তা দিয়ে এগুবো কিনা বেশ দুটানায় পড়ে গেলাম।কিছুক্ষণ  ভেবে সিদ্ধান্ত  নিলাম রাস্তা দিয়ে এগুনো যাক।এভেবে রাস্তা দিয়ে হাঁটতে লাগলাম।যতই রাস্তা দিয়ে হাঁটতেছিলাম ততই বিকট বিকট আওয়াজ   শুনা যাচ্ছিল।ভয়ে পিছনে আসতে নিয়ে খেয়াল করলাম।আমি শূন্যে আছি আর পিছনের রাস্তাটা মিলিয়ে গিয়েছে।এখন যদি আমি পিছনে আসতে চাই তাহলে নির্ঘাত পড়ে যাব।উপায় না পেয়ে ভয়ে ভয়ে সামনে এগিয়ে যেতেই একটা বিষয় দেখে ভয়ে কেঁপে উঠলাম।

গল্পের নাম : অদ্ভূত_রহস্যময়_পরিণয়

পর্ব-7 পর্ব

লেখিকা-শারমিন আঁচল নিপা

কারণ খেয়াল করলাম সামনে  অরন্য আর অনুরমা দাঁড়ানো।আমি বিস্মিত হয়ে অরন্যের দিকে তাকিয়ে আরও ভয় পেয়ে গেলাম কারণ অরন্যের চোখে আগুনের লাভা জ্বলছিল।অরন্যকে এ অবস্থায় দেখে জিজ্ঞেস  করলাম-

---কি রে তোর চোখে কি হয়েছে?আর এখানে কি করছিস?এমন করে আমার দিকে তাকিয়ে আছিস কেন?

অরন্য আমার কথার কোন জাবাবেই দিচ্ছিল না।তাই পাশে থাকা অনুরমাকে বললাম-

---কি ব্যপার অনুরমা অরন্যের কি হয়েছে?আর আমি এ কোন জায়গায় আসলাম।আমাকে এখানেই বা কে আনল?জানালার আলো থেকে রাস্তায়  বা কি করে তৈরী হল।আমি তো এর কোন উত্তরেই পাচ্ছি না।

অনুরমা আমার কথা শুনে মৃদু হাসল।ততক্ষণে  অনুরমার বিনুনিটা সাপের মত ঝুলতে লাগল।আমার ভয়ের মাত্রাটা বেড়ে যেতে লাগল।অরন্যকেও কেমন জানি লাগছিল। বেশ ভালোই বুঝতে পারছিলাম অরন্য কোন শক্তির মায়ায় পড়ে আছে।অপরদিকে অনুরমাকে বারবার একই প্রশ্ন করছিলাম তবে অনুরমার মুখ থেকে কোন জবাবেই আসছিল না।তাই সাহস করে অনুরমার কাছে গেলাম।অনুরমার কাছে গিয়ে অনুরামাকে যখনেই ধরতে যাব  ঠিক তখনেই অনুরমা বিকট একটা হাসি দিল।অনুরমার হাসিতে আরও বেশি ভয় পেয়ে গেলাম।ভয়ে থমকে দাঁড়িয়ে পড়লাম।অনুরমা হাসতে হাসতে বলল-

---কি রে এদিকে আসছিস যে?অরন্যকে নিয়ে যেতে আসছিস নাকি?

আমি অবাক হয়ে ভাবতে লাগলাম অনুরমা আমাকে তুই তুই কেন করছে।অনুরমাকে অবাক হয়ে জিজ্ঞেস  করলাম-

---তুমি আমাকে তুই তুই করে কেন বলছ?আর আমি   অরন্যকে নিতে আসতেছি না।অরন্য তোমার স্বামী আমি কেন ওকে নিতে আসব?আমি বুঝতে পারছি না এটা আমার কল্পনা নাকি অন্য কিছু?সত্যি করে বলতো তুমি কে?

বিকট গলায় চেঁচিয়ে অনুরমা বলল-

---আমি কে এটা জানার কি তোর খুব দরকার?

---অবশ্যই দরকার কারণ তুমি আসার পর থেকেই আমার সাথে অনাকাঙ্ক্ষিত  বিষয়গুলো বেশি ঘটছে।বলো তুমি কে? আর অরন্যকে কেন বিয়ে করেছ?আমার তো মনে হয় না তুমি এ জগৎ এর কেউ।আমার কাছে কেন জানি না মনে হচ্ছে অরন্যকে বিয়ের পিছনে তোমার কোন উদ্দেশ্য আছে। বলো তুমি কে?আর কি উদ্দেশ্যে এ বাড়িতে এসেছ?

আমার কথা শুনে অনুরমার চোখগুলো লাল রক্তবর্ণ হয়ে গেল।চোখগুলো থেকে আগুনের লাভা বের হয়ে ছিটতে লাগল।আর আমার দিকে তেড়ে এসে বলল-

---বড্ড বেশি ভেবে ফেলেছিস।তোর জন্যই আমার কাজটা করতে দেড়ি হচ্ছে।তোর জন্যই আমার কাজে বারবার ব্যঘাত ঘটছে।তোকে আজকে শেষ করে তোর রক্ত দিয়ে গোসল করব।

 বলেই পুনরায় বিকট হাসি দিয়ে আমার কাছে তেড়ে আসতে নিয়েও থেমে গিয়ে বলল-

---নাহ তোকে আমি না, তোকে তো তোর ভালোবাসার মানুষ অরন্যকে দিয়ে আঘাত করাব।

বলেই অনুরমা অরন্যের দিকে তাকিয়ে চোখ থেকে কি যেন বের করে অরন্যের মাথায় প্রবেশ করাল।সাথে সাথে অরন্য বিকট ভাবে হাসতে লাগল আর আমার দিকে তেড়ে আসল।আমার কাছে এসেই আমার ঘাড়ে কামড়ে ধরল।আমার দম আটকে যেতে লাগল ।নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছিল। কোনভাবে টেনে অরন্যকে ছুটিয়ে ধাক্কা দিয়ে  বললাম-

---অরন্য তুই এমন করিস না।আমাকে এভাবে আঘাত করছিস কেন।আমাকে দয়াকরে আঘাত করিস না।

অরন্য কোন কথায় শুনতেছিল না।মুহুর্তের মধ্যেই অরন্যের নখগুলো বড় হয়ে গেল।আর আমাকে আচঁড় দিতে লাগল।আমি পিছনের দিকে তাকিয়ে দেখলাম আমি একটা খন্ড রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছি।পিছনের দিকে গেলে উপর থেকে নীচে পড়ে যাব।এদিকে অরন্যও আমার দিকে তেড়ে আসতে নিল।আমি কি করব বুঝতে না পেরে পিছুতে নিয়ে রাস্তা থেকে নীচে একটা কুয়োতে পড়ে গেলাম।কুয়োতে তাকিয়ে আরও ভয় পেয়ে গেলাম কারণ কুয়োটার অর্ধেক পানির পরিবর্তে রক্তে পরিপূর্ণ  ছিল।বিভৎস রক্তের ঘ্রাণ নাকে আসতে লাগল।কিভাবে কুয়ো থেকে উঠব এসব ভাবতে লাগলাম।এর মধ্যে একটা বাচ্চা আসলো। কিন্তু বাচ্চাটার মুখে খেয়াল করে দেখলাম বড় বড় দাঁত।আর সে দাঁত দিয়ে আমার দিকে তেড়ে  এসে আমার হাতে কামড়ে ধরল।হাতের কামড়টা ছাড়ানোর চেষ্টা করলাম।কোনভাবেই ছাড়াতে পারছিলাম না।এক পর্যায়ে  শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে সজোরে ধাক্কা দিতেই ঘুম থেকে খপ করে উঠলাম।

ঘুম থেকে উঠেই এক গ্লাস পানি খেলাম।ঘরের লাইটটা জ্বালালাম।শরীরটা ঘাম দিল অনেক আর ভয়ে হাত পা কাঁপছিল।বিছানা থেকে নামার সাহস পাচ্ছিলাম না। মনে হতে লাগল এ বুঝি খাটের নীচে থেকে কেউ এসে আমাকে ঝাপটে ধরল।ভয়ে বিছানায় শুয়ে ভাবতে লাগলাম কিছুক্ষণ  আগের ঘটনা কি সত্যি ছিল নাকি কল্পনা।এরমধ্যেই গলায় ব্যথা অনুভব করলাম। মোবাইল ক্যামেরা অন করে দেখলাম একটা কামড়ের দাগ গলায়। হাতেও খেয়াল করলাম একটা কামড়ের দাগ।তার মানে কিছুক্ষণ আগের ঘটনাটা সত্যি।যদি সত্যি হয় তাহলে অনুরমা কে?আর অরন্যকে কেন বিয়ে করেছে?প্রশ্ন গুলো মনে আসতে লাগল কিন্তু কোন উত্তর পাচ্ছিলাম না।

এরমধ্যেই খেয়াল করলাম ঘঁড়ির কাটায় পাঁচটা বাজে।পাঁচটা বাজতেই আমার মনে হয়ে গেল গতকালকের কথাটা। কারণ অনুরমার মত দেখতে মেয়েটা বাগানে যেতে বলেছিল।আমি যাব কিনা ভাবতে লাগলাম।কারণ এমনিতেও যা ঘটছে তা নিয়ে বেশ ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।কিছুক্ষণ  ভেবে মনে হল একবার গিয়ে দেখা উচিত।কারণ  এমনিতেও যা হচ্ছে পরবর্তীতে  যে আরও ভয়ানক কিছু ঘটবে আন্দাজ করতে পারছিলাম।তাই সাহস করেই সিদ্ধান্ত নিলাম যে বাগানে যাব।বেশ ভয় লাগছিল খাট থেকে নামতে

 কারণ মনে হচ্ছিল খাট থেকে নামলেই আমার পায়ে কেউ ঝাপটে ধরবে।তবুও মনে সাহস সঞ্চয়  করে খাট থেকে নামলাম।খাট থেকে নামার পর পরই কি যেন আমার পায়ের উপর দিয়ে গেল।আমি ভয়ে খপ করে পুনরায় খাটে উঠে গেলাম।ভয়ে কলিজা কাঁপতেছিল।এ মুহুর্তে  খেয়াল করলাম একটা ইঁদুর গিয়েছে।বাড়িতে বেশ ইদুঁরের উপদ্রব বেড়েছে ইদানীং। ইদুঁরেরও খেয়ে কাজ নেই এ ভয়ের মধ্যে আরও ভয়টা বাড়িয়ে দিল।আমি আবার মনে সাহস জুগিয়ে খাট থেকে নামলাম।

খাট থেকে নেমে দরজা খুলে খেয়াল করলাম এখনও আলো ফুটে নি বাহিরটা বেশ অন্ধকার।বেশ ভয়ে ভয়ে এ অন্ধকারে মোবাইলের টর্চটা হালকা জ্বালিয়ে রওনা হলাম বাগানের দিকে।বাগানের দিকে যতই যাচ্ছিলাম ততই গা টা ছমছম করতে লাগল।মনে হতে লাগল এ বুঝি আমার পিছনে কেউ হাঁটছে।পিছনে তাকিয়ে খেয়াল করলাম কেউ নেই।চারপাশের গাছ দেখেও ভয় পেয়ে যাচ্ছিলাম।মনে সাহস জুগাতে চাইলে ভয়ে কুঁকরে যাচ্ছিলাম।

ভয়ে ভয়ে বাগানের ভিতর ঢুকলাম।খেয়াল করলাম বাগানে কেউ নেই।কিন্তু মেয়েটা তো বলেছিল পাঁচটার দিকে এখানে থাকবে।তাহলে মেয়েটা কোথায় এখনও আসছে না কেন।পাকা দশ মিনিট অপেক্ষা করার পরও যখন মেয়েটাকে পেলাম না।তখন এখানে দাঁড়িয়ে  থাকার তেমন সাহস হল না।তাই বাড়ির পথে রওনা দিলাম।এরমধ্যেই মনে হল কেউ আমার কাধেঁ হাত রেখেছে।আমি বেশ ভয় পাচ্ছিলাম পিছনের দিকে তাকাতে।তবু নিজেকে সামলে পিছনে ফিরে তাকিয়ে দেখলাম অনুরমার মত দেখতে মেয়েটা দাঁড়িয়ে  আছে।আমি অনুরমার মত দেখতে মেয়েটাকে বললাম-

---তোমার জন্যই এখানে এসেছি।বলো তুমি কে?তুমি আর অনুরমা দেখতে এক রকম কিভাবে হলে?তুমি যদি অনুরমা না হও তাহলে তুমি কে।

মেয়েটা আমার দিকে একটু তাকাল।মেয়েটার চোখ দেখে মনে হল বেশ মায়াবী। অনুরমার চোখ মোটেও এত মায়াবী না।আমি চোখ থেকে আমার চোখটা সরিয়ে নিলাম।কারণ মনে হচ্ছিল কোন মায়ায় ফেঁসে যাব তাই।চোখটা সরিয়ে মেয়েটাকে আবার বললাম-

---বলো তুমি কে?কথা বলছ না কেন?

মেয়েটা একটু চুপ থেকে বলল-

---আমি অনুরমার জমজ বোন নিরুপমা।

তাহলে সত্যিই অনুরমা কোন স্বাভাবিক মানুষ না।কারণ নিরুপমা যে অন্য জগতের মানুষ সেটা আমি গতকালকে অদৃশ্য হওয়ার দৃশ্য দেখেই বুঝেছিলাম।তাই নিরুপমাকে জিজ্ঞেস  করলাম-

---আমার তো মনে হচ্ছে না তুমি  এ জগতের মানুষ।তুমি যদি অন্য জগতের হও তাহলে নিশ্চয় অনুরমাও এ জগতের না।আর অনুরামও কোন মানুষ না।

জবাবে নিরুপমা বলল-

---মালিহা তোমার ধারণা ভুল।আমি এজগতের না এটা ঠিক, তবে অনুরমা মানুষ।আর সে এ জগতের

আমি বিস্মিত হয়ে বললাম-

---এটা কি করে সম্ভব।তুমি  আর অনুরমা যদি জমজ বোন হও তাহলে দুজন দুই জগতের কি করে সম্ভব?আমি তো কোনকিছুই বুঝছি না।নাকি তুমিই অনুরমা আমাকে মায়ায় ফাঁসাতে চাচ্ছ।তোমাকে বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে।

নিরুপমা তার মায়াবী গলায় বলল-

---আমাকে তুমি বিশ্বাস করো।আমি তোমার ভালো করতে এসেছি।তোমাকে সাহায্য করার জন্য এসেছি।আর আধা ঘন্টা পরে সূর্যের আলো উঠার সাথে সাথে আমি অদৃশ্য হয়ে যাব।এর আগে তুমি শুধু আমার কথাটা শুনো।আমার কথাটা শুনলে তোমার ভিতরে থাকা সব প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবে।অনুরমা কে?আমি কে?আর অনুরমা কেন অরন্যকে বিয়ে করেছে আর তোমার সাথে কেন এমন ঘটছে সব রহস্যের উত্তর পেয়ে যাবে।শুধু আমার কথা গুলো শুনো।

নিরুপমার দিকে তাকিয়ে বললাম-

----কি বলতে চাও বলো।

নিরুপমা মুখটা গম্ভীর করে বলল---

গল্পের নাম : অদ্ভূত_রহস্যময়_পরিণয়

পর্ব- পর্ব

লেখিকা-শারমিন আঁচল নিপা

নিরুপমা গম্ভীর হয়ে বলল-

আজ থেকে ত্রিশ বছর আগের কথা।আমার বাবা মায়ের কোল আলো করে আমাদের দুবোনের জন্ম হয়।আমি আর অনুরমা ছিলাম জমজ বোন।আমাদের দুজনের চেহারা একই রকম ছিল তবে আমি দেখতে একটু ফর্সা ছিলাম আর অনুরমা দেখতে শ্যামবর্ণ ছিল।আমাদের আরেকটা পার্থক্য হলো আমার ঠোঁটের  নীচে একটা তিল ছিল আর অনুরমার ঠোঁটের নীচে কোন তিল ছিল না।

যাইহোক আমাদের চরিত্রের মধ্যেও অনেক পার্থক্য ছিল।আমি খুব শান্ত শিষ্ট ছিলাম আর অনুরমা ছোটবেলা থেকেই অনেক উগ্র মেজাজের ছিল।উগ্র মেজাজের কারণে বাবা মা তাকে একটু শাসন করলেই সে আমার দিকে তেড়ে আসত।কারণ তার ধারণা ছিল যে আমি শান্ত শিষ্ট থাকি বলেই তাকে সবাই শাসন করে।মাঝে মাঝে এমন হত যে বাবা মা তাকে শাসন করে মারলে সে আমাকে এসে মারত।আরও অনেক  অনাকাঙ্ক্ষিত  কান্ড ঘটাত।

এভাবেই আমি আর অনুরমা বড় হতে লাগলাম।অনুরমা আর আমার চুলগুলো ধীরে ধীরে বড় হতে লাগল।আমাদের দুবোনের চুলগুলোই ছিল অনেক লম্বা।পড়াশোনার দিক দিয়েও আমি বেশি ভালো ছিলাম।মোটকথা আমার মধ্যে সবকিছুর একটা ভালো দিক ছিল।আর অনুরমা তার বিপরীত ছিল।

দেখতে দেখতে দুজনের বয়স পঁচিশ হলো আর সেখান থেকেই বিপত্তি ঘটা শুরু করল।একদিন খেয়াল করলাম অনুরমা রুমে একটা বিড়াল নিয়ে আসে, সেটাকে প্রথমে আঘাতের উপর আঘাত করে মেরে ফেলে।আমি অনুরমার এমন ব্যহারে ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।অনুরমাকে বললাম

- অনুরমা তুই বিড়ালটাকে এভাবে নির্মমভাবে আঘাত করে মারলি কেন?এতটা হিংস্র কি করে হতে পারলি?তোর বুক কি কেঁপে উঠে নি?

সাথে সাথেই অনুরমা একটা অট্ট হাসি দিয়ে বলল

- এটাকে এখন জিবীত করব দেখবি কি করে করি।

আমি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম

-কীভাবে?

অনুরমা সাথে কী যেন বিড়বিড় করছিল আর বিড়ালটা জ্যান্ত হয়ে দৌঁড়ে গেল।

সেদিন এর কারণটা জানতে না পারলেও পরে জানতে পারি অনুরমা কালোজাদুর প্রতি ঝু্ঁকে গিয়েছে।কার সংস্পর্শে  এমন হয়েছে প্রথমে বুঝতে পারি নি।পরে জানতে পারলাম এক পিশাচ সন্ন্যাসীর কাছ থেকে এগুলো শিখতেছে।আমি অনুরমাকে অনেক বুঝানোর চেষ্টা করেছি এ কাজগুলো একদম ভালো না।এ কাজগুলো যেন না করে।অনুরমা আমার কথার কোনো পাত্তা দিত না।বরং কাজগুলো আমার সামনে বেশি করত।তাই বাধ্য হয়ে বাবা, মাকে বলেছি।মা বাবাও অনুরমাকে অনেক শাসন করেছিল কিন্তু অনুরমা বাড়ি ছেড়ে গিয়ে সন্ন্যাসের সাথে থাকা শুরু করল।আর কালোজাদুতে নিজেকে অভিজ্ঞ করতে লাগল।আস্তে আস্তে অনুরমা আরও শক্তিশালী হয়ে গেল।

এদিকে  বাবা, মা অনুরমার চিন্তায় শুকিয়ে গেল।বাবা, মায়ের এমন দশা দেখে বহুবার অনুরমার কাছে খবর পাঠিয়েছি যাতে করে অনুরমা ফিরে আসে কিন্তু অনুরমা ফিরে আসে নি। একদিন উপায় না পেয়ে বাবা মায়ের কথা ভেবে আমি গেলাম সে সন্ন্যাসীর  খুপরিতে।সন্ন্যাসীর  খুপরিতে গিয়ে বেশ অবাক হলাম। কারণ কতশত বিদঘুটে জিনিসপত্র আশেপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে অন্ত নেই।বেশ ভয় করছিল  বাড়ির ভিতর ঢুকতে।তবুও নিজের মনে সাহস জুগিয়ে ভিতরে ঢুকলাম।দরজার পাশে যেতেই অনুরমা আর সন্ন্যাসীর কথোপকথন  আমার কানে আসলো।আমি সরাসরি রুমে না ঢুকে দরজার পাশে দাঁড়িয়ে  পড়লাম।সন্ন্যাসী অনুরমাকে বলছে

- তুই আগের চেয়ে অনেক কিছু শিখেছিস অনেক শক্তিশালী হয়েছিস। কিন্তু তোকে এ শক্তি ধরে রাখতে হলে একটা কাজ করতে হবে। এতে করে তোর শক্তি বাড়বে আর বেঁচে থাকতে পারবি অনেকদিন। যদিও কাজটা অনেক কঠিন। তুই পারবি কিনা আমি একটু সন্দিহানে আছি।

অনুরমা সন্ন্যাসীকে আস্বস্থ করে বলল-

- যত কঠিন কাজেই হোক আমি করতে প্রস্তুত।আপনি আমাকে বলুন কি করতে হবে।নিজের শক্তি বাড়ানোর জন্য আমি সব কাজ করতে রাজি আছি।

সন্ন্যাসী গম্ভীর গলায় জবাব দিল

- তোকে নরবলি দিতে হবে।নরবলি না দিলে তোর শক্তি বেশিদিন স্থায়ী হবে না।

নরবলির কথা শুনেই আমার ভিতরটা আঁৎকে উঠেছিল।ভেবেছিলাম অনুরমা রাজি হবে না।কিন্তু অনুরমা নরবলি দিতেও রাজি হয়ে গেল।অনুরমা সন্ন্যাসীকে বলল

- এ তো কোনো কঠিন কাজ না।এটা অধিক সহজ কাজ।আমি আমার শক্তি দিয়ে একটা মানুষ ধরে এনে বলি দিয়ে দিব।এটা নিয়ে আপনি একদম চিন্তা করবেন না।

সন্ন্যাসী রহস্য  গলায় বলল

- একটা বিপত্তি আছে।

অনুরমা প্রশ্ন করল

- কী বিপত্তি?

- বিপত্তিটা হলো যাকে তাকে বলি দিলে হবে না।

অনুরমা উৎসুক কন্ঠে জাবাব দিল

-তাহলে কাকে বলি দিতে  আপনি বলুন।আমি আমার শক্তি বৃদ্ধির জন্য সব করতে  প্রস্তুত।

সন্ন্যাসী সজোরে বলল

- তোর বাবা মাকে বলি দিতে।

বাবা মাকে বলি দিতে হবে কথাটা শুনেই আমার ভিতরটা কেঁপে গেল।মনে মনে ভাবলাম হয়তো অনুরমা রাজি হবে না।কারণ কোনো সন্তান তার বাবা মাকে বলি  দিতে পারবে না।তবে আমার সেই বিশ্বাসটাও মিথ্যা হয়ে গেল অনুরমার জবাবে। জবাবে অনুরমা বলল

- আমি রাজি আপনার প্রস্তাবে।আমি আমার মায়া দিয়ে বাবা মাকে এখানে নিয়ে আসব আর বলি দিব।আমার শক্তি বৃদ্ধির জন্য যা যা করতে হয় করব।তবুও আমি আমার শক্তিকে মহাশক্তিকে পরিণত করে ছাড়ব।আপনি বলুন কবে বলি দিতে হবে।

অনুরমার কথা শুনে নিজেকে আর স্থির রাখতে পারলাম না।অনেকটা অস্থিরতা নিয়েই ঘরে প্রবেশ করে অনুরমাকে বললাম

- তুই বাবা মাকে বলি দিয়ে দিবি সামান্য শক্তির জন্য।এতটা নীচে নেমে গেলি।বাবা মাকে বলি দেওয়ার কথা বলার আগে তোর বুকটা কেঁপে উঠল না।

আমাকে এভাবে দেখে অনুরমা চমকে গিয়ে বলল

- তারমানে  তুই দরজার আঁড়ালে থেকে সব শুনে গিয়েছিস?শুন আমার শক্তি হাসিলের জন্য যা করতে হয় করব।বেশ ভালোই বুঝতে পারছি তোর জন্য আমার কাজে ব্যঘাত ঘটবে।তাই তোকে বাঁচিয়ে রেখে তো লাভ নেই।

এ বলে অনুরমা আমাকে মায়া শক্তিবলে শূন্যে তুলে ফেলল।আমার দমটা আটকে গিয়ে নাক দিয়ে রক্ত বের হতে লাগল।ক্রমশেই আমি নিস্তেজ হতে লাগলাম।ঠিক এ মুহুর্তে  আমাকে শূন্য থেকে নামিয়ে আঁচড়ে ফেলল।আমার মাথা দ্বিখন্ডিত হয়ে গেল।আমি মৃত্যুর জগতে পদার্পণ করলাম।সে সাথে আমার আত্নাটা অতৃপ্ত হয়ে ঘুরাফেরা করতে থাকল।অনুরমা আস্তে আস্তে আমার বাবা মাকে বলি দিল সেই সাথে সে অনেক শক্তির অধিকারী হলো।ঐ যে তোমার বিয়েতে গিয়ে মনে হয়েছিল না সবাই কেন সাদা শাড়ি পড়ে আছে।

আমি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস  করলাম

- হ্যাঁ কেন?তবে আমার এমন মনে হলেও বাকিদের তো কাছে তো এমন মনে হয় নি।এর কারণ কি?

জাবাবে নিরুপমা বলল

- অরন্য তোমাকে ভালোবাসে এ কারণে তোমাকে বিশেষ শরবত পান করিয়েও মায়ার জালে ফাঁসাতে পারে নি।বাকিরা মায়ার জালে ছিল তাই বিষয়টা অবলোকন করতে পারে নি।তুমি তেমন মায়ায় ছিলে না তাই বিষয়টা অবলোকন করতে পেরেছ।সবাই সাদা কাপড় পরেছিল এজন্য যে সে বাড়ির কেউ এই জিবীত ছিল না একমাত্র অনুরমা ব্যতীত।ঐ বাড়িতে সবাই আত্না হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে।অনুরমা সেগুলোই মায়া শক্তি দিয়ে বিয়ের আসর সাজিয়ে অরন্যকে বিয়ে করেছে।

আমি অবাক হয়ে বললাম

- ঐ বাড়ির আত্নাগুলো কি মুক্তি পাবে না কখনো?আর তুমি এখানে আসলে কীভাবে?

অনুরমা একটু ভরসা দিয়ে বলল

- আমাকে অনুরমা ঐ বাড়িতে মারে নি তাই আমি বাইরে ঘুরে বেড়াতে পারি।তবে সূর্যের আলোর সাথে সাথে আমার শক্তি বিলীন হয়ে যায়।আমি শুধু অন্ধকারে দৃশ্যমান হতে পারি।আলোতে আমার শক্তি দৃশ্যমান হয় না।

আমি উৎসুক কন্ঠে বললাম

- আচ্ছা আমার সাথে এমন কেন হচ্ছে?আমি কেন বাস্তব আর কল্পনার ফারাক খুঁজে  পাচ্ছি না।আমার কাছে কেন এগুলো কল্পনা মনে হচ্ছে।

নিরুপমা হতাশ গলায় বলল

- তোমাকেও তারা মায়ায় বশ করে ফেলতেছে।কারণ তোমার জন্যই অনুরমার কাজে বারবার ব্যঘাত ঘটছে।

আমি অবাক হয়ে বললাম

- আমার জন্য ব্যঘাত ঘটছে মানে?

- হ্যাঁ তোমার জন্যই ব্যাঘাত ঘটছে কারণ অরন্য তোমাকে ভালোবাসে।অরন্য তোমাকে দেখলেই তার মায়া শক্তি অর্ধেক বিলীন হয়ে যায় যার ফলে অনুরমা তার কাজটা সঠিকভাবে করতে পারছে না।তাই তোমাকে এসব মায়ায় আটকিয়ে তোমাকে মেরে ফেলতে চাচ্ছে।আর আমি তোমাকে সে জায়গা থেকে বের করে নিয়ে আসছি প্রতিবার।

আমি উৎসুক গলায় বললাম

- আচ্ছা অনুরমা অরন্যকে কেন বিয়ে করেছে?এর পেছনে কোন উদ্দেশ্য তো অবশ্যই আছে।কিন্তু উদ্দেশ্যটা কী?

নিরুপমা একটু দম নিয়ে বলল

- কারণ অনুরমার অমরত্ব লাভের জন্য অরন্যকে দরকার।

আমি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস  করলাম

- অরন্যকে কেন দরকার?

ঠিক এ মুহুর্তে নিরুপাম বলল

- আজকে আর কথা বলতে পারব না।সূর্য  উঠে গিয়েছে।আমার শক্তি এখন বিলীন হয়ে যাবে।আমি কথা বলতে চাইলেও বলতে পারব না।এখনেই অদৃশ্য হয়ে যাব।কালকে আবার এখানে এসো কালকে বাকি কথা হবে।আজকে গেলাম।

 এ বলে নিরুপমা অদৃশ্য হয়ে গেল।আর আমি বাগান থেকে বাড়িতে আসার জন্য রওনা দিলাম।মনে মনে অশান্তি লাগছিল এটা ভেবে যে অরন্য কীভাবে অনুরমাকে অমরত্বের জন্য সাহায্য করবে।অরন্যকে অনুরমা কী করবে?মেরে দিবে না তো।এসব ভেবেই বুকটা কেঁপে উঠল।বাড়ির পাশে আসতেই দেখলাম অনুরমা আর অরন্য দাঁড়িয়ে  আছে।আমি অরন্যকে দেখে অরন্যের কাছে গিয়ে তার চোখের দিকে তাকালাম।কত ভুল বুঝে কত কিছুই না বলেছি কিন্তু আমার অরন্য সবসময় আমাকেই ভালোবেসেছে।অরন্যের চোখে এক ভালোবাসার ছন্দ খুঁজে  পাচ্ছিলাম।অরন্যও আমার দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।আমাকে কিছু বলতে নিবে ঠিক এ মুহুর্তে  অনুরমা আমাদের মাঝে আসলো।অনুরমার চোখগুলো দেখে ভয় পেয়ে গেলাম কারণ অনুরমার চোখে রাগের মাত্রা স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছিল।অনুরমার চোখগুলোও কেমন বিবর্ণ হয়ে গেল।এসময় জেঠি এসে বলল

- কি রে মালিহা তোর তো দেখাই মিলে না। সারাদিন ঘরে বসে থাকিস।আগে তো সারাদিন আমার কাছে এসে বসে থাকতি এখন তো তাও করিস না।কি করিস ঘরে বসে এত।একটু ও কি বিরক্ত আসে না ঘরে বসে থাকতে।

জেঠির ডাকের সাথে সাথে অনুরমা নিজেকে স্বাভাবিক করে বলল

- ঠিকেই বলেছেন মা।আমি এটা জিজ্ঞেস  করার জন্যই আসলাম।আমি বাড়িতে নতুন ভাবলাম মালিহার সাথে একটু গল্প করে সময় পার করব কিন্তু মালিহা তো আমার কাছেই আসে না তেমন।কী গো মালিহা আমাকে কি ভালো লাগে না তোমার?

অনুরমার কথা শুনে রাগ হলেও রাগের মাত্রা দমিয়ে অনুরমাকে বললাম

- ভালো লাগবে না কেন?বেশ ভালো লাগে।তবে আমার শরীরটা ভালো লাগে না তাই শুয়ে থাকি।শরীর দুর্বল তো তাই।উঠার শক্তি পাই না।

পাশ থেকে জেঠি আমার কাছে এসে বলল

-একটু তো শরীরের যত্ন নিতে পারিস।খাওয়া দাওয়া ঠিক করে করিস না।তোর মা ও বলল তুই নাকি ঝিম ধরে সারাক্ষণ  বসে থাকিস।এখন এমন হলে চলবে বল।তোকে পরের ঘরের যেতে হবে এখনি চেহারা নষ্ট করে ফেললে হবে?কি যে করিস না।এ বয়সে খাবি দাবি ঘুরবি ফিরবি তা না ঝিম ধরে ঘরে বসে থাকিস।কী হয়েছে তোর শুনি?

আমি জেঠিকে আস্তে করে বললাম

- নাহ জেঠি তেমন কিছু না।একটু খাওয়া দাওয়া করলেই  ঠিক হয়ে যাবে। আমি এখন গেলাম জেঠি মাথাটা ঘুরাচ্ছে।ঘরে গিয়ে একটু বিশ্রাম নিব।

এ বলে আমি আমার রুমে চলে আসলাম।অসহ্য ছটফট করতেছে মন।কি যে হচ্ছে সব।অরন্যের কথা ভেবে ছটফটানি যেন আরও বেড়ে গেল।ছটফটাতে ছটফটাতে সারাটাদিন পার করলাম।

আস্তে আস্তে দিন পেরিয়ে রাত নামল।আর সে সাথে আমার ভাবনাটাও বাড়তে লাগল।রাতে এসব ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে গেলাম।ঠিক তখন

গল্পের নাম : অদ্ভূত_রহস্যময়_পরিণয়

পর্ব-9 পর্ব

লেখিকা-শারমিন আঁচল নিপা

ঠিক তখন খেয়াল করলাম আগের রাতের মতোই শব্দ কানে ভেসে আসছে।প্রতিরাতের মতো আজকেও উঠে অরন্যের রুমের পাশে গেলাম।অরন্যের রুমের জানালা দিয়ে তাকালাম খেয়াল করলাম আজকে অনুরমা কী যেন কাগজ পুড়াচ্ছে আর অরন্যকে শুকাচ্ছে।কাগজ পুড়ার গন্ধটা কেমন জানি মরা মানুষের লাশ পঁচে যাওয়া গন্ধের মতো লাগছে। এর মধ্যেই অরন্য জানালা বরাবর তাকালো আর অরন্যের চোখের দিকে আমার চোখ গেল।অরন্যের চোখ কুৎসিত কালো হয়ে গেল।আর সাথে সাথে অরন্য একটা বাজ পাখিতে পরিণত হলো।আমি ভয় পেয়ে গেলাম অরন্যকে এমন রূপে দেখে।ভয়ে পিছুতে লাগলাম।কিন্তু বাজ পাখিটা এসে আমার আমার চুল টেনে ধরল।আমার মুখে গলায় আচঁড় কাটতে লাগল।আমার শরীর ক্ষতবিক্ষত  হতে লাগল।আমি শত চেষ্টা করেও বাজ পাখিটা থেকে নিজেকে  রক্ষা করতে পারছিলাম না।মনে হচ্ছিল এ বুঝি আমার জীবনের শেষ প্রান্তে চলে এসেছি।ঠিক এ মুহুর্তে  মনে হলো কেউ একজন পাখিটার দিকে সজোরে আঘাত করল আর পাখিটা সাথে সাথে উড়ে ঘরে চলে গেল।ঘরে গিয়ে পাখিটা পুনরায় অরন্যের রূপ ধারণ করল। আমি ভয়ে সেখান থেকে চলে এসে আমার রূমের সামনে আসতেই খেয়াল করলাম নিরুপমা দাঁড়িয়ে  আছে। নিরুপমাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বললাম

- তুমি এখানে কখন আসলে?

নিরুপমা আমাকে ধরে বলল

- আমি না আসলে আজকে তোমার মৃত্যু ঘটত।শব্দের দিকে এগিয়ে যাও কেন?ঘরে বসে থাকতে পার না।

আমি মাথায় হাতটা চেপে ধরে বললাম

-জানি না আমার কি হয় শব্দটা আসলে আমি নিজেকে সামলাতে পারি না।কখন যে মনের অজান্তে চলে যাই বলতে পারব না।আচ্ছা এখন বলো অনুরমা কেন অরন্যকে বিয়ে করেছে।

নিরুপমা আমাকে বলল

- এখানে বলা ঠিক হবে না।আমাকে তোমার ঘরে নিয়ে চলো বলছি।

আমি নিরুপমাকে ঘরে নিয়ে গিয়ে লাইটটা জ্বালিয়ে দিলাম।লাইটটা জ্বলানোর সাথে সাথে নিরুপমা চেঁচিয়ে বলল

- এত কড়া আলো আমি সহ্য করতে পারি না।লাইটা বন্ধ করে মৃদু আলো জ্বালাও।

আমি নিরুপমার কথা শুনে সাথে সাথে ঘরের লাইটটা বন্ধ করে দিলাম।আর নিরুপমাকে বললাম

- এবার বলো অনুরমার অমরত্বের জন্য অরন্যকে প্রয়োজন কেন?

জবাবে নিরুপমা বলল

- কারণ অনুরমাকে অমরত্ব লাভ করতে হলে একজন সাধারণ মানুষকে বিয়ে করতে হবে।সাধারণ মানুষকে বিয়ে করার পর মায়ায় ফেলে তার সাথে মিলন করতে হবে।আর মিলনের পর যে বাচ্চাটা হবে সেটা বলি দিলেই অনুরমা অমরত্ব পেয়ে যাবে।

আমি অবাক হয়ে বললাম 

-তাহলে এখনো কি অনুরমা আর অরন্যের মিলন হয় নি?

নিরুপমা কন্ঠ গম্ভীর করে বলল

- নাহ এখনো মিলন হয় নি।কারণ মিলন করতে হবে   পূর্ণিমা তিথিতে।আর পূর্নিমা তিথি হবে আরও পনের দিন পর।অনুরমা এর মধ্যে অরন্যকে মায়ায় ফাঁসিয়ে মিলনের জন্য প্রস্তুত করছে।তবে অরন্যের মায়া তোমার কাছে আসলে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে বারবার।তাই অনুরমা তোমাকে মারারা জন্য হন্নে হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে।দু একবার মারার পরিকল্পনা  করে ব্যর্থ হয়েছে আমার জন্য।কারণ আমি প্রতিবার তোমাকে বাঁচিয়ে দিচ্ছি।তবে অরন্য আর অনুরমার মিলনের পর আরেকটা বিষয় ঘটবে।

আমি উৎসুক চোখে নিরুপমার দিকে তাকিয়ে বললাম

- কী ঘটবে?

নিরুপমা দীর্ঘ  নিঃশ্বাস  নিয়ে বলল

- মিলনের পর অরন্যের মৃত্যু  ঘটবে।

অরন্যের মৃত্যু  ঘটবে কথাটা শুনেই আমি আঁৎকে উঠলাম।আঁৎকে উঠে নিরুপমাকে বললাম

- আমি থাকতে অরন্যের কিছু হতে দিব না।আমাকে কী করতে হবে বলো? কী করলে অনুরমাকে শেষ করতে  পারব।

নিরুপমা আমার কাছে এসে বলল

- পূর্ণিমা তিথিতে অনুরমা আর অরন্যের যেন মিলিত হতে না পারে সেটার ব্যবস্থা করতে হবে।কারণ এখন অনুরমা অরন্যকে বিয়ে করেছে যদি সঠিক সময়ে মিলিত হতে না পারে তাহলে অনুরমার মৃত্যু  ঘটবে।তবে মিলন আটকানো অনেক কঠিন কাজ।তুমি পারবে করতে?

আমি বলিষ্ঠ  গলায় নিরুপমাকে বললাম

-আমি সব পারব।আমার অরন্যের জন্য নিজের জীবন দেওয়া লাগলেও দিব।

নিরুপমা আমার সাহস দেখে বলল

- আর পনের দিন পর পূর্ণিমা  তিথি।আর এর আগেই তোমাকে একটা কাজ করতে হবে অরন্যকে মায়ার জাল থেকে বের করে আনতে হবে।

আমি বিস্ময়ের দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললাম 

-তবে সেটা কীভাবে?আমি কীভাবে  অরন্যকে মায়ার জাল থেকে বের করব।এর একটা উপায় বলো।

নিরুপমা কিছুক্ষণ  চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে  থেকে বলল

- অরন্যের সামনে সামনে থাকবে সবসময়।অরন্যের দিকে তাকিয়ে থাকার চেষ্টা করবে।অরন্যকে অনুরমার কাছে বেশি যেতে দিবে না।অরন্যকে সাজগোজ করে তোমার দিকে আকৃষ্ট করার চেষ্টা করবে।এতে অনুরমা রেগে যেতে পারে তবে তুমি তোমার কাজে বহাল থাকবে।আমি এখন গেলাম।

বলেই নিরুপমা অদৃশ্য হয়ে গেল। নিরুপমার অদৃশ্য হওয়ার পর আমি একটু খাটে হেলান দিয়ে শুলাম।সারারাত ঘুম হয় নি ঘুমে চোখটা ছেয়ে যাচ্ছে।মুখে গলায় আচঁড়ের দাগগুলো একটু ব্যথা করছে।তবুও নিজেকে সামলে ঘুমাতে নিলাম।চোখটা ঠিক বুজে আসবে এমন সময় বাইরে কান্নার আওয়াজে আমার ঘুম ভাঙ্গল।বাড়ির সবাই এভাবে কাঁদছে কেন ব্যপারটা আমার কাছে বড্ড গোলমেলে লাগছিল। আমি তারাহুরা করে উঠলাম। উঠে বাড়ির বাইরে গিয়ে চমকে গেলাম।আমার বুকের কষ্টটা মুহুর্তের  মধ্যে বেড়ে গেল।খেয়াল করলাম তিরা মারা গেছে।আমার কলিজাটা ফেটে কম্পন দিতে লাগল।চেঁচিয়ে  কান্না করতে লাগলাম।তিরাকে শেষবার দেখে  নিজের ভিতর কেঁপে উঠলাম।সারা গায়ে আঁচড়ের দাগ। কত নির্মম ভাবে মারা হয়েছে তিরাকে।আমার আর বুঝতে বাকি রইল না এ কাজটা অনুরমা করেছে।ভিতরে ভিতরে ভেঙ্গে  গেলাম খুব।সারাটাদিন কাঁদতে কাঁদতে পার করলাম।সন্ধ্যার সময় ঘরের লাইট বন্ধ করে বিছানার পাশে হাঁটু মুড়ি দিয়ে  মাথাটা হাঁটুর উপর রেখে বসে বসে কাঁদতে ছিলাম।ঠিক এ মুহূর্তে  খেয়াল করলাম কেউ একজন আমার কাঁধে হাত রেখেছে।  আমি মুখটা উপরেই তুলতেই আধু আধু আলোতে খেয়াল করলাম এটা নিরুপমার হাত।নিরুপমাকে দেখে জোরে কান্না করে দিয়ে বলতে লাগলাম

- অনুরমা তিরাকে মেরে দিয়েছে। আমি এখন কী করব। আমার তো কিছুই ভালো লাগছে না। তিরার মতো কি অরন্যকেও হারিয়ে ফেলব।বলেই কেঁদে দিলাম।

নিরুপমা আমাকে শাত্ত্বণা  দিয়ে বলল

- এখন কাঁদার সময় না। তোমাকে তোমার লক্ষ্য  থেকে বিচ্যুত করার জন্য এ কাজটা করেছে।

আমি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস  করলাম

- লক্ষ্য  থেকে বিচ্যুত করতে মানে?

নিরুপমা আমার কাছ এসে বসল। তারপর মুখটা একটু মলিন করে বলল

- গতকালকে রাতের কথা কি ভুলে গিয়েছ? আমি বলেছিলাম  যে তোমাকে অরন্যের সামনে বেশি ঘুরতে। সাজগোজ করে অরন্যকে তোমার দিকে আকৃষ্ট করতে। এতে করে অরন্যের মায়া কেটে যাবে।

আমি বিস্ময়ের সুরে বললাম

- কিন্তু এটার সাথে তিরার মৃত্যুর কী সম্পর্ক?

নিরুপমা আমার হাতটা ধরে বলল

- তুমি কি বোকা নাকি? শুনো মেয়ে তিরাকে মেরে ফেলে তোমাকে হতাশ করে ফেলেছে।এখন চাইলেও সাজগোজ করে অরন্যের সামনে গিয়ে অরন্যকে আকৃষ্ট করতে পারতেছ না। এতে লাভটা কার হচ্ছে বলো।

আমি সত্যিই ভবতে পারি নি অনুরমা এত বড় ছক কষেছে।আমি অস্থির হয়ে নিরুপমাকে  জিজ্ঞেস  করলাম

- এখন আমি কী করব বলো? কীভাবে আমি অরন্যকে বাঁচাব।

- সহজ হিসাব মালিহা। নিজেকে শক্ত করো আর অরন্যকে তোমার দিকে আকৃষ্ট করো।

বলেই নিরুপমা অদৃশ্য হয়ে গেল। এদিকে সারা বাড়িতে মৃত্যুর আহাজারি  তুবুও আমি নিজেকে সামলে নিলাম। আজকে অরন্যের দেওয়া সবচেয়ে পছন্দের শাড়িটা পড়লাম। তিরা সবসময় এ শাড়িটা পড়লে বলত মালিহা তোরে এ শাড়ি পড়লে কেন জানি না আকাশের নিলীমা মনে হয়। তিরার কথাটা মনে হয়েই মনের অজান্তে হুহু করে কেঁদে উঠলাম। বুকটা দুমড়ে মুচড়ে গেল তবুও নিজেকে সামলে নিলাম। হাতে কাঁচের চুরি আর পায়ে নুপুর পড়লাম।রাত তখন একটা অরন্যের ঘরের সামনে গিয়ে পায়ের নুপুর বাজাতে লাগলাম।খেয়াল করলাম অনুরমা দরজা খুলেছে। অনুরমাকে দরজা খুলতে দেখে আমি পায়ে পড়া নুপুরের আওয়াজগুলো জোরে জোরে দিতে লাগলাম।আমার নুপুরের আওয়াজ শুনে অরন্য দরজার পাশে এসে আমাকে এভাবে দেখে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। আমি অরন্যের দিকে তাকিয়ে একটা মিষ্টি হাসি দিলাম।সাথে সাথে খেয়াল করলাম আমি শূন্যে ভাসছি। আর কিছুক্ষণের  মধ্যেই শূন্য থেকে আঁচড়ে নীচে পড়ে গেলাম। উঠে দেখলাম আমি বিছানায় শুয়ে আছি আর আশে পাশে মা জেঠিরা নির্জীব হয়ে বসে আছে।আমি বুঝতে পারছিলাম কী হয়েছে।আমি উঠে বসতেই মা আমার কাছে এসে বলল-

গল্পের নাম : অদ্ভূত_রহস্যময়_পরিণয়

পর্ব-১০/শেষ পর্ব

লেখিকা-শারমিন আঁচল নিপা

আমি উঠে বসতেই মা আমার কাছে এসে বলল

- কী রে মালিহা কি হয়েছিল তোর? পনেরটা দিন শুধু হালকা জ্বরে ভুগেছিস। ডাক্তার এসে দেখে গেল কয়েকবার। ডাক্তাররা কোন রোগ ধরতে পারছিল না। হাসপাতাল ভর্তি করিয়েছিলাম সেখান থেকেও রিলিজ  দিয়ে দিল। আর তোর হুঁশ ও ছিল না। এই একটু হুঁশ আসত আবার চলে যেত। নীল শাড়ি চুড়ি পড়ে কোথায় গিয়েছিলি তুই।

মায়ের কথা শুনে আমি অবাক হয়ে গেলাম। তারমানে আমি পনের দিন পার করে ফেলেছি। তাহলে তো আজকে পূর্ণিমা তিথি। আজকে যদি অরন্যকে অনুরমার হাত থেকে বাঁচাতে না পারি তাহলে চিরবিদায় দিতে হবে অরন্যকে। কী করব ভেবে উঠতে পারছিলাম না। নিরুপমার সাথে দেখা করা জরুরী। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলাম সন্ধ্যা ছয়টা বাজে। তারমানে হাতে আর সময় নেই। কিন্তু আমি নিরুপমার সাথে দেখা করব কীভাবে? আশেপাশে তাকিয়ে দেখলাম অরন্য আর অনুরমা নেই। অরন্য আর অনুরমাকে না দেখে ভিতরটা ভয়ে কেঁপে উঠল। আমি চুপ করে ভাবতে লাগলাম কী করা যায়। বেশ হতাশ হয়ে পড়লাম। অরন্যকে চিরতরে হারানোর একটা বিয়োগ যন্ত্রণা  মনে বাজতে লাগল। আমার নীরবতা দেখে জেঠি আমার পাশে বসে বলল

- কী রে মালিহা চুপ হয়ে আছিস কেন? আর তুই বাগানে শাড়ি পড়ে গিয়ে কী করছিলি?

জেঠির কথা শুনে ভাবতে লাগলাম। আমি তো বাগানে ছিলাম না। আমি তো  অরন্যের রুমের সামনে ছিলাম। হয়তো অনুরমা বাগান নিয়ে ফেলে এসেছে। সব প্রশ্ন যেন মাথার মধ্যে গুলিয়ে ফেলছিলাম। জেঠি পুনরায় ধাক্কা দিয়ে বলল

- কী রে মালিহা কথা বলছিস না কেন?

জেঠির ডাকে নিজেকে ভাবনার ঘুর থেকে বের করে এনে বললাম

- জানিনা জেঠি কী হয়েছিল। কেন যে এমন করলাম।

বলেই মাথায় হাত দিয়ে চেপে ধরলাম।তখন জেঠি আমার কাছে এসে বলল

- আচ্ছা তুই বিশ্রাম নে। এত কিছু ভাবতে হবে না যা হয়েছে তো হয়েছেই। চুপ করে শুয়ে থাক। 

আমি তখন জেঠির দিকে তাকিয়ে বললাম

- অরন্য আর অনুরমা কোথায়?

জেঠি হালকা হেসে বলল

- ওরা ঘরেই আছে। তোর পাশেই এতদিন বসে ছিল। অনুরমা তো এ পর্যন্ত  তোর যত্ন নিয়েছে। আজকে শুধু তোর পাশ থেকে উঠে ঘরে গেল।

 কথাটা শুনার পর আমি আরও আঁৎতে উঠলাম। তার মানে অনুরমা এ পনেরদিন আমাকে যত্নের নাম করে মায়া শক্তিতে বেঁহুশ করে রেখেছিল। আমি যেহেতু  মায়া শক্তিতে বেঁহুশ  ছিলাম তাই ডাক্তারাও আমার কোন রোগ ধরতে পারে নি। আর আজকে অনুরমা আমার কাছ থেকে উঠে গিয়েছে কারণ আজকে সে অরন্যের সাথে মিলিত হবে। তাই আমার থেকেও মায়াশক্তি বিলীন হয়ে গিয়েছে। আর আমার হুঁশ ফিরেছে। কিন্তু আমি কি অরন্যকে বাঁচাতে পারব?

এসব ভেবেই আমার মন ভয়ে আঁৎকে উঠল। এর মধ্যেই মা ভাত নিয়ে এসে বলল

- সবগুলো খা। না খেয়ে শরীরের এ হাল করেছিস।

আমার কাছে মনে হলো আজকে জেঠি আর মাকে সবটা জানানো দরকার নাহয় অরন্যকে অনুরমা মেরে দিবে।  আমি দেড়ি না করেই জেঠি আর মাকে বলতে যাব ঠিক এমন সময় খেয়াল করলাম অনুরমা লাল বেনারশি পড়ে দাঁড়িয়ে আছে। জেঠি আর মা এ অসময়ে লাল বেনারশি পড়তে দেখে কিছুটা অবাক হয়ে  অনুরমাকে বলল

- কী ব্যাপার অনুরমা এ অসময়ে লাল বেনারশি শাড়ি পড়েছ কেন?

আমি মা জেঠিকে দ্রূত গলায়  বললাম

- মা, জেঠি, এ অনুরমা অরন্যকে মেরে দিবে ওকে আটকাও। এখন আটকাতে না পারলে ও অরন্যকে মেরে দিবে। এ এক পিশাচ। কালু জাদু করে। নিজের শক্তি অমর করতে অরন্যকে বিয়ে করেছে।

আরও কিছু বলতে নিব এর মধ্যেই খেয়াল করলাম আমরা সবাই শূন্য ভাসছি। জেঠি আর মা কেমন জানি নির্জীভ হয়ে আছে। মনে হচ্ছে ওরা ঘুমিয়ে আছে। ওদের কে কয়েকবার ডাকলাম কোন সাড়া দিল না। অনুরমা হাসতে হাসতে বলল

- ওদের মায়ায় বশ করে রেখেছি। তোকেও বশ করে রাখতাম তবে আমার ইচ্ছা তোর সামনেই অরন্যের সাথে মিলন করে ওকে মেরে ফেলব। আর এটাই হবে তোর সবচেয়ে বড় শাস্তি। কারণ তুই আমাকে অনেক জ্বালিয়েছিস। আমার কাজে অনেক ব্যঘাত ঘটিয়েছিস। তোর জন্য অনেক ঝামেলায় পড়েছি।

বলেই অনুরমা আমাকে মাটিতে আঁচড়ে ফেলল। আমি আঁচড়ে পড়ে দম নিতে থাকলাম। খেয়াল করলাম রাতের চাঁদটা আস্তে আস্তে বিস্তৃত হচ্ছে। সেই সাথে  অনুরমার রূপের ত্যাজ বাড়তে থাকল। অনুরমা অরন্যকে কাছে এনে অরন্যের চোখের দিকে তাকাল। আর আমি নিজের প্রিয়কে হারানোর ব্যাথায় ভুগছিলাম। এমন সময় খেয়াল করলাম নিরুপমা আমার কাছে এসেছে। আমি নিরুপমাকে দেখে কাঁদতে কাঁদতে বললাম

- আমার জীবনের সব শেষ।  আমার অরন্যকে আমি হারিয়ে ফেললাম

নিরুপমা উত্তরে বলল

- এখনো সময় যায় নি মালিহা। তোমাকে সবটা ঠিক করতে হলে কঠিন একটা কাজ করতে হবে। অনুরমাকে গোলক ধাঁধায়  ফেলে দিতে হবে।

আমি অবাক হয়ে বললাম

- কী করে?

- এরজন্য তোমাকে কঠিন পদক্ষেপ  নিতে হবে।

জোরালো গলায় বললাম

- আমাকে বলো কী করতে হবে। তুমি যা বলো আমি তাই করব। 

নিরুপমা গম্ভীর হয়ে বলল

- তোমাকে মৃত্যুবরণ করতে হবে।

আমি বিস্মিত হয়ে বললাম

- আমি মরে গেলে অরন্যকে কীভাবে বাঁচাব?

জবাবে নিরুপমা বলল

- তুমি মৃত্যুবরণ করলে আমি তোমার মধ্যে প্রবেশ করব এতে করে আমার শক্তি অনুরমার শক্তির চেয়ে বেশি হবে। আর আমি অনুরমাকে ধ্বংস করতে পারব। অনুরমাকে ধ্বংস  করার পর তুমি আবার জিবীত হয়ে যাবে। তুমি কি আমার প্রস্তাবে রাজি 

আমি সাত পাঁচ না ভেবে বললাম

- আমি রাজি। অরন্যকে বাঁচানোর জন্য যা করতে হয় করব।কীভাবে মরতে হবে বলো।

নিরুপমা আমাকে একটা ছুরি  এগিয়ে দিয়ে বলল

- গলায় সজোরে আঘাত করো।


*( সহজেই টাকা উপার্জন করতে চাইলে এখানে ক্লিক করুন, বিশ্বাসী একটা উপায় )*

আমি ভয়ে ভয়ে ছুরিটা হাতে নিলাম। তারপর শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে গলায় আঘাত করলাম।আমার গলা দ্বিখণ্ডিত  হয়ে গেল। একদিকে মাথা আরেকদিকে শরীর ছটফট করতে লাগল। খলখলিয়ে রক্ত বের হতে লাগল।তীব্র যন্ত্রণায় ছটফট করতে করতে আস্তে আস্তে নিস্তেজ  হয়ে গেলাম। মরার পরও যেন সবকিছু টের পাচ্ছিলাম। এর মধ্যে মনে হলো কেউ একজন আমার মধ্যে প্রবেশ করেছে। আমার অসহ্য যন্ত্রণা  হলো। আমার মাথা আর শরীর জোরা লেগে গেল।আমি উঠে খেয়াল করলাম আমি দেখতে নিরুপমার মতো হয়ে গিয়েছি আর আমার শরীরে অনেক মায়া শক্তি কাজ করছে। আমি দৌঁড়ে অনুরমা আর অরন্যের কাছে গেলাম। অনুরমাকে অরন্যের থেকে দূরে সরালাম। অনুরমা আমার দিকে তেড়ে আসতে নিল। আমিও অনুরমার দিকে তেড়ে গেলাম। অনেকক্ষণ চেষ্টার পরও  অনুরমাকে কিচ্ছু করতে পারছিলাম না। একটা সময় গলায় আঘাত করতে গিয়ে অনুরমার বিনুনিতে টান পড়ে আর অনুরমা আহ! করে চেঁচিয়ে উঠে। আমি বুঝতে পারলাম অনুরমার চুলে সব শক্তি রয়েছে।  তাই সজোরে অনুরমার চুলে টান দিলাম। সাথে সাথে অনুরমার মাথা ভাগ হয়ে মগজ বের হয়ে আসল। অনুরমা দেখতে কুৎসিত হয়ে গেল। অনুরমার সারা শরীর পুড়ে ছাই হয়ে গেল। নিমিষেই বাড়ির সবকিছু স্বাভাবিক  হয়ে গেল। মনে হলো কিছু একটা আমার থেকে বের হয়ে গেল। আমার হাতে একটা রেখা টেনে গেল।তিরাও জীবিত হয়ে গেল। আর আমি খপ করে তিরার ডাকে ঘুম থেকে উঠলাম। তিরা বলতে লাগল

- কী রে মালিহা বিয়ের দিনে এত ঘুমালে চলবে। উঠ। অরন্য তো কখন উঠে গিয়েছে।

আমি তিরার কথা শুনে বুকে থুথু দিলাম এর মধ্যে অরন্য রুমে ঢুকে বলল

- কীরে উঠবি না নাকি। 

বলেই আমার হাতের দিকে নজর দিয়ে বলে উঠল

- তোর হাতে এ রেখাটা কিসের? এটা তো আগে ছিল না।

হাতের রেখাটা দেখেই আমার সবটা মনে পড়ে গেল কী হয়েছে। বুঝতে আর বাকি রইল না সবাই মায়ায় ছিল তাই সবটা ভুলে গিয়েছে। কিন্তু আমি তো জানি কী হয়েছিল। আমি মুচকি হেসে অরন্যকে বললাম

- ওহ কিছুনা আমি উঠছি তুই যা।

বলেই উঠে গেলাম। অনেক ঘটা করে আমাদের বিয়ে হলো। বিয়ের রাতে অরন্য বলে উঠল

- মালিহা আমার চাকুরিটা চলে গিয়েছে।

আমি অবাক হয়ে বললাম 

- কেন?

অরন্য হতাশ গলায় বলল

- আমি নাকি একমাস অফিসে যাই নি তাই। কিন্তু আমি  অফিস এতদিন কীভাবে কামাই করলাম বুঝতেছি না।

অরন্যের কথা শুনে একটু মুচকি হাসলাম। কারণ অরন্যের মতো বাকি সবাই খুব চিন্তায় আছে কী করে একমাস পার করলো। সবাই ভুলে গেলেও আমি ভুলি নি কী হয়েছিল।

কারণ আমার আর অরন্যের পরিণয়টা হলো #অদ্ভূত_রহস্যময়_পরিণয়।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ